13/07/2022
স্টেডিয়ামের হসপিটালিটি বক্সে বসে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছেন?
মাঠের ১ সেকেন্ড পর টিভিতে আউট হয়।
আমি তখন রিপ্লাই দেখি, মজা পাই।
রাতের আকাশে আমরা যা কিছু দেখি সবই অতীত! মজা না?
ছোটকালে হুজুরকে বলতে শুনতাম, সবচেয়ে কমদামী জান্নাতী (সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী)এই দুনিয়ায় দশগুন সমান জান্নাত পাবে (সহীহ মুসলিম)। আমি ভাবতে থাকি এতো যায়গা পাবে কই?
যাদের আগ্রহ আছে তারা নিচের সহজবোধ্য লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন~
ছবিটি নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (যা কিনা হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত) দ্বারা তোলা হয়েছে। আর ছবিটি উন্মোচন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবিটি উন্মোচনের পরপরই যেনো সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানপ্রেমীর মধ্যে শুরু হয়ে যায় বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাস। ছবিটির নাম দেয়া হয়েছে 'Webb Deep Field"। একসময় ছবির গ্যালাক্সিগুলো আমাদের কাছে একদমই অদেখা ছিলো, জানার জগতের বাইরে ছিলো। তা আজ দেখতে পাচ্ছি নাসার উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত এ টেলিস্কোপটির মাধ্যমে। অবশ্য, এ ছবিটি যে কোন মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট, যদি কেউ ছবিটির বিশেষত্ব বুঝতে পারেন।
কিন্তু, কি এ ছবির বিশেষত্ব? আসুন, একটু ছোট্ট পরিসরে খুঁটিয়ে দেখি।
★ ছবিটির দিকে তাকান। আপনি তাকিয়ে আছেন ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগের একটি দৃশ্যের দিকে। ১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি বছর। ৪.৬ বিলিয়ন = ৪৬০ কোটি বছর। অর্থ্যাৎ, এ ছবিটি আজ হতে ৪৬০ কোটি বছর পূর্বেকার দৃশ্য। বুঝতে সমস্যা?
রাতের বেলা আকাশের দিকে তাকালে যে দৃশ্য আমরা দেখতে পাই, তা সবই সুদূর অতীতের। বর্তমানের লেশমাত্র নেই। মহাশূণ্যে আলো ১ সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কি.মি. দূরত্ব অতিক্রম করে। এভাবে ৬০ সেকেন্ড বা, ১ মিনিটে, ১ ঘন্টায়, ১ দিনে ও সবশেষে ১ বছরে যে পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে সে পরিমাণ দূরত্বকে আমরা বলি ১ আলোকবর্ষ। আর, আকাশের দিকে তাকালে যে তারাগুলো দেখেন, ঐ তারাগুলো থেকে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে আলো যখন আমাদের কাছে আসে তখনই আমরা তাদের দেখতে পাই। তার মানে, যে তারাটি ১০ আলোকবর্ষ দূরে, তা থেকে আলো আমাদের কাছে আসতে সময় নেয় ১০ বছর।
সূর্য বাদে পৃথিবীর নিকটতম তারার নাম প্রক্সিমা সেন্টরাই- যা ৪.২৩ আলোকবর্ষ দূরে অবস্হিত। তাই, সে তারাটি থেকে আলো আমাদের কাছে আসতে সময় নেয় ৪.২৩ বছর। তাই যখন আমরা রাতের আকাশে তারাটির দিকে তাকাই, তখন আজ হতে তার ৪.২৩ বছর পূর্বেকার চেহারা দেখি। ঠিক এই মুহূর্তের চেহারা দেখবো ৪.২৩ বছর পর। একইভাবে আমরা যখন সূর্যের দিকে তাকাই, তখন মূলত বর্তমান হতে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড আগের চেহারা দেখি। অর্থ্যাৎ, রাতের আকাশে যা দেখেন, তা সবই অতীত। কোনটি স্বল্প কয়েক বছর, কয়েক শত বছর, কোনটি বা হাজার লক্ষ বছরের।
একইভাবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা এ ছবিটির বর্তমান যে দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আজ হতে ৪৬০ কোটি বছর পূর্বেকার। কেমন পূর্বেকার জানেন? বর্তমানে আমরা ছবির গ্যালাক্সিগুলোর যে আলো দেখতে পাচ্ছি, তা যখন তাদের থেকে নির্গত হয়ে আমাদের দিকে যাত্রা শুরু করে, তখন আমরা তো দূরে থাক, আমাদের পৃথিবীরই অস্তিত্ব ছিলো না!
