DIbyendu Dey

DIbyendu Dey পেজে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই। আপনি পেজে নতুন হলে পেজটাকে Like এবং Follow করে রাখার অনুরোধ থাকছে❤️❤️

Shout out to my newest followers! Excited to have you onboard! Shout out to my newest followers! Excited to have you onb...
03/07/2024

Shout out to my newest followers! Excited to have you onboard! Shout out to my newest followers! Excited to have you onboard! Md Lizon, Shyamal Das, Atanu Ghosal Ghosal, Alamgir Husen, Abhijit Chatterjee, Sumon Kazi, Md Mujakkir Akmed, মরাগাছে ঝরা ফুল

03/07/2024

অর্পিতা একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার স্বামী সাজ্জাদও তাই। তবে সে অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়।

ছেলের মা হওয়ার তৃতীয় দিনের মাথায় সাজ্জাদ অর্পিতাকে বললো,"এবার চাকরিটা ছেড়ে দাও।"
অর্পিতা অবাক হয়ে বললো,"চাকরি ছাড়ার কথা আসছে কেনো?"
সাজ্জাদ বিরক্ত হয়ে বললো,"চাকরি না ছাড়লে ছেলের দেখাশোনা করবে কীভাবে?"
"সন্তান দেখাশোনা করার দায়িত্ব কি মা'র একার? বাবার নয়?"
"সব সময় তর্ক ভালো লাগে না। না বুঝে কথা বলবে না।"
"কোন কথাটা না বুঝে বললাম?"
"তুমি তাহলে চাকরি ছাড়বে না?"
অর্পিতা দৃঢ় কণ্ঠে বললো,"না।"
"তাহলে ছেলের কী হবে?"
"সে ভাবনা কি শুধু আমার? তোমার নয়? সন্তান দেখাশোনার জন্য আমাকেই কেনো চাকরি ছাড়তে হবে? তুমিও তো চাকরি ছাড়তে পারো?"
"ননসেন্স!"
"ননসেন্স আমি নই, তুমি ননসেন্সের মতো কথা বলছো। সন্তান যদি দুজনের হয়, তাহলে সন্তান দেখাশোনার কাজ উভয়ের নয় কেনো?"
"তোমার সাথে কথা বলা অর্থহীন। আমরা দুজন কাজে চলে গেলে বাসায় তো আর কেউ থাকে না। তখন বাচ্চাকে দেখবে কে? আমার মা কিংবা তোমার মা দুজনের একজন যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে না হয় ছেলের দেখাশোনার ভার তার ওপর দেয়া যেতো। এখন তো সে উপায় নেই। আর সেজন্যই তোমাকে চাকরি ছাড়ার কথা বলছি।"
জবাবে অর্পিতা যা বললো তার জন্য সাজ্জাদ প্রস্তুত ছিলো না।
অর্পিতা বললো,"আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় ছেলেকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।"
কথা শুনে সাজ্জাদ অর্পিতার দিকে পলকহীন তাকিয়ে রইলো।
সে বুঝলো, অর্পিতাকে আর কিছু বলে লাভ নেই। সাজ্জাদ রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অসন্তুষ্ট গলায় বললো,"একটা কথা যদি তুমি আমার শুনতে?"
পেছন থেকে অর্পিতা উত্তর দিলো,"অযৌক্তিক কথা শোনার কোনো প্রয়োজন দেখি না।"

২.
অর্পিতা ছেলেকে সঙ্গে করে ভার্সিটিতে নিয়ে যায়। অধিকাংশ সময় বাচ্চাকে তার সঙ্গে রাখে। তবে ক্লাসের সময় বাচ্চাকে কখনো রাখে কোনো ম্যাডামের কাছে, কখনো কোনো ছাত্রীর কাছে। ক্লাস নেয়া, অফিসিয়াল বিভিন্ন মিটিং এ থাকা এবং ছেলের দেখাশোনা করা সে সমান ভাবে করে যেতে লাগলো। এতে তার পরিশ্রম দ্বিগুণ হতে লাগলো।

এভাবে কেটে গেলো দু বছর।
তারপর এক রাতে সাজ্জাদ অর্পিতাকে বললো,"আমি দ্বিতীয় সন্তান নিতে চাইছি।"
অর্পিতা স্পষ্ট জবাব দিলো,"আমি চাইছি না।"
সাজ্জাদ কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,"কেনো?"
"তুমি কি অন্ধ? দেখতে পাও না কেনো এই কথা বললাম? এক সন্তান সামলাতে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আরেকজন হলে সামলাবো কীভাবে?"
"এজন্যই তো বলছি চাকরি ছেড়ে দিতে। তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।"
"চাকরি তুমি ছাড়লেও তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমাকেই কেনো ছাড়তে হবে?"
"পাগলের মতো কথা বলো কেনো? কোথাও দেখেছো সন্তান দেখাশোনার জন্য বাবা চাকরি ছেড়েছে? সন্তান দেখাশোনার জন্য আজ যদি আমি চাকরি ছেড়ে দিই, তাহলে মানুষে কী বলবে? হাসির পাত্র হবো আমি। কিন্তু তুমি চাকরি ছাড়লে কেউ কিছু বলবে না। কারণ সংসারের জন্য মেয়েরা চাকরি ছাড়ছে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কেউ এতে কিছু মনে করে না।"
"দশজনে অন্যায় করলে সেটা আমাকেও করতে হবে? সংসার দেখাশোনার জন্য শুধুমাত্র মেয়েদেরই চাকরি ছাড়তে হবে, এটা যে অন্যায় সেটা বুঝতে পারছো না?"
তারপর বললো,"সন্তানের জন্য এতোই যদি তোমার ভালোবাসা থাকে, তাহলে তার জন্য চাকরি ছেড়ে ঘরে থাকো। আর নতুবা আমার মতো বাচ্চা নিয়ে তোমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। যদি তা পারো, তবে দ্বিতীয় সন্তানের মা হতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু দুটোর একটাও যদি করতে না পারো, তাহলে আবার সন্তান নেয়ার কথা মুখেও আনবে না।"
"আমি বাচ্চা নিয়ে ভার্সিটিতে পড়াতে যাবো? এমন উদ্ভট কথা তোমার মাথায় এলো কী করে?"
"আমি বাচ্চা নিয়ে কাজে গেলে উদ্ভট হয় না। আর তুমি গেলে উদ্ভট হয়ে যায়?"
"এভাবে উল্টাপাল্টা কথা বললে তো সংসার করা সম্ভব হবে না। সব সময় ঝগড়া। একটা কথা যদি তুমি আমার শুনতে?"
"উল্টোপাল্টা কথা আমি নই, তুমি বলো। ঝগড়া আমি নই, তুমি করো। আর তোমার সাথে সংসার করার কথা বলছো? গত দুটো বছর ধরে বাচ্চাটাকে নিয়ে কী পরিমাণ অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছি তা দেখার পরও যে পুরুষ স্ত্রীকে সাহায্য না করে তাকে পাগল বলে, সে পুরুষের সাথে সংসার করার কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না।"
"তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো। তুমি কী বলছো বুঝতে পারছো?"
"ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি আমি কী বলছি।"
"এই তোমার শেষ কথা?"

