হেদায়েতের গল্প

হেদায়েতের গল্প হেদায়েতের মালিক এক মাত্র আল্লাহ্
আল্লাহ্

26/12/2024

#তুমি_যে_আমার_মহারানী
পর্বঃ৩১
হাফসা আক্তার

আরাফ সারাদিনের কঠোর পরিশ্রম ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। আজকের দিনে, তিনি অসংখ্য রুগির দেখাশোনা করেছেন এবং রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তার শরীর ও মন একেবারেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরেই, তিনি জানতেন যে তার একমাত্র আশ্রয় জায়গা সুমাইয়ার কোলে।

সন্ধ্যার মৃদু আলোয়, আরাফ তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করলেন। সুমাইয়া তার সাজানো বিছানায় বসে ছিলেন, একটি বই পড়ছিলেন। আরাফ তার পাশে এসে বসলেন, তার চোখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। সুমাইয়া আরাফের মুখের দিকে তাকালেন এবং তাঁর অবস্থার প্রতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন।

“আজকের দিনটা খুবই কঠিন ছিল, সুমাইয়া,” আরাফ তার ক্লান্ত গলায় বললেন। “আমি এতটাই ক্লান্ত যে, কোনোভাবে বিশ্রাম নিতে পারছি না।”

সুমাইয়া তার স্নেহময় হাত দিয়ে আরাফের মুখের দিকে নরমভাবে হাত রাখলেন। “আমার কোলে মাথা রেখে বিশ্রাম নাও,” তিনি কোমলভাবে বললেন। “আমি তোমার পাশে আছি, আর তোমার জন্য সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

আরাফ মৃদু হাসি দিয়ে, সুমাইয়ার কোলে মাথা রেখে শোবার জন্য প্রস্তুত হলেন। সুমাইয়া তাকে শান্তভাবে শুইয়ে দিলেন এবং নিজের কোমল হাত দিয়ে আরাফের মাথায় আলতোভাবে চাপ দিয়ে বিলি কাটতে লাগলেন। তার স্পর্শে, আরাফ ধীরে ধীরে শান্তি অনুভব করতে শুরু করলেন।

আরাফ তার চোখ বন্ধ করে, সুমাইয়ার কোমল হাতের স্পর্শের সান্নিধ্যে নিজেকে শান্ত মনে করলেন। তিনি যেন একটি স্বপ্নের জগতের মধ্যে চলে গেলেন, যেখানে কোনো ক্লান্তি বা উদ্বেগ নেই। সুমাইয়া তার চোখে ভালোবাসার মিষ্টি হাসি নিয়ে, আরও বেশি যত্নের সাথে বিলি কাটতে লাগলেন।

“ধন্যবাদ, সুমাইয়া,” আরাফ মাঝে মাঝে শান্ত গলায় বললেন, “তোমার এই ভালোবাসা ও যত্ন আমাকে পুনরায় শক্তি জোগায়।”

সুমাইয়া তার কোমল হাসি দিয়ে, আরাফের মাথায় চুমু দিলেন। “আমি সবসময় তোমার পাশে আছি, আর তোমার শান্তি আমার প্রাথমিক লক্ষ্য। এখন বিশ্রাম নাও, তোমার ক্লান্তি দূর হবে।”

আরাফ এক মৃদু নিঃশ্বাস নিয়ে, সুমাইয়ার কোলে শুয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেন। সুমাইয়া তার চোখের প্রশান্তিতে তাকিয়ে, তার প্রিয় স্বামীর এই শান্তি ও সুখ দেখতে পেয়েছিলেন। ঘরের চারপাশে একটি শান্তির আবহাওয়ার সৃষ্টি হল, আর দুজনেই নিজেদের ভালোবাসার গভীরতায় হারিয়ে গেলেন।

স্ত্রীর রানের উপর মাথা রেখে ঘুমানো সুন্নাহ

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক সফরে বের হলাম। বাইদা কিংবা যাতুল জাইশ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার গলার হার হারিয়ে গেল। তা খোঁজার জন্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে অবস্থান করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সঙ্গে অবস্থান করল। সেখানেও কোনো পানি ছিল না এবং তাদের সঙ্গেও পানি ছিল না। এরপর লোকেরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এলো এবং বলল, ’আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যা করেছেন আপনি তা দেখেছেন কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সকল লোককে আটকিয়ে রেখেছেন, অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার উরুতে (রানে) মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন।

এমতাবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এলেন এবং বললেন, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সকল লোককে আটকে রেখেছো অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে দোষারোপ করলেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তা বলেছেন এবং তাঁর অঙ্গুলি দিয়ে আমার কোমরে ধাক্কা দিতে লাগলেন, আমার কোলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থানই আমাকে নড়াচড়া করতে বাধা দিল। পানিবিহীন অবস্থায় ভোরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে উঠলেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন, তখন সবাই তায়াম্মুম করল। তখন উসাইদ ইবনু হুযাইর বললেন, হে আবু বকর-এর বংশধর! এটাই আপনাদের কারণে পাওয়া প্রথম বারাকাত নয়।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, যে উটের উপর আমি ছিলাম, তাকে আমরা উঠালাম তখন দেখি হারটি তার নিচে।’ (বুখারি ৪৬০৭)

আরাফ অফিস থেকে ফিরে খুব মজা করতে ইচ্ছে হলো। ঘরে ঢুকে দেখলেন, সুমাইয়া রান্নাঘরে ব্যস্ত। তিনি চুপিসারে গিয়ে তার পেছনে দাঁড়ালেন, তারপর হঠাৎ করে বললেন, "এই যে, মিস! জানেন, আজ আমি নতুন বউ খুঁজে পেয়েছি।"

সুমাইয়া প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেল, তারপর তাকিয়ে দেখলো আরাফের হাসি চেপে রাখার চেষ্টা। "কী বললে তুমি?" তিনি অবাক হয়ে বললেন।

আরাফ হাসি থামিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, নতুন বউ। শুধু তোমার মতো সুন্দরী না, কিন্তু খুব মিষ্টি।"

সুমাইয়া চোখ কুঁচকে বললেন, "আচ্ছা! কে সে?"

আরাফ ধীরে ধীরে বললেন, "ও তো আসলে... আমার প্রিয় মিষ্টি বউ! যার নাম সুমাইয়া!"

এ কথা শুনে সুমাইয়া রেগে গিয়ে তার দিকে তাকালেন, কিন্তু চোখের কোণে হাসির ছাপ লুকাতে পারলেন না। "তুমি কী মজা করছো!" তিনি বললেন, কিন্তু তার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠলো।

"তোমার হাসিটা দেখার জন্যই তো মজা করলাম," আরাফ বলেন, তার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে। "তুমি জানো না, তোমার হাসিটাই আমার সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।"

এই কথা শুনে সুমাইয়া আর রাগ করতে পারলেন না। তিনি আরাফের কাঁধে মাথা রেখে বললেন, "তুমি সব সময়ই আমাকে হাসাতে জানো, আরাফ।"

আরাফ মুচকি হেসে বললেন, "তোমার হাসির জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি আছি, মিসেস সুমাইয়া!"

