কুমিল্লার প্রতিধ্বনি-The Echo of Comilla

কুমিল্লার  প্রতিধ্বনি-The Echo of Comilla আপনার এলাকার কোন ছবি,ভিডিও অথবা প্রতি
(12)

কুমিল্লা জেলাঃ
কুমিল্লা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা-চট্রগাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত একটি মহানগরী। কুমিল্লা মেট্রোপলিটন শহরের আয়তন ৫৩.০৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষের উপর কুমিল্লা শহর হলো একটি বিস্তৃত শহর। কুুমিল্লা শহরটি প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগীয় সদরদপ্তর হবে। ৬টি জেলার প্রাণ কেন্দ্র হলো কুমিল্লা শহর।


নামকরণঃ
বর্তমান

কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ একটি জেলা। শুরুর দিকে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত হলেও পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শন‍াদি থেকে জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল।

ঐতিহ্যঃ
শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে সুপরিচিত। রসমালাই নামক বিখ্যাত মিষ্টি কুমিল্লায় তৈরি করা হয়। কুমিল্লার রসমলাই সারাদেশে এক নামে পরিচিত। দুধ, ছানা ও চিনি সমন্বয়ে তৈরি এ মিষ্টান্ন। যার প্রচলন কুমিল্লাতেই শুরু হয়। অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি প্রস্তুতের জন্যও কুমিল্লা বিখ্যাত। এছাড়াও কুমিল্লার বিখ্যাত খদ্দর (খাদি) শিল্পের জন্য। ১৯২১ সাল থেকে খদ্দর এ অঞ্চলে প্রচলিত। কুমিল্লার খদ্দর শিল্পগত উৎকর্ষে প্রচুর খ্যাতি লাভ করেছিল। এখান থেকে খদ্দর কাপড় কলকাতা ও বোম্বে পাঠানো হত। বাঁশের বাঁশির জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রাম উপমহাদেশের বাঁশের বাঁশির জন্য সুবিখ্যাত; শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশিপাড়ার বাঁশি বর্তমানে দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে সগৌরবে। এছাড়াও তাঁত শিল্প, কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প ও কারু শিল্প, ময়নামতির শীতল পাটি ইত্যাদি স্ব-স্ব ঐতিহ্যে স্বকীয়তা আজও বজায় রেখেছে।

উপজেলাঃ
কুমিল্লা জেলায় ১৭ টি উপজেলা বিদ্যমান
আদর্শ সদর,কুমিল্লা সদর দক্ষিণ,চৌদ্দগ্রাম,লাকসাম,
বরুড়া,নাংগলকোট,মনোহরগঞ্জ,চান্দিনা,তিতাস,দাউদকান্দি,হোমনা,মেঘনা,মুরাদনগর, দেবিদ্বার,বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া ও লালমাই

পর্যটনঃ
কুমিল্লাতে বহুসংখ্যক পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। কুমিল্লার লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। এখানে রয়েছে শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া, চন্দ্রমুড়া, রূপবন মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, সতের রত্নমুড়া, রাণীর বাংলার পাহাড়, আনন্দ বাজার প্রাসাদ, ভোজ রাজদের প্রাসাদ, চন্ডীমুড়া প্রভৃতি। এসব বিহার, মুড়া ও প্রাসাদ থেকে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। ময়নামতি একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। ময়নামতি জাদুঘরটি একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯২১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভারতের নেতা মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লায় এসেছিলেন। কুমিল্লাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের কবর ও ওয়ার সেমেট্রি রয়েছে। বতর্মানে রাজশে পুর ইকোপার্ক এবং তদসংলগ্ন বিরাহিম পুরের সীমান্তবর্তী শাল বন পর্যটন স্পট হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।


কুমিল্লার কিছু আঞ্চলিক ভাষাঃ
আউতকা - হটাত
নাইল্লা শাক – পাট শাঁক
হউরা - সরিষা
মাইল্লা –ডাটা শাক
কৈডা- চিচিঙ্গা
কনি দেম – মাইর দিব
লাডুম – লাঠিম
তিরাস- তৃষ্ণা
আদামুরকি- থানকুনি
বয়রা-বহেরা
বেহাইয়া গাছ- ঢোল কলমি
হুমাস/নিয়াষ - নিশ্বাস
ঘুন্ডি - ঘুড়ি
ছিফা – বেত
মেন্নত – ক্লান্ত
পিছলা গোডা - বাবলা ফল
হজেরপাতা - বাংলা ধনিয়া
হল্কা – ইংরেজি নাম circuma
হুনাল ফুল- সোনালু ফুল
অক্করে- একেবারে
টুকটুহি- টিকটিকি
পইক্কা -পাখি
কো-কোথায়
কোন মুহুল/ কোন ফাইল-কোনদিকে
কান্দা- পাড়
মুছল্লা- নামাজের পাটি
ডেহি- ঢেঁকি
আইতাম না/যাইতাম না/খাইতাম না/ পারতাম না - আসবো না /যাবো না/খাব না/ পারবো না
পিরা - মাটির ঘরের বাইরের দিকে চারপাশে বাইরের দিকে অল্প উঁচু basement
রইদ- রোদ
হুমা- শশা
হাফ- সাপ
পিরফা- পিঁপড়া
তেতুই – তেঁতুল
খারি/ওরা- ধান রাখার বেতের বড় ঝুড়ি
রসা – তরকারীর ঝোল
জিংলা – সরু কাঠি
বাগইত্যা- ভাগ্যবান
হাক – শাক
বিল্লা – জন্য ( সাধারণত গ্রাম্য ক্রিয়াপদের পরে ব্যবহৃত হয় )
বেটকি – হাসি
বেটকাবেটকি – হাসাহাসি
খিচ্চালায়াম – মেরে দিব
বরিছিবা – বড়শি
হেন – ভাতের মাড়
মাদাইন্নালা – বিকাল বেলা
সহাইল্লালা-সকাল বেলা
রাউতকা- রাতে
হাইনজালা-সন্ধ্যা রাতে
ততা-গরম
পইডা- গ্রামের ঘরের বাইরে বসার জায়গা/দেউরি
খাডি/ডেফা -ক্ষেতের পাশে মোটামুটি বড় জলাশয়।
ঘাডা - গ্রামে অনেকগুলো ঘর নিয়ে একটা বাড়ি ।আর বাড়ির ঢুকার মুখে যে খোলা জায়গা থাকে সেটাকে বলে ঘাডা।
পিছা – ঝাড়ু
হলা পিছা - শলার ঝাড়ু
গয়াম - পেয়ারা.
পাহাল - চুলা.
রাতা - মোরগ.
আতাল - হাস মুরগীর ঘর.
আয়াম - কপাল.
আয়াম - আসব.
যায়াম - যাব.
হোরা দে - ঝাড়ু দাও.
কাফাইট - চশমা.
বিছুন- হাত পাখা.
তেইল্লাচোরা - তেলাপোকা.
আগার দিয়া - সামনে দিয়ে.
কাইক দে - পা বারাও/ হাট.
আডে না - খাপ খায় না.
তেলকা - ঠান্ডা.
পানসা - জলবসন্ত
উলুশ - ছারপোকা.
আদিগিল্লা = সবকিছুতে যে বেশি বেশি করে
হুইততা= শুয়ে
বইয়া= বসে
মুইত্তাম= প্রশ্রাব করবো

