জ্ঞানপিপাসুদের জন্য ক্ষুদ্র প্রয়াস

  • Home
  • Bangladesh
  • Dhaka
  • জ্ঞানপিপাসুদের জন্য ক্ষুদ্র প্রয়াস

জ্ঞানপিপাসুদের জন্য ক্ষুদ্র প্রয়াস বিদ্যার্থীদের জ্ঞানপিপাসা মেটাতে মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন কন্টেন্ট উপস্থাপনাকরণই এই পেজের একমাত্র লক্ষ্য।

22/11/2024
Daily habits are more important than occasional sprints...
22/11/2024

Daily habits are more important than occasional sprints...

সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করা দশটি সাম্রাজ্য, যার ভেতর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করে।
21/11/2024

সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করা দশটি সাম্রাজ্য, যার ভেতর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করে।

“Where love rules, there is no will to power; and where power predominates, there love is lacking. The one is the shadow...
20/11/2024

“Where love rules, there is no will to power; and where power predominates, there love is lacking. The one is the shadow of the other.”— Carl Jung, “The Psychology of the Unconscious”

Tips to prevent anaemia: Choose foods rich in iron, folate, vitamin A and B12.@ World  Health Organization (WHO)
20/11/2024

Tips to prevent anaemia:

Choose foods rich in iron, folate, vitamin A and B12.

@ World Health Organization (WHO)

Depression is the most common mental health condition. It can affect anyone.Symptoms include👇🏿:🔸Poor concentration🔸Feeli...
13/11/2024

Depression is the most common mental health condition. It can affect anyone.
Symptoms include👇🏿:

🔸Poor concentration
🔸Feelings of excessive guilt or low self-worth
🔸Hopelessness about the future
🔸Suicidal thoughts
🔸Disrupted sleep
🔸Changes in appetite or weight

@ World Health Organization (WHO)

ছোটবেলায় যখনই কেউ অঙ্কে ভালো করে বা বিজ্ঞানে তার প্রতিভা দেখায়, তখনই বেশির ভাগ লোক তাকে ‘ছোট্ট আইনস্টাইন’ বলে ডাকে। আর এ...
13/11/2024

ছোটবেলায় যখনই কেউ অঙ্কে ভালো করে বা বিজ্ঞানে তার প্রতিভা দেখায়, তখনই বেশির ভাগ লোক তাকে ‘ছোট্ট আইনস্টাইন’ বলে ডাকে। আর একটু বড় হলে, বিশেষ করে হাইস্কুলে বা কলেজে অনুরূপ ক্ষেত্রে সেটি হয় ‘তরুণ আইনস্টাইন’। কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের বেশির ভাগ বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের আইনস্টাইন বানাতে চান! কেন?

জবাবটা সোজা। জার্মান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন দুনিয়া (Universe), সময় (Time) ও স্থান (Space) সম্পর্কে আমাদের হাজার বছরের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। এই সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মনে করেন, কোনো একদিন আসবে, যখন সময়ের কিংবা দুনিয়ার সম্পূর্ণ ইতিহাস লিখে ফেলা যাবে চার পৃষ্ঠায় এবং তার তিন পৃষ্ঠা জুড়ে থাকবে কেবল আইনস্টাইনের নাম!
আইনস্টাইনের সাদা চুলের যে ছবিটা আমরা দেখি, সেখানে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চোখের উপস্থিতি সহজে টের পাওয়া যায় এবং সেখান থেকে সহজে বিশ্বাস করা যায় যে, ছোট বয়সে আইনস্টাইন আসলেই ‘আইনস্টাইন’ ছিলেন। মানে, ক্লাসের তুখোড় ছেলে, বিজ্ঞান আর গণিতে ফাটাফাটি অবস্থা, ক্লাসে সবার আগে যেকোনো প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন, স্কুলে না গেলে চিন্তিত স্যাররা তার খোঁজ নেওয়ার জন্য বাড়িতে চলে আসছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ঘটনা কি আসলেই তা ছিল?

গণিতের রাজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা হলো পাই (৩.১৪...)। মার্কিন রীতিতে মার্চের ১৪ তারিখকে লিখলে সেটি পাই এর মান প্রকাশ করে বলে ১৪ মার্চকে আমরা এখন পাই দিবস বলি। সেই ১৪ মার্চ ১৮৭৯ সালে জার্মানির উলম শহরে হারম্যান আর পাউলিনের ঘরে অ্যালবার্টের জন্ম। সে সময় অ্যালবার্টের বাবা হারম্যান একটা চাকরি করতেন, কিন্তু অচিরেই চাকরি খুইয়ে তাঁদের চলে যেতে হয় মিউনিখ শহরে, যেখানে আইনস্টাইনের একমাত্র ছোট বোন মারিয়ার জন্ম। মিউনিখেই কেটেছে আইনস্টাইনের ছোটবেলা।

জন্মের সময়ই আইনস্টাইন বেশ নাদুসনুদুস। পাউলিন এ কারণে তাঁকে নিয়ে একটু সংশয়ে ছিলেন। দেখা গেল, আইনস্টাইন কথা বলতে পারেন না সহজে। শব্দের পর শব্দ সাজানোতে তাঁর প্রাণান্তকর অবস্থা হয়। এর মূল কারণ ছিল, বলার জন্য শব্দ খুব সহজে খুঁজে পেতেন না আলবার্ট। তবে তিনি মোটেই তোতলা ছিলেন না!
স্কুল শুরু করার আগে, চার বা পাঁচ বছর বয়সে আলবার্টের বাবা তাঁকে একটি কম্পাস উপহার দেন। এটি ছিল আইনস্টাইনের জন্য খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার। কারণ, যেখানে, যেভাবে রাখা হোক না কেন, কম্পাসের কাঁটা সব সময় উত্তর দিকে মুখ করে থাকে!!!

ছয় বছর বয়সে মিউনিখে একটি স্কুলে যেতে শুরু করেন আলবার্ট এবং তাঁর মায়ের ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করে ক্লাসে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকেন। একে ঠিকমতো কথা বলতে না পারা, দ্বিতীয়ত কোনো বিষয়েই ঠিকমতো তৈরি হতে না পারা—দুটোই স্কুলে ট্রেডমার্ক হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষকেরা আলবার্টকে মোটেই পছন্দ করতেন না। এমনকি কোনো কোনো স্যার তাঁকে ক্লাস থেকে বের করে দিতেন। কারণ, বলার মতো কোনো সাফল্য তাঁর ছিল না। আইনস্টাইন খালি ভাবতেন, স্কুল না থাকলে কী হয়! ঠিকমতো কথা বলতে পারতেন না বলে চুপচাপ আলবার্টের স্কুলে কোনো বন্ধু ছিল না। বাসায় ফিরে তাসের ঘর সাজানো আর মারিয়ার সঙ্গে খেলে আর গল্প করে আইনস্টাইন বড় হতে থাকেন।

নয় বছর বয়সে মূল স্কুলে আসার পরও স্কুলের পড়ালেখায় তাঁর তেমন উন্নতি হয়নি। বরং স্কুলের লেফট-রাইট আর মিলিটারি ট্রেনিং তাঁকে আরও সন্ত্রস্ত করে তোলে। তবে এর ফাঁকে তাঁর বিজ্ঞান ও বিশেষ করে, গণিতে আগ্রহ বাড়তে শুরু করে। এর কারণ ছিল দুটি। আলবার্টের কাকা দেখা হলেই আলবার্টকে একটি গাণিতিক ধাঁধা জিজ্ঞেস করতেন, আর তার উত্তর খুঁজতে আলবার্ট যথেষ্ট আনন্দ পেতেন। সমাধান ঠিক হলে আলবার্ট পেতেন কাকার কাছ থেকে গণিত আর বিজ্ঞানের বই উপহার। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, তাঁদের পারিবারিক বন্ধু, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ম্যাক্স তামুদ। ম্যাক্স প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁদের সঙ্গে ডিনার করতেন। ম্যাক্স আলবার্টের জন্য জনপ্রিয় বিজ্ঞান আর দর্শনের বই নিয়ে আসতেন। এগুলো পড়ে ব্যাপক আনন্দ পেতেন আলবার্ট। ম্যাক্সই তাঁকে একটি জ্যামিতির বই দেন, যা আলবার্টকে অনেক কিছু নতুন করে চিন্তা করতে শেখায়। ম্যাক্সের দেওয়া বিজ্ঞানের একটি বইতে একটি এক্সপেরিমেন্ট ছিল এ রকম: লেখক টেলিগ্রাফ তারের ভেতর দিয়ে যে বিদ্যুৎ যাচ্ছে, সেটার সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণ করছে! ১৪ বছরের আইনস্টাইন ভাবতে শুরু করলেন, আচ্ছা যদি আলোর রথে চড়ে বেড়ানো যায়, তাহলে আলোর রথটা কি থেমে থাকবে? নাকি চলতে থাকবে?