দুপুরের সময়, আরাফ সুমাইয়ার দিকে মৃদু হাসি নিয়ে তাকালেন। সুমাইয়া রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ করে আরাফ বললেন, “সুমাইয়া, আমি তোমার সাথে গোসল করতে চাই।”

সুমাইয়া কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, “কিন্তু কেন, এখন গোসল?”

আরাফ নরম কণ্ঠে বললেন, “এটি নবী (সা.) এর সুন্নত। একসাথে গোসল করার মাধ্যমে আমরা নবীর (সা.) সুন্নত পালন করতে পারি এবং আমাদের সম্পর্কের আন্তরিকতা ও একতা বাড়াতে পারি। এটি আমাদের জন্য একটি মূল্যবান সুযোগ।”

স্ত্রীর সঙ্গে গোসল করা সুন্নাহ

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, আমি ও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই পাত্র (কাদাহ) থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো।’ (বুখারি ২৫০)

সুমাইয়া আরাফের কথা শুনে অনুভব করলেন যে এটি একটি সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তিনি স্নানঘরে গিয়ে প্রস্তুতি নিলেন। আরাফও সেখানে পৌঁছে সুমাইয়াকে সহায়তা করতে লাগলেন।

একসাথে গোসল করার সময়, তারা নবী (সা.) এর সুন্নত পালন করে একটি গভীর শান্তি ও একতার অনুভূতি পেলেন। আরাফ সুমাইয়ার চুলে সাবান লাগিয়ে, সুমাইয়া আরাফের কাঁধে মাথা রেখে শান্তিতে গোসল করলেন। এভাবে, তাদের সম্পর্ক আরও গভীর ও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পেল।

গোসল শেষে, তারা একে অপরকে গভীর ভালবাসা ও প্রশান্তির সাথে দেখলেন, তাদের হৃদয়ে নবীর (সা.) সুন্নতের প্রতি একটি বিশেষ প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি অনুভব করলেন।

সন্ধ্যার নরম আলোতে আরাফ সুমাইয়ার পাশের সোফায় বসে ছিলেন। সুমাইয়া তাকে আরামদায়কভাবে ঘিরে রেখেছিলেন, আর আরাফের হাতে ছিল একটি কুরআন শরিফ।

আরাফ সুমাইয়ার কোলে হেলান দিয়ে বসে, কুরআনের আয়াতগুলি পাঠ করতে শুরু করলেন। সুমাইয়া তার মাথার কাছে হাত রেখে, আরাফকে শান্তি ও সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। আরাফের কুরআনের তেলাওয়াতের মধুর সুর ঘরের মধ্যে এক প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

সুমাইয়া তার কোমল হাত দিয়ে আরাফের মাথায় স্নেহভরা স্পর্শ করছিলেন, আর আরাফ তেলাওয়াতের সাথে সাথে সুমাইয়ার কোমল নীরবতা অনুভব করছিলেন। এই মূহুর্তে, তাদের মধ্যে একটি গভীর শান্তি ও সংযোগ তৈরি হয়েছিল, যা কুরআনের মর্মস্পর্শী আয়াতগুলোর সাথে মিশে গিয়েছিল।

আরাফ ও সুমাইয়া একে অপরের সংস্পর্শে যেন আত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি খুঁজে পেতে লাগলেন, যা তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও গভীর করে তুলেছিল।

স্ত্রীর কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা সুন্নাহ

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েজের অবস্থায় ছিলাম।’ (বুখারি ২৯৭)

সকালে সবুজের মা তিনটা পরোটা খেয়ে শেষ করল। এরপরই সে বিরক্তি নিয়ে সবুজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনি আমার স্বামীর টাকা নষ্ট করছেন, জানেন? বসে বসে শুধু খাচ্ছেন। বলি, কাজ করতে পারবেন তো? নাকি সব কিছু আমারই করতে হবে?"

তনয়ার তীব্র কথাগুলো শুনে সবুজের মা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তার চোখে পানি চলে আসে, কিন্তু কিছু বলার সাহস নেই। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, "আমিও একদিন সুমাইয়ার সাথে এমনই করেছিলাম—অকারণে তাকে কষ্ট দিয়েছিলাম।" এই স্মৃতি তাকে আরও ভেঙে দেয়, আর তিনি নিঃশব্দে কাঁদতে থাকেন, নিজের ভুলগুলো যেন তার হৃদয়ে নতুন করে আঘাত করে।

তনয়ার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সবুজের মা একদিন সবুজের কাছে গিয়ে নালিশ করলেন, "তোমার বউ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, আমার সাথে এমন ব্যবহার করছে যেন আমি অপরাধী।"

তাঁর কথাগুলো শোনার পর সবুজ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। এরপর তনয়া ঘরে এসে যখন এই কথাগুলো শুনল, তখন সে ভীষণ রেগে গিয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলল। চারপাশে তছনছ করে দিয়ে সবুজের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "তোমার মা আমার বিরুদ্ধে নালিশ করছে! আমি আর সহ্য করতে পারছি না!"

সবুজ হতাশ হয়ে তাঁর মায়ের দিকে ফিরে চিৎকার করে বলল, "তুমি আমার একটা সংসার ধ্বংস করেছ, আরেকটা ধ্বংস করতে চাও! তুমি একটা ডাইনি! কেনো আমার জীবনে বারবার এমনটা ঘটছে?"

সবুজের মা হতভম্ব হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তিনি ভাবলেন, "এই ছেলে একদিন আমাকে কত ভালোবাসত, সবকিছু শেয়ার করত। হয়তো সুমাইয়ার সাথে ধোঁকা দেওয়ার ফলেই আজ এই অবস্থায় পড়তে হলো। আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কোনো ছাড় পেলাম না।"

মায়ের মন ভেঙে গেল, কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন, সবুজ এখন আর সেই আগের মতো নেই। তাঁর মন আজ নষ্ট হয়ে গেছে, এবং সেই নষ্ট মনেই তাঁকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে।

তনয়া একদিন সকালে খুব রেগে গিয়ে সবুজের মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল। তিনি কঠোর স্বরে বললেন, "আপনার জন্য আজ থেকে খাওয়া বন্ধ। যখন আমার জামাকাপড় ধুয়ে দেবেন, তখনই খাবার পাবেন।"

সবুজের মা হতভম্ব হয়ে গেলেন, তিনি কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন। তনয়া কোনো কথা না শুনেই তাঁর সামনে থেকে খাবার নিয়ে চলে গেল।

মা বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন, তাঁর চোখে পানি চলে এল। তিনি ভাবলেন, "এই দিন দেখতে হবে জানতাম না। কতবার সুমাইয়াকে কষ্ট দিয়েছি, কিন্তু আজ আমার নিজেরই সেই কষ্টের ফল ভোগ করতে হচ্ছে। আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কোনো মাফ পাচ্ছি না।"

সবুজের মা এখন বুঝতে পারলেন, তাঁকে আরও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, কারণ তনয়ার অত্যাচারের কোনো সীমা নেই।

তনয়া ধীরে ধীরে তার অত্যাচারের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে শুরু করলো। সবুজের মা একসময় অনেক শক্তিশালী ছিলেন, কিন্তু বয়সের সাথে সাথে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। তনয়া জানতো, এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগাতে হবে।