23/12/2023
13/12/2023

মেঘনা-গোমতী সেতু-২
দাউদকান্দি, কুমিল্লা
কুমিল্লা-Comilla

02/12/2023

কুমিল্লার কোন কোন উপজেলায়
ভূমিকম্প অনুভব হয়েছে?

16/10/2023

মেঘনা নদীতে নৌকা ভ্রমন

12/10/2023

সূর্যাস্ত!

11/10/2023

আমি কখনো আমার বাবা ভাই কে ছেঁড়া লুঙ্গি পড়তে দেখিনি।
কিন্তু আমার স্বামীকে দেখেছি ছেঁড়া লুঙ্গি কিভাবে পেঁচিয়ে আড়াল করে পড়তে হয়।

সেইদিন গুলোতে আত্মীয়রা সবাই হারিয়ে গিয়েছিলো। চিরচেনা মুখগুলো ঝাপসা হয়েছিলো।

যেদিন ঘরে রান্না করার মতো কিছু থাকতো না, সেদিন কাঁচা মরিচ আর পেয়াজ ভেজে ভর্তা করে গরম ভাত মাখিয়ে খেতাম।

আমার ভাইয়েরা তখন খোঁজ নিতে ভয় পেতো।

মাস্টার্স শেষ করা ছেলেটা যখন চাকরি না পেয়ে গার্মেন্টসে অল্প বেতনের চাকরিতে ঝুঁকেছিলো, আমার বাবার বাড়ির আত্মীয়রা তার জন্য লজ্জায় কুঁকড়ে যেতো।

সেবার ঈদের পরদিন বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার স্বামীর অবহেলা পরিমাণে এতটায় বেশি ছিলো যে সে বাড়িতে এক বছরের মতো আর পা রাখিনি।

আমার তিন বছরের ছেলেটা ভাসুরের ছেলের সাথে খেলতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে বাম পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলো। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ডাক্তার, ঔষুধ ভালো চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য ছিলো না। বাধ্য হয়ে আমার স্বামী ভাসুরের কাছে হাত পেতেছিলো। কিন্তু কিঞ্চিৎ সাহায্যও কেউ করেনি। নিরুপায় হয়ে অবশিষ্ট কানের দুল জোড়া বিক্রি করেছিলাম।


আলহামদুলিল্লাহ আজ আমাদের সব আছে। দূর্দিন কাটিয়ে উঠেছি। প্রিয় থেকে প্রিয় মানুষগুলোর মুখ চিনে রেখেছি।
গত সপ্তাহে আমার ভাই এক জোড়া ইলিশ মাছ নিয়ে বাসায় এসেছিলো। ভাইয়ের বউ প্রায়শই কল দিয়ে বলে কবে যাবো বেড়াতে।

ভাসুরের শরীরে নানা ধরনের রোগের উৎপাত। চিকিৎসার জন্য গত মাসেও টাকা পাঠানো হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার স্বামীর ব্যবসাটাও বেশ বড়-সড় হয়েছে। সাথে মান-মর্যাদা, প্রতিপত্তির বুঝি কমতি নেই। আত্মীয়রা আমাদের নিয়ে এখনও কানাঘুঁষা করে তবে হয়ত ইতিবাচক কিছু।

আমার স্বামীর সেই ছেঁড়া লুঙ্গিটা আজও আমি আলমারিতে অনেক যত্নে তুলে রেখেছি৷ সেদিনও লুঙ্গিটা দেখলে যতটা কষ্ট হতো আজও ঠিক ততোটাই কষ্ট হয়।
ব্যবধানটা শুধু দুর্দিন আর সুদিনের।

collected

08/10/2023

২২-২৮ বছর এই বয়সটা খুব অদ্ভুত একটা সময়।

এই সময়ে দেখবেন কারো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, কেউ জীবন নিয়ে খুব স্ট্রাগল করছে, কেউ হঠাৎ করে এই কম বয়সে সফলতার দেখা পাচ্ছে আবার কেউ কিছুই করতে না পেরে খুব হতাশ হয়ে যাচ্ছে।

কেউ এই বয়সেই পুরো সংসার চালাচ্ছে, কেউ খুব ফুর্তিতে জীবন কাটাচ্ছে। যাকে ছোট থেকে অবাধ্য মনে হত সেও এই বয়সে খুব দায়িত্বশীল হয়ে যাচ্ছে।

আবার যাকে ছোটবেলা থেকে খুব মেধাবী মনে হত, স্কুল কলেজ সবজায়গায় সেরাদের কাতারে থাকত তারা অনেকের ভীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

আবার যাকে স্কুল বা কলেজ লাইফে কোন দামই দিতেন না। সে এখন খুব ভালো পজিশনে আছে। অল্পতে অনেক ভালো কিছু করে ফেলেছে। অথচ তার থেকে আপনার যোগ্যতা কোন অংশেই কম ছিল না।

খুব আজব এক সময় এই ২২-২৮ বছর বয়সটা।🥲

কুমিল্লার কোন উপজেলার ভাষা সবচেয়ে সুন্দর?
08/10/2023

কুমিল্লার কোন উপজেলার ভাষা সবচেয়ে সুন্দর?

08/10/2023

১. কয়লা দিয়ে কখনো দাঁত মেজেছেন?

