Aladin.com Private Ltd.

Aladin.com Private Ltd. Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Aladin.com Private Ltd., Digital creator, Dhaka.

 #প্রশ্নোত্তরকোন নামগুলো আল্লাহ্‌র ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সঠিক এই মর্মে কোন নিয়ম আছে কি?প্রশ্নআল্লাহ্‌কে المتكلم (বক্তা) ব...
10/05/2024

#প্রশ্নোত্তর
কোন নামগুলো আল্লাহ্‌র ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সঠিক এই মর্মে কোন নিয়ম আছে কি?

প্রশ্ন
আল্লাহ্‌কে المتكلم (বক্তা) বা الباطش (পাকড়াওকারী) নামে অভিহিত করা কি সঠিক। যেহেতু তিনি এই কাজগুলো করেন।

উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ্‌ তাআলার সকল নাম তাওক্বিফী (অর্থাৎ এক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহতে যা উদ্ধৃত হয়েছে সেটার গণ্ডিতে থেমে যাওয়া আবশ্যক; এর চেয়ে বাড়ানো বা কমানো যাবে না)। এর ভিত্তিতে আল্লাহ্‌ তাঁর কিতাবে নিজেকে যে নামে অভিহিত করেছেন কিংবা তাঁর রাসূল সহিহ সূত্রে বর্ণিত হাদিসে তাঁকে যে নামে অভিহিত করেছেন সেগুলো ছাড়া অন্য কোন নামে তাঁকে অভিহিত করা সঠিক নয়। যেহেতু বুদ্ধি দিয়ে আল্লাহ্‌ যে নামসমূহের উপযুক্ত সে সব নাম জানা সম্ভবপর নয়। তাই দলিলের গণ্ডিতে থেমে যাওয়া আবশ্যকীয়। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলার বাণীতে এসেছে: “যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আলোকপাত করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও আত্মা প্রত্যেকটি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”[সূরা ইসরা বা বনী ইসরাইল; ১৭: ৩৬] এবং যেহেতু আল্লাহ্‌ নিজেকে যে নামে অভিহিত করেননি সে নামে তাঁকে অভিহিত করা কিংবা তিনি নিজেকে যে নামে অভিহিত করেছেন সে নামকে নাকচ করা— আল্লাহ্‌র অধিকারের ওপর অন্যায় করা। সুতরাং এক্ষেত্রে শিষ্টাচার রক্ষা করা আবশ্যক। আর তা হলো দলিলে যা এসেছে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।

পক্ষান্তরে কুরআন-সুন্নাহতে যা আল্লাহ্‌র গুণ হিসেবে কিংবা আল্লাহ্‌ সম্পর্কে সংবাদ হিসেবে উদ্ধৃত হয়েছে; তথা ওটা দ্বারা আল্লাহ্‌র নামকরণ উদ্ধৃত হয়নি; সেটা দিয়ে আল্লাহ্‌র নামকরণ করা সঠিক নয়। কেননা আল্লাহ্‌র গুণসমূহের মধ্যে কিছু গুণ তাঁর কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। আর আল্লাহ্‌র কর্মের কোন শেষসীমা নেই; যেমনিভাবে তাঁর কথারও শেষসীমা নেই।

আল্লাহ্‌র কর্মগত গুণের কিছু উদাহরণ হচ্ছে— المجيء (আসা), الإتيان (আগমন করা), الأخذ (ধরা), الإمساك (ধরা), البطش (পাকড়াও করা) ইত্যাদি অগণিত আরও অনেক গুণ। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “আপনার প্রভু এসেছেন।” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২২] তিনি আরও বলেন: “আর তিনি আসমানকে তার জায়গায় ধরে রেখেছেন, যাতে তা তাঁর নির্দেশ ছাড়া পৃথিবীর ওপর পড়ে না যায়।”[সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৬৫] তিনি আরও বলেন: “নিশ্চয় আপনার প্রভুর পাকড়াও কঠোর।”[সূরা বুরুজ, আয়াত: ‌১২] অতএব আমরা আল্লাহ্‌ তাআলাকে এ সকল গুণে এমনভাবে গুণান্বিত করব যেভাবে দলিলে উদ্ধৃত হয়েছে; কিন্তু আমরা এগুলো দিয়ে তাঁকে নামকরণ করব না। আমরা বলব না যে, আল্লাহ্‌র নামসমূহের মধ্যে রয়েছে: الجائي (আগমনকারী), الآتي (আগমনকারী), الآخذ (ধারণকারী), الممسك (ধারণকারী), الباطش (পাকাড়ওকারী), ইত্যাদি; যদিও আমরা এ শব্দগুলো দিয়ে তাঁর সম্পর্কে সংবাদ দিই কিংবা তাঁকে গুণান্বিত করি।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

দেখুন: শাইখ ইবনে উছাইমীনের রচিত ‘আল-কাওয়ায়েদ আল-মুছলা ফি সিফাতিল্লাহি ওয়া আসমায়িহিল হুসনা’ (১৩, ২১)।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

 #প্রশ্নোত্তরআল-জাওয়াদ আল্লাহ্‌ তাআলার একটি নামপ্রশ্নআল-জাওয়াদ কি আল্লাহ্‌র সুন্দর নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত? আমরা কি এই নাম...
08/05/2024

#প্রশ্নোত্তর
আল-জাওয়াদ আল্লাহ্‌ তাআলার একটি নাম

প্রশ্ন
আল-জাওয়াদ কি আল্লাহ্‌র সুন্দর নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত? আমরা কি এই নামের মাধ্যমে নাম রাখতে পারি; যেমন নাম রাখলাম “আব্দুল জাওয়াদ”? যদি এটি আল্লাহ্‌র নাম না হয় তাহলে এটি কি আল্লাহ্‌র সিফাত (গুণ)? এর মাধ্যমে কি নাম রাখা যাবে?

উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.

‘আল-জাওয়াদ’ আল্লাহ্‌র সুন্দর নামসমূহের একটি নাম। এর সপক্ষে সুন্নাহর দলিল রয়েছে। ইমাম বাইহাক্বী তাঁর ‘শুআবুল ঈমান’ গ্রন্থে এবং আবু নুআইম তাঁর ‘হিলয়া’ নামক গ্রন্থে তালহা বিন উবাইদুল্লাহ্‌ ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে হাদিস সংকলন করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা জাওয়াদ (বদান্য) এবং তিনি বদান্যতাকে পছন্দ করেন। তিনি উন্নত আখলাককে পছন্দ করেন এবং তিনি নীচু চরিত্রকে অপছন্দ করেন।”[আলবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (১৭৪৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) তাঁর ‘আন-নুনিয়্যা’ নামক পদ্যতে বলেন:

তিনি হচ্ছেন আল-জাওয়াদ (বদান্য) যার বদান্যতা অনুগ্রহ ও অনুকম্পার মাধ্যমে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

তিনিই হচ্ছেন আল-জাওয়াদ। তাই তিনি কোন কিছুর প্রার্থনাকারীকে বিফলে ফিরিয়ে দেন না। এমনকি সে যদি কাফের শ্রেণীর লোক হয় তবুও।

শাইখ আ-সা’দী (রহঃ) তাঁর তাফসিরে (৫/২৯৯) বলেন: ‘আর-রহমান, আর-রাহীম, আল-বার্‌রুল কারীম, আল-জাওয়াদুর রাউফ’ এই নামগুলোর অর্থ কাছাকাছি। এগুলো নির্দেশ করে যে, রব্ব রহমত, পূর্ণতা, বদান্যতা ও উদারতার গুণে বৈশিষ্টমণ্ডিত এবং প্রমাণ করে, তাঁর রহমত গুণের যা তাঁর হেকমত বা প্রজ্ঞার দাবী অনুযায়ী সকল অস্তিত্বশীলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তিনি মুমিনদেরকে এর বড় ও পরিপূর্ণ অংশ প্রদান করেছেন।[সমাপ্ত]

শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) আল্লাহ্‌র সুন্দর নামসমূহ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:

আর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে সাব্যস্ত হয়েছে: “আল-জামিল, আল-জাওয়াদ, আল-হাকীম, আল-হাইয়্য” ইত্যাদি।[আল-কাওয়ায়িদুল মুছলা থেকে সমাপ্ত]

দেখুন: শাইখ আলাওয়ি বিন আব্দুল ক্বাদের আস-সাক্বাফ কর্তৃক লিখিত “সিফাতুল্লাহ্‌ আয্‌যা ওয়া জাল্ল আল-ওয়ারিদা ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘আব্দুল জাওয়াদ’ নাম রাখা জায়েয।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

প্রত্যেক পুরুষের হাদীসটি জানা উচিত এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।ইমাম আবু সুলইমান খাত্তাবী রহ. (মৃ: ২৮৮ হি:) হযরত আব...
06/05/2024

প্রত্যেক পুরুষের হাদীসটি জানা উচিত এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

ইমাম আবু সুলইমান খাত্তাবী রহ. (মৃ: ২৮৮ হি:) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-

– ‘অবশ্যই মানুষের উপর (এমন) জামানা আসবে, (যখন বদদ্বীনীর কারণে দ্বীন মতো চলা এত কঠিন হয়ে যাবে যে), দ্বীনদার ব্যাক্তির জন্য তার দ্বীনকে নিয়ে শিয়ালের কৌশলে পালানোর ন্যায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, এক চুড়া থেকে অন্য চুড়া’য় এবং এক পাহাড়ী-গুহা থেকে অন্য পাহাড়ী-গুহা’য় পালিয়ে ফেরা ছাড়া (কেউ তার দ্বীনকে) নিরাপদে রাখতে পারবে না।

জিজ্ঞেস করা হল: সেটা কখন হবে -ইয়া রাসুলাল্লাহ?
তিনি বললেন: যখন (উপার্জনের উপায়-উপকরণের মধ্যে নাজায়েয বিষয় এত ব্যপকভাবে জড়িত থাকবে যে, তখন) আল্লাহ তাআলা’র (অসন্তুষ্টি ও) ক্রধ ব্যতীত আয়-রোজগার করা যাবে না। যখন এরকম জামানা হবে, তখন অবিবাহিত থাকাকে হালাল করে নিবে।
বলা হল: সেটা কেমন করে হতে পারে -ইয়া রাসূলাল্লাহ, অথচ আপনি আমাদেরকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন?

তিনি বললেন: কারণ, যখন সেই জামানাটি আসবে, তখন পুরুষ তার পিতা-মাতার হাতে বরবাদ হয়ে যাবে। যদি সে তার পিতা-মাতার হাতে (বরবাদ) না হয়, তাহলে সে তার স্ত্রী ও সন্তানের হাতে (বরবাদ হবে)। যদি তার স্ত্রীর হাতেও না হয়, সন্তানের হাতে না হয়, তাহলে সে তার আত্বীয়-স্বজনের হাতে (বরবাদ হবে)।
লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: (সেটা) কেমন করে হবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ?

রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ বললেন: তারা তাকে (সামাজিকতার খাতিরে ভাল মানের) আয়-রোজগার করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে জোড়াজুড়ি করতে থাকবে, পরে তারা তার উপর (এমন মানসিক ও সামাজিক) বোঝা চাপিয়ে দিবে, যা সে ধারন করতে পারবে না। অবশেষে সে (অর্থকড়ি উপার্জনের জন্য নাজায়েয ও) বরবাদীর উপকরনাদির দিকে ধাবিত হবে’।

📖[আল-উযলাহ, ইমাম খাত্তাবী– ১/১০ হাদিস ৯; আল-যুহদুল কাবীর, বাইহাকী হাদিস ৪৪৫]

রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পাঠানো বিশ্বনবী হযরত  মুহাম্মদ (স) এর চিঠি। এটি এখন জর্ডানে বাদশাহ হুসাইন মসজিদের যাদুঘর...
06/05/2024

রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পাঠানো বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর চিঠি। এটি এখন জর্ডানে বাদশাহ হুসাইন মসজিদের যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

চিঠির বাংলা অনুবাদ: আল্লাহর দাস ও তাঁর রসুল মুহাম্মদ থেকে বাইজেন্টাইনদের রাজা হারকিউলিস পর্যন্ত। ধন্য তারা যারা সত্য পথের অনুসরণ করে। আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহনের আমন্ত্রন জানাচ্ছি যাতে আপনি নিরাপদে থাকতে পারেন।

 #প্রশ্নোত্তর“আমরা দোযখের ভয়ে কিংবা জান্নাতের লোভে আপনার ইবাদত করি না” এ উক্তির প্রত্যাখ্যানপ্রশ্ন আমি অনুভব করছি যে, আম...
04/05/2024

#প্রশ্নোত্তর
“আমরা দোযখের ভয়ে কিংবা জান্নাতের লোভে আপনার ইবাদত করি না” এ উক্তির প্রত্যাখ্যান

প্রশ্ন
আমি অনুভব করছি যে, আমি জান্নাতের লোভে ও জাহান্নামের ভয়ে ইবাদত-বন্দেগী করি; আল্লাহর ভালবাসা থেকে নয় কিংবা নেককাজের ভালবাসা থেকে নয়। এর কারণ কি? এ রোগের চিকিৎসার উপায় কি? আমি যে কোন ইবাদত শুধু আল্লাহর ভালবাসা থেকে আদায় করতে চাই এবং নেককাজকে ভালবেসে আদায় করতে চাই। সেটা অর্জন করার উপায় কি?

উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

সম্মানিত ভাই, আপনার এমন প্রশ্নের উৎস হচ্ছে প্রসিদ্ধ সে উক্তিটি “আমরা আল্লাহর জাহান্নামের ভয়ে কিংবা তাঁর জান্নাতের লোভে তাঁর ইবাদত করি না। বরং আল্লাহর ভালবাসা থেকে আমরা তাঁর ইবাদত করি! কেউ কেউ এ উক্তিটিকে অন্যভাবে উল্লেখ করে থাকেন। সে উক্তিটির মর্মার্থ হল: যে ব্যক্তি আল্লাহর দোযখের ভয়ে তার ইবাদত করে সেটা হচ্ছে- দাসের ইবাদত। যে ব্যক্তি আল্লাহর জান্নাতের লোভে তাঁর ইবাদত করে সেটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ইবাদত। তারা দাবী করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ভালবাসা থেকে তাঁর ইবাদত করে সে হচ্ছে প্রকৃত আবেদ (ইবাদতগুজার)!!

উক্ত ভাবটি প্রকাশ করার শব্দ বা ভাষা যেটাই হোক না কেন এবং উক্তিকারক যিনিই হন না কেন- এটি ভুল। এটি পবিত্র শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক। এর প্রমাণ হচ্ছে:

১. প্রিয় ভাই! ভালবাসা, ভয় ও আশা এগুলোর মধ্যে তো কোন সংঘর্ষ নেই যে, আপনাকে শুধু আল্লাহর ভালবাসা থেকে তাঁর ইবাদত করতে হবে। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে ও আশা করে আল্লাহর ভালবাসা তার মধ্যে অনুপস্থিত থাকতে হবে; বিষয়টি এমন নয়। বরং হতে পারে সে ব্যক্তি আল্লাহর ভালবাসার দাবীদার অনেকের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভালবাসে।

২. আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকিদা হচ্ছে- শরয়ি ইবাদত: মহব্বত ও সম্মানকে অন্তর্ভুক্ত করে। মহব্বত আশা তৈরী করে; আর সম্মান ভয় তৈরী করে।

শাইখ মুহাম্মদ বিন ছালেহ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

ইবাদত দুইটি মহান বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত: ভালবাসা ও সম্মান। আর এ দুইটি থেকে তৈরী হয়: “তারা সৎকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আর তারা আগ্রহ ও ভীতির সাথে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে ভীত-অবনত।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০] সুতরাং ভালবাসার মাধ্যমে আগ্রহ তৈরী হয় এবং সম্মানের মাধ্যমে ভয়-ভীতি তৈরী হয়। এ কারণেই তো ইবাদত হচ্ছে- কতগুলো আদেশ ও নিষেধ। নির্দেশগুলোর ভিত্তি হচ্ছে- আগ্রহের উপর এবং নির্দেশকারীর কাছে পৌছার অভিপ্রায়ের উপর। আর নিষেধগুলোর ভিত্তি হচ্ছে- সম্মান করা ও এ সম্মানিত সত্তাকে ভয় করার উপর।

যদি আপনি আল্লাহকে ভালবাসেন তাহলে তাঁর কাছে যা আছে সেটা পাওয়ার জন্য ও তাঁর কাছে পৌঁছার জন্য আপনি আগ্রাহী হবেন, তাঁর কাছে পৌঁছার রাস্তা সন্ধান করবেন এবং পরিপূর্ণভাবে তাঁর আনুগত্য পালন করবেন।

আর যদি আপনি আল্লাহকে সম্মান করেন: তাহলে আপনি তাঁকে ভয় করবেন, যখনি কোন গুনাহ করার আকাঙ্ক্ষা মনে জাগবে আপনি স্রষ্টার মহত্ত্ব অনুভব করে সে গুনাহ থেকে বিরত থাকবেন। “নিশ্চয় মহিলা তাকে আকাঙ্ক্ষা করেছিল এবং তিনিও মহিলাকে আকাঙ্ক্ষা করতেন; যদি না তিনিও স্বীয় রবের নিদর্শন দেখতে পেতেন।”[সূরা ইউসূফ, আয়াত: ২৪] সুতরাং আপনি যদি কোন পাপকাজ করার মনস্থ করেন এবং আল্লাহকে আপনার সামনে ভেবে ভয় পেয়ে যান, ভীত হয়ে পড়েন ও পাপ থেকে দূরে সরে আসেন তাহলে এটি আপনার প্রতি আল্লাহর নেয়ামত। যেহেতু আপনি আগ্রহ ও ভয় দুটোর মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে পারলেন।[শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (৮/১৭, ১৮)]

৩. নবীগণ, আলেমসমাজ ও তাকওয়াবান লোকেরা ভয় ও আশা নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করেছেন এবং তাদের ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর ভালবাসাও থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি এ তিনটির কোন একটিকে ধারণ করে আল্লাহর ইবাদত করবে সে বিদআতী; এ অবস্থা তাকে কুফুরীর দিকেও নিয়ে যেতে পারে। ফেরেশতা, নবী ও নেককার লোকদের দোয়াকালীন অবস্থা উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন: “তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, আর তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৫৭] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “তারা সৎকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আর তারা আগ্রহ ও ভীতির সাথে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে ভীত-অবনত।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০]

ইবনে জারীর তাবারী বলেন: “আগ্রহ” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- তারা তাঁর ইবাদত করত তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ পাওয়ার আশা আগ্রহ নিয়ে। “ভীতির সাথে” অর্থাৎ তাঁর ইবাদত বর্জন ও নিষেধ লঙ্ঘন করত না তাঁর শাস্তির ভয়ে। আমরা যে তাফসির করেছি এ তাফসির অপরাপর তাফসিরকারকগণ উল্লেখ করেছেন।[তাফসিরে তাবারী (১৮/৫২১)]

ইবনে কাছির বলেন: “তারা সৎকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত” অর্থাৎ নেককাজ ও ভালকাজে।

“আর তারা আগ্রহ ও ভীতির সাথে আমাকে ডাকত”। ছাওরী বলেন: অর্থাৎ আমার কাছে যা আছে সেটা পাওয়ার আগ্রহ নিয়ে এবং আমার কাছে আরও যা আছে সেটাকে ভয় করে।

“তারা ছিল আমার কাছে ভীত-অবনত”। ইবনে আব্বাস থেকে আলী বিন আবু তালহা বর্ণনা করেন যে: অর্থাৎ আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেটার উপর বিশ্বাস রেখে। মুজাহিদ বলেন: প্রকৃত ঈমানদার হয়ে। আবুল আলিয়া বলেন: ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে। আবু সিনান বলেন: অন্তরের অনিবার্য ভয়কে বলা হয়- খুশু; যে ভয় কখনো অন্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। মুজাহিদ থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, অর্থাৎ বিনীত হয়ে। হাসান, কাতাদা ও আল-দাহহাক বলেন: আল্লাহর প্রতি অবনত হয়ে। উল্লেখিত উক্তিগুলো প্রত্যেকটি একটি অপরটির কাছাকাছি।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৫/৩৭০)]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:

