21/07/2025
সিলেটের গোলাপগঞ্জ—বিয়ানীবাজার ভায়া আমুড়া—বহরগ্রাম
ফেরি ও সেতু বৃত্তান্ত
মোঃ আব্দুল মালিক:
এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বোধহয় আর গেল না। বলছিলাম, গোলাপগঞ্জ- বিয়ানীবাজার, ভায়া আমুড়া— বহরগ্রাম—শিকপুর (LGED Road No- 691382002) রোডে কুশিয়ারা নদীতে সেতু নির্মাণের কথা। যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫খ্রি. ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান MBEL-SELJV —ঢাকা সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে ১৪ এপ্রিল মেশিনারিসহ অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নেয়। ফলে সেতুটির উপকারভোগী গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলা এবং বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ পৌর সভার মানুষের মধ্যে হতাশার কালো ছায়া নেমে আসে। মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে সেতুটি হয়তো আর হবে না। এ সেতুটি নির্মিত হলে প্রবাসী অধ্যুষিত এই চার উপজেলা ও দুই পৌরসভার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হতো। গোলাপগঞ্জ— বিয়ানীবাজার ভায়া বহরগ্রাম রাস্তাটি সোজা ও প্রস্থে বড়। ফলে দূরত্ব কমে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং যানবাহন চলতে পারে দ্রুত। প্রবাসী অধ্যুষিত এই চার উপজেলা ও দুই পৌরসভার মানুষের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত, বিভাগীয় শহর সিলেটে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনাগমন, ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনা, সরকারি কর্মকর্তা— কর্মচারীদের কর্মস্থলে যাতায়াত, সারাদেশ থেকে সিলেট ভ্রমণে আসা মানুষের মাধবকুন্ড, হাকালুকি, লাউয়াছড়া, মৌলবীবাজার, শ্রীমঙ্গল, জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, সাদাপাথর সহ অন্যান্য পিকনিক স্পটে যাতায়াতের জন্য এই রাস্তা সহজ ও সংক্ষিপ্ত হওয়ায় সেতুটি ছিল খুবই দরকারী।
এই রাস্তাটির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৯৬২ সালে প্রথম এই রাস্তার কার্যক্রম শুরু হয়। তখন আমুড়ার পূর্ব থেকে মাথিউরার পশ্চিম পর্যন্ত রাস্তার ম্যাপ ছিল আমুড়ার মাখড়িয়া বিল ও বহর গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে আওই হাজীপুর—মাথিউরা হয়ে বিয়ানীবাজার। সে সময় বর্তমান ‘বুধবারীবাজার’ ও ‘পশ্চিম আমুড়া’ এক ইউনিয়ন ছিলো, নাম ছিলো ‘আমুড়া’। প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন মৌলানা আব্দুল হালিম চৌধুরী। তিনি পদত্যাগ করলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান জনাব ইদ্রিছ আলী। রাস্তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন তৎকালীন আমুড়া ইউনিয়নের মেম্বার আমনিয়া গ্রামের জনাব আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী উরফে সোনা মিয়া। কুশিয়ারার পূর্ব পারের কাজের তদারকিতে ছিলেন স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে মৌলানা ওয়ারিছ উদ্দিন হাজীপুরি সাহেব। তখন বহর গ্রামের নয়াবাড়ির লুৎফুর রহমান সাহেব পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। ছুটিতে বাড়িতে এসে তিনি জানলেন, তাঁর বাড়ির উত্তর পাশ দিয়ে মটর সড়ক হচ্ছে। যে কোন কারণে সেটি তাঁর পছন্দ হলোনা। তিনি চলে গেলেন স্থানীয় প্রতিনিধি মৌলানা ওয়ারিছ উদ্দিন সাহেবের নিকট, উদ্দেশ্য রাস্তার ম্যাপ পরির্বতন করা। তিনি প্রস্তাব দিলেন,বানীগ্রামের উত্তর দিয়ে প্রকাশিত কর গ্রামের গোপাট দিয়ে রাস্তাটি নেওয়ার জন্য। মৌলানা সাহেব এই প্রস্তাবে রাজী হলেন না। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। মৌলানা সাহেব না’কী বললেন, প্রয়োজনে তিনি জোরপূর্বক এদিকেই রাস্তা করবেন। এমনটি জানান এক আলাপচারিতায় জনাব লুৎফুর রহমান। এতে লুৎফুর রহমান সাহেব ক্ষুব্ধ হন। তিনি বানীগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার আতাউর রহমান সাহেব যিনি তখন ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানায় কর্মরত ছিলেন তাঁর স্মরণাপন্ন হন। উল্লেখ্য ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বাড়ির দক্ষিণ পাশ দিয়ে রাস্তাটি হওয়ার কথা ছিলো, যা তাঁরও পছন্দ ছিলোনা। উনারা উভয়ে আপত্তি দিলে রাস্তার কার্যক্রম বন্ধ হয় এবং বরাদ্দ ফেরত যায়। পাকিস্তান আমলে উক্ত রাস্তায় আর কোন বরাদ্দ আসেনি। সে সময় আওই মৌজায় ডাক্তার ইসলাম উদ্দিন সাহেবের বাড়ির দক্ষিণ—পশ্চিম কোণে একটি সেতু নির্মিত হয়, যা এখনো আছে এবং হাজীপুর পর্যন্ত প্রচুর মাটি ভরাটের কাজ হয়। ১৯৭৩ সালে ‘আমুড়া’ ইউনিয়ন ভেঙ্গে ‘পূর্ব আমুড়া’ ও ‘পশ্চিম আমুড়া’ নামে দুটি ইউনিয়ন হয়। বর্তমানে ‘পূর্ব আমুড়া’ ইউনিয়নের নাম ‘বুধবারী বাজার’ ইউনিয়ন। স্বাধীনতা উত্তর প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভাগ্যগুণে, নাটকীয়ভাবে সেই লুৎফুর রহমান সাহেব ‘পূর্ব আমুড়া’ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মূলত: তাঁর কারণে রাস্তাটি সে সময় বাধাগ্রস্ত হয়ে নির্মিত না হওয়ায় তিনি সহ এলাকাবাসী যে অপুরণীয় দূভোর্গে নিপতিত হন সে জন্য তাঁর মধ্যে এক ধরণের অনুশোচনা কাজ করছিল। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সে অনুশোচনা থেকে মুক্তি পেতে চাইলেন, এলাকাবাসীর দূভোর্গ লাঘবের চেষ্টা করতে লাগলেন। তিনি তৎকালীন গোলাপগঞ্জের পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আনোয়ার হোসেন মতি, বিয়ানীবাজারের মাথিউরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আজির উদ্দিন এর সাথে আলোচনা করে পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের আমুড়া ও ভেটুরখাল, পূর্ব আমুড়া বর্তমান বুধবারী বাজার ইউনিয়নের বহরগ্রাম ও ছত্রিশ এবং বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা ইউনিয়নের নাদাইখালের পার দিয়ে একটি রাস্তার ম্যাপ তৈরী করেন। এই ম্যাপ অনুযায়ী ১৯৭৭ সালে আমেরিকান সাহায্য সংস্থা রোড কেয়ার রাস্তাটি অনুমোদন করে উন্নয়নের জন্য গম বরাদ্দ দেয়। সেই ১৯৭৭ সাল থেকে অল্প অল্প করে নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে ১৯৯৩ সালের দিকে মাটি ভরাটের কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়। ১৯৯৩ সালে বুধবারী বাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাতীয়পার্টি নেতা আনোয়ার হোসেন ও গোলাপগঞ্জ জাতীয়পার্টির সভাপতি আমনিয়া গ্রামের ওসমান হারুন চৌধুরী তুতুমিয়ার তৎপরতায় সাবেক সচিব ইনাম আহমদ চৌধুরীর সহযোগিতায় গোলাপগঞ্জ— বিয়ানীবাজার ভায়া আমুড়া— বহরগ্রাম রাস্তাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ স্কীমের আওতায় গ্রোথ রোডের অন্তর্ভূক্ত হয়। উল্লেখ্য ইনাম আহমদ চৌধুরী সাহেব তখন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ছিলেন এবং