03/05/2013
জনগণের প্রত্যাশা
ড. আহমদ আবদুল কাদের
আলেমসমাজ আমাদের সমাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এ দেশে ইসলাম আবির্ভাবের সময় থেকেই আলেমসমাজের আবির্ভাব। এ দেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই আলেমগণ একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ সামাজিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। প্রতিটি যুগেই আলেমগণ সমাজে দ্বীনি শিক্ষার প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে নির্দেশনাদানের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। সেই সাথে যেকোনো ইসলামবিরোধী শক্তির মোকাবেলায়ও তারা প্রধান ভূমিকা রেখেছেন। তা ছাড়া মুসলিম ভূখণ্ডবিরোধী তথা দেশবিরোধী যেকোনো আগ্রাসী শক্তির মোকাবেলায়ও আলেমগণ সক্রিয় অংশ নিয়েছেন, ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃত্বও দিয়েছেন। মূলত আলেমগণ যুগে যুগে সমাজের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন।
এ দেশে সুলতানি আমল ও মুঘল আমলে আলেমগণ সামাজিক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সোনার গাঁওয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইসলামী উচ্চতর শিক্ষাকেন্দ্র (বিশ্ববিদ্যালয়) স্থাপন ও পরিচালনায় হজরত শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা রহ:, সম্র্রাট শের শাহ শূর ও ইসলাম শাহ শূরের আমলে ’শায়খুল ইসলাম আবদুল্লøাহ আনসারী রহ:, সম্র্রাট আকবরের প্রথম আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সদর-উস-সুদুর শায়খ আবদুন্নাবী রহ: রাষ্ট্রকে নিদের্শনাদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৫৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ক্রমান্বয়ে সম্র্রাট আকবর অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে ওলামাসমাজকে দুর্বল ও অকর্মন্য করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে আলেমসমাজের ব্যতিক্রম হিসেবে শাইখ মোবারক ও তার দুই ছেলে আবুল ফজল ও ফাইজীর মতো দরবারি আলেম নিকৃষ্টতম ভূমিকা পালন করে (যেমন আজকেও কিছু আলেম নামধারী লোক একই ভূমিকা পালন করছেন)। যদিও আকবরের আমল ও জাহাঙ্গীরের আমলের প্রাথমিক কয়েকটি বছর ওলামাসমাজের সংগ্রামী ভূমিকা কঠোরভাবে দমন করা হয়। তা সত্ত্বেও আলেমসমাজের ধর্মীয়-সামাজিক ভূমিকা অব্যাহত ছিল। বিশেষ করে শায়খ আহমদ সেরহিন্দ মুজাদ্দেদে আলফেসানি রহ:-এর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রচেষ্টার ফলে আকবর সৃষ্ট ‘দ্বীনি ইলাহী’র ফেতনা নির্মূল হয়ে যায়।
ব্রিটিশ আমলে প্রথম ১০০ বছর আলেমসমাজই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ: ও হজরত শাহ আবদুল আযিজ রহ: প্রবর্তিত আন্দোলন ও এর সূত্র ধরে সৈয়দ আহমদ বেরেলভী রহ: ও শাহ ইসমাঈল রহ:-এর জিহাদ-আন্দোলন, বাংলায় তিতুমীর রহ: ও হাজী শরিয়তুল্লাহ রহ:-এর আন্দোলন ইসলামী পুনর্জাগরণ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ধর্মীয়-সামাজিক ক্ষেত্রেও এসব আন্দোলন আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে আলেমসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, এমনকি নেতৃতের ভূমিকাও পালন করেন। মাওলানা কেরামত আলী র:-এর শিক্ষা আন্দোলনও জাতিগঠনে বিশেষ অবদান রাখে। এরপর ব্রিটিশের অত্যাচার, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের ফলে আলেমসমাজ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তার পরেও ব্রিটিশ শাসনের পরবর্তী নব্বই বছর আলেমসমাজের সামাজিক ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বদানে প্রধান ভূমিকায় না থাকলেও সামাজিক শক্তি হিসেবে তাদের ভূমিকা বরাবরই অব্যাহত ছিল। হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরী মক্কী রহ: ও মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ:-এর দেওবন্দ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দ্বীনি শিক্ষা আন্দোলন। মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহ:-এর নেতৃত্বে রেশমি রুমাল আন্দোলন, মাওলানা মোহাম্মদ আলী রহ:-এর এবং মাওলানা শওকত আলী রহ:-এর নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বৃটিশ প্রবর্তিত পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থার ফলে প্রথমবারের মতো এ উপমহাদেশে দুই ধরনের শিক্ষিত শ্রেণীর জন্ম হয় : ১. ওলামা শ্রেণী ও ২.আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণী। এর ফলে সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে আলেমসমাজের ভূমিকা ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসতে শুরু করে। অন্য দিকে আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তার পরেও ওলামাসমাজের ধর্মীয়-সামাজিক ভূমিকা অব্যাহত ছিল। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ:, মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ:, মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানী রহ:, মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ:-এর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। পাকিস্তান আমলে আলেমসমাজ দেশ গঠনে এবং বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। সেই সময়ে যেসব ওলামায়ে কেরাম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মাওলানা জাফর আহমদ উসমানি রহ:, মাওলানা আতাহার আলী রহ:, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ:,খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ রহ:,মাওলানা আবদুর রহীম রহ: প্রমুখ।
বাংলাদেশ আমলের প্রাথমিক কালে আলেমসমাজের ভূমিকা দুর্বল করার যড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা করা হয়। কিছু দিনের মধ্যেই তারা আবার ঘুরে দাঁড়ান এবং সামাজিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করা শুরু করেন। জিয়ার আমলে সংবিধানে ‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ মূলনীতিটি সংযোজনের সপক্ষে গণভোটে আলেমসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আশির দশকে হজরত হাফেজ্জী হুজুরে রহ:-এর আন্দোলন ওলামাসমাজের মধ্যে ও সাধারণ দ্বীনদার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৮৭ সালে চরমোনাইর পীর মাওলানা ফজলুল করিম রহ:, প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক-গবেষক মাওলানা ্আবদুর রহীম রহ:, বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা আবদুল জব্বার রহ: প্রমুখের নেতৃত্বে দেশের ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠে। ওলামাসমাজ নব্বইর দশকের শুরুর দিকে নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ: আহূত বাবরী মসজিদ অভিমুখে লংমার্চ ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করে। বসনিয়ায় মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে মুজাহিদ সংগ্রহ অভিযান জাতির মধ্যে আলোড়ন তোলে। তা ছাড়াও ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে পানি আন্দোলনও দেশের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০০০ সালের দিকে ফতওয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মাওলানা মহীউদ্দিন খান,শায়খুল আল্লামা আজিজুল হক প্রমুখ। দেশের ওলামাসমাজ এ আন্দোলনে ব্যাপক সাড়া দেয় এবং শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে ফতওয়ার অধিকার অর্জিত হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী শান্তিচুক্তিবিরোধী আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী আন্দোলন, খতমে নবুওয়াত আন্দোলন, টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী, নারীনীতি ও শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলনে দেশের আলেমসমাজের সোচ্চার ভূমিকা জনগণের দৃষ্টি আকষর্ণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এসব ক্ষেত্রে বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক রহ:সহ শীর্ষস্থানীয় সব ওলামায়ে কেরাম জাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আন্দোলনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংযোজন হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম হজরত মাওলানা শাহ আহমদ শফি দা: বা: নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এ আন্দোলন প্রধানত তথাকথিত ‘শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের’ সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নাস্তিক-ব্লগার কর্তৃক মহানবী সা: ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কুৎসা রটনার বিরুদ্ধে লং মার্চের ডাক দেয়। এই লংমার্চ ব্যর্থ করার জন্য সরকার তাদের সমর্থক কিছু গোষ্ঠীকে দিয়ে নজিরবিহীনভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও রাতের বেলায় হরতাল আহ্বান করে। স্মিয়করভাবে সরকার এ হরতাল বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তা সত্ত্বেও জনগণ যেভাবে এ লংমার্চে অংশগ্রহণ করেছে তাতে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে গেছে। সাধারণ জনগণ যেভাবে এ লংমার্চে অংশগ্রহণ করেছে ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা সত্যিই অভূতপূর্ব। এ লংমার্চ সমাবেশ কার্যত মহাজনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। মানুষ যেভাবে পায়ে হেঁটে দূরদুরান্ত থেকে ঢাকায় এসেছে তা মূলত ইসলাম ও মহানবী সা:-এর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অনন্য