newsexpress24.com

  • Home
  • newsexpress24.com

newsexpress24.com We come to change news idea and give people right idea.

তীব্র গরমে তাপের সাথে সাপও বাড়ে যে কারণেনিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : তীব্র গরমে মানুষের মধ্যেই যে কেবল হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়...
01/05/2024

তীব্র গরমে তাপের সাথে সাপও বাড়ে যে কারণে

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : তীব্র গরমে মানুষের মধ্যেই যে কেবল হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়, তা নয়। একই অবস্থা তৈরি হয় সাপের ক্ষেত্রেও। দাবদাহে বিষাক্ত সাপও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সাপ নিয়ে কাজ করে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ বলছে, দেশে বর্তমানে যে দাবদাহ চলছে তাতে সাপের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশংকা রয়েছে। এ সময়ে মানুষকে সতর্ক থাকার কথাও বলছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির সহ-সভাপতি মো. জোবাইদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা বেশ কয়েকবছর যাবত সাপে কাটা নিয়ে সচেতনতা তৈরি এবং সাপ উদ্ধারে কাজ করছেন।
গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ এর তুলনায় এবার সাপে কাটার প্রবণতাও বেশি দেখা যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে কল পান। এছাড়া সাপ উদ্ধারের জন্যও তাদের কাছে ফোন আসে।
বাংলাদেশে বন বিভাগের আওতায় যাদের প্রশিক্ষণ ও সনদ রয়েছে তারা বন্যপ্রাণী উদ্ধারের জন্য কাজ করতে পারে।
“গত বছরের তুলনায় এবার আমাদের কাছে আসা এমার্জেন্সি কলের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন আমরা চার পাঁচটি এমার্জেন্সি কল পাচ্ছি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি বিদ্যার অধ্যাপক অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, সাপ ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণি। গ্রীষ্মকালে সাপ বেশি সক্রিয় থাকে এবং শীতকালে কম সক্রিয় থাকে।
“আমাদের দেশের কথা চিন্তা করলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের কয়েক সপ্তাহ বাদ দিলে, সাপ সাধারণত পুরো বছর সক্রিয় থাকে,” বলেন অধ্যাপক খান।

সাপ ঠান্ডা রক্তের প্রাণি
যুক্তরাষ্ট্রের এমোরি ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক সাপের আচরণের সাথে গরমের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন।
গবেষণায় তারা বলেছেন, তাপমাত্রা শূন্য দশমিক আট ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়লে সাপের কাটার হার ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
“বাইরের তাপমাত্রা সাপের শরীরের তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে। এর ফলে তাদের আচরণও পরিবর্তন হয়,” গবেষণায় বলা হয়েছে।
গবেষণাটি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায়। প্রায় সাত বছর ধরে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া এবং কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে সাপের কামড়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব পার্কস এন্ড ওয়াইল্ড-লাইফ বলছে, সাপ হচ্ছে ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণি। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে তারা 'এক্টোর্থামিক'।
সাপ তীব্র ঠাণ্ডাও সহ্য পারেনা। তখন তারা হাইবারনেশনে চলে যায় গর্তের ভেতরে। অন্যদিকে, তীব্র গরমও এড়িয়ে চলে সাপ। তাপমাত্রা যখন তীব্র হয় তখন সাপ খুব ভোরে, সন্ধ্যায় এবং রাতে চলাচল করে। তখন তারা খাবারের জন্য সক্রিয় হয়।
গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমের সময় সাপ ছায়া, অন্ধকার, আর্দ্রতা ও খাবার খোঁজে। সাপ নিজেকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য আর্দ্র পরিবেশ খোঁজে। সেজন্য অনেক সময় তারা মানুষের ঘরের আশপাশে চলে আসতে পারে।
যেসব বাসায় এ ধরণের পরিবেশ থাকে সেখানে সাপের আনাগোনা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটাই স্বাভাবিক।
এ ধরণের পরিবেশ না থাকলে সেখানে সাপ আসার সম্ভাবনা খুবই কম। সাপ খোলামেলা জায়গায় এবং উন্মুক্ত অবস্থানে থাকতে খুবই অপছন্দ করে।

