জাতির পিতাকে জানুন

জাতির পিতাকে জানুন জাতির পিতাকে নিয়ে জানুন অজানা সব কথা।

মহাম বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।  #বিজয়দিবস
16/12/2023

মহাম বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
#বিজয়দিবস

ছয় দফার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই।- বঙ্গবন্ধু #৬দফা  #বঙ্গবন্ধু  #শেখমুজিব  #বাঙালিরমুক্তিরসনদ
28/05/2023

ছয় দফার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই।
- বঙ্গবন্ধু
#৬দফা #বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিব #বাঙালিরমুক্তিরসনদ

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা: কিভাবে প্রচারিত হয়েছিল- বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হক খুলনা থেকে একট...
26/03/2023

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা: কিভাবে প্রচারিত হয়েছিল

- বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হক খুলনা থেকে একটি পরত্যাক্ত ট্রান্সমিটার এনে সচল করে রেখেছিলেন
- ২৫ মার্চের আক্রমনের খবর পাওয়ার সাথে সাথে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্প্রচার করা হয়
- প্রচার শেষে ট্রান্সমিটার ভেঙ্গে নুরুল হককে পালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু
- চট্টগ্রামে সলিমপুর ওয়্যারলেস স্টেশন থেকে বিদেশি জাহাজগুলোতে স্বাধীনতার ঘোষণার বার্তা প্রেরন করা হয়
- ঘোষণাটি দ্রুত লিখে নিয়ে হ্যান্ডবিল আকারে বিতরণ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা

#বাংলাদেশ #স্বাধীনতা #স্বাধীনতাঘোষণা #প্রচার #আওয়ামীলীগ

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণাবিবিসি: পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কা...
26/03/2023

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা

বিবিসি: পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।

ভয়েস অব আমেরিকা: ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন

দি স্টেটসম্যান (দিল্লী): বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে... শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।

দি ডেইলি টেলিগ্রাফ, লন্ডন: শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন ঘোষণা ও ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়

দি গার্ডিয়ান: ...শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে

বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ড: বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব

নিউইয়র্ক টাইমস: স্বাধীনতা ঘোষণার পর শেখ মুজিব আটক

বার্তা সংস্থা এপি: ইয়াহিয়া খান পুনরায় মার্শাল ল দেয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু

রয়টার্স: ১০ হাজার মানুষের নিহত হবার ও স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুজিবকে সম্ভবত আটক করা হয়েছে, এমন কথা বলা হয়।

ব্যাংকক পোস্ট: শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নাম দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে

#বাংলাদেশ #স্বাধীনতা #স্বাধীনতাঘোষণা #আন্তর্জাতিক #গণমাধ্যম #পাকিস্তান

25/03/2023

বিশ্ব মিডিয়ায় বিশেষ করে আমেরিকার NBC এবং ইংল্যান্ড এর BBC তে ২৯ মার্চ প্রচারিত হয় বাংলাদেশে পাকিস্তানি মিলিটারির প্রথম ক্র্যাকডাউনের খবর, একি সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণা করার কথাও প্রচার করে তারা। ভিডিওতে দেখা যায় পাকিস্তানী বাহিনীর ট্যাঙ্ক ঢাকা শহরের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর নির্মমভাবে গোলা ছুঁড়ছে আর ঢাকা শহরের বিভিন্ন যায়গায় জ্বলছে আগুন।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই, ঠিক ১২ টা ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
খবরে আরও বলা হয়, শহরে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলেও ঢাকার বাইরে অনেক যায়গায় মুক্তিকামী মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। অনেক যায়গায় মুক্তিযুদ্ধও শুরু হয়েছে।

©️Dhaka Television
#অপারেশনসার্চলাইট #পাকিস্তানীবাহিনী #স্বাধীনতারঘোষণা #বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিবুররহমান

25/03/2023

২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান টিক্কা খান কে আদেশ দেন ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে বাঙালিদের ও বিশেষ করে স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে।

আর সেই অপারেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোড নেম ছিল "বিগ বার্ড"। তাদের কাছে নির্দেশ ছিল বিগ বার্ড কে না পেলে সারা ঢাকা শহর জ্বালিয়ে দিতে, শেখ মুজিবকে খুঁজে পেতে যদি লাখ লাখ মানুষকেও হত্যা করতে হয়, তা যেন পাকিস্তানিরা করে।

এই ঘটনার আঁচ পেয়েই বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন রাত ৯ টার আগেই। আর তিনি প্রস্তুতি নিতে থাকেন স্বাধীনতা ঘোষণা করার। প্রথম বুলেট ছোড়া হলেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন এই কথা পাকিস্তানীরাও ভেবেছিল, আর ভেবেছিল স্বাধীনতা ঘোষণা করেই শেখ মুজিব আত্মগোপন করবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা করেননি। তিনি তাঁর বার্তা রেকর্ড করেন, একই সাথে টেলিগ্রাম প্রেরণ করতে শুরু করেন সব বড় জেলায়। এরপর অপেক্ষা করতে থাকেন কখন পাকিস্তানিরা অপারেশন শুরু করবে। তিনি জানতেন, যদি পাকিস্তানিরা ৩২ নাম্বারে এসে বঙ্গবন্ধুকে না পায় তাহলে তারা অনেক মানুষকে হত্যা করবে, নিরীহ মানুষের জীবন যাবে।

অপারেশন বিগ বার্ড ও পরবর্তীতে নিরীহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর পাকিস্তানিদের হামলার অনেক তথ্য জানতে পারবেন এই ভিডিওতে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনতে দীর্ঘ মুক্তির সংগ্রামে শহীদ সকল মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

#২৫মার্চ #স্বাধীনতারঘোষণা #বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিবুররহমান #অপারেশনবিগবার্ড #গণহত্যা #গণহত্যাদিবস #জয়বাংলা #অগ্নিঝরামার্চ #উত্তালমার্চ #অপারেশনসার্চলাইট

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে তখন তুমুল অস...
25/03/2023

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে তখন তুমুল অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও অগ্নিগর্ভ।

৭ মার্চ, ১৯৭১; ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পরই দেশজুড়ে হানাদার প্রতিরোধ ও রণপ্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোন দিকে এগুচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে চলে আসে ২৫ মার্চের কালরাত ও ২৬ মার্চ প্রথমপ্রহরে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ২৫শে মার্চ ছিল একটি নির্মম গণহত্যার রাত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলশ্রুতিতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। শুরু হয় বাংলাদেশের নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই। "অপারেশন সার্চ লাইট" নামে পরিচালিত ২৫শে মার্চের সেই অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়।

ওই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকাসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার করে ও সামরিক অভিযান চালিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা এবং তৎকালীর পূর্ব পাকিস্তানে, পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

