Masud Rana Nehal

Masud Rana Nehal Dhaka
(21)

21/12/2024

এই বছর আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে কিন্তু মনে থাকবে না কারণ আমি ভালো স্টুডেন্ট না।

20/12/2024

হুদাই একজন'রে মেনশন দিয়া নোটিফিকেশন পাঠান। বছরের শেষ মাসটা শান্তিতে রাখার দরকার নাই!🙂

20/12/2024

সুখী ব্যক্তির তালিকায় নিজেকে ১০০ তে কতো দিবেন?🌸

20/12/2024

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই, যারা আমার ভালোবাসা পাওনি এখনি সারা দাও...

20/12/2024

ভদ্রলোকের অসুবিধা হলো তারা গালি দিতে পারে না। অপরদিকে, গালি দেওয়াদের অসুবিধা হলো তারা ভদ্র হতে পারে না!

20/12/2024

আর কত তূফানে দাঁড়াইলে আমার নাম হবে হিমালয়! অথচ আমি তো চেয়েছিলাম শিমুলতুলার জীবন, বসন্তের নরম বাতাসে উড়তে চেয়েছিলাম প্রজাপতির ডানায়।

20/12/2024

✅ফলো করলেই ✅
✅ব্যাক নিশ্চিত 💯💯✅

20/12/2024

বসরাই_গোলাপের_ঝাড়
পর্ব_০৫
ফারহানা_কবীর

বখাটে মানুষের এক গুণ থাকে। মেয়েমানুষকে বশ করতে জানে তারা। তারপর মেয়েমানুষেরা তাদের ক্রীতদাসী হয়ে থাকে। আনিস মুচকি হাসল। সরল চোখে মোবাইলের দিকে তাকালো। সেখানে বিশেষ কোন খরব আছে, যে খবরে তার চোখ দু'টো জ্বলজ্বল করছে। কনক বাবা-মায়ের ঘরে উঁকি দিলো। মহিউদ্দিন সাহেব একা বসে আছেন। তার মা ঘরে নেই। সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। মাথা নিচু করে নম্র গলায় বলল, “আব্বা, একটা কথা বলতাম।”

মহিউদ্দিন সাহেব বললেন, “কি কথা বলবে?”

কনক চুপসে গেল। তার বাবার রাগ এখনও কমেনি। রাগ কমলে তুই বলত। সে বলল, “আপনার জামাই বলছিল -সোহেলের মিলাদ মাহফিলে কিছু শরিক থাকতে চায়। বেশি নয় সামান্যই।”

“তার ইচ্ছে হলে থাকবে। এখানে অমতের কিছু দেখছি না।”

“মানুষটা ভালোই! বলল- এত বড় মিলাদ মাহফিল করছে। এতজন এতিম মানুষ খাবে। শুনে দেখো টাকা-পয়সার সমস্যা হচ্ছে নাকি। যদি কিছু লাগে।”

“লাগবে না। যা খরচ করার আমিই করছি। হাবিবের থেকেও কিছু নিইনি। তোমার মবিন চাচার সাথে মাছের পুকুর রেখেছিলাম। আল্লাহর রহমতে অনেক টাকা লাভ হয়েছে।”

কনক চোখ চকচক করে উঠল। সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “কত টাকা লাভ হয়েছে?”

“প্রায় লাখ চারেক। সবই আল্লাহর রহমত। আর কিছু বলবে?”

“আপনি খেয়েছেন আব্বা?”

“না, খেতে ইচ্ছে করছে না। তোমরা খাওয়া-দাওয়া করো।”

“শরীর খারাপ?”

মহিউদ্দিন সাহেব মুখে জবাব দিলেন না। না সূচক মাথা নাড়লেন। জবাব দিলেই কথা বলতে হবে। কথার পিঠে কথা বলতে ভালো লাগছে না তার। বুকে হালকা ব্যাথা করছে। বয়স বাড়ছে। এরপর হঠাৎই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়বেন। জীবনে কতকিছু দেখেছেন। এমনকি হতে পারত না- যে তিনি মা’রা গেছেন। সোহেল বেঁচে আছে। মহিউদ্দিন সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তার চোখ জ্বালা করছে। চোখে পানি আসার আগে যেমন চোখ জ্বালা করে তেমন।

কনক প্রায় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। উত্তেজিত গলায় বলল, “রোহানের আব্বা শুনছ?”

আনিসের চোখে তখনও ঘুম নামেনি। সে বিছানায় উঠে বসল। বিরক্ত গলায় বলল, “কি শুনব?”

“আব্বা মাছের পুকুর রেখেছিল। চার লাখ টাকা লাভ করেছে। এখন সব মিলাদ মাহফিলে খরচ করবে। যেন হাবিবের একার ছেলে আছে। আর কারোর কিছু নেই। কেন? আমার ছেলেটাকে কিছু দিতে পারত না? বলতে পারত না যে নানাভাই বড় হচ্ছে। ওর ভবিষ্যতের জন্য এটা রেখে দে। না, তা কেন দিবে? বিয়ে দিয়ে তো আপদ বিদেয় করে দিয়েছে। এখন আর কি!”

“এসব কথা আমায় বলছ কেন? নিজের বাপের কাছে গিয়ে বলো।”

“আমি বললে কি কোন লাভ হবে? হবে না।”

“এখন আমি কি করব?”

কনক ভেজা চোখে তাকালো। আনিস উঠে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখল। কোমল গলায় বলল, “তোমায় নিয়ে আমার গর্ব হয় কনক। বিয়ের পরে একজন মেয়ের কাছে তার স্বামী সংসারই সব। আর কেউ কিছু না। এটা তুমি বুঝতে পারো। বেশিরভাগ মেয়েরা এই সহজ কথাটা বুঝতে পারে না। স্বামীর পকেট থেকে টাকা চু'রি করে বাপের বাড়ি পাঠায়।”

“ওসব মেয়েদের নাম মুখে নেওয়াও পা'প। আমি যাই, রোহান খেতে চেয়েছে।”

আনিস মুচকি হাসল। কপাল করে কনকের মতো মেয়েকে বিয়ে করতে পেরেছে। মানসিকভাবে সুস্থ এবং জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন মেয়ে বিয়ে করলে তার কপালে দুঃখ ছিল। সে বিছানায় ফিরে গিয়ে আবারও গায়ে কম্বল চাপালো। জীবন সবসময় এক রকমের থাকে না। এক-এক ধাপে ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষা পেরিয়ে শীতের আগমন ঘটে। শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে বসন্ত আসে। কলি ফুলে রূপান্তরিত হয়। শৈশব পেরিয়ে যায়, কৈশোর আসে। যৌবনের শক্তি শেষে শক্ত-সামর্থ্য দেহ বৃদ্ধ নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। ক'ব'রের মাটি শরীর শুষে নেয়। তাই বলে কি শৈশব হারিয়ে যায়? সহোদরের গায়ের ঘ্রাণ হারিয়ে যায়? বিবেক চাপা পড়ে অহংকার আর স্বার্থপরতায়? বিয়ের পরে মেয়েদের স্বামী সংসারই সব, তাই বলে কি মা বাবা কেউই নয়? খেলার সাথী ভাই-বোন কেউ নয়? এ কেমন বিচার? কেমন সমাজ? কেমন-ই বা তাদের মানুষ? কি হয় অহংকার করে! কি এমন লাভ হক ঠকিয়ে সম্পদের পাহাড় তৈরি করে? কাফনের কাপড় ছাড়া কিছুই তোমার শেষ যাত্রায় সাথী হয় না। কেউই আজীবন মনে রাখে রাখে না। স্বজনের অশ্রু শুকিয়ে যায়। মোনাজাতের দোয়ার ভাগিদার বাড়ে। হয়তো নাম নেবারই খেয়াল থাকে না। মিথ্যা মায়াজালে আঁটকে যাওয়া জীবনের পরিসমাপ্তি শেষ নিঃশ্বাসে গিয়ে থমকে যায়। আর এক বিন্দুও এগিয়ে যেতে পারে না। আর কোনদিনই সোহেলের বয়স বাড়বে না। সবাই তাকে দুই বছরের বাচ্চা বলে ডাকবে। কেউ তার সুঠাম দেহ দেখবে না, রুগ্ন বৃদ্ধ শরীর দেখবে না। তার জীবন ওখানেই থমকে গেছে। আর এগিয়ে যাবে না। সে বড় হবে না, কৈশোর পাবে না, যৌবন দেখবে না। তার সময় থমকে গেছে। জীবন আটকে গেছে ঘড়ির কাঁটায়।

রাত বাড়ছে। আকাশে অন্য সৌরজগতের নক্ষত্র তারার রূপে ফুটেছে। তাদের আলোয় আঁধার রাত আলোকিত হয় না। আবছা আলোয় অন্ধকারটুকুই পরিষ্কার বোঝা যায়। কোথাও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে। কোথাও মোমের আলোয় আঁধার মেটায়। আজ-কাল কিসব সোলার লাইট বেরিয়েছে। সে-সবও কাজে লাগে। মহিউদ্দিন সাহেব খেতে বসলেন সবার শেষে। ততক্ষণে সবাই যার যার ঘরে চলে গেছে। শরিফা বেগম স্বামীর সামনে বসে আছেন। ক্রমাগত হাই তুলছেন। মহিউদ্দিন সাহেব বললেন, “মিলাদের জিনিসপত্র বায়না করে এসেছি। দাম বাড়ছে সবকিছুর।”

“কোন এতিমখানা থেকে বাচ্চারা আসবে?”