★ ছবিতে যে ছোট ছোট বিন্দু বা বিন্দুসদৃশ অংশগুলো দেখতে পাচ্ছেন, সেগুলো কোন তারা নয়। বরং, একেকটি গ্যালাক্সি! একেকটি গ্যালাক্সিতে আবার গড়ে ১০০-৫০০ বিলিয়ন তারা থাকে। আর এসব একেকটি গ্যালাক্সি আকারে কতো বৃহৎ জানেন? আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিরই ব্যাস প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ! এমন আবার অর্ধশতাধিক সংখ্যক গ্যালাক্সির সমন্বয়ে গঠিত হয় একেকটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার। এসব ক্লাস্টারের আবার একেকটি গ্যালাক্সির মধ্যকার দূরত্ব থাকে প্রায় কয়েক লক্ষ আলোকবর্ষ! একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার আকারে কতো বৃহৎ নিশ্চয় বোঝাই যাচ্ছে? জেমস ওয়েবের তোলা এ ছবিটি তেমনই একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের ছবি। নামঃ SMACS 0723।
★ কিছু গ্যালাক্সির রং দেখতে পাচ্ছেন লাল ও কিছু অংশ সাদাটে। যেসব গ্যালাক্সির রং লাল, তাদের বয়স অনেক অনেক বেশি। অনেক পুরনো সেগুলো। কারণ, সেসব গ্যালাক্সির তারাদের জীবন প্রায় শেষের দিকে। বিপরীতে সাদাটে গ্যালাক্সিগুলোর বয়স সে তুলনায় বেশ কম।
★ ছবিতে বৃত্তচাপ আকৃতির কিছু বাঁকা লালচে আলোক রেখা দেখতে পাচ্ছেন। এদেরকে দেখে গ্যালাক্সি মনে হলেও বাস্তবে এরা আসলে কিছুই না! আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি অনুযায়ী, এটি স্রেফ স্থান-কালের বক্রতা! ছবির কেন্দ্রে যেসব গ্যালাক্সি রয়েছে তাদের সকলের সমন্বিত ভর এতোই বেশি যে, তাতের পেছন থেকে আসা গ্যালাক্সিগুলোর আলোকে বক্র করে দিয়েছে। এ ঘটনাকে বলা হয় মহাকর্ষীয় লেন্সিং। প্রকৃতপক্ষে, এসব বেঁকে যাওয়া আলোর রেখাগুলো ছবি গ্যালাক্সিগুলোর পেছনে থাকা গ্যালাক্সির প্রতিবিম্ব, যাদেরকে সরাসরি ছবিতে দেখা যাচ্ছে না। সেই লেন্সিং এর ফলেই অসংখ্য ক্ষুদে বিন্দু ম্যাগনিফাইং হয়ে আকারে বড়ো হওয়ায় ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
সবকথার শেষ কথা, এই পুরো ছবিটি আসলে মহাবিশ্বের বিশালতার কাছে কতোটুকু? উত্তর হচ্ছে, একটি ধূলি বা বালুকণার আকার যতো ক্ষুদ্র, তারচেয়েও ক্ষুদ্র! আপনি যদি হাতে একটি বালুকণা নিয়ে আকাশের দিকে তাক করে ধরেন, তবে পুরো আকাশের তুলনায় সে বালুকণা যতোটুকু বড়ো, ছবিটির অংশ তার চেয়েও ক্ষুদ্র!
আমাদের সূর্যের মতো অগণিত নক্ষত্র রয়েছে সেসব গ্যালাক্সিতে, রয়েছে পৃথিবীর মতো অনেক গ্রহ, উপগ্রহও! কিন্তু সেখানেও কি আমাদের মতো কেউ নেই?
প্রকৃতপক্ষে আমরা যতোটা ভাবি, মহাবিশ্ব তারচেয়েও বেশি জটিল। যতোটা কল্পনা করতে পারি, তারচেয়েও ভয়ঙ্কর রকমের বিশাল।