20/09/2022
আমার ছেলে সেনাকর্মী হবে!!!
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল্ জাবের
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা
===============================
নতুন রংয়ের আঁচড়, চারদিক ব্যানার পেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে , রং-বেরঙ্গের তুলিতে ফুটিয়ে তোলা নানান নকশায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক নব বধুর সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট মউয়ের দোকানে বসে চবি সেনানীদের নিয়ে কলম-কার্ড বিতরণ শেষে মিছিল করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই ফাঁকে একটু গলায় শাণ দেওয়ার জন্য চা-চক্রে বসলাম।আমার পাশে বসা এক ভদ্রলোক চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন আর কান খাড়া শুনছিলেন আমাদের সাংগঠনিক কথাবার্তা।পরনে পুলিশের পোষাক, বুকের উপর কালো অক্ষরে চকচক করছিল মামুন।
আমাদের কথার ফাঁকে তার কৌতুহল মিটাতে প্রশ্ন ছুঁড়লেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসেনা আছে ?
আমি বললাম , হ্যাঁ আছে ভাই।আমরা তো বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করি এখানে ।
উনার ভিতরটা যেন আনন্দের ঢেউ খেলে গেল ।
-মাশাআল্লাহ, আমরা তো একই পরিবারের, একই মতাদর্শের , শুনে খুব খুশি লাগছে ।
-আপনার বাড়ি কোথায়, ভাই ?
-বাড়ি কুমিল্লা , আলী আকবর রেজভী হুজুরের মুরিদ আমি, কড়া সুন্নী,নবীর পাগল।
-উনার কথাগুলো শুনে ভিতরটায় এক শীতলতা অনুভব করলাম, আমার চোখে-মুখে তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে!
বললাম ,মাশাআল্লাহ!
-আমার চোখের ভাষা হয়ত উনি বুঝতে পারলেন।এই মিলন মতাদর্শের ,আক্বিদার,বিশ্বাসের , এই মিলন প্রেমের, এই মিলন নবীর ভালোবাসায়, এই মিলন নবী প্রেমিকদের।আনন্দ, উচ্ছ্বাসের প্রবল ঢেউ তিনি যেন আর সংবরণ করতে পারছিলেন না, পাচ্ছিলেন না মনের মানুষগুলোর জন্য ভালোবাসা প্রকাশের ভাষা।অত্যন্ত আকুতি ও মিনতির স্বরে বললেন,
ভাই, কিছু মনে না করলে আপনাদের চা খাওয়ানোর একটু সুযোগ দিবেন।
উনার বলার ধরণেই আমি অভিভূত হয়ে পড়ি, অপরিচিত একজন মানুষ মুহূর্তেই এত ভালোবাসার সৌরভ ছড়াতে পারে।
আমার চেহেরায় হাসির রেখা স্পষ্ট ,ভিতরটা ও এক স্বর্গীয় আনন্দে যেন খিলখিল করে হেসে উঠছে ।
বললাম আপনার আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে, ভাই ।ভালোবাসার , হৃদ্যতার, মমতা মাখানো এমন আবদার ,না করার কোন উপায় নেই।
-হ্যাঁ, ভাই অবশ্যই।
চা খাওয়ানোর কথা ছিল, যাওয়ার সময় আন্তরিকতার আরো একটি চিহ্ন রেখে গেলেন।
নাস্তার বিল সহ দিয়ে দিলেন।ডাক দিয়ে বলেন, নাস্তার বিলসহ দিয়ে দিছি অপূর্ণ লাগছে , অতৃপ্তি বোধ হচ্ছে।
উনার তাড়া আছে , দ্রুত ছুটছেন ডিউটির দিকে ।একটু দাঁড় করালাম, আমাদের কার্ড ও কলম উনার হাতে তুলে দিলাম জন জন করে বিদায় নিচ্ছিলেন ।আর বলছিলেন , দোয়া করবেন। আমার একটি সন্তান আছে যেন ,ছাত্রসেনার জন্য কাজ করতে পারে ,জামেয়ায় পড়ানোর নিয়ত করেছি ।
ভরসা দিয়ে বললাম , ইনশাআল্লাহ, আপনার সন্তানকে আল্লাহ সুন্নীয়তের মুজাহিদ হিসেবে কবুল করবেন।
এই ব্যানারের প্রতি প্রতিটি সুন্নী জনতার সুপ্ত প্রেম কাজ করে।কিছু স্বার্থান্বেশী মহল আপন স্বার্থ সিদ্ধির জন্য , স্বীয় ঢোল পিটানোর জন্য , ব্যাক্তিগত কিছু অনুরক্ত সৃষ্টির জন্য ইসলামী ভাবাদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে আমাদের সেনাকর্মীদের ব্যবহার করছে।যারা ছুটে এসেছিল নবী প্রেম ধারণ করে , তাদের আজ ওরা অমুক-তমুকের প্রীতি শিখায় , যারা ছুটে এসেছিল এক বুক আশা নিয়ে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্টার স্বপ্ন নিয়ে , তাদেরকে সিঁড়ি বানিয়ে আজ অনেকেই স্বীয় পদ-পদবী নিশ্চিত করতে ব্যবহার করছে।
ধিক্ ধিক্ ! তাদের তরে ।
তোমার সেই লালায়িত মনোভাব নিয়ে নবীর সামনে দাঁড়াবে কেমন !
ছাত্রসেনার কর্মীদের মাঝে আদর্শ থাকা চায়, তাদের হিংসা-বিদ্বেষ থাকতে নেই , তাদের লক্ষ্য একটাই সুন্নীয়ত ভিত্তিক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা।আমাদের ভিতর প্রতিযোগিতা থাকবে দ্বীনের পথে সর্বোচ্চ দেওয়ার ,তবে প্রতিহিংসা মুক্ত হবে এই প্রতিযোগিতা।
ব্যক্তিস্বার্থকে উজাড় করে দিয়ে একমাত্র নবীর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা এই পবিত্র ব্যানারে কাজ করতে পারে তারাই আমাদের প্রকৃত সম্পদ , তারাই আমাদের নিবেদিত কর্মী , আমরা স্বপ্ন বুনি তাদের নিয়ে , আমরা ভরসা পায় তাদের দিয়ে ।
চরম ফিতনার ছড়াছড়ি, এমন ক্রান্তিলঘ্নে ছাত্রসেনার প্রতি মামুন রেজভীর মমত্ব আমার হৃদয় জুড়ে দিয়েছে।
মামুন রেজভীরা আজ ও এই ব্যনারের প্রতি মমতা দেখায় কারণ এখনো এই ব্যানারে রয়েছে একঝাঁক নবীর সৈনিক, যারা নবীর জন্য গড়ে আর নবীর পক্ষে লড়ে । এই সৈনিকরাই এই ব্যানার পাহাড়া দিবে, এগিয়ে আসুক এমন প্রাণের সেনাকর্মী।
যেন প্রতিটি বাবা স্বপ্ন বুনে আমার আদরের সন্তানটা সেনাকর্মী হবে, সুন্নীয়তের তরে নিজেকে সঁপে দিবে ।
ছাত্রবার্তা-সেপ্টেম্বর সংখ্যা