“গ্রামের দিকের দু'টো মাদ্রাসায় বলে এসেছি। শহরের এরা মাঝেমধ্যেই ভালো খাবার-দাবার পায়। গ্রামের দিকে লোকের নজর কম। হুজুররা বলল - এদিকে কেউ দান-সদকা করে না। শেষ দুইমাস আগে মুরগির গোশত রান্না করেছিল। তারপর থেকে শাকসবজি খাচ্ছে। সপ্তাহে একদিন মাছ দেবার চেষ্টা করে। তা-ও চাষের পাঙ্গাস মাছ।”

“ভালো করেছেন। নববীর মা বাবাসহ কিছু আত্মীয় স্বজনদের বলতে ইচ্ছে করে। অনুষ্ঠান বাড়ি।”

“অনুষ্ঠান বাড়ি?” মহিউদ্দিন সাহেব নিজের প্রশ্ন ফিরিয়ে নিলেন। কথা ঘুরিয়ে বললেন, “কনক বলছিল- আনিস কিছু ভাগে থাকতে চায়। আমি ঠিক করেছি নেব না।”

“না নিলে কষ্ট পাবে। আশা করে বলেছে।”

“কথার কথা বলেছে। আনিস টাকা পয়সা খরচ করার লোক না। মনে নেই? কনকের সিজারের সময় ফট করে বলে বসল- আব্বা আমাদের নিয়ম হচ্ছে মেয়ের প্রথম সন্তানের যাবতীয় খরচ তার বাপের বাড়ি থেকে দেয়। আমি অবশ্য এই নিয়মটিয়ম মানি না। কুসংস্কার যাকে বলে। তবুও বলা।”

“এখনও কি সে-সব কথা ধরে রাখলে হয়? মানুষের পরিবর্তন হতে কতক্ষণ।”

“কিছু মানুষ কখনও পরিবর্তন হয় না। যাইহোক পাবদা মাছ রেঁধেছ বললে। দেবে নাকি?”

“হ্যাঁ। আমি নিয়ে আসছি।”

শরিফা বেগম উঠলেন। তবে তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাবদা মাছ পেলেন না। মাছের কথা কনক ছাড়া অন্যকেউ জানে না। নিশ্চয়ই ছেলে স্বামীকে দিয়ে দিয়েছে। তিনি কনকের ওপর প্রচন্ড বিরক্ত হলেন। মেয়েটার কি কখনও একটু বুদ্ধি হবে না। নিচু গলায় বললেন, “অল্প রেঁধেছিলাম। বোধহয় ওরা সবাই খেয়ে ফেলেছে। আলাদা করে তুলে রাখার সময় পাইনি।”

“সমস্যা নেই। খাওয়া প্রায় শেষ। একটু ভাজি দাও। তাতেই চলবে।”

শরিফা বেগম স্বামীর পাতে ভাজি তুলে দিলেন। তার খুব মন খারাপ লাগছে। মহিউদ্দিন সাহেব পাবদা মাছ খেতে পছন্দ করেন।

নববী বিছানায় শুয়ে আছে। তার চোখে ঘুম নেই। হাবিব অনেকক্ষণ আগে ঘুমিয়ে পড়েছে। মানুষটা শরীর আজ-কাল ভালো যাচ্ছে না। শোবার আগে কাশছিল। কেমন সর্দি-জ্বরের মতো হয়েছে। নববী স্বামীর গায়ে হাত রাখল। এই মানুষটা অন্যদের মতো না। সবার থেকে আলাদা। শোবার আগে তাকে কতকিছু বোঝাল। ধৈর্য ধরতে বলল। আরও একটা কথা বলছে। এমন কথা শোনার জন্য একটা নারী আজীবন অপেক্ষা করতে পারে। বলেছে -আল্লাহ কখনও একটা মানুষের সবকিছু কেড়ে নেন না। আমার ছেলে হারিয়ে গেছে। নেই। কিন্তু তোমাকে আমার কাছে রেখে গেছে। গাছ থেকেই তো ফুলফলের জন্ম হয়। গাছই যদি হারিয়ে যেত- তখন আমি কি করতাম? তুমি নিজেকে কষ্ট দিও না। আমি সহ্য করতে পারি না।

সে একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস গোপন করল। ক্ষ’ত জায়গায় মলম লাগালো যায়। ব্যাথা কমানো যায়। দাগ মুছে ফেলা যায় না। রাত বাড়ছে। পাখি ডাকছে না। বোধহয় তারাও ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু ঘুম নেই নববীর দু চোখে। নির্ঘুম এক রমনীর বুক চিরে ব্যাথার আগুন জ্বলছে। সে আগুনের তীব্রতা মন পো’ড়া’লেও শরীর উষ্ণ করতে পারে না।

নাইমা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে। পুকুর ঘাটে গিয়ে ওজু করে। ফজরের নামাজ পড়ে। আজও উঠেছে। চারপাশ তখনও পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি। সে দরজা ঠেলে বাইরে আসলো। বাড়ির সামনে একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। দু'জন লোককেও দেখা যাচ্ছে। লোক দুটোর একজন তাদের বাড়ি ভেতরের দিকে দাঁড়ানো। নাইমা অস্পষ্ট গলায় বলল, “কে ওখানে? কে?”

একজন লোক বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে ট্রাকে উঠল। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। অন্যজন বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল। কাছাকাছি আসতেই তার মুখটা পরিষ্কার হলো। নাইমা বলল, “আপনি?”

“কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছো?” আনিস ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল। নাইমা শান্ত গলায় বলল, “অনেকক্ষণ। কেন?”

“কিছু না। রাত-বিরেতে বাইরে ঘোরাঘুরি ঠিক না। সুন্দরী মেয়েদের প্রতি বদ জ্বীনে নজর থাকে। কখন কি হয় বলা তো যায় না।”

“আপনার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। নিজের টুকু বোঝার বয়স আমার হয়েছে।”

“তাতো দেখতেই পাচ্ছি তোমার বয়স বেড়েছে। কেমন করে ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে রাখো।”

নাইমার ইচ্ছে করল আনিসের গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিতে। তবে সে নিজেকে শান্ত রাখল। দ্রুত পায়ে হেঁটে পুকুর ঘাটের দিকে চলে গেল। আনিস সেদিকে তাকিয়ে হাসল। কুৎসিত গলায় বলল, “রাগী মেয়েমানুষ লজ্জা পেলে যা লাগে না!”

তারপর-ই সে কপালের ঘাম মুছল। নাইমা কিছু দেখে ফেলেনি তো? মেয়েটাকে তার সুবিধা মনে হয় না। কেমন কাঠকুটো ধরনের। মায়া-মমতা নেই। এরও একটা ব্যবস্থা করতে হবে। সময় নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।

সকালে খাবার পরপর নববীর মা-বাবা আর ভাই আসলো। শুক্রবারের দেরি নেই। কাল বাদে পরশু শুক্রবার। মিলাদের কাজকর্ম দেখার জন্য আপন লোকের প্রয়োজন। মহিউদ্দিন সাহেব একা হাতে সবকিছু সামলে উঠতে পারবেন না। শোকের মানুষ কাজ করতে পারে না। কেমন যেন ঝিমিয়ে যায়। শরিফা বেগম বললেন, “আপনারা এসে ভালোই করেছেন। মানুষজন দেখতে ভালো লাগে। নববী ঘরে আছে। গিয়ে দেখা করে আসেন। সে এদিকে তেমন আসে না। তাছাড়া আমরা আপনাদের মেয়েকে দিয়ে কাজকর্ম করাই না।”

নববীর মা কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। শরিফা বেগম এদিকে তেমন খেয়াল দিলেন না। দুপুরের রান্নার দায়িত্ব তার। এতজন মানুষের রান্নাবান্না সহজ কথা নয়। নাইমা মেঝেতে বসে সবজি কাটাছে। পেঁয়াজ কলি আর বাঁধাকপি কা'টা শেষ। এখন রুই মাছে জন্য আলু কা’টছে। কনক পাশে দাঁড়িয়ে ছেলেকে নুডলস খাওয়াচ্ছে। রোহান খেতে চাইছে না। তবু সে জোর করছে। শরিফা বেগম রান্নাঘরে ঢুকলেন। বললেন, “নাইমা তোর আর কাজ করতে হবে না। গিয়ে গোসল করে ফেল। দেরি হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

নাইমা উঠে গেল। তার পেছন পেছন রোহানও বেরিয়ে গেল। কনক নুডলসের থালা রেখে আলু কাটতে বসল। শরিফা বেগম বললেন, “তুই আবার এখানে বসলি কেন? নানা ভাইকে গোসল করিয়ে দে। ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”

কনক গলার স্বর অনেকখানি নিচু করে বলল, “যাচ্ছি। তবে একটা কথা ছিল। কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না।”

“কি এমন কথা যে কিভাবে বলবি বুঝতে পারছিস না?”

“বলছিলাম কি- সোহেলের মিলাদ মাহফিল শেষে নববীকে ওর মা-বাবার সঙ্গে পাঠিয়ে দাও। ওর মতো মেয়েমানুষ ঘর-সংসার করতে পারবে না। তোমার জামাই একটা প্রস্তাব করতে চাইছিল। পরে আবার বলবে না বলেছে।”

“কিসের প্রস্তাব?”

“আমার ননদ মিলি। জানোই তো কেমন ভদ্র আর ভালো মেয়ে। পড়াশোনা করতে গিয়ে একটু বয়স বাড়িয়ে ফেলেছে। তারপরও যে রূপ চেহারা! মাশাআল্লাহ।”

শরিফা বেগম উৎসুক গলায় বললেন, “মিলির বিয়ে বুঝি? কবে? ছেলে কি করে?”

“না মা, মিলির বিয়ে না। আমি বলছিলাম- মিলির সাথে হাবিবের বিয়ে দিলে কেমন হয়? অমন ভালো মেয়ে লাখেও একটা পাওয়া যায় না।”

“এসব তুই কি বলছিস?”