অর্পিতা কথার জবাব না দিয়ে বিছানা থেকে নামলো।৷ এবং ওয়ার্ডরোব থেকে তার কাপড়গুলো নিয়ে লাগেজে ঢোকাতে লাগলো।
দৃশ্যটি দেখে সাজ্জাদ বললো,"কী করছো তুমি?"
"ছেলেকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। কারণ ছেলেকে যে তোমার কাছে রেখে যাবো তার তো উপায় নেই। ছেলেকে দেখাশোনা করা তো তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না।"
"তোমাকে বিয়ে করাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিলো।"
"আমারো তাই।"

তারপরই ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে লাগেজ হাতে অর্পিতা ঐ রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

৩.
চার মাস পরের ঘটনা।
সাজ্জাদ এক দুপুরে ভার্সিটি থেকে বাসে করে বাসায় আসছিলো। হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখতে পেলো, একটা মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্পিতা। বোধহয় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। ঝাঁঝাঁ রোদে এক হাতে ছাতা আর অন্য হাতে ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্পিতার কপাল, গলা ঘামে সিক্ত। ছাতা ধরা হাতে শাড়ির আঁচল দিয়ে মাঝে মাঝে সে ঘাম মুছছে। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কিছুটা রোগা হয়েছে। বুঝতে সমস্যা হয় না যে, অনেক পরিশ্রম করছে মেয়েটা।

সাজ্জাদ যতোক্ষণ পেরেছে জানালা দিয়ে অর্পিতাকে দেখেছে। অনেকদিন পর অর্পিতাকে ওভাবে দেখে তার মন খানিকটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো। সে ভাবলো, এই বিষণ্ণতা সাময়িক। পরে কাজের চাপে এটা চলে যাবে। কিন্তু সে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো, অর্পিতাকে দেখার ঐ দুপুরে জন্ম নেয়া খানিক বিষণ্ণতার পরিমাণ না কমে দিন দিন বাড়তে লাগলো। ঝাঁঝাঁ দুপুরে ছেলেকে কোলে নিয়ে ছাতা হাতে ঘর্মাক্ত ক্লান্ত অর্পিতার দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটি বারে বারে তার চোখের সামনে ফিরে আসতে লাগলো। সে হয়তো ক্লাস রুমে পড়াচ্ছে। হঠাৎ দেখতে পায় তার সামনে ভেসে উঠছে অর্পিতার দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটি। সে তখন পড়ানো ভুলে চুপ হয়ে যায়। গাঢ় বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয়ে সে চেয়ারে বসে থাকে। ছেলেমেয়েরা এক সময় জানতে চায়,"স্যার কি অসুস্থ বোধ করছেন?"
সে কোনো রকমে জবাব দেয়,"না আমি ঠিক আছি।"
মুখে যদিও বলে, ঠিক আছি। আসলে সে একেবারেই ঠিক নেই।

একই ঘটনা ঘটে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময়ও। কথা বলতে বলতে আচমকা সে নীরব হয়ে যায়। কারণ তখন তার সামনে ভেসে উঠেছে অর্পিতার দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটি। তাকে দীর্ঘ সময় ঝিম মেরে থাকতে দেখে বন্ধুরা জানতে চায়,"কীরে কী হলো? কোনো সমস্যা?"
সে আড়ষ্ট হেসে উত্তর দেয়,"না, কোনো সমস্যা নেই। আমি ঠিক আছি।"
অবশ্য এ কথা বলার কিছু সময় পরই সে পুনরায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।
আর যখন একা থাকে তখন এই বিষণ্ণতা আরো গাঢ় হয়ে তাকে ঘিরে ধরে।

ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে বাস যখন ঐ মোড় দিয়ে যায়, সে তাকিয়ে দেখে ঐ জায়গাটাতে, যেখানে অর্পিতাকে দেখেছিলো। সে আবার অর্পিতাকে দেখতে চায়। কিন্তু দেখতে পায় না। তবু আগ্রহ নিয়ে, গাঢ় বিষণ্ণতা নিয়ে সে চেয়ে থাকে।

৪.
এক ছুটির দিনে ঘন বর্ষার দুপুরে অর্পিতা ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছিল। হঠাৎ সে শুনতে পেলো কে যেনো তাকে শব্দ করে জোরে জোরে ডাকছে,"অর্পিতা, অর্পিতা...।"
কিন্তু এই বৃষ্টির দুপুরে এভাবে চিৎকার করে কে তাকে ডাকবে? সে ভাবলো ভুল শুনছে। বৃষ্টির শব্দের কারণে হয়তো এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু সে আবারো শুনতে পেলো,"অর্পিতা অর্পিতা...।"

অর্পিতা কৌতূহল নিয়ে বারান্দায় গেলো। অর্পিতারা দোতলায় থাকে। গিয়ে দেখলো, ঝুম বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সাজ্জাদ। অঝোরে ভিজছে সে।

একজন পুরুষকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে অর্পিতা অর্পিতা..বলে ডাকতে দেখে আশেপাশের বাড়ির অনেকে, কেউ বারান্দা থেকে, কেউ জানালা থেকে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো।

অর্পিতাকে বারান্দায় দেখে সাজ্জাদ নিচ থেকে গভীর অনুরাগে বললো,"অর্পিতা, কেমন আছো?"
অর্পিতা কিছু না বলে শুধু বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলো।
এরপর সাজ্জাদ বললো,"আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।"
প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে ওঠার পর অর্পিতা জানতে চাইলো,"এসবের মানে কী?"
"মানে হলো, এখন থেকে ঘরে থেকে সংসার সামলাবো। বাচ্চার দেখাশোনা করবো। কথা দিচ্ছি।"

সাজ্জাদের কথা শুনে বারান্দায়, জানালায় উঁকি দেয়া মানুষগুলো মুখ চেপে হাসতে লাগলো।
কিন্তু অর্পিতার হাসি এলো না। বরঞ্চ রাগ হলো। এই উজবুকটা তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এতো সহজে কি তাকে ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে?

অর্পিতা ক্রুদ্ধ স্বরে বললো,"পুরো দুপুর দাঁড়িয়ে থেকে ভিজবে। এবং কান ধরে উঠবোস করবে।"
উত্তরে সাজ্জাদ বললো,"শুধু এক দুপুর কেনো, তুমি বললে বাকি জীবনটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজবো। আর কান ধরে উঠবোস করবো।"
এই বলে সে কান ধরে উঠবোস করতে শুরু করলো।

সাজ্জাদকে বৃষ্টির মধ্যে কান ধরে উঠবোস করতে দেখে আশেপাশের বাড়ির মানুষগুলোর হাসির মাত্রা বেড়ে গেলো।

এরপর অর্পিতা বললো,"পুরুষ হয়ে চাকরি ছেড়ে ঘরে থেকে সংসার দেখবে, বাচ্চা সামলাবে, মানুষ শুনলে হাসবে যে? তখন খারাপ লাগবে না?"
সাজ্জাদ হাসতে থাকা আশেপাশের বাড়ির মানুষগুলোকে দেখিয়ে অর্পিতাকে বললো,"মানুষের হাসিকে এখন আর ভয় পাই না। প্রমাণ তো দেখতেই পাচ্ছো।"

অর্পিতা হাসতে থাকা মানুষগুলোকে আড় চোখে দেখে সাজ্জাদকে ধমকের সুরে বললো,"হয়েছে, এবার ভেতরে আসো।"
"আরো কিছু সময় কান ধরে উঠবোস করতে দাও। পাপ কিছুটা হালকা হোক।"

অর্পিতার বাবা তখন পেছন থেকে অর্পিতাকে বললেন,"বদমাশটাকে মাফ করে দিলি?"
"ও বদলে গেছে বাবা। ও আর আগের মতো নেই।"

তারপর বৃষ্টিতে সবার সামনে কান ধরে উঠবোস করতে থাকা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে নির্ভরতার সঙ্গে অর্পিতা বললো,"এই ছেলের সাথে এক জীবন কাটানো যায়। নিশ্চিন্তে।"

ছবি এবং লেখা -সংগৃহীত

‘দাদু আমার স্কুল এখনো ছুটি হয়নি তুমি আসতে গেলে কেন?’‘প্রতিদিন তো বৃহস্পতিবার দেড়টায় ছুটি হয় আজকে পরে  কেন?’‘স্যার বিকাল ...
02/07/2024

