25/12/2023
নববর্ষের ফেতনা -
রসুলুল্লাহ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পর দুটি উৎসব উদযাপন বন্ধ করেন। একটি হল নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন, অন্যটির নাম ছিল মিহিরজান (বায়হাকী, খন্ড -২)। এই উৎসবের বিপরীতে মুসলিমদের আনন্দ উৎসব নির্ধারিত হয় দুই ঈদে। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।” (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৪৩৪৭)।
যারা থার্টি ফাস্ট মানছে তারা মনের অজান্তে শিরকী উৎসবে জড়াচ্ছে। রসুল ও সাহাবীরা কখনও মহররম মাসে নববর্ষ উৎসব পালন করেননি, সেখানে আমরা কাফেরদের নববর্ষ উদযাপন ও শিরকী নামের বছরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করেন। তারপর পহেলা জানুয়ারি নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে। মূল ব্যাপার হল আরবি মাস ছাড়া অধিকাংশ মাসের নাম মূলত শিরকী দেব-দেবীর ও তা-গুতদের নামে। যেমন-
১. জানুয়ারী মাস- জানুয়ারি নামকরণ হয় জানুস হতে, যিনি রোমান দেবতা। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী জানুসকে বলা হয় গড অফ ডোরস (কোনকিছু শুরু করার দরজা)। বিভিন্ন জাদুঘরে এই দেবতার দুদিকে দুটো মুখবিশিষ্ট মূর্তি আজও আছে। ওদের বিশ্বাস ছিল উনি ভূত ও ভবিষ্যৎ দুটোই দেখতে পেতেন। তাই মনে করা হয় আগের বছরের শেষ আর নতুন বছরের শুরুর দিকে ঘোরানো তার দুই মুখ।
জানুসের নামে তারা বিভিন্ন উৎসব, পূজা করত। ১৫৩ খ্রীস্টপূর্বাব্দ থেকে জানুয়ারির প্রথম দিনে প্রধান বিচারপতিরা তাদের কার্যালয়ে কাজ শুরু করতেন জানুসের প্রার্থনার মাধ্যমে। যেকোন শুভকাজের শুরতে তারা জানুসকে স্মরণ করত ও পূজা করত। বর্তমান থার্টি ফাস্ট নাইট আর কিছু নয় জানুসকে (জানুয়ারি) স্বাগত জানাবার আধুনিক রূপ।
প্রবেশ পথের দেবতা। অনেকের অভিমত, বৈশাখ মাসে বাংলা নববর্ষের সূচনায় বাঙালিরা যে দেবতার পুজো করে, সেই গণেশ দেবতাকে ও দ্বার রক্ষণের দেবতা হিসাবে মানা হতো।
২.ফেব্রুয়ারি মাস- এই মাস গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাস। এর নামকরণ করা হয়েছিল ফেব্রুয়ালিয়া, রোমান শুদ্ধির উৎসবের নামানুসারে। মূলত, ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান ক্যালেন্ডারের শেষ মাস। ফেব্রুয়াস, যার জন্য ফেব্রুয়ারী মাসের নামকরণ করা হয়েছে, তিনি ছিলেন মৃত্যু এবং শুদ্ধি উভয়ের সাথে যুক্ত একজন দেবতা। কেউ কেউ তাকে ফাউন বলে ডাকত বলে জানা যায়।
• ফেব্রুয়ারী ফেব্রুয়াসের জন্য নিবেদিত ছিল। এটি এমন মাস যখন রোমকে পরিশুদ্ধ করা হয় তাদের মৃতদের দেবদেবীদের জন্য বিভিন্ন উৎসর্গ ও বলিদানের মাধ্যমে।
• ফেব্রুয়ালিয়া হল একটি মাসব্যাপী বলিদান এবং প্রায়শ্চিত্তের সময়, যার মধ্যে দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ, প্রার্থনা এবং বলিদান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
• যেহেতু এটি আগুনকে পবিত্রতার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত, তাই ঘটনাবশত এটা ভাস্টার (Vesta) সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়, যে হল অগ্নি বা চুল্লি দেবী।
প্রাচীন রোমানরা ‘ফ্রেরুয়া’ নামে একটি ‘শুদ্ধিকরণ উৎসব’ করতেন। উৎসবে ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি চাবুক ‘ফ্রেব্রুয়া’ দিয়ে নিঃসন্তান মহিলাদের অত্যাচার করা হত। মনে করা হত, এর ফলে তারা পবিত্র হয়ে সন্তানের জন্ম দেবেন।