“ভালোর জন্যই বলছি। শত হলেও হাবিব আমার নিজের ভাই। আমি তার ভালো চাইব না? হাবিবকে বুঝিয়ে নববীকে তা'লা'ক দেওয়াতে পারলে মিলির সাথে ওর বিয়ের দায়িত্ব আমার। এমনিতেই নববীর চরিত্র খুব বেশি ভালো না। সারাদেশের ছেলেদের সাথে কথা বলে।”

“এসব তুই কি বলছিস? তাই কখনও হয় নাকি? যা নানা ভাইকে গোসল করিয়ে দে।” মুখে যা-ই বলুক না কেন- প্রস্তাবটা শরিফা বেগমের পছন্দ হলো। তিনি ঠিক করলেন মিলাদের ঝামেলা মিটলে হাবিবের কানে কথাটা তুলবেন।

চলবে

20/12/2024

দানবাক্স মাজারে নয়, হাসপাতালে থাকা দরকার। মৃত মানুষের চেয়ে, জীবিত মানুষের টাকার বেশি প্রয়োজন।🙂

20/12/2024

যেসব মেয়েরা ভিড়ের মধ্যে সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও অনেক সাবধানে হাঁটে, যাতে একটা ছেলেদের শরীরে স্পর্শ না লাগে! নিঃসন্দেহে সেইসব মেয়েরা big respect. 🤍

20/12/2024

এক_রক্ত_সন্ধ্যার_গান
পর্ব_০৬
Raiha_Zubair

পুরো রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা। রহমান সাহেবের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে জান্নাতুল। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জান্নাতুল এবার বলে উঠল-
-“ কাজ টা কি ঠিক করছেন আপনি?
রহমান সাহেব আড়চোখে তাকিয়ে বলল-
-“ কোন কাজটা?
-“ এই যে আপনি চৈতালির ছবি আরিয়ান কে দেখাইছেন চৈতালির অনুমতি ছাড়া। ও যে এসব পছন্দ করে না। আপনি জানেন না?
রহমান সাহেব চেতে উঠলেন। সে কি করবে না করবে সেটার জ্ঞান এখন তার বউ দিবে!
-“ আমি কি করবো না করবো সেটা কি এখন তোমরা মা মেয়ে মিলে ঠিক করে দিবে?
-“ আমার বিষয়ে আপনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটার ব্যপারে আমি কথা বলতে পারবো না বাবা?
কথাটা বলতে বলতে চৈতালি রুমে আসলো।
-“ তুমি এখানে? রাহমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
-“ হ্যাঁ। আপনি জানেন আজ কি হয়েছে? আমার পর্দা কে অসম্মান করেছে আরিয়ান নামের লোকটি। শুধু তাই নয় সে বলেছে আমি নাকি স্রেফ একটা কাপড় ঝুলিয়ে রাখি মুখের উপরে। আপনি কি করে পারলেন এমন ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে? আবার আমার ছবিও নাকি তাকে দেখিয়েছেন। এসব করার আগে আমার অনুমতি নিয়েছিলেন? আমি তাকে বিয়ে করতে চাই কি চাই না সে ব্যপারে?
রহমান সাহেব উঠে আসলেন। চৈতালির সামনে দাঁড়িয়ে কোনো কথা না বলেই সোজা গালে চ'ড় বসিয়ে বললেন-
-“ ধর্মের এত কিছু জানো আর এটা জানো না বাবার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে হয় না।
চৈতালি গালে হাত দিয়ে একবার তার মায়ের দিকে তাকালো। তার মা চৈতালি কে এসে ধরতে চাইলে রহমান ধমক দিয়ে বলল-
-“ একদম ধরবে না। বেয়াদব হয়ে উঠেছে এই মেয়ে দিন কে দিন। সব তোমার আস্কারায়। কত বড় সাহস আমার মুখের উপর কথা বলে।
-“ ঠিকই তো বলেছে। তারজন্য আপনি এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলবেন!
রহমান সাহেব সময় নষ্ট করলো না জান্নাতুলের চুলের মুঠি ধরে টান দিতে। চৈতালি আর পারলো না। দৌড়ে বাবার হাত থেকে মায়ের চুলের মুঠি ছাড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল-
-“ আমাকে মে'রেছেন আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু খবরদার আপনি আমার মায়ের গায়ে হাত তুললে কিন্তু আমি ভুলে যাব আপনি আমার বাবা। আর ইসলামে এটাও বলা আছে অন্যায় দেখলে সেখানে প্রতিবাদ করা। হোক সে বাবা। বাবারা এমন হয় না। আপনার তো ন্যূনতম ইসলামের জ্ঞান নেই। নামেই মুসলিম হয়েছেন। অথচ কাজে কাফেরদের মতো। আমি মুসলিম সবার আগে আমার ধর্ম। যে ছেলে আমার ধর্মের বিষয় বস্তু নিয়ে মজা করে তাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। চলো মা।

চৈতালি তার মা কে নিয়ে চলে গেলো। রহমান সাহেবের রাগে শরীর জ্বলতে থাকলো। পকেট থেকে ফোন টা বের করে আরিয়ান কে ফোন করে বলল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের আয়োজন সেরে ফেলতে।

চৈতালি রুমে এসে আয়নায় একবার নিজের মুখ টা দেখে নিলো। চার আঙুলের দাগ বসে গেছে গালে। জান্নাতুল ড্রয়ার থেকে মলম বের করে চৈতালির গালে লাগিয়ে দিলো। চোখ তার নোনাজলে ভিজে আসছে বারবার। চৈতালি মায়ের চোখে জল দেখে বলল-
-“ কাঁদছো কেনো মা? ব্যথা করছে? খুব জোরে ধরেছিল চুলের মুঠি তাই না?
জান্নাতুল মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় চুমু খেয়ে বলল-
-“ আমি কেমন মা বলতো? আমার সামনে তোকে মা'রলো আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। আর আমাকে মা'রতে আসলে তুই প্রতিবাদ করলি। যেখানে আমার প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো তোর বেলায়। আমি একজন ভালো মা হতে পারি নি।
-“ এজন্য কাঁদবে? আমি কিছু মনে করি নি। ভাগ্যে যা আছে তা তো হবেই বলো। সেটা তো উপর থেকেই লেখা। তুমি আমি চাইলেও তো পাল্টাতে পারবো না।
-“ সব সময় ভালোদের সাথেই কেনো এমন হয়?
-“ এটা তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো আজ? এর উত্তর আগে তুমিই তো আমাকে দিতে৷
-“ খাবার আনছি খেয়ে নিস।
-“ খিদে নেই মা। শুধু শুধু এনো না। আমি বরং একটু ঘুমাই।
জান্নাতুল সম্মতি জানিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেলো। চৈতালি বিছানায় শুয়ে পড়লো৷ গাল টা ব্যথায় টনটন করছে। মিনিট দশেক যেতে না যেতেই রহমান সাহেব চৈতালির রুমে আসলো। বেডের পাশে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ রেডি হয়ে নে আরিয়ান এসেছে তোকে নিয়ে বিয়ের শপিং করতে যাবে।
চৈতালি সহসা উঠে বসলো।
-“ বিয়ের শপিং মানে?
-“ তোর আর আরিয়ানের বিয়ে হবে শীগ্রই। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
-“ আমি উনাকে বিয়ে করবো না।
-“ বিয়ে করবি না? তাহলে সেটার রাগ কিন্তু আমি তোর মায়ের উপর দিয়ে উঠাবো। তুই চাস তোর মা তোর জন্য শাস্তি পাক?
চৈতালি ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে বাবার দিকে তাকালো।
-“ আপনি কি আদৌও মানুষ? আপনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন!
-“ যেটা ভাবিস। এখন বাকিটা তোর উপর নির্ভর করছে।

রহমান সাহেব চলে গেলেন। চৈতালি মনের বিরুদ্ধে রেডি হয়ে আসলো নিকাব পড়ে। আরিয়ান চৈতালি কে সেম পোষাকে ফের দেখে বিরবির করে বলল— আবার প্যকেট সেজে এসেছে।
গাড়িতে গিয়ে বসলো আরিয়ান। চৈতালিও বসলো। একটা মলের সামনে গাড়ি থামতেই আরিয়ান নেমে পড়লো। আর চৈতালি কেউ নামতে বললো। চৈতালি নামতেই আরিয়ান হাত ধরতে নিলে চৈতালি ছিটকে দূরে সরে যায়। আরিয়ান বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-“ আশ্চর্য হাত ধরলে কি হবে?
-“ আমি বাচ্চা নই যে আপনি আমার হাত ধরবেন। আপনি আগে আগে হাঁটুন। আমি পেছন পেছন আসছি।

আরিয়ান এক প্রকার রেগেই হাঁটা শুরু করলো। চৈতালি পেছন পেছন আসলো। মেয়েদের পোষাকের দোকানে আসতেই আরিয়ান বলল-
-“ লেহেঙ্গা নিবে নাকি শাড়ি নিবে দেখো। পছন্দ করো।
-“ আমি এসব কিছুই নিবো না।
-“ তাহলে কি পে'ন্টি পড়বা বিয়েতে?
রেগে দাঁত চেপে বললো আরিয়ান। চৈতালির ধৈর্যের বাঁধ এবার ভেঙে গেলো। পুরো মলের সামনে ঠাস করে চ'ড় বসিয়ে দিলো আরিয়ানের গালে। মলের সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। চৈতালির শরীর রাগে কাঁপছে।
-“ আপনি এত বেয়াদব নোংরা কি করে? আপনাকে কি আপনার মা জন্ম দেয় নি? আপনি কি পুরুষের পেট থেকে হইছেন? জানেন না? শিখেন নি একটা মেয়ের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয়?

