26/12/2024
#তুমি_যে_আমার_মহারানী
পর্বঃ৩১
হাফসা আক্তার
আরাফ সারাদিনের কঠোর পরিশ্রম ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। আজকের দিনে, তিনি অসংখ্য রুগির দেখাশোনা করেছেন এবং রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তার শরীর ও মন একেবারেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরেই, তিনি জানতেন যে তার একমাত্র আশ্রয় জায়গা সুমাইয়ার কোলে।
সন্ধ্যার মৃদু আলোয়, আরাফ তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করলেন। সুমাইয়া তার সাজানো বিছানায় বসে ছিলেন, একটি বই পড়ছিলেন। আরাফ তার পাশে এসে বসলেন, তার চোখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। সুমাইয়া আরাফের মুখের দিকে তাকালেন এবং তাঁর অবস্থার প্রতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন।
“আজকের দিনটা খুবই কঠিন ছিল, সুমাইয়া,” আরাফ তার ক্লান্ত গলায় বললেন। “আমি এতটাই ক্লান্ত যে, কোনোভাবে বিশ্রাম নিতে পারছি না।”
সুমাইয়া তার স্নেহময় হাত দিয়ে আরাফের মুখের দিকে নরমভাবে হাত রাখলেন। “আমার কোলে মাথা রেখে বিশ্রাম নাও,” তিনি কোমলভাবে বললেন। “আমি তোমার পাশে আছি, আর তোমার জন্য সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
আরাফ মৃদু হাসি দিয়ে, সুমাইয়ার কোলে মাথা রেখে শোবার জন্য প্রস্তুত হলেন। সুমাইয়া তাকে শান্তভাবে শুইয়ে দিলেন এবং নিজের কোমল হাত দিয়ে আরাফের মাথায় আলতোভাবে চাপ দিয়ে বিলি কাটতে লাগলেন। তার স্পর্শে, আরাফ ধীরে ধীরে শান্তি অনুভব করতে শুরু করলেন।
আরাফ তার চোখ বন্ধ করে, সুমাইয়ার কোমল হাতের স্পর্শের সান্নিধ্যে নিজেকে শান্ত মনে করলেন। তিনি যেন একটি স্বপ্নের জগতের মধ্যে চলে গেলেন, যেখানে কোনো ক্লান্তি বা উদ্বেগ নেই। সুমাইয়া তার চোখে ভালোবাসার মিষ্টি হাসি নিয়ে, আরও বেশি যত্নের সাথে বিলি কাটতে লাগলেন।
“ধন্যবাদ, সুমাইয়া,” আরাফ মাঝে মাঝে শান্ত গলায় বললেন, “তোমার এই ভালোবাসা ও যত্ন আমাকে পুনরায় শক্তি জোগায়।”
সুমাইয়া তার কোমল হাসি দিয়ে, আরাফের মাথায় চুমু দিলেন। “আমি সবসময় তোমার পাশে আছি, আর তোমার শান্তি আমার প্রাথমিক লক্ষ্য। এখন বিশ্রাম নাও, তোমার ক্লান্তি দূর হবে।”
আরাফ এক মৃদু নিঃশ্বাস নিয়ে, সুমাইয়ার কোলে শুয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেন। সুমাইয়া তার চোখের প্রশান্তিতে তাকিয়ে, তার প্রিয় স্বামীর এই শান্তি ও সুখ দেখতে পেয়েছিলেন। ঘরের চারপাশে একটি শান্তির আবহাওয়ার সৃষ্টি হল, আর দুজনেই নিজেদের ভালোবাসার গভীরতায় হারিয়ে গেলেন।
স্ত্রীর রানের উপর মাথা রেখে ঘুমানো সুন্নাহ
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক সফরে বের হলাম। বাইদা কিংবা যাতুল জাইশ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার গলার হার হারিয়ে গেল। তা খোঁজার জন্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে অবস্থান করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সঙ্গে অবস্থান করল। সেখানেও কোনো পানি ছিল না এবং তাদের সঙ্গেও পানি ছিল না। এরপর লোকেরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এলো এবং বলল, ’আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যা করেছেন আপনি তা দেখেছেন কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সকল লোককে আটকিয়ে রেখেছেন, অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার উরুতে (রানে) মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন।
এমতাবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এলেন এবং বললেন, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সকল লোককে আটকে রেখেছো অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সঙ্গেও পানি নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে দোষারোপ করলেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তা বলেছেন এবং তাঁর অঙ্গুলি দিয়ে আমার কোমরে ধাক্কা দিতে লাগলেন, আমার কোলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থানই আমাকে নড়াচড়া করতে বাধা দিল। পানিবিহীন অবস্থায় ভোরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে উঠলেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন, তখন সবাই তায়াম্মুম করল। তখন উসাইদ ইবনু হুযাইর বললেন, হে আবু বকর-এর বংশধর! এটাই আপনাদের কারণে পাওয়া প্রথম বারাকাত নয়।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, যে উটের উপর আমি ছিলাম, তাকে আমরা উঠালাম তখন দেখি হারটি তার নিচে।’ (বুখারি ৪৬০৭)
আরাফ অফিস থেকে ফিরে খুব মজা করতে ইচ্ছে হলো। ঘরে ঢুকে দেখলেন, সুমাইয়া রান্নাঘরে ব্যস্ত। তিনি চুপিসারে গিয়ে তার পেছনে দাঁড়ালেন, তারপর হঠাৎ করে বললেন, "এই যে, মিস! জানেন, আজ আমি নতুন বউ খুঁজে পেয়েছি।"
সুমাইয়া প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেল, তারপর তাকিয়ে দেখলো আরাফের হাসি চেপে রাখার চেষ্টা। "কী বললে তুমি?" তিনি অবাক হয়ে বললেন।
আরাফ হাসি থামিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, নতুন বউ। শুধু তোমার মতো সুন্দরী না, কিন্তু খুব মিষ্টি।"
সুমাইয়া চোখ কুঁচকে বললেন, "আচ্ছা! কে সে?"
আরাফ ধীরে ধীরে বললেন, "ও তো আসলে... আমার প্রিয় মিষ্টি বউ! যার নাম সুমাইয়া!"
এ কথা শুনে সুমাইয়া রেগে গিয়ে তার দিকে তাকালেন, কিন্তু চোখের কোণে হাসির ছাপ লুকাতে পারলেন না। "তুমি কী মজা করছো!" তিনি বললেন, কিন্তু তার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠলো।
"তোমার হাসিটা দেখার জন্যই তো মজা করলাম," আরাফ বলেন, তার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে। "তুমি জানো না, তোমার হাসিটাই আমার সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।"
এই কথা শুনে সুমাইয়া আর রাগ করতে পারলেন না। তিনি আরাফের কাঁধে মাথা রেখে বললেন, "তুমি সব সময়ই আমাকে হাসাতে জানো, আরাফ।"
আরাফ মুচকি হেসে বললেন, "তোমার হাসির জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি আছি, মিসেস সুমাইয়া!"
দুপুরের সময়, আরাফ সুমাইয়ার দিকে মৃদু হাসি নিয়ে তাকালেন। সুমাইয়া রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ করে আরাফ বললেন, “সুমাইয়া, আমি তোমার সাথে গোসল করতে চাই।”
সুমাইয়া কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, “কিন্তু কেন, এখন গোসল?”
