11/08/2023
তেরো_বছরের_সংসার
বারো_বছরের_পরকীয়া
Part 02
Sorna_Khan
সত্য ঘটনা অবলম্বনে.....
আমি কাউকে কিছু না বলে, আমার পাঁচ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে ঢাকার বাসে উঠে পড়লাম।
বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই, সবার কল আসতে লাগলো। ফোনটা কিছুসময় অফ করে রাখলাম, শুধু ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলাম, আজ থেকে আমি কারও নই, কেউ আমাকে খুঁজবে না।
কিন্তু, আমার বাচ্চাটা গাড়িতে ওঠার পর থেকেই কাঁদতে লাগলো, বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো,আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো! বললাম, আমরা বেড়াতে যাচ্ছি।
সে বলতে লাগল, আমি যাবো না, আমি বাসায় যাবো, আমার আব্বুর কাছে যাবো, আমার দাদীর কাছে যাবে, আমি আমার ভাইয়ার সাথে খেলবো।
ওর কান্না দেখে আমিও চোখের পানি আটকাতে পারলাম না।
কাঁদতে কাঁদতে একসময় আমার ছেলে ঘুমিয়ে পড়ল।
ফোনটা খুললাম, সবাই কল করছে, আব্বু, আম্মু, ভাই, বোন, শ্বাশুড়ি, হাজবেন্ড।
কারও ফোন পিক করলাম না। বারবার কল দিয়েই যাচ্ছে। শুধু ছোট বোনের ফোনটা রিসিভ করে বলে দিলাম, আমি ভাল আছি, আব্বু আম্মুকে টেনশান করতে নিষেধ করিস। তার এতো বড় অন্যায় মেনে নিয়ে তার সাথে, তার বাসায় থাকা সম্ভব না। বলেই, লাইনটা কেটে দিলাম।
সারাটা রাস্তা চোখের পানিটা আটকাতে পারলাম না, বাসের লোকজন বারবার ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে আড়চোখে।
তবুও নিজেকে সামলাতে পারছি না। মনের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, নিজের তিলতিল করে সাজানো সংসার, ভালবাসার মানুষ যাকে ছাড়া আমার ঘুম আসেনা, তাকে ছেড়ে, আমার আরেকটা সন্তান তাকে ছেড়ে, আমি থাকবো কেমন করে!
তবুও, আর কোন কম্প্রোমাইজ নয়, কিছুতেই তার বাসায় ফিরবো না আমি।
ঢাকায় পৌঁছে ফ্রেন্ডকে বললাম, কিছুদিন থাকবো, একটা চাকরী যোগাড় করে দিতে হবে।
সে হেসে বলল, তা তোমার যতোদিন মন চায় থাকো, অভিমান কমলে, চলে যেও।
কিন্তু সমস্যায় পড়লাম আমার বাচ্চাকে নিয়ে। সে কেঁদেই চলেছে একইভাবে, কিছুতেই থাকবে না এখানে। সারাটাদিন কাঁদলো, কিছুই খাওয়াতে পারলাম না। একটানা কেঁদে যাচ্ছে। কি করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না। বিকেলের দিকে আমার বাচ্চার মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে পড়ল।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হতে লাগলো, আমি কি নিজের জেদ বজায় রাখতে, আমার ছোট্ট বাচ্চার কচি মনে খুব বেশি আঘাত দিয়ে ফেলছি!
নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো। এদিকে সবাই অনবরত কল করেই চলেছে। আমার হাজবেন্ড ম্যাসেজ দিয়েছে, তুমি ফিরে এসো, তুমি ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছো, তুমি যা বলবা তাই হবে, তুমি ফিরে এসো, আর না হয় বলো, কোথায় আছো, আমি নিতে আসছি।
এদিকে সন্ধ্যে হতেই আমার বাচ্চা নিস্তেজ হতে থাকল, আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম, ডাক্তারের কাছে নিতেই, ডাক্তার বলল, বাচ্চা যা চায়, তাই করুন, তা না হলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
মা হয়তো দুনিয়ার সবচেয়ে বেহায়া প্রানী। বাচ্চাকে বললাম, চলো, বাবা, আমরা এখনই বাসায় ফিরে যাবো। সেদিনই রাতে বাসে উঠে পরদিন ভোরে বাসায় ফিরে আসলাম।
আবার সবকিছু আগের মতোই চলতে লাগলো, বাচ্চা, সংসার, বাচ্চাদের স্কল সবকিছু আগের মতোই।
এর মাঝে পেরিয়ে গেল কয়েক সপ্তাহ। কিন্তু আমি কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারলাম না।
একদিন রাতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা তুমি কি ঐ মেয়েটাকে ভালবাসো!
সে বলল, ভালবাসতাম হয়তো।
বললাম, তাকে চিঠি লিখতে।
বলল, লিখেছি কয়েকটা!
বললাম, কি লিখতে? ভালবাসি?
বলল, হ্যাঁ, এমনটাই লিখতাম।
বললাম, তাকে জড়িয়ে ধরেছো?
