31/10/2022
তন্ত্রশাস্ত্রে মদ্যপান
সনাতন ধর্মে ঋগ্বেদ সংহিতাসহ বিবিধ শাস্ত্রেই মদ্যপান সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঋগ্বেদ সংহিতায় বলা হয়েছে, সুরাপ্রমত্ত বা নেশায় আসক্ত ব্যক্তি ইন্দ্ররূপ পরমেশ্বরকে হিংসা করে। তাই নেশাকারী বন্ধু যদি সবচেয়ে বিদ্বান বা ধনীও হয়, তারপরও অবশ্য পরিত্যজ্য।
নকী রেবন্তং সখ্যায় বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরাশ্বঃ।
যদা কৃণোষি নদনুং সমূহস্যাদিৎ পিতেব হূয়সে।।
(ঋগ্বেদ সংহিতা: ৮.২১.১৪)
" হে ইন্দ্র! ধনবান মানবকে বন্ধুত্বের জন্য কেন আশ্রয় কর না? সুরাপ্রমত্ত ব্যক্তি তোমার হিংসা করে। যখন মনুষ্যের কার্পণ্য দূর কর, তখনই সে পিতার ন্যায় তোমাকে আহ্বান করে।"
সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদে পঞ্চমহাপাতকের মধ্যে মদ্যপায়ীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদে মদ্যপায়ীকে পতিত বা মহাপাতক বলেই ক্ষান্ত হয়নি ; সাথে এটাও সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে এই মদ্যপায়ী পতিতদের সাথে সঙ্গ দেয় তারাও সমান পতিত। অর্থাৎ মদ্যপায়ীর মত সমান অপরাধে অপরাধী।
স্তেনো হিরণ্যস্য সুরাং পিবংশ্চ
গুরোত্তল্পমাবসন্ ব্রহ্মহা
চৈতে পতন্তি চত্বারঃ
পঞ্চমশ্চাচরংস্তৈঃ।—ইতি ॥
(ছান্দোগ্য উপনিষদ : ৫.১০.৯)
"সুবর্ণসহ অন্যের দ্রব্য অপহরণকারী, মদ্যপায়ী, গুরুপত্নীগামী ব্যক্তি এবং ব্রাহ্মণঘাতক এ চার ব্যক্তি এবং যে পঞ্চম ব্যক্তি তাদের সংসর্গ করে, তারা পতিত হয়।"
ছান্দোগ্য উপনিষদের সিদ্ধান্তটি মনুসংহিতাসহ বিবিধ শাস্ত্রের অভ্যন্তরে পাওয়া যায়।
ব্রহ্মহা চ সুরাপশ্চ স্তেয়ী চ গুরুতল্পগঃ।
এতে সর্বে পৃথগ্জ্ঞেয়া মহাপাতকিনো নরাঃ।।
(মনুসংহিতা: ৯.২৩৫)
"ব্রাহ্মণহত্যাকারী, সুরাপানকারী, চোর এবং গুরুপত্নীগামী ব্যক্তি – এরা প্রত্যেকেই মহাপাতকী।"
মনুসংহিতায় ব্রাহ্মণদের সাবধান করে বলে হয়েছে, ব্রাহ্মণ যদি মদ্যপান করে তবে তারা মদ্যের নেশায় মত্ত হয়ে নিজের অজ্ঞাতসারে বিবিধ প্রকারের নিষিদ্ধকর্ম, অপকর্ম করে ফেলতে পারে; অপবিত্র স্থানে পতিত হতে পারে; বেদবাক্য অশুদ্ধভাবে অস্থানে উচ্চারণ করতে পারে; তাই তাদের মদ্যপান করা কখনই উচিত নয়।
যক্ষরক্ষঃপিশাচান্নং মদ্যং মাংসং সুরাসবম্ ।
তদ্ ব্রাহ্মণেন নাত্তব্যং দেবানামশ্নতা হবিঃ ।।
অমেধ্যে বা পতেন্মত্তো বৈদিকং বাপ্যুদাহরেৎ ।
অকার্যমন্যৎ কুর্যাদ্বা ব্রাহ্মণো মদমোহিতঃ ।।
(মনুসংহিতা: ১১.৯৬-৯৭)
