02/05/2024
ক্লাস টেন এ, আমার স্কুলের ৫ম তলায় ক্যান্টিন টাইপ কিছু একটা হয়, যেখানে ফুচকা বিক্রি হত। একজন হুজুর এই ফুচকা বিক্রি করত। ১০ টাকা এক প্লেট।
কি যে মজার ফুচকা , কি যে মজার , যা আমি এখনো ভুলতে পারিনি।
টিফিন টাইমে দৌড়ে যেতাম , এক প্লেট ফুচকা খাওয়ার জন্যে । সেই ফুচকা এর উপর, আবার আমার বান্ধুবিদের কেউ কেউ হামলা চালাত।
এখন খুব আফসোস হয় কেন ২ প্লেট, ৩ , ৪ প্লেট খেতাম না!! মন ভরে কেন খেতাম না। টিফিন টাইম কম ছিল, লাইন ধরে ১ প্লেট এর বেশি পেতাম না হয়ত। নাহ !!!
বাজেট প্রবলেম ও ছিলনা, কারন এক্সটা অনেক টাকাই তখন জমাতাম। টাকা জমানোর ধান্দায়, ১০ টাকার বেশি খরচ করতাম না সাধারনত। সেই টাকা গুলো কোথায়? নাই। সেগুলো দিয়ে কোন বাড়ি গাড়ি করতে পারি নাই।
২০১৫ সালে ,যখন পার্টটাইম জবে ঢুকি , আমার কলিগ ফুড পান্ডায় অর্ডার করত “তারকা” এর হায়দ্রাবাদি বিড়িয়ানি। প্রাইস ৩০০ টাকার আশে পাশে ছিল হয়ত। আমি কোনদিন ফুডপান্ডায় সে বিড়িয়ানি অর্ডার করে খাইনি। আমার সেই কলিগ অনেকের সাথে ১-২ চামচ শেয়ার করত। আহ খেতে কি যে অমৃত।
তখন বাসা থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা হাত খরচ দেয় , আবার স্যালারি ১৫০০০ টাকা। মানে সেকেন্ড - থার্ড ইয়ারের, স্বচ্ছল পরিবারের স্টুডেন্ট , যার বাসায় কোন টাকা দিতে হয়না, তার জন্যে এই টাকা কিন্তু অনেক। তবুও কেন যেন সবাই সেই বিড়িয়ানি অর্ডার করলেও , আমি অর্ডার করার ক্ষেত্রে অনেক কৃপনতা করতাম। তখনও সেই টাকা জমানোর ধান্দা থাকত, কিছু টাকা সেমিস্টার ফি তে কন্ট্রিবিউট করতাম, কিছু দিয়ে শপিং করতাম , আর কিছু জমাতাম ।
হ্যা , তারকার সেই বিড়িয়ানি খেয়েছিলাম ৩ বার । বিশেষ সময়ে- একবার দাওয়াতে, আর একবার জমানো টাকা দিয়ে ভালো কিছু খাবো এই চিন্তা করে। এর পরের বার যখন গেলাম তখন দেখি স্বাদ পুরো চেন্জ। শেফ চেন্জ হয়েছে বলে।
সেই তারকার বিড়িয়ানি আমি আজও মিস করি , মনে হয় যেন- ইশ তখন যদি মন ভরে একটু খেয়ে নিতাম।
তখনকার সেই জমানো টাকা কিন্তু কবেই ভ্যানিস হয়ে গেছে।
রয়ে গেছে ঐ দুটো খাবারের জন্যে আফসোস। আহ মন ভরে , টাকার চিন্তা না করে যদি একটু খেয়ে নিতাম!
আলহামদুলিল্লাহ ,এখন চাইলে ডেইলি ১৫০-৪০০ টাকার এক প্লেট এর ফুচকা খেতে পারি। এখন বিকেলের নাস্তায় ফুডপান্ডাতে অর্ডার করতে গেলে ৫০০-৬০০ টাকা চলে যায়। কিন্তু সেই ফুচকার স্বাদ, সেই “তারকা” এর বিড়িয়ানির স্বাদ তো খুজে পাইনা!!!
এখন প্রিয় জায়গা গুলোতে , প্রিয় খাবার খাওয়ার জন্যে ১০০০ টাকা গাড়ি ভাড়াই চলে যায়, তবুও আমি যাই। বার বার যাই, বার বার গিয়ে সেই একই খাবার গুলো মন ভরে খাই। এই খাওয়ার বেলায় এখন আমি কারো বাঁধা মানিনা। কোন আফসোস রাখতে চাইনা। নিজের ২০০% চেষ্টা করি সেই খাবার গুলো খাওয়ার । আল্লাহ রিজিকে লিখে রাখলে খাই। কোনদিন মিস হয়ে গেলে আল্লাহর কাছেই চাই- “আল্লাহ এই খাবারটা খাবো”। কিভাবে যেন আল্লাহ সব ব্যাবস্তা করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ।
দুদিনের দুনিয়ায় , টাকা ইনকাম করে শুধু জমিয়ে রেখে, হঠাৎ একদিন মরে গেলে , কি হবে সেই জমানো টাকা গুলোর? নিজের এবং প্রিয়জনদের ইচ্ছা গুলোর প্রাধান্য দেয়া উচিত। দান করা উচিত। অবশ্যই যে কোন ভালো জিনিস আল্লাহর কাছে চাওয়া উচিত।
সারা জীবন টাকা জমিয়ে, কষ্ট করে জীবন পার করে দেয়ার কোন মানে হয়না।