“এ আলোচনা থেকে ঐ ব্যক্তির কথার অস্পষ্টতা ফুটে উঠে, যিনি বলেন: ‘আমি জান্নাতের লোভে কিংবা জাহান্নামের ভয়ে আপনার ইবাদত করছি না; বরং আমি আপনার দর্শনের লোভে আপনার ইবাদত করছি।’কারণ এ ব্যক্তি ও তার অনুসারীরা ধারণা করছে যে, জান্নাত বলতে শুধু পানাহার, পরিচ্ছেদ, বিয়েসাদী ইত্যাদি মাখলুকাতকে উপভোগ করা বুঝায়। এ বিশ্বাসের কারণে জনৈক পীর আল্লাহর বাণী “তোমাদের মধ্যে কেউ দুনিয়া চায়, আর কেউ আখেরাত চায়” শুনে বলেন: “তোমাদের মধ্যে কেউ আল্লাহকে চায়” সেটার উল্লেখ কোথায়?! এ পীরের এমন উক্তি গলদ। অপর এক পীর আল্লাহ তাআলার বাণী: “নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন” শুনে বলেন: ‘যদি জান্নাতের মূল্য হয় জান ও মাল তাহলে আল্লাহর দিদারের উল্লেখ কোথায়?’!

তাদের এ উক্তিগুলোর কারণ হল- তারা মনে করছেন যে, জান্নাতের নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহর দিদার থাকবে না। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে- সকল নেয়ামতের আধার হচ্ছে- জান্নাত। এর মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হচ্ছে- আল্লাহর চেহারা দেখা। জান্নাতে এ নেয়ামত পাওয়া যাবে। এর সপক্ষে অনেক সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে। অনুরূপভাবে জাহান্নামবাসী তাদের রবকে দেখতে পাবে না। তবে এ উক্তিকার যদি তার কথার মর্মার্থটি বুঝতেন; এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে- আপনি যদি জাহান্নাম ও জান্নাত সৃষ্টি নাও করতেন তবুও আপনার ইবাদত করা, আপনার নৈকট্য হাছিল করা আবশ্যক হত। এখানে জান্নাত দ্বারা তার উদ্দেশ্য হচ্ছে- যে স্থানে আল্লাহর সৃষ্টিকে ভোগ করা হবে।[মাজমুউল ফাতাওয়া (১০/৬২, ৬৩)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: প্রকৃতপক্ষে- জান্নাত শুধুমাত্র গাছগাছালি, ফলফলাদি, খাদ্য ও পানীয়, ডাগরচোখা হুর, নদীঝর্ণা, প্রাসাদ ইত্যাদির নাম নয়। অধিকাংশ মানুষ জান্নাতের ব্যাপারে ভুল করে থাকে। বরং জান্নাত হচ্ছে- সাধারণ ও পরিপূর্ণ নেয়ামতের স্থান। জান্নাতের সবচেয়ে উত্তম নেয়ামত হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার চেহারা মুবারক দর্শন, তাঁর বাণী শ্রবণ, তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে চক্ষু শীতলকরণ। এ নেয়ামতের সাথে পানাহার ও পোষাকাদির নেয়ামতের তুলনা চলে না। কারো প্রতি‘আল্লাহর সন্তুষ্টি’ এর সর্বনিম্ন পর্যায় জান্নাতের অন্যসব নেয়ামত থেকে অনেক বড়। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “বস্তুতঃ এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি।”[সূরা তাওবা, আয়াত: ৭২] এখানে হ্যাঁ-বোধক বাক্যে رضوان শব্দটিকে ‘নাকেরা’ (অনির্দিষ্ট) আনা হয়েছে। অর্থাৎ বান্দার প্রতি তাঁর যে কোন প্রকারের সন্তুষ্টি সেটি জান্নাতের চেয়েও বড়। কবি বলেন:

আপনার পক্ষ থেকে অল্পই আমাকে তুষ্ট করবে... কিন্তু আপনার অল্পকে অল্প বলা যায় না।

আল্লাহর দিদার এর ব্যাপারে হাদিসে এসেছে- “আল্লাহর শপথ, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর চেহারা দর্শনের চেয়ে প্রিয় কিছু দেননি।” অপর এক হাদিসে এসেছে- “যখন তিনি তাদেরকে দেখা দিবেন এবং তারা সরাসরি তাঁর চেহারা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখে তারা অন্য যেসব নেয়ামতের মধ্যে আছে সেগুলোর কথা ভুলে যাবে, বেখেয়াল হয়ে যাবে এবং সে সবের দিকে দৃষ্টিও ফেলবে না।”

কোন সন্দেহ নেই বিষয়টি এমনই। মানুষের চিন্তায় ও কল্পনায় যা আসতে পারে এটি এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম নেয়ামত; বিশেষত যারা আল্লাহর ভালবাসায় অনুরক্ত তারা যখন ভালবাসার সাহচর্যে সফলকাম হবে। কারণ “ব্যক্তি যাকে ভালবাসে তার সাথে থাকবে” । এ বিধানের কোন ব্যতিক্রম নেই; বরং এটি সুনিশ্চিত। আর কোন্‌ নেয়ামত, স্বাদ, চক্ষুশীতলতা ও সফলতায় সেই সাহচর্যের নেয়ামত, স্বাদ ও চক্ষুশীতলতার চেয়ে বড় হতে পারে! যে সত্তার চেয়ে মহান, পরিপূর্ণ ও সুন্দর আর কিছু নেই তাঁর সাহচর্যের উপরে কি আর কোন চক্ষু শীতলতা আদৌ আছে?

আল্লাহর শপথ! এই জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রাণান্তকর সাধনা করেছেন মাহবুবগণ এবং এই ঝান্ডার লক্ষ্য পানে ছুটে চলেছেন আরেফীনগণ। এটি জান্নাত ও জান্নাতী জীবনের রূহ। এর দ্বারা জান্নাত ধন্য হয়েছে। এর ভিত্তিতে জান্নাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সুতরাং এ কথা কিভাবে বলা যেতে পারে যে, “জান্নাতের আশায় ও জাহান্নামের ভয়ে আল্লাহর ইবাদত করা যাবে না?!