আরাফ নরম কণ্ঠে বললেন, “এটি নবী (সা.) এর সুন্নত। একসাথে গোসল করার মাধ্যমে আমরা নবীর (সা.) সুন্নত পালন করতে পারি এবং আমাদের সম্পর্কের আন্তরিকতা ও একতা বাড়াতে পারি। এটি আমাদের জন্য একটি মূল্যবান সুযোগ।”
স্ত্রীর সঙ্গে গোসল করা সুন্নাহ
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, আমি ও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই পাত্র (কাদাহ) থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো।’ (বুখারি ২৫০)
সুমাইয়া আরাফের কথা শুনে অনুভব করলেন যে এটি একটি সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তিনি স্নানঘরে গিয়ে প্রস্তুতি নিলেন। আরাফও সেখানে পৌঁছে সুমাইয়াকে সহায়তা করতে লাগলেন।
একসাথে গোসল করার সময়, তারা নবী (সা.) এর সুন্নত পালন করে একটি গভীর শান্তি ও একতার অনুভূতি পেলেন। আরাফ সুমাইয়ার চুলে সাবান লাগিয়ে, সুমাইয়া আরাফের কাঁধে মাথা রেখে শান্তিতে গোসল করলেন। এভাবে, তাদের সম্পর্ক আরও গভীর ও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পেল।
গোসল শেষে, তারা একে অপরকে গভীর ভালবাসা ও প্রশান্তির সাথে দেখলেন, তাদের হৃদয়ে নবীর (সা.) সুন্নতের প্রতি একটি বিশেষ প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি অনুভব করলেন।
সন্ধ্যার নরম আলোতে আরাফ সুমাইয়ার পাশের সোফায় বসে ছিলেন। সুমাইয়া তাকে আরামদায়কভাবে ঘিরে রেখেছিলেন, আর আরাফের হাতে ছিল একটি কুরআন শরিফ।
আরাফ সুমাইয়ার কোলে হেলান দিয়ে বসে, কুরআনের আয়াতগুলি পাঠ করতে শুরু করলেন। সুমাইয়া তার মাথার কাছে হাত রেখে, আরাফকে শান্তি ও সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। আরাফের কুরআনের তেলাওয়াতের মধুর সুর ঘরের মধ্যে এক প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছিল।
সুমাইয়া তার কোমল হাত দিয়ে আরাফের মাথায় স্নেহভরা স্পর্শ করছিলেন, আর আরাফ তেলাওয়াতের সাথে সাথে সুমাইয়ার কোমল নীরবতা অনুভব করছিলেন। এই মূহুর্তে, তাদের মধ্যে একটি গভীর শান্তি ও সংযোগ তৈরি হয়েছিল, যা কুরআনের মর্মস্পর্শী আয়াতগুলোর সাথে মিশে গিয়েছিল।
আরাফ ও সুমাইয়া একে অপরের সংস্পর্শে যেন আত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি খুঁজে পেতে লাগলেন, যা তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও গভীর করে তুলেছিল।
স্ত্রীর কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা সুন্নাহ
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েজের অবস্থায় ছিলাম।’ (বুখারি ২৯৭)
সকালে সবুজের মা তিনটা পরোটা খেয়ে শেষ করল। এরপরই সে বিরক্তি নিয়ে সবুজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনি আমার স্বামীর টাকা নষ্ট করছেন, জানেন? বসে বসে শুধু খাচ্ছেন। বলি, কাজ করতে পারবেন তো? নাকি সব কিছু আমারই করতে হবে?"
তনয়ার তীব্র কথাগুলো শুনে সবুজের মা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তার চোখে পানি চলে আসে, কিন্তু কিছু বলার সাহস নেই। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, "আমিও একদিন সুমাইয়ার সাথে এমনই করেছিলাম—অকারণে তাকে কষ্ট দিয়েছিলাম।" এই স্মৃতি তাকে আরও ভেঙে দেয়, আর তিনি নিঃশব্দে কাঁদতে থাকেন, নিজের ভুলগুলো যেন তার হৃদয়ে নতুন করে আঘাত করে।
তনয়ার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সবুজের মা একদিন সবুজের কাছে গিয়ে নালিশ করলেন, "তোমার বউ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, আমার সাথে এমন ব্যবহার করছে যেন আমি অপরাধী।"
তাঁর কথাগুলো শোনার পর সবুজ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। এরপর তনয়া ঘরে এসে যখন এই কথাগুলো শুনল, তখন সে ভীষণ রেগে গিয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলল। চারপাশে তছনছ করে দিয়ে সবুজের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "তোমার মা আমার বিরুদ্ধে নালিশ করছে! আমি আর সহ্য করতে পারছি না!"
সবুজ হতাশ হয়ে তাঁর মায়ের দিকে ফিরে চিৎকার করে বলল, "তুমি আমার একটা সংসার ধ্বংস করেছ, আরেকটা ধ্বংস করতে চাও! তুমি একটা ডাইনি! কেনো আমার জীবনে বারবার এমনটা ঘটছে?"
