23/05/2022
মাদ্রাসায় পডুয়া!!
হাফেজা বোনের গল্প.....!!
লিখিকা👉 হাফেজা মীম আক্তার👈
পরিবারের বড় মেয়ে আমি,
স্বপ্ন ছিল আলেমা হব,
কিন্তু আমার বাবা একজন গরিব, টাকা পয়সা তেমন আমাদের ছিল না।
তাই হাফেজা হবার পর এক মহিলা মাদ্রাসায়, চাকুরি শুরু করছি।
৫ হাজার টাকা বেতন,
তাই দিয়ে আমাদের সংসার টা মোটামুটি চলত।
বয়স আমার চলে আসলো ১৯ বছরে...!
বিয়ের ঘটক আসলো:
আব্বু আমার বিয়ে দেবে,
একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, তাদের হাফেজা বউ দরকার।আমি বললাম আব্বু ছেলের মুখে দাড়ি আছে.?
নামাজ ঠিক মত পড়ে তো!!
আব্বু বললেন -
তোকে দেখতে আসবে তখন দেখে নিস।
আমাকে দেখতে আসলো,
কিন্তু ছেলের মুখে দাড়ি নেই,
তবে নামাজ পড়ে পাচ ওয়াক্ত।ওয়ালটন কম্পানিতে চাকুরি করে, আব্বু কে বললাম আব্বু বিয়ে করব না।
কারণ, ধনী লোক মানুষ আমার তেমন পছন্দ না। আর ছেলের বাবার কথা বার্তা গুলো তেমন সুবিধে নয়। ছেলের মুখে দাড়িও নেই।
তবুও আমার বাবা বললেন মা... বিয়েটা করে নে,,,
তখন এমন এক পরিস্থিতির শিকার ছিলাম,
আব্বু যেন আমাকে বিয়ে দিতে পারলেই টেনশন মুক্ত, আব্বুর দিকে তাকিয়ে নিজের স্বঁপ্নকে বিসর্জন দিয়ে, বিয়ের পিড়িতে বসলাম, বিয়েটা হয়ে গেল।
কিন্তু আমার সব চেয়ে মূল্যবান কাজ নিজেকে পর্দার ভিতরে রাখা, আমার স্বামীর ভাই, মানে দেবর, আমার হাজবেন্ডকে বললেন- তোর বউ সব সময় আমার কাছে মুখ ঢেকে রাখে কেন..?
আমি কি বাহিরের লোক যে আমার সামনে তোর বউ মুখ ঢাকবে.?
শ্বাশুড়ী বললেন-
ঠিক বলছে তোর ছোট ভাই
ঘরে গেলেও কম্বল দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে কেন?
তোর বউ পর্দানশীল সেটা ভাল কথা, কিন্তু তোর ভাই নিজের লোক, এখানে এত পর্দা করতে হবে কেন?
রাত্রিবেলা আমার হাজবেন্ড এসে বলছে পর্দা করসমস্যা নেই। কিন্তু বাড়ির লোকের সামনেও মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে তোমায়?
এটা কোন হাদীসে পাইছো?
আর এমন কর না.....
তারপর থেকে আর মুখ ঢাকি নাই, কিন্তু সমস্ত শরীর পর্দায় আবৃত করে রাখতাম।
যখন ঘরে একা থাকতাম সেই সময় দেবর এসে,ঘরে ঢুকল হঠাৎ করে।
মাথায় কোন কাপড় ছিলভ
না তাড়াতাড়ি করে মাথায় কাপড় দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে নিলাম। আমি বললাম তুমি এখানে...!
ও তখন বলল- ভাবি তুমি কিন্তু হেব্বি দেখতে...
তোমাকে আমার খুব পছন্দ। আমি বললাম কি জন্য এখানে এসেছ।
ও বললো, বা রে ভাবির সাথে একটু গল্প করা যাবে না বুঝি? খুব সংকোচ বোধ হত।
দেবর তো গায়রে মাহরাম পুরুষ। মুখে কিছু বলতে পারতাম না, এমন কি আমাকে খারাপ খারাপ, খুব বাজে বাজে কথা বলত...!