তাঁর অবসর গ্রহণ অত্যাসন্ন ছিল বিধায় তিনি এলাকা তথা সিলেটের উন্নয়নে কিছুটা মনোযোগী ছিলেন। ওসমান হারুন চৌধুরী ও ইনাম আহমদ চৌধুরী মামাত—ফুফাত ভাই। এই সুযোগে ওসমান হারুন চৌধুরী নিজের বাড়ির রাস্তা হিসেবে গোলাপগঞ্জ থেকে আমুড়া পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়নের প্রজেক্ট তৈরি করে ইনাম আহমদ চৌধুরীর স্মরণাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ সংবাদ অবগত হয়ে জাতীয়পার্টি নেতা ও বুধবারী বাজার ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন তাঁর নেতা ওসমান হারুন চৌধুরীকে গোলাপগঞ্জ ভায়া আমুড়া বহরগ্রাম বিয়ানীবাজার পর্যন্ত প্রজেক্টটি সম্প্রসারনের অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী ওসমান হারুন চৌধুরী ইনাম আহমদ চৌধুরী সাহেবকে প্রস্তাব করলে তিনি তাঁর ক্ষমতাবলে রাস্তাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গ্রোথ সেন্টারের অন্তর্ভূক্ত করেন এবং রাস্তাটির কাজ ২০০৫ সালে শেষ হয়। উল্লেখ্য এই রাস্তা শুরুর সময় যে আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী সোনামিয়া জড়িত ছিলেন সেই রাস্তার সমাপ্তি হয় তাঁরই পুত্র ওসমান হারুন চৌধুরীর হাতে। স্মর্তব্য যে ওসমান হারুন চৌধুরীর শশুড় বাড়িও বহরগ্রাম।
২০০৫ সালে ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে সেতু চালু হলে গোলাপগঞ্জ— বিয়ানীবাজার নিবার্চনী এলাকার সংসদ সদস্য জনাব ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়া সেখানকার ফেরি বহরগ্রাম নিয়ে আসেন। বহরগ্রাম—শিকপুর ফেরি চালু হলে এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়। উক্ত রাস্তাটি ঢাকাদক্ষিণ— বিয়ানীবাজার রাস্তা থেকে প্রস্থে বড়, সোজা ও সংক্ষিপ্ত হওয়ায় উক্ত চার উপজেলা ও দুটি পৌরসভার মানুষ এই রাস্তাটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করতে থাকেন।
২০০৫ সালে ফেরি চালু হওয়ার পর বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়েছে আবার চালুও হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের শেষদিকে যেই ফেরি বন্ধ হলো আর চালু হলো না। ২০১৭ সালে কোন একদিন রাতের অন্ধকারে ফেরিটি ঘাট থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় ফেরি পুণরায় চালু করার জন্য এলাকাবাসী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মী স্থানীয় এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদের স্মরণাপন্ন হন। তিনি কখনো তাদেরকে পাঠান বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আতাউর রহমান খানের নিকট, কখনো পাঠান বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদাক আওয়াল সাহেবের নিকট, কখনো জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সৈয়দ মিছবা উদ্দিনের নিকট, কখনো সড়ক ও জনপথ সিলেটের চীপ ইঞ্জিনিয়ারের নিকট। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বহরগ্রামের এবাদ হোসেন ও মিছবা উদ্দিনের উদ্দোগে উক্ত ৪টি উপজেলা ২টি পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সুপারিশ ও স্বাক্ষর সম্বলিত একখানা আবেদন প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, তেজগাঁও, ঢাকা বরাবরে ০৯ জুলাই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নিয়ে যান। প্রধান প্রকৌশলী স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার নিয়ে যেতে