একদিন, তনয়া ঠিক করলো, সে সবুজের মায়ের জন্য খাবারের ব্যবস্থা কমিয়ে দেবে। তিনি খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন, এবং সবাই জানতো তার হাতের রান্নার স্বাদ অসাধারণ। কিন্তু এখন সেই হাতেই প্রতিশোধের নকশা আঁকা শুরু হলো।

প্রথমে, তিনি সবুজের মায়ের জন্য খাবার সরবরাহ করতে দেরি করতে শুরু করলেন। সবুজের মা অপেক্ষায় থাকতেন, কিন্তু খাবার সময়মতো আসতো না। তার খিদে বেড়ে যেত, কিন্তু খাবার না পেয়ে তিনি চুপচাপ বসে থাকতেন। এরপর তনয়া খাবারের মান কমিয়ে দিতে শুরু করলেন। ভালো, টাটকা খাবারের জায়গায় পুরোনো এবং বাসি খাবার দেওয়া হলো। সবুজের মা মুখের সামনেই এই খাবার দেখতে পাচ্ছিলেন, কিন্তু খেতে বাধ্য ছিলেন কারণ অন্য কোনো উপায় ছিল না।

ধীরে ধীরে, সবুজের মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলো। তিনি দুর্বল হয়ে পড়লেন, তার শরীরের শক্তি কমে গেল। তনয়া একদিকে তার মিষ্টি হাসি নিয়ে সবুজের সামনে থাকলেও, ভেতরে ভেতরে তিনি জানতেন যে প্রতিশোধের অগ্নি তার হৃদয়ে জ্বলে উঠছে।

তবে সবুজ এ ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারলো না। তিনি তনয়ার উপর পুরোপুরি বিশ্বাস রেখে চলছিলেন। তার মা ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হতে থাকলেন, এবং সবুজের মনে হলো হয়তো তার মায়ের বয়সই এর জন্য দায়ী। কিন্তু তনয়া তার মনে সবুজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের ছক বুনে যাচ্ছিলেন, যা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছিল।

তনয়ার এই প্রতিশোধের পথ ছিল ধীর এবং সূক্ষ্ম, কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি নিশ্চিত করছিলেন যে সবুজের মা ভুগছেন, এবং এভাবে তনয়া তার লক্ষ্য অর্জনের দিকে একধাপ করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

তনয়ার মন অত্যাচারের আগুনে পুড়ছিল, এবং এবার সে আরও ভয়ংকর এক পরিকল্পনা আঁকলো। সে জানতো, সবুজের মা বয়সের কারণে খুবই দুর্বল, এবং তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল একাকিত্বের ভয়। এই ভয়কেই তনয়া তার অস্ত্র বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো।

একদিন বিকেলে, সবুজ যখন কাজে ব্যস্ত ছিল এবং বাড়িতে কেউ ছিল না, তনয়া সবুজের মাকে বললো, “মা, আজ আপনার জন্য একটু অন্যরকম ব্যবস্থা করেছি। আপনি আসুন, আমি আপনাকে দেখাই।”

সবুজের মা কিছুটা অবাক হলেও তনয়ার হাসি দেখে বিশ্বাস করলেন। তনয়া তাকে ধরে নিয়ে গেল একটি ছোট, পুরোনো ঘরের দিকে। ঘরটি ছিল বাড়ির সবচেয়ে নির্জন কোণে, যেখানে দিনের আলো খুব কমই পৌঁছায়। ঘরটিতে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে সবুজের মা এক অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করলেন। দেয়ালগুলো মাটির মতো স্যাঁতসেঁতে, বাতাসে ছিল পুরোনো কাঠের গন্ধ, আর জানালাগুলো ছিল মোটা পর্দায় ঢাকা।

তনয়া মায়ের হাত ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। "মা, আপনি এখানে একটু বিশ্রাম নিন, আমি কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসবো," বলে তনয়া ঘর থেকে বের হয়ে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিল।

সবুজের মা অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার শরীরে হিমশীতল একটা অনুভূতি বইতে শুরু করলো। তিনি দরজার কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দরজা ঠেলে দেখলেন, কিন্তু দরজাটি বন্ধ। তার মুখ থেকে এক অদৃশ্য চিৎকার বেরিয়ে এলো, কিন্তু তনয়া ইতিমধ্যে দূরে চলে গেছে।

এখন ঘরের ভেতরে গভীর নীরবতা নেমে এলো। চারিদিকে কেবল অন্ধকার, কোনো শব্দ নেই। সবুজের মা দরজায় আঘাত করতে লাগলেন, "তনয়া! আমাকে বের করো! এখানে খুব অন্ধকার, আমি ভয় পাচ্ছি!" কিন্তু তার কণ্ঠস্বর দেওয়ালের মধ্যে গুমরে মরলো, কোনো প্রতিধ্বনি নেই।

মিনিটগুলো ঘণ্টায় পরিণত হলো, এবং ঘণ্টাগুলো অসহনীয় দীর্ঘতায় রূপ নিলো। সবুজের মা একাকিত্বের ভয়ে কাঁপতে শুরু করলেন। তার মনে হতে লাগলো, তিনি যেন অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছেন। তার শ্বাসপ্রশ্বাস ভারী হয়ে উঠলো, এবং ঘরের ঠান্ডা দেয়ালগুলো তার চারপাশে ঢেকে আসছে বলে মনে হলো।

তনয়া দূর থেকে এই দৃশ্য কল্পনা করে মৃদু হাসলো। সে জানতো, সবুজের মা শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক কষ্টে আরও বেশি ভুগবে। এই নির্জনতায় বন্দী করার পরিকল্পনা তার প্রতিশোধের সবচেয়ে নিষ্ঠুর দিক ছিল।

সবুজের মা অবশেষে নিঃশেষ হয়ে মাটিতে বসে পড়লেন, তার চোখ থেকে নিঃশব্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। তিনি কেবল অপেক্ষা করতে থাকলেন, কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এলো না।

এইভাবেই তনয়া তার অত্যাচারের কৌশলটি সফলভাবে কার্যকর করলো, এবং সবুজের মা ধীরে ধীরে তার মনোবল হারিয়ে ফেললেন, যেন এক অদৃশ্য কারাগারে বন্দী হয়ে গেছেন, যেখানে কোনও রক্ষা নেই, কোনও মুক্তি নেই।

সবুজের বাড়িতে একটি অশান্ত পরিবেশ বিরাজমান। তনয়া একদিন গোপনে সবুজের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিলেন। তাঁর পর, তনয়া সবুজকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। সবুজের মুখের দিকে তাকিয়ে তনয়া বললেন, “এই বাড়ির মালিকানা এখন আমার। তুমি চলে যাও, তুমি এখানে আর থাকো না।”

সবুজ অবিশ্বাসের সাথে বললেন, “আমার সন্তান তোমার পেটে আছে।”

তনয়া তাচ্ছিল্যপূর্ণভাবে উত্তর দিলেন, “আমার সন্তান নয়, এটি রনির সন্তান। রনি এখন আমাকে আগলে ধরেছে।”

এই কথার সাথে সাথে রনি এসে তনয়াকে জড়িয়ে ধরলেন। সবুজের চোখে হতাশা ও ব্যথার আছড়ে পড়া ছিল।