বিরক্ত হয়ে ব্যাপার টা আমার স্বামীকে জানালাম।
ও বলল, আহ্ এমন করছ কেন দেবর হয় তো, আমার ছোট ভাই একটু দুষ্টুমি করে।
আমি বললাম আপনি তো পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন।
তাহলে বউকে কি করে পর্দায় রাখা লাগে, জানেন না আপনি? ও বলল, আমাকে পর্দা শিখাতে এসো না ok....
স্বামীকে বুঝাতে পারছি না কতটা কষ্ট হচ্ছে আমার।
একদিন ঘরে শুয়ে আছি দুপুর বেলা। দরজায় দাড়িয়ে বলছে ভাবি....সাথে সাথে সব কিছু ঢেকে নিতেই দেবর আমার হাত ধরে শক্ত করে।
প্লিজ ভাবি এসো এমন করিও না..?
হাত ঝাড়ি দিয়ে দৌড় দিয়ে বাহিরে বের হলাম। শ্বাশুড়ীকে বিষয় টি জানালাম।
আবার আমাকে ধমক দিয়ে বলছে- আমার ছেলের নামে বদনাম রটাতে চাও?
কেউ আমার কথার দাম দেয় না, বালিশে মুখ বুজে কান্না করছি - হে আল্লাহ, পর্দার বিধান তুমি ফরজ করে দিয়েছ।
কিন্তু এমন একটা পরিবেশে আমাকে ফেলে দিয়েছ, যেখানে তোমার হুকুম মানতে পারছি না।
ফরজ পর্দা করতে পারছিনা গো আল্লাহ খুব কান্না করেছি মাবুদের দরবারে।
ননদের জামাই বাড়িতে বেড়াতে এসেছে, ননদ বললো মা,,,
ভাবি তো তোমার মেয়ের জামাইয়ের সাথে
ভাল করে কথাই বলল না,
কি হয়েছে,উনার?
আমরা তো নিজেরা ভিতরের লোক। শ্বাশুড়ী বললো ঢং এগুলো বুঝলি ঢং।
রাত্রিবেলা লুডু খেলতে বসেছে। কিরে শালাবাবু তোর হুজুরনী বউকে নিয়ে আয়, লুডু খেলি, আমার স্বামী আমার কাছে এসে বলল, চল গিয়ে লুডু খেলি।
আমি বললাম শরীরটা তেমন ভাল না, আমি খেলব না।
জোর করে সবার সামনে নিয়ে গেল, লুডু খেলতে বসাল, দেবর আমার পাশেই বসেছে।
দুলাভাই আমার মুখের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে
আছে। সময় সুযোগে দেবর আমার কোমরে হাত দিয়ে টেপার চেষ্টা করছে। রাগ উঠে গেল আমার, রাগ করে নিজের ঘরে চলে গেলাম।
শ্বাশুড়ী রেগে গিয়ে বলল:
কি মেয়ে বিয়ে করছিস এটা...গুরু জন কে মানেনা?
টেটিয়া একটা মেয়েকে বিয়ে করছিস কেন...!
আমার স্বামী রেগে গিয়ে রুমে এসে জোরে আমার গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারল। সাথে সাথে পাচ টা আংগুলের দাগ বসে গেল,গালে। স্বামীর থাপ্পড় কেন খেলাম জানেন..?
আমার অপরাধ পর্দা করে চলা, দেবরের সাথে ফস্টি নষ্টি না করা।
বিয়ের তিন মাস অতিবাহিত করলাম, বাট পর্দা মেনে চলা কঠিন হচ্ছে। স্বামী বাহিরে যাবে দু দিনের জন্য-
এশার নামাজ পড়ে আমার শ্বাশুড়ি এবং দেবরকে খেতে দিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে, নিজের ঘরে গিয়ে বিছানা ঝাড়তেছি।
দেবর এসে বলল- ভাবি দরজা টা খোলা রেখ, গভীর রাত হলে আসব বুঝতে বাকি রইলো না কি করতে চায়।
ভালো করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে একটা টেবিল দরজায় দিলাম যেন সহজে দরজা খুলতে না পারে।
সকাল বেলা দেবর এসে গালে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বলছে বেশ্যা, তোকে বললাম দরজা খোলা রাখতে।
তুই খোলা রাখলি না।
তোর শরীরের দেমাগ দেখবো আমি..?