২. লাইফবয় সাবান দিয়ে চুল ধুয়েছেন?

৩. মুখে তিব্বত স্নো, ট্যালকম পাউডার মেখেছেন?

৪. মাথার চুলে শর্ষের তেল দিয়েছেন?

৫. কলমের খাপ দিয়ে কান চুলকেছেন?

৬. টিউবওয়েলের তলায় বসে গোসল করেছেন (উঠতে গিয়ে মাথায় বাড়ি খেয়েছেন)?

৭. স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতা ল্যাম্পোর আলোয় গলিয়ে জোড়া দিয়েছেন?

৮. কলাপাতায় খেয়েছেন মাটিতে লাইন ধরে বসে?

৯. কালোবাজারির কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে টিকিট কিনে সিনেমা দেখেছেন?

১০. মুচির কাছে ফুটবল নিয়ে গিয়ে ব্লাডারের লিক সেরেছেন?

১১. সুই গরম করে কান ফুটো করেছেন?

১২. টিউবওয়েলের মুখ হাতে চেপে ধরে নলে পানি জমলে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়েছেন?

১৩. ইস্তিরি চুলায় রেখে গরম করেছেন বা ভেতরে কাঠকয়লা রেখে পাখা দিয়ে বাতাস করেছেন?

১৪. চুলার আগুনে বাঁশের চোঙ দিয়ে ফুঁ দিয়েছেন?

১৫. তালের আঁটি মাটিতে পুঁতে রেখে ভেতরের নরম শাঁস খেয়েছেন?

১৬. ল্যাম্পোর আগুন আর শর্ষের তেল দিয়ে নিজের কাজল নিজে বানিয়েছেন?

১৭. হাত-পা কেটে গেলে গাঁদা ফুলের পাতা কিংবা দূর্বা ঘাস পিষে লাগিয়েছেন?

১৮. রিকশার পাদানিতে বসেছেন?

১৯. সাইকেলের রডের ফাঁকে ডান পা ঢুকিয়ে বাঁ পা প্যাডেলের ওপর রেখে সিটের ওপরে ডান বগল রেখে বাঁ হাত হাতলে ধরে সাইকেল চালিয়েছেন?

গোমতী সেতু,দাউদকান্দি, কুমিল্লা  #শেয়ার
22/09/2023

গোমতী সেতু,দাউদকান্দি, কুমিল্লা
#শেয়ার

20/09/2023

ক্ষুদে ডাক্তার কর্তৃক ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ পরীক্ষা