লোকজন এগিয়ে আসলো। চৈতালিকে জিজ্ঞেস করলো— কি হয়েছে আপা? এই লোক কি করছে আপনার সাথে?

চৈতালির রুচিতে বাঁধলো কথা টা বলতে। কথাটা না বলেই দৌড়ে শপিং মল থেকে বেরিয়ে বাহিরে এসে কেঁদে দিলো। নরকের মতো যন্ত্রণা হচ্ছে। চৈতালি ফোন বের করে বাকেরের নম্বরে কল করলো। বাকের নিজের বাসায় এসেছিল মায়ের সাথে দেখা করতে। আকস্মিক চৈতালি ফোন পেয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই চৈতালির কান্নার স্বর শুনতে পেয়ে বাকের ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আপনি কাঁদছেন চৈতালি?
-“ বাকের ভাই আমাকে একটু নিয়ে যান না এখান থেকে। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে।
-“ কোথায় আপনি?
-“ মলের সামনে।
-“ ঠিকানা টা পাঠান আমি আসছি এখনি।

মিনিট বিশেক হতেই চৈতালি দেখলো বাকের চলে এসেছে। গাড়ি থেকে নেমে চৈতালির সামনে এসে দাঁড়ালো। নোনাজলে ভেজা চোখ দুটো দেখে বাকেরের বুক ভার হয়ে গেলো। চোখ দুটোতে অজস্র মায়া জড়ানো থাকে। বাকের বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। নজর সরিয়ে নিলো। এসব ভাবাও পাপ। বাকের অন্য দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আপনি এখানে কেনো?
-“ আমি বাসায় যাব বাকের ভাই। একটু দিয়ে আসুন না প্লিজ।
-“ উঠুন গাড়িতে।
চৈতালি পেছনে গিয়ে বসলো। বাকেরও গাড়িতে বসতেই দেখতে পেলো আরিয়ান মল থেকে বের হচ্ছে। বাকের কিছু একটা আঁচ করতে পারলো। চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিলো।

বাড়ির কাছে আসতেই চৈতালি বাকের কে বলল-
-“ বাকের ভাই বাসায় যাব না। আমাকে এমন কোনো জায়গায় নিয়ে যাবেন যেখানে বসে নিরালায় একটু কাঁদতে পারবো।
-“ আরিয়ান কিছু বলেছে বা করছে আপনার সাথে?
-“ লোকটা ভীষণ নোংরা প্রকৃতির। বাবা উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আমি উনাকে বিয়ে করতে চাই না। উনি আমায় রেসপেক্ট করে না।
-“ আপনার বাবা কে তাহলে বলুন আপনি বিয়ে করবেন না।
চৈতালি আর কিছু বললো না। সে কি বলে নি তার বাবা কে? তার বাবা উল্টো তার মা কে নিয়ে ভয় দেখিয়ে জোর করছে।

#চলবে?

20/12/2024

আর কোনো শখ নেইই; যা ছিলো হারিয়ে গেছে!😊💔

20/12/2024

আমি যে একজন স্টুডেন্ট,
এটা আমার একমাত্র বাসে ভাড়া দেওয়ার সময় মনে পড়ে..

20/12/2024

আনারকলি ❤️
মেহেরিন_আনজারা
পর্বসংখ্যা-(৭৪/৭৫)

পাখিগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে গায়ের মধ্যে রক্তপানির ছিঁটেফোঁটা পড়েছে জোহানের। মহলে ঢুকে একেবারে গোসল সেরে পরিপাটি হয়ে শিস বাজাতে বাজাতে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো। হঠাৎ দেখা হলো জোভানের সাথে। সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলো সে।

"বড় ভাইজানের ক্যামেরাটা দেখেছিস?"

"না।"

"মনে হয় কামরায়। যা তো নিয়ে আয়।"

"কী করবে তুমি?"

"ছবি তুলবো না?"

"তখন তো ভাইজানের কাছে দেখলাম।"

"নেই কামরায় রেখে আসছে মনে হয়।"

"জিজ্ঞেস করছো?"

"না। এতো কথা না বলে নিয়ে আয় যা।"

চটুল মেজাজে বললো জোভান।

"আচ্ছা।"

বিরক্তি নিয়ে চলে গেল জোভান। একটু আগে ক্যামেরার জন্য গিয়েছিলো দেখলো আশফাকের গলায় নেই। গোলাপবাহারের কারণে চেঁচামেচি করছে আশফাক। ঘটনাটার কিছুটা শুনেছিলো তাই ক্যামেরার কথা জিজ্ঞেস করতে নিয়েও করলো না। শিস বাজাতে বাজাতে আশফাকের কামরায় সামনে আসতেই দেখলো দরজা বন্ধ। ভাবলো আশফাক কামরায় তাই নক করলো।

"ভাইজান,তোমার ক্যামেরাটা দাও তো।"

অনেকক্ষণ ধরে দরজায় নক হওয়ায় বুক থেকে হাঁটু অব্ধি টাওয়াল পেঁচিয়ে হাম্মামখানা থেকে বেরিয়ে এলো অনামিকা। ভাবলো আশফাক এসেছে। এখনো সম্পূর্ণ পরিষ্কার হওয়া শেষ হয়নি তার। চুলের মধ্যে মাটি,কচুরিপানার শিকড় লেগে গিয়েছে এইসব পরিষ্কার করতে যথেষ্ট সময় লাগছে। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ রেখে হাম্মামখানার দরজা লক না করে চাপিয়ে রেখেছে যেহেতু এখন কেউ নেই কামরায় তাই আর ভয়ও হচ্ছিলো। তাই নক করার শব্দ কর্ণগোচর হয়।

"কী হলো খোলো।"

"খুলছি দাঁড়ান।"

"আরো খোলো না! এতক্ষণ লাগে!"

"এই তো খুলি।"

আশফাক ভেবে তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতেই চমকে গেল অনামিকা তদ্রূপ ভিতরে তাকাতেই চমকে উঠলো জোহানও। বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলাতেই ভড়কে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিলো অনামিকা। চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইলো জোহান। ঠিক কী দেখলো বুঝতে পারলো না। সে যেটা দেখেছে এটা কি সত্যি? না ভুল নয় সত্যি! থম মে'রে কাঁপতে লাগলো অনামিকা। এবার কী হবে? কিছুই ভাবতে পারছে না সে। কাঁপতে কাঁপতে আকস্মিক জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে।
____

একজন দাসীর মুখ থেকে ঘটনাটির ইতিবৃত্তান্ত শুনতেই কৌশলে উঠে গেলেন বেগমবাহার। ঘটনাটি মেহমানদের কানে যেন না পৌঁছায় সেটাও অবগত করলেন; তবে মনঃক্ষুণ্ণ হলেন গোলাপবাহারের প্রতি। আংশিক শুনতেই উঠে এলেন জাহানারা জোয়ার্দারও। দেখলেন পুকুর ঘাটে পড়ে আছে গোলাপবাহার। অবস্থা তার প্রায় আধমরা। এগিয়ে গেলেন দু'জনই। দূর থেকে আসা সাগরের ঢেউয়ের সাথে বাতাসের শোঁশোঁ শব্দে গর্জন কানে তালা লাগিয়ে দিয়েছে যেন। বুনোফুলের মনমাতানো সৌরভও যেন ঝাঁঝালো মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। খুবই বিরক্ত লাগছে আশফাকের। হন্য হয়ে কয়েকজন ভৃত্যকে নিয়ে আংটিটা খুঁজতে লাগলো। এই আংটি না পেলে অনামিকা যে আজ জ্ঞান হারাবে সেটা সম্পর্কে অবগত সে। সেদিন কি পাগলামিটাই না করলো মেয়েটা সে আর নাই-বা বলি! বিরক্তি নিয়েও খুঁজতে লাগলো টর্চ লাইট দিয়ে।

"এইসব কী আশফাক?"

"যেমন কর্ম তেমন ফল।"

"তোমার বউয়ের জন্য এমনটা করেছো তাই না?"

"হ্যাঁ।"

"বউকে পুরুষের মতো করে ভালোবাসো সম্মান পাবে। কাপুরুষের মতো ভালোবাসলে বউ হাতে চুড়ি আর পড়নে শাড়ি পড়িয়ে দিবে। এই বউয়ের জন্য কত বড় জঘন্য কাজ করেছো ভেবেছো একবার?"

"মন্দ বলেননি ফুপি। আমি যদি ভুল না হই আপনিও ফুপার হাতে চুড়ি আর শাড়ি পরিয়ে রেখেছেন ভুল বললাম কি?"

অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেন। পরোয়া করলো না আশফাক। গোলাপবাহারকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। অনেক খুঁজেও পাওয়া গেল না আংটিটা। সম্ভবত পানির মধ্যে পড়ে গিয়েছে। কীভাবে বুঝ দিবে নাছোড়বান্দা মেয়েটাকে ভাবতেই মস্তিষ্কের মধ্যে কিলবিল করতে লাগলো যন্ত্রণার পোকারা।
___

মহল থেকে বেরিয়ে অন্ধকারের মধ্যে একাকী একটি বহু বছরের পুরোনো প্রকাণ্ড গাছের নিচে চোখ বুজে বসে রইলো জোহান। তিতিরপাখি আর কাচপোকাগুলো কেমন ডাকছে। থেকে থেকে হুতোমপেঁচার ডাকও শোনা যাচ্ছে। একটু দূরে দু একটা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ আর কিচিরমিচির ডাক শুনতে পেলো। ঝগড়া লেগেছে বোধহয় পাখি দম্পতিরা; হতেও তো পারে! দূর পাহাড়ের কোনো এক চূড়া হতে ভেসে আসছে বাঁশির আর্তনাদ মাখা সুর! জমিদার বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে শিয়ালের হুক্কাহুয়া শোনা যাচ্ছে। কেমন ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দু'চোখ বুজে বসে রইলো জোহান। তার চোখের মণিতে ভেসে উঠলো হীরকচূর্ণ পাথরের ন্যায় বিন্দু বিন্দু জলসিক্ত অনামিকার আবেদনময়ী ওই দৃশ্যটি। মুখের সৌন্দর্য বাদ,জলসিক্ত বক্ষবিভাজন সহ নগ্ন হাঁটু জোড়ার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কেমন শরীরটা উষ্ণ হয়ে উঠলো। বেশি কিছু না এতো সুন্দর ধবল সবল ফর্সা হাঁটু কারো হয় তা জানা ছিলো না জোহানের। জীবনে এমন দৃশ্যে অনামিকাকে দেখবে কখনো কল্পনাও করেনি। মানে কী ছিলো এটা শুধু তার মস্তিষ্কে সার্কেলের ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে! এই বয়সে অনেক সুন্দরী রূপবতী নারী ভোগ করেছে সে কিন্তু তার চোখে এতো সুন্দরী আর এতো আকর্ষণীয় ফিগার অনামিকার ছাড়া আর কাউকে দেখেনি। ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে তার ভাষা বোঝানো অসম্ভব! দৃশ্যটি অক্ষিপটে ভেসে উঠতেই শিরদাঁড়া বেয়ে সর্পিল গতিতে হীম শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। একটা ঘোরের মধ্যে আঁটকে গেল জোহান। তার মানে তার ভাই সবই জানতো! আর মেয়েটা সুন্দরী বলে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে দু'জন! কিন্তু কেন জানি তার ভাইয়ের সাথে মানতে পারছে না মেয়েটাকে। এমন একটা আকর্ষণীয় ফিগারওয়ালা মেয়ে সে-ই ডিজার্ভ করে তার ওমন কাঠখোট্টা রসকষহীন ভাই না।

জোহানের দেরী দেখে ভীষণ রাগ হয় জোভানের। তেঁতে আছে জায়ানও। উৎসবমুখর এতো সুন্দর একটা মুহূর্তে গোলাপবাহারের কি এমন কাজ করাটা আদোও উচিত হয়েছে? ওই গোলাপবাহার তো তার মানসম্মান সব নষ্ট করে দিয়েছে ইভেন তাকে ছোটও করেছে ভাইয়ের সামনে। লজ্জায় নাক-মুখ সব কাটা গেল। রাগে-জিদে মাথা ফেটে যাচ্ছে,তবুও স্থির রাখলো নিজেকে।

"জোহান কইরে?"

"ওকে ক্যামেরা আনতে পাঠিয়েছি।"

"এতক্ষণ লাগে আনতে?"

"সেটাই তো!"

"ডেকে নিয়ে আয় যা।"

"যাচ্ছি।"

জোহানকে খুঁজতে লাগলো জোভান। দেখলো অন্ধকারের মধ্যে একটা গাছের নিচে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো বসে রয়েছে। আচমকা একটা লাথি মা'র'তেই পড়ে গিয়ে হঠাৎ আক্রমণে ঘাবড়ে গেল জোহান।

"তোরে কী বললাম?"

প্রতিক্রিয়া করলো না জোহান।

"শালা কথা বলোস না কেন? তুই কি ধ্যানে বসেছিস?"

মৌন রইলো জোহান।

"একটাও কাজও ঠিকঠাক মতো পারে না। বলছি ক্যামেরাটা নিয়ে আয় শালা ধ্যান করতে বসেছে! শালারে পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে করছে! ক্যামেরা কই?"

কিছুই বললো না জোহান। আরেকটা লাথি দিয়ে চলে গেল। আগুনের তাপে আর কাজের চাপে মেজাজ চটে আছে তার।

"কিরে জোহান কই?"

"ধ্যানে বসেছে।"

"কী?"

"গিয়ে দেখো পারলে,আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করো না।"

বিরক্ত হয় জায়ান।

"কোথায়?"

"ওইদিকে।"

এগিয়ে যেতে দেখলো সত্যি সত্যি চোখ বুজে বসে রয়েছে জোহান। তাজ্জব বনলো জায়ান। এমনটা পূর্বে কখনো হয়নি।

"জোহান,কী হয়েছে তোর?"

কিছু বললো না।

"এই! কী হয়েছে?এভাবে ধ্যানে বসলি কেন? খাবি না?"

লক্ষ্য করলো বিড়বিড় করছে জোহান। কানের কাছে মুখ নিতেই শুনতে পেলো,"মেয়েটা খুব সুন্দরী! ভীষণ সুন্দরী! ও ছলনা করছে আমাদের সাথে।"

"কোন মেয়ে?"

"আমার চোখে দেখা সে সেরা সুন্দরী আর তার আকর্ষণীয় ফিগার! ওফ!"

"এই জোহান কী হয়েছে তোর বলতো? কী বলিস এগুলো?"

"ফুলো ফুলো গালে লালিমা,ঠোঁট দুটো যেন রক্তের মতো টুকটুকে লাল! স্নো হোয়াইটের গল্প শুনেছো নিশ্চয়ই ঠিক তেমন!"

মাথায় একটা থাপ্পড় দিলো।

"কি সব আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছিস? গাঞ্জা খেয়েছিস?"

"তার পরিপক্ব অভিব্যক্তি,ষোলো আনায় পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের মাদকতায় আমি পাগল হয়ে গেলাম। ওফ!"

"কী বললি?"

"আমি পাগল হয়ে গেলাম।"

"কেন?"

অনামিকার সেই জলসিক্ত দেহের আবেদনময়ী দৃশ্যটি কল্পনা করতে করতে অন্য একটা জগতে চলে গেল জোহান। ভীষণ অস্বাভাবিক দেখালো তাকে।

"কী হয়েছে বল?"

"পৃথিবীতে অনেক সুন্দরী নারী রয়েছে,অনেক সুন্দরী দেখেছি কিন্তু এই রকম স্নিগ্ধ,মায়াবী মুখশ্রী সুন্দরী নারী আর কোথাও দেখিনি!"

"মানে?"

"বহু সুন্দরী নারী অনেকেই আছে কিন্তু এই রকম সৌন্দর্য,এক্সপ্রেশন,চাহনী,তার হাসি,তার হরিণটানা চোখ,স্নিগ্ধ চেহারার মতো আর কেউ নেই। তার দুটি চোখ একদিকে আর সারা বাংলার সুন্দরী নারীরা একদিকে।"

কল্পনা করতে লাগলো জোহান। সে কল্পনায় দেখতে লাগলো অনামিকা হাসছে,কথা বলছে ইত্যাদি।

"এই কী বলছিস এইসব? পাগল হয়েছিস?"

ননস্টপ বলতে লাগলো জোহান। থামার নামগন্ধ নেই।

"সত্যি বলছি!"

"কীসের সত্যি?"

"সকল সুন্দরীকে এক করলে সে এগিয়ে থাকবে!"

"মানে?"

"তার চোখের দিকে তাকিয়ে হাজারো মহাকাব্য রচনা করা সম্ভব! আমাদের সাথে করা তার দক্ষ অভিনয় শৈলী,তার কথার বলার ধরণ,উচ্চারণ,তার অভিব্যক্তি,তার দৈহিক সৌন্দর্য,তার চাঁদপানা মুখশ্রী,গোলাপের মতো হাসি,তার হরিণটানা নয়নযুগল!ওফ! আমাকে বুঁদ করে ফেলেছে এক সেকেন্ডে! আমি আহত হলাম তার সৌন্দর্যের ধারালো তরবারিতে। এই মুগ্ধতা,এই রেশ কয়েক হাজার যুগ অব্ধি থাকবে। তাকে দেখার পর থেকে কিছুতেই আমার রেশ কাটছে না,কাটবেও না কখনও। আর এই রেশ থেকে আমি কখনো বেরুতেও চাই না,চাইবোও না। তোমরা বিরক্ত করো না আমাকে।"

"কী বললি?"

"এতো সুন্দরের অধিকারী শত জনমে একজনই হয়। অনেকেই আছে এমন কিন্তু তার রূপের কাছাকাছি কেউ নেই,কেউ যেতে পারবেও না।"

জোভান এসে দাঁড়ালো।

"কী বলে ও?"

"কোন সুন্দরী মেয়ে দেখেছে তার কথা বলছে।"

"লাথি দাও পাগলকে। হ্লার ধ্যান ভাঙ্গুক। সুন্দরী মেয়ে দেখলে এমন করা লাগে বুঝি!"

বেশ সময় পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক হলো না জোহান। আবোল-তাবোল এইভাবেই বলতে লাগলো। পুষ্করিণী থেকে এক বালতি ঠাণ্ডা পানি এসে ঢেলে দিলো মাথায় তাতেও লাভ হলো না। সবাই ভাবলো জ্বীনে আছর করেছে তাকে। মহলে নিয়ে যাওয়া হলো,ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার ঘুমের মেডিসিন দিয়ে গেলেন। চিন্তিত হয়ে পড়লেন জোয়ার্দার সাহেব।
___

এমন একটা কাণ্ড ঘটলো যে কিছুতেই স্থির থাকতে পারছে না আশফাক। কীভাবে থাকবে?এতো সুন্দর উৎসবমুখর একটা মুহূর্তে একি হয়ে গেল! রকিকে বলে দিয়েছিলো মিনুদের দিকে খেয়াল রাখতে কখন না জানি তার সর্বনাশা ভাইয়েরা সর্বনাশ ঘটায় তাই। আর নিজে খেয়াল এবং চোখ রেখেছিলো অনামিকা আর তার ভাইদের উপর। সবটাই দক্ষহাতে সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করছিলো কিন্তু চোখের পলকে গোলাপবাহার যে সুযোগ বুঝে এমনটা করে বসবে ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি। এদিকটা অমিতকে সামলাতে বলে মহলে ফিরে গেল। একা মহলে থাকতে ভয় পাবে অনামিকা। বার কয়েক নক করার পরেও যখন ডোর খুললো না চিন্তিত হয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো ফ্লোরে পড়ে আছে অনামিকা। ঘাবড়ে গেল আশফাক। দ্রুত হাঁটু গেঁড়ে বসলো,শরীরে হাত রাখতেই বুঝতে পারলো হীম হয়ে আছে। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রেখেছে। চুলগুলো থেকে পানি নেয়নি ভেজা। ফ্লোর ভিজে আছে। বোধগম্য হলো না কিছুই। পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে বিছানায় শোয়ালো। চুলের পানি নিয়ে গায়ের উপর কম্বল মুড়ি দিলো। হাতে-পায়ে গরম তেল মালিশ করে উষ্ণ করার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে তাকাতেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো আশফাকের চিন্তাগ্রস্ত মুখাবয়ব। হুহু করে কেঁদে উঠলো অনামিকা।

"ভৃঙ্গরানি কী হয়েছে তোমার?"

