24/09/2023
সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমরা যেন অন্তত একটা পাখির চেয়ে অধম না হয়ে যাই।
অনেক খারাপ কাজ আমাদের সামনেই হয়। আমাদের খারাপ লাগে না। যারা খারাপ কাজগুলো করছে কীভাবে তাদের বদলানো যায় তা নিয়ে চিন্তা আসে না। পৃথিবীতে বহু মানুষ আজ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করছে। কেউ মূর্তি বানাচ্ছে, কেউ বলছে আল্লাহ্র পুত্র আছে আর তাঁকেই তারা ইবাদত করছে। শত কোটি মানুষ এভাবে ভুল জিনিসের ইবাদত করতে করতে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। শত কোটি মানুষ আমাদের সামনেই রয়েছে।
কিন্তু আমাদের তাদের কথা ভেবে কষ্ট হয় না। আমরা অসাম্প্রদায়িক। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’-নীতিতে বিশ্বাসী। তাই যে উৎসবে আসমান ও জমীনের রব আল্লাহ্কে নিয়ে তামাশা চলে, সে উৎসবে যেতে, শুভেচ্ছা জানাতে আমাদের খারাপ লাগে না। অথচ মাকে গালি দিলে কিন্তু আমরা ঠিকই ক্ষেপে যাই। কারণ, মা আমাদের ভালোবাসেন। আমরাও মাকে ভালোবাসি। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা কি আমাদের ভালোবাসেন?
হাঁ, বাসেন। কতোটা ভালোবাসেন? সেটা বলতে একটা গল্প বলি। সত্যি গল্প। সে গল্পে মায়ের ভালোবাসার সাথে আল্লাহ্র ভালোবাসার তুলনা করা হয়েছে। একদিন রাসূল (সা:) লক্ষ্য করলেন এক মহিলা পাগলের মতো তার হারিয়ে যাওয়া শিশুকে খুঁজছে। অনেকক্ষণ পর সে বাচ্চাটিকে খুঁজে পেল। বুকে জড়িয়ে ধরে শিশুটাকে দুধ খাওয়াতে লাগল। একজন মা তার সন্তানকে পাগলের মত খুঁজবেন, শিশুর ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু অতি সাধারণ এই ঘটনার মধ্যেও রাসূল (সা:) অসাধারণত্ব খুঁজে পেলেন। সাহাবিরাও এই দৃশ্য দেখছিলেন। তাই তিনি সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা কি মনে করো এই মহিলা কখনো তার বাচ্চাকে আগুনের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলতে পারবে?” সাহাবিরা জবাব দিলেন, “আল্লাহ্র কসম! কখনোই সে এটা করবে না।” রাসূল (সা:) তখন বললেন: “এই মহিলা তার সন্তানের প্রতি যতোটুকু মমতাময়ী, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দার প্রতি এর চেয়েও বেশি দয়াময়।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নংঃ ২৭৫৪)
কিন্তু মায়ের চেয়ে কেউ বেশি ভালোবাসে কী করে? সেটা ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলে দিয়েছেন: “সবচেয়ে মমতাময়ী মায়ের চেয়েও আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দার প্রতি বেশি দয়াময়। যিনি সেই মাকে মমতাময়ী বানিয়েছেন, তাঁর দয়া তো সেই মায়ের চেয়ে বেশি হবেই।” (মাজমু ফতওয়া, ১৬/৪৪৮)
কথা হলো, আমরা তাঁকে কতোটা ভালোবাসি? কেউ তাঁকে নিয়ে তামাশা করলে, গালি দিলে আমাদের কি কষ্ট হয়? আবু মুয়ায আর রাজি (রহ) সবাইকে সাবধান করে বলতেন, “হুদহুদ যার থেকে উত্তম হলো সে তো ধ্বংস হলো। তিনি কোন পাখির কথা বলেছেন? হুদহুদের কথা। সে পাখি বিশাল এক সম্প্রদায়কে সূর্যের উপাসনা করতে দেখে হতাশ হয়ে গিয়েছিলো। তাই সে সুলাইমান (আ:)-এর কাছে এসে তার কষ্টের কথা জানিয়েছিলো: “আমি তাকে (এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারি রাণীকে) ও তার সম্প্রদায়কে দেখতে পেলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। আর শয়তান তাদের কাজকে তাদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত করে দিয়েছে।” [সূরা আন-নামাল ২৭:২৪]
সে পাখির কথা শুনে সুলাইমান (আ:) ঐ এলাকার রাণীকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তিনি তা কবুল করলেন। রাজ্যের সবাই সূর্যের উপাসনা ছেড়ে চন্দ্র ও সূর্যের রব আল্লাহ্র ইবাদত করা শুরু করল। শুধু একটা পাখির দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা বিশাল এক সাম্রাজ্যের সবাইকে হেদায়েত দিয়েছেন। ইমাম রাজি (রহ) তাই আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন।
সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমরা যেন অন্তত একটা পাখির চেয়ে অধম না হয়ে যাই।