28/10/2022
‘হ্যারি হুডিনি চাইলে জবরদস্ত গোয়েন্দাও হতে পারতেন’, মশলার কৌটো থেকে বেছে বেছে কয়েকটা মৌরি তুলতে তুলতে বলল ফেলুদা। রোববারের গোটা সকালটাই ও হুডিনির অটোবায়োগ্রাফি পড়ে কাটিয়েছে তাই আঁচ করছিলাম খাওয়ার টেবলে ম্যাজিক নিয়ে দু’চার কথা বলবে। সেটা অবশ্য হয় নি, এখন খাওয়ার পর বৈঠকখানার ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই এই কথা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘বইতে তাই লিখেছেন বুঝি?’
‘দূর বোকা, উনি লিখবেন কেন! এটা আমার ডিডাকশন। যে কায়দায় একের পর এক আধ্যাত্মিক বুজরুকদের মুখোশ খুলে গেছেন, পাকা গোয়েন্দারাও পারবে না। একটা কথা অবশ্য লিখেছেন – যে যত বড় ভণ্ড, তার ভক্তিও তত বেশী।’
বোঝো কান্ড, আমি শুধু জানতাম ভদ্রলোক দারুণ দারুণ সব এসকেপ ম্যাজিক দেখিয়ে গেছেন। এই হাতকড়া খুলে ফেলছেন, ওই নদীর তলায় থাকা বাক্সর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে দর্শকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। ফেলুদাকে বলাতে ও বলল আমেরিকাতেও খুব কম লোকেই জানে যে হুডিনি ভণ্ড ধর্মগুরুদের পেছনে সারা জীবন লেগে ছিলেন।
হুডিনিকে নিয়ে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময়ে কলিং বেলটা বেজে উঠল। আমি তড়িঘড়ি উঠতে যাচ্ছিলাম, ফেলুদা একটা হাই তুলে তুড়ি দিতে দিতে বলল, ‘উত্তেজিত হোস না। মক্কেল নয়, জটায়ু এসেছেন।’
আমি অবাক হয়ে তাকাচ্ছি দেখে বলল, ‘ভদ্রলোকের গাড়ির নতুন হর্নটা এই প্রথম শুনলি বোধহয়, না?’
তাই তো! মিনিট দুয়েক আগেই গলির মধ্যে থেকে ‘জয় জগদীশ হরে’র সুর শুনতে পাচ্ছিলাম। ফেলুদার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে খেয়াল করিনি যে ওটা গাড়ির হর্ন।
আমাকে যেতে হল না, শ্রীনাথ তার আগেই দরজা খুলে দিয়েছে। লালমোহনবাবু দেখি এক গাল হেসে শ্রীনাথের হাতে একটা বড় প্যাকেট ধরালেন।
ভদ্রলোক ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, ‘নাহুমের কেক মশাই। গত মাসে প্রথম চাখলাম, তারপর থেকে আর কিছু মনেই ধরছে না। এসব সাহেবী কেকের পাশে বাঙালি টিফিন কেক পাত্তা পায় বলুন তো? ছ্যা।’
ফেলুদা ভুরূ তুলে বলল, ‘সাহেবটি যে রাণীর দেশের নন সে খবরটা আশা করি জানেন।’
লালমোহনবাবু একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন, ‘রাণী? মানে ভি…ভিক্টোরিয়া? বিলেতের নয় বলছেন, আমেরিকান বুঝি?’
ফেলুদা মাথা নেড়ে বলল, ‘একশ বছর মতন দেরী করে ফেললেন। এখনো যে আপনি রাণী বলতে ভিক্টোরিয়াকেই বোঝেন সে খবরে এলিজাবেথ কতটা প্রসন্ন হবেন সে নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে সাহেবটি ইহুদী, এবং এসেছিলেন বাগদাদ থেকে।’
জটায়ুর মুখটা দেখার মতন হল। আধ মিনিট মতন গোল গোল চোখে ফেলুদার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘বাগদাদের সাহেব! বলেন কী ফেলুবাবু?’
