31/03/2021
সুখী মানুষের জামা
অনেক অনেক দূরের দেশে,অনেক দিন আগে এক রাজা ছিলো। তার ছিল অগাধ ধনসম্পদ, সৈন্য-সামন্ত, হাতি-ঘোড়া, কোনোটির কমতি ছিল না। স্ত্রী ছেলেমেয়ে সবই ছিল। কিন্তু সব থাকলে কী হবে। তার মনে কোনো সুখ ছিল না। তিনি রাজ্যের একজন বিজ্ঞ লোকের কাছে গেলেন সুখী হওয়ার উপায় জানতে। জ্ঞানী ব্যক্তি উত্তর দিলেন, এটি অত্যন্ত সহজ উপায় মহারাজ! প্রথমে আপনাকে একজন সুখী মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর সেই সুখী মানুষটির কাছ থেকে জামাটা নিয়ে আপনাকে পরতে হবে। এতে ওই সুখী মানুষটির সমস্ত সুখশান্তি আপনার দেহে প্রবেশ করবে। আপনি তখন সেই সুখী মানুষটির মতোই সুখী হবেন।
রাজা সব শুনে বলেন, আমি যেভাবে পারি প্রথমে একজন সুখী মানুষ খুঁজে বের করব। তারপর একজন সুখী মানুষের খোঁজে রাজা তার সৈন্য সামন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠিয়ে দিলেন। সৈন্য সামন্তরা যাকে পায় তাকেই জিজ্ঞেস করে সে সুখী কিনা? সবার উত্তর একই, না, তারা সুখী নয়।
এমনিভাবে দিন যায়, রাত যায়, মাস যায়, বছরও পার হতে চলল, খুঁজে খুঁজে সবাই হয়রান। কিন্তু কোথাও আর একজন সুখী মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় না। সবাই হাল ছেড়ে দিল ফেলেছিল প্রায়। অবশেষে দেশের পাহাড়িয়া অঞ্চলে দেখা মিললো এক রাখালের। সে গাছের নিচে বসে মুখে শিষ দিয়ে পাখির সাথে গান গাইছে। মুখখানি তার অনাবিল হাসিতে উদ্ভাসিত। সৈন্যরা তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি সুখী? সাথে সাথে সেই লোকটি জবাব দিল, অবশ্যই।
তারা সেই সুখী মানুষটিকে মহাসমাদরে নিয়ে এল রাজবাড়িতে। প্রহরীরা বিশ্রামাগারের দরোজা খুলে দিল। মন্ত্রী সভাসদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় রাজা বসে আছেন। এসময় অনাবিল হাসিতে মুখ উজ্জ্বল করে ছোটখাটো সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটি খাসকক্ষে প্রবেশ করল। রাজা সাগ্রহে সেই মানুষটিকে বরণ করে বললেন, আমার পাশে এসো, বন্ধু! পথে তোমার কোনো কষ্ট হয় নি তো! পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষটি হাসতে হাসতে রাজার কাছে এগিয়ে গেল। রাজা এবার ভালো করে তার দিকে তাকালেন। কিন্তু তিনি কী দেখলেন? এই সেই সুখী মানুষ! যে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সুখী মানুষ! লজ্জা নিবারণের জন্যে কমরের কাছে এক চিলতে কাপড় ছাড়া যার সারা গা খালি! রাজা ভাবলেন, জামাটি হয়তো কোথাও লুকানো আছে। তাই তিনি বললেন, যত ধনরত চাও, তোমাকে দিচ্ছি। তার বিনিময়ে তোমার জামাটি আমাকে দাও। দেরি করো না বাপু! তখন সেই সুখী মানুষটি বলল, রাজামশাই আমার কোনো জামা নেই!
গল্পের শিক্ষাঃ- কোন উপকরণ কাউকে সুখী করতে পারে না। নিজের যা আছে তা নিয়েই সুখী থাকা যায়।।