13/05/2022
যে সকল ব্র্যান্ড দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছেন তাদের জন্য নতুন মার্কেটিং টুল হিসেবে টিক-টকের জুড়ি নেই।
গত এক-দুই দশকে মানুষের মনোযোগের সীমা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। মাইক্রোসফট তাদের এক গবেষণায় বলছে, মানুষ গড়ে মাত্র আট সেকেন্ড এক জায়গায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। এই ঘটনার প্রভাব কনটেন্টের জগতেও ব্যাপক। বহু মানুষ এখন আড়াই ঘণ্টার সিনেমার বদলে কয়েক মিনিটের ‘মুভি এক্সপ্লেনেশন ভিডিও’ দেখতে পছন্দ করে। কোনো কনটেন্ট প্রথম কয়েক সেকেন্ডে যদি আপনাকে না টানে, তাহলে আপনি স্ক্রল করে এগিয়ে যান। কারণ, ফেসবুক-ইউটিউব-টিকটকের মতো অ্যাপগুলোতে ভিডিও বা ছবির অভাব নেই।
ফেসবুক ও স্ন্যাপচ্যাট জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ধরন ভবিষ্যতে টিকটকের মতো হবে। এ ব্যাপারে স্ন্যাপচ্যাটের সিইও ইভান স্পিগেল বলেছেন, অ্যাপে বন্ধু তালিকায় থাকা লোকজনের স্টোরি দেখার পেছনে মানুষ খুব বেশি সময় ব্যয় করছে না। স্ন্যাপচ্যাটের স্পটলাইটের ভিডিওগুলোতেই বেশি সময় দিচ্ছে তারা। স্পটলাইটে যেকোনো মানুষের পোস্ট করা ভাইরাল ভিডিও থাকে, ঠিক টিকটকের মতোই।
স্পিগেল আরও বলেন, ‘মহামারি জুড়ে আমরা যে প্রবণতা লক্ষ্য করেছি, এটি তারই ধারাবাহিকতা। প্রতিদিন সক্রিয় ব্যবহারকারীদের স্টোরি পোস্ট করা ও দেখা মহামারির আগের সময়ের পর্যায়ে ফিরে আসেনি।’
কনটেন্ট সেকশনে পরিবর্তনগুলো ঠিক কেমন হবে, তা এখনো বিশদভাবে জানায়নি স্ন্যাপচ্যাট। তবে এটি টিকটকের মতো দেখতে হতে পারে, সেটা ভেবে নেওয়া যেতে যেতে পারে।
এদিকে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গও টিকটককে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষের কাছে সময় কাটানোর জন্য অনেক সুযোগ আছে। আর টিকটকের মতো অ্যাপগুলোর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে।’
স্ন্যাপচ্যাটের ব্যবসা এখনো ভালো চললেও সম্প্রতি মেটার বাজারমূল্য কমেছে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অন্যদিকে ২০২০ সালের আগস্টে বাজারে আসা টিকটকের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। ফলে ফেসবুক ও স্নাপচ্যাট টিকটককে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে। ভবিষ্যতে টিকটকের সঙ্গে তাল মিলিয়েই হয়তো চলতে দেখা যাবে ফেসবুক-স্ন্যাপচ্যাটকে।
ভাবতে পারেন, ক্লাসিক কনটেন্টগুলো কি তাহলে হারিয়ে যাবে ? না, এমনটা হবে না। দিন দিন নেটফ্লিক্সের চাহিদা বাড়ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলীয়রা সপ্তাহে গড়ে ৪ দশমিক ৩ ঘণ্টা পডকাস্ট শোনার পেছনে সময় দেয়। ফলে এটা নিশ্চিত যে মনোযোগ ধরে রাখার মতো ভালো কনটেন্ট তৈরি হলে মানুষ সময় দেবে।
মুশকিল হলো, মানুষের হাতে সময় আছে কতটুকু। টিকটক এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেটা শুরুতেই জানিয়ে দিচ্ছে যে তার ভিডিওর দৈর্ঘ্য ছোট। এই অল্প সময় কাজে লাগিয়ে যাঁরা ভালো কনটেন্ট তৈরি করছেন, নিশ্চয়ই তাঁরা দারুণ সৃজনশীল। বিজ্ঞান, সাহিত্য, বই, ব্যবসা—সব বিষয়সংক্রান্ত ভালো কনটেন্টই আপনি পাবেন, যদি চেষ্টা করেন।
তবে এত বড়সংখ্যক ব্যবহারকারীর রুচি পরিবর্তনের দায়িত্ব একটা করপোরেট প্রতিষ্ঠান কীভাবে নিচ্ছে, সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু দিন শেষে অনলাইন বিনোদন বা কনটেন্ট তৈরির সম্ভাবনার জগতের কথা যদি বলেন, তাহলে টিকটকই ভবিষ্যৎ।
অদ্যাবধি টিক-টকের মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ বিলিয়ন, এবং অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে ৩.৫ বিলিয়ন এর বেশি। সুতরাং আপনার যে কোন ধরণের প্রোডাক্ট কাঙ্খিত ক্রেতার নিকট অর্গানিক ভাবে বিনামূল্যে প্রচারণায় টিক-টক হতে পারে সর্বোচ্চ সহজ মাধ্যম।
লিখাটা আমার "ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল রপ্তকরণ।প্রস্তাবনাঃ ৪৩" আর্টিকেল থেকে নেয়া। লিংক কমেন্টে।