Sabrina mishti blogs

  • Home
  • Sabrina mishti blogs

Sabrina mishti blogs হারিয়েছি কিন্তু এখনো হেরে যায়নি 🥺আমার ক্ষমতা নেই 😔আমার সম্পদ নেই😔 আমার কলম আছে 😌

চাহিদাপূর্ব প্রকাশের পরমাহিকে রিক্সা করে আসতে দেখে চট করে গেইটের আড়ালে চলে গেল সুমন। মাহির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম! শ্য...
04/06/2024

চাহিদা
পূর্ব প্রকাশের পর

মাহিকে রিক্সা করে আসতে দেখে চট করে গেইটের আড়ালে চলে গেল সুমন। মাহির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম! শ্যামলা মুখে আলগা পাউডার ঘামে লেপটে আছে , অনভ্যস্ত বেনী অবহেলায় কাঁধে ঝুলে আছে ! উড়াধুরা বেমানান একটা টপসের কারনে বুকের খাঁজ সুস্পষ্ট ! দ্রুত শহুরে হয়ে ওঠার তাড়নায় সালোয়ারের বদলে ঢাকা কলেজের উল্টা দিক থেকে কেনা টাইট জিনসই আজকাল বেশিরভাগ সময়ে তার পরনে থাকে ! তারপরও তাকে কখনও আবেদনময়ী লাগেনা - বড় সরল আর মিষ্টি লাগে !
একবার- শুধু একবারের জন্য এই শ্যামলবরণ মেয়েটির মুখ থেকে ‘ভালবাসি’ শব্দটা শোনার জন্য পৃথিবীর সব সুখ অনায়াসে দিয়ে দেয়া যায় ! মেয়েটির রাগী চোখের দিকে তাকিয়ে পুরো দিন পার করে দেয়া যায় ! মাহির ঔদাসিন্যে সুমনের কখনও ক্লান্তি আসেনা !

শুধু মাহি যখন দুদিন বা তিনদিনের জন্য ঢাকার বাইরে চলে যায় তখন দলা পাকানো কষ্টে বুকটা ভার হয়ে থাকে! সেই সময়টা সুমন ভালোমতো খায়না, ঘুমায়না, কথা বলেনা ! সুমনের বেশিরভাগ বন্ধু নারী সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দিন ফোনে কথা হবার পরই ভালবাসার চেয়ে একটা “ভালো বাসা “খোঁজে! বন্ধুর বাসা বা কোন কাজিনের খালি বাসায় বদ্ধ কামরায় সময় কাটানোর সাথে সাথে যৌনতার অনুশীলনে প্রেম ফিকে হতে থাকে ! এক মাসের মধ্যেই যে যার পথ দেখে ! এসব বন্ধু সুমনের অবস্থা দেখে তাকে উপহাস করে ! তুড়ি বাজিয়ে বলে, “মাইয়া কোন ব্যাপার?
আজ শুইলাম, কাল টিস্যু পেপার !!!
এসব কথা সুমনকে বিচলিত করেনা বরং তার প্রেমকে আরও গভীর করে - তার সংকল্পকে আরও সুদৃঢ় করে !

সুমন আবার রিক্সায় বসা মাহির দিকে তাকায়! গায়ের রং উজ্জ্বল করার অভিপ্রায়ে গতকাল বোধহয় শরীরে কাঁচা হলুদ মেখেছিলো মাহি! রিক্সার পা দানিতে রাখা কোমল পায়ে এখনও ছোপ ছোপ হলুদের দাগ! তার পায়ের পাতা ছুঁয়ে দেয়ার বহুদিনের ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে দমন করে সুমন ! মাহির জন্য সোনার একটা নুপুর কিনে রেখেছে! পরিয়ে দেবার সাহস হয়নি!

মাহি রিক্সা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে ইউনিভারসিটিতে ঢোকে-মুখের ভাব অন্যমনস্ক, নজর মোবাইলের দিকে ! রিক্সা ওয়ালা পলিথিনের প্যাকেটে টাকা রাখতে যাবে এমন সময় সুমন উপস্থিত !

মাহি সত্তর টাকা ভাড়া মিটানোর জন্য একটা পঞ্চাশ আর একটা বিশ টাকার নোট দিয়েছে - সুমন একশ টাকা দিয়ে রিক্সা ওয়ালার কাছ থেকে নোট দুটা কিনে নেয় ! নোট হাত নিয়ে গন্ধ শোকে - খুব পরিচিত একটা অপরিচিত গন্ধ ! তেল,লোশন, বডি স্প্রে মেলানো গন্ধ ! নোট দুটো গালে চেপে রাখে ! গত পাঁচ মাস ধরেই বেশিরভাগ দিন মাহির দেয়া টাকা সে জমিয়ে রাখে ! এলাকার বেশিরভাগ রিক্সাওয়ালাই এখন সুমনকে চিনে রেখেছে - সুমন সামনে এসে দাঁড়ালেই পান খাওয়া কালো দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,”আজ পাঁচ টাকা বাড়ায় দিয়েন মামা!”

