02/02/2023
বিভেদ সৃষ্টি এবং ঐক্যের অভাবে আমরা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি ?
নিজস্ব প্রতিনিধি: সিডনী: (2 ফেব্রুয়ারি 2023):
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)।
এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা
নির্দেশ দিয়েছেন- কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)
আল্লাহ বলেন : ‘যদি মুসলমানের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের ওপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং ইনসাফ করে দেবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন’ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত-৯)।
অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসকারী কিছু কিছু বাংলাদেশী আল্লাহ এবং রাসূল (সা:) এর নির্দেশ মোতাবেক উপরোক্ত আলোচনার কোন কিছুই তোয়াক্কা করছেন না ! সবাই যার যার পদ-পদবী এবং অহংকার নিয়ে একে অপরের পিছনে লেগেই আছে যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে গ্রুপিং আর
নিজেদের মধ্যে তৈরী হচ্ছে বিভেদ এবং পরস্পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
ঐক্যের বন্ধন থেকে ছিটকে পরছি আমরা সবাই !
তার কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
1. অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সেফটন মসজিদ সিডনির বাংলাদেশীদের প্রথম মসজিদ! গ্রুপিং এর কারণে মামলা মোকদ্দমা করে মসজিদ এখন বাংলাদেশীদের হাত ছাড়া হওয়ার পথে !!
2. সিডনির রকডেল মসজিদ ম্যানেজমেন্ট নিয়েও বিরোধ বিদ্যমান ! চলছে গ্রুপিং !
3. প্রতি বৎসর সিডনিতে একটি ইজতেমার পরিবর্তে এখন গ্রুপিং এর কারণে দুইটি ইজতেমা হয়! যা সত্যিই দুঃখজনক!
4. সিডনির ক্লেমুরে ( Claymore) একটি মাসআলায় নামায হতো কিন্তু এখন গ্রুপিং এর কারণে দুই ভাগে বিভক্ত হয় বাংলাদেশী মুসল্লিরা !
5. সর্বশেষ আক্রমণ চলছে এখন সর্ব বৃহৎ বাংলাদেশীদের সংগঠন অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ! এই সেন্টারে আনুমানিক এক হাজার জন লাইফ মেম্বার আছেন বলে জানা যায়! যেখানে লাইফ মেম্বার হতে $1000(AUD) অনুদান দিতে হয় !
অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু চলছে এখানে ! শুধু ফজর নামাজ ছাড়া বাকি সব নামাজের আয়োজন একজন অভিজ্ঞ ইমাম দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে ! রমজানে খতম তারাবী এবং প্রতি মাসে একটি ইসলামিক আলোচনার আয়োজন হচ্ছে ! বয়স্ক এবং তরুণদের জন্য হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও কুরআন শিক্ষার মাদ্রাসা চালু আছে !
নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবেই পরিচালিত হচ্ছে! কিন্তু বড় সমস্যা দাড়িয়েছে এখানে কিছু সম্মানিত সদস্য ভোটে কয়েকবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হাওয়ায় কিছু কিছু মেম্বার তা ভাল চোখে দেখছেন না ! তাই তারা বর্তমান কমিটির কাছে রিকিউজিয়েশন পাঠিয়েছেন এই মর্মে যে "কেউ প্রেসিডেন্ট বা সাধারণ সম্পাদক এই দুইটি পদ মিলে তিন বার নির্বাচিত হলে তাদের জীবদ্দশায় আর মসজিদ কমিটিতে আসার জন্য নির্বাচন করতে পারবেন না !"
সাধারণ মেম্বারদের ধারণা এমন প্রস্তাবের একটাই কারণ যে, জনপ্রিয় সদ্যসরা বার বার ইলেকশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে যারা বার বার ভোটে হেরে যাচ্ছে তারা আর নির্বাচিত হতে পারবেন না এবং কোনোদিন পদ-পদবী পাবেন না ! তাই তারা যাতে আর নির্বাচনে প্রার্থী না হতে পারে এই পথ বন্ধের ব্যাবস্থা বা পায়তারা !
বিরোধী গ্রুপের এমন আচরণে সাধারণ নামাজিদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে! তারা সকলেই শঙ্কিত এই ভেবে যে, এমন গ্রুপিং চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সেন্টারের উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং মসজিদের মতো উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ হবে !
তাই সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি তাদের একটাই দাবি মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারকে গ্রুপিং মুক্ত রাখুন এবং সিডনির সেফটন মসজিদের মতো ধ্বংসের পথে ঠেলে দিবেন না ! সেন্টারের উন্নয়ণ ত্বরান্বিত করার জন্য একে অপরের পিছনে না লেগে, একে অপরকে সহয়তা করুন !
সর্বশেষে আমরাও দোয়া করছি "আল্লাহ আমাদের সকলকে আল্লাহ এবং রাসূল (সা:)- এর নির্দেশ অনুযায়ী দুনিয়াতে পথ চলার তাওফিক দান করুন এবং আখেরাতের আযাব থেকে আমাদেরকে মুক্ত রাখুন - আমিন !"