14/01/2025
আজ ১৩ই রজব বেলায়াতের সম্রাট মাওলা আলী মুসকিল কোশা শেরে খোদা (আঃ)পাঁকের আগমন দিবস উপলক্ষ্যে ঈদ মোবারক।
জন্ম: আনু. ১৩ সেপ্টেম্বর ৬০১ – আনু. ২৯ জানুয়ারি, ৬৬১ খ্রি.) ইসলামের নবি মুহম্মাদ সা. এর চাচাতো ভাই, জামাতা ও সাহাবি, যিনি ৬৫৬ থেকে ৬৬১ সাল পর্যন্ত খলিফা হিসেবে গোটা মুসলিম বিশ্ব শাসন করেন।
যখন রাসুলে করিম (সাঃ) এর বয়স ৩০ বৎসর, তখন ইসলামী চাঁদের রজব মাসের ১৩ তারিখ রোজ শুক্রবার পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে হযরত মাওলা আলী (আঃ) সাঃ এর শুভ জন্ম হয়, তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যাহার জন্ম আল্লাহ্র পবিত্র ঘর কাবা'তে হয় । আজ হিজরী সনের রজব মাসের ১৩ তারিখ। মাওলায়ে কায়নাত, শেরে খোদা,আসাদিল্লাহিল গালিব,হায়দারে কাররার,হুব্বে মোস্তাফা,মোর্তুজা, মোজতবা,ইমামুল মাশারিক. ইমামুল মাগারিব,ইমামুল মুমিনীন,নকতায়ে বায়ে বিসমিল্লাহ, ইমামুল মুত্তাকীন, নেয়ামত,শরাফত. ফজিলত বরকত,আল্লাহর খলিল জীবন্ত কুরআন, কাবার কাবা, শামসুদ্দোহা, বদরুদ্দোজা, নুরুল হুদা, নুরে খোদা, শেরে বেলায়ত, দরওয়াজায়ে ইলম, ওলিউল্লাহ, মাওলুদে কাবা' ইয়াদুল্লাহ' আইনুল্লাহ' ওয়াজহুল্লাহ,আসাদুল্লাহ হযরত আলী ইবনে আবী তালিব আলাইহিস সালামের পবিত্র বেলাদত দিবস(প্রকাশ্য দুনিয়াতে আগমন)। তা পালন করা জিন-ইনসান তো অবশ্যই বরং কুল-কায়িনাতের জন্য ফরয আর এই মুবারক তাজদীদই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক ।
মওলার পবিত্র বেলাদত দিবস সবাইকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক মোবারকবাদ।এবং এই মহান ইমামের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম।
আল মুস্তাফা ওয়াল মুরতাজা ওয়াবনাহুমা ওয়াল ফাতিমাহ”।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম, ইয়া আলী মাদাদ।
হযরত আলী (কঃ) ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র মানুষ যিনি পবিত্র কাবা শরীফের ভেতরে ভূমিষ্ঠ হন।হযরত আলী (কঃ) হচ্ছেন পাক পাঞ্জাতানের একজন। তাঁর জন্ম পবিত্র কাবা ঘরে, প্রথম দর্শন রাসূল (সাঃ) এর মুখ । প্রথম খাদ্য রাসূল (সাঃ) এর রসনা (থুথু)।কোরানে মহানবীর নামের পাশে মাওলা আলীর নাম যেমন উল্লিখিত ছিল বহুবার তেমনই শতশত হাদিসেও আলীর গুণকীর্তনে পঞ্চমুখ ছিলেন আমাদের দয়াল নবীজি স্বয়ং।মুফাসসিরদের মতে পবিত্র কুরআনের প্রায় ৩০০টি আয়াত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হযরত আলীর সাথে সম্পর্কিত। খ্রিস্টানদের সাথে মোবাহেলার ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে নিজের সত্তা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন।
তন্মধ্য উল্লেখযোগ্য হল-
🔰“হে ইমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে উলিল আমর (যারা কর্তৃত্বশীল) তাদের।” ৪:৫৯।
🔰“হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল তোমাদের নিকট থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান” ৩৩:৩৩।
🔰“ওহে রাসূল! আনপার প্রতিপালকে পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা পরিপূর্ণরূপে মানুষের কাছে পেৌছে দিন। যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তার দেয়া নবুওয়াতির দায়িত্বের কিছুই পালন করলেন না।” ৫:৬৭ ।
“গাদির” অর্থ জলাশয়। জায়গার নাম খুম। খুমের জলাশয়ের নিকটবর্তী হইলে উক্ত আয়াত এইরুপে নাজেল হয়েছিলঃ
✅“ইয়া আইউহার রাসুল বাল্লেগ মা উনজিলা ইলাইকা মির রাব্বেকা আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন। অইন লাম্ তাফআল ফালা বাল্লাগতা রেসালাহু। আল্লাহু ইয়া, সেমুকা মিনান নাস”।
ইহা হতে “আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন” কথাটি কোরান হতে বাদ দেয়া হয়েছিল ওসমানের (র) প্রকাশনা হতে। মুসা নবীর সঙ্গে যেমন হারুনের নাম কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেইরুপে আলী (আ) নামও কোরানে কয়েকবার ছিল।
🔰হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) বলেছেনঃ-
• আমি জ্ঞানের শহর, আলী তাহার দরজা।
• আমি যার অভিভাবক আলী তার অভিভাবক।
• আলী সত্যের সাথে সত্য আলীর সাথে।
• কোন মোনাফেক আলীকে ভালবাসে না,
কোন মুমিন আলীকে ঘৃনা করেন না।
• যে ব্যক্তি আলীকে গালী দেয়, সে আমাকে
গালী দেয়; যে আমাকে গালী দেয়, সে
আল্লাহকে গালী দেয়।
আলী অর্থ সর্বোচ্চ। আল্লা’র অপর নাম আলী।
তিনি ছিলেন আবু তালিবের পুত্র। তার মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ।ইমাম আলী (আঃ)-এর জন্ম ও শৈশব মহানবী হযরত মােহাম্মদ (সাঃ) আবির্ভাব কালে সম্মান, প্রতিপত্তি ও শরাফতীতে আরব দেশের কোরায়েশ বংশের তুলনা ছিলােনা। অধিকন্ত কাবার রক্ষক হিসেবে এ বংশ ছিল অধিকতর ইজ্জতের অধিকারী। এ বংশেরই সেরা শাখার নাম হাশেমী। এ বংশেই মহানবী রাসূল পাকের জন্ম। হযরত আলী (আঃ) এর জন্ম ও এ বংশে। মা বাপ উভয়দিক থেকেই তিনি হাশেমী। তাঁর পিতার আসল নাম ইমরান। আরব দেশের প্রথানুসারে জ্যৈষ্ঠ পুত্র তালিবের নামে সংগে যুক্ত করে তাঁকে ডাকা হতাে আবু তালিব অর্থাৎ তালেবের বাপ। এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন, ইতিহাসেও উল্লেখিত রয়েছেন এ নামেই। পরবর্তী জীবনে হযরত আলীকে ও তাঁর জ্যৈষ্ঠপুত্র ইমাম হাসান (আঃ) এর নামের সঙ্গে মিলিয়ে তাকে আবুল হাসান বলা হতাে। বলা বাহুল্য, আরব দেশের ব্যক্তি বিশেষকে এভাবে ডাকা এক বহুল প্রচলিত ও সর্বস্বীকৃত রেওয়াজ ছিলাে সেকালে। যেমন আবু বকর কুমারীর বাবা এ নামে তাকে ডাকা হতাে।হযরত রাসূলে করীমের পিতামহ আবদুল মুত্তালিব আর ইমাম আলীর নানাজান আসাদ পরস্পর ভাই ছিলেন।রাসূল করিম (সাঃ) এর পিতা আবদুল্লাহ এবং আলী (আঃ) এর পিতা আবু তালিব পরস্পর ভাই। কাজেই সম্বন্ধের দিক দিয়ে আবু তালিব ছিলেন রাসূল করিম (সাঃ) এর আপন চাচা এবং আলী (আঃ) আপন চাচাত ভাই। আবার মায়ের দিক থেকে ছিলেন ফুফাতাে ভাই।
ইমাম আলীর সংগে আত্মীয়তা ছিল নিকটতম। পরে রাসূল (সাঃ) একমাত্র প্রিয়তমা কন্যা খাতুন-ই-জান্নাত বিবি ফাতিমাকে শাদী করার পর তিনি হয়ে পড়েন রাসূলের আরাে প্রিয় পাত্র ও অন্তরঙ্গ।
মা ফাতিমা বিনতে আসাদ রাসুলের(সাঃ) প্রতি প্রথম ঈমান আনয়নকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। নবীজীর নবুওয়ের আগে তিনি মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীমের(আঃ) দ্বীনের অনুসারী ছিলেন।তিনি ছিলেন একজন পুতঃপবিত্র নারী।
ফাতিমা পূর্ণ গর্ভাবস্থায় যখন একদিন কাবা তাওয়াফ করছিলেন, তখন তিনি হঠাৎ প্রবল প্রসব বেদনা অনুভব করেন। তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে রওনা করতে চাইলে প্রসব বেদনা এতই প্রখর ছিল যে সম্বভ হচ্ছে না।কাবার দেয়ালের নিকট গিয়ে বলেন,...
