22/09/2024
মধুবালা।।
এতো সুন্দর এতো আকর্ষণীয় একজন অভিনেত্রী ছিলেন যে মহাবিশ্ব তাকে হজম করতে পারেনি। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে মধুবালা ছিলেন আইকনিক অভিনেত্রী। তাঁকে এখনও সর্বকালের অন্যতম পরমা সুন্দরী অভিনেত্রী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেত্রীদের জন্য প্রতিটি অনুপ্রেরণামূলক আলোচনায় মধুবালার নাম আসে। তাকে ''দ্য বিউটি উইথ ট্র্যাজেডি'' বলা হয়।
অভিনেতা দিলীপ কুমারের মধ্যে প্রেম খুঁজে পেয়েছিলেন ভুবনমোহিনী হাসির রানী। নয় বছর ধরে তাদের সম্পর্ক ছিল। দিলীপ কুমার মধুবালাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দীলিপের সাথে মেয়ের প্রণয় ঘটিত প্রেমকে সামনে এগোতে দেননি মধুবালার বাবা আতাউল্লাহ খান। দিলীপ কুমারের সাথে আতাউল্লাহ খানের প্রচন্ড বিবাদ শুরু হয়। মধুবালার বাবার স্বার্থপর দৃষ্টিভঙির কারণে দীলিপের সাথে মধুবালার সম্পর্ক পরিণতির পথ দেখতে পারেনি।
মধুবালার সৌন্দর্যের লিস্টে বাঘা-বাঘা ব্যক্তিদের নাম ছিল। লতিফ, মোহন সিনহা, কামাল আমরোহী, প্রেমনাথ, জুলফিকার আলি ভুট্টো, দিলীপ কুমার, প্রদীপ কুমার, ভারত ভূষণ, কিশোর কুমার।
মধুবালার প্রথম প্রেম ছিলেন লতিফ নামে এক ব্যক্তি। লতিফ তাঁকে সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। যখন লতিফকে বিদায দেন উপহার হিসাবে তিনি লতিফকে একটি লাল গোলাপ উপহার দিয়েছিলেন। লতিফ বছরের পর বছর গোলাপটি তার কাছে রেখেছিলেন। বইয়ের পাতার ভেতর সুন্দর করে স্ট্যাপল করে দিয়েছেন। তিনি যখন মারা যান যখন সেই গোলাপটি তার কবরে দিয়ে আসা হয়। কথিত আছে যে লতিফ এখনও প্রতি বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি (মধুবালার মৃত্যুর দিবস) তাঁর সমাধিতে যান এবং কবরের উপরে একটি লাল গোলাপ রাখেন।
এরপর মধুবালার জীবনে আসেন পরিচালক কিদার শর্মা। সেই প্রেম বেশিদিন টেকেনি। পরিচালক কামাল আমরোহী তো মধুবালাকে দেখে উন্মাদ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মধুবালাকে বিয়ে করতে। কিন্তু কামাল আমরোহী পূর্ব বিবাহিত ছিলেন। তাছাড়া মীনাকুমারীও তার স্ত্রী ছিলেন। কামাল চেয়েছিলেন মীনাকুমারীকে ডিভোর্স না দিয়েই তিনি মধুবালাকে বিয়ে করবেন। মধুবালা কিন্তু মীনাকুমারীকে সহ্য করতে পারতেন না। তিনি কামাল আমরোহীকে শর্ত দিয়ে বসলেন, কামাল যদি মধুবালাকে সত্যিই বিয়ে করতে চান তাহলে মীনাকুমারীকে বিদায় দিতে হবে। সতীন নিয়ে কামালের ঘর করতে চাননা তিনি। শেষ পর্যন্ত কামাল আমরোহী মধুবালার আরোপিত শর্ত মানতে রাজি হননি।
এরপর মধুবালার জীবনে আসেন অভিনেতা প্রেমনাথ। প্রেমনাথের মধুবালার সম্পর্ক টিকেছিল মাত্র ছয়মাস। প্রেমনাথ শর্ত জুড়ে দেন, তাকে মুসলিম ধর্ম ছেড়ে হিন্দুধর্মে আসতে হবে। কিন্তু মুসলিম ধর্ম ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন না।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো মধুবালার জীবনে শেষ কয়েক বছরে এসেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য লিঙ্ক-আপের মতো নয়, জুলফিকার ভুট্টো ছিলেন বোম্বে হাইকোর্টের ব্যারিস্টার। মুম্বাইতে প্রচুর সম্পত্তির কারণে তিনি একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন। জুলফিকার মুঘল-ই-আজমের সেটে নিয়মিত দর্শক ছিলেন। যেখানে তিনি সুন্দর আনারকলির এক ঝলক দেখতে আসতেন। তাদের কথিত সম্পর্কটি স্বল্পস্থায়ী ছিল এবং বলা হয়েছিল যে তাদের সম্পর্কের একটি দৃষ্টিকোণ ভবিষ্যতের দিকে এগোয়নি। তবে ভুট্টোর সাথে তার সম্পর্ক আজো রহস্য রয়ে গেছে।
১৯৬০ সালে কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। বিয়ের পর তারা লন্ডনে উড়ে গিয়েছিলেন, যেখানে তার হার্টে একটি ছিদ্র ধরা পড়ে। ডাক্তাররা বলেছিলেন মধুবালা আর মাত্র দুই বছর বেঁচে থাকবেন। মধুবালার অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে পেরে কিশোর কুমার খুবই অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন।
কিশোর কুমার তাঁকে লন্ডন থেকে ভারতে নিয়ে এসে বললেন, ‘'আমি ওর দেখাশোনা করতে পারব না। আমি প্রায়ই বাইরে থাকি''। মধুবালার ছোটবোন বলেছেন, কিশোর কুমার দুইমাসে একবার মধুবালাকে দেখতে আসতেন। তাদের দাম্পত্য জীবনের আয়ু ছিল নয় বছর। মধুবালাকে দেখলে একটা প্রবাদ প্রবচন মনে পড়ে.,.........
"অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর"
#সংগৃহীত