24/11/2023
🔺হাজি মুহাম্মদ মহসিন
উপমহাদেশের ইতিহাসের এই বিখ্যাত দানবীর মুহাম্মদ মহসিন ১৭৩২ সালের ৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি পুরো বাঙালি জাতি-হিন্দু, মুসলিম সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র।
তার বাবা হাজি ফয়জুল্লাহ ছিলেন একজন ধনী জায়গিরদার। তিনি ইরান থেকে বাংলায় এসেছিলেন। ফয়জুল্লাহর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিলো জয়নব, তার আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। সাবেক স্বামী আগা মোতাহারের ঘরে মন্নুজান নামে তাদের একটি মেয়ে ছিল। আগা মোতাহারের হুগলী, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় জায়গির ছিল। সেই সম্পত্তি তার মেয়ে মন্নুজান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন।
গৃহশিক্ষক দিয়ে মহসিন ও তার সৎ বোন মন্নুজান লেখাপড়া করেন।পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজধানী মুর্শিদাবাদে যান। শিক্ষাজীবন শেষ হলে তিনি দেশভ্রমণের জন্য বের হন। এইসময় তিনি হজ্জ্ব করেন, তিনি মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালাসহ ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক এরকম নানা জায়গা ভ্রমন করেন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ভ্রমন শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৮০৩ সালে মন্নুজানের মৃত্যুর পর মহসিন তার সম্পদের মালিক হন। তিনি চিরকুমার ছিলেন।
এতো সম্পদের মালিক হয়েও মহসিন ছিলেন খুব ধার্মিক ও নিরহঙ্কারী। তিনি সহজ সরল জীবনযাপন করতেন।তিনি তার প্রতিষ্ঠিত ইমাম বাড়া প্রাসাদে বাস করতেন না, তার পাশে একটি ছোট কুটিরে বাস করতেন। কুরআন শরীফ নকল করে যা পেতেন তা দিয়েই চলতেন। নিজ হাতে রান্না করে অধিনস্তদের নিয়ে বসে খেতেন।
তিনি তার অর্থ দিয়ে বহু বিদ্যাপিঠ তৈরি করে গিয়েছেন। হুগলিতে ‘হুগলি মহসিন কলেজ’ ও ‘চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ’ তারই টাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে ‘দৌলতপুর মহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’।
১৭৬৯-৭০ সালের সরকারি দলিল অনুযায়ী তখনকার দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক লঙ্গরখানা স্থাপন করেন এবং সরকারি তহবিলে অর্থ সহায়তা দেন। ১৮০৬ সালে তিনি ‘মহসিন ফান্ড’ নামে একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করে তাতে দুইজন মোতাওয়াল্লি রাখেন।খরচের হিসাবে সম্পত্তিকে নয়ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে তিন ভাগ ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, চার ভাগ পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ড এবং দুইটি ভাগ মোতাওয়াল্লিদের পারিশ্রমিকের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
ইতিহাসে দাতা হাজী মুহাম্মদ মহসিনের নাম চিরস্মরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের নাম তার স্মরণে রাখা হয়েছে।ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটির নাম বিএনএস হাজী মহসিন।
হাজি মুহাম্মদ মহসিন ১৮১২ সালে হুগলীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে হুগলী ইমামবাড়ায় দাফন করা হয়।
By Semira Mahmud