সবুজ চুপচাপ ঘর ছেড়ে চলে গেলেন এবং বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে তাঁর মায়ের কাছে পৌঁছালেন। সাহেরা, এখনও বৃদ্ধাশ্রমের পরিবেশে বসে ছিলেন, তার মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট ছিল।

“মা,” সবুজ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই।”

সাহেরা তার ছেলের দিকে তাকিয়ে, একটু শান্তির স্বাদ খুঁজতে পেরেছিলেন। তিনি বললেন, “সবুজ, তুমি শুধু আমার জন্য নয়, নিজের ভবিষ্যতের জন্যও কিছু ভালো করতে পারো। আমি তোমাকে আরাফকে দেখার পরামর্শ দেব। সে একজন পরহেজগার মানুষ এবং হালাল ব্যবসার উদ্যোগে সহায়তা করতে পারে।”

সবুজ সাহেরার পরামর্শ মেনে নিয়ে আরাফের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। আরাফ, যিনি একটি সম্মানজনক ও পরহেজগার মানুষ, সবুজকে হালাল ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। আরাফের আন্তরিকতা ও নৈতিকতা দেখে, সবুজ নিজের জীবন নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করলেন।

এভাবেই, সবুজের জীবন নতুন এক পথে হাঁটতে শুরু করল। তনয়ার নির্দয় আচরণের পরেও, তিনি সাহেরার পরামর্শে নিজের জীবনকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করলেন।

---
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৪৩

গুনাহের কারণে মানুষ যে ছয় শাস্তির মুখোমুখি হয়

ইসমাঈল সিদ্দিকী

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অমান্য করাই গুনাহ বা পাপ। ছোট হোক বা বড়, গুনাহকে হালকা ভাবা উচিত নয়। কারণ ছোট গুনাহ ধীরে ধীরে বড় গুনাহের দিকে নিয়ে যায় এবং গুনাহ করতে করতে একটা সময় গুনাহকারী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। গুনাহের বহুবিধ ক্ষতি আছে।

আলোচ্য প্রবন্ধে মৌলিক কিছু ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১. রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়
রিজিক আল্লাহপ্রদত্ত অনেক বড় নিয়ামত। আর মানুষ নিয়ামত থেকে তখনই বঞ্চিত হয়, যখন অকৃতজ্ঞ হয়ে সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের (নিয়ামত) বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার গুনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।

’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)

২. ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া
ইলম আল্লাহপ্রদত্ত নূর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তার জন্য এক আলোর ব্যবস্থা করেছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২২)

আর গুনাহ ওই নূর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়, এ জন্য গুনাহের কারণে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়। অনেক কিছু শিখেও ভুলে যায়।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, অবশ্যই আমি মনে করি, মানুষ তার শিক্ষা করা ইলম ভুলে যায় তার কৃত গুনাহর কারণে। (জামিউ বয়ানিল ইলম : ১/১৯৬)

৩. অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়
গুনাহের দরুন মানুষের অন্তরে মরিচা ধরে যায়। হৃদয়ে কালো দাগ পড়ে যায়। ফলে তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ভালো কথা আর ভালো লাগে না, চাইলেই ভালো কাজে মন বসানো যায় না।

রাসুল (সা.) বলেন, “যখন কোনো মুমিন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে, তারপর সে যখন তাওবা করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যখন মুমিন আবারও গুনাহ করে তখন অন্তরের কালো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে অন্তরে আল্লাহর কোরআনে বর্ণিত ‘রাইন’ তথা মরিচা প্রভাব বিস্তার করে।” ( মিশকাত, হাদিস : ২২৮১)

৪. কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে যায়
যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অনুগত হয়ে চলে, আল্লাহ তাআলা তাদের সময়ে বরকত দান করেন। ফলে খুব সহজেই, খুব কম সময়েই তারা নিজ নিজ কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আর যারা সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত থাকে তাদের মধ্যে অলসতা জেঁকে বসে আর তাদের জন্য কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার যাবতীয় কাজ সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৪)

৫. গুনাহ ছাড়া কঠিন হয়ে যায়
গুনাহের প্রথম পর্যায়ে আমরা ভাবি, আজ না হয় গুনাহটা করেই ফেলি। তারপর তা ছেড়ে দিয়ে তাওবা করে ফেলব। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো। কারণ একটি গুনাহ অন্য গুনাহের জন্ম দেয়। একটি গুনাহের কারণে আরেকটি গুনাহ সংঘটিত হয়। ফলে গুনাহ ছেড়ে রবের দিকে ফিরে আসা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য যথাসম্ভব নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখা। গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে কালক্ষেপণ না করে তাওবা করে নেওয়া উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ করো।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)

৬. পরকালে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া
গুনাহের কারণে দুনিয়াতে যেভাবে নানা রকম সংকট আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তেমনি পরকালেও আল্লাহ তাআলার শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো, যারা পাপ করে, অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)

তাই সময় থাকতেই গুনাহ ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

১২ টা ১ মিনিট, ২১ অক্টোবর ২০২৩

ইসলামে পরকীয়ায় শাস্তি কঠোর

স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে প্রেম ও যৌন সম্পর্ককেই পরকীয়া বলে। ইসলাম ও নৈতিকতা এসব সম্পর্ককে কখনোই মেনে নেয় না। ইসলাম এ-জাতীয় অবৈধ সম্পর্কের ভয়াবহ শাস্তির বিধান দিয়েছে।

গোনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর দূরে থাকা ইসলামে জায়েজ নেই। ছবি: সংগৃহীত

মুফতি আবদুল্লাহ তামিম

৩ মিনিটে পড়ুন

ইসলাম শান্তির ধর্ম। অশান্তি, অনৈতিকতা ইসলাম পছন্দ করে না। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সা. অনৈতিকতাকে কঠোর হাতে দমন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষেজৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধ উপায় দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। অবৈধ উপায় পরিহার করার নির্দেশনাও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কের বিধান দিয়েছেন। পরকীয়া-ব্যভিচার অবৈধ সম্পর্কে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।



নারী-পুরুষ সবাইকেই চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা: বনি ইসরাইল ৩২)

ব্যভিচারকারীদের শাস্তি হিসেবে অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারকারী নারী ও পুরুষ উভয়কে ১০০টি করে বেত্রাঘাত করো’ (সুরা: নুর ২)। এটা অবিবাহিত জিনাকারীর শাস্তি। আর পরকীয়া কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে বিবাহিত নারী-পুরুষ যদি জিনায় লিপ্ত হয়, তাদের জন্য ইসলামে আরও ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা: নুর ২)



হাদিসে নববীতে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কারণ, এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে: তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ু সংকীর্ণ হয়ে যাবে, তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে: সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হাদিস ৫৬৪)



হজরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হব।’ (বুখারি ৭৬৫৮)



বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পরিবারে দেবরের সঙ্গে ভাবির সম্পর্ক। দেবরকে মৃত্যুর মতো ভয় করতে বলা হয়েছে। কঠিনভাবে হারামের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হজরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেয়ো না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? রাসুল সা. বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম হাদিস ২৪৪৫)





বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা পরকীয়া। ব্যাপক হারে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠছে। পরকীয়ায় বলি হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান। প্রবাসীদের স্ত্রীরা সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়ছেন এতে।