"মাদকদ্রব্য , মাংস, মদিরা তথা দ্রাক্ষারস যক্ষ, রাক্ষস এবং পিশাচের ভক্ষ্য দেবতার হবি ভক্ষণকারী ব্রাহ্মণের এসব কদাপি সেবনযোগ্য নয়।
ব্রাহ্মণ মদপান করে মত্ত হলে অপবিত্র স্থানে পতিত হতে পারেন; বেদবাক্য অশুদ্ধভাবে অস্থানে উচ্চারণ করতে পারেন অথবা অন্য কোন নিষিদ্ধ কর্ম করে ফেলতে পারেন। তাই মদ্য পান করা উচিত নয়।"
বেদ, মনুসংহিতায় মদ্য বা সুরাকে পাপের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সাথে পাপের প্রায়শ্চিত্তরূপ স্বেচ্ছায় মৃত্যুদণ্ডের মত বিভিন্ন প্রকারের ভয়ংকর শাস্তি প্রদানের বিধিও প্রদান করা হয়েছে ।দ্বিজ অজ্ঞানে আচ্ছন্ন হয়ে মদ্য পান করলে, আগুনের মত তপ্ত মদ্য পান করে দেহকে বিনাশ করবে। দেহ দগ্ধ হয়ে, সেই মদ্যপানের পাপ থেকে সে মুক্ত হবে।অথবা চালকণা বা তিল রাত্রে একবার করে এক বর্ষ করে ভক্ষণ করবে, সুরাপানের পাপ দূর করার জন্য কম্বলের বস্ত্র পড়বে এবং জটাধারী থাকবে এবং সুরাপান পাত্র ধারণ করে থাকবে।
সুরাং পীত্বা দ্বিজো মোহাদগ্নিবর্ণাং সুরাং পিবেৎ ।
তয়া স্বকায়ে নির্দগ্ধে মুচ্যতে কিল্বিষাত্ততঃ ।।
গোমূত্রমগ্নিবর্ণং বা পিবেদুদকমেব বা ।
পয়ো ঘৃতং বা মরণাদেগাশকৃদ্রসমেব বা ॥
কণান্ বা ভক্ষয়েদব্দং পিণ্যাকং বা সকৃন্নিশি ।
সুরাপানাপনুত্ত্যর্থং বালবাসা জটী ধ্বজী ।।
সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ চ মলমুচ্যতে । তস্মাব্রাহ্মণরাজন্যৌ বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেৎ ॥
(মনুসংহিতা:১১.৯১-৯৪)
" দ্বিজ মোহবশতঃ সুরা পান করলে, এর প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আগুনের মত উত্তপ্ত সুরা পান করবেন। এইভাবে জলন্ত সুরা পান করে নিজদেহ নিঃশেষে দগ্ধ করে পাপমুক্ত হবেন।
অথবা অগ্নির মত উত্তপ্ত গোমূত্র, জল, দুধ, ঘি, গোময়জল ততক্ষণ পর্যন্ত পান করে যাবে, যতক্ষণ মৃত্যু না হয়।
অথবা সুরাপানের পাপাপনোদনার্থে গোলোমাদিনির্মিত বস্ত্রপরিহিত ও জটাধারী হয়ে সুরাপাত্র ধারণ করে একবৎসর কাল খুদ বা খইল রাত্রে একবার ভক্ষণ করবে।
নিশ্চয়ই সুরা বা মদ অন্নের মলস্বরূপ এবং পাপকেও মল বলা হয়। তাই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এ দ্বিজগণ কখনো মদ্য পান করবে না।"