ম্যাক্সই আলবার্টকে উচ্চতর গণিতের বিভিন্ন বইপত্র পড়তে দেন। এর মধ্যে ক্যালকুলাসের প্রতি আলবার্টের আকর্ষণ তৈরি হয় এবং ১২ বছর বয়স থেকে ক্যালকুলাস শেখার চেষ্টা করেন। বলা বাহুল্য, এসবের সঙ্গে স্কুলের পড়ালেখার কোনো মিলই ছিল না।

এর মধ্যে কাকা আর বাবা মিলে কোম্পানি লাটে তুলে ১৮৯৪ সালে আলবার্টদের ফ্যামিলি ইতালির মিলানে চলে যায়। পড়ালেখা শেষ করার জন্য আলবার্টকে রেখে যাওয়া হয় মিউনিখে। কিন্তু একে স্কুলের পড়ালেখায় অনীহা, তার ওপর সামরিক কায়দাকানুন—এসবের কারণে আলবার্ট স্কুল ছাড়ার চেষ্টা করতে থাকেন এবং ছয় মাসের মাথায় একজন ডাক্তারকে রাজি করিয়ে ‘অসুস্থতার’ সার্টিফিকেট জোগাড় করেন। আর তা দিয়ে মেলে স্কুল থেকে ছুটি। স্কুলের পড়া শেষ না করেই বাবা-মায়ের কাছে আলবার্টের চলে যাওয়া।
স্কুল ছাঁটাই হওয়া আলবার্টকে নিয়ে তাঁর বাবা-মায়ের উদ্বিগ্নতা বিশেষ মাত্রা পায়। কারণ, তখন হাইস্কুল পাস না হলে কোথাও ভর্তি হওয়া যেত না। পরে তাঁর বাবা-মা খুঁজে বের করেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলে ভর্তি হওয়া যায়। কাজেই আইনস্টাইন সেখানে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং সাফল্যের সঙ্গে প্রায় সব বিষয়ে ফেল করেন। কিন্তু ম্যাক্সের বিজ্ঞান আর গণিতের বই এবং মেন্টরশিপের কারণে গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানে যথেষ্ট ভালো নম্বর পান। পলিটেকনিকের নিয়ম ভঙ্গ করে কর্তৃপক্ষ তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে সুযোগ দিতে রাজি হয়। শর্ত হলো, আলবার্টকে প্রথমে হাইস্কুল শেষ করতে হবে। পাশের আরাউ শহরে জস্ট উইনটেলারের বিশেষ স্কুল থেকে আইনস্টাইন ১৭ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট হয়ে জুরিখ পলিটেকনিকে ফেরত আসেন।

সেখানকার বন্ধুবান্ধব কিংবা প্রফেসরদের সঙ্গে আলবার্ট আইনস্টাইনের সখ্য, বিরোধের গল্পও বেশ চিত্তাকর্ষক। তবে সে অন্য প্রসঙ্গ।


ছোটবেলায় যখনই কেউ অঙ্কে ভালো করে বা বিজ্ঞানে তার প্রতিভা দেখায়, তখনই বেশির ভাগ লোক তাকে ‘ছোট্ট আইনস্টাইন’ বলে ডাক....

//\\//\\  মিলান কুন্ডেরার অমূল্য  সাক্ষাৎকার  //\\//\\------------------------------------------------------------------...
13/11/2024

//\\//\\ মিলান কুন্ডেরার অমূল্য সাক্ষাৎকার //\\//\\
-------------------------------------------------------------------

মিলান কুন্ডেরার সাক্ষাৎকার নেন ক্রিশ্চিয়ানা স্যালমন। এক বসায় গোটা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি। সাক্ষাৎকারে চিরকালীন অনাগ্রহী এ লেখকের সাক্ষাৎকারটি ১৯৮৩ হেমন্তে কয়েক দফা বৈঠকের ফল। প্রকাশিত হয় প্যারিস রিভিউতে। দক্ষিণ প্যারিসের সেইন নদীর বা পাশে মন্তপারনাসের এক অ্যাটিক অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা চিলেকোঠা বাসায় নিজ দপ্তর বসে তার আলাপচারিতা হয়। দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত ঘরের তাকগুলো দর্শন এবং সংগীতবিদ্যার বই দিয়ে ঠাসা। টেবিলের ওপর রয়েছে পুরোনো কালের টাইপরাইটার। বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকের লেখালেখির ঘরের আদল নয়। বরং একজন ছাত্রের পড়ার ঘর হলে বেশি মানানসই হতো। দেয়ালে ঝুলছে পাশাপাশি দুটো ছবি। একটি তার বাবা; যিনি পিয়ানোশিল্পী ছিলেন। অন্যটি চেক সংগীতকার লিওস জান্যাসেকের। চেক এই সংগীতকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন মিলান কুন্ডেরা।

ব্যতিক্রমধর্মী লেখকের সাক্ষাৎকারটিও মোটের ওপর গৎ মেনে এগোয়নি। আলাপচারিতা হয়েছে ফরাসি ভাষায়। ব্যবহার করা হয়নি টেপরেকর্ডার। তার বদলে ব্যবহার হয়েছে টাইপরাইটার, কাঁচি এবং আঠা। ধীরে ধীরে অনেক কাটছাঁট আর বাদ দেওয়া কাগজের স্তূপ জমে ওঠে। বেশ কয়েকবার আগাগোড়া খতিয়ে দেখা হয়। তারপর জন্ম নেয় এ সাক্ষাৎকারের লিখিত রূপ। এই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে—

কুন্ডেরার সে সময় সদ্য প্রকাশিত বই 'দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিং' বের হওয়া মাত্রই হু হু করে বিক্রি হচ্ছিল। হঠাৎ করে খ্যাতির চূড়াবাসী হওয়াকে কেন্দ্র করে অস্বস্তির চোরা কাঁটাতে ভুগছিলেন কুন্ডেরা। 'সাফল্য ভয়াবহ বিপর্যয়। নিজ বসতবাটিতে আগুন ধরে যাওয়ার চেয়েও খারাপ। খ্যাতির দাবাগ্নিতে জ্বলে-পুড়ে যায় আত্মার বসতগৃহ' বলে মন্তব্য করেছেন (ইংরেজ ঔপন্যাসিক, কবি ও ছোটগল্পকার) ম্যালকম লোরি। সে বক্তব্যের সাথে অবশ্যই একমত হয়তো হতেন কুন্ডেরা। নিজ উপন্যাস নিয়ে পত্র-পত্রিকাতে যেসব মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছিল, সে সম্পর্কে ক্রিশ্চিয়ানার প্রশ্নের জবাবে মিলান কুন্ডেরা বলেন, 'আমাকে নিয়ে মাত্রাছাড়া বাড়াবাড়ি হচ্ছে।' অনেক সমালোচকই লেখকের কাজকে কেন্দ্র করে কলম চালান না বরং খোদ লেখক, তার ব্যক্তিসত্তা, রাজনৈতিক বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত জীবনের বাক্স-পেটরা হাতড়ানোর প্রবণতা রয়েছে। এমন হীনপ্রবণতাই হয়তো কুন্ডেরাকে নিজ সম্পর্কে মুখ খোলা থেকে যতটা সম্ভব বিরত রেখেছে। 'লে নুভেল অবজারভেতর' বা 'দ্য নিউ অবজারভার'-এ ঔপন্যাসিক এবং গীতিকারের পার্থক্য তুলে ধরেন তিনি একটি বাক্যে। তিনি লিখেছেন, 'নিজেকে নিয়ে বাকচাতুর্য প্রকাশ করতে অনীহাই ঔপন্যাসিক এবং গীতিকারের মধ্যে তফাৎ রচনা করে।'

নিজেকে নিয়ে কথা বলার অনীহার পর সাহিত্যকর্ম এবং সাহিত্য-বিন্যাস এবং ধরন মনোযোগের কেন্দ্রে উঠে আসে। জমে ওঠে খোদ উপন্যাস নিয়ে কথকতা।

প্রশ্ন: আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন আধুনিক সাহিত্যের অন্য লেখকদের চেয়ে ভিয়েনিজ ঔপন্যাসিক রবার্ট মুসিল এবং হারমান ব্রকের কাছাকাছিই রয়েছেন। ব্রক মনে করতেন, যেমনটি আপনিও মনে করেন যে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের কাল ফুরিয়ে গেছে। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন, এর বদলে 'বহুমাত্রিক ঐতিহাসিক' উপন্যাসের যুগ এসেছে। ('বহুমাত্রিক ঐতিহাসিক' বা 'পলিহিস্ট্রিক্যাল' বলতে এমন উপন্যাসকে বোঝায়, যা একমাত্র বিষয়ধারা বা বিষয়ভিত্তিক গণ্ডি-আবদ্ধ নয়। বরং বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। এই উপন্যাস যা সময় বা স্থানের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে না। বরং মানুষের অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করে।)

মিলান কুন্ডেরা : মুসিল এবং ব্রক উপন্যাসকে ব্যাপক দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। উপন্যাসকে সর্বোচ্চ বুদ্ধিবৃত্তিক সংশ্লেষণ হিসেবে দেখেছেন তারা। বিশ্বাস করতেন, উপন্যাসের রয়েছে কৃত্রিম শক্তিমত্তা, যার জোরে একাধারে কবিতা, কল্পগাথা, দর্শন, শ্লীলতা লঙ্ঘনকারী এবং প্রবন্ধের মতো সব ধারাকে এক করতে পারে। আরও বিশ্বাস করতেন, উপন্যাসই মানুষের ভরসার শেষ ভূমি, যেখানে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বজগৎকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। উপন্যাসই কেবল বলতে পারে এমন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছেন তারা। ব্রক মনে করেন, জীবনের অর্থ অনুধাবনে, বাস্তবতার প্রকৃতি নির্ণয়ে এবং মানবিক অভিজ্ঞতাকে উপলব্ধিতে সহায়তা করে উপন্যাস। তিনি একে অস্তিত্বের প্রতি ঔপন্যাসিক জ্ঞান হিসেবে বর্ণনা করেন।

প্রশ্ন: দ্য নিউ অবজারভার সাময়িকীতে দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে ফরাসি পাঠকেরা ব্রককে নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন। একাধারে আপনি ব্রকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, আবার তাকে সমালোচনাও করছেন। প্রবন্ধটির সমাপ্তি বাক্যে আপনি বলেন, 'সব মহৎ কাজই (কারণ, তা মহৎ বলেই) আংশিক অসম্পূর্ণ।'

কুন্ডেরা: ব্রক আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন। তিনি আমাদের নতুন শিল্পবিন্যাস বা ফর্মের সম্ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন। তার কাজ অসম্পূর্ণ, কিন্তু এটি এখনো আমাদের শিল্পের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সাহায্য করেছে, যা মৌল বা মূলক, জটিল এবং আনন্দপূর্ণ। তার অসমাপ্ত কাজের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে আমাদের নতুন শিল্পবিন্যাসের প্রয়োজন রয়েছে। এই বিন্যাসের মধ্যে পড়ছে, (১) আধুনিক জীবনের জটিলতাগুলো স্পষ্টতর করে দেখানোর স্বার্থেই গুরুত্ব নেই এমন সবকিছুকে সরিয়ে ফেলা, (২) দর্শন, গল্প এবং স্বপ্নকে একত্র করার জন্য 'ঔপন্যাসিক সুরমিশ্রণ বা নভেলিস্টিক কাউন্টারপয়েন্ট' ব্যবহার করা; (৩) একটি উপন্যাসসুলভ প্রবন্ধকে ব্যবহার করা, যা আনন্দপূর্ণ এবং সবকিছু উত্তর তার ভান্ডারে আছে বলে দাবি করে না। (ঔপন্যাসিক সুরমিশ্রণ বা নভেলিস্টিক কাউন্টারপয়েন্ট বলতে অনেকগুলো গল্পধারাকে একত্রে মিশ্রণ বোঝানো হয়েছে। এ মিশ্রণের মধ্য দিয়ে একে অন্যের প্রতিধ্বনি এবং বক্তব্য প্রকাশ করবে। এ শব্দগুচ্ছ সংগীতের জগৎ থেকে ধার করা হয়েছে।)

প্রশ্ন: এই তিন বিষয়ই আপনার গোটা শৈল্পিক কর্মসূচিকে ধারণ করেছে বলে মনে হচ্ছে।

কুন্ডেরা: মনুষ্য জীবনের বিচিত্র দিকগুলো উপন্যাসে প্রকাশ করার জন্য নিজ ধারণাকে সংক্ষেপে উপস্থাপনে দক্ষ হতে হবে। নাহলে উপন্যাসের বিস্তার বাড়বে এবং মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাবে। দীর্ঘ অসম্পূর্ণ উপন্যাস যেন সুবিশাল এক দুর্গ, যা একনজরে দেখা সম্ভব নয় কিংবা এক যন্ত্রসংগীতের আসর, যা চলছে ৯ ঘণ্টা ধরে। একটি উপন্যাস কত বড় হতে পারে, তার সীমা থাকা দরকার। উপন্যাস শেষ করার পর যেন সূচনার কথা পাঠক মনে করতে পারেন। যদি তা না হয়, তবে উপন্যাসের কলেবর এতই বিশাল যে 'স্থাপত্যগত স্বচ্ছতা'কে হারিয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার 'দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং' সাত পরিচ্ছদে বিভক্ত। যদি প্রতি পরিচ্ছেদকে নিয়ে আরও সরাসরি লেখা হতো, তাহলে আপনি সাতটি আলাদা আলাদা উপন্যাস লিখতে পারতেন।

কুন্ডেরা: সাতটি স্বতন্ত্র উপন্যাস লিখলে সবচেয়ে গুরুত্বের বিষয়ই হারিয়ে যেত। আমি হয়তো 'আধুনিক বিশ্বজগতে মনুষ্য অস্তিত্বের জটিলতা'ই তুলে ধরতে পারতাম না। পরোক্ষে বলা বা সংক্ষেপে বলার শৈলী আবশ্যিক। এ শৈলী থাকলে একজন লেখক কোনো কিছুর কেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। এ শৈলীকে চেক সংগীতকার লিওস জান্যাচেকের কাজের সাথে তুলনা করা চলে। সংগীতকে এর নানা প্রয়োজনীয় উপাদান থেকে মুক্ত করেছিলেন তিনি। এটি ছিল এক বিপ্লবাত্মক ঘটনা। উপন্যাসকে অপ্রয়োজনীয় শৈলী বা লিপিকৌশল এবং শব্দ-ব্যঞ্জনামুক্ত হওয়া উচিত। এর বদলে মানুষের অভিজ্ঞানের অপরিহার্য উপাদানগুলোর দিকে মনঃসংযোগ করা উচিত।

সংগীতকাররা মৌলিক ভাবনা ছাড়াই কেবল ব্যাকরণ অনুসরণ করে সংগীত রচনা করতে সক্ষম হতেন। জান্যাচেক সংগীতকারদের এই বুদ্ধিবৃত্তিক বা মাথার 'কম্পিউটার'কে ধসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। উপন্যাসগুলোও 'প্রযুক্তি' এবং বিধিবিধান বা নিয়মের অনুগমনে জর্জর হয়ে লেখকের কাজ করে। আমার উদ্দেশ্য উপন্যাসগুলোকে ঔপন্যাসিক কৌশল এবং শব্দ-ব্যঞ্জনার স্বয়ংক্রিয়তা থেকে মুক্তি দেওয়া।

প্রশ্ন: ঔপন্যাসিক কেন উপন্যাসে নিজ দর্শন সরাসরি বা পরোক্ষে প্রকাশের অধিকার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইবেন?