সাপে কাটা উপেক্ষিত বিষয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারাবিশ্বে অসংক্রামক রোগের মধ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যু বিষয়টি এখনো বেশ উপেক্ষিত আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৪৫ থেকে ৫৫ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়।
এর মধ্যে ৮০ হাজার থেকে ১লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষ মারা যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে।
প্রতি বছর সারা বিশ্বে সাপের দংশনের শিকার হয় যে ৪৫ লাখ মানুষ, তাদের মধ্যে ২৭ লাখ পুরুষ, নারী এবং শিশু শারীরিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয় বলে জানাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল স্নেকবাইট ইনিশিয়েটিভ।
সাপের কামড়ের সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে এই সংস্থা।
"সাপের দংশন যে কতটা ব্যাপক সমস্যা, বহু মানুষই তা বোঝে না," ব্যাখ্যা করেছেন আমেরিকায় অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে সংস্থা সাপের বিষ প্রতিরোধী রসায়ন, এর ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করছে তার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লেসলি বয়ার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, সাপের দংশন কোন কোন সম্প্রদায়ের জন্য বিশাল একটা সমস্যা, এবং সেই বিবেচনা থেকে তারা সম্প্রতি সর্প-দংশনের কারণে মানুষের শরীরে ঘটা বিষক্রিয়াকে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটা উপেক্ষিত রোগ হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করেছে।
সাপে কাটাকে এখন বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে উপেক্ষিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে - যে সমস্যা বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি কী?
এর আগে ২০২৩ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ তিন হাজার মানুষ সর্প দংশনের শিকার হয় এবং তাদের মধ্যে সাত হাজার ৫১১ জন প্রতি বছর মারা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট এ গবেষণাটি করেছিল।
সাপের কামড়ের সব ঘটনার মধ্যে এক চতুর্থাংশ বিষাক্ত, যার ১০ দশমিক ছয় শতাংশ শারীরিক ও এক দশমিক নয় শতাংশ মানসিক অক্ষমতা দেখা যায়।
সাপের কামড়ের মধ্যে ৯৫ শতাংশ ভুক্তভোগী গ্রামীণ অঞ্চলের এবং নারীদের তুলনায় এক দশমিক চার শতাংশ বেশি পুরুষ সাপের কামড়ের ঝুঁকিতে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যেসব জনগোষ্ঠী সাপের কামড়ের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে তাদের মধ্যে রয়েছেন গ্রামের দরিদ্র মানুষ, কৃষি শ্রমিক, জেলে।
বাংলাদেশে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫-২০ আগের তুলনায় বেড়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল।
“আগে নিউজ এভাবে ছড়াতো না। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারণে দ্রুত খবর ছড়িয়ে যাচ্ছে। সবাই বিষয়টা দ্রুত জানতে পারছে। এজন্য মনে হচ্ছে সাপে কামড়ের ঘটনা বেড়েছে,” বলছিলেন অধ্যাপক খান।
সাপ সাধারণত দীর্ঘজীবী হয়। ছোট সাপ ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বড় সাপ ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, সাপের মধ্যে নিরামিষভোজী নেই। সাপ নিশ্চিতভাবে মাংস খায়।
যেসব সাপ শিকার করে বিভিন্ন ধরণের পোকামাকড়, মাছ ও অন্যান্য সরীসৃপ প্রাণি তাদের খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত।
কিছু কিছু সাপ ডিমও পছন্দ করে। যেসব সাপ শিকার করে তারা সাধারণত শিকার সরাসরি গিলে ফেলে।
গবেষকরা বলছেন, সাপ সাধারণত নিভৃতচারী প্রাণি। তারা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করেনা।

বর্ষাকালও বিপজ্জনক
বাংলাদেশে বর্ষাকাল এলেই গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে ওঠে সাপের দংশন। বিষধর সাপের দংশনে হরহামেশাই মানুষের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়, যার ফলে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
বাংলাদেশে সর্প দংশনের হার বর্ষাকালে বাড়ে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ মে, জুন এবং জুলাই - এই তিন মাস সাপের কামড় এবং তার কারণে মৃত্যুর ঘটনা বেশি দেখা যায়।
কেননা অতি বৃষ্টিপাতের কারণে সাপের আবাসস্থল বা গর্তগুলো ডুবে যায়। তখন তারা কোন উঁচু জায়গায়, অনেক সময় মানুষের বসতবাড়ির আশেপাশে বিচরণ করে।
ফলে একটু অসাবধানে থাকলেই সাপে কাটার ঝুঁকি এসময় অনেক বেড়ে যায়।
যে কোনো বিষধর সাপ কাটার পর অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ জরুরি হয়ে যায়। অন্যথায় রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।
রোগীর শরীরে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ সবচেয়ে জরুরি হলেও বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এখনও অত্যাবশ্যকীয় এই ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই।
অ্যান্টিভেনম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় এসেনশিয়াল ড্রাগ বা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকাভুক্ত হলেও, বাংলাদেশে সাপের কামড়ের বিষয়টি এখনও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়।

অ্যান্টিভেনম জরুরি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি এম এ ফয়েজ সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা নিয়ে বই লিখেছেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, গোখরো সাপের দংশনের গড়ে আট ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর এবং চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি।
সাপের কামড় বা দংশনের পরে, দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।
সাপ কামড়ানোর পর একজন রোগীকে ১০টি করে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিতে হয়। এতে ১০টি ভায়াল মিলে একটি ডোজ হয়ে থাকে।
বিষের পরিমাণ এবং বিষাক্ততার মাত্রা বেশী হলে সাপে কামড়ানো ব্যক্তির উপর এক বা একাধিক ডোজ অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসকরা মূলত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
এসব লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, শরীর অসাড় হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো, বুক ধরফর করা, শ্বাসকষ্ট, অসংগত ব্যবহার, ক্ষণিকের জন্য রক্তচাপ কমা।
বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনম সাপ ভেদে যেমন আলাদা হয়ে থাকে, তেমনি একই অ্যান্টিভেনমে কয়েক ধরণের বিষধর সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করা যায়।
বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, সেটি মূলত চারটি সাপের বিষের একটি 'ককটেল' বা মিশ্রণ, যা কিছু সাপের দংশন নিরাময়ে কাজ করে। বাকি ক্ষেত্রে সেগুলো আংশিক কাজ করে।
অনেক সময় সাপের কামড়ের ধরণ দেখে, আবার রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন যে এটি বিষাক্ত সাপে কামড়েছে নাকি বিষহীন সাপে কামড়।
তারপরও সাপে কামড়ানোর সময় সেটি কী প্রজাতির সাপ বা সেটি দেখতে কেমন - তা লক্ষ্য করতে বা ছবি তুলে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সাপের এই বর্ণনা পরবর্তীতে চিকিৎসা পরিকল্পনায় সাহায্য করতে পারে বলে তাদের মত।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
(এসকে/ ০১ মে, ২০২৪)

চলমান তাপপ্রবাহের অবস্থাতথ্যসূত্র: প্রথম আলো
30/04/2024

চলমান তাপপ্রবাহের অবস্থা
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

ইসরায়েলিদের গর্ব চুরমার করে হামাসের হামলা নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ঘটনার সময় বেশিরভাগ ইসরায়েলি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। শন...
10/10/2023

ইসরায়েলিদের গর্ব চুরমার করে হামাসের হামলা

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : ঘটনার সময় বেশিরভাগ ইসরায়েলি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। শনিবার দিনটি ছিল ইহুদিদের পবিত্র উৎসবের একটি দিন সাব্বাত ছিল। এই দিনে ইসরায়েলিরা বাড়িতে বসে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা করছিলেন। কেউ কেউ সিনাগগ কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও আড্ডা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এক ঝাঁক রকেটের হামলার মুখোমুখি হন তারা। যা ছিল একপ্রকার নজিরবিহীন হামলা।
অনেক বছর ধরে ফিলিস্তিনের শহর গাজা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পেরেছিল ইসরায়েল। কিন্তু গত শনিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের সেই সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। হামাস গাজা থেকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলা কীভাবে চালিয়েছে, তা জানতে স্থানীয় লোকজন ও সশস্ত্র যোদ্ধাদের করা ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।

হামলার সূচনা রকেট নিক্ষেপের মাধ্যমে
স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রকেট আসতে শুরু করে। ইসলামী সশস্ত্র সংগঠনটির (হামাস) হাতে গাজার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যারা যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তারা মাঝেমধ্যেই রকেট ছুড়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়।
প্রথম প্রথম হামাসের ছোড়া রকেট ইসরায়েলের উন্নত আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ঠেকিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু গত শনিবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে হামাসের ছোড়া হাজার হাজার রকেট তা প্রতিহত করতে পারেনি।
হামলার ভয়াবহতা দেখে মনে হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনা করে অস্ত্র মজুত রাখা হয়েছিল। হামাস বলছে, প্রথম দফার তারা অন্তত ৫ হাজার রকেট ছুড়েছে। তবে ইসরায়েলের দাবি, এই সংখ্যা অর্ধেক।
গাজা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমে রকেট ছোড়া হয়েছিল। এ সময় সাইরেন বাজিয়ে সতর্ক করা হয়। হামলার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
রকেট ছোড়ার পাশাপাশি গাজা সীমান্তে শক্তিশালী সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে হামাস যোদ্ধারা।
২০০৫ সালে গাজা থেকে সেটেলার ও সেনাদের প্রত্যাহার করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু তারপরেও সেখানকার আকাশ, সমুদ্র ও সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতেই রয়েছে। এছাড়া গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনারা নিয়মিত টহল দেয়। সীমান্তের কোথাও কোথাও কংক্রিটের দেয়াল, কোথাও আবার বেড়া রয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ক্যামেরা ও সেন্সরও স্থাপন করা হয়েছে সেখানে। কিন্তু সব কিছু ফাঁকি দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দফায় দফায় এসব সুরক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলা হয়।

হামাস কীভাবে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ল?
কিছু কিছু হামাস যোদ্ধা বিকল্প উপায়ে সীমান্ত পার হয়েছেন। অনেকেই প্যারাগ্লাইডিং করেছে ইসরায়েলে ঢুকেছে (ফুটেজে দেখা গেছে অন্তত ৭ হামাস যোদ্ধা এভাবে ইসরায়েলে ঢুকেছে)। আবার কেউ কেউ নৌকা নিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা সৈকত দিয়ে দুই দফায় হামাসের অনুপ্রবেশের চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় সময় সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে হামাসের সামরিক শাখা টেলিগ্রাম চ্যানেলে হামলার প্রথম ছবি প্রকাশ করে। স্থানটি ছিলো গাজা ক্রসিংয়ের সর্বদক্ষিণে কেরেম শালম। ওই ছবিতে একটি চেকপোস্ট দিয়ে হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে ঢুকতে দেখা গেছে। এ সময় অন্তত দুজন ইসরায়েলি সেনার লাশ মাটিতে পড়ে ছিল।
আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, পাঁচটি মোটরসাইকেলে চেপে সশস্ত্র যোদ্ধারা কাটাতাঁরের বেড়া পার হয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করছে। জায়গাটি আগেই কেটে রাখা হয়েছিল। প্রতিটি মোটরসাইকেলে দুজন যোদ্ধা ছিল। তাঁদের কাঁধে রাইফেল দেখা গেছে।
এক জায়গায় বুলডোজার দিয়ে বেড়া ভাঙতে দেখা গেছে। এ সময় সেখানে কয়েক ডজন নিরস্ত্র মানুষ ছিলেন। বেড়া ভেঙ্গে ফেলার পর খোলা জায়গা দিয়ে তারা দৌঁড়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েন। কেরেম শালম থেকে ৪৩.৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইরেজ নামের গাজা ক্রসিংয় দিয়ে দল বেঁধে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢোকেন।
হামাসের প্রচার শাখার একটি চ্যানেলে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে একটি কংক্রিটের প্রাচীর থেকে ধোঁয়া উড়ছে। যেকোনো হামলার আগেই ইসরায়েলের ওই চেকপোস্ট থেকে বার্তা দেওয়া হতো।
ভিডিওতে দেখা গেছে, একদল যোদ্ধা বিস্ফোরণ স্থলের দিকে ছুটে যাচ্ছে। রাইফেল হাতে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পড়া আটজন যোদ্ধাকে সেদিকে দৌঁড়ে যেতে দেখা যায়। একপর্যায়ে চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরে চেকপোস্টের মেঝেতে ইসরায়েলি সেনাদের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
হামাস যোদ্ধারা একটার পর একটা কক্ষ টার্গেট করেছিল। ভিডিও দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে, তারা অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত।
গাজায় সাতটি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণ করে। আর বাকি ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ মিশরের হাতে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ঢোকার রাস্তা বের করে ফেলে।