‘দাদু আমার স্কুল এখনো ছুটি হয়নি তুমি আসতে গেলে কেন?’
‘প্রতিদিন তো বৃহস্পতিবার দেড়টায় ছুটি হয় আজকে পরে কেন?’
‘স্যার বিকাল পাঁচটায় যে প্রাইভেট পড়ায় আজকে সেই প্রাইভেট ছুটির পরেই পড়াবে।’

দাদু আমার কথা শুনে বারান্দায় একটা টুলে বসে রইলো, কিছুক্ষণ স্কুলের দপ্তরি রহিম ভাইয়ের সাথে কথা বললেন। রহিম ভাই একসময় চলে গেলেন, দাদু তেমনই বসে রইলেন। আমার রাগ হচ্ছে, দাদুর আসবার কি দরকার ছিলো, স্কুল ছুটি দিলে আমি যে এমনিতেই চলে যেতাম।

স্যার পড়াচ্ছে তখন জানালা দিয়ে দেখলাম দাদু একটা টুলে বসে আছে, হাতে একটা ছাতা। বাহিরে বৃষ্টি। দাদু যে এমনটা নতুন করেন তেমন কিছু না৷ সকালে যখন বাসা থেকে বের হবো তখন রোদ ছিলো, দুপুর বারোটার দিকে যে বৃষ্টি শুরু হলো বৃষ্টির থামার নাম নেই। বৃষ্টি থামছে না দেখেই দাদু ছাতা নিয়ে আমার স্কুলে চলে এসেছে, আমি বাসায় এই বৃষ্টিতে ফিরবে কি করে তাই দাদু ছাতা নিয়ে স্কুল পর্যন্ত চলে এসেছে।

দাদু সেই এক ঘন্টা বিশ মিনিট বারান্দায় বসে রইলেন, তারপর এক ছাতায় আমারে নিয়ে বাসায় ফিরলেন।

বাসায় ফিরবার পরে মা বললেন, তোর দাদুরে এতো নিষেধ করলাম যেতে হবে না কিন্তু সে আর কি কারো কথা শুনে। দাদু পাশ থেকে বলল, বউমা দেখছো বাহিরে কি বৃষ্টি ভিজে আসতো নাকি? তারপর রোগবালাই হয়ে যেতো৷

দাদু স্কুলে ছাতা নিয়ে আসায় আমার কিছু বন্ধুরা একটা মজা নিচ্ছিলো, তাই দাদুর উপর একটু রাগ হয়েছিলো। কিন্তু এখন সেই রাগটা কমে গেছে।

এরপর যখনই স্কুলে আসতাম, বাসা থেকে বের হলেই দাদু বলতেন, ছাতা নিছি কিনা, পানির বোতল নিছি কিনা। মাঝেমধ্যে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে টিফিন টাইমে দেখতাম স্কুলের বারান্দায় একটা বাক্স হাতে দাদু দাঁড়িয়ে আছেন।

মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতেন, দাদুভাই তোর বয়সে একটু রাগ, জিদ বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক তবে বাবা মাকেও যে বুঝতে হবে তাইনা? আমি কোনো কথা বলি না। দাদু মাথায় হাত বুলায়।

স্কুল, কলেজ শেষে মফস্বল শহর ছেড়ে যখন ঢাকা শহরে কোচিং করতে আসবো। দাদু শীতল গলায় বললেন, ঢাকা যাওয়ার কি দরকার? এখানে কি পড়া যায় না? বাবা বললেন, এখানে কি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যে এখানে পড়বে? যেদিন বাসা থেকে আসবো, দাদু বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদলেন।

কোচিং শেষে আমি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের জীবন শুরু হয়। ছুটিতে বাসায় গেলে যখন ছুটি শেষে আসবে দাদু ডেকে নিয়ে খুব গোপনে, একটা পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে দিতেন। আমার দাদুর কোনো আয় ছিলো না, ফুপু, বাবা, চাচা দাদুকে যে টাকা দিতেন সেই টাকা জমিয়ে সেখান থেকে টাকা দিতেন। যতোবার বাসা থেকে এসেছি দাদু হাতের ভিতরে খুব গোপনে টাকা দিয়েছেন।

আমার যতো খারাপ দিন যেতো না কেন, টাকাগুলো খরচ করতাম না। এই টাকার মূল্য আমার কাছে কতো একমাত্র আমি জানি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় এখন কেউ ছাতা নিয়ে আমার জন্যে আসে না বৃষ্টি হলেই।

আমি শুনেছি ছোটোবেলা থেকে নাকি আমি দাদুভক্ত ছিলাম খুব। দাদুর মার্কেটে কাপড়ের দোকান ছিলো। যখন ছোটো ছিলাম, দাদু বাসা থেকে বের হলেই দাদুর পিছনে ছুটে যেতাম, আমাকে রেখে বাসা থেকে যেতে পারতনে না। যার কারেন প্রায় সময় লুকিয়ে যেতেন। এসব কথা আমি আমার মায়ের কাছ থেকেই শুনেছি।

বাবা তখন ফোন দিয়ে বললেন দাদু অসুস্থ ঢাকা ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসবেন। দুদিন পরে দাদুকে ঢাকা ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তার বললেন বয়স হয়েছে এখন অনেক রোগই যে শরীর কাবু করে ফেলবে এসব স্বাভাবিক।

দাদুকে ডাক্তার দেখিয়ে বাবা নিয়ে চলে যান, বাসস্ট্যান্ডে সেদিন দাদুর চোখেমুখের দিকে কি যে মায়া হলো। দাদুকে অনেকটা অসুখী লাগছে, চোখ কেমন রোগীদের মতো, শুকিয়ে গেছেন অনেকটা।

ঠিক পাঁচদিন পরে ভোররাতে বাসা থেকে ফোন আসে। শোকের ফোন। আমি ছাতা নেইনি বলে, স্কুল ছুটির আগে যে মানুষটা বৃষ্টির ভিতরে লাঠি ভর দিয়ে একটা ছাতা নিয়ে স্কুলের বারান্দায় চলে এসেছে সেই মানুষটা নেই। বাসের টিকিট কেটে বাসে উঠবো, তখন বাতাসে চোখের পানি উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বছর কয়েক পরে স্কুলে তখন পূর্ণমিলনী হলো, সারাদিনের হইচই শেষে বিকালবেলা স্কুলের বারান্দায় আমি দাঁড়াতেই চোখে টের পেলাম শিশির জমেছে। কাকতালীয় ভাবে বাহিরে তখন বৃষ্টি শুরু হলো, আমি ছুটে মাঠের ভিতরে চলে গেলাম। আমি বৃষ্টিতে ভিজছি, মনে হলো বারান্দায় দাদু দাঁড়িয়ে বলছেন, দাদু ভাই উঠে আয় জ্বর হবে। বৃষ্টির পানি আর চোখের কান্নার জল মিশে যাচ্ছে।

সে এসেছে ছাতা হাতে
লেখা এবং ছবি -সংগৃহীত

ভালো লাগলে ফলো করতে ভুলবেন না কিন্তু ধন্যবাদ আপনাকে 👉

" দাদা, রোজই তো রুই - কাতলা খান, আজ বরং একটু স্বাদ বদল করুন। বেশ বড় সাইজের ডিমভরা ট্যাংরা এনেছি , আর পদ্মার ইলিশ। দামটা...
01/07/2024

" দাদা, রোজই তো রুই - কাতলা খান, আজ বরং একটু স্বাদ বদল করুন। বেশ বড় সাইজের ডিমভরা ট্যাংরা এনেছি , আর পদ্মার ইলিশ। দামটা যদিও একটু বেশি , কিন্তু একদিন গতানুগতিক খাওয়া দাওয়ার বাইরে খেতে গেলে সবসময় কি পয়সার হিসেব করলে চলে ? নিয়ে যান দাদা - বৌদি খুশি হবেন।"

