08/11/2023
গাযার অবস্থা দেখে যারা হতাশ হচ্ছেন তাদের জন্য সাইয়্যিদ কুতুবের কালজয়ী মাইলস্টোনস বই থেকে কিছু কথা শেয়ার করি। বইয়ের একদম শেষ অধ্যায় সাইয়্যিদ রাহিমাহুল্লাহ লিখেছেন -
সূরা আল বুরুজে বর্ণিত “আসহাবুল উখদুদ” বা গর্তওয়ালাদের এই কাহিনী নিয়ে ঈমানদারদের গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা উচিত। স্থানকাল নির্বিশেষে যারাই আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকেন বা ডাকবেন, তাদের প্রত্যেকের জন্যই এই কাহিনীতে আছে গভীর চিন্তার খোরাক।
এটা এমন একদল লোকের গল্প, যারা তাদের মহান রব আল্লাহ আযযা ওয়া জাল-এর উপর ঈমান এনেছিল এবং প্রকাশ্যে তাদের এই ঈমানের কথা ঘোষণাও করেছিল। এর ফলে তাদের পড়তে হয়েছিল স্বৈরাচারী ও প্রচণ্ড যালিম শত্রুদের ভয়ঙ্কর যুলুমের মুখে।
কিন্তু হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত বিশ্বাস মুমিনদের শক্তি যুগিয়েছিল এই অসহনীয় যুলুম সহ্য করতে। জীবনের উপরে জিতে গিয়েছিল তাঁদের সুদৃঢ় ঈমান। এক মুহূর্তের জন্যও তাঁরা ঈমান থেকে পিছু হটেননি এবং আল্লাহর কাছে ফিরে যাবার আগ পর্যন্ত হাসিমুখে তাঁরা বরণ করে নিয়েছেন যালিমের প্রজ্বলিত লেলিহান আগুন!
আসলে তো তাঁদের অন্তর মুক্তি পেয়েছিল এই দুনিয়ার জীবনের দাসত্ব থেকে। জীবনের প্রতি ভালোবাসা কিংবা যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর ভয়, কোনো কিছুই তাঁদের এই যিল্লতির জীবন মেনে নিতে বাধ্য করতে পারেনি। দুনিয়া আর এর সমস্ত আকর্ষণ থেকে তাঁরা নিজেদের মুক্ত করে নিয়েছিলেন আর এভাবেই তাঁরা জীবনের উপর অর্জন করেছিলেন এমন এক মহান বিজয়, যা কেবলমাত্র এরকম একটি মহৎ বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই অর্জিত হতে পারে।
এই ঘটনা মুমিনের চেতনা ও মনোবল যে কতো উঁচু হয়, সে ব্যাপারে উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে পেশ করে। আগুনে পোড়া এই মুমিন বান্দারা এমন এক উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন, যা অর্জন করা যেকোনো যুগের যেকোনো প্রজন্মের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানের একটি ব্যাপার।
কিন্তু ব্যাপারটা কি এখানেই শেষ? সুউচ্চ ঈমানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মুমিনরা অসহনীয় যন্ত্রণায় দগ্ধ হলো আর তারপর আগুনের গর্তে স্রেফ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, ব্যাপারটা কি এমন? দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মুমিনদের করুণ এই পরিণতি অন্তরকে কষ্ট দেয়, চোখকে অশ্রুসিক্ত করে। কিন্তু কুরআন মুমিনদের ভিন্ন কিছু শেখায়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে মূল্য রাখে কেবলমাত্র ঈমান। আল্লাহর বাজারে ঈমানের পণ্য ছাড়া আর কোনো পণ্যের চাহিদা নেই। এজন্যই সাফল্যের সর্বোচ্চ রূপ হলো নশ্বর বস্তুর উপর অবিনশ্বর আত্মার জয়, কষ্টের উপর আক্বীদাহর জয় এবং যুলুমের উপর ঈমানের জয়।
আসহাবুল উখদুদের ঘটনায়, মুমিনরাই ছিলেন প্রকৃত বিজয়ী। তারা বিজয় লাভ করেছিলেন সমস্ত ভয় আর যন্ত্রণার উপর। তারা জিতে গিয়েছিলেন এই দুনিয়া আর দুনিয়ার জীবনের সমস্ত মোহনীয়তার উপর। চরম যুলুমের মুখেও তারা এমন এক মহিমান্বিত বিজয় অর্জন করেছিলেন, যা সর্বকালের সমস্ত মানুষের জন্য পরম সম্মানের বিষয় আর এটাই হলো সত্যিকারের বিজয়।
মানুষ মাত্রই মরতে হয়। মৃত্যু সবার জন্যই আসবে। একেকজন মারা যাবে একেক কারণে। কিন্তু সবাই এরকম একটা অসাধারণ বিজয়ের অধিকারী হবে না। সবাই এমন একটা উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে না।
এটা একান্তই আল্লাহর অনুগ্রহ এবং এটা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর বাছাইকৃত কিছু বান্দাদের এমন এক সম্মান দান করেন, যার ফলে অন্য মানুষের মতোই মৃত্যুবরণ করেও তারা হয়ে যান সবার থেকে আলাদা।
আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মাদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্মানিত করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আমাদের রবের ওপর পুরোপুরি সন্তুষ্ট, আমরা তাঁর দ্বীনের ওপর সন্তুষ্ট, আমরা তাঁর নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে সন্তুষ্ট।
আসিফ আদনান ভাই