আরও পড়ুন: ঋণ পরিশোধে গড়িমসি, নবীজির হুঁশিয়ারি



হজরত ওমর রা. মেয়ে হজরত হাফসা রা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে? তখন হাফসা রা. বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে হজরত উমর রা. চার মাস পরপর মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন। নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক, হাদিস ১২৫৯৪)



তবে কেউ যদি প্রয়োজনে বেশি সময় দূরে থাকতে চান তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রী যদি অনুমতি দেন, এ সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন, বাস্তবেও তেমনটি দেখা যায় তাহলে স্বামী চার মাসেরও বেশি সময় দূরে থাকতে পারবেন।



যদি স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে স্বামী বা স্ত্রী কোনো গোনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে চার মাসের কম সময়ও দূরে থাকা জায়েজ হবে না। (নাসায়ি ৩৪৬৫)

বাংলাদেশের আইনেও পরকীয়া একটি জঘন্যতম অপরাধ। দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় পরকীয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয় যা ধর্ষণ বলে গণ্য নয় তবে সেই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। এই ক্ষেত্রে ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম/বিনাশ্রম বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

চলবে....

25/12/2024

#তুমি_যে_আমার_মহারানী
পর্বঃ৩০
হাফসা আক্তার

শহরে এক ভয়ঙ্কর নারী পাচার চক্রের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। আরাফ , সিআইডির প্রতিশ্রুতিশীল গোয়েন্দা, এই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই কাজের সঙ্গে জড়িত সাবেক এমপি, যার ক্ষমতা ও প্রভাব অসীম, সে সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

এক রাতে, আরাফ তার দল নিয়ে গোপনে একটি পুরনো warehouse-এ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে পাচারকারীদের একটি গোপন বৈঠক চলছে। অন্ধকারের মধ্যে, তারা ধীরে ধীরে প্রবেশ করে। হঠাৎ, এক কর্কশ কণ্ঠ শোনা যায়, “যদি আমাদের পরিকল্পনা ফাঁস হয়, তাহলে আমাদের শেষ হয়ে যাবে!”

আরাফের হৃদয় দ্রুত ধড়ফড় করতে শুরু করে। সে বুঝতে পারে, এখানে কেবল পাচারকারীরা নয়, বরং আরও বিপজ্জনক কিছু রয়েছে। হঠাৎ, একটি উচ্চস্বরে শটগানের আওয়াজ হয়। তার দল দ্রুত পজিশন নেয়, কিন্তু সবকিছু খুব দ্রুত ঘটে।

গুদামের মধ্য থেকে এক মহিলা চিৎকার করে উঠল, “আমি জানি, তুমি আমাকে এখান থেকে বের করতে পারবে!” কিন্তু এর আগেই, আলো নিভে যায় এবং গোটা স্থান অন্ধকারে ডুবে যায়।

আরাফের দৃষ্টি অন্ধকারে কিছু দেখতে পায়। একটি গাঢ় ছায়া তার দিকে এগিয়ে আসছে। “এটা শেষের শুরু, আরাফ,” ছায়াটি বলে। “তুমি যা করতে চাইছ, তা সম্ভব নয়। শহরটা আমাদের হাতে।”

আরাফ তার সংকল্প বজায় রেখে পাল্টা প্রশ্ন করে, “তুমি কে?”

ছায়াটি মুখে মুখোশ পরে, “আমি শহরের অন্ধকার। তুমি যদি জানতে চাও, তবে দামের জন্য প্রস্তুত হও। এই খেলায় তুমি হারবে।”

আশেপাশে সংঘর্ষ শুরু হলে, আরাফ বুঝতে পারে, তাকে দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে ভীতির তোয়াক্কা না করে, অন্ধকারে ঢুকে পড়ে। দলকে সংকেত দিয়ে জানায়, “পাচারকারীদের আটকান, আমি ছায়াটির পেছনে যাচ্ছি!”

অন্ধকারে ঢুকে আরাফ একদিকে এগিয়ে যায়। ছায়াটি দ্রুত পালাতে চেষ্টা করে, কিন্তু আরাফ তার গতিবিধি লক্ষ্য করে। দুইজনের মধ্যে এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, আরাফ বুঝতে পারে, ছায়াটি কেবল এক কিছুর প্রতিনিধিত্ব করছে—শক্তি ও প্রভাবের, যা শহরকে গ্রাস করছে।

মুহূর্তেই আরাফ ছায়াটির মুখোশ খুলে ফেলে। সে দেখে, সাবেক এমপির এক বিশ্বস্ত সহযোগী রয়েছে, যে তার সমস্ত অপকর্মের নেপথ্যে কাজ করছে। “তুমি কি জানো, এই শহরের প্রতিটি কোণে আমরা রয়েছি?” সহযোগী হাসতে হাসতে বলে।

এদিকে, গুদামের ভেতর মারামারি চলতে থাকে। নারীরা চিৎকার করতে থাকে, আর আরাফ তার দলে অগ্রসর হয়। শেষ পর্যন্ত, আরাফ তার টিমের সাহায্যে পাচারকারীদের আটক করে, কিন্তু সহযোগী পালাতে সক্ষম হয়।

অবশেষে, অভিযানে সফল হলে, পাচারকারীদের রিমান্ডে নেয়া হয়। আরাফ জানে, তাদের তথ্য জানালে তাদের জীবন বিপদে পড়বে। তাই, পত্রিকায় খবর প্রকাশ পায়: "নারী পাচারকারীদের গ্রেপ্তার-গোড়ায় সাবেক এমপির নাম!"

রিমান্ডে, পাচারকারীরা ৬ দিন ধরে চাপের মধ্যে থাকে। শেষ দিনে, এক পাচারকারী জানায়, “আমরা এমপির নির্দেশে কাজ করেছি। তার চক্রের মধ্যে মৃত্যুর ভয় রয়েছে। যদি আমরা কথা বলি, তাহলে আমাদের নিশ্চিহ্ন করা হবে!”

এই সময়ে, আরাফ এবং তার দল কিছু বিশাল তথ্য সংগ্রহ করে। পাচারকারীরা একে অপরকে সতর্ক করে, “আমরা যদি এমপির নাম বলি, তাহলে আমাদের জীবন রক্ষা পাবে।”

সর্বশেষ দিন, তারা সব কথা খুলে বলে। “সে আমাদের জন্য সবকিছু করেছিল। এমপি আমাদের পেছনে। সে অন্ধকারের প্রভু!”

এমপির নাম উচ্চারিত হলে, আরাফ বুঝতে পারে-এটি একটি বড় ষড়যন্ত্র। শহরের নিরাপত্তা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রশাসনকে খবর দেন।

তাদের তথ্য শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চলে যায়। এমপির বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুত হতে শুরু করে। কিন্তু, এমপি তার সহযোগীদের মাধ্যমে আরাফের উপর চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করে।

"তুমি কি জানো, তুমি কি শুরু করেছ?” একজন দুর্বৃত্ত আরাফকে ভয় দেখায়। “যদি তুমি সত্য প্রকাশ কর, তোমার পরিবারকে মুছে ফেলা হবে!”

