18/04/2024
সমাজের ট্যাবুকে কীভাবে ট্যাবু হিসেবেই মুভিতে তুলে আনা যায়, সেটা দেখিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।
সমকামিতা, শিশুকামিতা যে একটা বিকৃতি, হুমায়ূন সেটা চমৎকারভাবে তুলে এনেছিলেন ঘেটুপুত্র কমলা সিনেমাতে।
তখনও ফেসবুক ছিলো। আজ থেকে এক যুগ আগের কথা। অথচ একটা মানুষও এই মুভি সমন্ধে খারাপ কথা বলেছে? বা বয়কট হুমায়ূন স্লোগান দিয়েছে? রিঅ্যাক্ট করেছে?
করে নাই। কারণ হুমায়ূন সমকামিতাকে তুলে এনেছিলেন ক্যান্সার হিসেবেই। ওটাকে তিনি মানুষকে নর্মাল বলে খাওয়াতে যাননি।
বরং উনি দেখিয়েছিলেন, এই যৌন বিকৃতির স্বীকার হয়ে বাংলাদেশে একটা সময় কত শিশু মারা গেছে। জমিদাররা কতটা জুলুম করেছে নিছক খেলার বশে।
মনে আছে, সিনেমাটা দেখার পর যখন শুয়া উড়িল, উড়িল জীবেরও জীবন, শুয়া উড়িল রে...গানটা বেজে উঠলো, আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো।
আমি জানি, সবার অভিজ্ঞতাই কম বেশি সেইম।
অথচ সিনেমাটাই তো ছিলো সামাজিক ট্যাবু নিয়ে, যেই ট্যাবু নিয়ে কথা বলতেও বাংলাদেশের লোকজন এখনও দ্বিধা করে। অথচ সেই ২০১২ সালে এই ট্যাবু নিয়ে মুভি বানাইয়া হুমায়ূন লোকজনরে কান্দাইয়া ছেড়েছেন।
কে বলেছে বাংলাদেশের মানুষ আর্ট নিতে পারে না? কে বলেছে বাংলাদেশের মানুষ ব্যতিক্রম কিছু দেখলেই রিঅ্যাক্ট করে?
হিজড়াকে মেইন ক্যারেক্টার করে হুমায়ূন একটা বইও লিখেছেন। নাম 'আমি এবং আমরা'। সেখানে হিজড়া ছেলেটার জন্য এতো মায়া হয়, কই, কেউ তো কোনদিন এই বইয়ের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত একটা বলে নাই?
কারণ, হুমায়ূন কোনদিন আলবাল বুঝাইয়া লোকজনরে বিকৃত কোন ধারণা গেলাইতে চান নাই। যতটুকু সমস্যা এক্সিস্ট করে, অতোটুকুই আনসেন।
আজকেও আপনি হিজড়াদের মানবেতর জীবন নিয়ে কোন সিনেমা বানান, মানুষ ঐটা দেখে চোখের জল ই ফেলবে।
বাট আপনি যখন দেখানোর চেষ্টা করবেন, সেক্স পরিবর্তন করা "স্বাভাবিক", পেনিস থাইকাও মেয়ে হওয়া "নর্মাল", তাহলে মানুষ কেন প্রতিবাদ করবে না?
সমস্যারে সমস্যা হিসেবে দেখান। মানুষ কিচ্ছু বলবে না।
ঘুষ খাওয়া একটা অপরাধ। একটা বিকৃতি। এইটাকে যদি স্বাভাবিক হিসেবে দেখান, মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাবেই। তার জন্য মানুষকে প্রতিক্রিয়াশীল না বলে বরং নিজেদের সমস্যাটা স্বীকার করে নেন।
অস্বাভাবিক বিকৃতিরে আপনি স্বাভাবিক বলে চালাইয়া দিবেন, আর ঐটা নিয়ে হইচই হলে তখন মানুষ খারাপ, মানুষ আর্ট বোঝে না বলে ভিক্টিম সাজলে হবে?
কোনটা আর্ট, আর কোনটা ধান্দাবাজি, সেইটা এই দেশের মানুষ খুব ভালো করেই বোঝে।
বোঝে বলেই হুমায়ূনের ঘেটুপুত্র কমলা দেখে যেই মানুষ চোখের পানি ফেলে, সেই মানুষই আবার এলজিটিভির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
এর মধ্যে হিপোক্রেসি নাই। বরং অত্যন্ত সুন্দর একটা সচতনতা আছে বলেই আমার বিশ্বাস।
© সাদিক খান