গোমতী সেতু,দাউদকান্দি, কুমিল্লা
15/09/2023

গোমতী সেতু,দাউদকান্দি, কুমিল্লা

13/09/2023

গোমতী ও মেঘনা নদী ভ্রমণ

26/08/2023

"বউ"- পর্ব১
বিয়ে করে বাসায় আসলাম ঘন্টাখানেক হবে।বাসা ভর্তি মেহমান।রাত ১১ টা । আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম কখন বউকে আমার ঘরে দিয়ে যাবে।
সবাই খেয়েদেয়ে শোবার জন্য চলে গেলো।বড় ভাবি আমাকে দেখে কেমন জানি মুচকি হাসতে লাগো।
-আজকে কি রসিক দেবরের বাসর রাতে বিড়াল মারা হবে নাকি?
-আমি একটু লজ্জায় পরে গেলাম।
-কী যে বলো ভাবি!
-আচ্ছা, আচ্ছা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
অবশেষে আসলো সেই সময়।
আমি আমার রুমেই বসে ছিলাম।কিছুক্ষন পর দেখলাম ভাবি নতুন বউকে নিয়ে আমার রুমে আসতেছে।রুমের ভিতর খাটে বসিয়ে দিয়ে যাবার সময় আরেকবার মুখ ভেংচি মেরে বলল-
-এই যে রসিক দেবর,বিড়াল মারবেন ভালো কথা, আস্তে মাইরেন,কষ্ট দিয়ে মাইরেন না।
আমি ভাবলাম ভাবির কি লজ্জা সরম চলে গেলো আজ!
যাহোক দরজাটা লক করে মাথার টুপিটা টেবিলে রেখে খাটের এক প্রান্তে গিয়ে বসলাম।
খাটের এক কোণে বসে আছে শাড়ি পড়া লম্বা ঘুমটা দেওয়া একটি মেয়ে।নাহ, মেয়ে নয়।সে আমার বউ-আমার অর্ধাঙ্গী।
আমি উঠে দাড়ালাম।প্রচন্ড গরম লাগতেছে!আজ সারাদিন শেরওয়ানি পড়ে আছি।পোষাক খুলে হালকা পোষাক পড়ে নিলা।
খাটে গিয়ে বসলাম।একটু এগিয়ে গেলাম বউয়ের দিকে।কি করবো বুঝতেছিনা।
একটু কাশি দিলাম।বউয়ের সারা শব্দ নেই।নিজেই আরো এগিয়ে গেলাম।সাহস করে বউয়ের ঘুমটা ওঠালাম।ঘুমটা উঠিয়ে নিজেই অবাক হলাম। নিজেই নিজে অবাক হলাম।মানুষ কি এত অপরুপ হতে পারে! আগে লোকমুখে শুনেছি মানুষকে পরীর মত নাকি লাগে! আজকে নিজ চোখে দেখলাম।মানুষ রুপে পরী।
বউয়ের হাতে হাত রাখলাম।কিন্তু বউ ইতস্তত শুরু করলো।ভাবলাম হয়ত প্রথম স্পর্শ পেয়েছে তাই।আমি একটু এগিয়ে গেলাম।তার গা গেসে। তার কপালে চুম্বন করার আগ্রহ নিয়ে মাথাটা এগিয়ে নিলাম।
এবার সে একটু নড়ে চড়ে বসল।
-ছিঃ ছিঃ আপনি আমাকে চুমু দিলেন কেন?
-কেন আমি কি দিতে পারি না?
-না,পারেন না।
আমি বললাম, দেখো বউ।আজ থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী।তোমার শরীরের প্রতিটি অংগে আমার হক রয়েছে। আমি তোমাকে ছুতেই পারি।
দেখুন মশাই,এত নীতি কথা বলবেন না আমার সাথে।আমি বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছি।হয়ত আমি আপনার বউ তবুও এ শরীরের আশা কোনদিন কল্পনা কইরেন না।এখন সরুন আমি ঘুমাবো।খুব ঘুম পাইছে।
আমি অবাক বনে গেলাম।নিজের স্ত্রী,অথচ আজ তার উপর আমার অধিকার নেই।আমার মত হয়ত পুরা কপাল এই দুনিয়ায় নাই।যাহোক খাট থেকে একটা বালিশ আর কাথা নিয়ে নিচে বিছানা তৈরি করলাম।বউ একটুও অবাক হলো না।সে নিজের মত করে ঘুমিয়ে পরল।
সে এমনভাবে ঘুমিয়ে আছে আমার দিক থেকে তার চেহেরাটা দেখা যায়।একবার ভাবি হয়ত আমার মত ভাগ্যবান কেউ নেই,এজন্য এমন সুন্দরী একটা বউ পেলাম।পরক্ষনে আবার পুরা কপালও কারণ আজ সবাই জানে আমার বাসর রাত কিন্তু আমি এক অবাগা যে বাসর রাতের কোন ছুয়াই পেলাম না।
কিন্তু আদৃতা, এমন করবে কেন? নিশ্চই কোন কারণ আছে? তার কি আমাকে পছন্দ হয়নি নাকি কারো সাথে সম্পর্ক আছে! আমাকে এটা বাহির করতেই হবে!
এসব আজেবাজে চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি।
সকালে ঘুম ভাংগল এক মিষ্টি সুরে।পরক্ষনেই দেখি আমার সামনে একটা পরী।সে আর কেউ নয় আমার বউ।
ওঠেন,ওঠেন।গোছল সেরে নেন।
আমিত অবাক! গোছল করবো কেন? গোছল করার ত কোন কিছু হয়নি আমার বাসর রাতে।
ওঠেন না! ওয়াশরুমে লুংগি-গামছা দেওয়া আছে।তারাতাড়ি গোছল সেরে নেন।সবাই অপেক্ষা করতেছে নাস্তা করার জন্য।
দরজার ওপাশ থেকে কে যেন খিক খিক কাশতেছে।ভাবলাম ভিতরে আসবে।আমি জলদি বিছানাপত্র ঘুছিয়ে খাটের উপর বালিশ-কাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
বউ দরজা খোলার জন্য এগিয়ে গেলো।খোলে দেখল বড় ভাবি!
ও, ভাবি আপনি?
ডিস্টার্ব করলাম মনে হয়।
না, ভাবি কি যে বলেন! আরে বুঝি বুঝি আমাদেরওত এসময় গেছে তাই না?
সারাক্ষন শুয়ে থাকতে মনে চায়। যাহোক তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো নাস্তা করবে তোমরা।
যাও ভাবি আসতেছি।
কি যে অবস্থা, কিছুই হয়নি কিন্তু সবাইকে মিথ্যে অবস্থা বুঝানোর জন্য আমার গোছল করতে হবে।
গোছল সেরে দুজন ডাইনিং রুমে গেলাম নাস্তা করতে। দাদি কেন জানি মুচকি হাসতেছে। কিরে, ছোট জামাই আজকে কেমন হলো ঘুম?
ভালো দাদি!
শুধু ভালো?
হুম।
ঘুম ভালো হলেত সমস্যা?
কি যে বলো দাদি! ঘুম ভালো হলে ত ভালোই বলে সবাই।
আরে বোকা এই রাতে ত ঘুম হওয়ার কথা না।ঘুম যেহেতু ভালো হয়েছে নিশ্চই কোন সমস্যা আছে।
-কি বলো আদৃতা?
-না,দাদি তেমন কিছু না।
তাহলে কি দাদি সব কিছু আত করতে পেরেছে? আগের দিনের মানুষ অনেক কিছুই বুঝতে পারে।যাহোক তারাতাড়ি খেয়ে বের হয়ে গেলাম।যাওয়ার সময় মাকে বলে গেলাম একটু পাশের বাজারে যাই বন্ধুদের সাথে কাজ আছে।
সকালে বের হয়ে বাসায় আসলাম বিকাল ৩ টায়। আম্মা বকাঝকা করতেছে।এদিকে দাদিত হৈচৈ করে কাহিল।বিয়ের বছর নাকি হিসাব নিকাস করে চলতে হয়।
আমি মনে মনে ভাবলাম, বিয়ে। হয়ত বাহ্যিক দিক দিয়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু মনের মিল আদৈ সম্ভব কিনা জানিনা।
সোজা আমার রুমে গেলাম।
কোথায় ছিলেন এতক্ষন?
চুপ করে রইলামম।
বললেন না কোথায় ছিলেন?
ছিলাম এক জায়গায়।
বলা যায় না?
বন্ধুদের সাথে।
-বন্ধুদের সাথে এতক্ষন?
-হুম।
-আচ্ছা,চলুন খাবার দেই আপনাকে অনেক সময় হয়েছে।
-খেয়ে এসেছি।
-খেয়ে এসেছেন! একবারও ভাবলেন না?
-কারজন্য ভাববো?
-কেন আপনার বউ কি নাই?
-হুম,বউ.......(কাগজে কলমে বউ....)
-শুনুন আমি আপনার বউ, আমার কথাও ত আপনার কিছু শুনা লাগবে।এই বড়-দুপুরে বের হবেন না।নাহয় সংসারে অমংগল হয়।
আমি ভাবলাম অমংগল! অমংগল ত আমার লেগেই আছে।বিয়ে করলাম কিন্তু বাসর করতে পারলাম না।
আমি শরীর কাত করে শুয়ে পরলাম।বউ আবার জিজ্ঞেস করল খবার খাবো কিনা।আমি খানিকটা বিরিক্তসহকারে মান করে দিলাম।বউও কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।বউ হয়ত বিষয়টা আত করতে পেরেছিল গতকাল রাতের ব্যাপারটা। নতুন বউ আর নিজের দোষ ছিল বিধায় কথা বাড়ায় নি।
সারাটি বিকাল শুয়ে থাকলাম।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে দাদী আমার রুমে প্রবেশ করল।
কিরে এই অবেলায় শুয়ে আছত।ওঠ,সন্ধ্যায় ঘুমানো ঠিক না।
-যাও দাদী, আমার ভালো লাগছে না।
-কিরে,কিছু হইছে, শরীর খারাপ?
-না দাদী?
-তাহলে কি বাসর রাতে বিড়াল মারা হয়নি? আচ্ছা দাড়া বউমাকে এখনই বকে দিতেছি।
-না,দাদী কিছু না।
-আরে বুঝি বুঝি।বয়স ত আর কম হলো না।
-না দাদী তেমন কিছু না।
-কিছু না হলেই ভালো।
দাদী চলে গেলে আর কিছুক্ষন শুয়ে থাকলাম।(চলবে)

