
02/07/2024
যখন প্রথম নেদারল্যান্ডস আসি তখন বাংলাদেশ বিমান ব্রাসেলস থেকে দুবাই হয়ে ঢাকা যেত। আমরা কেউ কেউ ছিলাম যারা তখন শুধু বিমানেই যাতায়াত করতাম। অনেকেই ছিলেন যারা বাংলাদেশ বিমানের সার্ভিস ভাল না, কোয়ালিটি ভাল না, তাদের স্ট্যান্ডার্ডের না, রুচির না বলে বৃটিশ এয়ারওয়েজ কিংবা কে এল এমে যাতায়াত করতেন আর আমরা কত কিপটা, কীভাবে বাংলাদেশ বিমান দিয়ে ফ্লাই করতে পারি ভেবে চোখ কপালে তুলে ফেলতেন।
যাহোক, এখন এই তিন এয়ারলাইন্সই এখান থেকে বন্ধ। আমার জানা মতে, বাংলাদেশ বিমান তাদের বোয়িং জিঞ্জিরা থেকে বানায় আনত না, এমেরিকার যে কোম্পানি বোয়িং বানায় সে কোম্পানি থেকেই অন্যরা যেভাবে কেনে তেমন তারাও কেনে।
এই যে রুচিশীল গোষ্ঠী, তারা নিজের দেশের বিমানকে কোনো কন্ট্রিবিউট করবে না কিন্তু আশা করবে ইংলিশ ইকোনোমির সমান রেজাল্ট/সার্ভিস। একটা রুগ্ন, দরিদ্র অর্থনীতি সিনেমার জসিমের মত নিজে নিজে রাস্তায় দৌড়ে পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে এসে ডাকবে, ‘মা, মা আমি ফার্স্ট ক্লাশ পেয়েছি’—তারপর তাদের রুচি, বাংলাদেশকে কনসিডার করার কথা ভাববে।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র রিমোট দেশগুলোতেও যাওয়া শুরু হয়েছে। ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কিংবা ব্যাক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া মুভি আগে এদিকে অন্তত আসত না। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নেদারল্যান্ডস মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না, আজকের নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশিরা নিজেদের এই অবস্থানে এনেছে—ডাচ মেইন স্ট্রিম, ডাচ মার্কেট বাংলাদেশের মত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে নিয়েও ভাবছে। অথচ "বাংলাদেশ বিমানের" রোগিরা সেই একই ভ্যানতারা পিটিয়ে যাচ্ছে,— মুভি রুচিশীল না, আমার পয়সা অনেক দামি। লোকে তার দামি পয়সা হলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে দিতে পারে, যেন তারা আরো ভাল টেকনোলজি, ক্যামেরা কিনে রাবিশ গল্প বানালেও আপত্তি নেই, মুভিটা যে ইংলিশে!
টম ক্রুজ গাঁজাখুরি কাজ করলেও রুচি অন্তত টিকে থাকবে, শাকিব খান করলে রুচি ধুলোয় মিশে যাবে। উঠে আসবার জন্য দেশের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিকে কোনো সুযোগ দেবে না, পয়সা দেবে অন্যকে কিন্তু আশা করবে দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা হাওয়া থেকে পাওয়া দিয়ে রুচিশীল স্ট্যান্ডার্ড জিনিস একদিন না একদিন নিয়ে আসবে!
একটা উন্নত বিশ্বের মার্কেটে একটা তৃতীয় বিশ্বের প্রোডাক্ট পেনিট্রেট করা কতো কঠিন সে বিষয় নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে কিনা সন্দেহ। আমরা যদি এগিয়ে না আসি, রুচি ধুয়ে ডাল খাই তবে রুচিশীল প্রোডাক্ট আপনি-আপনি তৈরি হয়ে গ্লোবাল/আন্তর্জাতিক মার্কেটে ঘুরে বেড়াবে। কী আশা! এরা আসলে সেই নব্য রাজাকার গোষ্ঠী যাদের কনট্রিবিউশন দেশ ও জাতির জন্যে শূন্য। নিজের দেশকে কোনো সুযোগ দিতে এরা নারাজ। কথায় কথায় মানুষকে, রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টেসের মেয়ে বলে অপমান করা এরোগেন্ট গোষ্ঠী এরা।
এদের করুণা করতেও করুণা হয়। দেশপ্রেম শিখতে হয় ভারতীয়দের থেকে আর স্বজাতিপ্রেম দক্ষিন ভারতীয়দের থেকে। কখনো ট্রাকের হেল্পার হিসেবে কাজ করা রজনীকান্ত এখন ওদের থালাইভা। ওনাকে এজন্যে শিল্পোন্নত সিনেমা করার দরকার হয়নি কখনোই। সাধারণ মানুষের জন্যেই সিনেমা করে আজ এই পর্যায়ে চলে এসেছেন যে মানুষ তার ছবি বাড়িতে টাংগিয়ে পূজা করে।
একটা সময় যতটা সম্ভব নিজের এবং মেয়ের জামা কাপড় এইচ এন্ড এম থেকে কিনেছি। "মেড ইন বাংলাদেশ" এই স্টিকারটার কারণে। কাপড় পরার আগে একশো বার স্টিকারে হাত বোলাতাম। কেউ যদি বলতো, জামাটা সুন্দর, সাথে সাথে মুখ থেকে বের হয়ে যেতো, মেড ইন বাংলাদেশ।
রুচিতে, কুরুচিতে, বিমানে, কাপড়ে, সুন্দরবনে সব এন্ড সবকিছুতে হৃদয়ে বাংলাদেশ।
তানবিরা হোসেইন।