ইসরায়েলের অনেক ভেতরে হামলা চালানো হয়েছে
হামাস যোদ্ধারা গাজার সবগুলো ক্রসিং দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, তারা অন্তত ২৭টি স্থান থেকে হামলা চালিয়েছে। তারা চোখের সামনে যাকে পেয়েছে, তাকেই হত্যা করেছে।
গাজা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ইসরায়েলের শহর এসদেরতে হামলা করেছে হামাস। একট পিকআপ ট্রাকে করে শহর চষে বেড়িয়েছে তারা। ভেঙ্গে ফেলা ইরেজ ক্রসিংয়ের উত্তরে অবস্থিত আশকেলন শহরের খালি রাস্তায় অন্তত এক ডজন যোদ্ধাদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
একই দৃশ্য দেখা গেছে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন শহরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে হামাস যোদ্ধারা। রেইম শহরের কাছে একটি সংগীত উৎসবে বন্দুকধারীরা গুলি চালায়। মরুভূমিতে আয়োজিত ওই সংগীত উৎসবে একদল তরুণ-তরুণী অংশ নিয়েছিল।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন যে, কীভাবে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত একটি ভ্যানে করে তিন ঘণ্টা হামাস যোদ্ধারা শহর চষে বেড়িয়েছে। এ সময় তারা হামলা করার জন্য ইসরায়েলিদের খুঁজছিল।

সেনা ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে
সংগীত উৎসব ও অন্যান্য স্থান থেকে ইসরায়েলিদের জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ইসরায়েল জানিয়েছে, ১০০ সেনা ও সাধারণ মানুষ অপহরণ করা হয়েছে। বেরি শহরের একটি ফুটেজে দেখা গেছে চারজন সাধারণ মানুষকে হামাস যোদ্ধারা জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি।
এছাড়া, অনলাইনে আরও অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দেখা গেছে,গাজার ব্যস্ত সড়ক দিয়ে গুরুতর আহত ইসরায়েলিদের হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলি সাধারণ মানুষকে টার্গেট করার পাশাপাশি জিকিম ও রিমে দুটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেছে হামাস।
রিম শহরের কাছের একট সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ভিডিওতে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া বেশ কিছু গাড়ি সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। গোলাগুলিতে কতজন আহত হয়েছে সেটি অবশ্য জানা যায়নি।
হামাসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চ্যানেল থেকে একের পর এক ইসরায়েলি সেনার মরদেহের ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে ছবিগুলো আসল কি না, সেটি যাচাই করে দেখতে পারেনি বিবিসি।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার রকেট হামলায় শত শত ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। কেউ ভাবতেই পারেনি যে, এমন হতে পারে। প্রাণঘাতি ও দ্রুত এই হামলার ইসরায়েলকে হতবাক করেছে। এর কয়েকে ঘণ্টা পরেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, 'আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি'। (তথ্যসূত্র : বিবিসি)
(এসকে/১০ অক্টোবর, ২০২৩)

এলিয়েন খুঁজে পাওয়া ‘সময়ের ব্যাপার মাত্র’?নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মহাবিশ্বে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, অনেক বিজ...
07/10/2023

এলিয়েন খুঁজে পাওয়া ‘সময়ের ব্যাপার মাত্র’?

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক : মহাবিশ্বে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, অনেক বিজ্ঞানী এখন আর সে প্রশ্ন করেন না। বরং তাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কবে সেই প্রাণের খোঁজ মিলবে? বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ আশাবাদী যে, আমাদের জীবদ্দশায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হয়ত দূরের কোন গ্রহে জীবনের সন্ধান পাওয়া যাবে।
বৃহস্পতি গ্রহে মিশন পরিচালনা করছেন, এমন একজন বিজ্ঞানী আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, বরফে ঢাকা এই গ্রহে কোন প্রাণ না থাকলে সেটাও হবে অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার।
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহে জীবন থাকা সম্পর্কে ইঙ্গিত শনাক্ত করেছে। সেখানে পৃথিবীর মতো আরও অনেক গ্রহ রয়েছে বলে নাসা ধারণা করছে।
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ পাওয়া হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। সেজন্য এর মধ্যেই বেশ কিছু মিশন শুরু হয়েছে বা শুরু হতে যাচ্ছে।
স্কটল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্যাথরিন থেইম্যানস বলেন, "অসীম নক্ষত্র এবং গ্রহের একটি মহাবিশ্বে আমরা বসবাস করি। সেখানে অবশ্যই আমরাই শুধু একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী হতে পারি না।"
"এই মহাবিশ্বে আমরাই একা আছি কিনা, সে প্রশ্নে উত্তর খোঁজার মতো প্রযুক্তি এবং ক্ষমতা এখন আমাদের আছে," তিনি বলেন।