নজির এবং নাস্তিক-মুরতাদদের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন। এ লংমার্চ প্রকারান্তরে সরকারের নীতির প্রতিও অনাস্থা জ্ঞাপন করার শামিল। এ আন্দোলন মূলত জনগণের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে। হেফাজত ঘোষিত ১৩ দফা দাবি কার্যত আজ জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশে এ আন্দোলনের গভীর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশে যে নাস্তিক-মুরতাদদের স্থান নেই তার জানান দিয়েছে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ। রাষ্ট্রীয় সংবিধানে প্রতিস্থাপিত ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিকূলে এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের অনুকূলে এ লংমার্চ। এ লংমার্চ জাতীয় জীবনের ভাবাদর্শের গভীরতর প্রকাশ। আমাদের জাতিসত্তার অন্যতম উপাদান যে ইসলামী আদর্শ তারই প্রকাশ এ লংমার্চ। এ লংমার্চের মধ্য দিয়ে জাতির অন্তরাত্মার জাগৃতি ঘটেছে। যারা এ অন্তরাত্মার আওয়াজ শুনতে পায় না, যারা এখনো ধর্মবিমুখÑ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও জাতি গঠনের অলীক স্বপ্ন দেখে, যারা জাতির ভাবানুভূতির গভীরতা অনুভব করতে পারছে না, তারা যে জাতিবিরোধী অবস্থান নিয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ আন্দোলন আলেম-ওলামা, ছাত্র-যুবক, সাধারণ জনগণ, আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণী (যারা ভোগবাদ ও পাশ্চাত্য ভাবধারায় আত্মপরিচয় হারিয়ে বসেনি) সবাই একাকার হয়ে গেছে। এ লংমার্চ আত্মজাগৃতির লংমার্চ। এ লংমার্চ দীর্ঘ দিনের সুপ্তির মধ্যে থাকা আলেমসমাজ ও জনগণকে জাগিয়ে তুলেছে। জনগণের শেষ অভিভাবক যে আলেমসমাজ আবারো তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ লংমার্চে। এ লংমার্চ জাতির মধ্যে ইসলামের নবজাগরণের প্রবল আকাক্সা জাগিয়ে তুলেছে। জনগণ নতুন সমাজের, নতুন নেতৃত্বেরও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
তাই এ লংমার্চের মাধ্যমে সৃষ্ট জনস্ফুলিংগকে একটি বৃহৎ গণজাগরণে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এ লংমার্চ আন্দোলনকে শুধু নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলনে সীমিত না রেখে জাতিকে আরও বৃহত্তর পরিসরে পরিচালিত করার আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এ আন্দোলন প্রাথমিকভাবে নিছক ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে থাকলেও এর সৃষ্ট জন-উচ্ছ্বাসকে একটি সফল পরিণতিতে নিয়ে যেতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে, এ আন্দোলন বাংলাদেশে একটি ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের পথ প্রশস্ত করবে।
গঠিত হবে এক সুখী ও সমৃদ্ধ ইসলামী সমাজÑ যেখানে দারিদ্র্যের জ্বালায় কাউকে কষ্ট করতে হবে না, যেখানে দুর্নীতির মূলোৎপাটন ঘটবে, যেখানে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে জনগণের অংশীদারিত্বভিত্তিক ইসলামী আদর্শের আলোকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হবে, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত হবে, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করবে। জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণকল্পে হেফাজতের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। এ আন্দোলনকে সঠিক লক্ষ্যে পরিচালিত করার জন্য মুনাফিক মনোবৃত্তিসম্পন্ন লোকেদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতা ও অর্থলোভী লোকদের হাত থেকে তাকে রক্ষার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সাথে সঠিক কর্মকৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
জাতিকে পাশ্চাত্যের ডান-বাম সেবাদাসদের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, দেশের নারীশিক্ষা ও উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, উন্নততর সমৃদ্ধ অর্থনীতি, শ্রমিক ও মেহনতি শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, একটি দুর্নীতিমুক্ত ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠন, ধর্মীয়, নৈতিকতা ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি উন্নত শিক্ষানীতি প্রণয়নসহ একটি আলোকিত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এক সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে হেফাজতের পৃষ্টপোষকতায় একটি আরও ব্যাপক ও গণসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তা হলে হেফাজতের আন্দোলন একটি সফল পরিণতি পাবে। দেশের জনগণ সেদিনের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে। আমরা সবাই আরাধ্য লক্ষ্যপাণে তাকিয়ে আছি।