এর আগে, উত্তাল মার্চের অগ্নগর্ভ পরিস্থিতে ঢাকায় আসে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাচার ইয়াহিয়া খান এবং ১৬ই মার্চ থেকে শুরু হয় মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। মার্চের ২৪ তারিখ পর্যন্ত আলোচনায় সময় গড়িয়ে গেলেও সমাধান মেলেনি। পঁচিশে মার্চ রাতে ঢাকায় শুরু হলো সামরিক অভিযান। এরই মধ্যে জানা গেল ইয়াহিয়া খান সেদিনই গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেছে।

একদিকে যখন পাকিস্তানিরা আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করছিল, তখনই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে শিপিং করপোরেশনের জাহাজে করে পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র ও সৈন্য আনার খবর প্রকাশ হয়। আলোচনার নামে কৌশলে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে সেই সময়ে।

পঁচিশে মার্চ আক্রমণ চালানোর সবুজ সংকেত দেয় জেনারেল টিক্কাখান:

সেই সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক তার বই 'উইটনেস টু সারেন্ডার' এ লিখেছেন, ''শেখ মুজিব আর ইয়াহিয়া খানের মধ্যে আলোচনার কী পরিণাম হয়, তা নিয়ে ২৫শে মার্চ দুপুরে মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন নিজের দপ্তরে বসে যখন ভাবছিলেন, তখন তাকে ফোন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান। সরাসরি বলেন, "খাদিম, আজই করতে হবে কাজটা।" খাদিম এই নির্দেশের জন্যেই অপেক্ষাই করছিলেন। নিজের কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গে ওই আদেশ পালনের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।''

সিদ্দিক সালিক আরো লিখেছেন, "ক্র্যাকডাউনের সময় ঠিক করা হয়েছিল ২৬শে মার্চ রাত একটায়। আশা করা হচ্ছিল যে ততক্ষণে ইয়াহিয়া খান করাচিতে পৌঁছে যাবেন।"

পঁচিশ তারিখ রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার সময় ঢাকার স্থানীয় কমান্ডার টিক্কা খানের কাছে অনুমোদন চেয়েছিল ক্র্যাকডাউনের সময়টা এগিয়ে আনার। সালিক লিখছেন, "জেনারেল টিক্কা আদেশ দিয়েছিলেন যতটা সম্ভব দেরি করতে। এরপর রাত সাড়ে এগারোটায় পুরো শহরের ওপরে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা করেছিল। শুরু হয়েছিল অপারেশন সার্চলাইট।"

যুদ্ধের প্রস্তুতি:

তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতা ড. কামাল হোসেন বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় তার বাসভবন, ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে টেলিফোনে সারা দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন।

ড. হোসেন বলেন নির্দেশনা পৌঁছনোর ওই প্রক্রিয়ায় তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। "পঁচিশ তারিখ সন্ধ্যার দিকে আমরা রিপোর্ট পাওয়া শুরু করলাম যে, সব ট্যাংক ক্যান্টনমেন্টে লাইন আপ করা হচ্ছে, আক্রমণ করার প্রস্তুতি সেখানে চলছে। আমরা এটা বঙ্গবন্ধুকে রিপোর্ট করলাম, বঙ্গবন্ধু তখন বললেন, হ্যাঁ এখন তো মনে হয় তারা অ্যাকশনে যাবে।

শেখ মুজিবুর রহমানের যুদ্ধের প্রস্তুতির সেই নির্দেশ ছিল খুবই সুস্পষ্ট। "ইনস্ট্রাকশানের একটা ফর্মূলা ছিল, যে মুহূর্তে তারা আক্রমণ শুরু করবে, সেই মুহূর্ত থেকে আমরা স্বাধীন। আঘাত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা স্বাধীন। যে যা কিছু পাই, তা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ প্রতিরোধে নেমে যাব। এই কথাটা ফোনে আমরা বলা শুরু করলাম। যে যেখানে যে কোন অস্ত্র ধরতে পার, সেটা নিয়ে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোল," বলেন ড. হোসেন।

পাকিস্তানিদের আক্রমণ:

পাকিস্তানি বাহিনী ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে শুরু করে "অপারেশন সার্চ লাইট" নামে পরিচালিত বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করার অভিযান। মধ্যরাতে আক্রমণ চালায় ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এবং পিলখানায় তৎকালীন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ইপিআর-এর সদর দপ্তরে। সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল জগন্নাথ হল এবং নীলক্ষেতে শিক্ষকদের একটি আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্যাংকসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র মানুষের উপর চড়াও হয় পাকিস্তানি বাহিনী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন রবিউল আফতাব। তখন তার বয়স মাত্র ছয়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার পাশা ছিলেন তার পিতা। বিবিসি বাংলাকে ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, রাত্রি একটু বেশি হতেই শোনা গেল প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ। তার এটুকু মনে আছে যে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বেড়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করল। "কান ফাটানো আওয়াজ, কিছুক্ষণের মধ্যে চারিদিকে প্রচণ্ড আলো- এখন যেমন আমরা ফ্লাড-লাইট বলি, সেরকম আলো। কিছুক্ষণের মধ্যে শোনা গেল অনেক গাড়ির আওয়াজ। আমাদের ছাদের ওপর কেমন জানি ভারী মচমচে জুতার আওয়াজ। আমরা ভয়ে খাটের নিচে ঢুকে গিয়েছিলাম।"

পরে তিনি শুনেছিলেন ছাদের দেয়ালে চারিদিক থেকে পাকিস্তানি সেনারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে। চারিদিকে মানুষের "বাঁচাও বাঁচাও" ভয়ার্ত চিৎকারের মধ্যে ২৫শে মার্চের সেই "বিভীষিকাময়" গোটা রাত্রি কাটায় তার পরিবার।

সেই আক্রমণের মধ্যেই ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে বাঙালি জাতির একচ্ছত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারপর তারা তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে।

গ্রেফতারের ঘটনার কয়েক ঘন্টা আগে রাত ন'টার দিকে বঙ্গবন্ধুর সাথে শেষ দেখা করে বিদায় নিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং আমীর-উল ইসলাম। ড. হোসেন বিবিসিকে বলেন, তারা সেসময় নিরাপদ জায়গায় গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। তাদের বিদায় দেবার সময় শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন তিনি থেকে যাচ্ছেন অন্য এক হিসাব থেকে।

ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, "বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেখ, আমার সারা জীবনে আমি ঘন ঘন অ্যারেস্ট হয়েছি। আমি জানি আমাকে ধরলে হয়ত তাদের আক্রমণের তীব্রতা অন্তত কিছুটা কমবে। আর আমাকে যদি না পায়, তাহলে প্রতিশোধ নেবে তারা এলোপাথাড়ি আরও লোক মেরে।"

প্রতিরোধ:

পাকিস্তানিদের হামলার পর, বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সেসময় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) নামের এই বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতৃত্বে ছিলেন বাঙালি কর্মকর্তা মেজর রফিকুল ইসলাম।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ২৪শে মার্চ রাতেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের সীমান্তগুলোতে তাদের বাহিনীতে পাকিস্তানি সদস্যদের হত্যা করে পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়েছিল। তারা ২৫শে মার্চ ষোলোশহরের সেনা হেডকোয়ার্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরো শহরের দখল তারা গ্রহণ করেন রাত ১১টা বিশ মিনিটে।

তিনি আরো বলেন, "আমি অবস্থান নিয়ে ফেলেছি রেলওয়ে পাহাড়ে-২৫শে রাত্রি- তখন ১১টা কুড়ি মিনিট। কিছুক্ষণ পর রাত ১১টা তিরিশের দিকে দেখি একটা গাড়ি রেলওয়ে হিল এবং বাটালি হিলের মধ্যে যে রাস্তা, সে রাস্তা দিয়ে পোর্টের দিকে যাচ্ছে। আমার এক সুবেদার, আইজুদ্দীন নায়েব সুবেদার বলল যে, সার এখানে তো অনেকগুলো পাকিস্তানি সৈন্য আছে- পাঞ্জাবি, একটা রকেট লঞ্চার মারি! আমি বললাম রাখো, ওরা বোধহয় দেখছে রাস্তাটা পরিষ্কার আছে কিনা!"

মেজর রফিকুল ইসলাম বলেন, তার ধারণা পাকিস্তানি সেনাদের পরিকল্পনা ছিল রাস্তা পরিষ্কার থাকলে পোর্টে যেসব অস্ত্রশস্ত্র আছে সেগুলো নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে যাবে। তিনি তার সুবেদারকে বলেছিলেন সেটা হলে অস্ত্র নিয়ে ফেরার সময় আমরা আক্রমণ চালিয়ে অস্ত্রগুলো ধ্বংস করতে পারব।

তিনি জানান, ওই গাড়িটা কিছুদূর গিয়ে আগ্রাবাদে ঢোকার মুখে একটা পেট্রল পাম্পে থামে। ওখানে আমাদের বাঙালিরা টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। এর দু তিন মিনিটের মধ্যে দেখি খুব দ্রুত একটা জিপ সেখানে গিয়ে পৌঁছয়। সেটাও ওখানে থামে এবং কিছুক্ষণ পর দুটো গাড়িই একসাথে ফিরে আসে। পরে জেনেছিলাম প্রথম গাড়িতে জিয়া সাহেব পোর্টে যাচ্ছিলেন। সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করার জন্য তাকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তখনও শহর আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।

তিনি বলেন, ওই ব্যারিকেডে আটকে যাবার সময় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের খবর জিয়াউর রহামনের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় বলে তিনি পরে জেনেছিলেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে আটক হবার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ঘোষণা তিনি দেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকেই। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তাদের সম্প্রচার শুরু করে ২৬শে মার্চ। তৎকালীন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেতারের চট্টগ্রামের কয়েকজন কর্মী শহর থেকে অনেকটা দূরে নিরাপদ জায়গা হিসাবে কালুরঘাটে বেতারেরই ছোট্ট একটি কেন্দ্রে তাদের প্রথম অনুষ্ঠান করেছিলেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক বেলাল মোহম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওই অনুষ্ঠানেই স্বাধীনতার সেই ঘোষণা প্রথম সম্প্রচার করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন রাজনীতিকদের মধ্যে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান।

তিনি জানান, সকালবেলা ২৬শে মার্চ আমরা শুনতে পেয়েছি একটা মাইকিং যে গত রাতে ঢাকায় আকস্মিকভাবে পাকিস্তান আর্মি নিরস্ত্র জনপদে আক্রমণ করেছে। এবং খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ চলছে। এই অবস্থায় আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এইটুক মাইকিং আমরা শুনেছি। ওই সময় দুপুরবেলা একটা লিফলেট পেলাম হাতে। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের ড. আনোয়ার আলি একটা কাগজ আমার হাতে দিলেন। উনি নিজে বললেন একটা তারবার্তা এসেছে ঢাকা থেকে। আমরা এটার অনুবাদ করে এখন লিফলেট আকারে ছেড়েছি আর মাইকিংও করেছি আমরা।

একটি ভবনের মাথায় ট্রান্সমিটার যন্ত্র:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পরবর্তীতে কয়েকদফায় সম্প্রচারিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। এ ব্যাপারে বেলাল মোহম্মদ জানান, কালুরঘাট থেকে প্রথম সেই ঘোষণা সম্প্রচারের ব্যবস্থা তারা করতে পেরেছিলেন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। সেই প্রথম অনুষ্ঠানে এম এ হান্নান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি পড়েন এবং তার ভিত্তিতে একটি বক্তৃতাও দেন।

তিনি বলেন, "আর আমরা বেতার কর্মীরা নিজেদের ভয়েসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার তারবার্তার অনুবাদ যেটা লিফলেট আকারে পেয়েছিলাম, সেটা বিভিন্ন কণ্ঠে বারবার প্রচার করি ২৬শে মার্চ প্রথম ট্রান্সমিশানের এক ঘন্টার মত অনুষ্ঠানে।"

কালুরঘাট কেন্দ্র থেকে ২৭শে মার্চ সন্ধ্যাতেও দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠান সম্প্রচারে সক্ষম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। সেদিনের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার কথা ছিল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মেজর রফিকুল ইসলামের। কিন্তু তিনি যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় সেই ঘোষণা পাঠ করানো হয় জিয়াউর রহমানকে দিয়ে। সেসময় তিনিও সেনবাহিনীতে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন।

বেলাল মোহম্মদ জানান, জিয়াউর রহমান ওই ঘোষণা পাঠ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের নামে।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য আমি যখন এদিক ওদিক খোঁজ করছি, এক বন্ধু আমাকে বললেন যে, একজন মেজর আছেন পটিয়াতে। তিনি সোয়াতের অস্ত্র নামাবার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দেড়শ সৈন্য নিয়ে হেডকোয়ার্টারের বাইরে আছেন পটিয়াতে। এ খবর শুনে ২৭শে মার্চ দিনের বেলায় আমি পটিয়াতে চলে যাই।"

বেলাল মোহম্মদ জানান, তার অনুরোধে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পটিয়া থেকে সৈন্য নিয়ে কালুরঘাটে যান জিয়াউর রহমান। এরপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭শে মার্চ রাত সাড়ে সাতটার অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবের নামে যে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন জিয়া।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণার খবর:

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের ঢাকার পরিস্থিতি ও শেখ মুজিবকে আটকের ঘটনা ২৬ ও ২৭শে মার্চেই বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের পত্রিকা বা সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশিত হয়। তখন ইন্টারনেট না থাকায় অধিকাংশ সংবাদ প্রকাশিত হতে দুই বা একদিন বেশি সময় লাগতো।

বিবিসির খবরে তখন বলা হয়, "...কলকাতা থেকে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের খবরে প্রকাশ যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।..."

ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়: "...ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবুর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।..."

দিল্লির দ্য স্টেটসম্যান-এর খবর ছিল: "বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে রহমানের পদক্ষেপ। একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।"

দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, (লন্ডন) পত্রিকাযর ২৭ মার্চের বলা হয়: 'সিভিল ওয়ার ফ্লেয়ারস ইন ইস্ট পাকিস্তান: শেখ এ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়।

ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় ২৭শে মার্চের এক খবরে বলা হয়, "...২৬শে মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে রেডিওতে ভাষণ দেয়ার পরপরই দ্য ভয়েস অব বাংলাদেশ নামে একটি গোপন বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর এই ঘোষণা অপর এক ব্যক্তি পাঠ করেন।"

এর বাইরে ভারতের বহু সংবাদপত্র এবং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ক্যানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, হংকং, নরওয়ে, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের খবরে স্থান পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর।

আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ডের ২৭শে মার্চের সংখ্যার একটি খবরের শিরোনাম ছিলো, "বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব।"

নিউইয়র্ক টাইমস-এও শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপানো হয়। পাশেই লেখা হয় "স্বাধীনতা ঘোষণার পরই শেখ মুজিব আটক"।

বার্তা সংস্থা এপির খবর ছিল: "ইয়াহিয়া খান পুনরায় মার্শাল ল দেয়ার ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে।"

আয়ারল্যান্ডের দ্য আইরিশ টাইমস-এর শিরোনাম ছিল - পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা আর সাথে ছিল শেখ মুজিবের ছবি।

ব্যাংকক পোস্ট-এর খবরে বলা হয়, "শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নাম দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।"

স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মুক্তি বাহিনীর প্রস্তুতি:

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে যাওয়ার পর, ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়।

পাকিস্তানি বাহিনীর ২৫শে মার্চের আক্রমণের মুখে যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানে, যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাঙালি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, নিরস্ত্র বাঙালির সেই প্রতিরোধ রূপ নিয়েছিল নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে। অবশেষে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান বুকে লালন করে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনে বাংলার বীর জনতা।

#অগ্নিঝরামার্চ #বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিবুররহমান #শেখমুজিব #মার্চ১৯৭১ #২৩মার্চ #২৪মার্চ #উত্তালমার্চ #প্রতিরোধ_দিবস #স্বাধীনতারমাস #জয়বাংলা

উত্তাল ২৩ মার্চঃ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার ইঙ্গিত দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান #মার্চ১৯৭১  #অগ্নিঝরা...
23/03/2023

উত্তাল ২৩ মার্চঃ
পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার ইঙ্গিত দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

#মার্চ১৯৭১ #অগ্নিঝরামার্চ #পতাকাউত্তোলন #বাংলাদেশ #বঙ্গবন্ধু #স্বাধীনতা #স্বাধীনতাঘোষণা

"বাংলার জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যবদ্ধ মুক্তিপিপাসু গণমানুষকে পৃথিবীর কোন শক্তিই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।" - ১৪ মার্চ, ১৯৭...
14/03/2023

"বাংলার জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যবদ্ধ মুক্তিপিপাসু গণমানুষকে পৃথিবীর কোন শক্তিই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।"
- ১৪ মার্চ, ১৯৭১
বঙ্গবন্ধু

#অগ্নিঝরা_মার্চ #মার্চ১৯৭১ #বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিব

12/03/2023

বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের ৬-দফা উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বলতে শুর করে আওয়ামী লীগ নেতা বৈষম্য-শোষণ অবসানের নামে 'পাকিস্তান ভাঙার কর্মসূচি' দিয়েছেন। কেউ বলেন- শেখ মুজিব বিচ্ছিন্নতাবাদী, কেউ বলেন ভারতের দালাল, কেউ বলেন কুখ্যাত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের হয়ে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু আমাদের এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডের আপামর জনগণ পেয়ে যায় মুক্তির সনদ।

#৬দফা #বঙ্গবন্ধু # #অগ্নিঝরামার্চ #আন্দোলন

অগ্নিঝরা মার্চঃ ৩ মার্চ ১৯৭১৭ কোটি মানুষকে হত্যা করতে পারবেন না। আমি না থাকলেও বাংলার মানুষ তাদের লক্ষ্যপথে এগিয়ে যাবে।-...
03/03/2023

অগ্নিঝরা মার্চঃ ৩ মার্চ ১৯৭১
৭ কোটি মানুষকে হত্যা করতে পারবেন না। আমি না থাকলেও বাংলার মানুষ তাদের লক্ষ্যপথে এগিয়ে যাবে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

#বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিব #অগ্নিঝরামার্চ

অগ্নিঝরা মার্চ, ১৯৭১ ২ মার্চ ।। "বাংলাদেশে আগুন জ্বালাবেন না। যদি জ্বালান তবে সে দাবানল হতে আপনারাও রেহাই পাবেন না।" -  ...
02/03/2023

অগ্নিঝরা মার্চ, ১৯৭১
২ মার্চ ।।

"বাংলাদেশে আগুন জ্বালাবেন না।
যদি জ্বালান তবে সে দাবানল হতে আপনারাও রেহাই পাবেন না।"
- পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিবৃতি

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব জনগনের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে বলেছেন সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ভাবে হরতাল পালন এবং যাতে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের মত অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার প্রতি করা নজর রাখার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন যেখানেই জন্ম গ্রহন করুক না কেন বাংলাদেশে বসবাসকারী সকলেই বাঙালি, তাদের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। ঢাকায় গুলিবর্ষণের নিন্দা করে তিনি বলেন বাংলাদেশে আগুন জ্বালাবেন না। যদি জ্বালান তবে সে দাবানল হতে আপনারাও রেহাই পাবেন না। তিনি ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর দুইটা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহবান জানান। তিনি ৩ মার্চ শোক দিবস পালনের জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন এখন পশ্চিম পাকিস্তান হতে যে সকল বিমান আসছে সেগুলিতে সৈন্য বহন করে আনা হচ্ছে। তিনি অবিলম্মবে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবী জানান।

ধানমণ্ডি বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

ধানমণ্ডি বাসভবনের সামনে সমবেত জনতার উদ্দেশে শেখ মুজিব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন পল্টনে ৩ তারিখ ছাত্রলীগের সমাবেশের পর তিনি এক গনমিছিলের নেতৃত্ব দিবেন। রেডিও টেলিভিশনের কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন আওয়ামী লীগের সংবাদ প্রচার না করলে প্রতিষ্ঠান দুটি অচল করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ৭ মার্চের সভায় তিনি পরবর্তী কর্মসূচী প্রদান করবেন। মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক অবাঙ্গালী জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে এখানে আগমন করেছিল।

#বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিব #অগ্নিঝরামার্চ #উত্তালমার্চ

১ মার্চ ১৯৭১, বাঙ্গালীর স্বাধীনতার মাস শুরু ।১৯৭১ সালের মার্চ মাস । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনার মাস ।...
01/03/2023

১ মার্চ ১৯৭১, বাঙ্গালীর স্বাধীনতার মাস শুরু ।

১৯৭১ সালের মার্চ মাস । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনার মাস । বিশ্বকাঁপানো গৌরবগাঁথার এক একটি দিন বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে এক একটি হীরক খন্ড ।

