02/10/2024
আব্দুল্লাহ ইবনে আউন রাহিমাহুল্লাহর মা একবার তাঁকে দূর থেকে ডাক দিলেন। তিনি শব্দ করে জবাব দিলেন- “জ্বি...মা।”
একটু পর তাঁর মনে হলো, তিনি মায়ের সাথে জোরগলায় কথা বলেছেন। মায়ের সাথে এভাবে ‘জোরগলায়’ জবাব দেয়ায় তাঁর মনে হলো তিনি পাপ করেছেন। এই পাপের কাফফারা কিভাবে দিবেন? তিনি তাঁর দুজন দাস মুক্ত করে দিলেন।
মানুষ দাস মুক্ত করে কখন? যখন মানুষ সিরিয়াস কোনো অপরাধ করে, ভয়ঙ্কর কোনো গুনাহের কাজ করে। যেমন: কাউকে হত্যা করা, রোজা থাকাবস্থায় সহবাস বা কিছু খেয়ে ফেলা ইত্যাদি। এমন কাজের কাফফারা হিশেবে মানুষ দাস মুক্ত করে। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে আউন মায়ের সাথে প্রয়োজনে একটু জোরে কথা বলায় সেটার কাফফারা আদায় করেন! তারা মায়ের ব্যাপারে এতোটা সতর্ক থাকতেন।
হারিসা রাদিয়াল্লাহু আনহু মায়ের চুল আঁচড়ে দিতেন, মাকে মুখে তুলে খাওয়াতেন। তাঁর মা কোনো কিছু করতে বললে বিনা প্রশ্নে সেটা করতেন। পরবর্তীতে মানুষজন তাঁকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি মাকে প্রশ্ন করেন না কেনো?”
তিনি বলেন- “মাকে প্রশ্ন করলে তিনি যদি কিছু মনে করেন!”
মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন বিখ্যাত তাবেয়ী। তাঁর ভাইয়ের নাম উমর ইবনে মুনকাদির রাহিমাহুল্লাহ। একরাতে উমর ইবনে মুনকাদির সারা রাত নামাজ পড়ে কাটান আর
মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির মায়ের সেবা করে কাটান। সেই রাতের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির বলেন- “আমার ভাইয়ের ঐ রাতের নামাজের পরিবর্তে আমি কখনো আমার মায়ের সেবা করার আমল বিনিময় করবো না।”
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন বিখ্যাত হাদীস বিশারদ। তাঁর ডাকনাম ছিলো ‘বুনদার’। বুনদার এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যার অনেক সম্পদ আছে। মুহাম্মদ ইবনে বাশশারকে বুনদার বলা হতো এই কারণে যে, বসরা শহরে তারচেয়ে বেশি কারো হাদীস মুখস্থ ছিলো না।
সেই সময়ে হাদীস মুখস্থ করার মাধ্যম ছিলো বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করা। অথচ মুহাম্মদ ইবনে বাশশারকে তাঁর মা শহরের বাইরে বেরুনোর অনুমতি দেননি। তারপরও কিভাবে তিনি এতো হাদীস মুখস্থ করলেন?
সেই গল্প তিনি নিজের ভাষায় বলেন- “আমি হাদীস সংগ্রহের জন্য বাইরে যেতে চাইলাম, কিন্তু আমার মা আমাকে নিষেধ করলেন। আমি তাঁর কথা রাখলাম। এতেই আল্লাহ আমার জ্ঞানে বরকত দান করলেন।”
মা-বাবার নির্দেশ মানার ব্যাপারে সালাফগণ ছিলেন বেশ সচেতন। এটা একটি আমল। অথচ আমরা একে গুরুত্ব দিই না।
পবিত্র কুরআনে মা-বাবার ব্যাপারে ‘উফ’ শব্দ বলতে মানা করা হয়েছে। আর আমাদের পছন্দমতো না হলে মা-বাবার সাথে বাজে আচরণ করি!
কীভাবে মা-বাবার সাথে ভালো আচরণ করতে হবে? এই নিয়ে সালাফদের ঘটনা পড়লে আমরা অনুপ্রাণিত হতে পারবো।
দারুল আরকাম থেকে প্রকাশিত ‘উফ বলতে মানা’ বইটি পড়ার পর যে কেউ তার মা-বাবার সাথে আগের চেয়ে ভালো ব্যবহার করার উৎসাহ পাবে।
বইয়ের গল্পগুলোর শিরোনাম পড়ে অর্ডার করতে পারেন।
উফ বলতে মানা
লেখক : শাইখ আব্দুল মালিক মুজাহিদ
প্রকাশনী : দারুল আরকাম