29/09/2023
যারা নবীপ্রেমের এই সামান্য জুলুস দেইখা বুক চাপড়াইয়া মরে, তারা যদি নবীজির জন্য সাহাবায়ে কেরামের পাগলামি দেখতো, তাইলে জায়গায় বেহুশ হইয়া যাইতো।
আজ যারা মিলাদুন্নবীরে বেদাত বেদাত বইলা চিল্লানি দিতাছে, তারা যদি দেখতো যে, সাহাবায়ে কেরাম নবীর ঘাম মোবারকরে আতর বানাইয়া ব্যবহার করতাছে, সাথে সাথে বইলা উঠত— এইটা তো নোংরামো।
যদি দেখতো যে, নবীজির অজুর পানির জন্য সাহাবায়ে কেরাম হুড়োহুড়ি করতাছে, সাথে সাথে কইতো, এইটা নাপাক পানি। সাহাবিরা এই পানি গায়ে হাতে মাখাইয়া অপবিত্র হইয়া গেছে।
যদি দেখতো যে নবীজির কাটা চুল, নক সংগ্রহ কইরা রাখতেছে এইসব থেইকা বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে, তাইলে বলতো— এই তো চরম জিহালত।
যদি দেখতো যে, কেউ নবীজির রক্ত খেয়ে নিয়েছে, সাথে সাথে ফতোয়া মারতো— এইটা হারাম। সাহাবি হারাম ভক্ষণ করছে, হারাম অস্বীকার করেছে, অতএব সাহাবির কুফরি হইছে।
যদি দেখতো যে, প্রতিশোধের বাহানায় কোনো সাহাবি নবীজির পেটে চুমা দিতাছে, মোহরে নবুয়তে উপুড় হইয়া কাঁদতাছে, তাইলে বলতো— এইটা হাস্যকর। নবী তো আমাদেরই মতো, হুদাই সেম সেম একটা মাইনষের প্রতি এমন কার্য প্রদর্শন বোকামি।
আহারে প্রেম! প্রেমের কত রকমফের। কত হাজার এর প্রকাশ-বিকাশের পন্থা। হাস্সান বিন সাবিত লেইখা গেছে। শরফুদ্দিন বুছিরি লেইখা রুমাল পাইছে, রুমি, জামি, ইকবাল কতজনেই না লিখছে, গাইছে। এই দেশে নজরুল, ফররুখ, গোলাম মোস্তফাও লেইখা গেছে।
আজকের দিনে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে হরহামেশা প্রেমিকরা লিখতেই আছে। গাইতেই আছে। হাজার রকমের ভাষায়। হাজার সুরে, হাজার আবেদনে। কেউ কি বলছে কোনোদিন, নবীর শান আরবিতে লিখবি কেবল, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি, স্পেনিশে লেখা বেদাত! কেউ কি বলছে যে, হাস্সান বাংলা লেখে নাই, পড়ে নাই, অতএব বাংলায় লেখন, পড়ন যাইতো না?
কয় নাই। কারণ, প্রেম এক, কিন্তু প্রকাশ-বিকাশের ধারা হাজার। আপনার প্রেমের প্রকাশের লগে আমার প্রেমের প্রকাশ মিলবে না। মিললে ভালো, না মিললে কি যুদ্ধ লাগাইতে আসবেন? আবার একশ বছর আগে প্রেমের প্রকাশ যেইভাবে করা হইতো, আজকে কি ঐভাবে হয়? বলেন তো দেখি, আজকের দিনে কয়জনে চিঠি লেখে? কইতরের পায়ে চিঠি কয়জনে বান্ধে, বুঝাইয়া দেন।
যুগের একটা চাহিদা থাকে। যুগের চাহিদা অনুসারে, সবকিছুর প্রকাশে, বিকাশে পার্থক্য আসে। সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ হয়। রীতিনীতির পরিবর্তন আসে। এইটারে যারা গ্রহণ করতে জানে না, তাদের বলা হয় সেকেলে।
ইসলাম সেকেলে ধর্ম নয়। ইসলামের কালচারও সেকেলে কালচার নয়। ইসলামি কালচারের ব্যাপারে শরিয়ত যা বলেছে, তার সারমর্ম এমন যে, যদি সংস্কৃতি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, অর্থাৎ, ইসলামের যে সব মৌলিক বিষয় আছে, সেইগুলার সাথে কোনোভাবে সংঘর্ষ না বাঁধে, তাইলে ঐ সংস্কৃতিরে ইসলাম অস্বীকার করে না। এইটারে বেদাত কয় না।
✍️©