কিছু বললো না অনামিকা। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো।

"তুমি ওইভাবে কেন পড়ে রয়েছিলে বলো?"

কিছুই বললো না নীরব রইলো অনামিকা।

"রিংটার জন্য কান্না করছো? চিন্তা করো না কাল ঠিকই পেয়ে যাবো।"

"লাগবে না! লাগবে না ওই আংটি! কিচ্ছু লাগবে না!"

চেঁচিয়ে উঠায় ভড়কে গেল আশফাক।

"কী হয়েছে? উত্তেজিত হলে কেন?"

"ওই আংটি একটা অভিশাপ!"

মুখ চেপে ধরলো আশফাক।

"চুপ! এমন জঘন্য কথা আর কখনো বলো না। আংটির কোনো দোষ নেই! বরং কিছু কূটবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আংটিটা লুফে নেওয়ার জন্য আমাদের পিছনে লেগেছে। লাগুক! কতো লাগতে পারে! শোনো,টিকে থাকার লড়াইয়ে এমন ফাঁক-ফোকর আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। কেউ আমাদেরকে খুঁজে দিবে না বা জায়গা দিবে না। নিজের জায়গা নিজেদেরকে করে নিতে হবে। ওরা আমাদের পিছনে লেগেছে অনিষ্ট করার জন্য কিন্তু আল্লাহ চাইলে কিছু করতে পারবে না। তুমি ভেবো না,সকালে আংটিটা খুঁজে বের করবো আমি।"

কোনো কথাই কানে প্রবেশ করছে না অনামিকার। অজস্র কান্না করতে লাগলো কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছে না জোহানের এই বিষয়টি। কীভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বললে নিশ্চয়ই আশফাক চিন্তা করবে কিংবা ঝামেলা বাঁধাবে কেন তাদের ডোরে নক করেছে ইত্যাদি। আর এতে ভাইয়ে ভাইয়ে মনকষাকষি তো হবেই আবারও রণক্ষেত্র বাঁধবে যা অনামিকা চায় না। কিন্তু কী করবে? মানুষটার জীবন বিপন্নের মুখে ঠেলে দিয়ে সে-কি সুখে থাকতে পারবে? না! একদম পারবে না! যত যাইহোক সে মানুষটার কাছে তার সতীত্ব বিসর্জন দিয়েছে,মানুষটাকে সে ভীষণ ভালোবাসে। মানুষটার খারাপ সে কখনো চায় না। পারবে না মানুষটার জীবন বিপন্নের মুখে ঠেলে দিতে। আচ্ছা,সে-কি ডিভোর্স নিয়ে চলে যাবে?এতে যদি মানুষটা ভালো থাকে তাহলে সেটাই করবে সে। কষ্ট হবে এই আরকি! হুহু করে কাঁদতে লাগলো। নানান চিন্তা-চেতনায় বিভোর হলো।
___

নির্জন নিশুতি রাত। মাঝরাতের দিকে গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো অনামিকার। ঘুম মে'রে সারারাত জলপট্টি দিলো আশফাক। আজেবাজে দুনিয়ার সব কথা বলতে লাগলো অস্পষ্ট স্বরে। আশফাক ভাবলো রিংটির জন্য এমন করছে অনামিকা কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হঠাৎ একটা সিদ্ধান্ত নিলো।

"ভৃঙ্গরানি একটা জিনিস দেখবে?"

নিভু নিভু চোখে তাকালো অনামিকা।

"কী?"

"যাবে একজায়গায়?"

"এখন! এতোরাতে!"

"হুম। আমার বিশ্বাস তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।"

আশফাকের দিকে তাকিয়ে রইলো অনামিকা।

"চলো।"

গায়ে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কমেছে। আশফাকের বিশ্বাস ওখানে গেলে অনামিকা সুস্থ হয়ে উঠবে। ধরে উঠালো। একটা টর্চ লাইট নিয়ে অনামিকার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে হঠাৎ একটা রুমে ঢুকলো।

"কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?"

"গেলেই দেখতে পাবে।"

সেই রুমের ভিতর দিয়ে পাতালে করা নিচতলায় নেমে গেল দু'জন। অবাক হয় অনামিকা এই বাড়িতে পাতালের নিচে থাকা আরেকটি তলা দেখে যেটা বাইরে থেকে বুঝা যায় না। তবে ভীষণ ভয় হচ্ছে! কোথায় নিয়ে যাচ্ছে মানুষটা তাকে? আতঙ্কিত হলো অনামিকা তবে নীরব রইলো। দেখতে দেখতে একটা কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালো। দেখলো মাকড়সায় পরিপূর্ণ কক্ষের আশপাশ। বুঝাই যাচ্ছে তেমন কেউ আসে না এদিকটায়। হুট করে অজানা উত্তেজনায় শরীর গরম হয়ে গেল অসুস্থতাও যেন লেজ তুলে পালিয়ে গেল। বেশ সুস্থ লাগছে নিজেকে। এটা কি সত্যি কোনো ম্যাজিক? চাবি খুলে ভিতরে ঢুকতেই চমকায় অনামিকা। ভিতরটায় বেশ কতগুলো কাসা,পিতলের সিন্দুক। কৌতুহলী হয় অনামিকা। একটা সিন্দুক খুলতেই চোখগুলো কেমন ঝলসে এলো। কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো। দেখলো সোনা আর সোনার গয়নায় পরিপূর্ণ! সেখানে নানারকম দামী পাথরের গয়নাও দেখা গেল। দেখা গেল রূপা সহ হীরে,মণি-মুক্তো আর জহরতের গয়না। টর্চ লাইটের আলো পড়তেই কেমন চিকচিক করে ঝলমল করে উঠলো সূর্যরশ্মির মতো। চোখগুলো ধাঁধিয়ে এলো।

"এতো গয়না!"

মৃদু হাসলো আশফাক।

"কার এইসব?"

সবগুলো সিন্দুক খুলে দেখালো,অনামিকার মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। মানে এতো এতো গয়না!

"তোমার যেটা পছন্দ নাও।"

"লাগবে না চলুন।"

"ভয় পাচ্ছ?"

অনামিকার সুশ্রী গালে হাত রাখলো আশফাক। চোখ বুজে রইলো সে।

"চলুন ফিরি।"

আশফাক ভেবেছিলো অনামিকা খুশি হবে কিংবা উৎকণ্ঠা হয়ে ধরে দেখতে চাইবে অথবা নিবে আর তার আংটিটির মায়াও ছেড়ে দিবে কিন্তু তেমন কিছুই করলো না অনামিকা। বরং কেমন অস্থির দেখালো।

"তোমার পছন্দের একটা গয়না নাও।"

"লাগবে না! এইসব কিছু আমাকে খুশি করতে পারবে না।"

"কেন?"

"চাই না কিছু চলুন।"

মলিন হয় মন,বেরিয়ে এলো দু'জন। হঠাৎ কারো গুঙিয়ে উঠা কান্নার স্বর শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়ালো অনামিকা।

"কী হলো আসো!"

"কেউ কাঁদছে!"

চমকায় আশফাক। একটু স্থির হতেই সেও শুনতে পেলো।

"হ্যাঁ,তাই তো!"

