27/11/2024
প্রশ্নঃ- জামাআতুত তাহরীরের বক্তব্য অনুসারে এই যুগে মুসলিমদের উপরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব কর্ম হলো খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এটা কি সঠিক নাকি তাওহীদ ও অন্যান্য ইলমের প্রতি গুরুত্বারোপ করার বিষয়টি সহীহ?
জবাব: এটা রাফেযী পন্থী শীআদের একটি ভ্রান্ত প্রবণতা। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যাহ স্বীয় মূল্যবান গ্রন্থ মিনহাজুস সুন্নাতে এই মতকে খণ্ডন করেছেন। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যাহ এইভাবে এটাকে খণ্ডন করেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম যেই বিষয়টিকে ওয়াজিব করেছেন তা হলো তাওহীদ। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয বিন জাবালকে বলেছেন, তুমি অচিরেই আহলুল কিতাবের একটি সম্প্রদায়ের নিকট গমন করবে। তাদের প্রতি যেনো তোমার প্রথম দাওয়াত হয়- 'আল্লাহ ছাড়া আর কোনো হক ইলাহ নেই' এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা।
মহান রব স্বীয় পবিত্র কিতাবে বলেছেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ * مَا أُرِيدُ مِنْهُم مِّن رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَن يُطْعِمُونِ * إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ.
"আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য। আমি তাদের নিকট কোনো রিযক কামনা করি না এবং তারা আমাকে আহার করাবে - এটাও তাদের কাছে কামনা করি না। নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলাই একমাত্র - রিযক্বদাতা মহাশক্তিধর চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী" [সূরা আয যারিআত, আয়াত ৫৬- ৫৮]
সুতরাং প্রথম ওয়াজিব হলো তাওহীদ। আর ইসলামী খিলাফত কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে আমাদের মাঝে ধর্মনিরপেক্ষবাদী, বাথ মতবাদী, নুসায়রীয়, সুফী, শীআপন্থী, মডার্নিজম এবং অধিকাংশ দল এমন মূর্খ, যদি তাদেরকে নেশা সেবন করা থেকে বাঁধা দেওয়া হয় তাহলে তারা ইমামকে জবেহ করার চেষ্টা করবে। তারা বলবে, তুমি একজন কঠোর লোক। আমরা তোমার নেতৃত্বের কারণে মদ থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
সুতরাং মুসলিমগণ এটার উপযুক্ত নন। মুসলিমদের উপরে ওয়াজিব হলো তাওহীদের মাধ্যমে কর্ম শুরু করা। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম অবস্থায় মানুষদেরকে বলতেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، قُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ تُفْلِحُوا
হে লোকসকল! তোমরা বলো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তাহলে তোমরা সফল হয়ে যাবে।
আরো বলতেন,
مَنْ يُؤْوِينِي؟ مَنْ يَنْصُرُنِي حَتَّى أبلغ رسالة ربي
'হে লোকসকল! তোমাদের মাঝে এমন কে আছে, যে আমাকে আশ্রয় দিতে পারবে? আমাকে সাহায্য করতে পারবে? যাতে করে আমি আমার রবের বার্তা পৌঁছে দিতে পারি'। আর যখন তুমি নবীগণের সীরাত পাঠ করবে, তখন দেখতে পাবে, তারা সর্বপ্রথম যে কর্ম দ্বারা তাদের কার্যক্রম শুরু করতেন, তা হলো তাওহীদের আহ্বান। যেটা সূরা আল আরাফে ও অন্যান্য সূরায় বর্ণিত হয়েছে: তারা তাওহীদের পথে দাওয়াতের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করতেন।
সুতরাং আমি বলি, এটা শীআদের রাফেযী সম্প্রদায়ের মতবাদ, যা পরিহার করা ওয়াজিব। আমি ভাইদেরকে এই নসীহত করছি যে, তারা যেনো আকীদার দাওয়াতের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এরপরে যখন মুসলিমদের সক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, তখন তারা জি-হাদ কায়েম করবে। খিলাফতের দাওয়াতের ক্ষেত্রে তারা জিহাদ ও খিলাফতের দাওয়াত কায়েম করতে পারবে না। হে মিসকীন! তুমি তো ব্রিটেন অথবা আমেরিকার সমর্থনে দাঁড়িয়ে আছ। যারা তোমাকে এক মুহূর্তেই গিলে ফেলতে পারে। আর তুমি কিনা নিজেকে নেতৃত্বের পথে আহবান করার দায়িত্বে নিয়োজিত করছ। তুমি আকীদার পথে আহবান করছ। আবার শিষ্টাচার ও ইসলামী নৈতিক বিষয়াদির দিকেও আহবান করছ।
আর যখন মানুষ বাতিলের মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে এবং কমপক্ষে শতকরা পঞ্চাশ অথবা শতকরা চল্লিশজন এমন হবে, যারা সরল পথে প্রতিষ্ঠিত এবং শত্রুদের মুখোমুখি হতে সক্ষম এবং সাহাবীগণ যেসকল বিষয়ের উপরে ধৈর্যধারণে সক্ষম হয়েছেন, সেসকল বিষয়ে তারা ধৈর্যধারণে সক্ষম হবে, তখন আর কোনো বাঁধা থাকবে না। অন্যথায় স্বয়ং মহান রব আল্লাহ তা'আলা সাহাবীগণকে মক্কায় থাকাকালে জিহাদের অনুমতি দেননি। যুদ্ধের সক্ষমতা ও শক্তি অর্জিত না হওয়া দ্বারা উ পর্যন্ত তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ
যাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করা হয়েছে তাদেরকে (যুদ্ধের) অনুমতি দেওয়া হলো এই কারণে যে, তারা জুলমের শিকার হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। [সূরা আল হাজ্জ, আয়াত ৩৯]
এরপরে তারা নিজেদের আত্মরক্ষা এবং ইসলামের আত্মরক্ষায় সক্ষম হওয়ার পরে তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন। অথচ ইতোপূর্বে তাদের কোনো কোনো সদস্যকে প্রহার করা হয়েছে। যেমন আবু বকরকে প্রহার করা হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রহার করা হয়েছে। আম্মার বিন ইয়াসিরকে প্রহার করা হয়েছে। সুমাইয়্যাকে হত্যা করা হয়েছে। আম্মারের পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন মাস'ঊদকে হত্যা করা হয়েছে। বহু সংখ্যক সাহাবাকে প্রহার করা হয়েছে। তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। এরপরেও তারা ধৈর্য্যধারণ করেছেন। এরপরে এক পর্যায়ে তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা জিহাদের অনুমতি দিয়েছেন। আল্লাহই একমাত্র আশ্রয়স্থল।
[ইসলামী রাজনীতি বিষয়ক ফতোয়া, পৃষ্ঠা ৫৯-৬১, ইমাম মুকবিল বিন হাদী আল-ওয়াদিঈ, মাকতাবাতুস সুন্নাহ]