কুন্ডেরা: কারণ, ঔপন্যাসিকের কোনো দর্শন নেই। অনেকেই চেখভ, কাফকা বা মুসিলের দর্শনের কথা বলে থাকেন। কিন্তু তাদের লেখালেখিতে একখণ্ড সুসঙ্গত দর্শন বের করে দেখান তো! উপন্যাস রচনা করেন যেসব দার্শনিক, তারা ছদ্ম ঔপন্যাসিক ছাড়া আর কিছুই নন। উপন্যাসের রূপ-কাঠামোর মধ্য দিয়ে নিজ চিন্তাধারা চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। 'এককভাবে যা উপন্যাস আবিষ্কার করতে পারে', তা ভলতেয়ার বা কামু কখনোই করতে পারেননি।

একমাত্র ব্যতিক্রম 'জ্যাক লে ফ্যাটালিস্ট' উপন্যাসের লেখক দিদেরো। এই উপন্যাসে নিজ দার্শনিক ধারণাগুলোকে কৌতুকপূর্ণ লিখনশৈলীর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন দিদেরো। ফল হয়েছে, এমন এক উপন্যাস যা একাধারে মজার এবং চিন্তাকে উসকে দিতে সক্ষম।

ফ্রান্সে এ উপন্যাস তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ফরাসিরা কাজের চিন্তাধারাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। তারা দার্শনিক চিন্তাধারা নিয়ে পড়তে চায় বটে কিন্তু এমন উপন্যাস পড়তে চায় না, যা কৌতুক এবং হাস্যরসে ভরপুর।

এ সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, তার লেখার যে ধারা তৈরি করেছেন, তা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনো সে কাজে সফলতা আসেনি।

অতীত-বর্তমান নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মিলান কুন্ডেরা তার বইয়ে বলেন, আমি সব সময় এ কথাগুলো পছন্দ করি, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত, শুধু অতীতই অপ্রত্যাশিত।

ভালো ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চায় বলে মানুষ সব সময় চিৎকার-চেঁচামেচি করে। এটা সত্য নয়, ভবিষ্যত হলো একটি উদাসীন শূন্যতায় ভরপুর, যার কারোর প্রতি কোনোই আগ্রহ নেই। অতীত জীবনে পরিপূর্ণ, আমাদের বিরক্ত করতে, উত্তেজিত করতে এবং অপমান করতে, ধ্বংস করতে বা নতুন করে রংচং লাগাতে প্রলুব্ধ করতে আগ্রহী। মানুষ ভবিষ্যতের হর্তাকর্তা হতে চায়, তার একমাত্র কারণই হলো অতীতকে পরিবর্তন করা।

২.
এদিকে ১৯৮৫-এর মে মাসে প্যারিসে মিলান কুন্ডেরার সাক্ষাৎকার নেন নিউইয়র্ক টাইমসের ওলেগা কারলিসলি। সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে কারলিসলি বলেন, ১৯৬০-এর দশকে লাতিন আমেরিকার জন্য গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, ১৯৭০-এর দশকে রাশিয়ার জন্য আলেকজান্ডার সোলঝিনিৎসিন যা করেছেন, ১৯৮০-এর দশকে চেকের জন্য সে কাজই সম্পন্ন করেন মিলান কুন্ডেরা। তৎকালীন পূর্ব ইউরোপকে পশ্চিমের পাঠক জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরেন তিনি। এতটাই গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে এ কাজ করেছেন, তার আবেদন বিশ্বজনীন হয়ে গেছে। তিনি সত্য এবং অন্তর্মুখী স্বাধীনতার আহ্বান জানান। এ ছাড়া সত্যের পরিচয় উন্মোচন করা সম্ভব নয়। সত্যের এমন অন্বেষণে আমাদের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তার লেখার এই ভাবধারাই তাকে সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লেখক হওয়া মানে সত্যপক্ষের প্রচারণা চালানো নয়। বরং সত্যকে তালাশ করে বের করা।

১৯৮০ সালে দশকে প্রকাশিত তার 'দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং'-এ আধুনিক কালে সংস্কৃতির মৃত্যুর বিষয়কে তুলে ধরেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্যারিসই হয়েছে মিলানের স্থায়ী ঠিকানা। নিজ ভূমি থেকে উৎখাত হলে উদ্দীপনা হারান লেখক। এমন প্রচলিত কথাকে ভুল বলে প্রমাণ করেন মিলান। বইয়ের পর বই লেখেন। এর মধ্য দিয়ে যৌবন দিনের চেকোস্লোভাকিয়ার বিশদ চিত্র, কিংবদন্তিতুল্য প্রতিরূপ এবং কামোত্তেজক ভূমি হিসেবে ফুটিয়ে তোলেন দেশটিকে।

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় তার অনাপস কঠোর মনোভাব তার সাফল্যের প্রকৃতির মধ্যেই রয়েছে। কিংবদন্তির নির্মাতারা এবং রহস্য সৃষ্টির হোতারা কখনোই নিজ প্রকৃতি উন্মোচনে সম্মত হন না।

ওলেগা কারলিসলিকেও সাক্ষাৎকার স্বভাবসুলভ দোনোমোনো করেছেন তিনি। নিজ স্বদেশভূমিতে সোভিয়েত আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন না বলে বন্ধুরা আগেভাগেই সতর্ক করেছিলেন কারলিসলিকে। এবারে হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দিয়েই মরিয়া হয়ে তখন নিজ রুশ পরিচয় তুলে ধরেন কারলিসলি। তার দাদা ছিলেন রাশিয়ার খ্যাতিমান নাট্যকার নিলনয়েড আদ্রিইয়েভ—এ পরিচয় দেওয়ায় কাজ হলো। তরুণ বয়সে তার নাটক পড়েছেন এবং ভালো লেগেছে বলে জানান মিলান কুন্ডেরা। সাক্ষাৎকারের তারিখ দেন। পরে আবার চিঠি লিখে কারলিসলিকে জানান যে নিজ সম্পর্কে কথা বলতে তার তীব্র অনীহা রয়েছে। এটি হয়তো রোগের পর্যায়েই পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে লেখক অসহায়। এ প্রসঙ্গ দিয়ে যদি সাহিত্য নিয়ে আলাপচারিতা করতে চান, তবে সাক্ষাৎকার দিতে দ্বিধা নেই।

প্রশ্ন: ৪৬ বছর থেকে আপনি ফ্রান্সে বসবাস করছেন। নিজেকে অভিবাসী, ফরাসি, চেক বা সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রহীন ইউরোপীয় মনে হয়?

কুন্ডেরা: ১৯৩০-এর দশকে জার্মান বুদ্ধিজীবীরা যখন স্বদেশভূমি ছেড়ে আমেরিকার পথে পাড়ি জমান, তারা নিশ্চিত ছিলেন একদিন ফিরে আসবেন নিজ দেশের মাটিতে। বিদেশে অবস্থানের সময়টা নেহাত সাময়িক বলেই মনে করতেন তারা। অন্যদিকে আমার স্বদেশে ফেরার কোনো আশাই নেই। চূড়ান্তভাবে ফ্রান্সেই থাকতে হবে। কাজেই আমি আর অভিবাসী নই। ফ্রান্স এখন আমার সত্যিকার স্বদেশভূমি।

এ ছাড়া নিজ ভূমি থেকে উৎখাত হয়েছি—সে রকম কোনো বোধও নেই। হাজার বছর ধরে চেকোস্লোভাকিয়া পশ্চিমের অংশ ছিল। এখন এটি পূর্বের সাম্রাজ্যের অংশ। প্যারিসের বদলে প্রাগেই আমি অনেক বেশি বাস্তুচ্যুত বা বাস্তুহারা বলে অনুভব করেছি।

প্রশ্ন: কিন্তু এখনো আপনি চেক ভাষায়ই লেখেন?

কুন্ডেরা: রচনা বা নিবন্ধ ফরাসি ভাষায় আর উপন্যাস চেক ভাষায় লিখি। কারণ, আমার জীবন অভিজ্ঞতা এবং আমার কল্পনার শেকড় গেঁথে আছে প্রাগের বোহেমিয়াতে।

প্রশ্ন: আপনার অনেক আগেই 'মিলোস ফোরম্যান দ্য ফায়ারম্যানস বল'-এর মতো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চেকোস্লোভাকিয়াকে পশ্চিমের ব্যাপক মানুষের গোচরে নিয়ে এসেছেন।

কুন্ডেরা: প্রাগের চেতনা বলতে আমি যা বোঝাই, মিলোস এবং অন্য চেক চলচ্চিত্রকার আইভান পাসের এবং জানা নেমি, তাকে সত্যিই পুনরুজ্জীবন করেছেন। মিলোস যখন প্যারিসে পা রাখলেন, সবাই বেশ হতবাক বনে গেলেন। এমন খ্যাতনামা এক চলচ্চিত্রকারের কোনো নাক-উঁচু ভাবই নেই, তা কীভাবে হতে পারে? প্যারিসের (শত বছরের প্রাচীন বিপণিকেন্দ্র) গ্যালারি লাফায়েতের একজন সেলসগার্লও সেখানে স্বাভাবিক আচরণ কাকে বলে জানেন না। ফোরম্যানের সরল আচরণ একধরনের উসকানি হয়ে উঠল।

প্রশ্ন: প্রাগের চেতনা বলতে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কুন্ডেরা: কাফকার 'দ্য ক্যাসেল' এবং জারোস্লাভ হাসকের 'দ্য গুড সোলজার শোইক' সেই চেতনায় পরিপূর্ণ। বাস্তবের এক অসাধারণ অনুভূতি। সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখা এক অসাধারণ বাস্তবতা। এই গল্পগুলো ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবশেন করে, ইতিহাসের আভাস দেয়, যা নিচ থেকে সাদামাটা মানুষের চোখ দিয়ে দেখা।

এসব কাজগুলো যথার্থই সহজ অথচ গভীর শৈলীর সাথে চিন্তাধারাকেও উসকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। জীবনের বিমূর্ত বা অযৌক্তিক পর্বগুলো লেখার উজ্জ্বল প্রতিভা রয়েছে লেখকদের। পাকা হাতে হতাশাবাদের অসীম বিষয়কে রসিকতার সঙ্গে মিশেল দিয়ে স্বতন্ত্র এক পরিবেশ তৈরি করেন। এ শৈলী তাদের গোটা লেখাজুড়েই রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চেক অভিবাসী ভিসা চাইছেন। কর্মকর্তা জানতে চাইলেন, কোথায় যেতে চান? জবাবে মানুষটি বলল, কোথায় এটা কোনো ব্যাপারই না। কর্মকর্তা তাকে একটা ভূগোলক দিয়ে বলল, পছন্দ করে জানাও।

মানুষটি অনেকক্ষণ ধরে গোলকটি আস্তে আস্তে ঘোরালেন। তারপর বললেন, আপনাদের কাছে আর কোনো ভূগোলক নেই?

প্রশ্ন: প্রাগে আপনার শেকড় পোঁতা আছে। এ ছাড়া সাহিত্যবিষয়ক আর কোন ভালোবাসা আপনার লেখার জগৎকে তৈরি করেছে?

কুন্ডেরা: প্রথমত, ফরাসি ঔপন্যাসিক রাবেলাইস ও দিদেরো। আমার মনোজগতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা, ফরাসি সাহিত্যের রাজা রাবেলাইস। এবং দিদেরোর 'জ্যাক লে ফাটালিস্ট' রাবেলাইসের চেতনাকে ১৮ শতকে নিয়ে যান। দিদেরো একজন দার্শনিক—এ সত্য ভোলা যাবে না। এই উপন্যাসটিকে দার্শনিক-আত্মিক আলোচনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এটা ব্যঙ্গাত্মক নাটক। সর্বকালের মুক্ত উপন্যাস। স্বাধীনতা এখানে উপন্যাসে রূপ নিয়েছে। আমি সম্প্রতি একে নাটক হিসেবে রূপান্তর করেছি। 'জাঁক অ্যান্ড হিজ মাস্টার' হিসেবে ম্যাসাচুসেটের কেমব্রিজে নাটকটি মঞ্চস্থ করেন সুসান সনটাগ।

প্রশ্ন: আপনার চেতনার অন্যান্য শেকড় কী?

কুন্ডেরা: আমাদের শতাব্দীর মধ্য ইউরোপীয় উপন্যাস। কাফকা, রবার্ট মুসিল, হারমান ব্রক, উইটোল্ড গোমব্রোভিচ। এই ঔপন্যাসিকেরা আন্দ্রে মারলে যাকে 'লিরিক ইলিউশন' বলে অভিহিত করেছেন, তার প্রতি আশ্চর্যজনকভাবে অবিশ্বাসী। পশ্চিমের ক্রমাবনতি নিয়ে বেদনা প্রকাশ করেছেন। আবেগের ঘন রাগে সে বেদনা প্রকাশ করা হয়নি বরং উপহাসের মধ্য দিয়ে তার প্রকাশ ঘটেছে। সাহিত্যের জগতে আমার অমূল্য উৎসধারা হয়েছে আধুনিক চেক কবিতা।

আধুনিক চেক কবিতার বিশিষ্ট এক ব্যক্তিত্ব ইয়ারোশ্লাভ সাইফার্ত। আমার ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা। তার কবিতা আমার সৃজনশীলতা বিকাশে অনস্বীকার্য প্রভাব ফেলেছে। নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি-প্রসূত নানা ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু চেক কবিতার জগৎকে সাইফার্ত দারুণভাবে প্রভাবিত করেছেন। মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে তাকে স্বীকৃতি দেওয়ায় আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্প্রদায় তার কাজকে গভীর মর্যাদা দিয়েছে।

অবশ্য পুরস্কারটি দিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বলা হয়, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত কবির সাথে হাসপাতালে দেখা করে এ পুরস্কার পাওয়ার খবর দেন। কবি সাইফাটত রাষ্ট্রদূতের দিকে অপলক অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেন, এ বিপুল টাকা দিয়ে এখন আমি কী করব?

প্রশ্ন: রাশিয়ার সাহিত্য নিয়ে এখন আপনি কী ভাবছেন? এখনো দেশটির সাহিত্যকে আপনি অপছন্দ করেন? ১৯৬৮-এর রাজনৈতিক ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে দেশটির সাহিত্য আপনার অপছন্দের হয়ে ওঠে।

কুন্ডেরা: আমি তলস্তয়কে খুব পছন্দ করি। তিনি দস্তয়েভস্কির চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক। তলস্তয়ই প্রথম, সম্ভবত, মানুষের আচরণে অযৌক্তিক ভূমিকা উপলব্ধি করেন। মানুষের মূর্খতাবোধ দিয়ে পরিচালিত ভূমিকা, কিন্তু বেশির ভাগই একটি অবচেতন বোধ দিয়ে পরিচালিত মানুষের ক্রিয়াকলাপ; যা একাধারে দায়িত্বহীন, অনিয়ন্ত্রিত এবং নিয়ন্ত্রণ অযোগ্য।

প্রশ্ন: 'বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং'-এ বাবাকে নিয়ে ভালোবাসার ভাষায় কথা বলেছেন।

কুন্ডেরা: আমার বাবা একজন পিয়ানোবাদক ছিলেন। আধুনিক সংগীতের প্রতি তার আবেগ ছিল—স্ট্রাভিনস্কি, বার্টোক, শোয়েনবার্গ, জান্যাসেকের জন্য। শিল্পী হিসেবে লিওস জ্যানাসেকের স্বীকৃতির জন্য তিনি খুব কঠিন সংগ্রাম করেছেন। জ্যানসেক আকর্ষণীয় আধুনিক সুরকার। অতুলনীয়। তাকে শ্রেণিবদ্ধ করা অসম্ভব। দস্তয়েভস্কির উপন্যাস অবলম্বনে শ্রমশিবির কঠোর পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর অপেরা 'ফ্রম দ্য হাউস অফ দ্য ডেড', কাফকার 'দ্য ট্রায়াল' বা পিকাসোর 'গুয়ের্নিকার' মতোই আমাদের শতাব্দীর মহান এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কাজ।

এই কঠিন সংগীত আমার বাবা কনসার্ট হলগুলোতে পরিবেশন করেছেন। হলগুলো সে সময় প্রায় খালিই থাকত। স্ট্র্যাভিনস্কির কথা শুনতে অস্বীকার করেছেন এবং চাইকোভস্কি বা মোৎসার্টের প্রশংসায় মেতে উঠেছে, একটি খুদে বালক হিসেবে আমি সে মানুষদের ঘৃণাই করতাম। আধুনিক শিল্পের প্রতি আমার অনুরাগকে ধরে রেখেছি। এটাই আমার বাবার প্রতি আমার বিশ্বস্ততা। কিন্তু আমি তার সংগীতশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করি। সংগীত পছন্দ করি, সংগীতশিল্পীদের পছন্দ করতাম না আমি। আমি সংগীতশিল্পীদের মাঝে জীবন কাটানোর কথা ভাবতে গেলে বাক্যহারা স্তব্ধ হয়ে যাই।

আমার স্ত্রী এবং আমি যখন চেকোস্লোভাকিয়া ছেড়ে চলে যাই, তখন আমরা সাথে খুব কম বইই নিতে পেরেছি। এগুলোর মধ্যে জন আপডাইকের 'দ্য সেন্টার' ছিল একটি বই, যা আমার মনের গহন গভীরের কিছু স্পর্শ করেছিল—অপমানিত, পরাজিত পিতার জন্য এক বেদনাদায়ক ভালবাসা।

প্রশ্ন: ফ্রান্সে নির্বাচনের আগেভাগে সব রাজনৈতিক দল তাদের পোস্টার লাগায়। সবখানে একই স্লোগানই দেখা যায়। তা হলো সুন্দর ভবিষ্যতের স্লোগান। সব পোস্টারেই হাসিখুশি, খেলায় মেতে ওঠা শিশুদের ছবিও সাথে দেওয়া হয়।

কুন্ডেরা: দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হলো—আমাদের, মানুষের ভবিষ্যৎ মানে শৈশব নয়, বুড়ো বয়স। কোনো সমাজের সত্যিকার মানবিক রূপটি প্রকাশ পায় বুড়োদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে। কিন্তু বুড়ো বয়সে আমরা যে একমাত্র ভবিষ্যতের মুখোমুখি হই, তা কোনো দিন প্রচারণার কোনো পোস্টারে দেখানো হবে না। ডান বা বাম কারো পোস্টারে তার দেখা মিলবে না।

প্রশ্ন: তাহলে ডান ও বামের মধ্যে তেমন কোনো ঝগড়াঝাঁটি, বিবাদ-বিসংবাদের অস্তিত্ব নেই?

কুন্ডেরা: একনায়কতন্ত্রের সাম্রাজ্যই আমাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। খোমেনি, মাও, স্ট্যালিন—তারা ডান না বাম? একনায়কতন্ত্র ডানও নয়, বামও নয়। এই সাম্রাজ্যের মধ্যে উভয়ই বিলীন হয়ে যাবে।

আমি কোনো দিনই ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু স্ট্যালিনের সন্ত্রাসের সময় চেক ক্যাথলিকদের নির্যাতিত হতে দেখে তাদের প্রতি গভীরতম সংহতি অনুভব করি। তাদের সাথে আমার পার্থক্য সৃষ্টি করেছে ঈশ্বরে বিশ্বাস। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা কিসের ভিত্তিতে সংহতি প্রকাশ করছি। প্রাগে তারা সমাজন্ত্রবাদী এবং পুরোহিতদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের ভ্রাতৃত্বের জন্ম হয়।

৩.
কুন্ডেরা সেই সব বিরল সৌভাগ্যবান সাহিত্যিক ব্যক্তিদের অন্যতম, যারা মৃত্যুর আগেই নিজ দৃষ্টিভঙ্গির ঐতিহাসিক বিজয় প্রত্যক্ষ করেছেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যক্তিকে রক্ষার ব্রত নিয়ে কলম ধরেছিলেন। বিষয়টি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, বিহ্বল হয়ে তাই প্রত্যক্ষ করে গেছেন তিনি। সোভিয়েত গোষ্ঠীর ভিন্নমতাবলম্বী দ্বিতীয় প্রজন্মের লেখকদের অন্যতম কুন্ডেরা। এবং এ শ্রেণির লেখকদের মধ্যে বহুল পঠিতও। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার তার ললাটে জোটেনি। এটা পুরস্কারটির জন্য কলঙ্কের একটি রাজতিলক আঁকা হয়ে থাকল। এমন কথাই বলেন আনহাড ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'মিলান কুন্ডেরাস লাস্ট জোক' শিরোনামের নিবন্ধে ডেভিড স্যামুয়েল। কুন্ডেরার পরলোকগমনের পরে লেখা হয় এ নিবন্ধ। তিনি আরও বলেন, কুন্ডেরার লেখা কেন পাঠককে টানবে, তারও পরিচয়-চিহ্ন এখানেই ফুটে উঠেছে। ভূরাজনৈতিক এবং সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রেই নোবেল পুরস্কারের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। খ্যাতিমান লেখক মিলান কুন্ডেরাকে নোবেল কমিটি উপেক্ষা করার কারণ সহজেই বোঝা যায়। প্রথমত রাজনীতিতে কোনো কালেই গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েননি কুন্ডেরা। বরং ব্যক্তিগত আবেগ, আকাক্সক্ষা এবং শখ, ইচ্ছাকে অনুসরণের স্বাধীনতা রক্ষার দৃঢ় বিশ্বাসবোধ থেকে চালিত হয়েছে তার লেখা। রাষ্ট্রের সেবায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে নিয়ন্ত্রণ ও ব্যক্তিজীবনের ওপর রাষ্ট্রের উপনিবেশ স্থাপনের তৎপরতায় নিয়োজিত আমলাতান্ত্রিক উদ্যোক্তাদের বিরোধিতায় তিনি তীব্রতা প্রকাশ করেছেন। কুন্ডেরার দৃষ্টিভঙ্গিকে ডান ও বাম উভয় পক্ষের সমালোচকেরা তিরবিদ্ধ করেছেন। তাদের চোখে কুন্ডেরার অবস্থানকে প্রায় অনৈতিক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। আরও বিশ্রী হলো, তাকে আগাগোড়া বুর্জোয়ার কাতারে ফেলে দেওয়া। বামদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন চে গুয়েভারার মতো ব্যক্তিত্ব। ডানেরা ঝুঁকেছেন সোলঝিনিৎসি পাঠে। কুন্ডেরা ছিলেন অবিচল। তিনি একা থাকার মৌলিক মানবাধিকারে জোর দিয়েছিলেন। কুন্ডেরা কখনোই নিজেকে রাজনীতির মানুষ হিসেবে দেখেননি। কিংবা দেখেননি নীতিবাদী, উদার, রক্ষণশীল হিসেবে। নিজ লেখা সাড়া জাগানো চিত্রনাট্য হয়ে উঠবে, সে কামনার ছিটেফোঁটার স্পর্শও তার ছিল না।

তিনি ছিলেন নিপাট ঔপন্যাসিক। নন্দনতত্ত্বের সর্বোচ্চ স্বরূপ হিসেবে তিনি দেখেছেন উপন্যাসকে। তার কাছে উপন্যাস ছিল সৌন্দর্য এবং শিল্প প্রকাশের সবচেয়ে বড় উপায়। তিনি একে শক্তিশালী সৃষ্টি হিসেবে দেখেছেন। এই সৃষ্টি, ব্যক্তির অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাভাবনাকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়। কুন্ডেরার ভাবনায়, উপন্যাসের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি, প্রজ্ঞা এবং অবস্থান রয়েছে, যা রাজনীতি, ধর্ম, মতাদর্শ, নৈতিক মতবাদ বা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে।

উপন্যাসে তার বিশ্বাসকে কেউ কেউ নেহাত সাবেকি কালের বলেও মনে করতে পারেন।

কুন্ডেরার যুগান্তকারী উপন্যাস 'দ্য জোক' চেক ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে। উপন্যাসে প্রাগের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লুডভিকের গল্প বলা হয়েছে। প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত এক সহপাঠী লুডভিককে উপেক্ষা করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লুডভিক একটি মশকরা করে। এতে তার গোটা জীবনের মোড় ঘুরে যায়। লুডভিক মারাত্মক পরিণতির মুখে এসে দাঁড়ায়। তার জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।

ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এল লুডভিককে মশকরা করার দায়ে তলব করা হয় আদর্শবাদে উজ্জীবিত কিন্তু রসিকতা জ্ঞানহীন নেতাদের সামনে। লুডভিক যে মশকরা করেছিল, তাকে আপত্তিকর হিসেবে গণ্য করা হয়। সহপাঠীদের কেউ এ সময়ে তার পক্ষে মুখ খোলার মতো সৎ সাহস দেখায় না। পরিণামে লুডভিককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। সত্যিই এক দুঃখজনক পরিস্থিতি, অসময়ে একটি কৌতুক নিয়ে আসে কী গুরুতর পরিণতি!

কাহিনিকে পরিচিত মনে হচ্ছে? হতেই পারে। এমন ঘটনাবলি অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছি। কমিউনিস্ট শাসনের আওতায় দশকের পর দশক ধরে এমন অনেক গল্পের জন্ম হয়েছে। কিন্তু কুন্ডেরা লুডভিকের পরের পর্বও তুলে ধরেন।

সফল জীবনের পথ থেকে দুঃখজনকভাবে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয় লুডভিককে। পরবর্তী বছরের পর বছর ধরে তার ক্ষোভ জমতে থাকে। বিশেষ করে জেমেনেক নামের এক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার উপচে পড়া ক্ষোভ জমে। লুডভিককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার জন্য খুবই সক্রিয় ছিল সে। প্রাগে ফিরে এসে জেমেনেকের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় জড়ায় লুডভিক। কিন্তু এতে কোনো আনন্দ পায় না লুডভিক। বরং জেমেনিকের সাথে বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে এ ঘটনার ইতি টানতে হয়। এর কারণটি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা মনেই করতে পারে না জেমেনিক। লুডভিক তখন বুঝতে পারে, অতীতের তিক্ততা বয়ে বেড়ানোয় কোনো মানে নেই। বোধ জন্মে, অতীতে যা ঘটেছে, তাকে আর কখনোই ঠিক করা যাবে না। অপরাধী এবং তার অপরাধে শিকার উভয়ই একে অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়াটা গভীরভাবে মানবিক। কিন্তু নায়কের জয় এবং খলনায়কের পরাজয়ের ভাবধারায় পুষ্ট মানসিকতার মানুষের কাছে এ কাহিনি তৃপ্তিদায়ক হয়নি। অথচ চেকোস্লোভাকিয়ার তৎকালীন মানুষের জীবনে অন্যায় এবং পরাজয় অতি স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কুন্ডেরা যে পরিসমাপ্তি টেনেছেন, তা সে সময়ের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। বেঁচে থাকার অংশ হিসেবে মানুষকে তখন কঠোর বাস্তবতাকে মেনে নিতে হতো।

স্মৃতি এবং ভুলে যাওয়ার ধারণায় আজীবন বিমোহিত থেকেছেন কুন্ডেরা। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে 'দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং' বইটি প্রকাশিত হয়। ভিন্নমতের সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠ বই হয়ে ওঠে এটি। এতে সাতটি পরস্পরের সম্পর্কযুক্ত গল্প দিয়ে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগ করে ভুলে যাওয়ার প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়। এই আখ্যানগুলো ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক ঘটনাগুলো ব্যক্তিগত ভুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত। এসবই জাদুবাস্তবতার ইঙ্গিতসহ আধুনিকতাবাদী শৈলীতে পরিবেশিত হয়েছে।

অন্য পুস্তক থেকে এ বইটিকে আলাদা করে তুলেছে আবেগপূর্ণ এবং স্পষ্টভাবে অ-সোভিয়েত যৌন দৃশ্যাবলির সাথে গুরুতর বিশ্ব সাহিত্যের বৈশিষ্ট্যযুক্ত উপাদানগুলোর নিখুঁত সংমিশ্রণ। ব্যক্তিগত আকাক্ষার এই সাহসী চিত্রায়ণ ডান এবং বাম উভয় রক্ষণশীল ব্যক্তিদের হতবাক করেছিল।

কুন্ডেরাকে অনুপ্রাণিত করেছিল সে শিল্পভাবনা, তা বাস্তব নয়। ঠিক যেমন মনে রাখা বা ভুলে যাওয়ার গল্পগুলো কূটকাহিনিমালা হয়ে দেখা দিতে পারে। কুন্ডেরার বইগুলো নতুন এক বিশ্ব, আমাদের চলতে সহায়তা করবে। নতুন বিশ্বে পশ্চিমারা পূর্বের বিধিনিষেধাবলিকে আঁকড়ে ধরছে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এক রসিকতা হয়ে উঠেছে এটি। মজার কিন্তু বিদ্রুপের বলেই একে মনে করতেন কুন্ডেরা।

(মিলান কুন্ডেরার সাক্ষাৎকার নেন ক্রিশ্চিয়ানা স্যালমন। এক বসায় গোটা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি। সাক্ষাৎকারে চিরকালী....

বাংলা সা‌হি‌ত্যের পঞ্চপাণ্ডব কারা? কেন তা‌ঁদের এ নামে আখ্যা‌য়িত করা হয়?==========================পঞ্চপাণ্ডব ধারণা‌টি এ‌স...
13/11/2024

বাংলা সা‌হি‌ত্যের পঞ্চপাণ্ডব কারা? কেন তা‌ঁদের এ নামে আখ্যা‌য়িত করা হয়?
==========================

পঞ্চপাণ্ডব ধারণা‌টি এ‌সে‌ছে মহাভার‌ত থে‌কে। মহাভারত-এ বর্ণিত পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র হ‌লেন- যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকূল, সহদেব। এ‌দের ম‌ধ্যে যুধিষ্ঠির, ভীম ও অর্জুন কুন্তীর সন্তান এবং নকূল ও সহদেব মাদ্রীর সন্তান। এদের যথাক্রমে ধর্ম, পবন, ইন্দ্র ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের সন্তান বলা হয়ে থাকে।
ক‌থিত আ‌ছে যে, এই পাঁচ পুত্রই বিশেষ শৌর্যশালী এবং দেববলে উৎপন্ন, কেউই পাণ্ডুর ঔরসজাত নয়।

বাংলা সা‌হি‌ত্যের পঞ্চপাণ্ডব:

বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব না‌মে খ্যাত হ‌লেন ত্রিশের দশকের বিশিষ্ট ৫ জন কবি। রবীন্দ্রপ্রভাবের বাইরে গিয়ে বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতা সৃষ্টি করেছিলেন তাঁরা। সা‌হি‌ত্যে নি‌জে‌দের সাতন্ত্র্য বজায় রে‌খে আধু‌নিক বাংলা ক‌বিতায় অসামান্য অবদান রাখায় তাদের ৫ জনকে বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়। তাঁরা হ‌লেন-
১.অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৭)।
২.বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪)।
৩.জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)।
৫.সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০)।

বাংলা সা‌হি‌ত্যের পঞ্চপাণ্ডব সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু তথ্য :

১.অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৭)

অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৭) একজন কবি, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। অমিয় চক্রবর্তী ১০ এপ্রিল, ১৯০১ শ্রীরামপুর, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ-এ জন্মগ্রহণ করেন। অমিয় চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫; তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই কবিতাবলী (১৯২৪-২৫)। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: উপহার (১৯২৭), খসড়া (১৯৩৮), এক মুঠো (১৯৩৯), মাটির দেয়াল (১৯৪২), অভিজ্ঞান বসন্ত (১৯৪৩), পারাপার (১৯৫৩), পালাবদল (১৯৫৫), ঘরে ফেরার দিন (১৯৬১), হারানো অর্কিড (১৯৬৬), পুষ্পিত ইমেজ (১৯৬৭), অমরাবতী (১৯৭২), অনিঃশেষ (১৯৭৬), নতুন কবিতা (১৯৮০), চলো যাই (১৯৬২), সাম্প্রতিক (১৯৬৩)। তাছাড়া ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর ৯টি বই রয়েছে।

২.বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪)

বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪) একজন সাহিত্যিক, সমালোচক ও সম্পাদক। বুদ্ধদেব বসু ১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের মালখানগরে। পদ্যগদ্য মিলিয়ে বুদ্ধদেব বসুর গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: কবিতা- বন্দীর বন্দনা (১৯৩০), কঙ্কাবতী (১৯৩৭), দ্রৌপদীর শাড়ী (১৯৪৮), শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর (১৯৫৫), যে আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮); উপন্যাস লাল মেঘ (১৯৩৪), রাতভর বৃষ্টি (১৯৬৭), পাতাল থেকে আলাপ (১৯৬৭), গোলাপ কেন কালো (১৯৬৮); গল্পগ্রন্থ: অভিনয়, অভিনয় নয় (১৯৩০), রেখাচিত্র (১৯৩১), ভাসো আমার ভেলা (১৯৬৩); নাটক: তপস্বী ও তরঙ্গিণী (১৯৬৬), কলকাতার ইলেকট্রা, সত্যসন্ধ (১৯৬৮); প্রবন্ধ: কালের পুতুল (১৯৪৬), সাহিত্যচর্চা (১৯৫৪), রবীন্দ্রনাথ: কথাসাহিত্য (১৯৫৫), স্বদেশ ও সংস্কৃতি (১৯৫৭); ভ্রমণ ও স্মৃতিকথা: হঠাৎ আলোর ঝলকানি (১৯৩৫), সব-পেয়েছির দেশে (১৯৪১), জাপানি জার্নাল (১৯৬২), দেশান্তর (১৯৬৬), আমার ছেলেবেলা (১৯৭৩), আমার যৌবন (১৯৭৬); অনুবাদ: কালিদাসের মেঘদূত (১৯৫৭), শার্ল বোদলেয়ার: তাঁর কবিতা (১৯৬০), রাইনের মারিয়া রিলকের কবিতা (১৯৭০) ইত্যাদি।

৩.জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) একজন কবি ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনানন্দ দাশের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রামে। জীবনানন্দের কাব্যচর্চার শুরু অল্পবয়স থেকেই। স্কুলে ছাত্রাবস্থায় তাঁর প্রথম কবিতা ‘বর্ষ-আবাহন’ ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় (বৈশাখ ১৩২৬/এপ্রিল ১৯১৯) প্রকাশিত হয়। মূলত কবি হলেও তিনি অসংখ্য ছোটগল্প, কয়েকটি উপন্যাস ও প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলি হচ্ছে ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), রূপসী বাংলা (রচনাকাল ১৯৩৪, প্রকাশকাল ১৯৫৭), বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)। এছাড়াও বহু অগ্রন্থিত কবিতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

৪.বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২)

বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২) একজন কবি, প্রাবন্ধিক, চিত্রসমালোচক ও শিল্পানুরাগী। ১৯০৯ সালের ১৮ জুলাই কলকাতার পটলডাঙ্গায় বিষ্ণু দের জন্ম। গদ্য ও পদ্যে বিষ্ণু দের বহু সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ: উর্বশী ও আর্টেমিস (১৯৩৩), চোরাবালি (১৯৩৭), সাত ভাই চম্পা (১৯৪৪), রুচি ও প্রগতি (১৯৪৬), সাহিত্যের ভবিষ্যৎ (১৯৫২), নাম রেখেছি কোমল গান্ধার (১৯৫৩), তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ (১৯৫৮), স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত (১৯৬৩), রবীন্দ্রনাথ ও শিল্পসাহিত্যে আধুনিকতার সমস্যা (১৯৬৬), মাইকেল রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য জিজ্ঞাসা (১৯৬৭), In the Sun and the Rain (১৯৭২), উত্তরে থাকো মৌন (১৯৭৭), সেকাল থেকে একাল (১৯৮০), আমার হূদয়ে বাঁচো (১৯৮১) ইত্যাদি। In the Sun and the Rain নামে রচনা সংকলনের প্রাপ্য রয়্যালটি তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে দান করেছিলেন। ছড়ানো এই জীবন নামে বিষ্ণু দের একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ আছে। এছাড়াও রয়েছে ১০টি কাব্য সংকলন, ৭টি অনুবাদগ্রন্থ এবং ২টি সম্পাদিত গ্রন্থ। তাঁর একটি সম্পাদিত গ্রন্থ হচ্ছে এ কালের কবিতা।

৫.সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০)

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও পত্রিকা সম্পাদক। ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার হাতীবাগানে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন।
আধুনিক মনন ও বৈশ্বিক চেতনার কারণে তিনি বাংলা কাব্যে স্বতন্ত্র স্থান লাভ করেন। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি: কাব্য তন্বী (১৯৩০), অর্কেস্ট্রা (১৯৩৫), ক্রন্দসী (১৯৩৭), উত্তরফাল্গুনী (১৯৪০), সংবর্ত (১৯৫০), দশমী (১৯৫৬); গদ্যগ্রন্থ স্বগত (১৯৩৮), কুলায় ও কালপুরুষ (১৯৫৭)। এছাড়া প্রতিধ্বনি (১৯৫৪) নামে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের একটি অনুবাদগ্রন্থও আছে।
সুধীন্দ্রনাথ ছিলেন ত্রিশের দশকের রবীন্দ্রকাব্যধারার বিরোধী খ্যাতিমান কবিদের অন্যতম। ফরাসি কবি মালার্মের প্রতীকী কাব্যাদর্শ তিনি অনুসরণ করেন। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, মননশীলতা ও নাগরিক বৈদগ্ধ্য তাঁর কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলা কবিতায় তিনি দর্শনচিন্তার নান্দনিক প্রকাশ ঘটান। তিনি বাংলা গদ্যের আধুনিক রূপেরও প্রবর্তক। ১৯৬০ সালের ২৫ জুন কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when জ্ঞানপিপাসুদের জন্য ক্ষুদ্র প্রয়াস posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share

Category