সবুজের মা হতভম্ব হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তিনি ভাবলেন, "এই ছেলে একদিন আমাকে কত ভালোবাসত, সবকিছু শেয়ার করত। হয়তো সুমাইয়ার সাথে ধোঁকা দেওয়ার ফলেই আজ এই অবস্থায় পড়তে হলো। আল্লাহ্র কাছ থেকে কোনো ছাড় পেলাম না।"
মায়ের মন ভেঙে গেল, কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন, সবুজ এখন আর সেই আগের মতো নেই। তাঁর মন আজ নষ্ট হয়ে গেছে, এবং সেই নষ্ট মনেই তাঁকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে।
তনয়া একদিন সকালে খুব রেগে গিয়ে সবুজের মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল। তিনি কঠোর স্বরে বললেন, "আপনার জন্য আজ থেকে খাওয়া বন্ধ। যখন আমার জামাকাপড় ধুয়ে দেবেন, তখনই খাবার পাবেন।"
সবুজের মা হতভম্ব হয়ে গেলেন, তিনি কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন। তনয়া কোনো কথা না শুনেই তাঁর সামনে থেকে খাবার নিয়ে চলে গেল।
মা বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন, তাঁর চোখে পানি চলে এল। তিনি ভাবলেন, "এই দিন দেখতে হবে জানতাম না। কতবার সুমাইয়াকে কষ্ট দিয়েছি, কিন্তু আজ আমার নিজেরই সেই কষ্টের ফল ভোগ করতে হচ্ছে। আল্লাহ্র কাছ থেকে কোনো মাফ পাচ্ছি না।"
সবুজের মা এখন বুঝতে পারলেন, তাঁকে আরও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, কারণ তনয়ার অত্যাচারের কোনো সীমা নেই।
তনয়া ধীরে ধীরে তার অত্যাচারের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে শুরু করলো। সবুজের মা একসময় অনেক শক্তিশালী ছিলেন, কিন্তু বয়সের সাথে সাথে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। তনয়া জানতো, এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগাতে হবে।
একদিন, তনয়া ঠিক করলো, সে সবুজের মায়ের জন্য খাবারের ব্যবস্থা কমিয়ে দেবে। তিনি খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন, এবং সবাই জানতো তার হাতের রান্নার স্বাদ অসাধারণ। কিন্তু এখন সেই হাতেই প্রতিশোধের নকশা আঁকা শুরু হলো।
প্রথমে, তিনি সবুজের মায়ের জন্য খাবার সরবরাহ করতে দেরি করতে শুরু করলেন। সবুজের মা অপেক্ষায় থাকতেন, কিন্তু খাবার সময়মতো আসতো না। তার খিদে বেড়ে যেত, কিন্তু খাবার না পেয়ে তিনি চুপচাপ বসে থাকতেন। এরপর তনয়া খাবারের মান কমিয়ে দিতে শুরু করলেন। ভালো, টাটকা খাবারের জায়গায় পুরোনো এবং বাসি খাবার দেওয়া হলো। সবুজের মা মুখের সামনেই এই খাবার দেখতে পাচ্ছিলেন, কিন্তু খেতে বাধ্য ছিলেন কারণ অন্য কোনো উপায় ছিল না।
ধীরে ধীরে, সবুজের মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলো। তিনি দুর্বল হয়ে পড়লেন, তার শরীরের শক্তি কমে গেল। তনয়া একদিকে তার মিষ্টি হাসি নিয়ে সবুজের সামনে থাকলেও, ভেতরে ভেতরে তিনি জানতেন যে প্রতিশোধের অগ্নি তার হৃদয়ে জ্বলে উঠছে।
তবে সবুজ এ ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারলো না। তিনি তনয়ার উপর পুরোপুরি বিশ্বাস রেখে চলছিলেন। তার মা ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হতে থাকলেন, এবং সবুজের মনে হলো হয়তো তার মায়ের বয়সই এর জন্য দায়ী। কিন্তু তনয়া তার মনে সবুজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের ছক বুনে যাচ্ছিলেন, যা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছিল।
তনয়ার এই প্রতিশোধের পথ ছিল ধীর এবং সূক্ষ্ম, কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি নিশ্চিত করছিলেন যে সবুজের মা ভুগছেন, এবং এভাবে তনয়া তার লক্ষ্য অর্জনের দিকে একধাপ করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
তনয়ার মন অত্যাচারের আগুনে পুড়ছিল, এবং এবার সে আরও ভয়ংকর এক পরিকল্পনা আঁকলো। সে জানতো, সবুজের মা বয়সের কারণে খুবই দুর্বল, এবং তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল একাকিত্বের ভয়। এই ভয়কেই তনয়া তার অস্ত্র বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো।
একদিন বিকেলে, সবুজ যখন কাজে ব্যস্ত ছিল এবং বাড়িতে কেউ ছিল না, তনয়া সবুজের মাকে বললো, “মা, আজ আপনার জন্য একটু অন্যরকম ব্যবস্থা করেছি। আপনি আসুন, আমি আপনাকে দেখাই।”