মাঝে মাঝে সুমনের মনে হয় মাহিকে ভালবাসার কথাটা বলে দেবে কিন্তু মাহি তার সামান্য কথাতেই মহা বিরক্ত হয় - এই কথা শুনে না জানি কি করে বসে !
সুমন ক্যানটিনে ঢুকে দেখে মাহি তার ক্লাসের কিছু ছেলেমেয়ে নিয়ে কেন্টিনে কফি খাচ্ছে ! এই সময়টা কেন্টিনে উপচে পরা ভীড় - ধীরগতির দু’টা মান্ধাতা আমলের সিলিং ফ্যান গরম কমানোর বদলে গরম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ! মাহি খুব ঘামছে ! মাহির সামান্য একটু কষ্ট সুমন সহ্য করতে পারেনা,সে দৌড়ে গিয়ে ফেস টিস্যু কিনে এনে মাহির দিকে এগিয়ে দেয় !
“এটা কি ? তোমাকে কি বলেছি আমার টিস্যু লাগবে ? আজাইরা ঢং দেখাবা না তো! “মাহি কঠিন স্বরে বলে ! ওর পাশের ছেলেমেয়ে গুলো পিত্তি জ্বালানি হাসি দেয় ! আগে এমন হলে সুমনের ফরসা চোখমুখ লজ্জা অপমানে টকটকে লাল হয়ে যেত - এখন আর সে এসব গায়ে মাখে না !

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, যেখানে প্রেমের সম্বন্ধ সেখানেই নত হবার গৌরব! সে কত শতবার যে নত হয়েছে! এক তরফা ভালবাসার কষ্ট সে তো নিজেই মাথা পেতে নিয়েছে, প্রতিবারই তার মনে হয় এটাই বোধহয় মাহির শেষ খারাপ ব্যবহার - এরপর সে নিশ্চিত ভুল বুঝতে পারবে ! কিন্তু মাহি বদলায়নি !
সুমন জানে মাহির দেয়া কষ্টের চেয়ে মাহির না থাকার কষ্ট অনেক বেশি প্রবল ! তার আশেপাশে মাহির অস্থিত্বটাই সুখের ! এর চেয়ে বেশি চাহিদা থাকলে হয়তো মাহিকে চিরতরে হারাতে হবে !
(চলবে)

21/05/2024
চাহিদাপূর্ব প্রকাশের পরকাল এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে - কিন্তু একদম মন বসছে না ! বারবার মন চলে যাচ্ছে ফেসবুকের দিকে ! আফজাল...
12/05/2024

চাহিদা
পূর্ব প্রকাশের পর
কাল এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে - কিন্তু একদম মন বসছে না ! বারবার মন চলে যাচ্ছে ফেসবুকের দিকে ! আফজাল তার ফেসবুকের একাউন্ট এ স্ত্রী সহ একটি ছবি পোস্ট করেছেন ! সমাজের উচ্চস্তরের অভিজাত ব্যক্তিরা ফেসবুকে একটি একাউন্ট খোলেন ঠিকই কিন্তু খুব বেশি ব্যবহার করাটাকে সময় ও সন্মান হানিকর বলে মনে করেন ! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচরণ করবে মধ্যবিত্ত স্বপ্নবিভোর শ্রেণি যাঁদের অন্যভাবে বিনোদন পাবার সামর্থ বা সুযোগ নেই ! তারা কখনও রোদ নিয়ে,কখনও বৃষ্টি নিয়ে,কখনও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সট্যাটাস দিবে, রাজনীতি নিয়ে আস্ফালন করবে , শাকিব অপু বুবলীর দ্বন্দ্ব , লায়লামামুনের বিচ্ছেদ নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলবে , নীতিবাক্য আউড়ে নিজের মহত্ব জাহির করবে! আফজালও ফেসবুক সম্পর্কে তেমন ধারনা পোষণ করেন -কখনও কারও পোস্ট এ লাইক বা কমেনট করা তিনি অহেতুক সময় ক্ষেপন মনে করেন ! শুধুমাত্র কালে ভদ্রে প্রবাসী বন্ধুদের জন্য একটা দু’টা ছবি আপলোড করে থাকেন!

একটা বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন গতকাল - নাজনীনের কোমর জড়িয়ে ছবি তুলেছেন ! সেটাই আজ আপলোড করেছেন ! নাজনীনের গলায় অর্ধ কোটি টাকা দামের হীরের নেকলেস , মুখে কোটি টাকা দামের হাসি ! এই নিয়ে তেত্রিশ বার ছবিটা খুটিয়ে দেখলো মাহি ! দাম্পত্য জীবনে সুখী নয় একথা মাহিকে অনেকবার বলেছে আফজাল - না যৌনতায় না মৌনতায় দুজন দুজনকে স্পর্শ করতে পারে !! অথচ সামাজিকতায় কী চমৎকার সুখী হবার অভিনয় !!! নিজেদের আদর্শ দম্পতি প্রমান করার জন্য কী চমৎকার প্রচেষটা !!!

মধ্যবিত্ত রক্ষনশীল মানসিকতার কারনে মাহির কাছে শারিরীক সম্পর্কটা সহজ নয় ! সেই সম্পর্কের একটা দাবী আছে ! সেজন্যই কি এত কষ্ট হচ্ছে ?? মাহি তো সব জেনেশুনেই আফজালকে ভালবেসেছে ! তাও ছবিটা দেখে বুকের মধ্যে এত টনটন করে কেন ?! আসলেই, সত্য জানা আর সত্য মানার মধ্যে বিস্তর ফারাক !