27/07/2023

-হ্যালো অসীম বাবা কইরে তুই?
-মা,আমি ত অফিসে। কেন কি হয়েছে?
-তুর বাবা স্ট্রোক করেছে! বাপ,তারাতাড়ি বাসায় আয়।অসীমের মা মোবাইলে অপর প্রান্তে কাদো কাদো কন্ঠে ছেলেকে খবরটা জানায়।
-কী বলছো মা!
-হ্যা বাবা ,তারাতাড়ি বাসায় আয়।
অসীমের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে।পৃথিবীটা যেন তার চারপাশে ঘুরছে। অসীম কি করবে না করবে ভেবে পায় না।এদিকে অফিসে অনেক কাজ!
বসকে ছুটির জন্য কিভাবে বলবে সে!একটা মিটিংও রয়েছে আজকে সন্ধ্যায়।তবুও সাহস করে বসকে বলে বসে আজকে তার ছুটি লাগবে।
বস প্রথমে একটু কড়া কথা বললেও সব শুনে ছুটি দিয়ে দেয়।
অসীম, অফিসে ব্যাগটি হাতে নিয়ে দ্রুত রওনা দেয় বাড়ির উদ্যেশ্যে।
খবরটা শুনে যেন আনমনা হয়ে যায় তাই মোবাইল চেক করতেও ভুলে গেছে সে।এর মাঝে অনেক কল আসে বাড়ি থেকে।
-আমি আসছি আর মাত্র ১০ মিনিট লাগবো।(মাকে জানায় অসীম)
তোমরা আব্বার আগের চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে রেডি হও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
-একটু তারাতাড়ি আয় বাবা।
-আচ্ছা, মা।
বাড়ির কাছে এসে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে রুমে যায় অসীম।বাহিরে থেকেই কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। মা আর ছোট বোন আব্বার পাশে বসে কান্নাকাটি করতেছে।
এসময় কান্নাকাটি করলে হবে!তারাতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।অসীম অনেকটা যেন দমকের সুরেই বলে।
বাবার যেই অবস্থা ঢাকায় নিতে ত অনেক সময় ব্যাপার,তাহলে কী করবে সে?
সিন্ধান্ত হলো আগে উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স নিয়ে যাবে পরে ডাক্তার যা বলবে সে চায় অনুযায়ী নাহয় ঢাকায় নেওয়া যাবে।
অসীম দৌড়ে রাস্তা যায় কোন অটো বা সি এন জি পাওয়া যায় কিনা । অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেও কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না।অসীমের চোখে কান্না কান্না ভাব।তাহলে কি তার বাবাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে পারবে না? তাহলে সে সমাজ ও পরিবারের কাছে বড়ই অপরাধী হয়ে যাবে!
এদিক ওদিক খোজার পর একটি অটোওয়ালা দেখতে পেল।
-এই অটো,এই অটো!
-জ্বি মামা?
-উপজেলা হাসপাতালে যাবেন?
-না মামা,হাইওয়ে রোডে উঠা নিষেধ। পুলিশ দেখলে ঝামেলা করে।
-চলেন না মামা, একজন সিরিয়াস রোগী নিয়ে যাবো। পুলিশ ধরলে বুঝাইয়া বলবো নে।
-যাওয়ার সময় কোন সমস্যা নেই মামা।আসার সময় রোগী না থাকলেই ধরবে।
-মামা ভাড়া নাহয় বাড়ায় দিবো তবুও চলেন।
-পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে এরচেয়ে বেশি জরিমানা গুনতে হয়।যাহোক আপনি যেহেতু রোগী নিয়ে যাবেন,আল্লাহ ভরসা চলেন।

