18/03/2024
أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ * أياماً مَّعدوداتٍ)
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين حمدًا كثيرًا طيبًا مباركًا فيه، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله، أما بعد:
ইসলাম যে বিষয়গুলোর প্রতি খুব গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করেছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মহান একটি বিষয় “উত্তম চরিত্র”। অনেকেই উত্তম চরিত্র শব্দটি শুনেছেন কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি উত্তম চরিত্র বলতে কী বুঝেন? এর সংজ্ঞা কী? এর উপাদান কী? এর ভিত্তি কী? তাহলে অনেকেই এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উত্তম চরিত্রের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূলকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়:
أكثر ما يدخل الناس الجنة,
“কোন জিনিস মানুষকে অধিক পরিমাণে জান্নাতে প্রবেশ করাবে?”
জবাবে তিনি বলেন:
قال: “تقوى الله وحُسن الخُلُق”
“আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২০০৪]
আল্লাহর ভয় আপনার ও আল্লাহর মধ্যকার বিষয় আর উত্তম চরিত্র আপনার ও মানুষের মধ্যকার বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
“إنّ الرجل ليُدرك بحُسن خلقه درجة الصائم القائم”
“নিশ্চয়ই একজন ব্যক্তি উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে রোযাদার নামাযীর মর্যাদা লাভ করে”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৫৫৩৭]
চিন্তা করুন! আমাদের কাছে একজন রোযাদার নামাযী আছে এবং একজন উত্তম চরিত্রবান আছে। উত্তম চরিত্রবান লোকটি উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে রোযাদার নামাযীর মর্যাদা লাভ করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “কেয়ামতের দিন [বান্দার আমলের] পাল্লায় সবচেয়ে ভারি বস্তু হবে উত্তম চরিত্র”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং, ২৭৫৫৫]
যা-ই হোক, উত্তম চরিত্রের সংজ্ঞা কী? আজকের মজলিসে আমরা তা জানব। একজন মুসলিমকে কীভাবে চেনা যাবে বা একজন মুসলিম নিজেকে কীভাবে যাচাই করবে? সে কীভাবে নিজেকে জানবে যে, তার মাঝে উত্তম চরিত্র আছে নাকি নেই?
উত্তম চরিত্রের সংজ্ঞায় ইমাম হাসান আল-বসরী রহ. বলেন: তিনটি বিষয়ের সমষ্টিকে উত্তম চরিত্র বলে। যথা:
“كف الأذى, وبذل المعروف, وبسط الوجه”
“কষ্ট না দেওয়া, ভালো কাজের প্রসার করা ও হাস্যোজ্জ্বল থাকা”।
১। কষ্ট না দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা। “মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা” এর মর্ম কী? এর মর্ম হচ্ছে, কথা ও কাজের মাধ্যমে কাউকে কষ্ট না দেওয়া। যবান দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে সাবধান হওয়া। অন্যের গীবত, পরনিন্দা, অপবাদ, গালি, তিরস্কার, উপহাস, তাচ্ছিল্য ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। এসবই যবানের দ্বারা কষ্ট দেওয়ার নমুনা। তাইতো প্রকৃত মুমিন কে? কাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন ও কার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট তা স্পষ্ট করতে গিয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“المسلم من سَلِم المسلمون من لسانه ويده”
“সেই প্রকৃত মুমিন যার যবান ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং, ১০) যার যবান থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকবে।
