কুমিল্লা জেলাঃ
কুমিল্লা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা-চট্রগাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত একটি মহানগরী। কুমিল্লা মেট্রোপলিটন শহরের আয়তন ৫৩.০৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষের উপর কুমিল্লা শহর হলো একটি বিস্তৃত শহর। কুুমিল্লা শহরটি প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগীয় সদরদপ্তর হবে। ৬টি জেলার প্রাণ কেন্দ্র হলো কুমিল্লা শহর।
নামকরণঃ
বর্তমান
কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ একটি জেলা। শুরুর দিকে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত হলেও পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাদি থেকে জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল।
ঐতিহ্যঃ
শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে সুপরিচিত। রসমালাই নামক বিখ্যাত মিষ্টি কুমিল্লায় তৈরি করা হয়। কুমিল্লার রসমলাই সারাদেশে এক নামে পরিচিত। দুধ, ছানা ও চিনি সমন্বয়ে তৈরি এ মিষ্টান্ন। যার প্রচলন কুমিল্লাতেই শুরু হয়। অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি প্রস্তুতের জন্যও কুমিল্লা বিখ্যাত। এছাড়াও কুমিল্লার বিখ্যাত খদ্দর (খাদি) শিল্পের জন্য। ১৯২১ সাল থেকে খদ্দর এ অঞ্চলে প্রচলিত। কুমিল্লার খদ্দর শিল্পগত উৎকর্ষে প্রচুর খ্যাতি লাভ করেছিল। এখান থেকে খদ্দর কাপড় কলকাতা ও বোম্বে পাঠানো হত। বাঁশের বাঁশির জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রাম উপমহাদেশের বাঁশের বাঁশির জন্য সুবিখ্যাত; শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশিপাড়ার বাঁশি বর্তমানে দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে সগৌরবে। এছাড়াও তাঁত শিল্প, কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প ও কারু শিল্প, ময়নামতির শীতল পাটি ইত্যাদি স্ব-স্ব ঐতিহ্যে স্বকীয়তা আজও বজায় রেখেছে।
উপজেলাঃ
কুমিল্লা জেলায় ১৭ টি উপজেলা বিদ্যমান
আদর্শ সদর,কুমিল্লা সদর দক্ষিণ,চৌদ্দগ্রাম,লাকসাম,
বরুড়া,নাংগলকোট,মনোহরগঞ্জ,চান্দিনা,তিতাস,দাউদকান্দি,হোমনা,মেঘনা,মুরাদনগর, দেবিদ্বার,বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া ও লালমাই
পর্যটনঃ
কুমিল্লাতে বহুসংখ্যক পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। কুমিল্লার লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। এখানে রয়েছে শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া, চন্দ্রমুড়া, রূপবন মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, সতের রত্নমুড়া, রাণীর বাংলার পাহাড়, আনন্দ বাজার প্রাসাদ, ভোজ রাজদের প্রাসাদ, চন্ডীমুড়া প্রভৃতি। এসব বিহার, মুড়া ও প্রাসাদ থেকে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। ময়নামতি একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। ময়নামতি জাদুঘরটি একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯২১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভারতের নেতা মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লায় এসেছিলেন। কুমিল্লাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের কবর ও ওয়ার সেমেট্রি রয়েছে। বতর্মানে রাজশে পুর ইকোপার্ক এবং তদসংলগ্ন বিরাহিম পুরের সীমান্তবর্তী শাল বন পর্যটন স্পট হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
কুমিল্লার কিছু আঞ্চলিক ভাষাঃ
আউতকা - হটাত
নাইল্লা শাক – পাট শাঁক
হউরা - সরিষা
মাইল্লা –ডাটা শাক
কৈডা- চিচিঙ্গা
কনি দেম – মাইর দিব
লাডুম – লাঠিম
তিরাস- তৃষ্ণা
আদামুরকি- থানকুনি
বয়রা-বহেরা
বেহাইয়া গাছ- ঢোল কলমি
হুমাস/নিয়াষ - নিশ্বাস
ঘুন্ডি - ঘুড়ি
ছিফা – বেত
মেন্নত – ক্লান্ত
পিছলা গোডা - বাবলা ফল
হজেরপাতা - বাংলা ধনিয়া
হল্কা – ইংরেজি নাম circuma
হুনাল ফুল- সোনালু ফুল
অক্করে- একেবারে
টুকটুহি- টিকটিকি
পইক্কা -পাখি
কো-কোথায়
কোন মুহুল/ কোন ফাইল-কোনদিকে
কান্দা- পাড়
মুছল্লা- নামাজের পাটি
ডেহি- ঢেঁকি
আইতাম না/যাইতাম না/খাইতাম না/ পারতাম না - আসবো না /যাবো না/খাব না/ পারবো না
পিরা - মাটির ঘরের বাইরের দিকে চারপাশে বাইরের দিকে অল্প উঁচু basement
রইদ- রোদ
হুমা- শশা
হাফ- সাপ
পিরফা- পিঁপড়া
তেতুই – তেঁতুল
খারি/ওরা- ধান রাখার বেতের বড় ঝুড়ি
রসা – তরকারীর ঝোল
জিংলা – সরু কাঠি
বাগইত্যা- ভাগ্যবান
হাক – শাক
বিল্লা – জন্য ( সাধারণত গ্রাম্য ক্রিয়াপদের পরে ব্যবহৃত হয় )
বেটকি – হাসি
বেটকাবেটকি – হাসাহাসি
খিচ্চালায়াম – মেরে দিব
বরিছিবা – বড়শি
হেন – ভাতের মাড়
মাদাইন্নালা – বিকাল বেলা
সহাইল্লালা-সকাল বেলা
রাউতকা- রাতে
হাইনজালা-সন্ধ্যা রাতে
ততা-গরম
পইডা- গ্রামের ঘরের বাইরে বসার জায়গা/দেউরি
খাডি/ডেফা -ক্ষেতের পাশে মোটামুটি বড় জলাশয়।
ঘাডা - গ্রামে অনেকগুলো ঘর নিয়ে একটা বাড়ি ।আর বাড়ির ঢুকার মুখে যে খোলা জায়গা থাকে সেটাকে বলে ঘাডা।
পিছা – ঝাড়ু
হলা পিছা - শলার ঝাড়ু
গয়াম - পেয়ারা.
পাহাল - চুলা.
রাতা - মোরগ.
আতাল - হাস মুরগীর ঘর.
আয়াম - কপাল.
আয়াম - আসব.
যায়াম - যাব.
হোরা দে - ঝাড়ু দাও.
কাফাইট - চশমা.
বিছুন- হাত পাখা.
তেইল্লাচোরা - তেলাপোকা.
আগার দিয়া - সামনে দিয়ে.
কাইক দে - পা বারাও/ হাট.
আডে না - খাপ খায় না.
তেলকা - ঠান্ডা.
পানসা - জলবসন্ত
উলুশ - ছারপোকা.
আদিগিল্লা = সবকিছুতে যে বেশি বেশি করে
হুইততা= শুয়ে
বইয়া= বসে
মুইত্তাম= প্রশ্রাব করবো