01/09/2022
• প্রকৃতপক্ষে অভাব কাদের? সুখ কিসের মধ্যে নিহিত??
আমি প্রায় বন্ধুদের সাথে গল্প করে থাকি, কখনো তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গত কিছুদিন পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একবন্ধুর সাথে গল্প করেছি। ফজর থেকে এশা পর্যন্ত কি করি? কি বলি? এইসব ভেবে একদম সময় নষ্ট করি না। এটা সেই জন্ম থেকে খারাপ একটি নিয়ম, তবে ঘুমানোর পূর্বে ফজর থেকে এশা পর্যন্ত কার সাথে কি বলেছি? কি করেছি? এইসব না ভাবলেও ঘুম আসে না। এটি শিখেছি দা’য়ি ইলাল্লাহদের কাছ থেকে, যাই হোক সেদিকে না যাই।
দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে শুয়ে আছি, কেনো যেনো খারাপ লাগলো তা বলতে পারছি না। তবে একটু পরে আবার পড়তে হবে এটা মাথায় ঘুরছিলো। হঠাৎ মোবাইলের মাঝে কল আসলো, চেয়ে দেখে বন্ধুর কল এসেছে। কথা বলার ইচ্ছে একেবারেই নেই, তারপরেও কলটি ধরলাম। অনেক কথাই হলো তবে দু’টি কথা হৃদয়ে লেগেছে। সে যানতে চেয়েছে, প্রকৃতপক্ষে অভাব কাদের? সুখ কিসের মধ্যে নিহিত? তখন মজার চলে বলে দিলাম, সব টাকা এবং ঘুমের মধ্যে নিহিত।
কিন্তু ঘুমানোর পূর্বে যখন রিপিট করতে ছিলাম। তখন এখানে আসা মাত্র বুকটা কেনো যেনো বন্ধ হয়ে গেল। চমকে উঠলাম আমি, এই কেমন প্রশ্ন! আসলেই তো অভাব কাদের? সুখ কিসের মধ্যে আছে? অথচ, সারা পৃথীবির সবাই অভাব দূর করতে চায়। সুখকে কাছে পেতে চায়। এই টেনশনে আর রাতে ঘুম এবং পড়া কিছুই হলো না। যাঁদের টাকা-পয়সা নেই, জমি-জামা নেই, ধন-সম্পদ নেই, সুন্দর বাড়ী, গাড়ী এবং সুন্দরী নারী নেই। তাঁদের কি অভাব? তাঁরা কি অসুখি? কখনো নয়, তাঁরাই প্রকৃতপক্ষে অভাব মুক্ত এবং সুখি।
নেই তাঁদের বাড়ী বাড়ার, বিদ্যুৎ বিলের, গ্যাস বিলের, পানির বিলের কোনো রকমের টেনশন। নেই তাঁদের ব্যাবসা কিংবা অফিসের চাপ। নেই তাঁদের কোনো ব্যাস্ততা। ভুলে যায়না তাঁদের রবকে। মূত্যুকে তাঁরা সুসংবাদ হিসেবে গ্রহণ করে। কোরআনের সাথে থাকে তাঁদের গভীর প্রেম। তাঁদের কোনো চিন্তা নেই, তাঁরাই দুনিয়া এবং আখেরাতে সফল। তাঁরা তিন বেলায় তিনটি প্লেট ভাত, কয়টি মরিচ, একটু লবণ হলেই চলে। তাঁরা কখনো আকাশ সমান সপ্ন দেখেনা, তাঁদের সপ্ন ভেঙ্গে গেলেও কষ্ট পায়না। কারণ তাঁরা তখন সরণ করে সেই কথা যে কথা রব তাঁদের শিখিয়েছেন। তাঁহলো “ লা-তাহযান” অর্থ্যাৎ, “হতাশ হবেন না”।