বৈদিক শাস্ত্রে মদ্য সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ হলেও, বিভিন্ন তন্ত্রে পঞ্চমকার সাধনার মধ্যে মদ্যের উল্লেখ এবং ব্যবহার পাওয়া যায়। মুণ্ডমালাতন্ত্রের পঞ্চম পটলের বলা হয়েছে, কলিযুগে সাধারাণ মানুষের জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ হলেও শৈব ও শাক্তগণের কাছে মদ্যপান সর্বসিদ্ধিদায়ক। এ শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তটি আপাতদৃষ্টিতে সংশয়বাচক হলেও, বিষয়টি সংশয়বাচক বা নেতিবাচক নয়। এ বিষয়টি আমরা কুলার্ণবতন্ত্রসহ বিভিন্ন তন্ত্রের বচনের মধ্যে দেখব।
মদ্যপান ন কর্তব্যং ন কর্তব্যং কলৌ যুগে।
শাক্তানাং চৈব শৈবানাং কর্তব্যং সর্বসিদ্ধিদম্।।
(মুণ্ডমালা তন্ত্র:৫.৫১)
"কলিযুগে সাধারাণ মানুষের জন্য মদ্যপান উচিত না হলেও শৈব ও শাক্তদের মদ্যপান অবশ্য কর্তব্য ও মদ্যপান তাদের জন্য সর্বসিদ্ধিদায়ক।"
কুলার্ণবতন্ত্রে মদ্যপানের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মদ্য জীবের মায়াজালাদি বিনাশ করে, মোক্ষমার্গ নিরূপণ করে দেয়, অষ্ট দুঃখাদি বিরহিত করে তোলে এবং মহাদানের তাৎপর্য প্রকাশ করে।
মায়াজালাদিশমনাম্মোক্ষমার্গনিরূপণাৎ।
অষ্টদুঃখাদিবিরহান্মদ্যমিতাভিধীয়তে ৷৷
মহাদানার্থরূপত্বদ্ যাগভূম্যেককারণাৎ।
মদ্ভাবজননাদ্দেবি মদ্যমিত্যভিধীয়তে ৷৷
(কুলার্ণবতন্ত্র: ১৭.৬৩-৬৪)
"মায়াজালাদি বিনাশ করার জন্য, মোক্ষমার্গ নিরূপণের জন্য এবং অষ্ট দুঃখাদি বিরহিত করার জন্য মদ্য এই নাম দেয়া হয় ।
মহাদানের তাৎপর্য প্রকাশ করে বলে এবং একমাত্র পূজার ক্ষেত্রই এর ব্যবহারের কারণ বলে আর মদ্ভাব উৎপন্ন করে বলে বলা হয় মদ্য।"
মহাদানার্থরূপত্বদ্- মহাদানের অর্থরূপত্বহেতু অর্থাৎ তাৎপর্য প্রকাশ করে বলে। যাগভূম্যেককারণাৎ—একমাত্র যাগভূমি অর্থাৎ পূজার ক্ষেত্র এর ব্যবহারের কারণ বলে । মদ্ভাবজননাৎ—শিবভাব উৎপন্ন করে বলে তাকে মদ্য বলা হয়। এখানে মদ্য বলতে কোন মাদকদ্রব্যজাতীয় পানীয় নয়, তত্ত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ তত্ত্ব হল মূলাধার থেকে ব্রহ্মরন্ধ্রে অর্থাৎ সেখানকার সহস্রারে যাতায়াতকারী কুণ্ডলিনীর ক্ষরিত অমৃত। আমাদের শরীরে সূক্ষ্ম সুতার মত প্রাণশক্তির মূল কুলকুণ্ডলিনী শক্তি ব্রহ্মদ্বারের মুখ আবৃত করে জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মধ্যবর্তী কুন্দস্থানে সর্বদা রয়েছে। এ শক্তিকে একটি ঘুমন্ত সাপের সাথে তুলনা করা হয়, এ স্থানকে বলে মূলাধারচক্র।দেহের অভ্যন্তরে সুষুম্না নাড়ীর পথে অতি সূক্ষ্ম পদ্মাকৃতিমূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞা-ছয়টি চক্র আছে, যাকে ষটচক্র বলে।সকলের উর্দ্ধে আছে সহস্র পাপড়ির সহস্রার পদ্ম। সাধক যখন মুক্তি লাভ করে তখন এই সহস্র পাপড়ির পদ্মটির একটি একটি পাপড়ি প্রস্ফুটিত হচ্ছে এমন একটি গভীর উপলব্ধি হয়।