এভাবে, আরাফকে ভয়ের অন্ধকারে প্রবেশ করতে হয়, যেখানে তার পরিবার এবং তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে।

নারী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এক অভিযান শেষে, শহরে তোলপাড় শুরু হয়। আরাফ এবং তার সিআইডি দল যখন সাবেক এমপির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ঘটনা এক নতুন মোড় নেয়।

আদালতে মামলা শুরু হলে, পাচারকারীরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য অদ্ভুতভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়। “আমরা মিথ্যা বলছি। সাবেক এমপি কিছুই করেনি!” একজন পাচারকারী চিৎকার করে।

আরাফ এবং তার টিম আদালতে উপস্থিত থাকে। মামলার প্রমাণাদি এবং উদ্ধারকৃত নারীদের সাক্ষ্য সেখানে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু পাচারকারীরা তাদের দাবিতে অটল থাকে। “এটি সবই সাজানো। আমরা নিরপরাধ!”

আদালতে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মিডিয়া গুঞ্জন করে। একদিকে আরাফের দল প্রমাণ উপস্থাপন করছে, অন্যদিকে পাচারকারীদের গোপনিরোধী কৌশল চোখে পড়ছে।

সাবেক এমপি আদালতে হাজির হয়ে বলেন, “এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমি এর সাথে জড়িত নই!” তার চোখে ভয়াবহতা স্পষ্ট।

আরাফের মনে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তিনি জানেন, সত্যের যাত্রা কখনো সহজ নয়। তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা যে সব তথ্য পেয়েছি, তা প্রকাশ্যে এসেছে। পাচারকারীদের দাবির পেছনে তাদের ষড়যন্ত্র রয়েছে।”

আদালতের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আইনজীবীরা যুক্তি দেন, “এমপি সঠিকভাবে কাজ করেছেন। আরাফের এটি সব রাজনৈতিক নাটক!”

আদালতের কার্যক্রমে উত্তেজনা তীব্র হতে থাকে। সেখানেই, উদ্ধার হওয়া নারী আদালতে প্রবেশ করে। তার চোখে আতঙ্কের ছাপ, কিন্তু তার মুখে দৃঢ়তা। আরাফের আশা আবার জাগে।

নারী কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমি সবকিছু বলবো। তারা আমাকে ধরে রেখেছিল। আমি তাদের হাতে জীবনকে হারাতে বসেছিলাম!”

কক্ষের নীরবতা ভেঙে যায়। সবার চোখ তার দিকে। “সাবেক এমপি আমাদের কাজে সাহায্য করেছিল। সে আমাদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। আমি জানি, আমি যদি সত্যি বলি, তাহলে আমার জীবন বিপদে পড়বে। কিন্তু আমি আর মিথ্যা বলতে পারি না!”

পাচারকারীরা হতাশ হয়ে পড়ে, তাদের মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আদালতে আবেগের ঢেউ ওঠে। নারীর কান্না ও সত্যের প্রকাশ সবাইকে স্পর্শ করে।

“আমি দেখেছি কিভাবে তারা নারীদের এখানে নিয়ে এসেছে। এমপি সবকিছু জানতেন, কিন্তু তিনি কিছু করেননি,” সে চিৎকার করে। “আমি তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাই!”

এটি আদালতের মধ্যে এক নতুন মোড় নিয়ে আসে। বিচারক নারীর সাক্ষ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। তার বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে ওঠে, এমপির ভূমিকা অপরাধের সাথে সম্পর্কিত।

আদালতে একটি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আরাফ জানেন, এই মুহূর্তটি সত্যের জয় এবং নৈতিকতার লড়াইয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আরাফের উকিল বলল।

“আমাদের এই নারীকে সুরক্ষা দিতে হবে,” তিনি আদালতে বলেন। “এটি শুধু তার গল্প নয়, এটি অনেকের গল্প—যাদের কন্ঠস্বর কখনো শোনা হয়নি।”

নারীর কান্না এবং সাহস বিচারককে প্রভাবিত করে। “আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এই মামলার সঠিক তদন্ত হবে,” বিচারক বলেন।

পাচারকারীরা ও সাবেক এমপি এখন আরও বিপদে। সত্য প্রকাশ পাওয়ার পর, আরাফের দল তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে প্রস্তুত।



আদালতে উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে। নারীর কাঁদতে কাঁদতে সত্য বলার পর, সাবেক এমপির উকিল দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে। “এই সব মিথ্যা। আমার মক্কেলকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে,” সে ঘোষণা করে।

“এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র!” এমপির উকিল তীব্র কণ্ঠে বলে। “আরাফ বিরোধী দলের লোক। তার উদ্দেশ্য একমাত্র আমার মক্কেলকে সম্মান নষ্ট করা।”

আরাফের উকিল দাঁড়িয়ে যান, তার কণ্ঠে দৃঢ়তা। “আমরা সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে আছি। নারীর সাক্ষ্য পরিষ্কার। এমপির হাত এই অপরাধে লুকানো রয়েছে।”

আদালতে দুপক্ষের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। এমপির উকিল চিৎকার করে বলেন, “এই সব তথ্য সাজানো। আরাফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে!”

আরাফের উকিল পাল্টা জবাব দেয়, “আমরা যেসব প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা স্পষ্ট। সাবেক এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যি।”

দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিচারক তাদের তর্কের মাঝে হস্তক্ষেপ করে বলেন, “এটি আদালত, রাজনৈতিক নাটক নয়। এখানে শুধুমাত্র সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।”

আদালতে নিরবতা। সব চোখ বিচারকের দিকে। তিনি ঘোষণা করেন, “আগামী ১৬ তারিখে মামলার রায় দেয়া হবে। সকল পক্ষকে প্রস্তুত থাকতে হবে।”

এটি শুনে এমপির উকিল নীরব হয়ে যায়। আরাফ এবং তার দল জানতে পারে, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে তারা আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

আদালতে রায়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। সাবেক এমপির উকিলরা আরাফ এবং তার সিআইডি দলের সদস্যদের ভয় দেখাতে শুরু করে।

“যদি তোমরা এই মামলাকে এগিয়ে যাও, তোমাদের পরিণতি ভালো হবে না,” এমপির উকিলের ভয়ংকর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়। “আমরা তোমাদের সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারি।”

তাদের কথা শুনে, আরাফের টিমের সদস্যরা কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিন্তু আরাফ দৃঢ়তার সাথে সামনে এসে বলে, “ভয় আমাদের চলার পথে বাঁধা হতে পারে না। আমরা সত্যের পক্ষে আছি। আমাদের এই যাত্রা শেষ করতে হবে।”

“আমরা কিছুই লুকাবো না। সত্য প্রকাশের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে,” আরাফের এই কথায় সবাই নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে।

সিআইডি দলের সদস্যরা নিরলসভাবে প্রমাণ সংগ্রহ করতে শুরু করে। তারা গোপন তথ্য উদ্ধার করতে, সাক্ষীদের সাথে যোগাযোগ করতে এবং নতুন প্রমাণ খুঁজতে বের হয়। নারীর কাছে ফিরে গিয়ে, তারা তার সাহসিকতা এবং সত্যকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করে।

“আমি সব কিছু বলবো। আমি তাদের ভয় পাই না,” নারীর চোখে দৃঢ়তা দেখা যায়। তার এই বক্তব্য দলের সদস্যদের মধ্যে নতুন শক্তি এনে দেয়।