উৎকণ্ঠা হয়ে কান্নার স্বর অনুসরণ করে হাঁটতে লাগলো দু'জন। অজানা আতঙ্কে কাঁপতে লাগলো অনামিকা। বেশ কতগুলো পরিত্যক্ত কক্ষ চেক করেও তেমন কিছু পেলো না। তবে কিছু ছেঁড়াবেড়া,রক্তে মাখানো শাড়ি,জামাকাপড় দেখতে পেলো। আতঙ্কিত হয় অনামিকা। কী ভয়ানক জায়গায় এসে পড়েছে সে! ভয়ে বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। চারদিকে টর্চ মা'র'তে লাগলো আশফাক। এতো এতো কক্ষ পুরো বাড়িজুড়ে যে কোনটা রেখে কোনটা চেক করবে! একটা কক্ষের পাশ দিয়ে যেতেই কান্নার স্বর স্পষ্ট হতেই দেখলো তালা ঝুলানো। শিওর হলো যে এখানেই কেউ আছে সম্ভবত তার ভাইয়েরা আবারও কোনো নারীকে তুলে এনেছে। কী যে করবে ভেবে পায় না আশফাক। অনামিকার কাছেও বা লুকিয়ে কী লাভ সেও তো সেক্সুয়্যাল হ্যারেজমেন্টের স্বীকার হয়েছিলো তার ভাইদের। একটা পাথর এনে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো অনেকগুলো প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে। বেশিরভাগ উপজাতিয় সুন্দরী নারী। মেয়েগুলোর অবস্থা খুবই বিদঘুটে। হতে পারে তাদের নির্যাতন করেছে কিংবা রেপ। ভীষণ খারাপ লাগলো দু'জনের। ওদের দেখতেই কেঁপে উঠে কাঁদতে লাগলো মেয়েগুলো। ছোট্ট ছোট্ট বারো-তেরো বছর বয়সী বেশ কতগুলো মেয়েকেও দেখা গেল। আশফাক কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। সে জানে এটা তার ভাইদের কাজ। হঠাৎ কয়েকটা উপজাতি মেয়ে ছুটে এসে পায়ে পড়লো আশফাকের। হতভম্ব হলো সে। পা জড়িয়ে তাদের ভাষায় কিছু বলছে যেটা আশফাক বুঝতে পারলেও অনামিকা বুঝলো না। তাদের মাথায় হাত রেখে সেই ভাষায় কথা বলে আশ্বস্ত করলো মেয়েগুলোকে রক্ষা করবে। অতঃপর জমিদার বাড়ির জঙ্গলের শেষপ্রান্তে সমাপ্ত হওয়া সুরঙ্গপথ দিয়ে মেয়েগুলোকে বের করে দিলো। এরপর মহলের পথে পা বাড়াতেই মুখোমুখি হলো জমিদার বাড়ির পাহাদার করিম মিয়ার। এতো রাতে ওদের দু'জনকে দেখতেই চমকে উঠে ঘাবড়ে গেলেন। আশফাককে কেমন দেখালো চোখ-মুখ শক্ত। ভড়াকালো করিম মিয়া। আচমকা গলা চেপে ধরলো করিম মিয়ার।

"কতদিন ধরে চলছে এইসব?"

"কোনসব আব্বাজান?"

নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো মধ্যবয়সী করিম মিয়া।

"কতদিন ধরে এবাড়িতে আবারও নারীদের তুলে আনা হচ্ছে?"

"আমি কিছু জানি না আব্বাজান।"

গলায় চাপ প্রয়োগ করতেই ককিয়ে উঠলো।

"বলো।"

"আমি কিছু জানি না।"

"কে জানে বলো?"

"আমি কিচ্ছু জানি না।"

"মে'রে পুঁতে ফেলি?"

"না আব্বাজান আপনার পায়ে পড়ি আমারে মাইরেন না।"

"সত্যিটা বলো।"

"আমারে এইসব বিষয়ে জানাইতে নিষেধ করছে।"

"কে?"

"আপনার ভাইরা।"

"জমিদার সাহেব জানে?"

"না।"

"আমাকে জানাওনি কেন?"

"আমারে বলছে কেউ যেন জানতে না পারে।"

"কতদিন থেকে এইসব চলছে?"

"আপনি শহরে যাওয়ার পর থেইকা।"

"মানে?"

"সত্য কইতাছি। জমিদার সাহেবের জন্য যত দাসী আনা হইতো এরপর কিছু দাসী আ'ত্ম'হ'ত্যা করতো,কেউ মা'রা যেত,কেউ পালিয়ে যেত আর যারা থাকতো তাদেরকে বিক্রি কইরা দিতো। এরপর জাহাজ দিয়া পাঁচার কইরা দিতো বিদেশে।"

চমকালো আশফাক। অবশ্য তারা যেখানে আছে সেখানে জাহাজে করে পাঁচার করে দেওয়াটাই সহজলভ্য। সে অবশ্য জলসাঘরের জন্য আনা দাসীদের খবর কখনো জানার আগ্রহ করতো না। তার মানে অনেক খারাপই হতো দাসীদের সাথে। অনামিকার সারা শরীর কেমন কাঁপছে! ছেড়ে দিলো করিম মিয়াকে।

"আজকের পর থেকে সব জানাবে আমাকে নয়তো পুঁতে ফেলবো তোমাকে।"

"জি আব্বাজান।"

মহলে ঢুকে গেল দু'জন। আর একটি কথাও বললো না অনামিকা। সে মুক্তি চায় এই সংসার থেকে। তার কপালে বোধহয় সুখ থেকেও নেই! এতো সুখের মধ্যেও শুধু দুঃখ আর বিপদ। কি লাভ এতো আভিজাত্যের মধ্যে থেকে যদি প্রিয় মানুষটার সঙ্গে শেষ অব্ধি না থাকতে পারে তাহলে? অনর্গল চোখের জল বিসর্জন দিতে লাগলো। পাশাপাশি শুয়ে রইলো দু'জন অথচ যোজন যোজন দূরত্ব তাদের মধ্যে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো আশফাক।

"তুমি তখন জানতে চাইলে এতো এতো সোনা কোথায় থেকে এলো। আসলেই এইসব আমাদের বলা যায় না; তবে আমাদের কাছেই আমানত রয়েছে।"

নীরব রইলো অনামিকা। প্রতিত্তোর না পেয়ে বলতে লাগলো আশফাক।

"যখন দেশে যুদ্ধ শুরু হয় তখন আমাদের এই পুরো গ্রামে মুসলিমদের চাইতেও হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান কিংবা যত ভিন্ন ধর্মের লোক ছিলো সবার উপর বেশি নির্যাতন হয়েছিলো। এরপর তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের অর্জিত এবং রক্ষিত যত সোনার গয়না ছিলো কেউ বিক্রি করে চলে গিয়েছে কেউ আমানত রেখে চলে গিয়েছে আমার নানার কাছে। যেহেতু তিনি এবং আমার দাদা দু'জনই জমিদার বংশের ছেলে কিংবা তৎকালীন জমিদার ছিলেন। উনারা আবার দু'জন ভাই ছিলেন। সে যাইহোক,এরপর নানাভাই এখানেই সব অর্থ প্রাচুর্য সংরক্ষণ করে রাখেন এবং এখানেই আশ্রয় নেন যুদ্ধকালীন সময়। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যারা ফেরত এসেছিলো তারা কেউ তাদের গয়না ফেরত নিয়েছে,কেউ বিক্রি করেছে তো কেউ এখনো নেয়নি। সেইভাবে আমরা এতো সোনা গয়নার মালিক আর ওই সোনাগুলো আমানতের। এখনো কেউ নিতে আসেনি। তাই ওগুলো ওইভাবে পড়ে আছে। আর ওই সোনার সিন্দুকগুলোর দায়িত্ব নানাভাই আমার হাতে দিয়েছিলেন। যদিও এই সোনার ভাণ্ডারের খবর আব্বাজান,আম্মাজান এবং আমি জানি আর আজ তুমি জানলে। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে আরো কেউও জানে। কারণ সিন্দুক খোলার পর আমি টের পেয়েছিলাম বেশকিছু গয়নার জায়গা খালি। হতে পারে আমার ভাইয়েরা ওখান থেকে সোনার গয়না সরিয়েছে যেটা আমার অজান্তেই। আমি শিওর এই কারণে ওরা ছাড়া এই জায়গায় আসার সাহস আর কারো নেই। হতে পারে গোপনে আব্বাজান থেকে চাবি নিয়ে ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়েছে। কিন্তু কাজটা ওরা ঠিক করেনি। এগুলো আমানতের জিনিস খেয়ানত করাটা উচিত হয়নি।"

চমকে তাকায় অনামিকা।

"জাহান্নামে যাক! আপনি মাথা ঘামাবেন না। সব নিয়ে যাক। তবুও আপনি সুস্থ থাকুন।"

"কী বললে?"

"ঠিক বলেছি। ওই সোনার ভান্ডার হজম করে ওরা যদি ভালো থাকে তো থাকুক না।"

"এগুলো আমানতের।"

"থাকুক তাতে কী! নিজে বাঁচলে বাপের নাম।"

"স্বার্থপর হতে বলছো?"

"প্রয়োজনে হবেন! আপনার মা এবং আমার জন্য হবেন।"

বিস্ময় নিয়ে তাকায় আশফাক।

"কী হয়েছে তোমার বলো তো! কেমন আতঙ্কিত দেখাচ্ছে তোমাকে!"

"আপনি সত্ত্বার কসম করে বলুন সব জাহান্নামে যাক আপনি আপনার ভাইদের ব্যপারে নাক গলাবেন না বলুন।"

"অসম্ভব! ওরা অন্যায় করছে এটা আমি সুস্থ মস্তিষ্কের একজন মানুষ হয়ে কখনো মানতে পারি না।"

"আজ-কাল ভালোর দাম নেই! যত খারাপ হতে পারবেন দুনিয়া ততটাই আপনার পায়ে নত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করবে।"

"ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!"

"চাই না বুঝতে! আপনি বুঝুন আমাকে! নাক গলাবেন না বলে দিচ্ছি।"

"ভৃঙ্গরানি আমার কথা শোনো!"

"বিধবা করতে মন চাইছে আমাকে?"

হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো আশফাক।

"কীসের সাথে কী?"

"আপনার এইসব কৌতুহলী না জানি মরণকামড়ের দশা হয়।"

"কিচ্ছু হবে না।"

"অসুরের শক্তি সবসময়ই শক্তিশালী। ওরা তিনজন আপনি একজন। সেই সাথে আছে আপনার কাকাও পারবেন ওদের সাথে?"

"আমার কথা শোনো!"

"সত্যি বলতে কি জানেন,আপনাদের পুরুষদের ভালোবাসা না ঠিক ওই জোনাকপোকার মতো ক্ষণে জ্বলে ক্ষণে নিভে! আপনার ভালোবাসাও তদ্রূপ আমার জন্য তেমন।"

"ভুল বুঝেছো!"

