26/01/2020
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় একটি বিষয় নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন, সেটি হলো আইনানুগভাবে কী কী জিনিসপত্র তারা আনতে পারবেন।
অনেকসময়ই দেখা যায় পরিবার বা বন্ধুদের জন্য শখ করে কিনে আনা বা নিজের প্রয়োজনীয় কোনো একটি পণ্য আইনি অনুমোদন না থাকায় আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
আবার যথাযথ নিয়ম মেনে শুল্ক দিয়ে পণ্যটি ছাড়ানোর উদ্দেশ্য থাকলেও পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অনেকসময় তাও সম্ভব হয় না।
বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শুল্ক না দিয়ে কোন ধরণের জিনিস কী পরিমাণ আনা যায় এবং শুল্ক প্রদান করে কোন ধরণের জিনিসপত্র আনা যায় আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের একটি ফর্ম পূরণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে জাম দিতে হবে, যেই ফর্মে ঘোষণা দিতে হবে তারা কোন জিনিস কী পরিমাণে বহন করছেন।
তবে প্রতিবছরই বাজেটের সময় এই তালিকা পরিবর্তন হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী যেসব পণ্য দেশে আনা যায়, তা নিম্নে তালিকাভুক্ত করা হলো।
কোনো শুল্ক না দিয়ে আনা যাবে যেসব জিনিস:
গৃহস্থালীর ব্যবহারের পণ্য
১০০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত স্বর্ণালঙ্কার ও ২০০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত রৌপ্যালংকার (এক ধরণের অলঙ্কার সংখ্যায় ১২টির বেশি না হলে)
ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্রীড়া সরঞ্জাম
টাইপরাইটার, ঘরে ব্যবহারের সেলাই মেশিন, সিলিং ফ্যান ও টেবিল ফ্যান
রাইস কুকার, প্রেশার কুকার, গ্যাস ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেকার, ব্লেন্ডার, ফুড প্রসেসর, জুসার ও কফি মেকার
বিদেশ থেকে কোনো অসুস্থ যাত্রী আসলে সেই যাত্রীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
১৫ বর্গমিটার আয়তন পর্যন্ত কার্পেট
ইলেকট্রনিক্স পণ্য
সর্বোচ্চ দুইটি মোবাইল ফোন সেট
ক্যাসেট প্লেয়ার, সিডি প্লেয়ার, বহনযোগ্য অডিও সিডি প্লেয়ার
ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার, সাথে একটি ইউপিএস'ও আনা যাবে
কম্পিউটার স্ক্যানার, প্রিন্টার ও ফ্যাক্স মেশিন
পেশাদার কাজে ব্যবহৃত হয় এরকম ক্যামেরা বাদে ভিডিও ক্যামেরা (এইচডি ক্যমেরা, ডিভি ক্যামেরা, বেটা ক্যামেরা) ও ছবি তোলার ডিজিটাল ক্যামেরা
১৯ ইঞ্চি পর্যন্ত এলসিডি কম্পিউটার মনিটর
২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত প্লাজমা, এলসিডি, এলইডি, সিআরটি টেলিভিশন
সর্বোচ্চ চারটি স্পিকারসহ সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, এলডি বা ব্লু ডিস্ক প্লেয়ার
যেসব জিনিস আনতে শুল্ক প্রদান করতে হবে
কিছু পণ্য ব্যক্তিগত ও হৃগস্থালি কাজে ব্যবহার হলেও সেগুলো আনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে। সেগুলো হলো:
রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজ ৫ হাজার টাকা
উইনডো টাইপ এয়ার কন্ডিশনার ৭ হাজার টাকা
স্প্লিট টাইপ এয়ার কন্ডিশনার (১৮০০ বিটিইউ পর্যন্ত) ১৫ হাজার টাকা
স্প্লিট টাইপ এয়ার কন্ডিশনার (১৮০০ বিটিইউ এর বেশি)২০ হাজার টাকা
ডিশ অ্যান্টেনা ৭ হাজার টাকা
২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণের বার বা পিণ্ড ১০০ গ্রামের পর থেকে প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রামে ২ হাজার টাকা হারে
২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত রৌপ্যের বার বা পিণ্ড ২০০ গ্রামের পর থেকে প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রামের জন্য ৬ টাকা হারে
পেশাদার ভিডিওর কাজে ব্যবহার হয় এরকম এইচডি,
ডিভি, বেটা ক্যামেরা ১৫ হাজার টাকা
এয়ারগান বা রাইফেল (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে) ৫ হাজার টাকা
ঝাড়বাতি ৩০০ টাকা (প্রতি পয়েন্ট)
ডিশ ওয়াশার, ওয়াশিং মেশিন ও কাপড় শুকানোর ড্রায়ার ৩ হাজার টাকা
এছাড়া ৩০ ইঞ্চি থেকে ৬৬ ইঞ্চি বা তার চেয়ে বড় আকৃতির প্লাজমা, এলইডি, এলসিডি টেলিভিশনের ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে।
এছাড়া বিদেশী পাসপোর্ট রয়েছে, এমন ব্যক্তি সর্বোচ্চ এক লিটার পরিমাণ মদজাতীয় পানীয় আনতে পারবেন।
ঢাকা কাস্টমসের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশ থেকে অনেকেই একাধিক মোবাইল ফোন আনার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য না রেখে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুইয়ের বেশি মোবাইল ফোন আনলেও কখনো কখনো শুল্ক ছাড়াই ছাড় দেয়া হয় ব্যক্তিকে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধারণত কর্মকর্তারা দৈবচয়নের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৫% যাত্রীর লাগেজ পরীক্ষা করে থাকেন।
তবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থার কোনো বা গোয়েন্দা সংস্থার কোনো পূর্ব সতর্কতা থাকলে নিরাপত্তার খাতিরে সবাইকে পরীক্ষা করে থাকেন কর্মকর্তারা।
লেখক- মিজানুর রহমান ।