মাথা ঝাকিয়ে সবকিছু ঝেড়ে ফেলে এসাইনমেন্টে মন দেবার চেষ্টা করে মাহি ! এখনই সুমনকে কল করলেই সে ছুটে আসবে ! এক চুটকিতে এসাইনমেন্ট সমস্যার সমাধান ! সকালেই সুমন যথারীতি শুভ সকাল জানিয়েছে ! সেই সাথে একটা বস্তাপচা প্রেমের গান ! সেই গান দেখে আরও মেজাজ চড়ে গেছে মাহির !! অসহ্য ! এত অবজ্ঞা, এত উগ্র মেজাজ, এত অপমানের পরও সুমনের ভালবাসায় বিন্দুমাত্র ছেদ পরেনা - আশ্চর্য !
কাছের মানুষটির যে ভালবাসা, যে সমর্পণ না চাইতেই পাওয়া যায় তার প্রতি বুঝি এমনই তাচ্ছিল্য থাকে ! অথচ যে মানুষটি আত্মার সাথে, শরীরের প্রতিটি রোমকূপের সাথে মিশে গিয়েও দূরের মানুষ হয়ে রইলো তার বিচ্ছেদের যন্ত্রণা প্রেমকে উত্তরোত্তর বাড়িয়ে তুলে! তাকে জয় করার আকাংখায় সেই হয়ে উঠলো পরম আরাধ্য !!!!

চৌত্রিশ বারের মতো ছবিটার দিকে তাকায় মাহি ! মনে মনে ছটফট করে ! আফজালকে ফোন দেয় ! ফোনের ওপাশ থেকে আফজালের ভরাট সুন্দর কন্ঠের হ্যালো শুনেই মাহির বুকের ভেতর উথাল পাথাল শুরু হয়ে যায়! সে কিছু বলার আগেই আফজাল তড়িঘড়ি করে বলে, “ মিটিং এ আছি, তোমার কিছু লাগলে লিখে পাঠাও, বিকাশ করছি !”বলেই মাহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কট করে কেটে দেয় !!!

আফজালের গলা শোনার পর মাহির অস্থিরতা আরও বাড়ে ! খুব ইচ্ছে করে ভিডিও কল দিয়ে আফজালকে একবার দেখে কিন্তু সাহস হয়না ! জানালা দিয়ে দূরে তাকায় - বকশিবাজারের এই গলিটার মাথায় তরুন তরুনীরা জোড়ায় জোড়ায় বসে গল্প করে ! চটপটি খায় ! একজন আরেকজনের মুখে ফুচকা ঠেসে দেয় ! আফজাল মরে গেলেও রাস্তাঘাটের খাবার মুখে দেবেনা! এধরনের সস্তা অস্বাস্থ্যকর খাবার দেখলেই তার বমি আসে !

তৃষিতের মতো প্রেমিক যুগলের দিকে তাকিয়ে থাকে মাহি! তাদের স্বপ্ন স্বপ্ন চোখে “চাকুরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো” টাইপের আনন্দ ঝলমল করে ! সতস্ফুরত সুখের জোয়ারে হুড খোলা রিক্সায় ঘুরে আবার যখন চুমু খাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জাগে তখন তরুন প্রেমিক লজ্জা লজ্জা মুখে আলগোছে হুড উঠিয়ে প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে আলতো চুমু খায় !
মাহির দেখতে বড় ভালো লাগে !
কোটি টাকা দামের গাড়িতে চড়ে দুনিয়ার অলক্ষ্যে নিভৃত্বে ঘোরা ভালো নাকি রিক্সা ওয়ালার সাথে ঘন্টা চুক্তিতে দামাদামি করে হুড তোলা রিক্সায় ঘোরা বেশি সুখের তা মাহি ঠাহর করতে পারেনা ! নিজেকে প্রশ্ন করে মাহি -তার প্রকৃত চাহিদা কি ?? আফজালের ভালবাসা তাকে সুখ দেয় কিন্তু স্বস্থি দেয়না, সুমনের ভালবাসা তাকে সম্পুর্ণতা দেয় কিন্তু শান্তি দেয়না !
মনের আনাচ কানাচ অনেক হাতড়ে মাহি উত্তর পায়না !!
(চলবে)

চাহিদা পূর্ব প্রকাশের পরআফজাল মাহিকে কেমন ভালবাসে -সেটা আজ অবধি মাহি বুঝে উঠতে পারেনি ! প্রথম দিকে কিছুটা কৌতূহল, তারপর ...
24/04/2024

চাহিদা
পূর্ব প্রকাশের পর
আফজাল মাহিকে কেমন ভালবাসে -সেটা আজ অবধি মাহি বুঝে উঠতে পারেনি ! প্রথম দিকে কিছুটা কৌতূহল, তারপর আকর্ষণ,এরপর মোহ এবং এখন মায়া ! কিন্তু, আফজালের তরফ থেকে এই অনুভূতি নির্ভেজাল ভালবাসায় রূপ নিয়েছে কি না এই ব্যপারে মাহি যথেষ্ট সন্দিহান !
মাহির যে বয়স সেই বয়সে যেকোন কিছু অনায়াসে হেসে উড়িয়ে দেয়া যায় অথবা কেঁদে ভাসিয়ে দেয়া যায় ! কিন্তু আফজালের বয়সে যেখানে তিল তিল করে অর্জন করা অনেক সন্মান, প্রতিষ্ঠা , সামাজিক প্রতিপত্তি সেখানে যেকোন কিছু অথবা সবকিছু হারানোর জুজুর ভয় সর্বদা অদৃশ্য বাঁধনে বেঁধে রাখে! তাই, প্রেমের সম্পর্ক পালনের ক্ষেত্রে দুজন দুরকম! মাহি যেখানে উচ্ছল,বাঁধনহারা ,প্রগলভ,আফজাল সেখানে সংযত, সাবধানী কখনও বা সংকুচিত !! প্রেমে পরলে মানুষ পাগল হয় , ভালবাসা বাস্তব বুদ্ধি নাশ করে কিন্তু আফজাল কখনই নিয়মের বাইরে এক চুলও যায়নি !
কখনও তারা একসাথে কোন রেস্টুরেন্টে বসে খায়নি, কখনও একসাথে মুভি দেখতে যায়নি , কোন রিসোর্টএ দুজন যখন একান্তে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে গেছে তখন কখনই দুজন একসাথে রিসোর্ট ঘুরে দেখেনি! রুমের মধ্যেই পুরো সময় কাটিয়েছে ! রাত দশটার মধ্যে আফজাল বাড়ি ফেরে, দশটার পর সুনামি আসলেও তাকে ফোন করা নিষিদ্ধ !