মার্চের এই দিনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষনে ৩রা মার্চের গণপরিষদের সাধারন অধিবেশ স্থগিত ঘোষনা করলে পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ প্রথম স্লোগান তুলে," বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর "। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের দাবীর মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতাল এবং ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষনা দেন ।

আন্তর্জাতিক একাদশ ও বিসিসিপি একাদশের মধ্যেকার টেস্ট ম্যাচ পণ্ড হয়ে যায় ইয়াহিয়ার ঘোষণার পরপরই। ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকায় নামে মিছিলের ঢল। একই কাহিনী ঘটে দেশের অন্যান্য শহরগুলোতেও। সিলেট মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ক্লাস বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। খুলনা শহীদ মিনার এবং যশোরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হয় প্রতিবাদী জনতা।

ঢাকা হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশন থেকে মিছিল বের করে আইনজীবীরা শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে। তারা বায়তুল মোকাররমে সভা করে ইয়াহিয়ার ঘোষণার প্রতিবাদ জানায়। ইয়াহিয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলো মুসলিম লীগের একাংশের প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে দল থেকে পদত্যাগ করেন সাধারণ সম্পাদক খান এ সবুর। তিনি দলের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি নেন।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাষক-শোষক গোষ্ঠীর নাগপাশ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দুইযুগের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের হাত ধরে এই মার্চেই ঘোষিত হয়েছিল বাঙ্গালী মুক্তি সনদের অমর কাব্য , ''এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম'' ।

এই মার্চ মাসেই পাক হানাদার বাহিনী বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা শুরু করলে মূহুর্তেই গর্জে উঠে বাঙ্গালী , ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধে।

জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনা করেন স্বাধীনতা। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ।

#বাংলাদেশ
#অগ্নিঝরামার্চ #স্বাধীনতারমাস #শেখমুজিব #শেখমুজিবুররহমান

১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙ্গালির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠারও আন্...
21/02/2023

১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙ্গালির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠারও আন্দোলন। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা শেখ মুজিব ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালির সর্বাত্মক লাভ করেন। বায়ান্নোর পথ ধরে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়। ১৯৭১ সালের ২০-২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়। বঙ্গবন্ধু শহীদ মিনার পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে মিছিলের আগে মিনার চত্বরে এক বিরাট ছাত্র-জনসমাবেশে ভাষণ দেন। উক্ত ভাষণের অংশবিশেষ উদ্ধৃত হলো-

"বাঙ্গালিদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে আরো রক্তদানের জন্যে ঘরে ঘরে প্রস্তুত থাকুন। বাঙ্গালি শহীদ হবে না। এবার তারা গাজী হয়ে বাঁচবে। যারা বুকের রক্ত দিয়ে দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, যারা নিজের রক্ত দিয়ে আমাকে মুক্ত করে এনেছে, মধ্যরাতে এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে বলছি, তাঁদের রক্তের ঋণ আমি শোধ করবোই। শহীদের আত্মা আজ বাংলার ঘরে ঘরে ফরিয়াদ করে ফিরছে, বাঙ্গালি তুমি কাপুরুষ হয়ো না, স্বাধিকার আদায় করো।

আমি আজ এই শহীদ বেদী থেকে বাংলার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, প্রস্তুত হও, দরকার হয় রক্ত দিব। নির্বাচনে আমরা বিপুল সাফল্য অর্জনের পরও বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আজো চলছে। যে ষড়যন্ত্রের পরিণতি এই ২১ ফেব্রুয়ারি, যে ষড়যন্ত্রের পরিণামে বাঙ্গালিকে বারবার রক্ত দিতে হয়েছে, সে ষড়যন্ত্র আজো শেষ হয়নি। কিন্তু শোষকদের জানা উচিত, ৫২ সালে বাঙ্গালির যে রূপ ছিল, তার সাথে ৭১ সালের বাঙ্গালির অনেক পার্থক্য রয়েছে।

কারোর উপর আমাদের কোন আক্রোশ নাই। আমরা স্বাধিকার চাই। আমরা চাই আমাদের মতোই পাঞ্জাবী, সিন্ধু, বেলুচ, পাঠানরা নিজ নিজ অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক। কিন্তু তার মানে এই না যে ৭ কোটি বাঙ্গালী কারো গোলাম হয়ে থাকবে। ভ্রাতৃত্বের অর্থ দাসত্ব নয়-সম্প্রীতির, সংহতির নামে বাংলাকে আর কলোনি বা বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে না। শুধু গুলি খেয়ে নয়, না খেয়েও শহীদ হচ্ছে। যারা বাঙ্গালীর স্বাধিকারের দাবী বানচালের ষড়যন্ত্র করছে, বাঙ্গালিদের ভিখিরী বানিয়ে, ক্রীতদাস করে রাখতে চাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে যে কোন মূল্যে ব্যর্থ করে দেয়া হবে।

সামনে আমাদের কঠিন দিন। আমি আনাদের মাঝে নাও থাকতে পারি। মানুষকে তো একদিন মরতেই হয়। তাই আজ আমি আপনাদের এবং সারা বাংলার মানুষকে ডেকে বলছি, চরম ত্যাগের জন্যে প্রস্তুত হোন। বাঙ্গালি যেন আর অপমানিত-লাঞ্চিত না হয়। শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।

শহীদ স্মৃতি অমর হোক।"

#বঙ্গবন্ধু #শেখমুজিব #ভাষাআন্দোলন #শহীদদিবস #একুশেফেব্রুয়ারি #আন্তর্জাতিকমাতৃভাষাদিবস #বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিববিশ্বজিত ঘোষঃপূর্ববাংলার পশ্চাৎপদ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষায় আকৃষ্ট করা এবং ব...
15/02/2023

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

বিশ্বজিত ঘোষঃ

পূর্ববাংলার পশ্চাৎপদ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষায় আকৃষ্ট করা এবং বাংলায় ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শে পরিকল্পিত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বহু গুণী মানুষের সান্নিধ্যে ধন্য হয়ে ওঠে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অম্ল-মধুর সম্পর্কের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন বঙ্গবন্ধু, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন বঙ্গবন্ধু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন সমর্থন করার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কয়েক ঘণ্টা আগে ১৯৭৫ সালের মধ্য-আগস্টে সপরিবারে শহীদ হন বঙ্গবন্ধু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, একটি মহৎ প্রতিষ্ঠান আর একজন মহান মানুষ, উভয়ই প্রায় সমান বয়সী। শতবর্ষ আগে প্রায় কাছাকাছি সময়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান আর ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের মিশন স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৪১ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে আইএ ক্লাসে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে আইএ পাস করে এখানেই ভর্তি হন স্নাতক শ্রেণিতে। ১৯৪৭ সালে ইসলামিয়া কলেজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং সেপ্টেম্বর মাসে বেকার হোস্টেলের আবাস ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। অতঃপর ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নতুন রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। এ পর্বে প্রধানত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা, দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সংগঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমবেত করা এবং নেতৃত্ব প্রদান এবং তৃতীয়ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন সমর্থন করা ও কারাবরণ।

