07/09/2024
আসসালামু আলাইকুম,
মন্তব্য ভুল হলে,
সংশোধন করে নিবো, ইনশাল্লাহ...
‘জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের যৌক্তিকতা’
[১] জাতীয় সংগীত কোনো সৃষ্টিকর্তার ঐশীগ্রন্থ বা আসমানী কিতাব থেকে তৈরি করা গান নয় যে, এটা পরিবর্তন করলে মহাপাপ হবে। যদি বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করা যেতে পারে মানুষের প্রয়োজনে, তাহলে জাতীয় সংগীত কেন পরিবর্তন করা যাবে না। আর মানুষের মতামতের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের বহু দেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা ইতিহাস রয়েছে।
[২] সবচেয়ে মূল কথা হলো, এই গানটি বাংলাদেশের জন্য লেখা হয়েছিল না। এটি মূলত ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লেখা হয় ‘বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের’ পরিপ্রেক্ষিতে। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৭১ সালে, এজন্য উক্ত গানটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা, সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও গৌরবের কোনো কথা নেই এবং বাংলাদশের সৃষ্টির কোনো ইতিহাস এই গানে অনুপস্থিত। এই গানে মূলত প্রকৃতির প্রশংসা করা হয়েছে, যা কোনো ভাবেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
[৩] জাতীয় সংগীতটির গীতিকার ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ এবং সুরকার ‘বাউল গগন হরকরা’। কিন্তু উক্ত জাতীয় সংগীতটির রচয়িতা হিসেবে শুধুমাত্র ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই’ আমাদের মাঝে পরিচিত। আমরা অনেকেই হয়ত আজ প্রথম জানলাম যে, এই গানটির সুরকার ভিন্ন মানুষ।
[৪] অনেকে বলতে পারেন যে, তাহলে এই গানটিকে যখন জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। তখন কেউ মন্তব্য করে নি, তাহলে এখন কেন নতুন করে সমালোচনা করা হচ্ছে। এর উত্তর হলো- একটি বিষয় বা বিধান সমাজে চালু থাকলেই যে, তা নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না বা পরিবর্তন করা যাবে না, এটা কোনো বইতে লেখা রয়েছে। মানুষের জন্যই বিধান বা আইন রচনা করা হয়, এজন্য মানুষের স্বার্থে জাতীয় পরিবর্তন করাটাও যৌক্তিক। আর ইতোপূর্বেও, এই সংগীতকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
[৬] আর মজার ব্যাপার হলো, এই গানটির প্রথম লাইন (আমার সোনার বাংলা) বাদ দিলে এই গানকে পৃথিবীর যেকোনো দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যাবে। কেননা, এই গানটি যে, শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্যই তৈরি করা হয়েছে, তার প্রমাণ এই গানটিতে বিদ্যমান নাই। উদাহরণ স্মরূপ: পাশ্ববর্তী দেশ, ভারতের জাতীয় সংগীতের লাইন গুলো শুনলে বা দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, একটি দেশের জাতীয় সংগীত কেমন হওয়া উচিত। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমেই ওই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।
[৭] আমাদের দেশের বহু ইতিহাস রয়েছে, অনেক বিখ্যাত জিনিস বা ব্যক্তিবর্গ বা স্থান রয়েছে, যা বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বের কাছে অনুপম বা অনন্য করে তোলেছে, অথচ এই গানটিতে এগুলোর একটাও উপস্থিত নেই। উদাহরণ স্বরূপ: আমাদের জাতীয় নেতাদের অস্তিত্ব, দেশের মধ্যে বহমান নদ-নদী, সমুদ্র, পাহাড়ি-বরেন্দ্র ভূমি সহ আর অসংখ্য নিদর্শন সশূহ, যা বাংলাদেশের সম্পদ, অথচ এসবের কোনো তথ্য আমরা বর্তমান জাতীয় সংগীতে খুঁজে পাই না।
[৮] এবার আপনাদের একটা প্রশ্ন করি। জাতীয় সংগীত কাকে বলে? মূলত দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যে গানটি গাওয়া এবং যে গানে একটি দেশের সকল ইতিহাস ও ঐতিহ্য ফুটে উঠে, যা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত, সেই গানকেই জাতীয় সংগীত হিসেবে গণ্য করা হয়। দুঃখজনক ব্যাপার, আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত শুনলে আমাদেরই মনে হয় না যে, এটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, আর ভিন্ন দেশের মানুষ এই গান শুনলে কি মন্তব্য করবে, তা আপনারাই কমেন্ট করে জানাবেন।
[৯] যারা জাতীয় সংগীত পরিবর্তন চান না, তারা দয়া করে, উক্ত গানটিকে কেন জাতীয় সংগীত হিসেবে রাখতে চান, যৌক্তিক কারণ গুলো কমেন্ট করে জানাবেন। আর দয়া করে, এই যুক্তি গুলো দিবেন না, যেমন: আমরা ছোটবেলা থেকেই এই গান শুনে এসেছি, এই গানকে আমরা ভুলতে পারবো না, এই গানের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে, শুধুমাত্র ভারতের এক হিন্দু এই গান লিখেছে বলে এই গানকে ভুলতে পারি না.. এই রকম আবেগী কথা না বলে, যথাযথ যুক্তি পেশ করবেন। আর হ্যাঁ, এই গান নিয়ে যখন সমালোচনা তীব্র হয়েছে, তার মানে, এই গানটি এখন সংশোধন বা পরিবর্তন প্রয়োজন, তা না হলে প্রতিনিয়ত এটা নিয়ে দ্বন্দ চলতে থাকবে। আর আমরা যারা জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করার পক্ষে, দয়া করে আমাদের নিয়ে এমন মন্তব্য করবেন না যে, আমরা ভারত বিদ্বেষী বা হিন্দু বিদ্বেষী, আমরা মূলত কেন জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে চাচ্ছি, তা এখানে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছি। অন্যদিকে এই গানটির অনেক লাইন ‘ইসলাম’ ধর্মকে আঘাত করেছে। আর আমাদের দেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক দেশ। তাই আমরা কখনো চাইব না যে, আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত কোনো ধর্মকে আঘাত করুক।
[১০] এখন করণীয় কী, আমার মতে, নতুন করে জাতীয় সংগীত লেখা হোক। বর্তমানে অনেকেই উক্ত জাতীয় সংগীতকে পরিবর্তন করে, আমাদের দেশের কয়েকটি গান ও কবিতাকে নতুন জাতীয় সংগীত করার মন্তব্য করেছে। আমি সেই মন্তব্যের ঘোর বিরোধী। আমার মতে, বাংলাদেশে এখনো দক্ষ, অভিজ্ঞ, পারদর্শী সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক রয়েছে। তাই বর্তমান সরকারের উচিত দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে, জাতীয় সংগীত নতুন করে তৈরি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক। যেখানে বাংলাদেশের বিখ্যাত সব সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক ও ইতিহাসবিদ থাকবেন, যারা গবেষণা করে একটি নতুন জাতীয় সংগীত এই দেশের মানুষের জন্য উপহার দিবে, যে গানে পুরো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, সংগ্রাম, ঐতিহ্য, সম্পদের তথ্য থাকবে এবং যে গানটি কোনো ধর্ম বা জাতির প্রতি আঘাত আনবে না।
[এডিটর: শেখ মুসাফির]