-ধন্যবাদ মামা, ঐ গলিতে আমার বাসা।একজন মুরব্বি মানে আমার বাবাকে নিয়ে যেতে হবে।
-আইচ্ছা।
সবাই ধরাধরি করে অসীমের বাবাকে অটোতে উঠিয়ে দেয়।অসীম এক হাত বাবার মাথার নিচে আর আরেরক হাত বাবার কোমরে ধরে আছে।এদিকে তার বাবা দাত খিটে আছে।তারাতাড়ি হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে!
-তারাতারি করুন না মামা।
-মামা,আমিত ফুল স্পিডে চালাইতেছি।একটু ধৈর্য ধরেন।
অটোতে অসীমের মা কান্নাকাটি করতেছে।
-মা,আপনি কান্দেন কেন।আল্লাহকে ডাকুন।ইনশাআল্লাহ আব্বার কিছুই হবে না।
অটোওয়ালা অটো থেকে নেমে পরে।
-কী হয়েছে মামা?
-মামা,কী যেন সমস্যা করতেছে।আমি দেখতেছি, চিন্তা করবেন না।
-চিন্তা করতাম না? আমার আব্বার এই অবস্থা আর আপনি বলেন চিন্তা করতাম না!তারাতাড়ি করেন।
অটোওয়ালা মিনিট দশেক সময় ব্যয় করলেও ঠিক করতে পারলো না।এদিকে অটোতে মা আর বোন কান্না করতেছে।
-আসলে মামা আপনার অটোতে উঠাই ভুল হয়েছে।
-মামা,একটু অপেক্ষা করুন। ঠিক না হলে অন্য ব্যবস্থা করে দিবো।
-আপনি কথা বলেন কেন? কাজ করুন।
কিছুক্ষন পর অটোওয়ালা বলে।
-মামা ঠিক হবে না মনে হয়।কী সমস্যা খোজে পাচ্ছি না।
অসীম অটো থেকে নেমে রেগে গিয়ে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় ড্রাইভারের গালে! শালা গরীবের বাচ্চা,কাজ জানো না আবার অটো চালাতে আসো!
কি করলো অসীম। সবাই যেন এই বিপদেও তার কান্ড দেখে হতবাক।
অসীমের চরের আঘাত যেমন অটোওয়ালা অবাক হয়ে যায়।দুচোখ বেয়ে এমনি জল বইতে শুরু করে।তবুও তার মুখে কোন প্রতিবাদ নেই।কারন তারা যে শ্রমিক।
আসোলে অসীম ইচ্ছে করে করেছে নাকি হিতাহিত জ্ঞান ছিল না তাই এই কাজ করেছে সেটা অসীমও ভালো জানবে।
-অটোওয়ালা যেন মার খেয়ে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।সে চুপ করে আবার অটো ঠিক করতে চলে যায়।
মিনিট ৫ এর পর বলে উঠে মামা উঠেন।(এবার স্পষ্ট তার চোখের কোনের জল দেখা যাচ্ছে।)
অসীম এখন কিছুটা নিজেকে অপরাধী ভাবতে থাকে।যদিও তার এই কাজটা করা ঠিক হয়নি।
১০ মিনিট পর হাসপাতালে চলে আসে অটো।
বাবাকে ধরাধরি করে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
-মামা,ভাড়া কত?
-দেন, আপনার ইচ্ছা।
-আরে বলেন না কত?
-মামা,আপনি ইনসাফ করেই দেন।
আবার রেগে যায় অসীম
আপনাদের না এটাই সমসা, ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেন।
-না মামা,আপনি যত দিবেন ততই নিবো।
অসীম পকেটে হাত দিয়ে দেখে তার মানিব্যাগ নাই!
-কী হলো,কোথায় রাখলাম মানিব্যাগ!বোধহয় বাসায় ফেলে রেখে এসেছে।
অসীম দৌড়ে যায় মা আর বোনের কাছে তারা টাকা নিয়ে আসছে কিনা।
-মা,আপনার কাছে কিছু টাকা আছে?
-কেনরে,কি হয়েছে?
-আমিত মানি ব্যাগ বাসায় ফেলে আসছি।মোবাইলে বিকাস আছে কিন্তু দোকান ত আশেপাশে দেখছি না।
-বাবা,আমরা ত তুর বাবার এই অবস্থা দেখে এক কাপরে চলে আসছি।টাকা ত সাথে নেই বাবা!
-কী যে করি!যাহোক এটার একটা সমাধান ত করতে হবে।এদিকে মা ডাকতেছে, বাবাকে ডাক্তারও দেখাতে হবে।
-সমস্যা নাই ভাই আপনি যান।আফনের আব্বাকে ডাক্তার দেখান।কোনদিন দেহা হইলে টাকাটা দিয়ে। আর না দিলেও সমস্যা নাই দাবী রাখবো না।
-আসলে মামা....
-বুঝছি মামা।আমরা গরীব গতে পারি কিন্তু আমাদেরও ত মন আছে।পরিবার আছে।আজকে আফনের জায়গায় যদি আমার বাবা হত আর আমিও যদি এরকম বিপদে পরতাম!
-আসলে মামা,আমিইই অপরাধ করেছি।অন্যান্য ড্রাইভারদের মত আপনাকেও ভেবেছি।আপনার যে এত বড় মন আগে জানতাম না।আপনাকে কত কটু কথা বলেছি, মেরেছিও সেই আপনি আজ আমার থেকে কোন টাকা নিচ্ছেন না।ভালো থাকুন মামা।কোনদিন দেখা হলে অবশ্যই টাকাটা ফেরত দিবো। আসার সময় বুকে জড়িয়ে নেয় ড্রাইভারকে সে।
-আচ্ছা, মামা আসি ভালো থাকেন।
অসীমে ড্রাইভারের যাওয়া দেখতে আর ভাবতেছে আমরা শুনে যা ভাবি,দেখেও অনেক সিন্ধান্ত নেই বা কারো সম্পর্কে হুট করে সিন্ধান্ত নেই যা মাঝেমাঝে আমাদেরও ভুল হতে পারে।যা ড্রাইভার মামা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন।মনে মনে হাজারো সালাম দিলেন ড্রাইভার জাতিকে।ভালো থাকুন মামা।ভালো থাকুক আপনার মত হাজার হাজার ড্রাইভার।

13/07/2023

"তুই বেঈমান ও স্বার্থপর" পর্ব-১

-নীল?এই নীল? তুর ত মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে! কি হয়েছে তুর?(নীল প্রচন্ড কাশতে থাকে।কফের সাথে জমাটবাধা লাল খয়েরী রক্তও বের হচ্ছে)
-কিছু না দোস্ত(নীল হয়ত বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে)
-না,দোস্ত কিছু একটা হয়েছে তুর।হালকা জ্বরও আছে দেখি।
-নারে,তেমন কিছু না।তুরা শুধু বাহ্যিক রক্তটাই দেখলি! এই হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটা কেউ দেখলি নারে?আসলে সব কান্নার যেমন আওয়াজ শোনা যায় না,তেমনি সব রক্তক্ষরণও দেখা যায় না।
এই বলে নীল সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।হাটার সময় ছেলেটা যেন একিয়ে বেকিয়ে পরে যাচ্ছিল।শরীরটার ভিতর কিছুই নাই মনে হচ্ছে।শরীর থেকে শার্টটি খুললে হয়ত হাড়গুল্য গুনা যাবে।ছেলেটার সুঠাম দেহটি আজ কি অবস্থা হয়েছে!বছরখানেক আগে যদি নীলকে কেউ দেখে থাকে আজ এই নীলকে চিনতে অনেকের কষ্ট হবে।চেহারাও যেন ফ্যাকাসে ধরে গেছে।ধরবে না কেন।কোন যত্নই ত নেয় না ছেলেটি।দিন-দুনিয়ার কিছুই খেয়াল নেই তার।দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছে।
-কোথায় যাস এখন?
-সামনেই।চল আমার সাথে যাবি।

হাটতে হাটতে তাদের বাড়ির পুকুর পাড়ের দিকে রওনা দেয়।এটা তার খুব প্রিয় জায়গা।প্রায় এখানে এসে বসে থাকে নীল।মন ভালো কিংবা খারাপ থাকলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করে।মাঝে মাঝে খোলা আকশের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে কি যেন বলতে থাকে।কেউ তার কথা না শুনলেও আকাশ নাকি তার কথা শুনে।কত রাত এখানে এসে পুকুরপাড়ে বসে নিশিতার সাথে মোবাইলে কথা বলে রাত পাড় করেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাদতে থাকে নীল।আর মুখ থেকে বিড়বিড় করে বলতে থাকে-
"হে, আল্লাহ কি অপরাধ করেছিলাম?আমাকে কেন এত বড় সাজা দিবে?আমি আর পারছি না।আমি ত সত্যিই ভালোবেসেছিলাম নিশিতাকে।তাহলে কেন,কেন আমাকে ছেড়ে ও চলে যাবে?"