‘গোল্ডিলক্স জোন’
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে যে টেলিস্কোপগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এখন দূরের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করতে পারে। পৃথিবীর মতো জীবিত প্রাণী দ্বারা উৎপাদিত হয়, এমন রাসায়নিকের সন্ধান করতে পারে।
এ মাসের শুরুর দিকে সেখানে বড় ধরনের একটি আবিষ্কার হয়, ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন গ্যাস শনাক্ত করা হয়, যা পৃথিবীতে সামুদ্রিক জীব দ্বারা উৎপাদন হয়ে থাকে।
এই গ্রহটিকে বিজ্ঞানীরা ডাকেন ‘গোল্ডিলক্স জোন’ নামে।
যে নক্ষত্রকে ঘিরে ওই গ্রহ ঘুরছে, তার থেকে এমন দূরত্বে সেটি রয়েছে, যাতে সেটির ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠাণ্ডা হয় না।
সেখানে তরল পানি থাকার জন্যও সঠিক তাপমাত্রা রয়েছে, যা জীবন থাকার জন্য অপরিহার্য।
বিজ্ঞানীদের একটি বিশেষজ্ঞ দল আশা করছে, আগামী এক বছরের মধ্যেই তারা জানতে পারবেন যে, আগ্রহ উদ্দীপক এসব ইঙ্গিত সেখানে আসলেই জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করছে কিনা।
যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নিক্স মধুসূদন বিবিসিকে বলেছেন, এসব ইঙ্গিত যদি সত্যি বলে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তা ‘জীবনের সন্ধান সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনাকে আমূল বদলে দেবে।‘
"যদি আমরা এই গ্রহে জীবনের চিহ্ন খুঁজে পাই, তাহলে এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে যে, মহাবিশ্বে এরকম আরও জীবন থাকতে পারে।"
তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, পাঁচ বছরের মধ্যে মহাবিশ্বের জীবন সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার 'একটি বড় পরিবর্তন' হবে।
কিন্তু যদি এই গ্রহের জীবনের খোঁজ পাওয়া না যায়, তাহলে বিজ্ঞানীদের এই দলের তালিকায় আরও ১০টি গোল্ডিলক্স গ্রহ রয়েছে, যেগুলো নিয়ে তারা গবেষণা করবেন।
এরপরেও আরও কিছু গ্রহের তালিকা রয়েছে তাদের কাছে।
মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধানে যেসব গবেষণা চলছে, তার এই প্রকল্প সেগুলোর মধ্যে একটি মাত্র।
অন্য প্রকল্পগুলোর কিছু কিছু সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোয় প্রাণের সন্ধান করছে। আবার কিছু প্রকল্পে নজর দেয়া হচ্ছে মহাকাশের আরও গভীরে।
নাসা ২০৩০ সাল নাগাদ ‘হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (এইচডব্লিউও) বা বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করার একটি অনুসন্ধান কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করছে।
সেখানে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল চিহ্নিত করতে এবং পর্যালোচনা করতে সক্ষম হবে।
এই দশকের শেষের দিকে আসছে বিশাল বড় টেলিস্কোপ (এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ-ইএলটি)।
চিলির মরুভূমি থেকে সেটা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
অন্য টেলিস্কোপগুলোর তুলনায় সেটিতে বড় আকারের আয়না থাকবে, ফলে সেটি গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল আরও ভালোভাবে দেখতে পারবে।
এগুলো এতই অবিশ্বাস্য শক্তিশালী যে, শত শত আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে আলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ শনাক্ত করতে পারে।

সৌরজগতে কি প্রাণ আছে?
যখন অনেক বিজ্ঞানী দূরের গ্রহগুলোয় প্রাণ খুঁজছেন, তখন বিজ্ঞানীদের আরেকটি দল জীবন খুঁজছে সৌরজগতের গ্রহগুলোয়।
জীবনের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি জায়গা হতে পারে বৃহস্পতির বরফে ঢাকা চাঁদ, ইউরোপা।
এটি একটি সুন্দর উপগ্রহ যার পৃষ্ঠে ফাটল রয়েছে যা দেখতে অনেকটা বাঘের ডোরাকাটার মতো।
ইউরোপার বরফের পৃষ্ঠের নীচে একটি মহাসাগর রয়েছে, যেখান থেকে জলীয় বাষ্পের বরফ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।
নাসার ক্লিপার এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএর জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার (জুস) মিশন উভয়ই ২০৩০ এর দশকের প্রথম দিকে সেখানে পৌঁছাবে।
শনির একটি চাঁদে অবতরণ করার জন্য ড্রাগনফ্লাই নামে একটি মহাকাশযানও পাঠাচ্ছে নাসা।
সেখানে কার্বন-সমৃদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি হ্রদ এবং মেঘ রয়েছে, যা উপগ্রহটিকে একটি কমলা রঙের কুয়াশার আবরণ তৈরি করেছে।
পানির পাশাপাশি এসব রাসায়নিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বলে ধারণা করা হয়।
মঙ্গল গ্রহে জীবিত প্রাণী নেই বলেই এখন মনে করা হচ্ছে।
তবে জ্যোতির্জীববিদরা মনে করেন, এই গ্রহের একসময় ঘন বায়ুমণ্ডল এবং মহাসাগর ছিল, যা জীবন ধারণের জন্য সহায়তা করে।
বর্তমানে সেখানে নাসার রোভার যান একটি গর্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে, যা একসময় একটি প্রাচীন নদীর ব-দ্বীপ ছিল।
এরপর ২০৩০ সালের দিকে এসব নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসার পর সেগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা আরও পরিষ্কার ধারণা পাবেন।

