24/12/2022
অর্পাকে চেনেন?
আরে অর্পা! আপনার বোন। চেনেন না ওকে?
আচ্ছা চিনিয়ে দেই।
নাম অর্পা সাহা। ময়মনসিংহের মেয়ে। বয়স ১৯/২০। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা হিদায়াত করেন। অর্পা তাওহীদের চিরন্তন সত্যকে চিনতে পারে কিছু ইসলামী বই পড়ে । আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে ভালোবেসে অর্পা ইসলাম গ্রহণ করে।
ডিসেম্বরের ৫ তারিখ ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অ্যাফিডেভিট করে অর্পা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের নাম ও ধর্ম পরিবর্তন করে। ওর নাম এখন ফাতেমা রাহমান।
কিন্তু অর্পা তার পরিবারের পক্ষ থেকে বাঁধার সম্মুখীন হয়। ওর ওপর নির্যাতন করা হয়। শিরক ছেড়ে তাওহীদ গ্রহণ কারণে পরিবারের কাছে নির্যাতিত হওয়া...সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এর সময়ের মতো পরীক্ষা।
১০-ই ডিসেম্বরে অর্পা জিডি করে। পরিবারের পক্ষ থেকে শারীরিক অত্যাচার ও হত্যার আশঙ্কার কারণে। তারপর মুসলিম বোনের ঘরে আশ্রয় নেয় ও।
সেই বাসা থেকে অর্পাকে “জিজ্ঞাসাবাদের জন্য” থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে জোর করে অর্পাকে তুলে দেয়া হয় তার বাবা-কাকার কাছে। সেই বাবা-কাকা যাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে অর্পা জিডি করেছিল!
পুলিশের কাছে বাবা-কাকা লিখিত দেয়, অর্পাকে স্বাধীনভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করতে দেয়া হবে। সবার সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হবে। সে একজন মুসলিম হিসেবে থাকবে।
অর্পার বান্ধবীর ভাষ্যমতে, বাসায় নিয়ে যাবার পর অর্পাকে পর্দা করতে দেয়া হয়নি। ইসলাম পালন করতে দেয়া হয়নি। বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে সব রকম যোগাযোগও। সেই সাথে চলছে ইসলাম ছেড়ে আসার জন্য মানসিক নির্যাতন।
অর্পার বান্ধবী ১৩ ডিসেম্বর তাকে উদ্ধারের জন্য মামলা করেন। কিন্তু ওয়ারেন্ট আসার পরও প্রশাসন তাকে উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সাম্প্রতিক ইতিহাসের দিকে তাকালে মনে হয়, এমন কোন ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনাও নেই।
এই হল অর্পার গল্প।
১১ তারিখ থেকে, আজ প্রায় দু সপ্তাহ আমাদের বোনটা বন্দী। এই দুই সপ্তাহ সে সালাত আদায় করতে পেরেছে কি না, জানি না। এই দিনগুলো, এই রাতগুলো কিভাবে কেটেছে মেয়েটার?
অর্পার জন্য আমার, আপনার কিছু কি করার নেই? একটা মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে কারণ সে বলছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ – এই মানুষটা কি আমাদের সাহায্য পাবার যোগ্য না? সাহায্য করা কি আমাদের দায়িত্ব না?
হ্যাঁ, আপনার সামর্থ্য কম। আমি জানি। আমার সামর্থ্যও কম। কিন্তু কম হলেও কিছু তো সামর্থ্য আছে। আর কিছু না হোক, আপনি অর্পার খবরটা নিজের পরিচিত সবার কাছে পাঠাতে পারবেন। সবাইকে এ নিয়ে কথা বলতে বলতে পারবেন। আমার সবাই মিলে চাইলে পুরো বাংলাদেশকে ওর কথা জানিয়ে দিতে পারবো।
মসজিদের মিম্বরে, ওয়াজের মঞ্চে, বন্ধুদের আড্ডায়, ফেইসবুকের পোস্টে কিংবা লাইভে অর্পার কথা বলতে পারেন। যারা পত্রিকাতে কাজ করেন, তারা নিউস করতে পারেন। ইউটিউবাররা তারা ভিডিও বানাতে পারেন। ইউটিউবারদের পরিচিতরা তাদেরকে এব্যাপারে কথা বলতে উৎসাহিত করতে পারেন। সেলিব্রিটিও বক্তা এবং দা’ঈরা একটা ৫ মিনিটের ছোট্ট ভিডিও রেকর্ড করতে পারেন। এতো লাইক, ভিউস, ফলোয়ার আর বই দিয়ে কী হবে, যদি আমরা একজন মুওয়াহ্হিদাহর জন্য এতোটুকু করতে না পারি?
সাধারণ মানুষদের মধ্যে যাদের প্রভাবশালীদের সাথে যোগাযোগ আছে, তারা অর্পাকে আইনী বা অন্য কোন ভাবে সাহায্য করার ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারেন। এর কোন কিছু না পারলে, অন্তত দুআকরতে পারবেন।
সীমিত হলেও এই সামর্থ্যগুলো তো একেবারে কম না, তাই না?
আল্লাহ এমন কোন বোঝা দেন না, যা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে। যা আপনার পক্ষে করা সম্ভব না, তা নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হবে না। কিন্তু যতোটুকু আপনার দ্বারা করা সম্ভব, সেটুকু আপনি করেছেন কি না – সেটা নিয়ে অবশ্যই আমাকে এবং আপনাকে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
আসুন, আমরা অর্পাকে; আমাদের বোনটাকে, সাহায্য করি। এই উম্মাহর অনেক বড় অংশের জন্য আমরা কিছু করতে পারি না। আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। সেটা নিয়ে আমাদের দুঃখ হয়, কষ্ট হয়। কিন্তু অর্পার জন্য কিছু করা সম্ভব। আমরা অন্তত সেই চেষ্টাটা করি। আসুন অর্পার জন্য আওয়াজ তুলি।
আল্লাহ ফাতিমাকে তাওহীদের ওপর, দ্বীনের ওপর দৃঢ় রাখুন। তাকে শিরক এবং কুফর থেকে হেফাযত করুন। আল্লাহ আল-কাহির, আল-কাহির, তিনি সকল কিছুর ওপর শক্তিশালী। যদি আমরা আমাদের চেষ্টাটুকু করি, তাহলে তিনি চাইলে অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব।
লেখা : আসিফ আদনান