একই রকম কথা জাহান্নামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য (আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে হেফাযত করুন)। জাহান্নামীদের শাস্তির মধ্যে রয়েছে- আল্লাহর দিদার থেকে বঞ্ছিত হওয়া, আল্লাহর লাঞ্ছনা, ক্রোধ, অসন্তুষ্টির শিকার হওয়া এবং তাঁর তাদেরকে দূরে তাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি শাস্তি জাহান্নামের আগুনে তাদের দেহ ও রূহ পোড়ানোর চেয়েও কঠিন। বরং তাদের অন্তকরণে আগুনের দহন তাদের দেহের উপরের দহনকে অবধারিত করে দিয়েছে। তাদের অন্তর থেকেই আগুন তাদের দেহে ছড়িয়েছে।

নবী-রাসূল, সিদ্দিকীন, শুহাদা, সালেহীন প্রত্যেকেই জান্নাত আকাঙ্ক্ষা করতেন এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইতেন। আল্লাহই আমাদের আশ্রয়। তাঁর উপরই আমরা নির্ভর করছি। কোন শক্তি ও সামর্থ্য নেই আল্লাহ ছাড়া। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম অভিভাবক।[মাদারিজুল সালেকীন (২/৮০,৮১)]

৫. এ উক্তিটির উদ্দেশ্য হচ্ছে-জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টিকে হালকাভাবে দেখা। অথচ আল্লাহ তাআলা নিজেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। জান্নাত ও জাহান্নামের জন্য এর অধিবাসীদেরকে প্রস্তুত করেছেন। জান্নাতের মাধ্যমে জান্নাতবাসীকে ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং জাহান্নামের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টিকূলকে তাঁর অবাধ্যতা থেকে ও কুফরী থেকে ভীতি প্রদর্শন করেছেন।

৬. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইতেন এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তাঁর সাহাবীবর্গকে জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দিতেন। এভাবে আলেমসমাজ ও ইবাদতগুজার ব্যক্তিরা ওয়ারিশসূত্রে এটি পেয়েছেন। এর মধ্যে তারা আল্লাহর মহব্বতের কোন কমতি দেখেননি কিংবা তাদের ইবাদতের মর্যাদাতেও কোন ঘাটতি দেখেননি।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশি দুআ করতেন “হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান।”[সহিহ বুখারী (৬০২৬)]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলেন: আপনি নামাযে কি বলেন? তিনি বলেন: আমি তাশাহুদ পড়ি, এরপর আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। তবে আমি আপনার চুপিচুপি পাঠ কিংবা মুয়ায (অর্থাৎ ইবনে জাবাল) এর চুপিচুপি পাঠের কিছুই বুঝি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমরাও একই রকম কিছু চুপিসারে পাঠ করি।”[সুনানে আবু দাউদ (৭৯২), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৮৪৭) এবং আলবানি সহিহ ইবনে মাজাহ গ্রন্থ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

বারা ইবনে আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন তুমি বিছানায় আসবে তখন নামাযের মত করে অজু কর। এরপর ডান কাতে শয়ন কর। এরপর বল: হে আল্লাহ! আমি আমার প্রাণ আপনার কাছে সমর্পন করছি। আমার সকল সিদ্ধান্ত আপনার কাছে অর্পন করছি। আগ্রহ ও ভয় নিয়ে আমার পিঠ আপনার কাছে পেশ করছি (আপনার উপর নির্ভর করছি)। আপনি ছাড়া আপনার কাছে আশ্রয় কিংবা আপনার কাছ থেকে মুক্তি দেয়ার কেউ নেই। আমি আপনার নাযিলকৃত কিতাব ও প্রেরিত নবীর উপর ঈমান এনেছি। তুমি যদি এ অবস্থায় মারা যাও তাহলে তুমি ফিতরতের উপর (তথা ইসলামের উপর) মারা গেলে। তাই তোমার সর্বশেষ কথা যেন এ বাক্যগুলো হয়।”[সহিহ বুখারী (৫৯৫২) ও সহিহ মুসলিম (২৭১০)]

শাইখ তক্বী উদ্দিন সুবকী (রহঃ) বলেন:

ইবাদতগুজার ব্যক্তিগণ নানা ধরণের হয়ে থাকে। কেউ আছেন আল্লাহর ইবাদত করেন তাঁর সত্তার কারণে।তিনি যদি জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি নাও করতেন তবু তিনিই ইবাদতের হকদার- এ বিশ্বাসের কারণে;? এটি সেই উক্তিকারের উক্তির ভাব যিনি বলেন: ‘আমরা আপনার শাস্তির ভয়ে আপনার ইবাদত করছি না এবং আপনার জান্নাতের লোভেও ইবাদত করছি না। বরং আমরা আপনার ইবাদত করছি আপনি ইবাদত পাওয়ার হকদার হওয়ার কারণে। তা সত্ত্বেও এই উক্তিকারক আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করে ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় পার্থনা করে। কিন্তু কিছু লোক না জেনে মনে করে যে, তিনি এমন কোন দুআ করেন না। এটি অজ্ঞতা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করে না এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে না সে সুন্নাহ বিরোধী আমল করে। কারণ জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। এবং আরেকটি দলিল হচ্ছে- ঐ লোকের কথা যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: সে আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করে ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। এবং আরও বলল যে, আমি আপনার চুপিসারের পাঠ ও মুয়ায (রাঃ) এর চুপিসারে পাঠের কিছুই বুঝি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমরাও চুপিসারে এ বিষয়ক দুআ পড়ি।

পূর্বপর সকলের নেতা তিনি যদি এ কথা বলে থাকেন এরপরও যে ব্যক্তি এর বিপরীত কিছু বিশ্বাস করে সে ব্যক্তি ধোকাবাজ মূর্খ।

আহলে সুন্নাহর আদব হচ্ছে- চারটি; যেগুলো না হলে নয়: রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ। আল্লাহর কাছে দৈন্যতা প্রকাশ। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং মৃত্যু পর্যন্ত এর উপর ধৈর্য ধারণ করা। যেমনটি বলেছেন, সাহল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাসাত্তুরি এবং তিনি ঠিকই বলেছেন।[সুবকীর ফতোয়াসমগ্র (২/৫৬০)]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ):

আল্লাহ তাঁর ওলিদের জন্য যা কিছু প্রস্তুত রেখেছেন সেটা জান্নাতের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়া জান্নাতের নেয়ামত। তাই সৃষ্টিকুলের সর্বোত্তম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করতেন এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইতেন। যখন তিনি তাঁর জনৈক সাহাবীকে জিজ্ঞেস করলেন সে নামাযে কি বলে? তখন সে বলল: আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমি আপনার চুপিসারে পাঠ কিংবা মুয়াজের চুপিসারে পাঠের কিছুই জানি না। তখন তিনি বললেন: আমরাও এ রকম কিছুই চুপিসারে পাঠ করি।[মাজমুউল ফাতাওয়া (১০/২৪১)]