নীল কথাগুলো বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পরে।আবিদ দৌড়ে তার কাছে এসে ওকে ধরে ফেলে,নাহয় মাটিতে পড়ে যেত।আবার খুক খুক কাশি।এমন কাশি ত আগে ছিল না নীলের!কাশির সাথে আগের চেয়ে প্রচুর রক্তও বের হচ্ছে!নীল একটি গাছের ডালায় হাত দিয়ে ধরে রাখে যাতে একটু শক্তি পায় কারন অনেকক্ষন কাশির ফলে সে একটু দুর্বল হয়ে পরেছিল।নীল এবার সহ্য করতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ল।
তাহলে কি নীলের বড় ধরনের কিছু হয়েছে!
(আবিদ কিছুক্ষন ভাবতে থাকে)
-নীল,বল ত তুর কি হয়েছে?
-কিছু না।
-এড়িয়ে যাস না।আমাকে শেয়ার করা যায় না? চল,আগামীকাল তুকে ডাক্তার দেখাই।
-নারে দোস্ত।

"বিষন্নতায় অস্থির হয়ে আছে এ হৃদয়।নিরবতার আঘাত যেন আরো রক্তাক্ত।অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতই খোজে ফিরি নিজেকে।জীবন নাটকের অভিনয়ে মিথ্যা অভিনেতার মতই অভিনয় করে যাচ্ছি।পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মিলাতে খুবই অস্থির লাগে।তাই বুকভরা দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে আছি আকাশ পানে।"
(নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার বিড়বিড় করে আবার বলতে থাকে।)
-একটা মেয়ের জন্য কি তুই নিজেকে এভাবে শেষ করে দিবি?একবারও পরিবারের কথা ভাববি না? আরে যে মেয়ে তুর কথা ভাবেনি,তাকে ভেবে কেন নিজেকে এভাবে শেষ করে দিবি?
-নারে দোস্ত তেমন কিছু না।আসলে প্রেমের মজাটাই মানে হয় ব্যর্থতায়। আমার কাছে ক্যান যেন মনে হয়। ব্যর্থতা না থাকলে বা ব্যর্থ না হলে ভালোবাসার মানেই জানা হয় না। যে কখনও ব্যর্থ হয় নাই সে কখুও প্রেমের মর্ম বুঝবে না, প্রেমিক /প্রেমিকাকে মুল্যায়ন করবে না। কারন কথায় আছে কোন কিছু না হারালে বুঝা যায় সেই জিনিসটা কতটা মূল্যবান ছিল।
-কিছু একটা ত লোকাচ্ছিস আমার সাথে।(আবিদ, নীলের কাছ থেকে জানতে চায়।)
-কিছু ঘটলে ত তুকেই আগে শেয়ার করতাম।তুই ত আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু/ভাই।

আবিদ নীলের সেই শৈশবের বন্ধু।সুখে দুখে এক সাথেই বড় হয়েছে।প্রাইমারী-হাইস্কুল তারপর কলেজ পর্যন্ত একই সাথে লেখাপড়া করেছে।কিন্তু একই ভার্সিটিতে জান্স পায়নি বিধায় দুইজনে এখন দুই ভার্সিটিতে।তবুও বাড়িতে আসলে আবিদ নীলের সাথেই আড্ডা দেয়।এবার ৭ মাস পর গ্রীষ্মের ছুটিতে আবিদ বাড়ি এসেছে।এই সাত মাসে নীলের সাথে অনেক কিছুই ঘটে গেছে যা আবিদের অজানা।)
নীলের আবার চিৎকার শুরু করলো।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ দুটি যেন ছলছল করছে।চোখ দুটিও কি যেন বলতে চাইতেছে।হয়ত কাউকে অভিশাপ দিচ্ছে।
-চল,নীল তুকে বাসায় দিয়ে আসি।
-নারে।(আবিদের দিকে তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে)
-কেন?
-থাকি না কিছুক্ষন।ভালো লাগছে না।
-তুই এভাবে এখানে থাকলে মরে যাবি ত!
-মরার আর আছেই কি?
-কি বলছ? মাত্র তুর লাইফটা শুরু। এই বয়সে তুর এই পাগলামি করা মানায়?
-আবিদ,একটা কাজ করবি?
-হ্যা,বল।
-একটা সিগেরেট এনে দিবি?(আজকাল নীল সিগেরেট খাওয়া শুরু করেছে আবিদ জানত না)
-কি বলছ!এখন সিগেরেটও ধরা শুরু করছত?
-টেনশন হলে মাঝে মাঝে খাই দোস্ত।
-সিগেরেটই যদি টেনশন দূর হত তাহলে দুনিয়ার মানুষ সিগেরেট খেয়ে টেনশন দূর করত।
-এনে দেছ না দোস্ত?
-না,আমি পারব না।
হঠাৎ একটা টর্চ লাইটের আলো পুকুর পাড়ের দিকে আসতে লাগল।হয়ত কাউকে খোজার জন্য এদিক দিয়ে আসছে।
-ভাইয়্যা,ভাইয়্যা?(মনে হয় নীলকে ডাকছে)
-এখানে(নীল উত্তর দিলো)
-তোমাকে খোঁজতে খোঁজতে শেষ(নীলের ছোট বোন।নীলকে খোঁজ করতে মনে হয় এসেছে।)
-চলো,বাসায় চলো।মা চিন্তা করতেছে।
-তুই যা,কিছুক্ষন পর আসতেছি।
(নীলের পরিবার হয়ত বিষয়টা জানে।আবার নাও জানতে পারে।ছেলেটার জীবন একটা মেয়ের জন্য এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে তা কোন পরিবারই মেনে নিবে না।)
-আচ্ছা,তাড়াতাড়ি এসো খাবার বেড়ে রাখছে আম্মায়।আবিদ ভাই আপনিও আইসেন।
-আচ্ছা,যাও আমরা আসতেছি।