তিনমাসের সম্পর্কে দুবার কক্সবাজার গিয়েছে তারা- সেটাও দুজন আলাদা আলাদাভাবে ! জীবনেও ফ্লাইটে ওঠার অভিজ্ঞতা নেই মাহির ! মাহির বাবা আর মেজচাচা যখন প্রথমবার শ্রমিক হিসেবে জর্ডান যান তখন তাদের পরিবারের অন্তত ত্রিশজন বিমানবন্দর এসেছিলো বিদায় দেবার সময় যদি প্লেন দেখা যায় এই আশায়!! ।

প্রথমবার সুমনই তাকে ডোমেসটিক ফ্লাইটে তুলে দিয়েছিলো ! বকশিবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পুরো রাস্তা সিএনজিতে সুমন বকরবকর করতে করতে মাথা ধরিয়ে দিলো অথচ একবারের জন্যেও জানতে চাইলো না মাহি কেন একা কক্সবাজার যাচ্ছে ! মাহি জীবনে প্রথমবার বিমানে উঠবে বলে বিউটি পারলার থেকে পার্টি মেকাপ করে এসেছে পাককা বার’শ টাকা খরচ করে - এখন মনে হচ্ছে কাজটা বোকামি হয়ে গেছে ! জৈষ্ঠ্য মাসের গরমে মেকাপ গলছে ! এর মধ্যে সুমন আলগা দরদ দেখাতে গিয়ে টিস্যু দিয়ে এমনভাবে ডলা দিয়ে ঘাম মুছেছে যে খাবলাখাবলা ভাবে মেকাপ উঠে শ্যামলা রং জায়গায় জায়গায় বেরিয়ে এসেছে !
অন্যসময় হলে মাহি সুমনকে যাচ্ছেতাই কিছু কথা শুনিয়ে দিতো কিন্তু আসন্ন বিমান উডডয়নের দুশ্চিন্তায় এবার আর কিছু বলেনা ! জৈষ্ঠ্যের দাবদাহে বাতাসও আগুনের হলকা ছড়াচ্ছে! সিএনজির ইনজিন প্রচন্ড গরম হয়ে পা পুড়িয়ে দিচ্ছিলো ! এর মধ্যে সুমন নিজে গলদঘর্ম হয়ে মাহিকে একটা প্লাস্টিকের ফাইল দিয়ে ক্রমাগত বাতাস দিয়ে যাচ্ছিলো !

মাহি এতদিন তার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের আপলোড করা ছবিতে সমুদ্র দেখেছে শুধু ! সমুদ্রকে কখনই ছবি দেখে বোঝা যায়না - বিশ্বের সর্বাধুনিক ফটোগ্রাফির মাধ্যমেও এর ভীষন সৌন্দর্য আর অগাধ বিশালতাার বাপ্তি নিরূপন করা যায়না ! তার কাছে গিয়ে তাকে স্পর্শ করে তার ভাষা বুঝতে হয় ! কক্সবাজার যাবে শুনেই মাহি শয়নে জাগরনে সমুদ্র দেখতে লাগলো ! জীবনে প্রথম সমুদ্র ছুঁয়ে দেখার সময় কি পোষাক পরবে , সমুদ্র স্নানে কি পরবে, লোনা জল তীর ধরে বহুদূর যখন হেটে যাবে তখন কি পরবে এসব গোছাতে গোছাতে তিন দিনের কক্সবাজার ট্যুরে বিশাল সাইজের দুটা বড় লাগেজ নিয়েছে ! শাড়ি সালোয়ার কামিজ গাউন ফতুয়ায় ঠাসা এই কমদামী ব্যাগ তো পুরো রাস্তা সুমনই টেনেছে কিন্তু যাত্রা শেষে কক্সবাজার বিমানবন্দরে মালামালের বেল্ট থেকে সুটকেস নামানোর সময় অনভ্যস্ত হ্যচকা টানের চোটে সুটকেস বেল্টেই ঘুরতে থাকলো আর হ্যনডেল রয়ে গেল মাহির হাতে ! সস্তার তিন অবস্থা যাকে বলে !
অনেক কষ্টে হ্যনডেল বিহীন লাগেজ কোলে করে মাহি ঠিকানা খুঁজে হোটেলে পৌছেছে !
আফজাল আগেই চেক ইন করেছে ! নিরাসক্ত চোখে বিশাল দুই লাগেজের দিকে আর মাহির পারলার চর্চিত মুখের দিকে তাকিয়েছে কেবল- মুখে কিছু বলেনি !
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো এত কিছুর পরও মাহি কেবল বিলাসবহুল হোটেল রুমের বারান্দা থেকে সাগর দেখেছে ! সাগরের কাছে যাবার আবদার করেছিলো কিনতু আফজাল তিক্ত কন্ঠে জানিয়ে দিয়েছে , তাকে নিয়ে এমন একটা গিজগিজে লোকে ভরা বীচে যাওয়া অকল্পনীয় এবং অসম্ভব ! তিনটা দিন শুধু রুমের ভেতরে কাটিয়ে আবার প্লেনে উঠেছে ! কোনো ছুঁতোয় সাগর ছুঁতে পারেনি !