অমূলাধারমাব্রহ্মরন্ধ্রং গত্বা পুনঃ পুনঃ ।
চিচ্চন্দ্রকুণ্ডলীশক্তিসামরস্য সুখোদয়ঃ ।।
ব্যোমপঙ্কজনিস্যন্দসুধাপানরতো নরঃ।
সুধাপানমিদং প্রোক্তমিতরে মদ্যপায়িনঃ ৷৷
(কুলার্ণবতন্ত্র: ৫.১০৭-১০৮)
"মূলাধার থেকে ব্রহ্মরন্ধ্রে অর্থাৎ সেখানকার সহস্রারে সাধক বার বার যাতায়াত করবে। সেখানে শিবরূপ চিৎচন্দ্রের সঙ্গে কুণ্ডলিনীর সামরস্যসুখের উদ্ভব হয়।
ব্যোমপঙ্কজ অর্থাৎ সহস্রারে এই সামরস্যজনিত অমৃত ক্ষরিত হয়। সাধক সেই অমৃত পান করে। এরই নাম সুধাপান অর্থাৎ কৌলশাস্ত্রবিহিত মদ্যপান । এরূপ সুধাপানকারী ব্যতীত অন্যেরা মদ্যপমাত্র।"
কুণ্ডলিনীর ক্ষরিত রসকেই মদ্য বলা হয়েছে। কুলার্ণবতন্ত্রে একে অমৃতের কণা বলে অবিহিত করা হয়েছে। মুক্তিরূপ এ অমৃতে সাধকের মৃত্যুভয় নিবারিত হয়ে ষটচক্রভেদ করে সাধককে ইষ্টের দর্শন দিয়ে
ইষ্টতত্ত্বপ্রকাশ করে।
অমৃতাংশুস্বরূপত্নান্মমৃত্যুভীতিনিবারণাৎ।
তত্ত্বপ্রকাশহেতুত্বাদমৃতং কথিতং প্রিয়ে ৷৷
(কুলার্ণবতন্ত্র: ১৭.৬৬)
"হে প্রিয়ে, অমৃতকণাস্বরূপ বলে, মৃত্যুভয় নিবারণ করে বলে এবং তত্ত্বপ্রকাশ করে বলে বলা হয় অমৃত।"
অমৃতরূপ কুলকুণ্ডলিনীর সুধাপানের বিষয়টি মধ্যযুগে বাংলার শ্রেষ্ঠ শাক্তকবি রামপ্রসাদ সেনের সংগীতেও পাওয়া যায়।
"ওরে সুরাপান করি নে আমি, সুধা খাই জয়কালী বলে; মন মাতালে মাতাল করে, মদ-মাতালে মাতাল বলে। গুরুদত্ত গুড় লয়ে, প্রবৃত্তি মসলা দিয়ে মা;
আমার জ্ঞান-শুঁড়ীতে চুয়ায় ভাটি, পান করে মোর মন মাতালে।
মূলমন্ত্র যন্ত্র ভরা, শোধন করি বলে তারা মা;
রামপ্রসাদ বলে এমন সুরা, খেলে চতুব্বর্গ মেলে৷৷"
মদ্যের বিকল্পে শাস্ত্রে অনুকল্পতত্ত্ব ব্যবহারের ব্যবস্থা শাস্ত্রে দেওয়া হয়েছে। পরমানন্দতন্ত্রে মদ্যের অনুকল্প সম্বন্ধে বলা হয়েছে - মদ্য, মাংস, মৎস্য এবং অষ্টগন্ধ—এই কয়টি দ্রব্য সমান পরিমাণে নিয়ে বড়ি তৈরি করে শুকিয়ে রেখে দেবে। এরপরে পূজার সময় বড়ি জল দিয়ে ঘষে অর্ঘ্যপাত্রে রাখবে। এটি প্রথম অনুকল্প। দ্বিতীয় অনুকল্প হল কাঁসার পাত্রে নারকেলের জল। তৃতীয় অনুকল্প হল তামার পাত্রে দুধ। চতুর্থ অনুকল্প হল গুড়মিশ্রিত ঘোল। পঞ্চম অনুকল্প হল গুড়মিশ্রিত জল এবং ষষ্ঠ অনুকল্প হল চন্দনমিশ্রিত জল।
হেতুদ্ৰব্যং দ্বিতীয়ং চ তৃতীয়ং চাষ্টগন্ধকম্।
সমানং বটকাং কৃত্বা সংশোষ্য স্থাপয়েচ্ছিবে।
অনূদঘৃষ্যোদকে তত্তু যোজয়েদর্ঘ্যপাত্রকে।
নারিকেলোদকং কাংস্যে তাম্রে ক্ষীরং তু তক্রকম্।
গুড়মিশ্রং জলং বাঽপি জলং চন্দনমিশ্রিতম্।
শাস্ত্রে ব্রাহ্মণাদি পৃথক পৃথক বর্ণের জন্য মদ্যের পৃথক পৃথক অনুকল্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন কুলচূড়ামণিতন্ত্রে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণের জন্যে মদ্যের অনুকল্প হল আদাগুড়, তাম্রপাত্রে মধু, গোদুগ্ধ, কাংস্যপাত্রে নারিকেলজল। ক্ষত্রিয়ের জন্যে মদ্যের অনুকল্প হল ঘৃত-মিশ্রিত মধু বা গব্যঘৃত। বৈশ্যের মদ্যের জন্যে অনুকল্প হল মাক্ষিক মধু এবং শূদ্রের জন্যে মদ্যের অনুকল্প হল পুষ্পাদিজাত মধু।
যত্রাসবমবশ্যন্তু ব্রাহ্মণস্তু বিশেষতঃ।
গুড়ার্দ্রকং তদা দদ্যাত্তাম্রে বা বিসৃজেন্মধু। ..বৈশ্যস্য মাক্ষিকং শুদ্ধং ক্ষত্রিয়স্য তু সাজ্যকম্।
ব্রাহ্মণশ্চ গবাং ক্ষীরং তাত্রে বা বিসৃজেন্মধু। নারিকেলোদকং কাংস্যে...
গোক্ষীরং ব্রাহ্মণো দদ্যাৎ গব্যমাজ্যঞ্চ বাহুজঃ।
বৈশ্যশ্চ মাক্ষিকং দ্রব্যং শূদ্রঃ পৌষ্পাদিকং পুনঃ।
মহানির্বাণতন্ত্রে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল সাধকের জন্যই মদ্যের অনুকল্পের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রবল কলিতে সংসারাক্ত গৃহস্থের পক্ষে মদ্যের অনুকল্প তিনটি মধুর দ্রব্য বিহিত। এই তিনটি মধুর দ্রব্য হল– দুগ্ধ, শর্করা এবং মাক্ষিক মধু। এই তিনটি মধুর দ্রব্যকে মদ্যস্বরূপ মনে করে সাধক দেবতার কাছে নিবেদন করবে।
গৃহকাম্যৈকচিত্তানাং গৃহিণাং প্রবলে কলৌ। আদ্যতত্ত্বপ্রতিনিধৌ বিধেয়ং মধুরত্রয়ম্ ।।
দুগ্ধং সিতা মাক্ষিকঞ্চ বিজ্ঞেয়ং মধুরত্রয়ম্ ।
অলিরূপমিদং মত্বা দেবতায়ৈ নিবেদয়ে।।
স্বভাবাৎ কলিজন্মানঃ কামবিভ্রান্তচেতনঃ ।
তদ্রূপেণ ন জানন্তি শক্তিং সামান্যবুদ্ধয়ঃ ॥
(মহানির্বাণতন্ত্র:৮.১৭১-১৭৩)
"কলিকাল প্রবল হলে, যে সমুদায় গৃহস্থ একমাত্র গৃহকার্য্যেই নিবিষ্টচিত্ত থাকবে, তাদের পক্ষে আদ্যতত্ত্বের প্রতিনিধি স্বরূপ মধুরত্রয় বিধান করতে হবে।
দুধ, চিনি ও মধু, এই তিন দ্রব্যের নাম মধুরত্রয়; এই মধুরত্রর মদ্যস্বরূপ মনে করে দেবতার নিকট নিবেদন করবে।
কলিসম্ভুত মানবদের মন স্বভাবতই কাম দ্বারা উদভ্রান্ত। সেই সামান্য বুদ্ধি মানবগণ শক্তিকে ইষ্টদেবতাস্বরূপা বিবেচনা করতে পারে না।"
তথ্য সহায়তা:
১. উপেন্দ্রকুমার দাস, শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা (দ্বিতীয় খণ্ড), রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার, কলকাতা: ২০১১
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়