মনে মনে আজ কেনা সবজির দাম হিসেব করছিলো নীলার্ক । বেশ কিছুদিন ধরেই বৃষ্টির চিহ্নমাত্র নেই - সবজির বাজারও আগুণ। তবু সবজি তাকে কিনতেই হয় , বাড়িতে বিধবা মা রয়েছেন । চৈতী নিরামিষ বিশেষ রাঁধতে চায় না , মা বাড়িতে আছেন বলে রাঁধুনী রাখাও সম্ভব হচ্ছে না - মা এদিকে একটু পুরোনোপন্থী ! তার ওপরে চৈতী চাকরি বাকরিতেও আগ্রহী নয়। মা তাই বলেন - রান্না করলে ওর মনটা ঐদিকে ব্যস্ত থাকবে , নাহলে তো চব্বিশ ঘণ্টাই ওই মোবাইলে ঢুকে থাকবে ! এ নিয়ে চৈতীর সাথে মায়ের বিস্তর বাগবিতণ্ডা হয়েছে , কিন্তু মা স্বল্পভাষী মানুষ - কোনো ক্ষেত্রেই ঘটনাটাকে বেশিদূর এগোতে দেন নি। এতো বেলায় ট্যাংরামাছ নিয়ে বাড়িতে ঢুকলে চৈতীর চেহারাটা একবার মনে মনে কল্পনা করে নিলো নীলার্ক ।

-" সুকুমার , মেয়ে যে কাঁটাওয়ালা মাছ একেবারে বেছে খেতে চায় না। তাই তো রোজই কাটাপোনা নিয়ে যাই। নাহলে ট্যাংরামাছের তেলঝাল খেতে কার না ভালো লাগে , বলো দেখি !"

-" ও দাদা, বাঙালির মেয়ে , রকমারি মাছ খেতে ভালোবাসে না , এটা হয় কখনও ? অভ্যাস হোক - এরপরে দেখবেন , ওইসব মাছ ছাড়া ও আর কিছু খেতেই চাইছে না। তাহলে পাঁচশো ট্যাংরা আর একটা ইলিশ দিয়ে দিই?"

খসে গেলো বারোটি একশো টাকার নোট। পরবর্তী পরীক্ষায় কিভাবে পাশ করবে , এই ভেবে দুর্গানাম জপতে জপতে নীলার্ক বাড়ির পথে রওনা হলো।

বেলা দশটায় অতগুলো ট্যাংরামাছ দেখে চৈতী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।

-" আমাকে কি মনে করো , বলো তো ? একটা রান্নার লোক রাখতে বলছি কবে থেকে , তা তোমার মা তো তিরুপতির পুরোহিত, কারুর হাতে খেতে তাঁর আপত্তি ! সংসারে তো কুটো ভেঙে দুটো করেন না। শুধু নিয়ম - কানুনের ঝুড়ি আমাকে ধরিয়ে দেন। মাছগুলো বাজার থেকে কেটে আনলে আমার তবু একটু উপকার হতো ! তোমাদের শুধু বাইরের খোলসটুকুই বদলেছে , ভেতরে বউ যেমন ঝি - তেমনই আছে। "

চেঁচামেচি শুনে বুবুন আর মা দুজনেই যে যার ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে।

-" বাবা , আজ আবার সেই হরিবল মাছগুলো এনেছো ? মা , আমাকে আজ একটা ডিমসেদ্ধ করে দিও তো ! আর, তোমাকেও বলিহারি যাই বাবা - সেই কবে ঠাম্মা তোমাদের ট্যাংরামাছের ঝাল রেঁধে খাওয়াতো , সেই নস্টালজিয়াতে এখনও ভুগছো! ঠাম্মা তো এখন রাঁধতেও পারে না , সেই আউটপুট তুমি মায়ের কাছে আশা করো কি করে ? "

মা চিরকালই কম কথা বলেন। ছোটবেলায় সবাই নীলার্ককে মেছো বেড়াল বলতো। মায়ের মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে বাবা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। সেই দুঃসময়ে তাকে দুটুকরো মাছ রেঁধে দিয়ে মা শুধু ডাল আর আলুভাতে দিয়ে ভাত খেয়ে থাকতেন। তখন কিছু না মনে হলেও সে এখন বোঝে - ওই বয়সে মনের সমস্ত প্রবৃত্তিগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলা মায়ের পক্ষে খুব একটা সহজ কাজ ছিলো না। এখন তো কেউ এসব রীতি - নীতি মানেও না ! কিন্তু তখন সমাজ এবং গুরুজনদের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করার সাধ্য ছিলো কার ! নীলার্ক কতদিন মাকে এক টুকরো মাছ ভেঙে দিতে চেয়েছে - তার শিশুপ্রাণ যে মায়ের জন্য কেঁদে উঠত ! মা প্রাণপণ চেষ্টায় মুখ ফিরিয়ে সেখান থেকে চলে যেতেন। শিশু নীলার্কের বড্ডো রাগ হতো - কেন সে মাকে মাছ খাওয়াতে পারে না ! ইদানিং বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিষ্ঠাচারে মা আরো কঠোর হয়ে উঠেছেন - এখন তিনি আঁশ ছুঁয়েও দেখেন না ।

-" বৌমা , ট্যাংরামাছগুলো তুমি শুধু ধুয়ে দাও , আজ আমি নীলকে রেঁধে দেবো খন ! তুমি একা আর কত করবে !"

-" আপনি ! " অবাক হয়ে যায় চৈতী । " আপনি তো আঁশ ধরেনও না , মা !"

-" ও আমি পরে কাপড় কেচে নেবো।"

আধ ঘন্টা পরে রান্নাঘরে আবার বহুযুগ আগে দেখা পুরোনো ছবি ফুটে উঠলো। ট্যাংরামাছের তেলঝালের সুগন্ধে গোটা বাড়ি ম ম করে জানান দিলো - এই বাড়ি আবার পুরোনো যুগে ফিরে গেছে। অমন যে বুবুন , সেও পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো , তার মুখে পৃথিবীর বিস্ময়।

-" ঠাম্মা , তুমি মাছ রাঁধছো? কি সুন্দর গন্ধ বেরিয়েছে গো , এখনই যে খিদে পেয়ে গেলো ! আজ আমি এই কাঁটা মাছ দিয়েই ভাত খাবো , স্নানটা সেরে ফেলি গিয়ে । "

বাবা যাওয়ার পর থেকে মা কোনোদিনই খাবার টেবিলে বসে খান না। আজও তিনি মেঝের একপাশে একখানা আসন পেতে খাবার ঘরে খেতে বসলেন। নীলার্ক আর বুবুনকে ভাত বেড়ে দিয়ে চৈতী নিজের ভাতও নিয়ে নিলো। মাছ রাঁধতে হয়নি বলে তার রোষানল এখন অনেক শান্ত।

মাছের ঝাল মুখে দিয়েই নীলার্ক যেন তার শৈশবে ফিরে গেলো। তার মনে ভেসে উঠলো এক অস্পষ্ট ছবি - একটি শিশু টেবিলে বসে আছে আর তার মুখে ভাতের গ্রাস তুলে দিচ্ছে হালকা রঙের শাড়ি পরা শীর্ণা চেহারার এক মহিলা , সংসারের টানা পোড়েন তার চেহারায় ছাপ ফেলেছে।

-" ও মা , ট্যাংরামাছ দিয়ে দুগ্রাস ভাত খাও না , তুমি তো ট্যাংরামাছ কত ভালবাসো ! তুমি না খেলে আমার যে খেতে ভালো লাগে না !"