পরের বার কক্সবাজার ট্যুরে মাহি আর সাগর পাড়ে যাবার আবদার করেনি ! তৃষিত নয়নে শুধু দূর থেকে দেখেছে আর কান পেতে তার গর্জন শুনেছে! আফজাল তার সকল আর্থিক আর শারিরীক চাহিদা পূরণ করেছে কিন্তু মানসিক চাহিদাটা হোটেলের বারান্দা থেকে সজোড়ে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলেছে !!!
(চলবে)

চাহিদাপূর্ব প্রকাশের পরআফজালের সাথে পরিচয় বান্ধবী কনিকার জন্মদিনের দাওয়াত খেতে গিয়ে ! একুশ বছরে পা দেয়াটা ঘটা করে ছাদে স...
20/04/2024

চাহিদা
পূর্ব প্রকাশের পর
আফজালের সাথে পরিচয় বান্ধবী কনিকার জন্মদিনের দাওয়াত খেতে গিয়ে ! একুশ বছরে পা দেয়াটা ঘটা করে ছাদে সামিয়ানা খাটিয়ে ডেকোরেটর এনে দু’শ লোক খাইয়ে পালিত হচ্ছে ! আফজাল কনিকার ছোটমামা রওনকের ঘনিষ্ট বন্ধু ! তার মুখের অপ্রস্তুত ভাবই বলে দিচ্ছিলো, হঠাৎ করে এধরনের অনুষ্ঠানে এসে বিব্রত উনি ! রওনক তাকে বসিয়ে দিয়েই কোথায় জানি উধাও হয়ে গেছে। ডিজে মিউজিকের অবাধ্য শব্দে কান পাতা দায় - এর মাঝেই এক কোনায় দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছিলেন আর মাঝে মাঝে ভ্রু কুঁচকে এমনভাবে এলাকা কাঁপানো শব্দের উৎসের দিকে তাকাচ্ছিলেন যেন তার চোখের দৃষ্টিতেই সব শব্দ নিমিষে মিউট হয়ে যাবে !
এদিকে মাহিও যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে ছিলো - উঁচু হিলের জুতো সে বাপের জনমেও পরে নাই , আজই দাওয়াত উপলক্ষে পরেছে ! সুমন গাধাটা তার এক পরিচিত দোকানে জোড় করে নিয়ে গিয়েছিলো যেখানে নাকি বিদেশ থেকে আনা লাগেজ মাল অতি সস্তায় পাওয়া যায়! সোনালী জুতাটা কমদামে কিনতে পেরে মনে হচ্ছিলো জিতেছে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে দুটার হিল একই উঁচ্চতার নয় , একটু ছোটবড় - হাটতে সমস্যা হচ্ছে !
এমনসময় ডিজে মিউজিকের তালেতালে উদ্ভট নৃত্যরত এক মেয়ে বেতাল হয়ে মাহির গায়ের উপর হুমরি খেয়ে পরে !
মাহি চটপটির বাটি নিয়ে পিছু হটতে গিয়ে উঁচু নিচু জুতার বদৌলতে ভারসাম্য না রাখতে পেরে আফজালের গায়ের উপর চটপটির বাটিসহ আছড়ে পরে !!! বেয়াদব তেঁতুলের টক ছলকে আফজালের হুগো বসের দামী টি শার্ট সয়লাব করে দেয়।
এই আকস্মিক পরিস্থিতিতে কি করতে হবে মাহি বুঝে উঠতে পারেনা ! সরি বলবে না পালিয়ে যাবে ভীড়ের মধ্যে !? দৌড়ে টিস্যু পেপার আনতে গিয়ে আবার পরে যাবার উপক্রম হয় ! কোন কুক্ষণে যে এই হিল জুতো সে কিনতে গিয়েছিলো! মনে মনে সুমনকে পুরো গুষটি শুদ্ধ খাস মুন্সীগঞ্জের ভাষায় গালাগাল করে !
আফজাল নিজের টি শার্টের দিকে এক পলক তাকিয়ে রাগ হতে গিয়েও হতে পারেনা ! দেশবিদেশ থেকে কেনা সকল দামী ব্র্যানডের শার্ট দেয়াল আলমারিতে থরে থরে সাজানো ! দেশের শপিং মলে যাওয়া বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছে। দেশের বাইরে টুরে গেলে অভ্যাসবশত: শপিং মলে ঢু মারে কিন্তু পোশাকের কালেকশন আর স্বল্পবসনা সাদা চামড়ার সেল্স গার্লদের দিকে বিতৃষ্ণ নয়নে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ফেরত চলে আসে- নতুন কিছু নজর কাড়েনা, মন টানেনা!
একগাদা টিস্যু হাতে নিয়ে ফিরে এসে মাহি এসে দেখে ততক্ষণে একজন বেয়ারার সহায়তায় শার্ট পরিস্কার করে ফেলেছে আফজাল ! মাহির অপ্রস্তুত লজ্জিত ভাব কাটাতে আফজাল তাকে নিয়ে টেবিলে বসে ! আফজাল হয়তো সেদিন সদ্য যৌবনা তরুনীর অতর্কিত শারীরিক নৈকট্যে পুলকিত হয়ে থাকবেন কারন, ব্যাপারটি “সরি বলাবলির” পর্ব পেরিয়ে “মোবাইল ফোন নম্বর চালাচালি” পর্যন্ত গড়িয়েছিলো !
ফোনটা প্রথম মাহিই দিয়েছিলো ! আফজালের যে বয়স আর সামাজিক অবস্থাান তাতে মফস্বলের একটি সাধারন মেয়েকে দেখে সে আইসক্রীমের মতো গলে যাবে এমনটি ভাবার কোন কারন নেই ! বরং ফোন পেয়ে সে কিছুটা দোটানায় পরে গিয়েছিলো- কথা বলবে কি না ! কারন এসব মেয়েরা দু’দিন কথা বলার পরই তৃতীয় দিন করুন কন্ঠে বলে, ভাইয়া,মা হাসপাতালে -জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করাতে হবে- মূল টাকা জমা দিয়েছি , সামান্য কিছু শর্ট পরেছে ! বিকাশ নম্বর টা পাঠালাম….
অলস দুপুরের ভাতঘুম ঠেকাতে কথা বলবে না বলবে না করেও ঝাঁড়া আট মিনিট মাহির সাথে কথা বললো আফজাল ! প্রায় এক মাস পেরিয়ে যাবার পরও যখন মাহির দিক থেকে কখনও টাকা পাঠানোর অনুরোধ আসেনি তখন আফজাল খানিকটা বিশ্বাস করা শুরু করলো- জগতের সব মেয়েই তো একরকম নয় ! আফজাল অবশ্য মোবাইলে এমবি ভরে দিয়েছে - ব্যস এতটুকুই !
যার সামাজিক অবস্থান যত বেশি সুদৃঢ সে মনে মনে তত বেশি টালমাটাল ! তাই তাদের দেখা হতে তিন মাস লাগলো ! পাবলিক প্লেসে দেখা করা অসম্ভব কারন হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কিছু আইপি টিভির টক শো’র বদৌলতে তার চেহারাটা সুপরিচিত না হলেও একেবারে অপরিচিত নয় !
খানিকটা ইচ্ছায় আর বেশ খানিকটা অনিচছায় প্রথম দিন দুজন যখন দেখা করলেন তখন আফজাল ড্রাইভ করেছে মাহিকে পাশে বসিয়ে ! সন্ধ্যার ঘনায়মান অন্ধকারে রাস্তায় চলমান গাড়ির ছিটকে আসা আলোতে মাহির চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চমকে উঠলেনআফজাল !
প্রতিটা মানুষ আজীবন অন্যের চোখে নিজের প্রতি মুগ্ধতা দেখতে চায় ! পুরুষ তার পছন্দের নারীর চোখে এক ঝলক মুগ্ধতা দেখার জন্য তার পুরো জীবনটা বুঝি এক পলকে দিয়ে দিতে পারে! স্ত্রী নাজনীন প্রথম প্রথম সবকিছুতেই মুগ্ধ হতো এখন বহুদিন হয়ে গেছে তার চোখ থেকে ভালবাসা মিশ্রিত মুগ্ধতা বিদায় নিয়েছে ! যেসব মেয়েরা টাকার বিনিময়ে শরীর, সময় আর সম্ভ্রম দেয় তাদের চোখের দিকে তাকানোর রুচি হয়না ! তাকালেও নকল আইল্যাসের আবডালে তাদের চোখে লালসা ছাড়া আর কিছু দেখা যায়না ! বহু বছর পর সেই বহু আকাঙ্খিত মুগধতা সে মাহির চোখে খুঁজে পেল !
প্ল্যানমাফ্ক সেদিন দুজনে কোথাও থামেন নি ! গাড়িতেই ঘুরেছেন , দুজনের প্রথম শারিরীক সপরশ গাড়িতেই!! মাহির জীবনে পুরুষ স্পর্শ এই প্রথম নয় , মুন্সীগঞ্জ থাকতেই সমবয়সী চাচাত ভাইএর সাথে তার এই বিষয়ে হাতে খড়ি হয়েছে কিন্তু সেই ভাইটিকে তার কখনও পুরুষ বলেই মনে হয়নি ! আজ স্কাইরুফওয়ালা লান্ড রোভার গাড়িতে অসম্ভব সুদর্শন সফল পুরুষের সাথে বসে মাহি যেন তার রূপকথার রাজকুমারের সন্ধান পেয়ে গেলো ! ( চলবে )