বর্তমানে আমরা গ্রেগরিয়ান যুগের ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকি। এর আগে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন ছিল। সে সময় রোমনরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর ধরত ৩০৪ দিনের। মাস ছিল দশটি। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। প্রথম মাস ছিল মার্চ। রাজা নূমা পম্পিলিয়াস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসকে ক্যালেন্ডারে যুক্ত করেন। তাই ফেব্রুয়ারি ছিল বছরের শেষ মাস। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে ৩১ দিন ধরা হতো সে সময়।
নূমা পম্পিলিয়াস ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিনের করেন। তবে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের হয় না। সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘুরতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা। সেই হিসেবে প্রত্যেক ৪ বছর পর ২৪ ঘণ্টা, অর্থাৎ একদিন অতিরিক্ত থেকে যায়। সে দিনটি যুক্ত করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে। তাই ৪ বছর পর ফেব্রুয়ারি মাসের দিনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৯।
৩. মার্চ মাস- রোমান যুদ্ধের দেবতা ‘মার্স’কে শ্রদ্ধা জানাতে তার নাম অনুসারে এই মাসের নামকরণ। প্রাচীন রোমানরা বিপক্ষকে বাধ্য করতেন যাতে সমস্ত যুদ্ধ মার্চ মাসে বন্ধ থাকে। এর কারণ, সেই সময় মার্চ ছিল নতুন বছরের প্রথম মাস ও উৎসবের মাস।
৪. এপ্রিল মাস- ল্যাটিন শব্দ ‘এপেরিরে’ থেকে এপ্রিল মাসের নামকরণ হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, গ্রিক দেবী ‘এফ্রোডাইট’ থেকে এই মাসের নামকরণ হয়েছে।
৫. মে মাস- মে মাসের নামকরণের পিছনে আছে আর এক দেবী যার নাম ‘মাইয়া’। প্রাচীন রোমানদের বিশ্বাস ছিল, দেবদেবীর মধ্যে কখন কোন দেবতা পৃথিবীতে নামবেন, তা নাকি দেবী ‘মাইয়া’ ঠিক করে থাকেন।
৬. জুন মাস- চীন রোমানদের কাছে জুন মাস ছিল বিয়ের মাস। এই মাসের নামকরণের পিছনে আছেন রোমান দেবী ’জুনো’। ইনি ছিলেন দেবতাদের রানি।
৭. জুলাই মাস- এই মাসের নামের পিছনে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নাম রয়েছে। এই জুলাই মাসেই সিজার জন্মেছিলেন। তিনি হয়তো তা-গুত শাসক ছিলেন। সেই সময় অবশ্য এই মাসের নাম ছিল ‘কুইন্টিলিস’।
৮. আগস্ট মাস- এই মাসের নামকরণ হয়েছে রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নাম অনুসারে।
৯. সেপ্টেম্বর মাস- ল্যাটিন ‘সেপ্টেম’ মানে সাত। রোমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ছিল সপ্তম মাস। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সালে যখন জুলিয়াস সিজার তার নাম অনুসারে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার শুরু করলেন, সেখানে ক্রম অনুসারে প্রথম ছয়টা মাস ঠিক একই থেকে গেল। কিন্তু নতুন দুটো মাস জানুয়ারি ও ফ্রেব্রুয়ারি অতিরিক্ত যোগ হওয়ায় সেপ্টেম্বর হয়ে গেল নয় নম্বর মাস।।
১০. অক্টোবর মাা- ল্যাটিন ‘অক্টো’ মানে আট আর ‘বার’ শব্দটি বিশেষণ হয়ে সাফিক্স হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। ‘অক্টো’ শব্দটির অর্থ অষ্টম কিন্তু জুলিয়ান এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে অক্টোবর হচ্ছে দশম মাস।
১১. নভেম্বর মাস- নভেম্বর মাস এসেছে ‘নভেন’ যার মানে নবম থেকে। বাস্তবে নভেম্বর মাস ১১তম মাস।
১২. ডিসেম্বর মাস- একইভাবে ল্যাটিন ‘ডিসেম’ মানে দশ, কিন্তু বাস্তবে ডিসেম্বর দ্বাদশ মাস।
যতদিন মুসলিমদের খেলাফত ছিল- হিজরি সাল প্রচলিত ছিল। সম্রাট আকবরের সময়কালে বাংলা নববর্ষ আসলো।
আজ চাইলেও আমাদের এসব মাস, সাল সম্পূর্নরূপে বর্জন করা সম্ভব বা সহজ নয়। কিন্তু এসব শিরকী দিবস পালন হতে বিরত থেকে ঈমান পরিশুদ্ধ রাখতে পারি। অন্যদের সর্তক করতে পারি - ইনশাআল্লাহ খেলা-ফত যখন ফিরবে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা পাবে, শিরকী নামগুলো বিতাড়িত হবে।
- সংগৃহীত