-" আমাকে যে খেতে নেই বাবা , ওতে পাপ হয় !"

-" এমন নিয়ম কে বানালো মা ? বাবা তো তোমায় কোনোদিন খেতে বারণ করেন নি ! তবে ! অন্যের কথা তুমি শুনবে কেন? আমি বড়ো হয়ে কখনও তোমাকে এমন নিয়ম করতে দেবো না - দেখো!"

গলায় ভাত আটকে গেলো নীলার্কের । এতদিন ভালো মন্দ খাওয়ার সময় একবারও মায়ের কথা মনে পড়ে নি তার। আর, সে ভালবাসে বলে মা তাঁর এতদিনের আচার ভেঙে ফেললেন ! হাতে ট্যাংরামাছ আর ভাতের গ্রাস নিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো সে। চৈতী আর বুবুন তার দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে।

-" কই মা , হাঁ করো তো দেখি !"

মা হাঁ হাঁ করে ওঠার আগেই ভাতের গ্রাস তাঁর মুখে চালান হয়ে গেছে।

ভাতকটা মুখ থেকে বার করে উঠে পড়তে যাচ্ছিলেন মা । জোর করে তাঁকে আবার বসিয়ে দেয় নীলার্ক ।

-" চৈতী, দুটো বড় দেখে ট্যাংরামাছ আর ভাত দাও তো মাকে ! মায়ের বড় প্রিয় মাছ। মা - একটা কথা শোনো। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক হৃদয়ের । শুধু কতকগুলো শুকনো লোকাচার মেনে মৃত মানুষটাকে শ্রদ্ধা দেখানো যায় না। নিজের প্রিয় অভ্যাসগুলোকে মানুষ এক রাতের মধ্যে ভুলতে পারে না। তাই তুমি আজ থেকে মাছ খাবে - নাহলে এই বাড়িতে আর মাছ ঢুকবে না। বাবা চিরকাল আমাদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়েই থাকবেন - তার জন্য ভিত্তিহীন কতকগুলো লোকাচার মানার দরকার নেই। আর, আমার প্রিয়জন হারালে আমার পরিবার কি করে শোক প্রকাশ করবে - সেই সিদ্ধান্ত বাইরের লোক নেবে কেন? এসো , আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিই !"

ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন মা। মায়ের মনের হারানো বেলার খবর বুঝি বা কেবল সন্তানরাই বোঝে ! নাড়ীর টান কথা বলে যে !

#নাড়ীর_টান
শিপ্রা দাস
সমাপ্ত

যে‌দিন একঘর ভ‌র্তি লো‌কের সাম‌নে আমার শাশু‌ড়িমা আমা‌কে বল‌লেন,'ছে‌লে আমার এমএ পাশ। তা‌কে জন্ম দি‌তে কম কষ্ট হয়‌নি। জীবন...
01/07/2024

যে‌দিন একঘর ভ‌র্তি লো‌কের সাম‌নে আমার শাশু‌ড়িমা আমা‌কে বল‌লেন,
'ছে‌লে আমার এমএ পাশ। তা‌কে জন্ম দি‌তে কম কষ্ট হয়‌নি। জীবন মরন প্রশ্ন গে‌ছে। সেই ছে‌লে‌কে লেখাপড়া ক‌রি‌য়ে মানুষ কর‌তে কম খরচ যায়‌নি আমার। তার খরচ কিছুটা তো তোমার বাবা-মাকে পোশা‌তে ব‌লো।'
আমিও ঘর ভ‌র্তি মানুষের সাম‌নে বজ্রক‌ন্ঠে আর সা‌থে কিছুটা ব্যঙ্গ ক‌রেও ব‌লে‌ছিলাম,
'আমিও তো বিবিএ অনার্স ক‌রে‌ছি। মাস্টা‌র্সে ভ‌র্তি হ‌য়ে‌ছি, লেখা পড়ার খরচ এখনও বাবা বহন কর‌ছেন। আমার বাবা-মা‌য়ের তো মোটেও খরচ কর‌তে হয়‌নি। আর আমা‌কে তো আমার মা জন্ম দেয়ননি, বরং বা‌নিজ্য মেলায় একটার সা‌থে একটা ফ্রি অফার চল‌ছিল, সেখান ‌থে‌কে পে‌য়ে‌ছেন। ত‌ার তো কো‌নো কষ্টই হয়‌নি।'

শাশু‌ড়ি মা চোখ বড়ো বড়ো ক‌রে আমার দি‌কে তাকা‌লেন। তার পুত্রধন‌টি মা‌নে আমার প‌তি মহাশয়, আমার কা‌ছে এসে চু‌লের মু‌ঠি‌তে হাত দি‌য়ে বল‌লেন,
'মা‌য়ের সা‌থে বেয়াদ‌পের ম‌তো কথা বল‌লে জা‌নে মে‌রে ফেলব তো‌কে।'
আ‌মি হাতখানা স‌রি‌য়ে বললাম,
'‌আ‌মি জা‌নি সে তুমি পারবে। মা‌য়ের পুত্রধন ব‌লে কথা। তা তোমরা যে যৌতুক চাই‌ছো, জা‌নো তো যৌতু‌কের শা‌স্তি কী?'
আমার শাশু‌ড়ি চোখ দেখ‌লে ম‌নে হয় রা‌গে চোখ থে‌কে লাল লাল আগুন ঝড়‌ছে। পার‌লে সে আগু‌নে আমা‌কে ছাই ক‌রে ফে‌লেন। তি‌নি বল‌লেন,
'আমরা তো আর যৌতুক চাই‌ছি না? বি‌য়ের পর মে‌য়ের শ্বশুর বা‌ড়ি‌তে এটা সেটা দেয়, ‌মে‌য়ে জামাতার সুখ দু‌ঃখে টাকা দেওয়া যৌতুক কেন হ‌বে? এসব উপহার দেওয়া তো সমা‌জের নিয়ম। সেটা কি তোমার বাবা জা‌নেন না?'
'‌জি মা, বর্তমান সমা‌জে যৌতু‌কের আরেক নাম উপহার।'
শাশু‌ড়ি মা বেশ রে‌গেই বল‌লেন,
'নি‌জের মে‌য়ে জামাই‌কে এতটু‌কু সাহায্য কর‌তে না পার‌লে তোমার বাবা মে‌য়ে কেন বি‌য়ে দি‌লো? ঘ‌রে খু‌ঁটি ক‌রে রাখত।'
'তারা তো আর আপনা‌দের উপহার চাইবার নিয়ম জানত না তাই বি‌য়ে দি‌য়ে‌ছেন।'
'বে‌শি কথা বলবা না। মু‌খে মু‌খে তর্ক আমার পছন্দ না। বাবার বা‌ড়ি থে‌কে টাকার ব্যবস্থা করে না আন‌তে পার‌লে তালাকনামা হা‌তে ধরি‌য়ে দিব। তারপর লা‌ত্থি মে‌রে ঘর থে‌কে বের ক‌রে দিব।'
আ‌মি কাচুমাচু মুখ ক‌রে বললাম,
'এমনটা কর‌বেন না প্লিজ মা। তালাক হ‌লে লো‌কে কী বল‌বে? সমা‌জে ম‌ুখ দেখা‌ব কী ক‌রে? আমার জীবন তো নষ্ট হ‌য়ে যাবে। আমি এখ‌নি বাবা‌র বাসায় গি‌য়ে তা‌কে বল‌ছি। তি‌নি যেভা‌বেই হোক টাকার ব্যবস্থা ক‌রে ফেল‌বেন।'

দেখলাম, তা‌দের চো‌খে মু‌খে বিশ্বজ‌য়ের আনন্দ। আমি বোরকাটা প‌রে বা‌ড়ি থে‌কে বের হবার সময় মাথা নিচু স্বামী‌কে বললাম,
'আমার কা‌ছে বা‌ড়ি যাবার রিকশাভাড়া নেই।'
‌তি‌নি একশ টাকার একটা নোট আমা‌কে দি‌লেন। আর বল‌লেন,
'কথা ব‌লে জলদি বা‌ড়ি ফির‌বি।'
আমি টাকাটা নি‌য়ে ঘর থে‌কে বের হ‌তে হ‌তে শুনলাম শাশু‌ড়ি বল‌লেন,
'কা‌কে কিভা‌বে পরস্থ কর‌তে হয় আমার জানা আছে। কার দুর্বলতা কী আমি জা‌নি।'

আমি বা‌ড়ি ফিরলাম ঘন্টা চার-পাঁ‌চেক পর। একা ফিরলাম না‌। সা‌থে কজন পু‌লিশ অফিসারও ছি‌লেন। পু‌লিশ দেখে আমার শ্বশুর বা‌ড়ির সবার মুখগু‌লো চুপ‌সে গে‌ল। বড় যে পু‌লিশ অফিসার‌টি, তি‌নি ঘ‌রের সবাই‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বল‌লেন,
'যৌতু‌কের জন্য ঘ‌রের বউকে অত্যাচার করার জন্য আপনা‌দের বউ মামলার আবেদন ক‌রে‌ছেন। প্রথম পর্যা‌য়ে সবাই‌কে শুধু সর্তক ক‌রে গেলাম। এরপর মিসেস পা‌খির গা‌য়ে হাত তুল‌লে বা যৌতু‌কের জন্য তা‌কে শা‌রিরীক, মান‌সিক র্নিযাত কর‌লে গু‌ষ্ঠিশুদ্ধ তু‌লে নি‌য়ে যাব।'
দা‌রোগাবাবু আরও কিছু কথা ব‌লে চ‌লে গে‌লেন।

তি‌নি চ‌লে যে‌তেই আমি আমার শাশু‌ড়ির কাছে গিয়ে বললাম,
'তালাক দি‌বেন তো দিন, কিন্তু তার আগে কা‌বি‌নের পাঁচ লক্ষ টাকা রে‌ডি রাখ‌বেন। মোহরানার টাকা আমি মাফ ক‌রেই দি‌য়ে‌ছিলাম। আস‌লে বি‌য়ের প্রথম রা‌তে আপনার ছে‌লে মিষ্টি মি‌ষ্টি কথা ব‌লে তা মাফ ক‌রি‌য়ে নি‌য়ে‌ছি‌লেন, কিন্তু এখন সেটা আমার চাই। আজকের ঘটনার পর মাফ করার তো প্রশ্নই ওঠে না। উল্টো আমা‌কে মোহরানার দা‌বি আদায় না ক‌রে স্পর্শ করার জন্য রেপ কে‌সে ফা‌ঁসি‌য়ে দিব আপনার পুত্রধন‌টি‌কে। ও হ্যাঁ আমাকে মারার চিন্তা ভু‌লেও কর‌বেন না। আমি থানায় লি‌খিত ভা‌বে ব‌লে এসে‌ছি আমার সা‌থে অনাকা‌ঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে, কো‌নো দূর্ঘটনা কিংবা যে‌ কো‌নো ক্ষ‌তি আমার হ‌লে পু‌লিশ এসে আপনা‌দেরকেই ধর‌বে। আর হ্যাঁ আমার কা‌বি‌নের টাকা রে‌ডি ক‌রে জল‌দি আমা‌কে মু‌ক্তি দিন। এম‌ন লো‌ভী প‌রিবা‌রে থাক‌তে আমার গা গিন গিন কর‌ছে। এখন বাবার বা‌ড়ি যা‌চ্ছি। নয়‌তো দেখা যা‌বে আমা‌কে মে‌রে এক‌সি‌ডেন্ট ব‌লে চা‌লি‌য়ে দি‌বেন। প‌রে পু‌লিশ আপনা‌দের ধ‌রে শূ‌লে চড়া‌লেও তো আমি তা দেখ‌তে পারব না, জী‌বিতও হ‌বো না। নি‌জের সেফ‌টি ফাস্ট।'

আ‌মি স্বামী, শ্বশুর-শাশু‌ড়ি‌, দেওরের মুখটা দেখার ম‌তো হ‌য়ে‌ছি‌লো বটে। ত‌বে এ কার্টুন‌দের বে‌শি সময় দেখার ম‌তো সময় আমার হা‌তে নেই।
তারা নি‌শ্চিত ভাব‌তে পার‌ছে না, একটা চ‌ড়ের মূল্য এবং আমা‌কে শো‌না‌নো কিছু অকথ্য ভাষা, আর যৌতুক চাইবার মূল্য তাদের এভা‌বে দি‌তে হ‌বে। সকা‌লে আমা‌কে যৌতুকের দা‌বি ক‌রে, চড় না মার‌লে আজ অমি তা‌দের ল‌ক্ষিমন্ত ঘ‌রের বউ থাকতাম। তারা আমার শান্ত‌শিষ্ট বিড়া‌লের ম‌তো রূপটা দে‌খে ভে‌বে‌ছি‌লেন আমা‌কে লা‌থি ঝাটা যাই মারুক, আমি তা‌দের পা‌য়ের কা‌ছে গি‌য়ে মিউ মিউ করব, কিন্তু তারা মানুষ চিন‌তে ভুল ক‌রে‌ছে। বি‌য়ের আগে আমার না‌মে ভা‌লো ক‌রে খোঁজ কর‌লে জানত বিড়া‌লের মু‌খোশ পরা একটা বা‌ঘিনী‌কে তা‌রা পুত্রবধূ ক‌রে‌ছে।

যেই আমি অন্যের সা‌থে অন্যায় হওয়া‌কে সমার্থন ক‌রি না। সে‌ কিনা নি‌জের সা‌থে অন্যায় মুখ বু‌ঝে সহ্য করে নি‌বে।? হ্যাঁ বিপদ আপ‌দে আপন মানুষই আপন মানু‌ষে‌র পা‌শে দাঁড়ায়, সাহায্য ক‌রে। সে হোক, ভাই বোন, আত্মীয়, বন্ধু কিংবা ‌মে‌য়ে জামাই, কিন্তু সাহায্য চাইবারও ধরণ আছে। তা‌রা আমা‌কে বু‌ঝি‌য়ে বলতে পারত। বলতে পারত ধার হিসা‌বে নি‌বে বা এখন সাহায্য করুক প‌রে ফি‌রি‌য়ে দি‌বে, কিন্তু তা‌দের চাইবার ধরণ যেন আমার বাবার কা‌ছে তারা টাকা পায় অথবা আমার বাবা মে‌য়ে বি‌য়ে দি‌য়ে খুব ঠে‌কে গে‌ছে। তা‌দের টাকা দি‌তে বাবা বাধ্য। যে যেমন তার সা‌থে তেমনই কর‌তে হয়। যেমন কুকুর তেমন মুগুর।

যা-ই হোক বাবার বা‌ড়ি যা‌চ্ছি। বাবা‌কে ঘটনাটা বল‌তে হ‌বে। জা‌নি বাবা শুন‌লে মুচকি হে‌সে বল‌বেন, ঠিক ক‌রে‌ছিস। আমার মাদার বাংলা‌দেশ, বাংলার সরল মা‌য়ের ম‌তোই চিন্তায় কেঁ‌দে-কে‌টে এক কর‌বে। তা‌কেও সাম‌লা‌তে হ‌বে। উফ সকাল থে‌কে কী খারাপ দিনটাই না গে‌ল। আর ধকল সহ্য হ‌চ্ছে না। চা খে‌তে হ‌বে। কড়া লিকার, দুধ চি‌নি বে‌শি দি‌য়ে।