ভিনগ্রহের প্রাণীরা কি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে?
অনেক বিজ্ঞানী এই ধারণাকে সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বলে মনে করলেও ভিনগ্রহ থেকে রেডিও সিগন্যাল আসছে কিনা, তা নিয়ে বহু বছর ধরেই গবেষণা চলছে।
সার্চ ফর এক্সটা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Seti) ছাড়াও আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা করছে।
যদিও বিশাল মহাবিশ্ব জুড়ে এলোমেলোভাবে চালানো এসব অনুসন্ধানে এখনো কোন সম্মিলিত ফলাফল আসেনি, কিন্তু অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত হলে তারা তখন সেদিকে অনুসন্ধানের জন্য গুরুত্ব দিতে পারবে।
ত্রিশ বছর আগেও অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে, এমন কোন গ্রহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রমাণ ছিল না।
কিন্তু এখন এরকম পাঁচ হাজারের বেশি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা নিয়ে গবেষণা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
কেট২-১৮বি গবেষণা দলের একজন সদস্য কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির শুভজিৎ সরকার মনে করেন, সমস্ত উপাদানগুলো একটি আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে।
"যদি আমরা জীবনের লক্ষণ খুঁজে পাই, তাহলে সেটি বিজ্ঞানের জন্য বিশাল এক বিপ্লব হবে। তার ফলে মানবজাতির নিজের এবং মহাবিশ্বে তার অবস্থানের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশাল একটি পরিবর্তন এনে দেবে," তিনি বলেন। (তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা)
(এসকে/০৭ অক্টোবর, ২০২৩)

নতুন কৌশলে গুজব ও ভুয়া খবরনিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: গুজবনির্ভর সংবাদ পরিবেশন বা ভুয়া খবর প্রচার বেশ পুরোনো বিষয়। ফ্যাক্ট চে...
21/09/2023

নতুন কৌশলে গুজব ও ভুয়া খবর

নিউজ এক্সপ্রেস ডেস্ক: গুজবনির্ভর সংবাদ পরিবেশন বা ভুয়া খবর প্রচার বেশ পুরোনো বিষয়। ফ্যাক্ট চেকারদের গ্রুপগুলো সেগুলো আগে ধরিয়েও দিয়েছে। তবে এবার এসেছে ভুয়া কলাম বা ভুয়া বিশেষজ্ঞদের কলাম।
সেগুলো ইংরেজিতে কিছু অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমও ছেপেছে। এএফপির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লেখক হিসেবে যাদের নাম ও পরিচয় দেয়া হয়েছে ওইসব কলামে, বাস্তবে তাদের অস্তিত্বই নেই। এরকম মোট ৩৫ জন ভুয়া কলামিষ্টের ৭০০ নিবন্ধ গত এক বছরে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো সরকারের পক্ষে প্রশংসা করে লেখা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া উন্নয়ন কর্মসূচি, কূটনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রশংসা করে কথিত ওই নিবন্ধগুলো দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এএফপির অনুসন্ধান বলছে, এসব লেখকভুয়া পরিচয়, ছবি এবং নামব্যবহার করেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া, ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের সাউথ এশিয়া ব্রিফসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসব লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
কথিত বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ আবার প্রকৃত বিশ্লেষকদের নামে বানোয়াট মন্তব্যও উদ্ধৃত করেছেন। লেখাগুলোতে বতর্মান সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। বিশেষ করে চীনের প্রতি জোরালো সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
কথিত কলামিস্ট হিসেবে আলোচিত নামগুলোর মধ্যে ১৭টির সঙ্গে পশ্চিমের এবং এশিয়ার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত সংযোগ দেখা যায়। তাদের মধ্যে ৯ জন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন বলে পরিচয়ে লিখেছেন, সেসব বিশ্ববিদ্যালয় এএফপিকে নিশ্চিত করেছে, ওইসব নাম তারা কখনো শোনেনি। এসব কলামিস্টের মধ্যে আটজন যেসব ছবি ব্যবহার করেছেন, সেগুলো অন্য মানুষের। তাদের মধ্যে ভারতের একজন জনপ্রিয় ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারের ছবিও রয়েছে।
কথিত লেখকদের একজনের নাম ডরিন চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার সমালোচনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশংসা করে অন্তত ৬০টি নিবন্ধ লিখেছেন। ডরিন চৌধুরী তার পরিচয়ে একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর ছবি ব্যবহার করেছেন। তিনি নেদারল্যান্ডসের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন বলে জানিয়েছেন, সে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ তার নামে কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি।
ব্যাংকক পোস্ট এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের একটি ব্লগসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন ফুমিকো ইয়ামাদা নামে একজন। তাকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বলা হয়েছে। তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উপস্থিতির কোনো প্রমান নেই এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে সেখানে গবেষণার কোনো ক্ষেত্রও নেই।
নেদারল্যান্ডসের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজের একজন অধ্যাপক জেরার্ড ম্যাকার্থি বলেছেন, পৃথ্বীরাজ চতুর্বেদী নামে মিয়ানমারের প্রতি ‘পশ্চিমা দ্বিচারিতার' নিন্দা করে একটি নিবন্ধ তার চোখে পড়েছে। এতে তার নামে সম্পূর্ণ বানোয়াট উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক গুজব বা ফেক নিউজের প্রবণতা বেশ পুরোনো। এর উদ্দেশ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করা। আবার অনলাইনে লাইক, ক্লিক পাওয়াও একটা লক্ষ্য। এই গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনি, সাম্প্রদায়িক হামলা ও নিরীহ মানুষের ক্ষতির কারণ ঘটছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য সরকারের অনুদান নিয়েছেন- সম্প্রতি এরকম একটি ব্যাংক চেকের ফেক ছবিও বেশ ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস-এর গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন রহমানের নেতৃত্বে ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ' টিম কাজ শুরু করে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। তার নিয়মিতভাবে পেশাদার হিসেবে গুজব, ফেক নিউজ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, " শুরুর দিকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইনে নানা ধরনের ফেক নিউজ ছাপা হতো। এটা হতে পারে লাইক , কমেন্ট পাওয়ার জন্য বা না বোঝার কারণে। তবে এই প্রবণতা কমেছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং একটু কম গ্রহণযোগ্য অনলাইন পোর্টালে এই ধারা অব্যাহত আছে।”
“কিন্তু সমস্যা হলো যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেন, তারা কিন্তু থেমে নেই। এটা রাজনৈতিক গোষ্ঠী করে, কোনো স্বার্থানেন্বষী মহল করে, সেটা বলতে গেলে এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তারা জেনেশুনেই এটা করে। নির্বাচনের আগে সেটা আরো বাড়বে বলে মনে হয়,” বলেন অধ্যাপক সুমন রহমান।