জীবন্ত একটা লাশে পরিনত হলাম এই তিন মাসে।
ভেবেছিলাম পরিবার টাকে ইসলামিক অনুযায়ী তৈরী করব আমি। বাট সবার কাছে মূল্যহীন আমি, শ্বাশুড়ী কাজের বুয়ার মত হুকুম করছে, স্বামী ইচ্ছে হলে আমাকে ধরে প্রহার করছে। দেবর ধরে মারছে তার সাথে বিছানায় না যাওয়ার জন্য।
দুধ ওয়ালা এসেছে,
শ্বাশুড়ী বললেন-
দুধ নিয়ে আসতে কিন্তু মুখ ঢেকে নেয়ার জন্য ঘরে কাপড় আনতে গেলাম। শ্বাশুড়ী আমাকে বকা দিতে লাগলেন। কি এমন রূপের রহস্য তোর..? যে মুখ ঢাকতে হবে।
অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম এই স্বামী এবং সংসার,
এগুলো আমার জাহান্নামের কারণ হবে, তার গোটা পরিবার জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে।
পালিয়ে আসলাম স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি।
মা বাবা বকাবকি করতে লাগলেন। মা বাবাকে কেদে কেদে বললাম মা...আমি তো কুরআনের হাফেজা।
আমি আবার মাদ্রাসায় চাকুরি করে বাকি জীবনটা পার করে দিব। তবুও ওই মডার্ন ধনী লোক, মোটা অংকের চকুরি করা স্বামী আমার দরকার নেই।
আমার এই পাচ হাজার হালাল টাকায় অনেক শান্তি।
শেষে ইতি টানলাম উক্ত সংসারের, তালাক হয়ে গেছে।
ব্যাক্তিগত উপসংহার:
------------------------------
ঐ মেয়ে এখন দিনাজপুর ছোট একটি মহিলা মাদ্রাসায় চাকুরি করছেন।
১। পর্দাণশীল বউ নিয়া ফতোয়া মারলে চলবে না।
প্রত্যেক পুরুষের উচিত বউকে পর্দার পরিবেশ তৈরি করে দেয়া।
২। পর্দাণশীল বউ বাড়িতে এনেছেন, পরিবারে গায়রে মাহরাম পুরুষ রয়েছে।
মনে করবেন না যে বিপদ সংখ্যা নেই। বরং বিপদ আরও বেশি....!!!
৩। পরিবারের অভিভাবকদের বলছি, ছেলে অনেক ধনী লোক, কোটি টাকার মালিক।
দেখেই পাগল হবেন না,
বরং তার দ্বীনদারি কত টুকু সেটা দেখুন।
৪। বিভিন্ন কারণে মেয়েদের ডিভোর্স হয়ে থাকে, তার অতীত না জেনে তাদের কে বিয়ে করুণ, এটা সুন্নতেরও একটি, নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখান।
৫। যদি আপনি দেখেন সুন্নতি লেবাস নাই বলে এমনি নামাজ পড়ে এটা ৯৮% মিথ্যা।
তারা জুমআ দুই ঈদ মা-বাবার জানাজা ইত্যাদির নামাজ পড়ে। কিন্তু আল্লাহর ভালবাসা এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মহব্বত তাদের অধিকাংশেরই নেই।
প্রিয় বোনের প্রতি অশ্রুসিক্ত কলাম-
-------------------------------------------------
বোন তুমি সময়ের শ্রেষ্ঠ ডিসিশান নিয়েছ। এরকম স্বামী, দেবর, শ্বাশুড়ী, দুলাভাই যেখানে আছে; সেটার অধিকাংশকে জাহান্নামী পরিবার বলাই যায়। রব্বে কারিমের ফরজ বিধান পর্দার প্রতি তোমার যে অগাধ আনুগত্য, আশা রাখি আল্লাহ তোমাকে এর প্রতিদান ঐ পারে অবশ্যই দিবেন,
ইনশা-আল্লাহ।
আসলে আমি সত্যিই খুব গর্ববোধ করি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও এরকম আলেমা, হাফেজা, কিংবা সাধারণ তাবলীগওয়ালার ঘরের কোন মেয়ে/মহিলা যখন পর্দার প্রতি এমন সম্মান রাখেন এবং মেনে চলার চেষ্টা করেন, শত ভালবাসা এবং মোবারক বাদ এমন বোনদের জন্যে।
_____________________________________
বিয়ের আগে ছেলের ফ্যামিলিচিত্র দেখা উচিৎ ইসলামিক নাকি দুনিয়ার রং তামাশা।।