১৬ তারিখের জন্য প্রস্তুতির কাজ অব্যাহত থাকে। আদালতের কক্ষের বাইরে এবং ভেতরে দলটি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জানে, তাদের কাছে সত্য আছে, এবং সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আদালতে পৌঁছানোর দিন, সিআইডি দলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে একত্রিত হয়ে প্রতিজ্ঞা করে, “আমরা সত্যের জন্য লড়াই করবো, ভয়কে জয় করবো। আরাফ আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে, এবং আমরা একসাথে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবো।”

আদালতে প্রবেশ করার সময়, তাদের মনে সাহস ও দৃঢ়তা জাগ্রত হয়। তারা জানে, সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গেলে কঠিন যুদ্ধে নামতে হবে, কিন্তু তারা প্রস্তুত।

সুমাইয়া এবং আরাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সুমাইয়া কিছুদিন ধরে একটি বিষয় নিয়ে অবসন্ন এবং হতাশ ছিল। তিনি খেয়াল করলেন, আরাফ তার বাবার বাড়িতে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, যা তাকে কষ্ট দিচ্ছিল। সুমাইয়া মনে করছিল, আরাফ তাকে তার পরিবারের কাছে নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তার অনুভূতির মূল্য দিতে পারছে না।

সাবেক এমপি তার অপরাধের পথ ধরে চলতে গিয়ে আরাফ এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আঁটেন। আরাফের সততা এবং ন্যায়পরায়ণতার জন্য তাকে নিষ্ক্রিয় করা আবশ্যক বলে মনে করেন এমপি। তিনি তার সন্ত্রাসী দলকে নির্দেশ দেন যে, এবার আরাফ, তার বাবা, এবং স্ত্রী সুমাইয়াকে যেভাবেই হোক পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

রাতের অন্ধকারে, এমপির বিশ্বাসঘাতক সহযোগীরা একটি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা সাজায়। তারা ঠিক করে যে, আরাফ এবং তার পরিবারকে একত্রে হত্যা করবে, যাতে কোনো প্রমাণ বা সাক্ষী না থাকে।

হামলার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়, এবং এমপির সন্ত্রাসীরা ভয়ঙ্কর অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়। তারা জানত, রাতের অন্ধকারে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকবে, তখনই তারা আক্রমণ চালাবে। তারা আরাফের বাড়ির আশেপাশে গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে সবকিছু নিখুঁতভাবে সাজায়।

এই সময়ে, আরাফ কিছুটা সন্দেহ করতে শুরু করে। সে তার বাবার সঙ্গে আলোচনা করে এবং তার স্ত্রী সুমাইয়াকে সতর্ক থাকতে বলে। তারা আগে থেকেই কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়, যদিও তা তাদের জীবনের জন্য যথেষ্ট হবে কিনা তা তারা জানে না।

অবশেষে, নির্ধারিত রাতে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায়। তারা প্রথমে আরাফের বাড়ির মূল দরজা ভেঙে ফেলে, তারপর গুলি চালাতে শুরু করে। আরাফের বাবা দ্রুত তার স্ত্রীর ও সুমাইয়ার হাত ধরে একপ্রকার নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান, কিন্তু তারাও বুঝতে পারেন, এদের হাত থেকে বাঁচা সহজ হবে না।তাদের এমন একটা ঘরে নিয়ে জায় জেটা বাইরে থেকে মনে হবে দেয়াল।কিন্তু দেয়ালের পিছনে ছিল গোপন রুম।আরাফের বাবা রেখেই চলে জাবে।

এমপির সন্ত্রাসীরা যখন আক্রমণ চালাচ্ছিল, তখনই পুলিশের একটি দল গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এই অবস্থায় সন্ত্রাসীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে এবং তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

আরাফ তার পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। পুলিশের সাহায্যে, তারা সবাই একত্রিত হয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। সুমাইয়া, আরাফের শক্ত হাতে ধরে চোখের পানি মুছে নেয়।

এই ঘটনার পর, আরাফ এবং তার পরিবার সাবেক এমপির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা তার সমস্ত অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করতে শুরু করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের উচ্চস্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

সাবেক এমপি জানতে পারেন যে তার ষড়যন্ত্র পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, এবং এখন সে নিজেই বিপদে পড়ে গেছে।

অবশেষে, আরাফ এবং তার পরিবার নিরাপদভাবে তাদের জীবন শুরু করে। সাবেক এমপির দুর্নীতি ও হত্যার ষড়যন্ত্রের সমস্ত প্রমাণ জনসমক্ষে আসে। তার বিচার শুরু হয়, এবং দেশের মানুষ তার আসল চেহারা দেখে শিউরে ওঠে।

আরাফের পরিবার আবারও একত্রিত হয়ে সুখী জীবন যাপন শুরু করে, তবে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া এই ভয়ঙ্কর রাতের স্মৃতি চিরকাল তাদের হৃদয়ে রয়ে যায়। সুমাইয়া আরাফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি পাশে থাকলে আমি সবকিছু মোকাবেলা করতে পারব।" আরাফও তার স্ত্রীকে আশ্বাস দেয়, "তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে প্রস্তুত।"

এভাবেই, জীবন তাদের জন্য নতুন ভাবে শুরু হয়, এবং তারা অতীতের কষ্টকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়।

১৬ তারিখের রায় ঘোষণার দিন। আদালতের কক্ষ ভরে গেছে মানুষের ভিড়ে। সাবেক এমপি এবং তার দল প্রভাবশালী, তবে আজ আরাফ এবং তার সিআইডি দলের কাছে সবকিছু উন্মোচিত হতে চলেছে। তাদের কাছে প্রমাণ আছে, এমন প্রমাণ যা অপরাধীদের আর রেহাই দেবে না।

বিচারক কক্ষের পরিবেশ শান্ত করতে বললেন, “এ মামলার সমস্ত প্রমাণাদি নিয়ে আজকের রায় ঘোষণা করা হবে।”

সাবেক এমপির উকিল আবারও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে বললেন, “আমার মক্কেলকে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার করা হয়েছে। এই মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আসলে আরাফ বিরোধী দল হিসেবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”

কিন্তু সিআইডি দলের পক্ষে উকিল উঠে দাঁড়ালেন, আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললেন, “আমরা এমন প্রমাণ পেশ করতে যাচ্ছি যা সব অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করবে। সাবেক এমপি শুধু নারী পাচারের অপরাধী নন, বরং তিনি আরাফ ও তার পরিবারকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।”

তারপর একে একে প্রমাণ আদালতে তুলে ধরা হলো—অডিও রেকর্ডিং, যেখানে সাবেক এমপি তার লোকদের নির্দেশ দিচ্ছেন আরাফের পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য, ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে তাদের বাড়িতে আক্রমণ করার পরিকল্পনা। সবকিছু স্পষ্ট প্রমাণিত হয়।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এমপির নির্দেশে খুনিরা আরাফের বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছে। তাদের ধরা পড়ে যাওয়ার সময়ের ভিডিও ও সাক্ষীরা আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে এসব প্রমাণ দেখে চারপাশে একটি গুমোট নীরবতা নেমে আসে। প্রমাণগুলো এত স্পষ্ট এবং নির্ভুল যে কেউই তা অস্বীকার করতে পারছে না।

আরাফ নিজেও সাক্ষ্য দিয়ে জানান, “আমার পরিবারকে হত্যা করতে পাঠানো হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে, আমরা বেঁচে গেছি। কিন্তু এমপির অপরাধ ঢাকতে আর কিছুই বাকি নেই।”

তারপর নারীও কেঁদে উঠে বললেন, “সাবেক এমপি নিজে নারী পাচারের সাথে জড়িত ছিলেন। আমি তার হাতে শিকার হয়েছিলাম। আমি সত্য বলছি, এবং আজ আমি ন্যায়বিচার চাই।”

সব প্রমাণ দেখা এবং সব সাক্ষ্য শোনা শেষে বিচারক গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “সাবেক এমপি এবং তার দলের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর এবং এদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।”

সাবেক এমপি এবং তার সহযোগীদের সবাইকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়—আজীবন কারাদণ্ড। আরাফ ও তার দলের ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াই সফল হয়।

আদালত থেকে বের হওয়ার সময়, জনসাধারণ আরাফকে ঘিরে ধরে, তার সাহস ও নিষ্ঠার প্রশংসা করে। এক বৃদ্ধ ব্যক্তি এসে আরাফের কাঁধে হাত রেখে বলেন, “তুমি আমাদের সমাজকে ন্যায়বিচারের পথে ফিরিয়ে এনেছ। তুমি আমাদের হিরো।”

আরাফ বিনয়ের সাথে উত্তর দেয়, “আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমরা সত্য প্রতিষ্ঠা করেছি।”

সত্যের জয় হয় সব সময়’

মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিম যে সব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তার প্রতিটিই প্রমাণিত। যার ফলশ্রুতিতে অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরেক পৌত্তলিকদের দখলদারিত্ব ও অবস্থান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ইসলাম বিজয় লাভ করে। এ জয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।

Advertisement

ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে বনু কুরায়যার ইয়াহুদিরা নিহত হলো এবং বনু নযির গোত্রের ইয়াহুদিদের নির্বাসন দণ্ড দেয়া হলো। নাযরানের অবিশ্বাসীরা কর আদায় সাপেক্ষে ইসলামি সম্রাজ্যে বসবাসের অনুমিত পেয়েছিল।

ইসলামের বিজয়ের পর দুনিয়ার বড় বড় জাতিগুলোকে প্রায় হাজার বছর যাবত মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে বাধ্য ছিল। কারণ ইসলামের বিজয় ছিল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামি সম্রাজ্য ছিল ন্যয় ও ইনসাফের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

অল্প সংখ্যক মুসলিম বাহিনী বিশাল অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনীর বিপক্ষে বিজয় লাভ করেছিল। অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনীর বিশাল সৈন্যবহর ব্যাপক যুদ্ধ-সরঞ্জামে সজ্জিত থাকার পরও কিভাবে ইসলামের প্রথম সমর অভিযান বদরে পরাজয় বরণ করেছিল, সে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ওঠে এসেছে কুরআনুল কারিমের এ আয়াতে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

Advertisement

আয়াতের অনুবাদ

আয়াতের পরিচয় ও নাজিলের কারণআল্লাহ তাআলা সুরা আল-ইমরানের ১২নং আয়াতে বদরের যুদ্ধে জয় লাভের বিবরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা যেভাবে মুসলিম বাহিনীকে সাহায্য করেছেন, সে যুদ্ধ জয়ের বিবরণ থেকে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিবেকবানদের জন্য যে শিক্ষা রয়েছে তা ওঠে এসেছে এ আয়াতে।

বদর যুদ্ধের প্রস্তুতি ও সরঞ্জামবদরের যুদ্ধে অবিশ্বাসী কুরাইশদের সৈন্য সংখ্যা ছিল মুসলিম সৈন্য সংখ্যার ৩গুণেরও বেশি অর্থাৎ ১ হাজার। আর মুসলমান যোদ্ধার সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৪ জন।

যুদ্ধ সরঞ্জামের মধ্যে যেখানে মুসলিম বাহিনীর উট ছিল ৭০টি সেখানে কুরাইশদের উটের সংখ্যা ছিল ১০গুণ বেশি অর্থাৎ ৭০০ উট। যেখানে মুসলমানদের ঘোড়া ছিল ২টি, সেখানে কুরাইশদের ঘোড়া ছিল ৭০টি।

Advertisement

মুসলিম যোদ্ধারা মাত্র ৮টি তরবারি ও ৬টি বর্ম নিয়ে কুরাইশদের বিশাল বাহিনীর মোকাবেলা করেছিল। যা ছিল চিন্তারও অকল্পনীয়। কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলা সুসজ্জিত কুরাইশ বাহিনীর মোকাবেলায় বিজয়ের পূর্ব সুসংবাদ দিয়েই ইসলামের প্রথম সমর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে বদর প্রান্তরে বিজয় দান করেছিলেন। আর তাতেই প্রমাণিত হয়েছিল যে, সত্যের জয় সব সময়ই হয়।

আরও পড়ুন > খায়বার বিজয়ের ঘোষণা এসেছিল যেভাবে

আল্লাহ তাআলা সত্যাশ্রয়ী মুসলিম বাহিনীকে সত্যের জয়ে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিলেন। মুসলমানদের সংখ্যা কাফেরদের তুলনায় ছিল কুবই নগন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ এখানে বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া দু’টি দলের কথা বলা হয়েছে। একটি দল হলো, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা-ই কেরামের দল। আর দ্বিতীয় দলটি হলো, মুশরিক অবিশ্বাসী কুরাইশদের দল।

আল্লাহর তাআলার আদর্শ বাস্তবায়নে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের নিয়ে সেদিন যুদ্ধ করেছিলেন। আর মুশরিকরা আল্লাহর দ্বীন ‘ইসলাম’কে চিরতরে বিদায় করে দিয়ে পৃথিবীতে বাতিলকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল।

বদরের যুদ্ধে বিজয় দান করে আল্লাহ তাআলা মুশরিক অবিশ্বাসীদের সে মনোবাসনা ব্যর্থ করে দিয়ে সত্য-মিথ্যার সুস্পষ্ট মীমাংসা তৈরি কের দেন। আর এ যুদ্ধে অবিশ্বাসী মুশরিকরা চরম লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় আর মুসলিম বাহিনীর সত্যের বিজয় সুনিশ্চিত হয়। যা অত্র আয়াতে আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন।

সুতরাং যারা ইসলামের সত্যতার ওপর নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম-চেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত রাখবে, তাদের জন্য সুসংবাদ হলো- ‘সত্যের জয় হবেই হবে।’ আল্লাহ তাআলা সত্যকে সমাগত করবেন আর মিথ্যাকে প্রতিহত করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনুল কারিমের এ আয়াত থেকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা গ্রহণ করে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফিক দান করুন। বদরের চেতনা ও শিক্ষাকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করার তাওফিক দান করুন। ইসলামের সত্যতার বিজয়ে নিজেকে শামিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম
চলবে...

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when হেদায়েতের গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to হেদায়েতের গল্প:

Videos

Share

Category