03/06/2022
৪০ ডলার দিয়ে ছেলের জন্য খেলনা ড্রোন অর্ডার করেছিলাম আলি এক্সপ্রেসে। কাস্টমস এ আটকা পড়েছিল ঈদের আগে। আজকে ছাড়াতে গিয়েছিলাম, বিশ টাকার রাজস্ব স্ট্যাম্প চাইলো পাঁচশো টাকা, দামাদামি করে দিলাম আড়াইশো টাকা। এরপর ভোটার আইডি আর আবেদনসহ পাঁচ নম্বর কামরা থেকে গেলাম ছয় নম্বর কামরায়।
সেখানে মুরুব্বি বললেন, "একটু বসেন।"
এত সুন্দর আচরণ করলেন, মনে হলো নেহাতই ভালো লোক। আশ্বস্ত হলাম; মনে হলো এই লোক থাকতে আর কোন চিন্তা নাই। পনের বিশ মিনিট পর পিয়ন আসলে উনাকে দিয়ে আমার বক্সটা খোঁজে বের করলেন। আমাকে বললেন পাঁচ নম্বরে গিয়ে কর্মকর্তা কে ডেকে আনতে। উনি বক্স খোলে দেখবেন ভেতরে কী আছে। কর্মকর্তাকে ডেকে আনলাম, বক্স খোলা হলো। দেখে সাইন করে চলে গেলেন, আমিও সাইন করলাম।
আমি ভাবলাম, মামলা শেষ। একটু আগে যিনি বলেছিলেন, "আপনার কি টাকা বেশি হইছে? কেন এদেরকে টাকা দেন? সরকার বেতন দেয় না আমগো?" তিনিই পিয়নকে খাম্বার আড়ালে পাঠালেন।
চাচায় বললো, "কিছু খরচাপাতি দেন।"
আমি বললাম, "নগদ টাকা নাই আপনার বিকাশ নম্বর দেন।"
পাশ থেকে মুরুব্বি বললেন, "বিকাশে নিও না, পরে ঝামেলা হবে।"
পিয়ন চাচায় আমাকে বললেন, "মাল তো আমাদের এখান থেকে দেয়ার নিয়ম নাই, আপনি পাঁচ নম্বরে গিয়ে কথা বলেন; মাল পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে আপনার কাছে চলে যাবে।"
পাঁচ নম্বরে গেলাম, উনি বললেন, "এটা তো ড্রোন কিন্তু আমি খেলনা লিখে দিয়েছি খাতায়, তারপরও আপনি এটা পাবেন কি না নিশ্চিত হতে আমার স্যারের সাথে কথা বলতে হবে।"
আমাকে নিয়ে গেলেন উনার উর্ধ্বতনের কাছে। বড় অফিসার বললেন, "এটার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে, আর যদি খেলনা ড্রোন হয় তবুও দেড়শো টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা ছাড়া ছাড়পত্র দেয়া যাবে না।"
একটু পরে বুঝলাম যে আসলে উনাদের কিছু টাকার দরকার, কিন্তু আমাকে সরাসরি বলতে পারছেন না; আর আমিও জীবনে কখনো শিখি নাই কিভাবে টাকা অফার করতে হয়! একবার পুলিশে চৌরাস্তার মাঝখানে হোন্ডা আটাকায়া টাকা চাওয়ার পর আমি রাস্তার মাঝে টাকা দিতে যাওয়ার পর যে ধমক খাইছিলাম! পরে চিপায় নিয়ে টাকা নিয়েছিলো।
এ্যানিওয়ে, আমি ড্রোনের আশা ছেড়ে দিয়ে মনের সুখে পুরানা পল্টনে বসে নান্না বিরিয়ানি খাচ্ছি, এমন সময় অচেনা নম্বর থেকে কল আসলো।
ওপাশ থেকে বললেন, "আমি আপনার দেশি লোক, আপনার মালের ব্যাপারে আপনাকে হেল্প করতে পারবো। দেখা করেন।"
খাওয়া শেষ করে আবার গেলাম, ডাক অফিসে। পিয়ন কাকায় এগিয়ে এসে বললেন, "আপনার মাল আমি এখান থেকেই ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারবো, কিছু পয়সা কড়ি খরচ করতে হবে।"
জিজ্ঞেস করলাম, "কত?"
উনি বললেন, "পনের হাজার।"
"এই ড্রোনের দাম কত জানেন? মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা। অলরেডি গাড়িভাড়াসহ আমার আটশো টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই সাড়ে তিন হাজারের জন্য আরও পনের হাজার দিমু? তার চাইতে বাইরে গিয়ে বারশো টাকায় আরেকটা খেলনা ড্রোন কিনে বাসাই চলে যাই!"
"এত কমদামি ড্রোন কেউ বিদেশ থেকে আনে না, আপনি কত দিতে পারবেন?"
"একশো টাকা। সর্বোচ্চ আর দুইশো টাকা দিতে পারবো।"
চাচায় কিছুটা হতাশ হলেন কিন্তু আমার মালটাও দিলেন না।
আমি যদি এই দেশ ছেড়ে কখনো চলে যাওয়ার সুযোগ পাই, তবে অবশ্যই চলে যাবো। এবং দেশ ছাড়ার কারণ হিসেবে আজকের এই হয়রানিই যথেষ্ট।
(From Inbox)
লেখাটি নীল সালু পেজ থেকে নেয়া এবং ছবি ফেসবুক।