24/12/2023
১৬৮ সূর্যসেন হল, #ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক সুখ-দুঃখের, নানান চড়াই-উৎড়াইয়ের স্মৃতি জড়িত। আমার বিশ্ববিদ্যলয় জীবনের প্রথম বর্ষের অর্ধেকের বেশী সময় কাল এই সূর্যসেন হলের ১৬৮ নম্বর রুমেই কেটেছে। এই রুমেই নিয়মিত আসতেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, মালেক রতন, আখতারুজ্জামান, খায়রুজ্জামান খোকন সহ আরও অনেকেই।
মূলতঃ অগ্রজ সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের আহবানেই এই রুমে আমি সরাসরি #সিলেট থেকে (রাতের মেইলে সকালে) #ঢাকা এসেই উঠি। তখন সাজিদুর রহমান ফারুক রুমে ছিলেন না। কোন এক হোটেলে নূরুল ফজল বুলবুল, রাউফুন বসু নিয়া সহ ছিলেন। কিন্তু সংবাদ বাহক আমাকে যথাযথভাবেই সংবাদ পৌছে দিয়েছিলেন। ১৬৮ নম্বর রুমে ঢুকেই মনটা আনন্দে ভরে গেলো। কারণ সেই রুমে তখন অবস্থান করছিলেন আরেক অগ্রজ সালেহ আহমেদ রাণু। রাণু আমাকে সব সময় মামা বলে সম্বোধন করতেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে, যেন উনার একেবারে আপন মামা হিসেবে। তার কারণ হলো আমার আব্বাকে উনারা সবাই (ভাই বোন) নানা বলে সম্বোধন করতেন। সেই সুবাধে সালেহ আহমেদ আমাকে মামা বলে ডাকতেন। সেই সময় উনার সহপাঠী গ্রুপ #সাইকোলজির তিথিদের পুরো গ্রুপ আমাকে উনার আপন মামা মনে করতেন, কারণ রাণু সেভাবেই উনাদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যেকারণে উনাদের সবাই বেশ সমীহ এবং স্নেহও করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালিন সময়ে সামরিক শাসনের যাতাকলে পরে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা যেমন আছে, তেমনি অনেক মধুর আনন্দময় স্মৃতিও রয়েছে, সেই সাথে সূর্যসেন হল কেন্দ্রিক সিট সমস্যার নিষ্টুর এবং তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে, যদিও আল্লাহপাক আমাকে উনার বিশেষ রহমত এবং দয়া দ্বারা সেই সব বিরূপ অবস্থা থেকে মিরাকলভাবেই উদ্ধার সহ সব সুষ্টু ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ পাকের হাজারও লাখো শোকরিয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পরে সালেহ আহমেদ রাণুর সাথে আমার আর দেখা সাক্ষত হয়নি। অথচ দীর্ঘদিন দুজন একই রুমে, একই হলে নানা স্মৃতি নিয়ে কাঠিয়েছি। ঢাকা শহরে অনেক জায়গা দুজন বেরিয়েছি। রানু #রোটার্যাক্ট ক্লাব করতেন। বলা যায় অনেকটা জোর করেই আমাকে রোটার্যাক্ট আন্দোলনে জড়িত করেছিলেন। দুজন এক সাথে ভ্যালেরির সাথে মিলে অনেক #চক্ষুশিবির, ব্লাড ডোনেশন প্রোগ্রাম করেছি।
চাকরি জীবনে যখন উনি এমসি কলেজের #প্রফেসর হয়ে আসেন, পরে প্রিন্সিপ্যালের দায়িত্ব পালন করেন-তখন তৃতীয় মাধ্যমে উনি একবার যোগাযোগ করেছিলেন। আমি আমার সাধ্যমতো সমস্ত ক্ষমতাপ্রয়োগ করে উনার জন্য কাজ করেছি। ইচ্ছা ছিলো দেশে গেলে সাক্ষাত করব, অনেক জমানো কথা দুজনে আলাপ করব।
সোশ্যাল মিডিয়ায় উনাকে সরব দেখেছি মাঝে মধ্যে। কখনও অসুস্থ্যতার খবর শুনিনি। সেদিনই জানলাম, উনি অসুস্থ্য ছিলেন। আল্লাহপাকের ডাকে উনি চির নিন্দ্রায় চলে গেছেন। মেধাবী এক শিক্ষককে জাতি হারালো।
আমরা অনেক দলীয় ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দাফন করতে দেখেছি। সালেহ আহমেদ রানুর মতো মেধাবী প্রিন্সিপ্যালকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এজাতির দাফন করা উচিৎ ছিল। কেননা জাতির বুদ্ধিজীবী-জাতির বিবেক, মানুষ গড়ার কারিগরদেরকেও জাতি যদি সম্মান না দেয়, তাহলে আর কাকে দেবে..
আল্লাহপাক উনাকে #জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে #অধিষ্ঠিত করুন-এই আমাদের প্রার্থনা। আর পরিবারকে দান করুন ছবরে জামিল। #আমিন ছুম্মা আমিন।