31/12/2024
বউকে আদর করে এলে বুঝি? ছি:! - তোমার গায়ে মেয়েলি বাজে ঘ্রাণ!"
আমার পেটের ভেতর কিছু একটা গুড়গুড় করে উঠল। তারানার হাত ধরতে চাইলাম, ও সিঁড়ি টপকে ছাদে উঠে গেল।
তারানার সমস্ত শরীর ভেজা। জামাকাপড় থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। কিছুক্ষণ আগে তুফান হয়েছিল। অনেকক্ষণ ধরে তাণ্ডব করে এই মিনিট দশ হলো বৃষ্টি থেমেছে৷ আমি গলাটাকে আদুরে করে জিজ্ঞাসা করলাম,
-- "এই বৃষ্টিতে ভিজলে কেন? এত রাতে বাড়ি থেকে কেন বের হলে? এখন জ্বর বাধলে কেমন হবে? ভালো লাগবে তখন?"
অন্ধকারে তারানার মুখ দেখতে পেলাম না, কিন্তু ও কাঁদছে সেটা বুঝলাম গলার আওয়াজে,
-- "আমি সহ্য করতে পারছিলাম না, আবিদ। তুমি অন্য কাউকে বউ বলে ডাকছ। অন্য কাউকে বুকে টানছ৷ অন্য কাউকে চুমু দিচ্ছো! এসব চিন্তা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। আমি মরে যাচ্ছি, আবিদ। আমার গলা বুজে যাচ্ছে। জিভ বেরিয়ে আসছে। কিছু একটা এঁটে বসছে গলায়, চেপে ধরছে আমাকে। আমার দমবন্ধ লাগছে। আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না..."
ছাদের রেলিংটা চওড়া, কিন্তু ওর বসে থাকার ধরণ দেখে আমার ভয় করতে থাকল। বললাম,
-- "হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল। বাবা-মা এমনভাবে চেপে ধরল আমি না করার সুযোগই পেলাম না!"
তারানা একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল। হয়তো হাসলো,
-- "একদম রাজি ছিলে না?"
আমার ভয় করতে লাগল। নতুন বউকে বাসর ঘরে একা রেখে এসেছি। না এসে উপায় ছিল না। তারানার ফোনকলে অতিষ্ঠ হয়ে যখন ফোনটা বন্ধ করতে যাব, তখনই তারানা মেসেজটা পাঠিয়েছিল,
"এখনই যদি বাইরে না আসো, আমি দরজা ভেঙে তোমার ঘরে ঢুকে পড়ব আর আমাদের দুজনের একান্ত সব মুহূর্ত আটকে রাখা ফ্রেমগুলো সবাইকে দেখিয়ে দেবো!'
তারানা সবসময়ই খুব কোমল, খুব নাজুক, শান্ত ধরণের মেয়ে। ওর কাছ থেকে এরকমের হুমকি আমি আশা করিনি। ধানাইপানাই বুঝিয়ে দিয়ে রাস্তা কেটে ওর বাসায় ফেরত পাঠাব ভেবেছিলাম।
পুরো তিনটে বছর ধরে ওর সাথে প্রেম করছি। একঘেয়ে লাগত। একই ঠোঁট আর কত? বুকের ভাঁজে নারীশরীরের স্বেদজ ঘ্রাণও আর নাকে এসে লাগতে চায় না। গায়ে ডলা লোশনের ঘ্রাণের নিচে চাপা পড়ে যায় আস্ত নারীর ঘ্রাণ। পানসে লাগে।
চাঁদটা আবার মেঘে ঢেকে গেল।
মিতুকে মনে পড়ল। চঞ্চলা হরিনীর মতো চোখ। শরীরের বাঁকে বাঁকে অচেনা ফুলের ঘ্রাণ। কত কী নতুন এক্সপ্লোর করার বাকি! কেবলই তো মিতুর ঠোঁট ছাড়িয়ে চিবুক, চিবুক ছেড়ে গণ্ডদেশ, তারপর বুক, বুক ছাড়িয়ে মেদহীন কোমর আর পেলব তলপেটের নিচে নাভীদেশের প্রেমটা মাখোমাখো হয়ে জমতে শুরু করেছিল। আসল খেলাই তো বাকি!
এখন এখানে বসে তারানার সওয়াল জবাব পর্বের নসিহত শোনার মতো ধৈর্য হচ্ছে না আমার!