৭. যে ব্যক্তি ভয় ও আশা ব্যতীত শুধু ভালবাসা থেকে আল্লাহর ইবাদত করতে চায় তার দ্বীনদারি আশংকাজনক অবস্থায় আছে। সে ব্যক্তি চরম পর্যায়ের বিদাতী। এমনকি সে মুসলিম মিল্লাত থেকেও বেরিয়ে যেতে পারে। বড় বড় ইসলামবিদ্বেষীরা বলত: আমরা ভালবাসা থেকে আল্লাহর ইবাদত করি। যদি এটি আমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যায় তবুও!! তাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করত নিছক ভালবাসার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এদিক থেকে এটি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন: “ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। আপনি বলুন, তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে শাস্তি দিবেন কেন? বরং তোমার অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ মানুষ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তাতে আল্লাহরই আধিপত্য রয়েছে এবং তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।”।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ১৮]

তকি উদ্দিন সুবকি (রহঃ) বলেন:

পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি শুধু ভালবাসা থেকে আল্লাহর ইবাদত করে তার অজ্ঞতা এর চেয়ে বেশি। সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর কাছে তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এর মাধ্যমে সে দাসত্বের দুর্বলতা, নিকৃষ্টতা ও জিল্লতি থেকে ভালবাসার শীর্ষে উন্নীত হয়েছে। যেন সে নিজের ব্যাপারে নিরাপদ। যেন সে তার রবের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে যে, সে শুধু ডানপন্থী নয়; বরং মুকাররিবীন (নৈকট্যশীল) এর অন্তর্ভুক্ত। কক্ষনো নয়; বরং সে সর্বনিম্ন স্তরের একজন।

বান্দার কর্তব্য হচ্ছে- আল্লাহর সাথে শিষ্টাচার রক্ষা করা, আল্লাহর সামনে নিজেকে তুচ্ছ, নগন্য ও ছোট মনে করা, আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করা। আল্লাহর প্রতিশোধ থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে না করা। আল্লাহর অনুগ্রহের আশা করা। তাঁর সাহায্য চাওয়া। নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধেও আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। অনেক চেষ্টা সাধনা করে ইবাদত করার পরেও এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ! আপনার ইবাদত যথাযথভাবে আদায় করতে পারিনি। নিজের দুর্বলতার স্বীকারোক্তি দেয়া। নামাযে যেসব দুর্বলতা হয় সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে নামাযগুলোর শেষে ইস্তিগফার করা। শেষ রাতে দীর্ঘসময় ধরে কিয়ামুল লাইল আদায় করার পর এর মধ্যে যেসব ত্রুটি হয়েছে সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে ইস্তিগফার করা। আর যে ব্যক্তি আদৌ কিয়ামুল লাইল করেনি তার অবস্থা কেমন হওয়া চাই?! [ফাতাওয়াস সুবকি (২/৫৬০)]

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন:

(وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا) (অর্থ- ভয় ও আগ্রহ নিয়ে তাঁকে ডাক) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন যেন মানুষ সতর্ক থাকে, ভীত থাকে এবং আল্লাহর প্রতি আশাবাদী থাকে। মানুষের মধ্যে ভয় ও আশা যেন একটি পাখির দুটো ডানার মতো। যে ডানাদ্বয় তাকে সরল পথে অবিচল রাখবে। যদি কেউ শুধু একটি ডানার উপর নির্ভর করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। এবং এটাও জানিয়ে দিন যে, আমার শাস্তি বড় যন্ত্রনাদায়ক।[সূরা হিজর, আয়াত: ৪৯, ৫০][তাফসিরে কুরতুবী, (৭/২২৭)]

প্রিয় ভাই, আপনার অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে- আপনার ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রে নবীগণ ও পূর্ববর্তী নেককারদের পথ অনুসরণ করা। আল্লাহ আপনার উপর যেসব ইবাদত পালন করা ফরজ করেছেন সেগুলো আল্লাহ যেভাবে পালন করা পছন্দ করেন সেভাবে পালন করা। এ ইবাদতগুলো আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল, তিনি আমলকারীদের জন্য যে সওয়াব প্রস্তুত রেখেছেন সে সওয়াবের প্রত্যাশা করা এবং কোন ইবাদত পালন বাদ গেলে কিংবা পালনে কোন ত্রুটি হলে সে জন্য আল্লাহর শাস্তির ভয়ে ভীত থাকা। যে ব্যক্তি দাবী করে যে, সে আল্লাহকে ভালবাসে সে যেন আল্লাহকে দেখায় যে, সে তাঁর নবীর অনুসরণ করে। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, ফলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দিবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

 #প্রশ্নোত্তরওসিলার প্রকারভেদপ্রশ্নওসিলার প্রকারগুলো কি কি?উত্তরআলহামদু লিল্লাহ।.ওসিলা ধরা বা মাধ্যম গ্রহণ করার চারটি অর...
02/05/2024

#প্রশ্নোত্তর
ওসিলার প্রকারভেদ

প্রশ্ন
ওসিলার প্রকারগুলো কি কি?

উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.

ওসিলা ধরা বা মাধ্যম গ্রহণ করার চারটি অর্থের কোন একটি উদ্দেশ্য হতে পারে:

এক. যে ওসিলা গ্রহণ করা ব্যতীত ঈমান সম্পূর্ণ হবে না। সেটা হচ্ছে- আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান, তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান, আল্লাহ্‌র আনুগত্য করা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য তালাশ করা। আল্লাহ্‌ বাণী: “হে ঈমানদারেরা! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য ওসিলা অনুসন্ধান কর।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩৫] [এ প্রকারের মধ্যে আল্লাহ্‌র নাম ও গুণাবলী দিয়ে ওসিলা দেয়াও অন্তর্ভুক্ত হবে। ওসিলা প্রার্থনাকারীর নিজের নেক আমল দিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ওসিলা দেয়াও অন্তর্ভুক্ত হবে।]

দুই. রাসূলের জীবদ্দশায় তার থেকে দোয়া চেয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ওসিলা দেয়া এবং মুমিনদের একে অপরের কাছে দোয়া চাওয়া। এই প্রকারের ওসিলা প্রথম প্রকারের অধিভুক্ত এবং এটা পালনেও উৎসাহ এসেছে।

তিন. কোন মাখলুকের মর্যাদার দোহাই দিয়ে কিংবা মাখলুকের সত্তার দোহাই দিয়ে ওসিলা দেয়া। যেমন এমনটি বলা যে, আমি আপনার নবীর মর্যাদার দোহাই দিয়ে আপনার অভিমুখী হচ্ছি কিংবা এ জাতীয় কোন কথা– কোন কোন আলেম এ প্রকারের ওসিলাকে জায়েয বলেছেন; কিন্তু তাদের অভিমত দুর্বল। সঠিক মত হচ্ছে­– এমন ওসিলা দেয়া হারাম। কেননা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়ার মধ্যে তাঁর নাম ও গুণাবলী ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ওসিলা দেয়া যাবে না।