"মুক্তি দিন আমাকে।"

কড়জোড় করলো অনামিকা। হতভম্ব নয়নে তাকালো আশফাক।

"আবারও পুরোনো ব্যামো উঠেছে।"

"করবো না আপনার সংসার।"

শোয়া থেকে উঠে গেল।

"কিছু পুরুষ মানুষ আছে যারা স্ত্রীর চোখের দিকে তাকালে পুরো পৃথিবী বুঝে যায়। আর কিছু পুরুষ আছে যারা স্ত্রীর সঙ্গে একশো বছর জীবন কাটানোর পরেও স্ত্রীকে বুঝতে পারে না। স্ত্রী কিসে খুশি হয় আর কিসে দুঃখ পায় এটাই কিছু কিছু মেয়ের দুঃখ!"

"আমি আবার কী করলাম?"

"মেয়েদের যদি স্বামী ভালো না হলে এই পৃথিবীই জাহান্নাম। এর থেকে বড় শাস্তি বা কষ্ট মৃত্যুর পর আর কি হতে পারে জানা নেই।"

চলে গেল বসার রুমে। সোফার উপর শুয়ে পড়লো। হতভম্ব হলো আশফাক। মেজাজ দেখালো কেন মেয়েটা? উঠে এসে গায়ে হাত রাখতেই ফেলে দিলো।

"ঠাণ্ডা তো! বিছানায় চলো।"

"যান আপনি।"

"কথা শুনবে না মেয়ে?"

"আপনি শুনেন আমার কথা?"

"রাগলে কেন?"

"কিচ্ছু না।"

শক্ত করে চেপে ধরে বিছানায় নিয়ে গেল।
___

সকালে ঘুম থেকে উঠলো অনামিকা। পরনের শাড়ি চেঞ্জ করা লাগবে। ড্রয়ার খুলে শাড়ি নিতে গিয়ে দেখলো বেশকিছু জামাকাপড় নেই। সারা আলমারি,আলনা সবকিছু খুঁজেও পেলো না। ব্যালকনিতে চেক করলো কিন্তু নেই। শাড়ি আছে কিন্তু শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা পেটিকোট,ব্লাউজ আর তার গোপন বস্ত্রগুলো নেই। চিন্তিত হয় অনামিকা। কোথায় থাকতে পারে কিংবা কে নিতে পারে ভাবনায় বিভোর হলো। আশফাক ঘুমাচ্ছে; এগিয়ে গিয়ে ঝাঁকি দিলো।

"শুনছেন!"

আশফাক তখনো গভীর ঘুমে। আবারও ঝাঁকি দিতেই ঘুম হালকা হয়ে এলো।

"শুনছেন!"

"হুঁ!"

"ব্যালকনি থেকে আমার কাপড়চোপড় আপনি এনে রেখেছেন কাল?"

"না। কী হয়েছে?"

অবশ্য অনামিকা কিংবা ভৃত্যদের দিকে তাকিয়ে থাকে না আশফাক। সবসময়ই আসরের আযান হওয়ার পূর্বেই সে অনামিকার কাপড়চোপড় কামরায় নিয়ে আসে।

"বেশ কতগুলো কাপড়চোপড় পাচ্ছি না।"

"আছে কোথাও খুঁজে দেখো।"

"ভালো করে দেখেছি।"

"অন্যগুলো পরো।"

উঠে যায় অনামিকা। একটা শাড়ি নিয়ে হাম্মামখানায় যেতে যেতে ভাঁজ খুলতেই চমকালো। দেখলো আঁচলের এক কোনায় কাটা। আতঙ্কিত হলো অনামিকা। তার এতো সুন্দর শাড়ি এমনটা করলো কে? বিয়ের একমাস প্লাস হয়েছে সবে। এরমধ্যে প্রায় দু-তিনবার এই শাড়িটা পড়েছে; তখন ঠিক ছিলো। কামরায় ঢুকে আশফাককে ডাকলো।

"এই শুনছেন!"

"হুঁ!"

"দেখুন আমার শাড়ির আঁচল কেটে দিয়েছে।"

"কি!"

চমকে উঠে আশফাক। ঘুম চলে গেল চোখ থেকে।

"এই দেখুন।"

দেখলো সত্যি আঁচল কেটে নিয়ে গেছে। হতভম্ব হলো আশফাক।

"এই কাজ কে করেছে?"

"জানি না।"

"এটা পরার আর দরকার নেই অন্য শাড়ি পরো।"

সায় দেয় অনামিকা। তার যথেষ্ট শাড়ি আছে,শ্বাশুড়ি মা আর আশফাক তাকে ব্যান্ডেলে ব্যান্ডেলে শাড়ি দিয়েছে কিন্তু এই শাড়িটাও খুব সুন্দর। যতই মেয়েদের থাকুক তবুও ছোট একটা আঠা চলে যাওয়া টিপ কিংবা এক কানের একটা দুল হারিয়ে গেলেও মেয়েরা ফেলতে পারে না মায়ার জন্য। যত্ন করে সেই টিপটাও রেখে দেয় আয়নার এক কোনে। সেখানে এতো সুন্দর একটা শাড়িকে নষ্ট করে দিলো কোন হৃদয়হীন পাপী! ব্যথিত হয় চিত্ত। কীভাবে মায়া কাটাবে এতো সুন্দর শাড়িটার? কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি বের করলো। মাত্র একদিন পরেছে। সুতির তাঁতের শাড়ি,এতো সুন্দর ফিনিশিং আর আরামদায়ক বলে মাত্র একদিন পরে যত্ন করে রেখে দিয়েছে। ভাঁজ খুলে হাতে নিতেই দেখলো এই শাড়িটার দুইকোণেও কাটা। চেঁচিয়ে উঠলো অনামিকা।

"এই শাড়িটাও কাটা দেখুন।"

ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো আশফাক। ভীষণ রাগ হয়। কার এতো বড় দুঃসাহস এমন কাজ করে!

"আম্মাজানকে ডাকো।"

পরনের শাড়ি বদলে হাত-মুখ ধুয়ে বেগমবাহারকে ডেকে আনলো অনামিকা। সব শুনতেই চমকান তিনি।

"আর কী কী নিয়েছে?"

"এগুলোই দেখতে পেলাম আম্মা।"

"নিশ্চয়ই কেউ কালযাদু করার জন্য এগুলো নিয়েছে।"

"মানে?"

"হ্যাঁ। ব্যবহৃত বস্তু কিংবা কাপড়-চোপড় দিয়ে একজন মানুষকে খুব সহজে যাদুগ্রস্ত করা যায়।"

"কী বলছেন আম্মা!"

"এটাই সত্যি। সুতরাং যদি এই বিষয়ে সতকর্তা এবং সচেতনতা অবলম্বন না করতে পারে তাহলে আক্রান্ত হওয়ার পর এই কষ্টের বাহন বাহককেই বহন করতে হয়। মাথার চুল,দাড়ি,নখ,পরিধানের কাপড়-চোপড়,ব্যবহৃত পিরিয়ডের প্যাডসহ ইত্যাদি বস্তুগুলো দিয়ে একজন যাদুকর তার টার্গেট খুব সহজে ফাইনাল করতে পারে। সুতরাং যাদুগ্রস্ত হওয়ার পূর্বেই সচেতন হওয়া একান্তই জরুরী। আমি শিওর যেকেউ তোমাদের কালোযাদু করার জন্য এইসব নিয়েছে। তোমাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ-বিবাদ কিংবা বিচ্ছেদের জন্য। তার কারণ তোমাদের সুখ-শান্তি সহ্য করতে পারছে না সে বা তারা। আর যাদু অস্বীকার করার মতো কিছু নেই এটা সত্য। পবিত্র কোরআনেও যাদু সম্পর্কে উল্লেখিত আছে।"

"এখন কী হবে আম্মা?"

ভয়ে কাঁপতে লাগলো অনামিকা।

"বেশি বেশি চার কুল,আয়াতুল কুরশি,দোয়া-দরুদ পাঠ করবে আর শরীর বন্ধ রাখো। আর চিন্তা করো না,এই বিষয় নিয়ে ইউসুফের সঙ্গে কথা বলবো। ও এই বিষয়ে ভালো বুঝবে। তবে কাকপক্ষীটিকেও কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না এই ব্যপারে বুঝেছো?"

"জ্বী।"

চিন্তিত মুখে বেরিয়ে গেলেন তিনি। কে করতে পারে এই কাজ? মহলের পাঁচজনের উপর সন্দেহ সৃষ্টি হলো বেগমবাহারের। অন্যদিকে অনামিকার সন্দেহ সৃষ্টি হলো তাদের বাড়ির লোকজনদের উপর। এতোদিন এইসব কিছুই হয়নি,কিন্তু কাল তাদের বাড়ি থেকে আত্মীয়রা আসতেই আজ এমন হলো। আচ্ছা তার জেঠি কিংবা ফুপি এমনটা করেনি তো? করলেও হয়তো হিংসা থেকে করতে পারে! কিন্তু আরেকটা চিন্তার এবং লজ্জার বিষয় হলো,গত দু-দিন পূর্ব থেকে তার পিরিয়ড শুরু হয়েছিলো। তখন একটা প্যাড চেঞ্জ করে কাগজে মুড়িয়ে পলিব্যাগ পেঁচিয়ে কাপড়ের মধ্যে রেখেছিলো পরে সুযোগ বুঝে ফেলে দিবে ভেবে কিন্তু আর পেলো না। পরে ফেলতে গিয়ে দেখলো নেই। অনামিকা ভেবেছিলো আশফাক হয়তো ফেলে দিয়েছে। কারণ এর আগেরগুলোও সে গোপনে পুঁতে দিয়েছিলো। তাই লজ্জায় আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আচ্ছা,যাদু করার জন্য তার সেই প্যাডটি কেউ চুরি করে নিয়ে যায়নি তো!
______

চলবে~

Address

Cumilla

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Masud Rana Nehal posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Masud Rana Nehal:

Share