আবিদ নীলকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় নিয়ে যায়।
ছেলেটা এরকম ছিল না।শান্ত প্রকৃতির আর অসম্ভব মেধাবী ছিল।এসএসসি তে জিপএ ৫ এইচ এস সি তেও ভালো করেছিল। কয়েকগ্রামে তার সুনাম ছিল।গ্রামের কিছু ছাত্রছাত্রীও পড়াত।দিন দিন ছাত্রছাত্রী বাড়তে থাকায় গ্রামেই একটা কোচিং সেন্টার দিয়েছিল।ছাত্রছাত্রী পড়ানোর পাশাপাশি নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে লাগলো।কিন্তু একটা মেয়ে উলটপালট করে দিল নীলের জীবন।গ্রামের এক মেয়েকে পছন্দ করত নীল।জীবনের চেয়েও বেশি।তার প্রমাণ হয়ত এখন ছেলেটা দিতেছে।এই পৃথিবীতে যুগে যুগে প্রেম-ভালোবাসার পরীক্ষা দিয়েছে তাদের সংখ্যাটা হয়ত ছেলেদের বেশি।
এদিকে নীলের খাওয়া-দাওয়া নাই,কোচিং সেন্টারে আগের মত ক্লাসও নেয় না। তার এক পরিচিত চাচাকে দিয়ে ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছে।মোটামুটি ভবঘুরে জীবনযাপন করছে ছেলেটি।
লোকমুখে শুনেছি একটা মেয়ে চাইলে নাকি একটা ছেলেকে উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়ে উন্নতির আকাশচুম্বী নিয়ে যেতে পারে আবার সেই মেয়েই চাইলে টেনে হিচরে সেই ছেলেকে নিচে নামিয়ে ফেলতে পারে।তা না হলে কি অন্যায় করেছিল নীল?আজ কেন মেধাবী ছেলেটার এই দূরবস্থা?
নীল মেয়েটাকে পছন্দ করত তিন বছর আগ থেকেই যখন মেয়েটা নবম পড়ে।কিন্তু কখনো মেয়েটাকে তার ভালো লাগার কথা বলেনি কারন মেয়েটা এখনো ছোট।ভালো লাগা কোন বয়সে ছোট-বড়, ধনী-গরীব,জাত-বেজাত পায়না না।নীলের বেলায়ও সেরকম।নীল এখন মেয়েটাকে কিছু বলার সাহস পায়নি কারন ছোট মেয়ে যদি বাসায় গিয়ে সব বলে দেয়।
২০১৭ মেয়েটা এখন কলেজে পড়ে।পাশের গ্রামেরই কলেজ।নীল প্রায় যাওয়া আসার সময় মেয়েটাকে দেখতে পায়। কখনো কথা বলে না,বলার চেষ্টাও করে না।মাঝে মাঝে দূর থেকে আড়চোখে দেখে যায়।এটাই নাকি তার তৃপ্তি।আসলে যাকে ভালো লাগে তার সাথে কথা না হলেও তার ছায়া দেখলেও তৃপ্তি পাওয়া যায়।
হঠাৎ একদিন নিশিতার আম্মা তার কোচিং সেন্টারে হাজির।নীলে পেট মোচর দিয়ে উঠে।তাহলে কি কোন অন্যায় করেছে!নিশিতা কি সব বুঝে গেছে? সে কি আবার বাসায় গিয়ে তার আম্মাকে সব বলে দিয়েছে নাকি?সে ত এমন কোন কাজ করেনি যাতে তার নামে বিচার আসে।নীল ভয়ে ফুচকে যায়।পরক্ষনে সামলে নেয় নিজেকে।
-নীল,কেমন আছো?(নিশিতার আম্মার প্রশ্ন)
-আলহামদুলিল্লাহ, আন্টি।আপনারা কেমন আছেন?
-হে,বাবা ভালো।শোন,নিশিতা Higher Math এ নাকি অনেক দুর্বল।কলেজের এক শিক্ষকের কাছে পড়াতাম।সেখানে নাকি বুঝে কম।শুনছি তুমি নাকি Higher Math এ খুব ভালো পড়াও।তাই তুমি যদি একটা সময় করে পড়াতে?
-আসলে আন্টি আলাদা করে ত আর সময় নেই,কারন আমার ভার্সিটি আছে,অন্যান্য ব্যাচ আছে।একটা কাজ করেন নিশিতাকে বিকালের কলেজের ব্যাচে দেন।
-সে কি এখন পারবে?
-অবশ্যই পারবে।
-তারা ত এখন অনেক এগিয়ে গেছে।
-সমস্যা নাই।যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে কিছুক্ষন অতিরিক্ত সময় দিলেই হবে।তাছাড়া এরজন্য ওর একটু কষ্ট করতে হবে। বাসায় প্রচুর পড়তে হবে।
-সেটার জন্য বলা লাগবো না। বাসায় পড়াশুনা করে।আচ্ছা তাহলে আগামীকাল থেকে পাঠিয়ে দিবো কেমন?
-আচ্ছা।
নিশিতা তার আম্মুর পিছে পিছে বাড়ির দিকে রওনা হয়।নীল তাকাইয়াও তাকাইতে পারে না কারন পাশে ছাত্রছাত্রী যদি বুঝে ফেলে

নিশিতা ও তার আম্মু চলে গেলে নীল একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে।কারন এতক্ষন সে কিসের মধ্যে ছিল নিজেও জানে না।নিশিতার আম্মুর সাথে কথা বলার সময় তার গলা শুকিয়ে আসছিল।ব্যাপারটা হয়ত ওনি লক্ষ্য করেছেন।এজন্য বেশি সময় দেন নি।যাহোক নীলের মনে যেন এখন একটু আতংকে আছে। কারন তার স্বপনের রানী তার কাছেই পড়তে আসবে।কিন্তু তার মনে ভয়েও কাজ করছিল।কারন কাল থেকে নিশিতা তার ছাত্রী।সে কী তার পছন্দের কথা কোনদিন বলতে পারবে না?
(চলবে)

Address

Daudkandi, Comilla, Chittagong
Daudkandi

Telephone

+8801784849158

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when কুমিল্লার প্রতিধ্বনি-The Echo of Comilla posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to কুমিল্লার প্রতিধ্বনি-The Echo of Comilla:

Videos

Share

Our Story

To know more about Cumilla Like ,Comment And Share our page.

Nearby media companies