‌যৌতুক নামক সামা‌জিক ব্য‌ধির চি‌কিৎসা ‌কিছুটা কৌশ‌লে কর‌তে হ‌বে। সবাইকে রু‌খে দাঁ‌ড়ি‌য়ে ছু* ড়ি, কা‌ঁ* চি, স্টেথোস্কোপ হা‌তে নি‌য়ে যৌতুক চি‌কিৎসক হ‌তে হ‌বে। ত‌বে সমা‌জে প‌রিবর্তন আস‌বে।

সমাপ্ত

#‌চিকিৎসা
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী

ঘর ঝাঁট দিতে এসে কাজের মেয়ে নিচু গলায় বললো, দিদি আমার রিকোয়েস্টটা এক্সেপ্ট করেন। আমি হতভম্ব গলায় বললাম, কিসের রিকোয়...
29/06/2024

ঘর ঝাঁট দিতে এসে কাজের মেয়ে নিচু গলায় বললো, দিদি আমার রিকোয়েস্টটা এক্সেপ্ট করেন।

আমি হতভম্ব গলায় বললাম, কিসের রিকোয়েস্ট?

-ফেসবুক। রিকোয়েস্ট পাঠাইছি।

: ও আচ্ছা! নাম কি?

-ড্যাডিস প্রিন্সেস শাপলা!

আমি নিজেকে সামলালাম।‌ এত অবাক হ‌চ্ছি কেন? কিছুদিন আগেই তো আরেক কাজের মাসি আমাকে ইমোতে ইনভাইট করেছিল। আমার ইমো নাই কিন্তু তার আছে। এত অবাক হলে চলবে না‌ এই যুগে।

আমি হাসিমুখে আইডি খুঁজে বের করে রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে রাখলাম। প্রোফাইল পিকে একটা মেয়ের রংচংয়া সেলফি। আমি প্রশ্ন করলাম, কার ছবি গো?

-আমার দিদি! ইউক্যাম পারফেক্ট দিয়ে ইডিট করেছি।

: বাহ্! খুব সুন্দর।

ইদানিং আমার বেশ সুবিধাই হচ্ছে। কাজে আসতে না পারলে শাপলা মেসেজে একটা দুঃখী স্টিকার পাঠালেই আমি বুঝে যাই। স্টিকারে একটা মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, sorry!

আবার রান্নাঘরে কিছু খুঁজে না পেলেও শাপলাকে মেসেজ দিলে সাথে সাথেই রিপ্লাই পাওয়া যায়।

এছাড়াও প্রায়‌ই ফেসবুকের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সে আমার কাছে আসে।

একদিন ফোন নিয়ে এসে বললো, দিদি ! মেসেঞ্জার নাকি কালো করা যায়,একটু করে দেন। আর ফলোয়ার অপশন একটু অন করে দিবেন।

দিলাম।

একদিন এসে বলল,দিদি ! এবাউটে লিখে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।

দিলাম।

আরেকদিন বললো,দিদি ইংরেজিতে একটা স্ট্যাটাস লিখে দেন। আমি বাংলা বলছি,

"ফিলিং বোর! গরমের ছুটি চলছে,এখন পড়াশোনা নাই, কোনো কাজকর্ম‌ও নাই। সময় কাটে না!"

দিদি হাঁ করে তাকিয়ে আছেন কেন? 🙄এইটা লেখেন ইংরেজিতে।

আমি লিখে দিলাম।🥴

আরেকদিন আমার কাছে এসে বললো,দিদি ! রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে দেন।

আমি অবাক হয়ে বললাম,প্রেম করছো নাকি?

সে লাজুক গলায় বললো, হ্যাঁ দিদি ! রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে দেন। ছেলের নাম স্বপন সাগর!

আমি রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম। ছেলের প্রোফাইল দেখে বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম। ছেলে ঢাকা মেডিকেলে পড়ে।

আমি শাপলার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, কোথায় পেয়েছো এই ছেলেকে?

সে হাসিমুখে বললো, ফেসবুকে !

:ও আচ্ছা!!!

পৃথিবীটা দিন দিন মনুষ্যবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে এই জাতীয় চিন্তা করতে করতে ব‌ইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলাম। বড় দি এসে ব‌ইয়ের পাতার মধ্যে একটা ছেলের ছবি রেখে দিলেন। সেদিকে না তাকিয়ে আমি চমকে উঠে দিদিকে জড়িয়ে ধরলাম। বহুদিন পর দিদি শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে।

দিদি নির্লিপ্ত গলায় বললেন, ছেলেটাকে দেখ। পছন্দ হলে হলো, না হলেও না হলো। এরসাথে তোর বিয়ে‌।

আমি হাসিমুখে তাকালাম। যার সাথেই আমার বিয়ে হোক আমার কোনো আপত্তি নাই, পছন্দের কেউ নাই আগেই বলেছি।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর ছেলের ছবি দেখে আঁতকে উঠলাম। ছেলেটা কে সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই মেডিকেলে পড়া ছেলে। কিন্তু এর নাম স্বপন সাগর না, অয়ন চৌধুরী।

আমি কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে বললাম,দিদি ! এই ছেলেকে ক‌োথায় পেয়েছো? এরতো চরিত্র খারাপ। আমাদের কাজের মেয়ে শাপলার সাথে ফষ্টিনষ্টি চলে।

দিদি প্রচন্ড ‌অবাক হয়ে সবটা শুনলেন।‌তারপর রেগে আগুন হয়ে গেলেন। তারপর হতাশায় ডুবে গেলেন।

সেই ছেলে আজ সন্ধ্যায় পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়ি আসছে।

দিদি রেগেমেগে বললেন, ঝাঁটা রেডি রাখ। ঐ চরিত্রহীন ছেলের পরিবারের দম্ভ যদি আমি ধূলায় না মিশিয়ে দিয়েছি আমার নাম........🤬

সন্ধ্যার সময় ছেলে তার পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়িতে এলো। তাদের জন্য কোনোপ্রকার খাবার আয়োজন রাখা হয়নি। বরং আমাদের মুখ গম্ভীর। আচ্ছা করে অপমান করা হবে আজ এদের।

কাজের মেয়ে শাপলাও ছেলে দেখে চমকে তাকিয়েছে, তারপর দৌড় দিয়ে পালাতে গিয়েছিল দিদি ওর হাত ধরে আটকে ফেলেছে।

ছেলের মা আমার দিদির দিকে তাকিয়ে বললেন, কেমন আছো মা?

দিদি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে শাপলাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন,একে চেনো?

শাপলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

ছেলে অবাক হয়ে বললো,না তো!

-নাটক করো? তোমার নাটক আমি বের করছি। আমার বোনের জীবন‌ নষ্ট করতে আসা?