🙏“প্রভু হে! আমি তোমার প্রতি, তোমার পক্ষ হতে যে সব কিতাব নাজিল হয়েছে তার প্রতি এবং এ ঘরের নির্মাতা ইবারহীমের (আঃ) কথার প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান পোষণ করি। হে এলাহী! এ ঘরের নির্মাতার সম্মানে এবং আমার পেটে যে শিশু আছে তার উছিলায় এ শিশুর জন্মদান সহজ করে দাও”।
কাবা ঘরের ফাটল সৃষ্টি হয়,।তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসে “এদিকে আসুন” তাই তিনি ফিরে তাকিয়ে দেখেন খানা কাবার রুকন ইয়ামেনীর দিকে দেয়ালে একটি ফাক হয়ে গেছে মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে । তিনি সে ফাঁক দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করা মাত্র সেটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। তিন দিন খানা কাবার ভেতরে অবস্থান করলেন। তিন দিন পর আবার সে দেয়াল ফাঁক হয়ে গেলে তিনি শিশু সহ বাইরে বেড়িয়ে আসেন। পথে নবীর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি (নবী) চাচীকে সালাম করেন এবং শিশুর জন্মের জন্য খােশ আমবেদ জানান। প্রতি উত্তরে চাচি বললেন এটা কি ধরনের বাচ্চা আজ তিন দিন চোখ মেলেও চায়নি এবং কোন আহারও গ্রহণ করেনি। তখন নবী বললেন বাচ্চাকে আমার কোলে দিন। নবীর কোলে আসা মাত্রই শিশু চোখ খােলে নবীর দিকে চাইলেন এবং সালাম দিলেন, “আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ” নবী সালামের উত্তর দিলেন, সালাম বিনিময়ের পর রাসূলুলার জিব মুখে দেয়া মাত্র তিনি চুষে খেলেন। তারপর নবী বললেন, কিছু শুনাও। শিশু বললেন, কোথা থেকে শুনাবাে। নবী বললেন তােমার যেখান থেকে ইচ্ছে। হযরত আলী সূরা মােমেনীন পড়ে শুনালেন।
এ যেন নবুয়াতের সংস্পর্শে ইমামত ধন্য হল।
হযরত আলীর (আ:)জন্ম নেয়ার স্থান হওয়ার মাধ্যমে আসলে পবিত্র কাবাই সম্মানিত হয়েছে। মারইয়াম (আ.)-এর গর্ভাবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিপালনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কিন্তু যখন সন্তান প্রসবের সময় হলো তখন আল্লাহ তাঁকে আল্লাহর ঘর থেকে বাইরে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন নবীকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। কিন্তু মাওলা আলীর জন্মের সময় কাবা ঘরের দেয়ালে ফাঁক সৃষ্টি করে আল্লাহ তায়ালা হযরত আলীর মা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদকে কাবায় প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি করে দিলেন। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে।
হযরত আলী (আ.)-কে বলা হয় ‘মওলুদে কাবা’। সাধারণত যখন কোন ঘটনা এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটে থাকে তখনই এমন নামকরণে বিষয়ের অবতারণা হয়। তিনি বলেন, ইসলামের প্রতিটি পরতে হযরত আলীর অবদান রয়েছে। হযরত আলী এমন মর্যাদায় উপনীত হয়েছিলেন যে, তাঁর চোখ, কান, হাত, মুখ, পা সবকিছুই আল্লাহর হয়ে গিয়েছিল, সেই হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত অবস্থার মতো যেখানে আল্লাহ মুমিনদের ব্যাপারে বলেছেন যে, তিনি মুমিনের চোখ, কান, হাত ইত্যাদি হয়ে যান।হযরত আলী (আ.)-এর মা তাঁর অসহায় অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁকে সাহায্য করলেন। তিনি তাঁকে নিজ ঘরের মেহমান করলেন। আল্লাহ চাইলে তাঁকে দরজা দিয়েই নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সারা বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত রাখার জন্য তাঁকে কাবা ঘরের দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাঁকে বরণ করলেন।
মূসা (আ.)-এর মা এবং ঈসা (আ.)-এর মাকেও আল্লাহ হেফাজত করেছেন, পথ প্রদর্শন করেছেন এবং তাঁদেরকে প্রতিপালন করেছেন। অবশেষে তাঁদের সন্তানরা নবী-রাসূল হয়েছেন। আর আমরা দেখতে পাচ্ছি হযরত আলীর (আ.)-মাকেও আল্লাহ প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে আমাদের জন্য ভাববার বিষয় রয়েছে।
শত শত বছর ধরে সরকার কাবা গৃহের দেয়ালের ফাটল মেরামত করার চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু তাদের সকল প্রচেষ্ঠাই ব্যর্থ হয়েছে। ড. তারিক আল কাতীব তিনি সরকারী ভাবে নিয়োজিত মেরামত কমিটির সদস্য। তিনি বলেন:-যত উত্তম ভাবেই এ ফাটলের মেরামতের কাজ করা হয়েছে,তাতে কোন কাজ হয়নি। প্রতি বছর রজব মাসের ১৩ তারিখে আবার নতুন করে এ দেয়ালের ফাটল সৃষ্টি হয়। আমরা জানি রজব মাসের ১৩ তারিখে ইমাম মাওলা শেরে আলী আঃ ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।
📜 “ নাদে আলীয়ান মাযহারুল আজাঈবে তাজিদাহু আওনান লাকা ফিন নাওয়াইবি, কুল্লু হাম্মিন ওয়া গাম্মিন সাইয়ানজালী বি নুরিকা ইয়া মুহাম্মদ, ওয়া বি বিলায়াতিকা ইয়া আলী! ইয়া আলী! ইয়া আলী! আদরিকনী।
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মুহাম্মদ।
▪️ফেসবুক থেকে