তিনি জানান, “লাইক কমেন্টের জন্য ফেক নিউজ বা গুজবের প্রবণতা কিছুটা কমলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গুজব, ফেক নিউজ, প্রচারণা এটা না কমে, বরং বেড়েছে এবং এটা সংঘবদ্ধভাবে করা হচ্ছে।”
তার কথা, “প্রচলিত ধারণা ছিল গুজব, ফেক নিউজ শুধু খারাপ বিষয় নিয়েই করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেল ভুয়া কলামিস্ট, অস্তিত্বহীন কলামিস্টের নামে সরকারের গুণগানমূলক গুজব বা ফেক কলামের ছড়াছড়ি। এটা অর্গ্যানাইজড ওয়েতেই করা হয়েছে। এখানে বিনিয়োগ আছে। যারা করেছেন তারা সাধারণ মানুষকে তথ্যগত বিভ্রান্তিতে ফেলে সুবিধা নিতে চান।”
তার কথা, “এটা সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রেও ঘটছে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রশংসামূলক নানা প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। হয়তবা প্রতিবেদন তৈরি করে সরাসরি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে. সেটাই ছাপা হচ্ছে সরাসরি। এর পিছনে চাপ থাকতে পারে. সুবিধা নেয়ার কারণ থাকতে পারে। তবে যা-ই হোক না কেন এগুলোও গুজব, ফেক নিউজ।”
“মূল বিষয়টি হলো ফ্যাক্ট অ্যান্ড নন-ফ্যাক্ট। এভাবে বিবেচনা করলেই বিষয়টি সহজ হয়ে যায়, যা সত্য নয়, তাই ফেক বা গুজব। সেটা মানহানিকর হোক আর প্রশংসামূলক হোক, দুটোই অপরাধ। কারণ, এর মাধ্যমে মানুষকে ভুল ও মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়। মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধারণা তৈরি করা হয়, যা সত্য নয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করার যে-কেনো ধরনের চেষ্টাই অপরাধ,” অভিমত তথ্য প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপনের।
এর পিছনে ভেস্টেড ইন্টারেস্ট গ্রুপ কাজ করে, তারা তাদের পক্ষে বা প্রতিপক্ষকে হেয় করতে এই সব অসত্য তথ্য, কলাম প্রচার করে। ভুয়া নামে প্রচার করা হলেও এগুলো কেউ না কেউ তো লেখেন, তৈরি করেন। এটা করতে তো অনেক অর্থ ব্যয় হয়। এটা অনেকটাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করা হয়। নির্বাচনের আগে এই ধরনের প্রোপাগান্ডা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন জাকারিয়া স্বপন। তিনি বলেন, "এটা শুধু ভুয়া কলাম বা খবরের মধ্য দিয়ে নয়, পোস্টার , প্রচারপত্র, লিফলেটের মাধ্যমেও করা হয়। রাজনৈতিক বক্তৃতায় তো সারাক্ষণই হচ্ছে।”
তার মতে, “এটা পুরনো গোয়েবলসীয় পদ্ধতি। একটি মিথ্যাকে বার বার সত্য বলে প্রচার করলে মানুষ সেটা সত্য মনে করবে। শুধু কৌশল পরিবর্তন হয়েছে। তবে যারা যেভাবেই করুক না কেন, সেটা অপরাধ। তার কথা, "গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্য হলো পানি ঘোলা করা, মানুষকে বিভ্রান্ত করা। এর মাধ্যমে স্বার্থ উদ্ধার করা।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভালো কলামিস্ট খুঁজছে বলে গত বছর সংবাদমাধ্যমে একটি খবর বের হয়েছিল। কলামিস্ট খোঁজার উদ্দেশ্য ছিল সরকারের ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে কলাম লেখা, সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারের জবাব দেয়া । এটাকে তারা বলেছিল আউট সোর্সিং। তাদের সম্মানি দিয়ে ‘ভালো' লেখা লেখানোর কথা ছিল। এজন্য সংসদসীয় কমিটিকেও ভালো কলামিস্ট খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা শেষ পর্যন্ত ভালো কলামিস্ট পেয়েছিলো কিনা সেই খবর আর জানা যায়নি। তবে সরকারের পক্ষে লেখা অস্তিত্বহীন কলামিস্টের কলামের তথ্য পেয়েছে এএফপি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, “বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ যে ভুয়া কলামিস্টের ঘটনাটি প্রকাশ পেলো, সেটা অভূতপূর্ব। এমনটি এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এটা একেবারেই নতুন। এটা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে। এর আগে আমরা ভাড়াটে লেখক, দলীয় লেখক- এসব বিষয়ে জেনেছি। কিন্তু ভুয়া লেখক, অস্তিত্বহীন কলামিস্ট একেবারেই নতুন। কিন্তু এই লেখাগুলো তো কেউ না কেউ লিখেছেন। তারা কারা? তারা একটি গ্রুপ, সংঘবদ্ধ গ্রুপ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন লেখার জন্য সম্মানির বিনিময়ে কলামিস্ট খোঁজে, তখন অনেক কিছুই বোঝা যায়। এটা তো তাদের কাজ নয়। কলামিস্ট খুঁজবে পত্রিকা, সংবাদমাধ্যম।”