গুল মার্গের রাস্তা
15/04/2024

গুল মার্গের রাস্তা

সন্দেহ দ্বিতীয় অংশশাহরিয়ার অফিস থেকে ফিরলে পরনের শার্ট প্যান্ট সব খুটিয়ে দেখে ইভা- কোথাও কোন লিপস্টিকের দাগ বা লম্বা চু...
05/04/2024

সন্দেহ
দ্বিতীয় অংশ
শাহরিয়ার অফিস থেকে ফিরলে পরনের শার্ট প্যান্ট সব খুটিয়ে দেখে ইভা- কোথাও কোন লিপস্টিকের দাগ বা লম্বা চুল লেগে আছে কি না! শুঁকে দেখে কোন মেয়েলী পারফিউমের গন্ধ জড়িয়ে আছে কি না ! নিজের একটি বড় খুঁত আছে মনে করে শাহরিয়ারের যেকোন খুঁত আবিস্কার করার জন্য মরিয়া হয়ে সে সদা খুঁতখুঁত করে !!
সন্তানের মা হতে পারবেনা দেখেই সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় দোলাচলে ভুগে সারাক্ষণ ! কেবলই মনে হয়, শাহরিয়ার তাকে ছেড়ে চলে যাবে , এই বুঝি অন্য কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলল তার স্বামী ! বুঝতে পারেনা স্বামীকে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরে রাখতে গিয়ে প্রতি পদে সন্দেহ করে আরও বেশি দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সে!