যে ব্যক্তি নিজের যবান সংযত রাখে না তার যবান দ্বারা মানুষ কষ্ট পাবে। সে মানুষকে গালি দেবে, তিরস্কার করবে, অভিশাপ দেবে। অনেকের যবানে তো সবসময় লা‘নত ও গীবত আঠার মতো লেগে থাকে। তাকে বলব, আপনার মাঝে উত্তম চরিত্রের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। কেননা, আপনার কথার কষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদ নয়।
কাজের মাধ্যমেও কাউকে কষ্ট দিবেন না। মানুষের হক নষ্ট করা, অন্যায় রক্তপাত ঘটানো, যিনা, চুরি, মানুষকে প্রহার করা— এগুলো হচ্ছে মানুষকে কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়ার কিছু উদাহরণ। অতএব, উত্তম চরিত্রের সংজ্ঞার প্রথম বিষয় হচ্ছে, কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট না দেওয়া।
২। উত্তম চরিত্রের দ্বিতীয় আলামত, নেক কাজের প্রসার করা। অর্থাৎ, মানুষের সাথে ভালো আচরণ করা; চাই তা সম্পদ, উপকরণ দিয়ে হোক বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে হোক কিংবা কথার মাধ্যমে হোক। আপনি মানুষকে সহায়তা করেন, তাদের সাথে উত্তম ও কল্যাণের আচরণ করেন, তাদের হাজত পূরণের চেষ্টা করেন। এসবই হচ্ছে নেক কাজের প্রসার করার অন্তর্ভুক্ত। যেমন: আপনি রাস্তায় একজনের গাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে দেখে থেমে গেলেন আর তাকে সাহায্য করলেন। এটি উত্তম চরিত্রের পরিচায়ক। কারণ, আপনি মানুষের সাথে ভালো আচরণ করেছেন। যে ব্যক্তি মানুষের সাথে ভালো আচরণ করে না তার মাঝে উত্তম চরিত্রের অভাব রয়েছে।
৩। ইমাম হাসান আল-বসরী রহ. এর উল্লিখিত উত্তম চরিত্রের তৃতীয় বিষয় হলো, হাস্যোজ্জ্বল থাকা। আপনি মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করেন। যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এই কাজকে সাদাকা বলেছেন। তিনি বলেছেন:
“لا تحقرنّ شيئًا من المعروف ولو أن تلقى أخاك بوجهٍ طلق”
“তোমরা ভালো কাজকে তুচ্ছজ্ঞান করো না, যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং, ২৬২৬)
কিছুলোক আছে যারা মানুষের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করে না। সবসময় চেহারা মলিন করে রাখে। দাঁতে দাঁত পিষতে থাকে আর একে গম্ভীরতা, দ্বীনদারী, ইবাদত, যুহদ ও তাকওয়া মনে করে। সবসময় ভ্রুকুটি করে ভারাক্রান্ত চেহারায় মানুষকে সালাম দেয়। আমি বলি: তার মাঝে উত্তম চরিত্রের অভাব রয়েছে। একটি মুচকি হাসি, তথা: উপরের ঠোঁট উপরে উঠাতে আর নিচের ঠোঁট নিচে ঝুঁকাতে এবং ঠোঁটযুগল দুইদিকে প্রলম্বিত করতে আপনার কোনো কিছু খরচ হবে না। অথচ, সুবহানাল্লাহ! মানুষ হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তির ভালোবাসায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। একজন মানুষের চেহারা যতই বিশ্রী হোক, কিন্তু সে যদি সবসময় মানুষের সামনে হাসিমুখে থাকে, তাহলে মানুষ তাকে ভালোবাসে, তার সোহবতে ও তার কথায় প্রশান্তি ও তৃপ্তি লাভ করে। পক্ষান্তরে একজন মানুষ যতই সুশ্রী হোক; তার চেহারা, চোখ, নাক সবই সুন্দর। কিন্তু সে যদি মানুষের সামনে হাসিমুখের পরিবর্তে মলিন মুখে থাকে, তাহলে মানুষ তাকে ভালোবাসে না। তার কাছ থেকে প্রশান্তি পায় না। তার কাছে নিজের দুঃখ-কষ্ট, গোপন কথা— কিছুই শেয়ার করে না।
অতএব প্রিয় ভাই, ভালোভাবে আয়ত্ত করে নিন যে, উত্তম চরিত্রের আলামত তিনটি। এই তিনটি কষ্টিপাথরে নিজেকে যাচাই করুন।
১। কষ্ট না দেওয়া।
২। ভালো কাজের প্রসার করা।
৩। হাস্যোজ্জ্বল থাকা।
আমি মহান আরশের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর পছন্দনীয় কাজ করার তাওফীক দান করেন এবং আপনাদেরকে উত্তম শ্রবণের সর্বোত্তম বদলা দান করেন, আমিন।
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলা