27/05/2022
গাইবান্ধায় ‘কাশখড়ে’ লাভবান হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষ
কায়সার রহমান রোমেল, গাইবান্ধা:
কাশফুল একেবারেই প্রাকৃতিক। এর নেই কোনো চাষবাস, নেই কোনো যতœ-আত্তি। শরতে নদীর ধার কিংবা বিস্তীর্ণ বালুচরে বড্ড অবহেলায় ফোটে এই কাশফুল। দেশের প্রায় সব এলাকায়ই কাশফুল দেখা যায়। বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলোতে কাশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। যখন নানা প্রতিকূলতায় প্রকৃতি থেকে এই কাশফুল হারিয়ে যেতে বসেছে, ঠিক সেই সময় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনাবেষ্টিত গাইবান্ধার চর-দ্বীপচরগুলোতে কাশখড় (শুকনো কাশফুলের গাছ) বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এখানকার মানুষ। কাশখড়ের বাণিজ্যিক ব্যবহারে আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরে পেয়েছেন অনেকে।
গাইবান্ধা সদরে ব্রহ্মপুত্র নদের কামারজানী ঘাটে দেখা হয় কাশখড়ের কারবারী কফিল উদ্দিনের সাথে। তিনি মোল্লারচর, চর কুচখালি, বুলবুলির চর সহ জেলার চর-দ্বীপচরগুলো থেকে শুকনো কাশফুলের গাছ ‘কাশখড়’ কিনে ঘাটে নিয়ে আসেন। পরে এখান থেকেই রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারদের কাছে ‘কাশখড়’ পাঠান। ঘাটখরচ, শ্রমিকের মজুরি এবং ক্রেতার কাছে পৌছানো অব্দি পরিবহন ব্যয় ধরে দশ মোঠার প্রতিটি আঁটি ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম। দুই বিঘা চরের জমি থেকে তিনি সাত হাজার আঁটি ‘কাশখড়’ কিনেছেন। প্রতি আঁটি পাঁচ টাকা দরে কিনে এনে বারো টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৮৫ হাজার টাকা।
তিনি জানালেন, কাশফুল নদীর চরে এমনিতেই জন্মায়। এটি চাষ করতে হয় না। সার বা কীটনাশক কিছুই প্রয়োজন হয় না। শুধু লাগে চর থেকে কাশফুলের গাছ কেটে আনতে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ। দুই বিঘা জমিতে এই বাবদ তার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। এভাবে জেলার ২৬০টি চর-দ্বীপচরের প্রায় সব কৃষকই বিনা চাষের কাশ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কফিল উদ্দিন জানান, কাশফুল হলো চরের কৃষকরে ভাগ্যের ফসল। চর না ভাঙলে বিনা চাষে কাশ পাওয়া যায়। আগে খড়ের ঘর তৈরিতে কাশের ব্যবহার ছিল। এখন আর তেমন খড়ের ঘর নেই। তবু কাশের চাহিদা কমেনি। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানের বরজে এখানকার কাশ ব্যবহার হচ্ছে। কাশ কেবল পানের বরজ, ঘরের চালা বা সবজিবাগানের বেড়া হিসেবেই নয়, কাশফুলের আয়ুর্বেদীয় গুণের পাশাপাশি এটি মাটিধস রোধ করে। খরচ বাদ দিয়ে চর থেকে নিয়ে আসা ১ লাখ আঁটি ‘কাশখড়’ বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে আমার। তিনি জানান, চরের কৃষকদের কাছে কাশ কিনে তিনি রাজশাহী, দিনাজপুর, বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পান চাষিদের কাছে বিক্রি করেন। পাঁচ টাকায় কেনা আঁটি বিক্রি হয় ১০-১২ টাকা পর্যন্ত দরে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার পান চাষীরা জানায়, কাশবনে দু’ধরনের গাছ জন্মায়। চিকন আকারের ছোট গাছগুলো খড় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর বড় এবং মোটা আকারের গাছগুলোকে ঝাঁটি বলে। কাশবন থেকে পাওয়া খড় ও ঝাঁটি পান বরজের জন্য খুবই প্রয়োজন। খড় দিয়ে পানের বরজে ছাউনি দেয়া হয় এবং পান গাছ বাঁশের শলার সাথে বেঁধে উপরে তুলতে হয়। সুতোলি বা অন্য কিছু দিয়ে বাঁধলে বৃষ্টির পানিতে ভিজে অল্প দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। খড় দিয়ে বাঁধলে অনেকদিন থাকে। তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না। এ কারণে বরজে খড় ব্যবহার করা হয়। অপর দিকে ঝাঁটি বরজের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঘরের ছাউনি দিতেও ব্যবহৃত হয় এ খড়।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শস্য) মো. কামরুজ্জামান বলেন, কাশফুল চাষের জন্য কোন বীজ কিংবা চারা নেই। এটি প্রাকৃতিকভাবে বর্ষাকালে নদীর বুকে চরে গজায়। প্রতি বছর বর্ষায় জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে কাশফুলের গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। কাশ কাটা হয় মধ্য নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপপরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, কাশফুলের আবাদের চিন্তা আমরা কখনো করিনি। তবে ‘উদ্ভাবনী ফসল’ হিসেবে কাশফুল চাষের জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এতে একদিকে চাষীরা কাশফুল চাষ করে লাভবান হবেন। অপর দিকে কোন জমি অকারণে পড়ে থাকবে না।
খবর>মিডিয়া পার্টনার আমার জেলা ডট নিউজ ।