সন্তান ধারনের সকল চিকিৎসা চলছে ! শাহরিয়ার যে যেখানে বলেছে সেই ইনফারটিলিটি বিশেষজ্ঞের কাছেই গিয়েছে ! চলছে পানি পড়া , তাবিজ কবজও ! ছয় মাস আগে চেন্নাই এপোলো গিয়েছিলো,আগামী মাসে আবার যাবার কথা ! এত গুরুত্ব পূর্ণ পদে চাকুরী করে এত ঘনঘন ছুটি পেতে ঝামেলা হয় তবু সে ইভার সামনে সেটা প্রকাশ করেনা !
ইভাকে অনেকভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছে , সংসারের সুখের জন্য সন্তান আবশ্যক বটে কিন্তু অপরিহার্য নয় ! পরস্পরের প্রতি ভালবাসাটাই সবচেয়ে জরুরী !তিন সন্তান হয়ে যাবার পরও অনেকের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ! যাঁদের সন্তান আছে তাদের কি ঘর ভাংগে না ??? অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা ! ইভা তখনকার মতো ঘাড় দুলিয়ে মেনে নেয় বটে কিন্তু খানিক পরেই যেই কে সেই !!

ইভা পারতপক্ষে বাসায় কোন কমবয়সী গৃহকর্মী রাখেনা ! কিন্তু এবার প্রৌড় খালাটি দেশের বাড়ি ছুটিতে গিয়ে ফেরত আসেনি বলে নিতান্ত বাধ্য হয়েই একজন বিশ বাইশ বছরের তরুনীকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখা হয়েছে ! রাখার পর থেকে ইভা তাকে অষ্ট প্রহর পাহারা দিয়ে রাখছে । ছুটির দিনগুলোর অলস সকালে শাহরিয়ার যখন খবরের কাগজ পড়ছে তখন যদি মেয়েটি ঘর মুছতে আসে তখন রান্না চুলায় রেখেই ইভা যেভাবে দৌড়ে আসে আর শ্যেনদৃষ্টিতে দুজনকে লক্ষ্য করে - শরমে,মরমে মরে যায় শাহরিয়ার ! তার আচরনে মনেই হতে পারে, কামুক শাহরিয়ার বুঝি সুযোগ পেলেই বাছবিচারহীন ভাবে যেকোন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়! অথচ পরিচয়ের তেরো বছরে এধরনের সামান্যতম নজিরও ইভা পায়নি !
অফিসের নারী সহকর্মী বা বন্ধুদের স্ত্রীর সাথে শাহরিয়ারের
শালীন আচরন সর্বদাই ভদ্র ও মার্জিত দূরত্বের পরিচায়ক !
আগে ফেসবুক চালাতো সে ! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার লেখালিখির কদর ছিলো, কালেভদ্রে ইভার সাথেই তোলা ছবি পোস্ট দিতো ! সুপুরুষ শাহরিয়ারের ব্যক্তিত্ব , লেখালিখির দক্ষতা নিয়ে কোন মেয়ে প্রশংসাসূচক মন্তব্য দিলেই তুলকালাম কান্ড ঘটে যেত ! সেই মেয়েকে ব্লক করে দিলেই ঘটনার পরিসমাপ্তি হতো তা নয় , ইভা মেয়েটিকে কল দিয়ে বলতো ,”পরের স্বামীকে লাভ রিআ্যকট দিতে লজ্জা করেনা, জগতে কি পুরুষ নাই , তোদের এত চুলকানি কেন , তোদের মতো নষ্টা বেটিদের জন্য বিশ্ব সংসার রসাতলে যাচ্ছে “… ইত্যাদি ইত্যাদি ! অনর্গল অশ্রাব্য কথা শুনে বোঝার উপায়ই নেই কোন এক কালে ইভা একটি বিশ্ববিদ্যালয়র পড়াশোনা করেছে !! অতিষ্ঠ হয়ে শাহরিয়ার ফেসবুক চালানো বন্ধ করে দিয়েছে !

একদিন বোনদের সাথে শপিং এ গেছে ইভা ! সচরাচর স্বামীকে ছাড়া কোথাও যায়না সে ! আজ শাহরিয়ারই জোড় করেছে , সারাদিন বাসায় থেকে সাতপাঁচ ভেবে ভেবে আরও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরছে ! বোনদের সাথে গেলে হয়তো মন ভালো লাগবে !
ইভা ভেবেছিলো শাহরিয়ার ব্যাংক থেকে ফেরার আগেই সে ফিরতে পারবে কিন্তু রাস্তায় প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যাম !!! শাহরিয়ারের বাসায় ফেরার সময় হয়ে গেছে।এসি গাড়িতে বসেও ঘামতে থাকে ইভা ! কোন কুক্ষণে যে বেরিয়েছিলো ! বাসায় এখন শুধু শাহরিয়ার আর কাজের মেয়েটি রয়েছে ! কি করছে ওরা ? মেয়েটির ওডনা কোনসময় বুকের ওপর থাকেনা! এজন্যই কি শাহরিয়ার তাকে শপিং এ পাঠানোর জন্য জোড় করেছে ??? নোংরা উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য !?
বাসায় পৌছে লিফটের জন্য অপেক্ষা না করে দৌড়ে চারতলায় ওঠে ইভা! কম্পমান আংগুল কলিংবেলের উপর আছড়ে পরে - কোন সাড়া নেই ! দম আটকে যাচ্ছে , হৃদপিন্ড এত জোড়ে ধরাস ধরাস করছে যে মনে হয় পাঁজর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে ! একহাতে কলিংবেল চেপে ধরে রাখে , সেই সাথে আরেক হাত দিয়ে দরজায় ঠাস ঠাস করে বাড়ি দেয় ! শপিং ব্যাগগুলো ছড়িয়ে ছিটিঁযে পরে মেঝেতে ! পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী শব্দ শুনে উকিঝুকি দেয় !