সবুজের মা কিছুটা অবাক হলেও তনয়ার হাসি দেখে বিশ্বাস করলেন। তনয়া তাকে ধরে নিয়ে গেল একটি ছোট, পুরোনো ঘরের দিকে। ঘরটি ছিল বাড়ির সবচেয়ে নির্জন কোণে, যেখানে দিনের আলো খুব কমই পৌঁছায়। ঘরটিতে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে সবুজের মা এক অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করলেন। দেয়ালগুলো মাটির মতো স্যাঁতসেঁতে, বাতাসে ছিল পুরোনো কাঠের গন্ধ, আর জানালাগুলো ছিল মোটা পর্দায় ঢাকা।
তনয়া মায়ের হাত ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। "মা, আপনি এখানে একটু বিশ্রাম নিন, আমি কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসবো," বলে তনয়া ঘর থেকে বের হয়ে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিল।
সবুজের মা অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার শরীরে হিমশীতল একটা অনুভূতি বইতে শুরু করলো। তিনি দরজার কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দরজা ঠেলে দেখলেন, কিন্তু দরজাটি বন্ধ। তার মুখ থেকে এক অদৃশ্য চিৎকার বেরিয়ে এলো, কিন্তু তনয়া ইতিমধ্যে দূরে চলে গেছে।
এখন ঘরের ভেতরে গভীর নীরবতা নেমে এলো। চারিদিকে কেবল অন্ধকার, কোনো শব্দ নেই। সবুজের মা দরজায় আঘাত করতে লাগলেন, "তনয়া! আমাকে বের করো! এখানে খুব অন্ধকার, আমি ভয় পাচ্ছি!" কিন্তু তার কণ্ঠস্বর দেওয়ালের মধ্যে গুমরে মরলো, কোনো প্রতিধ্বনি নেই।
মিনিটগুলো ঘণ্টায় পরিণত হলো, এবং ঘণ্টাগুলো অসহনীয় দীর্ঘতায় রূপ নিলো। সবুজের মা একাকিত্বের ভয়ে কাঁপতে শুরু করলেন। তার মনে হতে লাগলো, তিনি যেন অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছেন। তার শ্বাসপ্রশ্বাস ভারী হয়ে উঠলো, এবং ঘরের ঠান্ডা দেয়ালগুলো তার চারপাশে ঢেকে আসছে বলে মনে হলো।
তনয়া দূর থেকে এই দৃশ্য কল্পনা করে মৃদু হাসলো। সে জানতো, সবুজের মা শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক কষ্টে আরও বেশি ভুগবে। এই নির্জনতায় বন্দী করার পরিকল্পনা তার প্রতিশোধের সবচেয়ে নিষ্ঠুর দিক ছিল।
সবুজের মা অবশেষে নিঃশেষ হয়ে মাটিতে বসে পড়লেন, তার চোখ থেকে নিঃশব্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। তিনি কেবল অপেক্ষা করতে থাকলেন, কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এলো না।
এইভাবেই তনয়া তার অত্যাচারের কৌশলটি সফলভাবে কার্যকর করলো, এবং সবুজের মা ধীরে ধীরে তার মনোবল হারিয়ে ফেললেন, যেন এক অদৃশ্য কারাগারে বন্দী হয়ে গেছেন, যেখানে কোনও রক্ষা নেই, কোনও মুক্তি নেই।
সবুজের বাড়িতে একটি অশান্ত পরিবেশ বিরাজমান। তনয়া একদিন গোপনে সবুজের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিলেন। তাঁর পর, তনয়া সবুজকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। সবুজের মুখের দিকে তাকিয়ে তনয়া বললেন, “এই বাড়ির মালিকানা এখন আমার। তুমি চলে যাও, তুমি এখানে আর থাকো না।”
সবুজ অবিশ্বাসের সাথে বললেন, “আমার সন্তান তোমার পেটে আছে।”
তনয়া তাচ্ছিল্যপূর্ণভাবে উত্তর দিলেন, “আমার সন্তান নয়, এটি রনির সন্তান। রনি এখন আমাকে আগলে ধরেছে।”
এই কথার সাথে সাথে রনি এসে তনয়াকে জড়িয়ে ধরলেন। সবুজের চোখে হতাশা ও ব্যথার আছড়ে পড়া ছিল।
সবুজ চুপচাপ ঘর ছেড়ে চলে গেলেন এবং বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে তাঁর মায়ের কাছে পৌঁছালেন। সাহেরা, এখনও বৃদ্ধাশ্রমের পরিবেশে বসে ছিলেন, তার মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট ছিল।
“মা,” সবুজ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই।”
সাহেরা তার ছেলের দিকে তাকিয়ে, একটু শান্তির স্বাদ খুঁজতে পেরেছিলেন। তিনি বললেন, “সবুজ, তুমি শুধু আমার জন্য নয়, নিজের ভবিষ্যতের জন্যও কিছু ভালো করতে পারো। আমি তোমাকে আরাফকে দেখার পরামর্শ দেব। সে একজন পরহেজগার মানুষ এবং হালাল ব্যবসার উদ্যোগে সহায়তা করতে পারে।”
সবুজ সাহেরার পরামর্শ মেনে নিয়ে আরাফের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। আরাফ, যিনি একটি সম্মানজনক ও পরহেজগার মানুষ, সবুজকে হালাল ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। আরাফের আন্তরিকতা ও নৈতিকতা দেখে, সবুজ নিজের জীবন নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করলেন।
এভাবেই, সবুজের জীবন নতুন এক পথে হাঁটতে শুরু করল। তনয়ার নির্দয় আচরণের পরেও, তিনি সাহেরার পরামর্শে নিজের জীবনকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করলেন।
---
