08/08/2024
বিস্তৃত আমলাতন্ত্র আর রাষ্ট্র যে কত গণবিরোধী, কত অকাজের, কত প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশবৈরী, গত ৩/৪ দিনে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল কিন্তু! রাষ্ট্র-সরকার দূর্বল হলেই যে মানুষ নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে তাড়িত হয়, সমাজে তার স্বাধীন সক্রিয়তার পরিসর সৃষ্টি হয়। গত কয়দিনে জনসক্রিয়তা আর ডিরেক্ট ডেমোক্র্যাসির একটা প্র্যাকটিস হয়ে গেল বেশ! সত্যিই, অ্যানার্কি ইজ অর্ডার, নৈরাজ্যই নিয়ম!
কোনও প্রাক-প্রস্তুতি/বাজেট/লোকেশন রেকি ছাড়াই সংসদ পরিষ্কার হয়ে গেল। ভেঙে দেওয়া ভাষ্কর্য পুননির্মাণ শুরু হলো। সিটি করপোরেশন আমলাতন্ত্রই ছাড়া শহর কত সুন্দর। কত পরিষ্কার। ট্রাফিক পুলিশ নেই বলে রিকশা-বাইক-কার যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন লেনে। চাপানো নিয়ম নেই বলেই কেউ নিয়ম ভাঙছে না। মালবাহী ট্রাক চলে আসতে পারছে পুলিশ/রাজনীতিবিদকে টাকা না দিয়েই।
স্বাধীনতাশীলতার অনুভূতি টের পাওয়া যাচ্ছে আসলে। রাস্তায় রিকশাওয়ালা বলে, মামা যা ভাড়া দেবেন তাতেই যাব। কেন? চাদা দিতে হচ্ছে না তাই। বাসে ভাড়া কমায়া রাখে, কারণ জানতে চাইলে বলে: আমাদের তো আর চাঁদা দিতে হচ্ছে না। দোকানির ব্যবহার বদলে গেছে। খুচরা দিতে ভ্রু-কোচকানি নেই। মানুষের মুখে মুখে হাসি। মানুষে মানুষে সহানুভূতি-সমানানুভূতির এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত যেন!
গতরাতে আমার বাসার রাস্তায় মধ্যরাত পর্যন্ত পাহারায় ছিল তরুণ শিক্ষার্থীরা। জেগে ছিলাম আমিও, ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে ওদের বললাম কফি খাবেন? ওরা বলে, ‘না ভাইয়া, অনেক অনেক ধন্যবাদ’। আমরা আছি, আপনারা ঘুমান! এক পর্যায়ে মুরব্বিরা ওদের বাসায় পাঠাল ঘুমাতে। তারা পাহারা দিতে শুরু করল।
নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করছে আমাদের তরুণরা। রাস্তা থেকে পার্লামেন্ট; সবকিছু ধুয়ে-মুছে সাফ করতে চায় ওরা। বদলাতে চায় পুরনো রাজনীতি আর শাসনতন্ত্র-সংবিধান। ফ্যাসিজম যেন জেঁকে বসতে না পারে, কোথাও যেন বৈষম্য না হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় ওরা।
অভ্যুত্থানের অস্থিরতা ফুরোয়নি, সহজে ফুরোনার নয়। ভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন, বিদায় হওয়া ফ্যাসিস্ট শক্তির জান-মালে হামলা-আগুন এসব থামাতে আমাদের প্রত্যেকের আরও আরও সক্রিয় হওয়ার বিকল্প নাই। অভ্যুত্থান ছিনতাইয়েরও আশঙ্কা রয়েছে। একে তাই সক্রিয় পাহারায় রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরাই সব করে দেবে কেন? আমরা কি এখনও বসে বসে থাকব? ওরা ফ্যাসিস্ট তাড়ানোর পরও?
Artwork: Debashish Chakrabarty