তার কথা, “এই যে কলামগুলোর কথা আমরা জানলাম, এগুলোও গুজব, ফেক কলাম। যারা করেছেন, তারা হয়ত সরকারের কাছাকাছি থাকতে চান, সুবিধা নিতে চান। এটাও সরকারে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে বলে আমি মনে করি। আর সরকার সেটা মনে করলে তাদেরই উচিত এটা যারা করেছেন তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা। অথবা মানহানির মামলা করা।”
মূলধারার সংবাদমাধ্যম এসব ফেক কলাম ছেপে পেশাদারিত্বের অভাব প্রমাণ করেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সুমন রহমান, “কোনো কলাম ছাপার আগে সেই কলামিস্টের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জরুরি। আবার দেখতে হবে যে বিষয়ে তিনি লিখছেন, সেটা নিয়ে লেখার অথরিটি তার আছে কিনা। সেটা না করেই যখন ছাপা হয়েছে তখন বুঝতে হবে সংবাদমাধ্যমের গেট কিপিং ঠিকমতো হচ্ছে না।”
তবে অধ্যাপক রাজ্জাক মনে করেন, “এগুলো আবার কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে ছেপে থাকতে পারেন। কেউ আবার জেনেশুনেই স্বার্থ বা চাপের কারণে ছাপতে পারেন। আগেই বলেছি, এই পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি ভালো গবেষণা হতে পারে এবং হওয়া জরুরি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এইসব ফেক নিউজ, কলামের টার্গেট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ বা পাঠক, যারা এটা করেন, তারা আসলে তাদের পক্ষে বা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একটি পরিবেশ তৈরি করতে চান। তারা তা করেন ভুয়া বা অসত্য তথ্য দিয়ে। এতে সাধারণ মানুষকে প্রকৃত তথ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়। শুধু তাই নয়, তাদের অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করা হয়। বিভ্রান্ত করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, “ইলেকট্রনিক বিন্যাস বা ডিজিটাল মাধ্যমে অপ্রপ্রচার, গুজব, অসত্য তথ্য, মানহানি এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা ছিল। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনেও একই বিধান আছে। আর প্রিন্ট বা অন্য মাধ্যমে দণ্ডবিধিতে মানহানি, ক্ষতিপূরণের মামলার ব্যবস্থা আছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র কনসার্ন হলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও হতে পারে।”
“মামলা করতে হবে যিনি ক্ষতিগ্রস্ত, তাকে। এখন সরকারের প্রশংসামূলক ওইসব ভুয়া কলামে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা মামলা করতে পারেন। সরকার যদি নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করে, তাহলে সরকারও মামলা করতে পারে,” বলেন এই আইনজীবী।
তার কথা, “যা সত্য নয়, তা সত্য বলে প্রচার করাই হলো গুজব, অপপ্রচার। সেটা খারাপ অপপ্রচার ও ভালো অপপ্রচার দুটোই হতে পারে। কেউ যা করেননি, বলেননি—সেটা ভালো বা খারাপ যা-ই হোক না কেন, তা প্রচার করা গুজব ছাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়।” (তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে)
(এসকে/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩)

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when newsexpress24.com posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to newsexpress24.com:

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share