নঈমুদ্দিন আহমদকে আহ্বায়ক করে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে গঠিত ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিল খুবই নিবিড়। বস্তুত, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় প্রায় সবাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই ছাত্র-সংগঠন সৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমানই পালন করেন মুখ্য ভূমিকা। বস্তুত, তার একক চিন্তা ও উদ্যোগের ফলেই গঠিত হয়েছে এই ছাত্র-সংগঠন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা আবদুল মতিন উপস্থাপন করেছেন এভাবে : “১৯৪৭-এর ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো। এর মাস চারেক পর একদিন শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের ফজলুল হক হলে আসেন। তিনি এক ছাত্র সমাবেশে বক্তৃতা দেন। আমিও শ্রোতা হিসেবে ওই ছাত্রসভায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা পাকিস্তান পেয়েছি। একে উন্নত করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এজন্য দরকার একটি শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন। চলুন, আমরা শাহ আজিজুর রহমানের কাছে যাই এবং নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগকে নতুন করে শক্তিশালী করার জন্য তাকে বলি।’ শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমরা বেশ কয়েকজন ছাত্র শাহ আজিজুর রহমানের কাছে গেলাম। শাহ আজিজুর রহমান তখন নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান শাহ আজিজুর রহমানকে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিল সভা ডাকার জন্য অনুরোধ করেন। শাহ আজিজুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাব অনুযায়ী কাউন্সিল সভা ডাকতে রাজি হলেন না। শাহ আজিজুর রহমান নাজিমউদ্দীন সরকারের সমর্থক। কাউন্সিল সভা আহ্বান করা হলে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগে তার নেতৃত্ব বহাল থাকবে না, তা তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘আপনারা এগিয়ে আসুন, আমরা একটি নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ে তুলি।’ আমি তার প্রস্তাবে রাজি হলাম। মোগলটুলী ওয়ার্কার্স ক্যাম্প-সমর্থিত নেতৃস্থানীয় ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের আবেদনে সাড়া দিলেন। অলি আহাদ, নঈমুদ্দীন আহমদ, আবদুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমিসহ আরও কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ছাত্র ফজলুল হক হল মিলনায়তনে এক কর্মীসভায় বসি। এ সভায় আমরা ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ গঠন করি। অলি আহাদ ও মোহাম্মদ তোয়াহা সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য সভায় দাবি জানান। এই দাবির বিরোধিতা করে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, ‘এ সময় এটা বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। সরকার ভুল ব্যাখ্যা দেবে। পরে সময় হলে তা বাদ দেওয়া যাবে।’ আমি শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানালাম। ‘মুসলিম’ শব্দ রাখা হলো। অলি আহাদ তা মেনে নিলেন। মোহাম্মদ তোয়াহা তা মানলেন না। তিনি এই সংগঠনের সঙ্গে তার আর কোনো সম্পর্ক রাখলেন না। আমরা নঈমুদ্দীন আহমেদকে এই নতুন ছাত্র সংগঠনের আহ্বায়ক নির্বাচন করি। ১৯৪৮-এর ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।”

শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা ও উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ১৯৪৭-১৯৫২ কালপর্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সফল করার জন্য শেখ মুজিবই সংগঠনের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠন সৃষ্টি করলেও এর মূল কোনো পদে নিজেকে রাখেননি। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রথম সাংগঠনিক কমিটির অন্যতম সদস্য। নঈমুদ্দীন আহমদ আহ্বায়ক থাকলেও সংগঠনের মূল দায়িত্ব পালন করতেন শেখ মুজিবুর রহমান। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন: ‘যদিও নঈমুদ্দীন কনভেনর ছিল, কিন্তু সবকিছুই প্রায় আমাকেই করতে হতো।’

অতএব, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সংগঠনে যে ভূমিকা পালন করেছে, সংগঠনের মূল চালিকশক্তি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান যে তার অংশী, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যায়, এমআর আখতার মুকুলের ভাষ্য : ‘১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন সংগ্রামী ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ক্লাসে ভর্তি হন। এ সময় তিনি অনুভব করেন যে, অচিরেই মুসলিম লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এসব ইস্যুর অন্যতম হবে বাংলা ভাষার আন্দোলন। এ জন্যই শেখ মুজিব স্বয়ং উদ্যোগ গ্রহণ করে ... পৃথব ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করলেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালে শেখ মুজিবুর রহমানের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। ছাত্রলীগের নানা অনুষ্ঠান বা সাংগঠনিক আলোচনা সভায় তিনিই পালন করতেন মুখ্য ভূমিকা। সাংগঠনিক কাজে এক হল থেকে অন্য হলে তিনি যাতায়াত করতেনÑ কলাভবনের নানা কাজে অংশগ্রহণ করতেন। এভাবে বিবেচনা করলে বলা যায়- ১৯৪৮-৪৯ কালপর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ সংগঠনসূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কের একটা প্রধান অনুষঙ্গ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। এ সূত্রে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমদ্দুন মজলিসের যৌথ উদ্যোগে ফজলুল হক মুসলিম হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের একটি বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়। এই সভা আহ্বানে শেখ মুজিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুদ্দীন আহমদ। এই সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আবুল কাসেম, রণেশ দাশগুপ্ত, আজিজ আহমদ, সরদার ফজলুল করিম, অজিত গুহ, শামসুদ্দিন আহমদ, শামসুল হক, নঈমুদ্দীন আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, তোফাজ্জল আলী, মোহাম্মদ তোয়াহা, আলী আহমেদ, মহিউদ্দীন, আনোয়ারা খাতুন, শামসুল আলম, শহীদুল্লা কায়সার, শওকত আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, লিলি খান, আবদুল আউয়াল, ওয়াহেদ চৌধুরী, নূরুল আলম, কাজী গোলাম মাহবুব প্রমুখ। উল্লেখ্য, এদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই সভায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ পুনর্গঠিত হয়। এটিকেই বলা হয় ‘দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ বা ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন শামসুল আলম। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রাবাস থেকে দুজন করে প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনে তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে মযহারুল ইসলাম লিখেছেন : ‘এই সংগ্রাম পরিষদ গঠনে শেখ মুজিব বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন এবং তার ভূমিকা ছিল যেমন বলিষ্ঠ, তেমনি সুদূরপ্রসারী।’

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ২ মার্চের সভাতেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এবং পাকিস্তান গণপরিষদে সরকারি ভাষার তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ১১ মার্চ সমগ্র পূর্ববাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংগঠনিক সফরে বেরিয়ে পড়েন, উদ্দেশ্য জেলায় জেলায় ১১ মার্চের কর্মসূচি পালনের ব্যবস্থা করা। শেখ মুজিবুর রহমান এ উদ্দেশ্যে ফরিদপুর, যশোর, খুলনা ও বরিশাল সফর করেন। সর্বত্রই ছাত্রসভা করে তিনি ১১ মার্চের কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান। ১১ মার্চের ধর্মঘট সম্পর্কে বিস্তারিত কর্মসূচি নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি সভা বসে। এই সভা সম্পর্কে শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লেখেন : ‘রাতে কাজ ভাগ হলো- কে কোথায় থাকব এবং কে কোথায় পিকেটিং করার ভার নেবে।’ ১১ মার্চের ধর্মঘটের জন্য ছাত্ররা ব্যাপক প্রস্তুতি চালায়- কে কোন স্থানে পিকেটিংয়ে নেতৃত্ব দেবে, তাও ঠিক করা হয়। পিকেটিং চলাকালে নেতৃস্থানীয় কেউ গ্রেপ্তার হলে তার দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে, তাও ঠিক করা হয়। এসব কর্মসূচি প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

১১ মার্চ সেক্রেটারিয়েটের গেটে পিকেটিং করার সময় পুলিশ শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃস্থানীয় ছাত্রদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীনের চুক্তির মাধ্যমে ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে চলে আসেন। ১৬ মার্চ দুপুর একটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের বিশাল সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ছাত্র-জমায়েতে শেখ মুজিবুর রহমানের এটাই প্রথম সভাপতিত্ব করা। এ সম্পর্কে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন : ‘১৬ তারিখ সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রসভায় আমরা সকলেই যোগদান করলাম। হঠাৎ কে যেন আমার নাম প্রস্তাব করে বসল সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য। সকলেই সমর্থন করল। বিখ্যাত আমতলায় এই আমার প্রথম সভাপতিত্ব করতে হলো। অনেকেই বক্তৃতা করল। সংগ্রাম পরিষদের সাথে যেসব শর্তের ভিত্তিতে আপস হয়েছে তার সকলগুলিই সভায় অনুমোদন করা হলো। তবে সভা খাজা নাজিমুদ্দীন যে পুলিশি জুলুমের তদন্ত করবেন, তা গ্রহণ করল না; কারণ খাজা সাহেব নিজেই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমি বক্তৃতায় বললাম, ‘যা সংগ্রাম পরিষদ গ্রহণ করেছে, আমাদেরও তা গ্রহণ করা উচিত। শুধু আমরা ঐ সরকারি প্রস্তাবটা পরিবর্তন করতে অনুরোধ করতে পারি। এর বেশি কিছু না।’ ছাত্ররা দাবি করল, শোভাযাত্রা করে আইন পরিষদের কাছে গিয়ে খাজা সাহেবের কাছে এই দাবিটা পেশ করবে এবং চলে আসবে। আমি বক্তৃতায় বললাম, তার কাছে পৌঁছে দিয়েই আপনারা আইনসভার এরিয়া (বর্তমান জগন্নাথ হল) ছেড়ে চলে আসবেন। কেউ সেখানে থাকতে পারবেন না। কারণ সংগ্রাম পরিষদ বলে দিয়েছে, আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে কিছুদিনের জন্য সকলেই রাজি হলেন।” এই পর্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। প্রসঙ্গত প্রণিধানযোগ্য আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর এই ভাষ্য : ‘শুধু তাই নয়, ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের মুক্তি লাভের পর আন্দোলনের নেতৃত্ব মুখ্যত শেখ মুজিবের হাতেই আবার চলে আসে।’

পরিষদ ভবনে খাজা নাজিমুদ্দীনের কাছে দাবি উত্থা পন সূত্রে বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। উপায়ান্তর না দেখে মুখ্যমন্ত্রী সেনাবাহিনী তলব করেন। সেনা সদস্যরা ছাত্রদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় এবং পরিষদ ভবনের পেছনের দরজা দিয়ে খাজা নাজিমুদ্দীনকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। এ প্রসঙ্গে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন : ‘এক শোভাযাত্রা করে আমরা হাজির হয়ে কাগজটা ভিতরে পাঠিয়ে দিলাম খাজা সাহেবের কাছে। আমি আবার বক্তৃতা করে সকলকে চলে যেতে বললাম এবং নিজেও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে চলে আসার জন্য রওনা করলাম। কিছু দূর এসে দেখি, অনেক ছাত্র চলে গিয়েছে। কিছু ছাত্র ও জনসাধারণ তখনো দাঁড়িয়ে আছে আর মাঝে মাঝে স্লোগান দিচ্ছে। আবার ফিরে গিয়ে বক্তৃতা করলাম। এবার অনেক ছাত্রও চলে গেল। আমি হলে চলে আসলাম। প্রায় চারটায় খবর পেলাম; আবার বহু লোক জমা হয়েছে, তারা বেশিরভাগ সরকারি কর্মচারী ও জনসাধারণ, ছাত্র মাত্র কয়েকজন ছিল। শামসুল হক সাহেব চেষ্টা করছেন লোকদের ফেরাতে। মাঝে মাঝে হলের ছাত্ররা দু-একজন এমএলএকে ধরে আনতে শুরু করেছে মুসলিম হলে। তাদের কাছ থেকে লিখিয়ে নিচ্ছে, যদি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে না পারেন, তবে পদত্যাগ করবেন।... আমি ছুটলাম অ্যাসেম্বলির দিকে। ঠিক কাছাকাছি যখন পৌঁছে গেছি তখন লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে শুরু করেছে পুলিশ। আমার চক্ষু জ্বলতে শুরু করেছে। পানি পড়ছে, কিছুই চোখে দেখি না। কয়েকজন ছাত্র ও পাবলিক আহত হয়েছে। আমাকে কয়েকজন পলাশী ব্যারাকের পুকুরে নিয়ে চোখে-মুখে পানি দিতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পর একটু আরাম পেলাম। দেখি মুসলিম হলে হইচই। বাগেরহাটের ডা. মোজাম্মেল হক সাহেবকে ধরে নিয়ে এসেছে। তিনি এমএলএ। তাকে ছাত্ররা জোর করছে লিখতে যে, তিনি পদত্যাগ করবেন। আমাকে তিনি চিনতেন, আমিও তাকে চিনতাম। আমি ছাত্রদের অনুরোধ করলাম, তাকে ছেড়ে দিতে। তিনি লোক ভালো এবং শহীদ সাহেবের সমর্থক ছিলেন। অনেক কষ্টে, অনেক বুঝিয়ে তাকে মুক্ত করে বাইরে নিয়ে এলাম। একটা রিকশা ভাড়া করে তাকে উঠিয়ে দিলাম। হঠাৎ খবর এলো, শওকত মিয়া আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। তাড়াতাড়ি ছুটলাম তাকে দেখতে। সত্যই সে হাতে, পিঠে আঘাত পেয়েছে। পুলিশ লাঠি দিয়ে তাকে মেরেছে। আরও কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে। সকলকে বলে আসলাম, একটু ভালো হলেই হাসপাতাল ত্যাগ করতে। কারণ পুলিশ আবার গ্রেপ্তার করতে পারে।’