এমনসময় দরজা খুলে দেয় শাহরিয়ার !গায়ে শার্ট নেই -অল্প অল্প হাফাচছে ! ঘরে ঢুকেই হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দেয় স্বামীর গালে ! জন্তুর মতো চিৎকার করে বলে, “নির্লজ্জ , চরিত্রহীন- কি করছিলি তুই !”
হঠাৎ চোখ পরে ড্রয়িংরুমের সোফায় পা লম্বা করে বসে বিস্ফোরিত নেত্রে ইভার দিকে তাকিয়ে আছে তার শাশুড়ী !
জানা গেল কিছুক্ষন হলো মেয়ের বাসা থেকে শাশুড়ি এসেছেন, পানের বাটা ফেলে এসেছেন।এবাসায় পানের চল নেই বলে কাজের মেয়েটিকে পান, সুপারি , জরদা আনতে বাজারে পাঠিয়েছেন! শাহরিয়ার অফিস থেকে ফিরে বাইরের কাপড় ছাড়ছে এমন সময় শোনে মা হঠাৎ রান্নাঘরের টাইলসএ পা পিছলে পরে গেছে ! দৌড়ে এসে দেখে ,মা ভারী শরীর নিয়ে উঠতে পারছেননা ! ভাগ্যিস কোথাও কেটে যায়নি ! তবে ব্যথাটা ভালোই পেয়েছেন ! নিজে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না ! শাহরিয়ার যন্ত্রণাকাতর মাকে কোনরকমে কোলে নিয়ে সোফায় বসায়!

এসব ঘটনা যখন ঘটছে তখন দরজার ওপাশে ইভা বিরতিহীন কলিং বেল বাজিয়ে চলেছে ! আজ সহ্যের সকল সীমা পেরিয়ে যায় !
যদিও শাহরিয়ারের মা ইভার সাথে বিয়ের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র রাজী ছিলেন না , তবুও একমাত্র ছেলের পছন্দের মূল্য দিতে নিমরাজী হয়েছিলেন! ইভা সন্তানের মা হতে না পারায় গরপরতা সকল শাশুড়ীর মতো বিষ উদগিরন না করলেও ছেলের বৌর প্রতি অপছন্দের মাত্রাটা ঘনীভূত হয়েছে ! আজ নিজের ছেলের এই অবস্থা দেখে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলেন !
শাহরিয়ার ইভাকে ডেকে বেডরুমে নিয়ে গিয়ে শান্ত স্বরে থেমে থেমে বলে, “আমি আর তোমার সাথে এক ছাঁদের নিচে বাস করতে পারছি না, আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি !”
সুটকেসে কাপড় গোছাচছে ইভা ! গোছাচছে বললে ভুল হবে ! অপ্রকৃতসথর মতো শাড়ি কাপড় টেনে টেনে এলোমেলো করছে কেবল !সুটকেসে কি ভরছে, কার্পেট এ কি ফেলছে -খেয়াল নেই ! যে মানুষটি শত বাক্যবাণে, শত অপমানে , শত অন্যায় আবদারে নিশ্চুপ থাকে , সেই শাহরিয়ারের স্পষ্ট কন্ঠে বলা আজকের কথাটাই আইন - এর নড়চড় কেবল বিধাতাই বুঝি করতে পারেন !

সব ছাপিয়ে একটা কথাই মনে আসে ইভার - আজ যদি তাদের একটা সন্তান থাকতো-তবে কি এত সহজে তাকে চলে যেতে বলতে পারতো শাহরিয়ার !
দুইটা সুটকেস আর একটা হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে আলুথালু বেশে দরজার দিকে রওনা দেয় ইভা- পা কাঁপছে !চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে !!! এত কষ্ট ! এত কষ্ট কেন পৃথিবীতে !!!????
এমনসময় বলিষ্ঠ দুটা হাত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ইভাকে! নাকে সেই অভ্যস্ত শরীরের গন্ধ ! ঘাড়ের কাছে নরম দাড়ির চিরচেনা স্পর্শ! সেই মৃদু কন্ঠ”আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছ ? আমার পাগলী বউটাকে ছেড়ে থাকতে পারব আমি ?পুরো দুনিয়ায় ‘আমার তুমি’ আর ‘তোমার আমি ‘ ছাড়া কেউ আছে ???” তারপর উচ্চারণ করে পৃথিবীর সেই সবচেয়ে পুরানো কথা যা কখনও পুরানো হয়নি- “ভালবাসি””কোন কিছুর জন্য না, সংসারের মায়ায় না, সন্তানের আশায় না-কেবল মাত্র তোমার জন্যই তোমাকে ভালবাসি !”

সন্দেহ সাথে কিছু লজ্জা
04/04/2024

সন্দেহ সাথে কিছু লজ্জা

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sabrina mishti blogs posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share