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৪৩
গুনাহের কারণে মানুষ যে ছয় শাস্তির মুখোমুখি হয়
ইসমাঈল সিদ্দিকী
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অমান্য করাই গুনাহ বা পাপ। ছোট হোক বা বড়, গুনাহকে হালকা ভাবা উচিত নয়। কারণ ছোট গুনাহ ধীরে ধীরে বড় গুনাহের দিকে নিয়ে যায় এবং গুনাহ করতে করতে একটা সময় গুনাহকারী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। গুনাহের বহুবিধ ক্ষতি আছে।
আলোচ্য প্রবন্ধে মৌলিক কিছু ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করা হলো—
১. রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়
রিজিক আল্লাহপ্রদত্ত অনেক বড় নিয়ামত। আর মানুষ নিয়ামত থেকে তখনই বঞ্চিত হয়, যখন অকৃতজ্ঞ হয়ে সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের (নিয়ামত) বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার গুনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)
২. ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া
ইলম আল্লাহপ্রদত্ত নূর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তার জন্য এক আলোর ব্যবস্থা করেছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২২)
আর গুনাহ ওই নূর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়, এ জন্য গুনাহের কারণে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়। অনেক কিছু শিখেও ভুলে যায়।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, অবশ্যই আমি মনে করি, মানুষ তার শিক্ষা করা ইলম ভুলে যায় তার কৃত গুনাহর কারণে। (জামিউ বয়ানিল ইলম : ১/১৯৬)
৩. অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়
গুনাহের দরুন মানুষের অন্তরে মরিচা ধরে যায়। হৃদয়ে কালো দাগ পড়ে যায়। ফলে তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ভালো কথা আর ভালো লাগে না, চাইলেই ভালো কাজে মন বসানো যায় না।
রাসুল (সা.) বলেন, “যখন কোনো মুমিন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে, তারপর সে যখন তাওবা করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যখন মুমিন আবারও গুনাহ করে তখন অন্তরের কালো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে অন্তরে আল্লাহর কোরআনে বর্ণিত ‘রাইন’ তথা মরিচা প্রভাব বিস্তার করে।” ( মিশকাত, হাদিস : ২২৮১)
৪. কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে যায়
যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অনুগত হয়ে চলে, আল্লাহ তাআলা তাদের সময়ে বরকত দান করেন। ফলে খুব সহজেই, খুব কম সময়েই তারা নিজ নিজ কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আর যারা সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত থাকে তাদের মধ্যে অলসতা জেঁকে বসে আর তাদের জন্য কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার যাবতীয় কাজ সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৪)
৫. গুনাহ ছাড়া কঠিন হয়ে যায়
গুনাহের প্রথম পর্যায়ে আমরা ভাবি, আজ না হয় গুনাহটা করেই ফেলি। তারপর তা ছেড়ে দিয়ে তাওবা করে ফেলব। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো। কারণ একটি গুনাহ অন্য গুনাহের জন্ম দেয়। একটি গুনাহের কারণে আরেকটি গুনাহ সংঘটিত হয়। ফলে গুনাহ ছেড়ে রবের দিকে ফিরে আসা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য যথাসম্ভব নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখা। গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে কালক্ষেপণ না করে তাওবা করে নেওয়া উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ করো।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)
৬. পরকালে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া
গুনাহের কারণে দুনিয়াতে যেভাবে নানা রকম সংকট আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তেমনি পরকালেও আল্লাহ তাআলার শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো, যারা পাপ করে, অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)
তাই সময় থাকতেই গুনাহ ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
১২ টা ১ মিনিট, ২১ অক্টোবর ২০২৩
ইসলামে পরকীয়ায় শাস্তি কঠোর