চার. পরবর্তী যামানার অনেকের কাছে ওসিলার প্রচলিত অর্থ হচ্ছে– নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকা, বিপদ উদ্ধারের জন্য নবীর কাছে প্রার্থনা করা (মৃতব্যক্তি ও ওলিদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা): এটি বড় শির্ক। কেননা যা করার ক্ষমতা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো নাই সেটা করার জন্য ডাকা ও সাহায্য চাওয়া–ইবাদত। এই ইবাদত আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো জন্য সম্পন্ন করা বড় শির্ক।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

বেশ অনেক বছর আগের কথা। এক ভদ্রলোক আমাকে ইনবক্স করেছেন, তিনি আমার সাথে দেখা করতে চান। পারিবারিক বিষয়ে তার পরামর্শ প্রয়োজন...
01/05/2024

বেশ অনেক বছর আগের কথা। এক ভদ্রলোক আমাকে ইনবক্স করেছেন, তিনি আমার সাথে দেখা করতে চান। পারিবারিক বিষয়ে তার পরামর্শ প্রয়োজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে না-চেনার কারণে সাক্ষাতে আগ্রহবোধ করছিলাম না। তিনি জানালেন—বিষয়টি খুবই মানবিক এবং তাকে একজন নির্ভরযোগ্য লোক আমার সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করতে বলেছে।

পারিপার্শ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে আমি তারপরও সাক্ষাতের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখালে তিনি সমস্যার কথা ইনবক্সেই বললেন। সমস্যা হলো তিনি তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চান। মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন। শেষবারের মতো তিনি একটু বুঝতে চান; আর এজন্যই আমার শরণাপন্ন হয়েছেন। একটি সংসার রক্ষা করার কথা চিন্তা করে অবশেষে তাকে অফিসে আসতে বললাম।

ডিভোর্সের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, বিছানায় যেতে চাইলেই তার স্ত্রী রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। কিছুতেই তাকে শান্ত করা যায় না। এরপর এক পর্যায়ে অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়েন। তখন কাউকে সহ্য করতে পারেন না—বিশেষ করে পুরুষ কাউকে। মারাত্মকরকম অস্বাভাবিক আচরণ করেন।

আমি তার কাছে জানতে চাইলাম—এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন। তিনি খুব নির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারলেন না। তবে পরিবারের অন্যান্যরা বলে—তার স্ত্রীর নাকি অন্য কারও সাথে রিলেশন আছে, তার কাছ থেকে ডিভোর্স নেওয়ার জন্য এসব অভিনয় করে। আর স্ত্রীর পরিবার থেকে কে নাকি বলেছে তার ‘উপরি ভাব’; অর্থাৎ জিনের আছর আছে। কারণ যা-ই হোক, বেচারা স্বামীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। নতুন বিয়ে করে কোথায় একটু সুখ-আনন্দ করবে, তার তো উপায় নাই-ই, উলটো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। তবে ভদ্রলোক নিজে এর কোনোটায় বিশ্বাস করেন বলে মনে হলো না; বরং স্ত্রীর প্রতি তিনি যথেষ্ট আন্তরিক, তবে পরিস্থিতি এতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে যে, তিনি একরকম অসহায় বোধ করছেন।

আমি তাকে আরেকটু ধৈর্য ধরতে বললাম। বললাম আপনি ডিভোর্স দিলে তো যেকোনো সময়েই দিতে পারবেন, তবে তার এ-আচরণের কারণ উদ্‌ঘাটন না করে যদি ডিভোর্স দেন, তা বোকামি হবে। কারণ উদ্‌ঘাটন করে যদি দেখেন তা সমাধান সম্ভব, তাহলে সমাধানের চেষ্টা করেন আর যদি সমাধানের অযোগ্য হয়, তাহলে আপনি তখন যা খুশি, সিদ্ধান্ত নিয়েন।

কিছুদিন পর ভদ্রলোক আবার এলেন। তিনি জানালেন যে এবার তিনি কারণ উদ্ধার করতে পেরেছেন। কারণটা হলো, তার স্ত্রী কিশোরী বয়সে তাদের বাসায় বেড়াতে আসা এক দূর সম্পর্কের মামা বা চাচা টাইপের এক আত্মীয়ের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তাদের বাসার লোকজন তেমন ধর্ম-কর্ম করতেন না, পর্দা-পুশিদার ধার ধারতেন না। দশ-এগারো বছর বয়স। বাচ্চা মেয়ে। ‘আরে উনি তো তোমার মামা লাগেন, এখানেই ঘুমাও, কী হবে!’ এভাবে নাকি একই রুমে ঘুমাতে দিয়েছিলেন বাবা মা।

সেই দুর্ঘটনা তার কিশোরী মনে এত গভীর রেখাপাত করেছিল যে, এখন তার জীবনটাই ধ্বংসের মুখে। যখন তার স্বামী তার কাছে আসতে চায়, তখন তার মানসপটে কৈশোরের সেই ভয়ংকর দৃশ্য ভেসে ওঠে। তার স্বামীকে সে তখন চিনতে পারে না, মনে হয় সেই ধর্ষক তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে প্রাণপণ চেষ্টা করে বাঁচতে। সে চিৎকার করে ওঠে। দৌড় দেয়। ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর প্রলাপ বকতে থাকে।

একটু অসচেতনতা, একটু অসতর্কতা, একটি ঘটনা। আজ একজন পুরুষের, একজন নারীর ও দুটি পরিবারের জীবন এমন সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যা থেকে কোনো দিন উত্তরণ হবে কিনা, কেউ জানে না।

তাই আপনার প্রাণপ্রিয় কন্যাটির ব্যাপারে, ছেলেটির ব্যাপারে আরও একটু সচেতন হোন। আপনি তার অভিভাবক। তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার। আপনার সামান্য অবহেলা তার গোটা জীবনটাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

আপনি কি তা চান?

লিখেছেন, আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক
প্রধান সম্পাদক, সিয়ান পাবলিকেশন
(পরিমার্জিত এবং সম্পাদিত)

 #প্রশ্নোত্তরপইসলামে ইবাদত বা দাসত্বের তাৎপর্যপ্রশ্নইসলামে উবুদিয়্যত তথা আল্লাহর দাসত্ব ও মানুষের দাসত্বের স্বরূপ বিস্তা...
29/04/2024

#প্রশ্নোত্তরপ
ইসলামে ইবাদত বা দাসত্বের তাৎপর্য

প্রশ্ন
ইসলামে উবুদিয়্যত তথা আল্লাহর দাসত্ব ও মানুষের দাসত্বের স্বরূপ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবেন আশা করছি।

উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.