বলেন। উনারা ডিও লেটার সংগ্রহ করতে পারেন নি, তাই আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। উক্ত আবেদনের একটি কপি নিয়ে এই অধম ২৮ জুলাই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে যাই। উক্ত মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার তৎকালীন নবনির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক, সরকারের যুগ্ম সচিব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে দেখা করে বহরগ্রাম—শিকপুর সেতুর অগ্রগতি জানতে চাই। ফাইলপত্র দেখে তিনি জানান, এ সেতুর কোনো ফাইলই নেই। অর্থাৎ এ সেতু সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম শুরুই হয়নি। অথচ স্থানীয় এমপি সাহেব কখনো একনেকে আছে, কখনো একনেকে পাশ হয়েছে, কখনো এখানে সেতু নির্মাণ করলে জাহাজ চলাচলে সমস্যা হবে তাই ভারত বাধা দিচ্ছে ইত্যাদি নানা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। ঐদিনই আমি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কানাইঘাটের কৃতি সন্তান অতিরিক্ত সচিব এহসান এলাহি খোকন মহোদয়ের অফিসে যাই। সেদিন তিনি খুবই ব্যস্ত ছিলেন, তবুও আমাকে সময় দেন। আমার যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে, আমি ফেরি বন্ধের কথা বললাম। আবার তিনি জানতে চাইলেন ব্রীজ হয়েছে কী’না? বললাম না। তখন তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন ফেরির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকারের অফিসে। সেখানে গিয়ে তিনি তাঁর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, উনাকে আপনার সমস্যার কথা বলুন। আমি ফেরি বন্ধের কথা বললে তিনি বলেন, এব্যাপারে তাঁর জানা নেই। তিনি তাৎক্ষণিক সিলেটে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফোন করে ফেরি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে তিনি কী বলছেন তা স্পষ্ট শোনা না গেলেও বুঝা গেল, তিনি বলছেন ২ কিলোমিটার দূরে চন্দরপুরে ১টি ব্রীজ চালু হয়েছে, তাই এই ফেরি দিয়ে গাড়ি চলেনা, আর শুধু মানুষ পারাপারের জন্য ফেরি চালু রাখা সমীচীন নয় তাই ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফোনালাপ শেষে তিনিও আমাকে এমনটিই জানালেন। জবাবে আমি বললাম, ২ কিলোমিটার নয়, ৫ কিলোমিটার দূরে ১টি ব্রীজ চালু হয়েছে তাই গাড়ি কিছুটা কম চলে। তখন তিনি আমাকে বললেন, এটি একটা লস প্রজেক্ট। আমরা সরকারী কর্মচারী হয়ে সরকারের লস করতে পারি না। যদিও ফেরি লস প্রজেক্ট তবে আপনাদের প্রবাসীরা অন্য অনেক খাতে দেশের লাভ করে দিচ্ছেন। আপনি আমার বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন, আপনার এলাকার মন্ত্রী/এমপির একটি ডিও লেটার নিয়ে আসেন। আমরা লাভ—লস দেখবনা ফেরি দিয়ে দিব। যদি কখনো এই লস নিয়ে প্রশ্ন উঠে তখন আমরা মন্ত্রী/এমপির ডিও লেটার দেখাব। তখন উনার বা আমাদের কারোরই কোন শাস্তি হবেনা। আমি সচিবালয় থেকে বের হয়ে এ সংবাদ মোবাইলে মিছবাকে জানাই। মিছবা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদেরকে বিষয়টি জানান। কিন্তু এমপির ডিও লেটার কেউ সংগ্রহ করতে পারেননি। আমি ঢাকা থেকে ফিরে এসে কোন কোন স্থানীয় নেতার সাথে মতবিনিময় করলে কেউ কেউ বলেন, এতটাকা খরচ করে ফেরি চালু করে আর লাভ নেই, কিছুদিনের মধ্যেত ব্রীজ হয়ে যাবে ইত্যাদি। স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতা না পেয়ে আমি পুরো বিষয়টি সর্বসাধারণকে