বলল, ধরেছি, কয়েকবার।
তার এসব শুনে, আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল, একসময় অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
সকালে জ্ঞান ফিরলে সিদ্ধান্ত নিলাম, মেয়েটার সাথে দেখা করবো।
সেদিনই দুপুরে আমার এক দেবরকে সাথে নিয়ে মেয়েটা যে ক্লিনিকে চাকরী করে সেখানে গেলাম।
প্রথমে মেয়েটি আমার সাথে দেখা করতে চাইনি, পরে রাজী হলো।
মেয়েটিকে দেখে আরও অবাক হলাম, আমার হাজবেন্ড যে কিনা মাশাল্লাহ লম্বা, স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, এক কথায় সুন্দর, সুপুরুষ, সে কিনা এরকম কুচকুচে কালো, খাটো একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছে ১২ টা বছর ধরে। ছি!
শুনেছি, মেয়েটার পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করসে, মেয়েটাকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে, ছেলের পড়ার খরচ সে দেয়, এমনকি মেয়েটার স্বামীকে হাতে রাখতে, একটা অটো রিকশাও কিনে দিয়েছে।
যায় হোক, মেয়েটাকে ডেকে বললাম, দেখো, আমার হাজবেন্ডের মতো লোকেরা তোমাদের মতো মেয়েদের কখনও বিয়ে করে ঘরে তুলবে না, শুধু তোমাদের ইউজ করবে। আর তুমি কেন আমার হাজবেন্ডের সাথে সম্পর্ক রাখছো তা আমি খুব ভালভাবে বুঝি।
তোমার যতো টাকা লাগে আমি দেবো, তোমার সংসারের সব খরচ আমি দেবো, তোমার ছেলের পড়ার খরচও আমি দেবো, তোমার যখন যা লাগবে আমি দেবো, আমি হাতজোড় করে মিনতি করছি, তুমি আমার স্বামীর জীবন থেকে, আমার জীবন থেকে সরে যাও, কারন আমি আমার স্বামীকে প্রচন্ড ভালবাসি, তাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না।
মেয়েটি হেসে বলল, আপনার টাকা আমার লাগবে না, পারলে নিজের স্বামীকে বেঁধে রাখেন। আর একটা কথা, আমি ইচ্ছে করলে, আজই আপনার স্বামীকে বিয়ে করতে পারি, আপনার স্বামী আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য, কিন্তু, আমি তা করবো না, কারন আমি আমার ছেলেকে খুব ভালবাসি, আর আমি তাকে নিয়েই থাকতে চাই।
শুনে, আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেল। হে আল্লাহ্, তুমি তোমার জমিনের মাটি একটু ফাঁক করে দাও, আমি তোমার জমিনে ঢুকে যায়।
ঘোরের মাঝে বাসায় চলে আসলাম। ভাবলাম, এ জীবনের কোন মূল্য নেই, এতোটা সহ্য ক্ষমতা আমার নেই। আমার কাছে পৃথিবীটা অর্থহীন মনে হলো।
আবারও সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেদিন রাতে ৩০ টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিলাম।
আস্তে আস্তে আমার শরীরটা নিস্তেজ হতে থাকল। দুচোখ বন্ধ হয়ে আসলো, শুধু আমার দুটো সন্তানের মুখ চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।
হঠাৎ মনে হলো, আমি যদি আজ মরে যায়, কে দেখবে আমার সন্তানদের।
আমার ভাই তখন বাসায় ছিল, কোনরকমে তাকে ইশারায় ডেকে বললাম, আমি অনেকগুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিয়েছি, কি করবো এখন।
তারপর কি হলো জানি না। দুদিন পর চোখ মেলে দেখলাম, আমি হাসপাতালে, হাসলাম, মনে মনে, বেঁচে আছি এখনও। আমার দুই সন্তানকে দেখতে চাইলাম। তারা সামনে আসলে, বুকে জড়ালাম।
আবার সেই বাসায় ফিরে আসলাম। আব্বু আম্মু অনেকবার তাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইল। আমি যেতে চাইতাম না, কারন তাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না।
কিন্তু আস্তুে আস্তে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। কোন খাবার গলা দিয়ে নামতো না, আর দুচোখের ঘুম হারিয়ে গেল। সংসারের প্রতি, বাচ্চাদের প্রতি সব আকর্ষণ হারিয়ে গেল। কিছুই ভাল লাগে না, রান্না করি না, বাচ্চাদের দেখি না।
বেশিরভাগ সময় ওরা হোটেল থেকে খাবার কিনে খায়, বাচ্চার পড়া দেখিনা, পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করতে লাগলো বাচ্চারা।
ধীরে ধীরে আমি মানসিক ভারসাম্য হারাতে লাগলাম।
মেডিসিনের ডাক্তার, মানসিক ডাক্তার কোনটাই বাদ থাকলো না। এই ডাক্তার, ওই ডাক্তার কোন ডাক্তারই বাদ থাকলো না।
কিন্তু হায়! কোন ডাক্তার আমাকে সুস্থ করতে পারলো না, কোন ডাক্তারই কড়া কড়া ঘুমের ঔষধ দিয়েও আমার চোখে ঘুম এনে দিতে পারলো না, আমাকে খাওয়াতে পারলো না।
আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লাম, বিছানা থেকে নামতে পারতাম না। আরও বড় বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো!
শুধু এটুকু খুুব ভালমতো মনে পড়ছে, ডাক্তার জিজ্ঞেস করতো, তোমার কি হয়েছে, মা, বলতো।
আমি বলতে বলতে কেঁদে ফেলতাম, আর আমার সাথে সাথে ডাক্তারও চোখের পানি আটকাতে পারতো না।
এভাবে কেটে গেল, কয়েক মাস......