মুসলমান একমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে, তাঁরই দাসত্ব করবে। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর কিতাবে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللَّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ

“অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র উপাসনা (দাসত্ব) কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।”[সূরা নাহল, ১৬:৩৬] عُبُودِيَّة (উবুদিয়্যাহ্‌) শব্দটি تَعْبِيْدٌ (তা’বীদ) শব্দ হতে উদ্ভূত। কোন একটি অমসৃণ রাস্তাকে পদদলিত করে চলার উপযুক্ত করা হলে তখন বলা হয়: عَبَّدتُّ الطَّرِيْقَ। আল্লাহ্‌র জন্য বান্দার দাসত্বের দুটি অর্থ রয়েছে। একটি ‘আম’ তথা সাধারণ। অপরটি ‘খাস্‌’ তথা বিশেষ।

যদি عُبُودِيَّة দ্বারা مُعَبَّد তথা করায়ত্ব-অধীন-বশীভূত এ অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া হয়, তখন এ দাসত্বের পরিধি অতি ব্যাপক। মহাবিশ্বে আল্লাহ্‌র যত সৃষ্টি রয়েছে সকল সৃষ্টি এ দাসত্বের আওতায় এসে যায়। চলন্ত-স্থির, শুষ্ক-ভিজা, বুদ্ধিমান-নির্বোধ, মুমিন-কাফির, সৎকর্মশীল-পাপী... সকলেই আল্লাহ্‌র সৃষ্ট, তাঁর বশীভূত এবং তাঁর পরিচালনাধীন। একটা নির্ধারিত সীমানায় এসে সকলকে থেমে যেতে হয়।

আর যদি عبد (আবদ) দ্বারা আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের আজ্ঞাবহ, তাঁর দাসত্বস্বীকারকারী কাউকে উদ্দেশ্য করা হয় তবে এ দাসত্বের আওতায় শুধু মুমিনগণ পড়ে, কাফেরেরা নয়। কেননা মুমিনরাই হলো আল্লাহ্‌র প্রকৃত দাস। যারা একমাত্র তাঁকে তাদের প্রতিপালক হিসেবে মানে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) করে। তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে না। যেমনটা আল্লাহ্‌ তায়ালা ইবলিসের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন:

قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (39) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ (40) قَالَ هَذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ (41) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ (42)

سورة الحجر

“সে (ইবলিস) বললো, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন, তার জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভনীয় করে তুলব এবং তাদের সকলকেই আমি বিপথগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ দাসগণ (বান্দাগণ) ছাড়া। তিনি (আল্লাহ্‌) বললেন: এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ। বিভ্রান্তদের মধ্য হতে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার (একনিষ্ঠ) দাসদের উপর তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না।”[সূরা হিজর ৩৯-৪২]

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন যে প্রকার দাসত্ব তথা ইবাদতের আদেশ নাযিল করেছেন সেটা হলো- “এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের পছন্দনীয় সকল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তার অপছন্দনীয় সবকিছুকে বের করে দেয়। ইবাদতের এ পরিচয়ের আওতায় শাহাদাতাইন (কালিমা ও রিসালাতের দুইটি সাক্ষ্যবাণী), সালাত, হজ্ব, সিয়াম, জিহাদ, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান, ফেরেশতা-রাসূল-শেষ বিচারের দিনের প্রতি ঈমান...ইত্যাদি সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এ ইবাদতের মূল ভিত্তি হলো ‘ইখলাস’। অর্থাৎ বান্দাহ্‌ সকল কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি কামনা করবে। ইরশাদ হচ্ছে- “আর সে আগুন থেকে রক্ষা পাবে; যে পরম মুত্তাকী। যে স্বীয় সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়। বরং তার মহান প্রতিপালকের সন্তোষ লাভের প্রত্যাশায় এবং সেতো অচিরেই সন্তোষ লাভ করবে।” [সূরা লাইল, ৯২:১৭-২১]

সুতরাং একনিষ্ঠতা (ইখলাস) এবং বিশ্বস্ততা থাকতে হবে। এ গুণদুটি প্রকাশ পাবে একজন মুমিনের আল্লাহ্‌র আদেশ পালন, তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকা, তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, অক্ষমতা ও অলসতা ত্যাগ করা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে সংযম অবলম্বন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। আল্লাহ্‌ বলেন- “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্‌কে ভয় করো এবং যারা সত্যবাদী (কথা ও কাজে) তাদের সঙ্গে থাকো।”[সূরা তাওবাহ্, ৯:১১৯]

এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইত্তেবা (অনুসরণ) করতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত বিধান (শরিয়ত) অনুযায়ী ইবাদত পালন করবে। মাখলুকের মনমত অথবা নতুন কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে আল্লাহর ইবাদত করবে না। এটাই হলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইত্তেবা বা অনুসরণের মর্মার্থ। সুতরাং একনিষ্ঠতা, বিশ্বস্ততা বা অকপটতা এবং ইত্তেবায়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ তিনটি উবুদিয়্যাহ্‌ বা আল্লাহর দাসত্বের অনিবার্য উপসর্গ। এ তিনটির সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক সেগুলো ‘মানুষের দাসত্ব’। রিয়া বা লৌকিকতা ‘মানুষের দাসত্ব’। শির্ক ‘মানুষের দাসত্ব’। আল্লাহ্‌র নির্দেশ ত্যাগ করে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে সন্তুষ্ট করা ‘মানুষের দাসত্ব’। এভাবে যে ব্যক্তি তার খেয়ালখুশিকে আল্লাহ্‌র আনুগত্যের উপরে প্রাধান্য দেবে সে আল্লাহর দাসত্বের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে এবং সরল পথ (সিরাতুল মুস্তাকীম) থেকে ছিটকে পড়বে। তাইতো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “দিনার ও দিরহামের পূজারি ধবংস হোক। ধবংস হোক কারুকাজের পোশাক ও মখমলের বিলাসী। যদি তাকে কিছু দেওয়া হয় সে সন্তুষ্ট থাকে; আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে মুখ থুবড়ে পড়ুক অথবা মাথা থুবড়ে পড়ুক। সে কাটা বিদ্ধ হলে কেউ তা তুলতে না পারুক।”

“আল্লাহ্‌র দাসত্ব” ভালোবাসা, ভয়, আশা ইত্যাদিকে শামিল করে। সুতরাং বান্দা তার রবকে ভালোবাসবে, তাঁর শাস্তিকে ভয় করবে, তাঁর সওয়াব ও করুণার প্রত্যাশায় থাকবে। এই তিনটি আল্লাহর দাসত্বের মৌলিক উপাদান।

আল্লাহ্‌র দাস হওয়া বান্দার জন্য সম্মানজনক; অপমানকর নয়। কবি বলেছেন,

আপনার সম্বোধন ‘হে আমার বান্দারা’ এর অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে এবং আহমাদকে আমার নবী মনোনীত করাতে আমার মর্যাদা আরো বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন আমি আকাশের নক্ষত্রকে পায়ের নীচে মাড়িয়ে চলেছি।

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

Address

Dhaka
1229

Telephone

+8801755650945

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Aladin.com Private Ltd. posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Aladin.com Private Ltd.:

Videos

Share