অবহিত করার প্রয়োজন মনে করি। এ সময় চন্দরপুরের সন্তান সাংবাদিক সালমান কাদের দিপু বর্তমানে ইউপি সদস্য। তাঁর সম্পাদনায় কুশিয়ারা নিউজ ডটকম নামে একটি অনলাইন নিউজ পোটার্ল প্রকাশের উদ্দোগ নেন। তিনি আমাকে উক্ত পোটার্লের উদ্ধোধনী সংখ্যার জন্য একটি লেখা দিতে অনুরোধ করেন। আমি তখন গোলাপগঞ্জ— বিয়ানীবাজার ভায়া আমুড়া— বহরগ্রাম রাস্তার উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তাঁকে দেই। তিনি স্থানাভাবে পুরো প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করে ‘বহরগ্রাম— শিকপুর ফেরি এবং সেতু প্রসঙ্গে কিঞ্চিত আলেচনা’, শিরোনামে সংক্ষেপে ফেরী ও সেতুর কথা তুলে ধরেন। কুশিয়ারা নিউজ ডটকমের উদ্ধোধনী সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। উক্ত উদ্ধোধনী অনুষ্টানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি উপস্থিত থাকেন নি। কুশিয়ারা নিউজ ডটকম অনেকের হাতে পৌঁছে। আমি আমার ফেইসবুক পেইজেও দিয়েছি। তাই ব্যাপক প্রচার হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন নি।
কুশিয়ারা নিউজ ডটকম ও অন্যান্য মাধ্যমে যখন প্রচার হলো এই সেতুর কোনো ফাইলই নেই। তখন স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রী সাহেবের ঘনিষ্ট স্থানীয় নেতারা বললেন, এই সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় নয়। এ কথা শোনার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে আমি আবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আহমদ ও যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমানের সাথে দেখা করি। দুজনই বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান। উনারা খোঁজ খবর নিয়ে জানালেন, এই সেতুর কোনো অস্থিত্ব নেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে মন্ত্রী ও এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব বুধবারী বাজারে একটি কর্মীসভা করেন। উক্ত সভায় কালিজুরী গ্রামের লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আজিজ ফারুক সাহেব সভায় দাঁড়িয়ে বলেন, নাহিদ ভাই, আমরা মানুষের কাছে কি বলে ভোট চাইব? ব্রীজ হচ্ছে হচ্ছে বলে ব্রীজও নেই, ফেরিও নেই। তখন নাহিদ সাহেব খুবই রাগ করেন। আব্দুল আজিজ ফারুক সাহেব অবস্থা বেগতিক দেখে কোনো কথা বলেননি, পরে তিনি নিরবে লন্ডন চলে যান। সেখানে গিয়ে অবশ্য মুখ খোলেন। উল্লেখ্য নাহিদ সাহেব ১৯৯৬,২০০৮,২০১৪,২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বচনে সিলেট—৬ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন এবং ১০ বৎসর মন্ত্রীও ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি যথাক্রমে জাতীয় পাটির প্রার্থী শরফ উদ্দিন খসরু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ড.সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়ার নিকট পরাজিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রীসভায় নাহিদ সাহেব ছিলেন না। মন্ত্রীত্ব হারানোর পর ২০১৯ সালে তিনি বহরগ্রাম—শিকপুর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ১৭ ফেবু্রয়ারি ২০২৫ সাল থেকে সেতু নিমার্ণের কাজ শুরু হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হলে দুই পারের মানুষ প্রথম জানতে পারেন সেতুটি কোন দিকে হচ্ছে। যেদিক দিয়েই হউক পশ্চিম পারের পুরোটাই ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্ষেতের জমি