দিদি ল্যাপটপে ফেসবুক ওপেন করে শাপলার সাথে তার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেখালো।

ছেলেটা খানিকক্ষণ অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থেকে ফোন দিয়ে তাদের ড্রাইভারকে ডাক দিলো।

ড্রাইভার ওপরে এসে শাপলাকে দেখে বড় ধরনের ধাক্কা খেলো। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।

ছেলেটা এতক্ষনে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললো, তুই বলেছিলি দাদা নতুন ফোন কিনেছি আপনার একটা ছবি রেখে দিই।

এইজন্য নিয়েছিলি আমার ছবি? আমার ছবি আর বায়ো ব্যবহার করে ফেসবুকে আইডি খুলে প্রেম করার জন্য????🤦🏻🤦
ছবি এবং লেখা- সংগৃহীত

ট্রেনে ফিরছি। হাওড়া থেকে।আমার অপজিট দিকের সীটে বসে মোবাইলে কথা বলছিলেন এক ভদ্রমহিলা। বয়স পঞ্চাশের মতো। ভদ্রমহিলার পাশেই...
26/06/2024

ট্রেনে ফিরছি। হাওড়া থেকে।আমার অপজিট দিকের সীটে বসে মোবাইলে কথা বলছিলেন এক ভদ্রমহিলা। বয়স পঞ্চাশের মতো। ভদ্রমহিলার পাশেই বসেছে একটি কম বয়সী মেয়ে। মেয়েটির হাতে মোবাইল, চোখে সানগ্লাস, ঠোঁটে জাবদা করে লাল টকটকে লিপস্টিক। পায়ের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম এমন হিল ওয়ালা জুতো পরেছে, উঠে দাঁড়ালেই দার্জিলিংয়ের টাইগার হিল পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে।

ভদ্রমহিলা ফোনে কথা বলছেন ওনার মেয়ের বিয়ে নিয়ে। উনি বেশ জোরে জোরেই বলছেন,

-ভালো ছেলে পেয়েচি ছোদ্দি। তাই বিয়েটা দিয়ে দিচ্চি। তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে।

ওপাশ থেকে ছোদ্দি ছাতার মাথা কি বলল কি জানি, ভদ্রমহিলা বললেন, 'না না চম্পা আমার সাথেই আছে। আমিই বললুম, তুই ও চ। বিয়ে হয়ে গেলে আর কবে যেতে পারবি কি না পারবি, তাচাড়া চম্পার বড় মামি চম্পাকে আইবুড়ো ভাত খাওয়াবে তো।'

বুঝলাম পাশে বসা মেয়েটি, ভদ্রমহিলারই মেয়ে, নাম চম্পা। আর ক'দিন পরেই চম্পার বিয়ে। কিম্ভূত কিমাকার সেজে চম্পা এখন মায়ের সাথে মামার বাড়ি যাচ্ছে আইবুড়ো খেতে। চম্পার মা ফোনে কথা বলছে, আর চম্পা মোবাইলের ক্যামেরা অন করে কিছুক্ষণ ছাড়া ছাড়াই নিজের মুখখানা ক্যামেরায় দেখে নিচ্ছে আর ইনস্টাগ্রামে স্ক্রল করে চলেছে। আমি চম্পার রকম সকম দেখছি, আর চম্পার মায়ের কথাও শুনছি। যাকে বলে একসাথে অডিও আর ভিডিও। তবে হ্যাঁ, আমি একা নয়, আশে পাশের লোকজনও তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। বিনা পয়সার বিনোদন দেখতে মন্দ লাগে না।

চম্পার মা জম্পেশ করে গল্প জমিয়েছে ফোনের ওপারে ছোদ্দির সাথে। ছোদ্দি মনে হয় একটু রসিক। ছোদ্দির কথা শুনে চম্পার মা এমন বিকট হাসি হাসছে, ওদিকে জানলার ধারে বসা বাহুবলীর কাটাপ্পার মতো এক কাকু চম্পার মায়ের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন শুভ দৃষ্টি হচ্ছে দুজনের মধ্যে। চম্পার মা হা হা হা করতে চম্পাকে বলছে,

-ওই চম্পা শোন ছোদ্দি কি বলছে, বলছে তোর বিয়েতে নাকি ডেন্স।( ড্যান্স)করবে!

ডেন্সের কথা শুনে চম্পা বলল, ছোটো পিসিকে তো ডেন্স করতেই হবে, ঘুঁটে পিসিও ডেন্স করবে।

আমি শুনে অবাক, পিসির নাম ঘুঁটে? তাহলে পিসির বাবা মানে চম্পার দাদু নাম নিশ্চয়ই গোবর হবে। পুরো গোবর ফ্যামিলি তার মানে।

সে যাইহোক, ড্যান্সের কথা শুনে আমি তখন মনে মনে চম্পার বিয়ের দিনটা কল্পনা করছি, চম্পার বিয়ে হচ্ছে আর চম্পার ছোটো পিসি আর ঘুঁটে পিসি দুজনে বেদম নাচছে‌। কল্পনায় চম্পার দুই পিসির ডেন্স বেশিক্ষণ দেখতে পেলাম না, তার কারণ চম্পার মায়ের ওই বিকট অট্টহাসি। এমন হাসি হাসছেন, কানের স্পীকার ফেটে যাবার উপক্রম।

লক্ষ্য করলাম, চম্পা এবার একটু বিরক্তই হয়ে উঠল। বলল, তাড়াতাড়ি কথা বলে নাও মা। আর দুটো ইস্টেশন পর আমরা নামব। চম্পার মা তখন ছোদ্দিকে বলছে, এই ছোদ্দি আমাদের ইস্টেশন চলে এয়েচে। বিয়েতে কিন্তু অবশ্যই এসো। চম্পা তো বিয়ের পর চলে যাবে গান্ধীর সাথে। তার আগে ওরা একবার হামিনুনে যাবে। বিয়েতে না এলে চম্পার সাথে কিন্তু আর দেখা হবে না। গান্ধী বলেই দিয়েছে, যত তাত্তাড়ি পারবে চম্পাকে নিয়ে কেলালায় চলে যাবে।

আমার পাপী মন প্রথমে গাণ্ডি শুনেছিল, দ্বিতীয় বার নামটা উচ্চারণ করতে বুঝলাম চম্পার মায়ের জামাইয়ের নাম গান্ধী। সে যাইহোক, গান্ধী কেলালায় নিয়ে যাবে মানে?
আমার অবুঝ মন অনেক কষ্টে উদ্ধার করল, ওটা কেলালা নয়, কেরালা। কিন্তু চম্পা আর গান্ধী কেরালা যাওয়ার আগে হামিনুনে যাবে বলল চম্পার মা, তা হামিনুনটা আবার কোথায়? বুঝে উঠতে না পেরে হামিনুনটা গুগুলে সার্চ করতে গেলাম। দেখি শিবপ্রসাদ আর নন্দিতার হামি সিনেমাটা চলে এল। আমার মাথা খারাপ। গুগলে লিখলাম হয়ার ইজ হামিনুন? মনে মনে ভাবছি এটা সিওর পাকিস্তানে হবে। ওদিকে আমার মতো অবস্থা হয়েছে ছোদ্দিরও। ছোদ্দিও হামিনুন বুঝতে পারেনি। চম্পার মা তখন বুঝিয়ে বলছে,

-হামিনুন গো। তুমি হামিনুন বুঝতে পারচ না?

আমি তখন গুগল সার্চ করা ছেড়ে চম্পার মায়ের কথায় কান রেখেছি। চম্পা তখন এদিক ওদিক তাকিয়ে মাকে চিমটি কেটে আস্তে করে বলল,

-আনস্মার্টের মতো কথা বলচ। তুমি প্রেস্টিচটা লুজ করে দেবে দেখচি। ওটাকে হনিমুন বলে।

চম্পার মা এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

-খুব শিক্ষিত হয়ে গেচো তাই না। মায়ের ভুল ধরচ। আমার কাছে যেটাই মুন সেটাই নুন। হামিনুন আর হামিনুন একই কথা।

আমি মনে মনে বললাম, সাবাস কাকিমা সাবাস! তুমিই ঠিক। কথাটা হানিমুন নয়, হামিনুন। সত্যিই তো হানিমুনে গিয়ে কে আর হানি খায়, সবাই তো হামিই খায়! তুমি ঠিকই বলেছো নুনে মুনে সব এক।🥴🥴😂😂😂

সংগৃহীত।
কলমে : সরজিৎ ঘোষ
কিইইইই শুধু হাসলেই হবে না 😄 আর ও হাসতে অবশ্যই followকরে পাশে থাকবেন 😊

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when DIbyendu Dey posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to DIbyendu Dey:

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share