তারানা খিকখিক করে হাসছে। ওর হাসিটা হায়েনার হাসির মতো শোনাচ্ছে৷ আমার ইচ্ছে হলো ওকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিই।
কাজটা করার আগে জানতে চাইলাম,
-- "তুমি এখানে এসেছ, কে জানে?"
-- "কেউ জানে না!"
খুব ভালো। আমাদের বাড়ির এইপাশটাতে একটা ডোবা৷ এঁদো হলেও বেশ গভীর ডোবাটা। দুই চার বছরে একবার সিটি করপোরেশনের লোকেরা মশা মারার ওষুধ ছিটাতে আসে। চৈত্রের শেষে যখন পানির টানের মৌসুম তখন ওদের কোমর দেবে যায় এই ডোবার ভেতর৷ এখন বর্ষাকাল। পানি আরো বেড়েছে। তারানার শরীরটা এর ভেতর কেউ আন্দাজ করতেও পারবে না। দুইদিন পরে লা*শপচা গন্ধ ছুটলেও কেউ সন্দেহ করবে না৷ ওই ডোবায় প্রায়ই ম*রা কুকুর-বেড়াল এমনকি বুড়ো গরুর ম*রাও ফেলে যায় লোকে!
জোরে জোরে নি:শ্বাস নিয়ে বুক ভরিয়ে ফেললাম। মাথার নিউরনে নিউরনে তিড়বিড় করছে। র*ক্তসঞ্চালনের গতি বেড়ে গেছে আমার। শিরার ভেতর টগবগ করে ফুটছে লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, অণুচক্রিকা!
এটুকু উত্তেজনা বরদাশত করতেই হবে, আমি তো আর পেশাদার খুনী নই! নিতান্তই বাধ্য হয়ে কাজটা করলাম ...
ধীরেসুস্থে একটা সিগারেট ধরালাম। মিতুকে কথা দিয়েছি, আর ধূমপান করব না। এই শেষ। ছাদ থেকে নেমেই আগে দাঁতব্রাশ করতে হবে। নইলে মিতু চুমু খেতে দেবে না।
সিগারেট শেষ করার আগেই মৃদুলের ফোন এলো। তারানার ভাই। আমার সহপাঠী। ধরতে চাইলাম না ওর ফোনটা। আমার আর তারানার সম্পর্কটা ও জানত। তারানার অন্তর্ধানের পেছনে আমার হাত আছে, যদি আবার সন্দেহ করে বসে সেটা তাই নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে চাইলাম। ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো বলতেই ও চিৎকার করল,
-- "শুনছিস? তারানা নাই রে, আমার তারানা আর নাই!"
আমি ঢোঁক গিললাম। এত তাড়াতাড়ি ওদিকে জেনে গেল কীভাবে?
মৃদুল হড়বড় করে বলছে,
-- "এইমাত্র লা*শ নামাইলাম। ফ্যানের সাথে ঝুলে ফাঁস নিয়েছে!"
আমি ঘামতে শুরু করলাম। ওপাশ থেকে মৃদুল আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে, সেসব কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি ভাবছি, তাহলে আমি ধাক্কা দিয়ে খালে ফেললাম কাকে? পাঁচ তলার ওপর থেকে দেখতে পাওয়ার কথা না তবুও মোবাইলের টর্চলাইট জ্বালিয়ে উঁকি দিলাম।
না, তারানা ওখানে নেই।
তারানা এখন ঠিক আমার পেছনে!
চেনা বেলিফুলের সুবাসে ছাদের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ সব মাতোয়ারা!
তারানা বলেছিল এটা ওর লোশনের ঘ্রাণ৷ পন্ডস বেলিফুল লোশন।
আমার শরীর জমে গেছে৷ নড়াচড়ার শক্তি লোপ পেয়েছে।
তারানার এক পায়ে নুপুর।
নুপুরের মৃদু নিক্কণ আলতো ঝংকার তুলেছে।
ওর স্পর্শ উষ্ণ।
মিনিট কয়েক আগে যেভাবে ওকে ফেলে দিয়েছিলাম ঠিক সেইভাবেই ও আমাকে ধাক্কা দিলো।
পতনের আগে ওর নি:শব্দ হাসির শব্দটা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাল না!
আকাশে বেয়ে নেমে আসা কয়েকটা বৃষ্টির ফোঁটা আমার পতনের সাথী হলো!