19/05/2014
একদিন দিবোই-তানজিল
পরিবারের অনিইচ্ছায় নাচে আসা। নাচকে পেশা হিসেবে নেওয়া। নাচের প্রতি ভালবাসা থেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ঈগল ড্যান্স কোম্পানী।
কোরিওগ্রাফার তানজিল নামে সবাই তাকে চিনে। পুরো নাম মোহাম্মদ তানজিল আলম। প্রথম ছবি ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’র জন্য ২০১১তে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। সম্প্রতি তার আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপের ইভেন্ট সং এর কোরিওগ্রাফি করে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এফডিসিতে ‘কিস্তিমাত’র টাইটেল গানের শুটিং এর ফাঁকে কথা হল ঢালিউড২৪ এর সাথে।
সম্প্রতি আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ’র ইভেন্ট সং এর কোরিওগ্রাফি করেছেন। এইটা নিয়ে অনেক প্রশংসা পাচ্ছেন। কেমন লাগছে?
অনুভূতি তো ব্যাপক। খুবই ভালো লাগছে। ২০১১ তে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পরে যে পরিমাণ খুশি মনে ছিল, এই মুহূর্তে ঠিক ঐ রকম খুশি লাগছে ।
আপনি কোরিওগ্রাফি তে আসলেন কেন ?
আমার বাবা সেনা কর্মকর্তা। উনি চাইতেন আমিও তার মত হই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে মাইকেল জ্যাকসনকে অনুকরন করতাম, ভিডিও দেখে দেখে তার নাচ কপি করতাম। একটা সময় মনে হল যে নাচ শেখা দরকার, সঠিক শিক্ষাটা দরকার নাচের। সেই জন্য একটা প্রতিষ্ঠানে যাই সেখানে ক্ল্যাসিক্যাল নাচ শেখায়।
কোথায় ?
ঐ প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল কুমকুম অ্যাকাডেমি। ঐখানে আমার শিক্ষক ছিলেন আজমেরি আনোয়ার কুমকুম। ঐ অ্যাকাডেমিতে গিয়ে কোর্স করি আড়াই বছর। ঐ সময় শিবলি, নিপা, রতন, নাদিয়া, লিখন, সোহেল এরা তখন সবাই অনেক জনপ্রিয় ক্ল্যাসিক্যাল নাচে। তাই ভাবলাম একটু অন্য রকম নাচ করি যাতে দ্রুত পরিচিতি পাওয়া যায়। ওয়েস্টার্ন ফর্ম নিয়ে কাজ করার জন্য মগবাজার গেলাম। ঐখানে সুপনদার স্কুলে বেশ কিছু দিন নাচ করি ও ওনার গ্রুপে কাজ করি। ঐ সময় আমার তিন বন্ধু সুমন, বাবু, অলি কে নিয়ে ঈগল ড্যান্স গ্রুপ খুলি ১৯৯৯ সালে। সেই থেকে আমাদের কাজ শুরু হয়। প্রথমে ছোট ছোট কাজ করেছি। ২০০৪ এর পর থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এখনো কাজ করে যাচ্ছি।
সিনেমাতে প্রথম কাজ করেছেন কবে ?
২০০৯ সালে। প্রথম কাজ করি জাকির হোসেন রাজুর ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ ছবিতে।
আমি যতদূর জানি আপনি মাঝে চলচ্চিত্রের কাজে একটা বিরতি দিয়েছিলেন, কেন?
ঐ কাজটা (আমার প্রাণের প্রিয়া) করার পরে আমার মনে হয়েছিল যে চলচ্চিত্র অনেক বড় একটা মাধ্যম। আর তখন তো আমি চলচ্চিত্র কি রকম কাজ হয় বা কী ধরণের কাজ করতে হয় জানতাম না। আর তখন ছোট ছিলাম তাই মনে হয়েছে আর একটু প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করা দরকার। ঐ কাজটা দর্শকদের ভালো লেগেছে, জুরি সদস্যদের ভালো লেগেছে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে কাজে আর একটু মনযোগ দেওয়া উচিত। তাই আরও ২-৩ বছর কাজের উপরে কর্মশালা করি, নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করি। তারপর ২০১২-১৩ থেকে নিয়মিত কাজ করছি।
একটা ছবিতে কোরিওগ্রাফি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ?
অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিজের দেশকে বিশ্বে পরিচিতি দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র একটা বড়মাধ্যম। আর একটা মাধ্যম আছে ক্রিকেট। খেলোড়ায়রা খেলছে, তারা ভালো করছে। চলচ্চিত্রের দিক দিয়ে বলবো এইটা বেশি শক্তিশালী। এইটা অস্কারে যায়, কান এ যায়। বড় পর্দার ব্যাপারটাই আলাদা। যত কাজ করতেছি চলচ্চিত্রের উপরে তত ভালোবাসা বাড়ছে। সেই হিসেবে কোরিওগ্রাফি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আর আমার কাজ যদি চলচ্চিত্রকে একটুও এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে সেইটা আমার অনেক বড় পাওয়া। এই জন্য আমি নিজেকে চলচ্চিত্রে উৎসর্গ করেছি।
তানজিল ২
আমাদের চলচ্চিত্রে নাচ কি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ? আপনারা যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে কি কাজ করতে পারছেন ?
কোন জিনিসই শতভাগ হয়না। তবে নতুন নতুন প্রযোজক, পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার সবার প্রচেষ্টা আছে, আমরাও চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক বা বলিউড লেভেলের কাজ এখনো দিতে পারছি না আমরা। তবে আজ অথবা কাল, একদিন দিবোই।
২০১১তে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল ?
ঐটা আসলে ভাষায় প্রকাশ পারবো না। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। ২৪ বছর বয়সে আমি শুনি আমি পুরস্কার পাচ্ছি। ২৪ বছরের একটা ছেলে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বুঝতেই পারতেছেন। তখন মনে করতাম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মানেই ৪০-৪৫ বছর বয়স। ১৫-২০ বছর কাজ করবো তারপর পাবো। এই রকম একটা ব্যাপার ছিল। সেখানে প্রথম কাজ করতে আসছি, চলচ্চিত্রটা কি সেটা জানি, এফডিসি কি সেইটা বুঝি। না, সেইখানে প্রথমেই যে স্বীকৃতি দিলো অবিশ্বাস্য! যখনই শুনলাম, সেইদিনই বিশাল পার্টি দিলাম বন্ধুবান্ধব, টিমের মেম্বার, যারা যারা কাজ করেছে তাদের কে নিয়ে।
আপনার টিমে এখন কত জন কাজ করছে ?
এই মুহূর্তে ৪০ জন। ২০ জন ছেলে ২০ জন মেয়ে। আর আমার ছাত্র এই মুহূর্তে ১০০ জন। যারা নাচ শিখেছে ঈগল ড্যান্স কোম্পানিতে। আমার একটা স্কুল আছে সব ধরণের ড্যান্স শেখানো হয়। ইভেন আমার স্কুলে ড্যান্স শেখার সবচেয়ে বেশি সুবিধা হচ্ছে এখানে এসে ক্ল্যাসিক্যাল, সালসা, ট্যাঙো, মডার্ন, ওয়েস্টার্ন যত ধরণের ড্যান্স ফর্ম আছে সব গুলোই এখানে শিখতে পারবে। এখান থেকে একজন পরিপূর্ণ নৃত্যশিল্পী হয়ে বের হতে পারবে। একটা কথা না বললেই না আমার এখানে যে এক বছর নাচের কোর্স করবে সে এক বছর পর আর একটা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক হতে পারবে।
শুধু মাত্র নাচের উপর নির্ভর করে কি জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব ?
অবশ্যই সম্ভব, আমি খুব আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলছি। আমার বাবা চাইতো আমি সেনা কর্মকর্তা হই। সেখান থেকে নাচে চলে আসলাম। আমি পড়ালেখা শেষ করেছি ২০১১ তে। আমি এমবিএ শেষ করেছি। আমি ২০০৮-০৯ সালেই পরিকল্পনা করেছি আমি সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য কোথাও চাকরি করবো না। পড়ালেখা শেষ করা দরকার তাই শেষ করেছি। আমি নাচ করে অনেক ভালো আছি। আমি নতুনদের আমন্ত্রণ জানাব ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিলের পিছনে সময় ব্যয় করছেন। তারা এইটার পিছনেও সময় দিয়ে দেখুক।
কাউকে গুরু মানেন ?
গুরু তো সেই যার কাছ থেকে নতুন একটা স্টেপ শিখবো সেই গুরু। এই অর্থে অনেক গুরু। গুরুর কোন শেষ নেই।
এখন কোন কোন ছবিতে কাজ করছেন ?
এখন ‘কিস্তিমাত’, ‘ওয়ান ওয়ে’ ছবির কাজ করছি। এই ছাড়াও আরও কিছু কাজ আছে।
এখন পর্যন্ত কয়টা ছবির কাজ করেছেন ?
১০-১২ টা।
সংখ্যাটা কি অন্যদের তুলনায় কম হয়ে গেলো না ?
হ্যাঁ, অনেক কম। আমি চাই বেছে বেছে কাজ করবো। আর যে কাজটা করবো খুব ভালো কাজ করবো। কাজের মান ঠিক রাখবো।