31/12/2024
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলার এক শ রহমত আছে। তন্মধ্যে তিনি একটি রহমত গোটা সৃষ্টির মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। এই একটি রহমতের কারণেই তারা একে অন্যকে ভালোবাসে, পরস্পরে সৌহার্দ্যভাব পোষণ করে, এমনকি বন্য জীবজন্তুও তার বাচ্চাদের আদর-সোহাগ করে।
অবশিষ্ট ৯৯টি রহমত আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর বান্দাদের জন্য রেখে দিয়েছেন। তিনি তা দিয়ে তার বান্দাদের প্রতি কিয়ামতের দিন রহম করবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৯৩)
শয়তান চায় বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে। পক্ষান্তরে আল্লাহ বান্দাকে চিরস্থায়ী জান্নাতে নিতে চান।
তাই আল্লাহ বান্দার অল্প আমলের সাওয়াব বহু গুণে দিয়ে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা ভালো কাজ ও খারাপ কাজ চিহ্নিত করেছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোনো সৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা এর জন্য একটি সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। আর সে ইচ্ছা করল ভালো কাজের এবং তা বাস্তবেও পরিণত করল, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য ১০ গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত—এমনকি এর চেয়েও অনেক গুণ বেশি সাওয়াব লিখে দেন। আর কোনো ব্যক্তি অসৎ কাজের ইচ্ছা করল, তা বাস্তবে পরিণত করেনি, আল্লাহ তাআলা তবু তার জন্য একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি সে ওই অসৎ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে ফেলে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা মাত্র একটি গুনাহ লিখেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৭)
এ সম্পর্কে কোরআনেও আল্লাহ তাআলা ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো পুণ্য নিয়ে আসবে, তার জন্য অনুরূপ তার ১০ গুণ (সওয়াব) আছে। আর যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজ নিয়ে এলো, তাকে শুধু তার পাপের সমান প্রতিফল দেওয়া হবে।
আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬০)
আল্লাহ চান, বান্দা যেকোনো উপায়ে তাঁর দিকে ফিরে আসুক। আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা এক বিঘত আমার দিকে অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন বান্দা আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক কদম এগিয়ে যাই। আর বান্দা যখন আমার দিকে হেঁটে হেঁটে আসে, তখন আমি তার কাছে দৌড়ে যাই।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৩৬)
বান্দা গুনাহ করতে পছন্দ করে আর মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মোচন করতে ভালোবাসেন। তাই তো আল্লাহ তাআলা সর্বদা বান্দার জিহ্বার দিকে তাকিয়ে থাকেন, কখন বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করে ফিরে আসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রাতে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যেন দিনের গুনাহগার তাওবা করে। আবার তিনি দিনে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যেন রাতের গুনাহগার তাওবা করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮২)
পৃথিবীর সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও আল্লাহর দরজা সর্বদা উন্মুক্ত থাকে। গুনাহ করার পর বান্দা যেন আল্লাহর রহম হতে নিরাশ না হয়ে যায়, এ জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)
বান্দার প্রতি আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসা কতটুকু, এটা যদি কোনো মানুষ জানত, তাহলে তার গোটা জীবন আল্লাহর গোলামিতে কাটিয়ে দিত। আফসোস! তবু মানুষ উদাসীন।