অধিগ্রহণ করতে হবে এবং তাতে জমি মালিকদের তেমন কোন আপত্তিও নেই। আপত্তি শুধু আমাদের জমি নিবেন, আমরা জানবনা, কোন ক্ষতি পুরণ পাব না সেটা কেমন করে হয়? কিন্তু পূর্ব পারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে ঘন ঘন বাড়ি ঘর, দালান কোঠা আছে ,খাস জমিও আছে। তাই এখানে জনগণের সুবিধা—অসুবিধা, সরকারের ব্যয় বিবেচনার ব্যাপার আছে। পূর্ব পারে বর্তমানে যেখান দিয়ে এপ্রোচ রোড করার কথা তা সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন ২/৩ ফসলি কৃষি জমি, বাড়ি ও বহুতল দালান। অথচ এর সামান্য উত্তরে সরলেই পুরোটাই খাস জমি ও রাস্তা। এর পাশাপাশি আরো দুটি স্থান আছে যেখান দিয়ে রাস্তা নিলে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে মাত্র ২০% বা ৩০%। ফলে ব্যক্তিগত ক্ষতি ও সরকারের ব্যয় কমত। তা না করে পুরোটাই জনগণের মূল্যবান জমি ও বাড়ির উপর দিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষ ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়ে আপত্তি করেছেন। সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বে যদি জমি অধিগ্রহণ করা হতো বা অন্তত জমির মালিক কে জানানো হতো তাহলে হয়তো এই অনাকাংখিত আপত্তির ঘটনা ঘটত না। জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে চন্দরপুর ব্রীজ দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল যা এমপি নাহিদ সাহেবের জানা। তথাপি এখানে কেন? কিভাবে এমন হলো সে প্রশ্ন জনগণের।
১৪ এপ্রিল থেকে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ প্রসঙ্গে দুটি ভাষ্য রয়েছে—
১) সেতুটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বিধায় বর্তমান সরকার সেতুর কাজ বন্ধ রেখেছেন।
২) ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে স্থানীয়দের অভিযোগে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে।
২০ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি: তারিখে এই অধম ও আওই গ্রামের খালিকুর রহমান সাহেব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের চীপ—ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সাথে তাঁর অফিসে দেখা করি। তিনি জানান, তাঁর অফিস উক্ত ব্রীজ নিমার্ণের জন্য জোর প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সিলেটের ডিসি সাহেব তীব্র বিরোধিতা করছেন। ডিসি সাহেবকে সেতু নিমার্ণের পক্ষে আনার জন্য ইতিমধ্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে সর্ব জনাব আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট—৬ নির্বাচনী এলাকার আগামী সংসদ নির্বাচনে জামাতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী জনাব মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সেতুর পক্ষে ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছেন কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজী হচ্ছেন না। আপনারা যান, চেষ্ঠা করেন, ডিসি সাহেবকে যেভাবে পারেন, যে মাধ্যমে পারেন সেতুর পক্ষে আনেন, আমরা সেতু নিমার্ণের পক্ষে আছি।
২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বহুবার বহু প্রতিনিধদল বহরগ্রাম—শিকপুর ফেরিঘাটে সয়েল টেষ্ট ও মাপ—ঝোক করেছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত উপজেলা থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত উক্ত সেতুর নামে কোন ফাইলই খোলা হয়নি এসব কার্যক্রম ছিল সম্পূর্ণ ভূয়া। আর এই ভূয়াটা আমার বিশ্বাস হয় এমপি নাহিদ সাহেবের একটি মন্তব্য থেকে।
২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়া সাহেব। পরে তিনি সরকারীদল বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বহরগ্রাম এবং চন্দরপুরে দুটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে দু জায়গায়ই সয়েল টেস্ট করান। পরে চন্দরপুরে ব্রীজের কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নাহিদ সাহেব আবার নির্বাচিত হলে এই অধম একদিন ঢাকায় তাঁর বাসায় দেখা করে বন্ধ চন্দরপুর ব্রীজের কাজ চালু করার এবং বহরগ্রামে লেচুমিয়া সাহেব সয়েল টেস্ট করেছিলেন সেখানে ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করি। জবাবে তিনি বলেন, চন্দরপুর ব্রীজে মামলা রয়েছে এটি সামাধান করতে সময় লাগবে আর বহরগ্রামে সয়েল টেস্ট করানোটা একবারে ভূয়া। তিনি আমাকে বুঝালেন এভাবে, ধরেন একজনের বাড়িতে কিছু খালিজায়গা আছে বা পুরাতন একটি জরাজীর্ণ ঘর আছে। সে একজন মিস্ত্রী বা ঠিকাদার এনে এদিকে ওদিকে মাপঝোক করলো, ২/৩ তলা ফাউন্ডেশনের বাড়ি নির্মাণের জন্য হিসাব নিকাশ করলো, আসলে তার কাছে কোনো টাকা—পয়সা নেই। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশিরা এই মাপঝোক দেখে মনে করবে বাহ্ লোকটিত বিরাট বাড়ি করতে যাচ্ছে। ঠিক এইভাবে ২০০৮ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাহিদ সাহেব এলাকার মানুষ কে ধোকা দিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার ভায়া বহরগ্রাম রাস্তা ও বহর গ্রাম শিকপুর ব্রীজ নিমার্ণ বিষয়ে এই অধম যে যৎসামান্য চিন্তা করেছিলেন তা সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি—
১) ‘গোলাপগঞ্জ— বিয়ানীবাজার ভায়া বহরগ্রাম, ৪০ বছরেও রাস্তার কাজ সম্পন্ন করা হয়নি’— সাপ্তাহিক গ্রাম সুরমা, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ খ্রি:।
২) ‘গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার ভায়া আমুড়া ইত্যাদি গ্রামের রাস্তা, ৪০ বছরেও শেষ হয়নি’— সাপ্তাহিক সুরমা, মার্চ—১৯৯০ খ্রি: লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
৩) ‘গোলাপগঞ্জ— বিয়ানীবাজার ভায়া বহরগ্রাম রাস্তাটির কাজ ৪০ বছরেও সম্পন্ন হয়নি’— সিলেট বাণী, ৫ অক্টোবর ১৯৯২ খ্রি:। এভাবে এই রাস্তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় আরো সংবাদ ছাপা হয়েছে।
১৯৯৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদ জিয়া বিয়ানীবাজার হাই স্কুল মাঠে এক জনসভায় ভাষণ দান করেন। উক্ত জনসভায় স্থানীয় নেতারা শেওলা সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানান। বেগম জিয়া তাঁর বক্তব্যে স্থানীয় এমপি শরফ উদ্দিন খসরুর নিকট সেতু নির্মাণের দাবি করার পরামর্শ দেন। উক্ত সভায় অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী ও লন্ডন প্রবাসী নেতা কমর উদ্দিনের বক্তব্য ছিলো প্রণিধান যোগ্য। স্থানীয় প্রবাসী নেতা কমর উদ্দিন, বেগম জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার ভয়াবহ আগমনে বিয়ানীবাজারবাসী..............।’ হারিছ চৌধুরী বলেন, ‘তেড়েমেরে ডান্ডা করে দেবো ঠান্ডা................।’ সাইফুর রহমান সাহেব বলেন, ‘নয় হাত তলে নেরা জ্বলে।’ এসব কথা বলার মূলে ছিলো অত্র এলাকার মানুষ জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরফ উদ্দিন খসরু কে এমপি নির্বাচিত করা। উক্ত সভায় শেওলা সেতুর ঘোষনা না দেওয়ায় বিয়ানীবাজারবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পরে ঢাকা থেকে শেওলা সেতু নিমার্ণের ঘোষনা দেওয়া হয়। শুরু হলো সয়েল টেস্ট। সয়েল টেস্টে শেওলা যথোপযুক্ত না হওয়ায় বর্তমান স্থান নির্ধারণ করা হয়। এসময় ঢাকাদক্ষিণ বিয়ানীবাজার রোডে চন্দরপুরে ব্রীজ নিমার্ণের ও দাবী উত্তাপিত হয়েছে। তখন গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার ভায়া অমুড়া বহরগ্রাম রাস্তার কাজ চলছে। সে সময় এই অধম অদুর ভবিষ্যতে বহরগ্রামে ব্রীজের দাবী উঠবে বলে মত প্রকাশ করে, উক্ত তিনটি স্থানে তিনটি ব্রীজ না করে বহরগ্রাম নামক স্থানে এখন ১টি ব্রীজ করলে শেওলা ও চন্দরপুরে আর ব্রীজ করার দরকার পড়বে না এই যৌক্তিকথা তুলে একটি প্রতিবেদন তৈরী করে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করি। যেমন (১) ‘শেওলা সেতুর স্থান নির্বাচন প্রসঙ্গে’— দৈনিক জালালাবাদ, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ খ্রি:। (২) ‘প্রস্তাবিত শেওলা সেতু, জনকল্যাণ পযার্লোচনা’— যুগভেরী, ১৩ আগষ্ট ১৯৯৪ খ্রি:। (৩) ‘বহরগ্রাম ও শিকপুর ফেরিঘাটে কুশিয়ারা নদীতে ব্রীজ চাই’— দৈনিক জালালাবাদ, ১৯ মে ২০০৯ খ্রি:। এভাবে অন্যান্য পত্রিকায় ও এ প্রতিবেদন ছাপা হয়। ১ ও ২ নম্বর প্রতিবেদন ছাপার পর এ নিয়ে তৎকালীন এমপি শরফ উদ্দিন খসরু এবং ফাতেমা চৌধুরী পারু এমপির সাথে যোগাযোগ করি। শরফ উদ্দিন খসরু দাবি যৌক্তিক স্বীকার করে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশাবাদ দেন কিন্তু তিনি বিরোধীদলীয় এমপি হওয়ায় বেশিদুর আগানোর সম্ভাবনা নেই। ফাতেমা চৌধুরী বলেন, প্রস্তাব খুব ভালো কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শেষে হয়তো বা কোনটাই হবে না। তাই শেওলা সেতু হউক পরে বহরগ্রামে দেখা যাবে। সেদিন যদি জনকল্যাণ পর্যালোচনা করে বহরগ্রামে সেতু নির্মাণ করা হতো তাহলে শেওলা ও চন্দরপুরে সেতু নির্মাণ করা লাগত না। পরে পত্রিকার এসব নিউজ সহ আবেদন নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি ও মন্ত্রী, মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন, মন্ত্রী আব্দুল মান্নান, মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, ইনাম আহমদ চৌধুরী, চেয়ারম্যান প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও উচ্চ প্রদস্থ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় দিয়েছি। এরাস্তা ও ব্রীজ নির্মাণে এবং ফেরি চালু করার জন্য আরো অনেকে অনেক সময় অনেক ভাবে চেষ্টা করেছেন। তন্মধ্যে মাথিউরা গ্রামের লন্ডন প্রবাসী খলকুর রহমান সাহেব উল্লেখযোগ্য। তিনি তৎকালীন এরশাদ সরকারের মন্ত্রীদের সাথে ও যোগাযোগ করেছেন। তখন সরকারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় কোন কাজ হয়নি।
১৯৬২ সালে একবার রাস্তায় আপত্তির কারণে অত্র এলাকার মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিদারুণ কষ্ট করেছেন, আর্থ—সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছেন। আবার ২০২৫ খ্রি: ব্রীজে আপত্তির কারণে যদি ব্রীজ নির্মাণ বাতিল হয় তাহলে আবারো সে রকম পিছিয়ে পড়বেন। তাই সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাই খেয়াল রাখবেন এই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
লেখক: আব্দুল মালিক, শিক্ষক ও গবেষক।
#সিলেট #কুশিয়ারা #ফেরী