একবার কি চিন্তা করে দেখেছেন এই কথার ওয়েট কতো? আল্লাহু আকবার। সাথে একপালি দাঁত হেঁসে দিয়ে বলে কপালে যা ছিল তাই হয়েছে। অথবা, আমার রব যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। হয়তো ওটা আমার জন্য অকল্যাণকর ছিল, তাই রব আমাকে দেন না। একটি বার চিন্তা করে দেখেন তো কি ঈমান তাঁদের! কতটা ডিফেন্ড করে রবের উপর, কতটা গভীর সম্পর্ক রবের সাথে থাকলে পরে এই কথা বলতে পারে মানুষ।
রাতে যখন রাজপথের পাশে ঘুমিয়ে যায়, হাজারো গাড়ীর শব্দ তাদের ঘুম ভাঙ্গাতে পারে নাই। কিন্তু যাদের অনেক টাকা-পয়সা আছে, জমি-জামা আছে, ধন-সম্পদ আছে, সুন্দর বাড়ী, গাড়ী আর সুন্দরী নারী আছে। তারা সুখে নেই, তাদের অভাব চিরজীবনের জন্য থেকে যায়। তাঁরা প্রায় ভুলে যায় রবকে, ভুলে যায় চিরসত্য মূত্যুর কথা। যার পাঁচ লক্ষ টাকা আছে তার টেনশনে ঘুম হারাম হয়ে যায় কখন তার দশ লক্ষ টাকা হবে। যার একটি বাড়ী, গাড়ী ও সুন্দরী নারী আছে। সে টেনশনে ঘুমাতেও পারেনা কখন সে এইসব দ্বিগুণ করবে।
এতো ব্যাস্ত সে, নামাজের কথাও ভুলে গেছে। ভুলে গেছে কোরআন তেলাওয়াতের যে কত সুখ সে কথা। রাসূল সা. এর বাণীতে যে কতটা শান্তি বিরাজ করছে কখনো সে পড়েই দেখেনা। আসলে গরীবরাই সবচেয়ে সুখি, ত্যাগের মধ্যেই সুখ নিহিত, মনের ধনী এবং সুখই প্রকৃত সুখ। সুখ পাওয়া যায় সেজদায়, সুখ পাওয়া যায় ত্যাগের মহিমায়। সুখ পাওয়া যায় শুকরিয়ার মাঝে, সুখ পাওয়া যায় গভীর রাতের নামাজের জায়নামাজে। আজ তারা ভুলে গেছে তাদের অতীতের সোনালী যুগের কথা। ফলে আজ তারা বিপদের মধ্যে নিমর্যিত হয়েছে। আজ মনে পড়ে সেই কথা গুলো...
“আর যদি তার উপর আপতিত দুঃখ কষ্টের পরে তাকে সুখভোগ করতে দেই, তবে সে বলতে থাকে যে, আমার অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে, আর সে আনন্দে আত্নহারা হয়, অহঙ্কারে উদ্দত হয়ে পড়ে”।- সূরা হুদ:১০।
“যৎসামান্য সুখ-সম্ভোগ ভোগ করে নিক। তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে”।- নাহল:১১৭।
“যেদিন কাফেরদেরকে জাহান্নামের কাছে উপস্থিত করা হবে সেদিন বলা হবে, তোমরা তোমাদের সুখ পার্থিব জীবনেই নিঃশেষ করেছ এবং সেগুলো ভোগ করেছ সুতরাং আজ তোমাদেরকে অপমানকর আযাবের শাস্তি দেয়া হবে; কারণ, তোমরা পৃথিবীতে অন্যায় ভাবে অহংকার করতে এবং তোমরা পাপাচার করতে”।- আহকাফ:২০।
বরং তোমরা ধারণ করেছিলে যে, রসূল ও মুমিনগণ তাদের বাড়ী-ঘরে কিছুতেই ফিরে আসতে পারবে না এবং এই ধারণা তোমাদের জন্যে খুবই সুখকর ছিল। তোমরা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়েছিলে। তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়”।-ফাতাহ:১২।