‘নোট করে নিন, পরের উপন্যাসে প্রখর রুদ্রর মোকাবিলা কোনো বাগদাদী সাহবের সঙ্গে করিয়ে দেবেন।’
‘হেঁ হেঁ, যা বলেছেন স্যার। তবে নেক্সট লেখাটা ভাবছি দিল্লীর ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখব’, জানালেন লালমোহনবাবু।
ফেলুদা চারমিনারের প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করতে গিয়ে থেমে গেল, ‘দিল্লী চললেন নাকি? কবে?’
লালমোহনবাবু হাসি হাসি মুখে বললেন, ‘শুধু আমি নই, আপনারাও। কিন্তু পুজোর সময় কলকাতা ছাড়তে অসুবিধা নেই তো?’
আমি ফেলুদার দিকে তাকালাম। ফেলুদা উত্তর না দিয়ে সিগারেটটা প্যাকেটের উপর ঠুকতে লাগল। আমি জানি ও কী ভাবছে। পুজোর সময়টা ঠিক কলকাতা ছেড়ে নড়তে চায় না ফেলুদা, রাস্তায় পারতপক্ষে না বেরোলেও বলে পুজোর ফীল টা কলকাতা ছাড়া কোথাও পাওয়া মুশকিল।
‘উপলক্ষটা কী শুনি?’, লালমোহনবাবুকে জিজ্ঞাসা করল ফেলুদা।
ভদ্রলোক একটা কান এঁটো করা হাসি হাসলেন, ‘ইয়ে, দিল্লীর বাঙালি অ্যাসোশিয়েশন একটা সাহিত্যমেলা করছে পুজোর সময়। আমাকে বিশেষ ভাবে ধরেছে যাওয়ার জন্য’। তারপর আমার দিকে ঘুরে বললেন, ‘বুঝলে তপেশ, দিল্লীতেও যে প্রখর রুদ্রর এত খ্যাতি ছড়িয়েছে তা জানতাম না। বললে কিনা গত বছর পুজোর সময় ওদের স্টল থেকেই নাকি ‘ফুজিয়ামার ফৌজ’ এর খান সত্তর কপি বিক্রি হয়েছে।’
এখানে বলে রাখা ভালো ‘ফুজিয়ামার ফৌজ’ বিক্রিবাটার দিক থেকে গত বছর রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসগুলির মধ্যে টানা চার মাস এক নম্বরে ছিল। এ বছর সে বইয়ের পরের খন্ড আসছে, নাম ‘তাইহোকুর তান্ত্রিক’।
ফেলুদা সিক্যুয়েলের খবরটা জানত না, শুনে জিজ্ঞাসা করল ‘ফুজিয়ামা থেকে সটাং তাইহোকু চলে গেলেন কেন? নিদেনপক্ষে টোকিওতে এক বছর কাটিয়ে গেলে হত না?’
তাতে লালমোহনবাবু বললেন, ‘আরে মশাই, টোকিও – ফুজিয়ামা – তাইহোকু সবই তো জাপানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানীরা কী ফাইটটাই দিয়েছিল বলুন তো, অ্যাকশন সিনে কিন্তু ওদের টেক্কা দেওয়া মুশকিল’।
ফেলুদা লালমোহনবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তাইহোকুকে জাপানে নিয়ে গেলে হিন্দি আর চিনি দুই ভাই-ই যে বেদম চটবেন সেটা যেন খেয়াল থাকে।’
লালমোহনবাবু কিছুই বুঝতে পারছিলেন না, বাধ্য হয়ে ওনাকে বলতে হল তাইহোকু শহরটা জাপানে নয়, তাইওয়ানে। ওখানেই সুভাষচন্দ্রের প্লেনটা দুর্ঘটনায় পড়েছিল।
এইবারে এক গাল হেসে বললেন, ‘দেকেচ কান্ড, আমিও তো সুভাষ বোসের জন্যই নামটা শুনেছিলাম। এদিকে লেখার সময়ে কিছুতেই মনে পড়ল না নামটা কেন চেনা লাগছে’।
‘কিন্তু আপনি দিল্লী যাবেন তো ফেলুবাবু?’ একটু উদগ্রীব হয়েই জিজ্ঞাসা করলেন লালমোহনবাবু।
‘যাবি নাকি তোপসে?’