১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ পরিষদ ভবনের সামনে কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদে ওইদিন রাতে ফজলুল হক মুসলিম হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এক সভায় মিলিত হন। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান যোগদান করেন। পরিষদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ, পুলিশের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সভায় বাগবিত-া হয় এবং একে অপরকে দোষ দিতে থাকে। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান উভয় পক্ষকে শান্ত করান। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আসন্ন ঢাকা সফরের কারণে সংগ্রাম পরিষদ কঠোর কোনো কর্মসূচি না দিয়ে ১৭ মার্চ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু প্রতিবাদ ধর্মঘটের ডাক দেয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১৭ মার্চ পূর্ববঙ্গের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। এই দিন বেলা সাড়ে বারোটায় বটতলায় এক প্রতিবাদী ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিপুলসংখ্যক অংশগ্রহণ করে। প্রতিবাদী ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দীন আহমদ। আন্দোলনের সামগ্রিক পরিস্থিতি, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আসন্ন ঢাকা সফর, ভবিষ্যৎ করণীয়Ñ এসব বিষয় নিয়ে বক্তৃতা করেন শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক, কাজী গোলাম মাহবুব, আবদুর রহমান চৌধুরী, অলি আহাদ প্রমুখ। সভায় বক্তারা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর জুলুমকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন। ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন কর্মী রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে প্রতিনিধিত্ব দাবি করে বক্তব্য রাখলে সভায় হট্টগোল দেখা দেয়। এ সময় সব পক্ষকে শান্ত করতে শেখ মুজিবুর রহমান মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকা সফরের আগে সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রতি ছাত্র নেতৃবৃন্দের বিশ্বাসে তখনো চিড় ধরেনি। তারা ধারণা করেছিলেন ঢাকা এসে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা সমস্যার একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবেন।

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের ঢাকা সফর উপলক্ষে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সমুদয় কর্মসূচি ১৭ মার্চ অপরাহ্ন থেকে স্থগিত করা হয়। ওইদিন রাত ৯টায় ফজলুল হক মুসলিম হলের হাউজ টিউটরের কক্ষে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপস্থিত থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে সকলকে ধারণা দেন। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কার্জন হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিশেষ সমাবর্তন সভায় ভাষণ দেন। সমাবর্তন সভায় জিন্নাহ বলেন : ‘আমি খুব স্পষ্ট করেই আপনাদের বলছি যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, এবং অন্য কোন ভাষা নয়। কেউ যদি আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তাহলে সে আসলে পাকিস্তানের শত্রু।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই কথা শুনে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ করে। তারা ‘নো নো’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানায়। কার্জন হলে সমাবর্তন হলের ভেতরে সেদিন ছিলেন না শেখ মুজিবুর রহমান, কেননা তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট নন। তিনি সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে হলের বাইরে অবস্থান করছিলেন। যখন জিন্নাহর বক্তৃতার বিষয় জানতে পারলেন, তখন কর্মীদের নিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন শেখ মুজিব। হল থেকে জিন্নাহ যখন বেরিয়ে যান, তখনো শেখ মুজিবুর রহমান শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ উচ্চারণ করেন এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানাতে থাকেন। জিন্নাহর পক্ষে এবং বিপক্ষে আন্দোলন আরম্ভ হয়। ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল অপরাহ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে কতিপয় ছাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে বক্তৃতা দেয়। এ সংবাদ অবগত হয়েই শেখ মুজিবুর রহমান ফজলুল হক মুসলিম হলে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ প্রসঙ্গে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমান লেখেন : ‘জিন্নাহ চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরে ফজলুল হক হলের সামনে এক ছাত্রসভা হয়। তাতে একজন ছাত্র বক্তৃতা করেছিল ...।’ সে বলেছিল : ‘জিন্নাহ যা বলবেন তাই আমাদের মানতে হবে। তিনি যখন উর্দুই রাষ্ট্রভাষা বলেছেন, তখন উর্দুই হবে।’ আমি তার প্রতিবাদ করে বক্তৃতা করেছিলাম, আজও আমার এই কথাটা মনে আছে। আমি বলেছিলাম, ‘কোনো নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগণের আছে।’

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রতি অনুরাগ থাকলেও তার অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী বক্তব্য কিছুতেই মেনে নেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বরং এ সূত্রেই রাজনীতির বৃহত্তর ক্ষেত্রে ক্রমে অনুপ্রবিষ্ট হলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ নানা কারণে সরকার পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর দমনপীড়ন আরম্ভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃস্থানীয় অনেক ছাত্রকে কারাবন্দি করা হয়, অনেককে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়। সরকারি দমনপীড়নের প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে গঠিত হয় ‘জুলুম প্রতিরোধ কমিটি।’ শেখ মুজিবুর রহমানকে করা হয় এই কমিটির আহ্বায়ক। ১৯৪৯ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দীনের সভাপতিত্বে একটি সাধারণ ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবস’-এর এই সভায় সংগঠনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, দবিরুল ইসলাম, নাদের বেগম প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এ প্রসঙ্গে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন: “ছাত্ররা আমাকে কনভেনর করে ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবস’ পালন করার জন্য একটা কমিটি করেছিল। একটা দিবসও ঘোষণা করা হয়েছিল। ... এই প্রথম পাকিস্তানের রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির আন্দোলন এবং জুলুমের প্রতিবাদ। এর পূর্বে আর কেউ সাহস পায় নাই। তখনকার দিনে আমরা কোনো সভা বা শোভাযাত্রা করতে গেলে একদল গু-া ভাড়া করে আমাদের মারপিট করা হতো, সভা ভাঙার চেষ্টা করা হতো। ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবসে’ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও কিছু গুণ্ডা আমদানি করা হয়েছিল। আমি খবর পেয়ে রাতেই সভা করি এবং বলে দিই, গুণ্ডামির প্রশ্রয় দেওয়া হলে এবার বাধা দিতে হবে। আমাদের বিখ্যাত আমতলায় সভা করার কথা ছিল; কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মাঠে মিটিং করলাম। একদল ভালো কর্মী প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে রেখে দিলাম, যদি গুণ্ডারা আক্রমণ করে তারা বাধা দেবে এবং তিনদিক থেকে তাদের আক্রমণ করা হবে যাতে জীবনে আর রমনা এলাকায় গুণ্ডামি করতে না আসে- এই শিক্ষা দিতে হবে।”

শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক এবং সম্পর্কসূত্র আপাত ছিন্ন হওয়ার সূত্রে ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনের কথা এসে যায়। ১৯৪৮ সালের শেষের দিকে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে স্তব্ধ করার মানসে নেতৃস্থানীয় ছাত্রদের বন্দি করতে থাকে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ওপর নানামাত্রিক নির্যাতন নেমে আসে। তাদের অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন ... ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতনভোগী কর্মচারীরা ধর্মঘট শুরু করেছে এবং ছাত্র

Address

Dhanmondi 32
Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when জাতির পিতাকে জানুন posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share