স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে প্রেম ও যৌন সম্পর্ককেই পরকীয়া বলে। ইসলাম ও নৈতিকতা এসব সম্পর্ককে কখনোই মেনে নেয় না। ইসলাম এ-জাতীয় অবৈধ সম্পর্কের ভয়াবহ শাস্তির বিধান দিয়েছে।
গোনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর দূরে থাকা ইসলামে জায়েজ নেই। ছবি: সংগৃহীত
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
৩ মিনিটে পড়ুন
ইসলাম শান্তির ধর্ম। অশান্তি, অনৈতিকতা ইসলাম পছন্দ করে না। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সা. অনৈতিকতাকে কঠোর হাতে দমন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষেজৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধ উপায় দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। অবৈধ উপায় পরিহার করার নির্দেশনাও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কের বিধান দিয়েছেন। পরকীয়া-ব্যভিচার অবৈধ সম্পর্কে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
নারী-পুরুষ সবাইকেই চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা: বনি ইসরাইল ৩২)
ব্যভিচারকারীদের শাস্তি হিসেবে অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারকারী নারী ও পুরুষ উভয়কে ১০০টি করে বেত্রাঘাত করো’ (সুরা: নুর ২)। এটা অবিবাহিত জিনাকারীর শাস্তি। আর পরকীয়া কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে বিবাহিত নারী-পুরুষ যদি জিনায় লিপ্ত হয়, তাদের জন্য ইসলামে আরও ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা: নুর ২)
হাদিসে নববীতে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কারণ, এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে: তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ু সংকীর্ণ হয়ে যাবে, তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে: সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হাদিস ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হব।’ (বুখারি ৭৬৫৮)
বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পরিবারে দেবরের সঙ্গে ভাবির সম্পর্ক। দেবরকে মৃত্যুর মতো ভয় করতে বলা হয়েছে। কঠিনভাবে হারামের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হজরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেয়ো না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? রাসুল সা. বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম হাদিস ২৪৪৫)
বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা পরকীয়া। ব্যাপক হারে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠছে। পরকীয়ায় বলি হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান। প্রবাসীদের স্ত্রীরা সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়ছেন এতে।
আরও পড়ুন: ঋণ পরিশোধে গড়িমসি, নবীজির হুঁশিয়ারি
হজরত ওমর রা. মেয়ে হজরত হাফসা রা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে? তখন হাফসা রা. বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে হজরত উমর রা. চার মাস পরপর মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন। নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক, হাদিস ১২৫৯৪)
তবে কেউ যদি প্রয়োজনে বেশি সময় দূরে থাকতে চান তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রী যদি অনুমতি দেন, এ সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন, বাস্তবেও তেমনটি দেখা যায় তাহলে স্বামী চার মাসেরও বেশি সময় দূরে থাকতে পারবেন।
যদি স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে স্বামী বা স্ত্রী কোনো গোনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে চার মাসের কম সময়ও দূরে থাকা জায়েজ হবে না। (নাসায়ি ৩৪৬৫)
বাংলাদেশের আইনেও পরকীয়া একটি জঘন্যতম অপরাধ। দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় পরকীয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয় যা ধর্ষণ বলে গণ্য নয় তবে সেই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। এই ক্ষেত্রে ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম/বিনাশ্রম বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
চলবে....