18/02/2025
পাত্রীর কৌশলী প্রশ্নে কুপোকাত পাত্রপক্ষ!!
এক মেয়েকে তার পরিবার থেকে বলা হলো- আজ তাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। তাই পরিবারের সকল সদস্য অতিথি আপ্যায়নের আয়োজনে ব্যস্ত। সম্ভব হলে আজই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবেন।
সন্ধ্যায় পাত্রসহ তার পুরো পরিবার, মামা- মামি, কাকা-কাকি, পিসা-পিসি, মেসো-মাসি. পুচকে-পাচকা মিলিয়ে পঁচিশ জনের মতৌ এলেন। একজন মাত্র নারী বা বিবাহযোগ্য পাত্রীর যোগ্যতা যাচাইয়ের গুরু দায়িত্ব পালনের জন্যই এই বিশাল বহর।
ব্যাপারটা এমন যে, পেশীশক্তির বলেই যেনো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতেই এই যোগাড় যন্ত্র।
পরিচয়পর্ব শেষে ছেলেপক্ষ মেয়ের বাড়ির ছাদ, দরজার চৌকাঠ, পর্দার রং, ফার্নিচারের বয়সকাল, বাড়িতে মোট রুমের সংখ্যা, ফ্রিজের ব্রান্ড ও তার উচ্চতা, টিভির ইঞ্চি পরিমাপ এবং সিলিং ফ্যানের গতি পরীক্ষা করতে লাগলেন।
এরই মধ্যে ছেলেপক্ষের একজন মহিলা সদস্য ওয়াশরুম খুঁজতে লাগলেন। তিনি ওয়াশরুমে ঢুকে সেখানে ভ্যান্টিলেটর, টুথব্রাশের ব্র্যান্ড ও তার মেয়াদকাল, ব্রাশটি কতখানি পরিষ্কার, কতখানি নোংরা, বাথরুমে টাইলস আছে কিনা- এসব নিরীক্ষার দায়িত্ব নিলেন।
এদিকে পাত্রী ভারি গহনা এবং চকচকে শাড়ি পড়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন। এমনকি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি মাথায় ঘোমটা
দিয়ে মাথা নিচু করে ছেলেপক্ষের সামনে যাবেন না। কারণ, সে কোনো প্রজেক্ট নয় যে. যাকে পরিবেশন করে কন্ট্রাক্ট ফাইনাল
করবে।
তার যুক্তি হচ্ছে- যেহেতু এই পাত্রের সঙ্গে বিয়ে এখনো নিশ্চিত নয়। সুতরাং তাকে অতিরিক্ত সম্মান দেখানোর প্রয়োজন নেই।
আধাঘণ্টা পর তাদেরকে ডাইনিং টেবিলে ডাকা হলো। ৩৩ রকমের খাবার দেয়ার পরও, তাদের কাছে কমতি মনে হলো - ডাইনিং টেবিলে এমন একটা ভাব, এমন রাজভোগ যেন তাদের বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যায় হয়ে থাকে।
কেউ বলছেন, মিষ্টি খাবেন না- ডায়াবেটিস প্রবলেম, কেউ ঝাল খাবেন না- গ্যাষ্ট্রিক প্রবলেম, কারো টন্সিল প্রবলেম তাই ঠান্ডা খাবেন না, কেউ আবার গরম খেতে পারেন না।
ঘন্টাখানেক পরে শুরু হলো মেয়ে দেখানোর পালা। ইতোমধ্যেই কানাকানি শুরু- একটু ভালো জামাকাপড়ও পরায়নি, মাথায় কাপড় নেই, গায়ে কোনো গয়না নেই .....ঠিক যেন প্রোডাক্ট এ মনমতো লেভেল লাগানো হয়নি।
এবার প্রশ্নের পালা শুরু.... পড়াশুনা কতটুকু, হাইট কত, ভাইবোন ক'জন, এটা কি নিজের বাড়ি নাকি ভাড়াবাড়ি, বাবা কি করেন, বংশে
কেউ সরকারি চাকরি করেন কি-না, এমনকি প্রশ্নের ধরন এমনও ছিল- এ বাড়ির মহিলারা বাজার করেন কি না।
যাবতীয় প্রশ্নের জবাব শেষে এবার পাত্রীর প্রশ্নের পালা; যা ছিলো এমন:-
পাত্রীঃ আপনারা বাসে এসেছেন না ট্রেনে?...
পাত্রঃ কেন?
পাত্রীঃ না অনেক লোকজন তো, তাই, এত লোক তো গাড়ীতে জায়গা হবার কথা নয়।
যাই হোক গাইতে পারেন?
পাত্রঃ আমার গলা ভালোনা।
পাত্রীঃ কন্ঠনালীর ব্যাপারে জানতে চাইছিলাম, গলার ব্যাপারে নয়।
আচ্ছা গীটার বাজাতে পারেন?
পাত্রঃ আসলে শেখা হয়নি।
পাত্রীঃ আমার আশেপাশের সব ছেলেই তো পারে, তাই জিজ্ঞাসা করলাম
পাত্রীঃ কবিতা লেখেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রীঃ মাউন্টেন ক্লাইম্ব, মানে পাহাড় জয়ের ইচ্ছা আছে?
পাত্রঃ ভাবিনি কখনো।
পাত্রিঃ শুটিং করেছেন কখনো, গল্ফ খেলেছেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রিঃ পুল খেলতে পারেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রিঃ ডাক্তার হতে ইচ্ছে করেনি কখনো? বা ইঞ্জিনিয়ার?
পাত্রঃ আসলে, সুযোগ ছিলো না।
পাত্রীঃ নাচতে পারেন।
পাত্রঃ ( লজ্জায় লাল হয়ে) না।
পাত্রীঃ ফুটবল খেলেন নিশ্চয়,নাকি ক্রিকেট?
পাত্রঃ না, সময় হয়না।
পাত্রীঃ রাঁধতে পারেন?
পাত্রঃ এটাতো মেয়েদের কাজ।
পাত্রীঃ তাই নাকি, মেয়েদের হার্ট থ্রব "সন্জীব কাপুর" খুব ভালো
রাঁধতে পারে, টিভি দেখেন নিশ্চয়, আপনার তো জানার কথা।
পাত্রঃ আসলে টিভি দেখার সময় পাইনা।
পাত্রীঃ হিন্দি বোঝেন, বলতে পারেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রীঃ তাহলে তো সমস্যা, আপনি তো তাহলে রোমান্টিক মুভিও দেখেন না।
পাত্রীঃ দেশের বাইরে ঘুরেছেন কোথাও ?
পাত্রঃ না, আসলে যাওয়া হয়নি কখনো।
পাত্রীঃ কি সর্বনাশ..... নিজেই কিছুই দেখেন নি, আমাকে দেখাবেন কি করে?
পাত্রীঃ শিকার করেছেন কখনো, বেয়ার গিল কে চেনেন?
পাত্রঃ না।
সবশেষে পাত্রী দাঁড়িয়ে বললো আপনার এক্সট্রা কারিকুলামে বেশ সমস্যা আছে, ঠিকমত প্রস্তুত হয়ে আগামী বছর চেষ্টা করুন, আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন...
শুধু একটা কথাই বলতে চাই, মেয়েরা পণ্য না যে. খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। মেয়ে দেখতে গিয়ে সেই মেয়েটাকে মানসিকভাবে মেরে ফেলার কোনো মানে হয় না।
আশা করি, মেয়েরাও তার যোগ্য জবাব এভাবে দিতে পারবে!!৷ ゚৷