07/11/2022
আমরা সবাই জানি, তবুও মনে করিয়ে দেই-
আমরা, এই সময়ের বাবা মায়েরা যদি নিজের সন্তানদের সাথে কোনো চরম অপরাধ করে থাকি, তবে সেটা হলো তাদেরকে মোবাইল, আইপ্যাড বা অন্য কোনো ডিভাইসে আসক্ত করে তোলার অপরাধ। যতই আপনি বাচ্চার ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন, মনে রাখবেন, আপনার সন্তান নেশাসক্তের মতো মোবাইলে গেম খেলে, ইউটিউব দেখে দিন কাটায়, অন্য কোনোদিকে তাকাতে চায় না পর্যন্ত- এর পুরোটা দায় আপনার উপরেই বর্তায়। এই নেশার ক্ষতিকর দিকটা যখন আপনার সন্তানকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করতে শুরু করবে বা এরই মধ্যে করেছে, সেই ক্ষতির দায়ও আপনার- হ্যাঁ বাবা আর মা হয়ে আপনিই করেছেন সন্তানের ক্ষতি, নিজের হাতে।
সন্তানকে মোবাইলে আসক্ত করে দেয়াটাই সোজা। কারণ তাতে সে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে। আপনাকে জ্বালায় না, কোন যন্ত্রণা দেয় না, আপনার সময় ডিমান্ড করে না, আপনাকে তার সাথে খেলতেও হয় না, কোথাও নিয়েও যেতে হয় না, কথা বলতে হয় না, গল্প করতে হয় না ওর সাথে। সেই সময়টায় আপনি নিজেও মোবাইল টেপাটিপি করতে পারেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে পারেন ফোনে, টিভি দেখতে পারেন, বাসার কাজ করতে পারেন, অফিস করতে পারেন, ঘুমাইতে পারেন!
তাইনা?
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, মোবাইল আসক্তি ছোট শিশুদের যে ভয়ংকর ক্ষতি করছে, তার কোনো পরিমাপ করতে পারলে চমকে উঠবেন। আপনার শিশুর চোখ, কান, ব্রেইনের ক্ষতি তো বটেই, এজন্য শিশুর অবেসিটি (অতিরিক্ত মোটা) ও হতে পারে। শিশুর কল্পনা করার ক্ষমতা ধ্বংস করে মোবাইলের আসক্তি। শিশুর চিন্তা করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ধৈর্য এবং মনোযোগ নষ্ট করে, অস্থিরতা গ্রাস করে শিশুটিকে। আপনার শিশুটার শৈশব চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়।
অনেক মা বাবাকে বলতে শুনি- ‘কী করবে? মাঠ নাই, খেলার জায়গা নাই! তাই মোবাইলেই খেলে!’
কি হাস্যকর যুক্তি। মাঠ নাই বলে কি ওর খেলা থেমে যাবে ওইটুকু ডিভাইসের ভেতরে?
বাসার ভেতরেই ও খেলুক খেলনা দিয়ে। ছাদ বা বারান্দা থাকলে সেখানে খেলুক। পার্কে নিয়ে যান পারলে। দয়া করে বলবেন না যে পার্ক নাই। ঢাকা শহরে পার্ক নাই বলে বলেও যথেষ্ট পার্ক আছে। আমি বহু বাবা মাকে দেখেছি বাচ্চাদের নিয়ে সপ্তাহে একদিন হলেও রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দীতে যায়। উত্তরা, বারিধারা, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, বনশ্রী, শান্তিনগর, গুলশানে তো ভুরি ভুরি পার্ক আছে। তবু এসব এলাকার বাবা মায়ের সন্তানদের হাতে মোবাইল থাকে কেন?
আর হ্যাঁ, বাচ্চাকে বই পড়তে শেখান। বাচ্চার হাতে বারবার বই তুলে দিন। বই কেনাটা ওর একটা অভ্যাসে পরিনত করুন, যেন বই দেখলেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। আর মাথায় রাখবেন, আপনি নিজে যদি বই না পড়ে সারাদিন মোবাইলের স্ক্রিনে থাকেন আর ফোন কলে গল্প করতে থাকেন, তবে বাচ্চাও আসলে বই পড়াটা আর শিখবে না। বাচ্চার সাথে বসে আপনি নিজেও যদি বই পড়েন, বাসায় যদি একটা ছোট একটা লাইব্রেরি বা বইয়ের শেলফ থাকে, যদি বইয়ের দোকানে দোকানে বাবা মা মিলে সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে ভালবাসে, তবেই সন্তানের ভেতরে বইয়ের প্রতি ভালবাসাটার জন্ম হয়।
তাই বাচ্চার হাতে কী দিবেন, সেটা আপনার রুচি ও সিদ্ধান্ত। যা দিবেন, তার ফলও হাতেনাতেই পাবেন। বই দিলে, খেলনা দিলে, রং পেন্সিল, ছবি আঁকার খাতা দিলে, ফুটবল দিলে ভবিষ্যতে একটা সুস্থ সুন্দর মানুষ পাবেন। আর মোবাইল দিলে পাবেন অস্থির, প্রাণচঞ্চলতাহীন, অমনোযোগী, কল্পনাশক্তিহীন, বিষাদগ্রস্থ একটা মানুষকে, যার ভবিষ্যত আপনি মা বা বাবা হয়ে নিজের হাতে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
ভালো থাকুক সব বাবা মায়ের সকল সন্তানরা।