আমি তো যাকে বলে এক পায়ে খাড়া, পুরো পুজোর ছুটিটা কলকাতায় কাটানোর মানে হয় না। তা ছাড়া দিল্লীর পুজোও দেখা যাবে।
ফেলুদা বলল, ‘আমারও এমনিতে আপত্তি নেই, তবে একটা কন্ডিশন আছে।’
‘এনিথিং ফর ইউ’, বললেন লালমোহনবাবু।
‘আপনার গাড়ির হর্নটি চেঞ্জ করতে হবে। যাওয়ার দিন রজনী সেন রোডে জয় জগদীশ হরে শুনতে পেলে আমি বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে ফের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ব।’
ভদ্রলোক বিস্তর জিভটিভ কেটে বললেন, ‘আরে না না। আসলে নভেল লিখে টু পাইস মন্দ আসছে না তো, তাই ভাবছিলাম ঠাকুরদেবতাকে খুশি রাখাটা দরকার। তবে আপনি যখন বলছেন…’
‘বাই দ্য ওয়ে, তোপসে আর আমার খরচটা…’
‘প্লীজ ফেলুবাবু’ লালমোহনবাবু হাত তুলে থামালেন ফেলুদাকে। ‘এ শর্মা থাকতে আপনি পয়স খরচ করবেন তা কখনো হয়? হরিপদ কালকে গিয়েই রাজধানীতে তিনটে টিকেট কেটে আনবে। আপনাদের দয়াতেই তো একটু করেকম্মে খাচ্ছি।’
**
যাওয়ার আগের দিন ফেলুদা বলল ‘তোপসে, চট্ করে তৈরি হয়ে নে তো, একবার সিধুজ্যাঠার বাড়ি ঘুরে আসি। দিল্লীর আসল ইতিহাস জানার জন্য কোন অলিগলিতে ঘুরতে হবে সেটা উনি ছাড়া আর কে বলবেন?’
তৈরি হওয়ার জন্য ভেতরের ঘরে যেতে গিয়ে হঠাৎ হুডিনির বইটা চোখে পড়ায় মনে হল রাজধানীতেও কী ফেলুদার বরাতে গোয়েন্দাগিরি নাচছে?
কে জানত যে দিল্লী পৌঁছনোর আগেই ফেলুদার হাতে মোক্ষম এক কেস এসে পড়বে।
-------------
প্রকাশিতব্য প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ফেলুদা প্যাস্টিশ
"রাজধানীতে তুলকালাম" - এর প্রথম কিছু অংশ
(আনএডিটেড)
--------------------
প্রি-বুকিং চলছে
“রাজধানীতে তুলকালাম” এবং “টেরাকোটা টালমাটাল”
(এক মলাটে দুটি ফেলুদা প্যাস্টিশ, হার্ডকাভার)
লেখক: প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ইলাস্ট্রেশান: অভীক কুমার মৈত্র
প্রচ্ছদ: পরাগ ওয়াহিদ
বুকমার্ক: সজল চৌধুরী
মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা
৩৫% ছাড়ে প্রি-বুকিং মূল্য: ২২৭ টাকা
এক্সক্লুসিভ প্রি-বুকিং করলে “ফেলুদা-তোপসে-জটায়ু” বুকমার্ক সেট উপহার!
ফেলুদা প্যাস্টিশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: https://www.facebook.com/puthipuran/photos/567828488433739
এক্সক্লুসিভ প্রি-বুকিং চলবে শুধু পুঁথি পুরাণ এর ফেসবুক পেজে
আগামী ১ নভেম্বর পর্যন্ত !!!
প্রি-বুকিং করতে যোগাযোগ করুন
আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।