04/05/2024
৫ই মে
যুগ যুগান্তের প্রেরণা
-----------------------------
খুব ভোরে জেগে উঠেছিলাম গাবতলী পয়েন্টে অবরোধ করতে হবে বলে ৷
ফজরের আগেই রওয়ানা করেছিলাম ৷
টিপ টিপ বৃষ্টি ছিল ৷
গাড়ীটা নিয়েই বেরিয়ে ছিলাম ৷ ড্রাইভার না থাকায় নিজেই ড্রাইভ করেছিলাম ৷ গাড়ী থাকলেও গতিটা ছিল পায়ে হাটা মানুষদের মতই ৷
মাজার রোড মসজিদের সামনে পার্কিং করে রেখেছিলাম ৷
মিরপুর-মোহাম্মাদপুর মিলে ছিল এই পয়েন্টের দায়িত্ব ৷ আমি ছিলাম নায়েবে আমীর ৷ আমীর ছিলেন মাওলানা মোস্তফা আজাদ রাহিমাহুল্লাহ ৷ প্রশাসন বলেছিল ব্রিজের অপর প্রান্তে অবস্থান করতে ৷ হেফাজতের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল এপারেই থাকার ৷ এপারেই থাকলাম ৷ এপার ওপার সবই তো এক সময় হয়ে গেল একাকার ৷ জোহরের নামাজ পড়েই ছুটলাম শাপলার দিকে ৷
ঢুকে পড়লাম ইতিহাসে ৷
শাপলা ফুলটার পশ্চিমে ট্রাক দিয়ে তৈরি করা ছিল স্টেজ ৷
খুব মামুলি ৷
কিন্তু সেটাই হয়ে গেল নতুন বালাকোটের ঐতিহাসিক মঞ্চ ৷
সেখানে দুইবার বক্তব্য রাখার তাওফীক হলো ৷ প্রথমবার আসরের আগে ৷ সেটা ছিল সিডিউল কর্মসূচীর অংশ ৷ আসরের পরপর মঞ্চ থেকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে শাপলা চত্বরে অবস্থানের ঘোষনা দিলেন ৷ উত্তেজনার পারদ ক্রমেই উর্দ্ধগামী হলো ৷ ঐ অবস্থায় আবার মঞ্চে উঠলাম ৷
তখন মঞ্চে কোনো স্বাভাবিক কর্মসূচী নেই ৷
জনতার সাগর তখন উত্তাল ৷
গুলিস্তান, প্রেসক্লাব আর বিজয় নগর থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে ৷
কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া ৷
জমীন থেকে আকাশের মেঘ সব যেন লাল-কালোর বিদ্রোহী শোক ৷
শহীদদের লাশের মিছিল শুরু হলো শাপলার দিকে ৷
ভাইয়ের সামনে ভাইয়ের লাশ!
হায়েনাদের খুবড়ে খাওয়া লাশ!
রক্তের কণিকাগুলো জ্বলে উঠতে লাগলো বারুদের অমিত তেজে ৷
মাইক্রোফোন তুলে নিলাম হাতে ৷
দ্রোহের সবটুকু আগুন ঝরে ঝরে পড়ল ৷
শহীদের রক্ত যেন তখন আমার ধমনিতে বহমান ৷
এরপর রাত হলো ৷ রাত গভীর হলো ৷ ভয়াল অন্ধকারে ছেয়ে গেল শুভ্র সফেদ শাপলার চারিপাশ ৷ শুরু হলো বুলেট দিয়ে সত্যকে দমিয়ে দেয়ার দানবীয় আয়োজন ৷ নিস্তব্ধ রাতের কালো অন্ধকারে রচিত হলো শাহাদাতের উদ্ভাসিত নতুন ইতিহাস ৷ আমি তখনো শাপলার কাছাকাছি ৷ আড়াল থেকে সব দেখলাম ৷ এক সময় বন্ধ হলো তাণ্ডব ৷ বেরিয়ে পড়লাম সেই সুযোগে ৷ মতিঝিল পীরজঙ্গীতে আদায় করলাম সালাতুলফজর ৷ আবার শুরু করলাম হাটা ৷ টিপটিপ বৃষ্টি চলছে তখনো ৷ তবে সে বৃষ্টির সাথে ছিল বারুদের ঝাঁজ ৷ রক্তের লাল ৷ আর অশ্রুর ফোঁটা ৷
হায়েনার দল ভাবলো ঘটনা শেষ ৷
আমি দেখলাম ইতিহাসের অনিঃশেষ যাত্রা ৷
৫ই মের ভয়াল রাতের নিকশ কালো অন্ধকারে জাতি বিভক্ত হলো দুই ভাগে ৷
এক ভাগ শাপলার শহিদী কাফেলা ৷
অপর ভাগ শাহাবাগী মুরতাদের দল ৷
এক ভাগ বালাকোটের মশালধারী ঈমানদার ৷
অপর ভাগ ধূর্ত ইংরেজদের প্রেতাত্না ৷
এক ভাগ পরাজিত সেনাপতি নবাব সিরাজুদ্দৌলার ভাগ্য বরণকারী ৷
অপর ভাগ হিংস্র লর্ড ক্লাইভের উত্তরসুরী ৷
এক ভাগ কারবালার হুসাইনী চেতনার পতাকাবাহী ৷
অপর ভাগ এজিদী চিন্তার উল্লাসকারী ক্ষমতাশালী… ………
মানুষ মরে যায়, ইতিহাস রয়ে যায় ৷
ইতিহাস কথা কয়…
(৫ই মে'১৬ তে লেখা পোস্ট, ঈষৎ সম্পাদিত)