09/10/2019
আমাদের দেশে ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। মূলত ব্যবহারকারীদের অসতর্কতার কারনেই আইডি হ্যাক হয়ে থাকে। এ পোষ্টে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে যাতে করে আপনারা আপনাদের আইডিকে হ্যাক প্রুফ করতে পারেন।
------------------------------------------------------------
💦 আইডিতে সাধারনত যে সকল দুর্বলতা দেখা যায়-
❌ লগ ইনের সময় ইমেইল এড্রেসের পরিবর্তে মোবাইল নম্বরের ব্যবহার করা।
❌ ২ ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন না রাখা।
❌ দুর্বল ও অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ডের ব্যবহার (যেমন মোবাইল নম্বর, ডাক নাম, সন্তানের নাম, জন্ম তারিখ, পিতা মাতার নাম ইত্যাদি)
❌ রিকভারি অপশন চালু না রাখা।
❌ আপনার ফেসবুক আইডির নাম, জন্ম তারিখ, অরিজিনাল নাম ও জন্ম তারিখ থেকে আলাদা হওয়া।
❌ জন্ম তারিখ ওপেন রাখা।
❌ ফেসবুক ও যে মেইল দিয়ে ফেসবুক ওপেন করা হয়েছে তার পাসওয়ার্ড একই থাকা। তাহলে হ্যাকার যখন আপনার ফেসবুক হ্যাক করবে, সাথে সাথে আপনার ইমেইল ও হ্যাক হয়ে যাবে।
------------------------------------------------------------
💦 সিকিউর করুন আপনার ফেসবুক-
✅ মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করুন। কেননা আপনার পাসওয়ার্ড বা ইমেইল হ্যাকার চেঞ্জ করলে সাথে সাথেই ফেসবুক আপনার ইমেইলে মেইল পাঠিয়ে আপনাকে সতর্ক করবে। সেখানে রিকভারির লিংক দেয়া থাকে। তাতে ক্লিক করে আপনি সহজেই আইডি রিকভার করতে পারবেন।
✅ ফেসবুকের সেটিংস থেকে Security and login>use two-factor authentication এ গিয়ে আপনার মোবাইল নম্বর যুক্ত করুন। এর পর অন্য কোন মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে আপনার আইডি তে লগইন করার চেষ্টা করুন, দেখুন পাসওয়ার্ড দেবার পর কোড চায় কিনা। যদি চায় তাহলে আপনার ২ ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু হয়েছে। এখন কেউ আপনার ইমেইল+পাসওয়ার্ড জানলেও আপনার মোবাইল হাতে না পেলে হ্যাক করতে পারবে না।
✅ অনেকের পাসওয়ার্ড থাকে শুধু মাত্র সংখা দিয়ে যা অত্যন্ত দুর্বল। পাসওয়ার্ড তৈরি করুন Capital letter, small letter, number & symbol মিলিয়ে। ৮ ক্যারেক্টারের নিচে পাসওয়ার্ড না হওয়াই উত্তম।
✅ সেটিংস এ গেলে ১টি অপশন আছে Choose 3 to 5 friends to contact if you get locked out. এখানে আপনি আপনার ৩ থেকে ৫ জন কাছের মানুষকে যোগ করুন যাদের সাথে আপনার সরাসরি/ফোনে যেকোন সময় যোগাযোগ করতে পারবেন। যদি আপনার আইডি হ্যাক হয়ে যায় তাহলে তাদেরকে বলতে হবে Facebook .com/recover এ লিংকে যেতে। তারা সেখানে আপনার আইডি রিকভার করার জন্য কোড পাবে আর সে কোড ব্যবহার করেও আপনি আপনার আইডি রিকভার করতে পারবেন।
✅ বর্তমানে আইডি রিকভার করতে গেলে ফেসবুক ভিকটিমের আইডি কার্ডের ছবি চায়। কিন্তু দেখা যায় যে, আইডি কার্ডে যে নাম ও জন্ম তারিখ আছে তার সাথে ফেসবুকের নাম ও জম্ন তারিখ মেলে না। ফলে রিকভার করা সম্ভব হয় না। সুতরাং অবশ্যই আপনার আইডিতে যে নাম ও জন্ম তারিখ আছে তা ব্যবহার করুন।
✅ আপনার জন্ম তারিখ যদি ওপেন থাকে তাহলে আপনি ১ ধরনের আক্রমনের আওতায় রয়েছেন। ১ গ্রুপের হ্যাকার রয়েছে যারা আপনার ফেসবুকের নাম ও জন্ম তারিখ মিলিয়ে মিথ্যা পরিচয় পত্র তৈরি করে আপনার আইডির কন্ট্রোল আপনার কাছে নিয়ে নেয়। সুতরাং কখওই জন্ম তারিখ ওপেন থাকা উচিত নয়।
------------------------------------------------------------
💦 ফেসবুকে যে সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত-
⚠ কখনোই আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ফেসবুকে বিশেষ করে ম্যাসেঞ্জারে কারো সাথে শেয়ার করবেন না। দেখা যায় যে অনেকেই তার আপনজনের সাথে তাদের ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করে। পরবর্তিতে ঐ দুই জনের যে কোন একজনের ফেসবুক হ্যাক হয়ে গেলেই হ্যাকার ঐ সকল ছবি সংগ্রহ করে ব্লাকমেইল করা শুরু করে।
⚠ অনেকে ফেসবুকে সিক্রেট এলবাম তৈরি করে তাতে তার বিভিন্ন ছবি, সার্টিফিকেট, আইডি কার্ড সংরক্ষন করে থাকে। এটি হ্যাকারদের জন্য হীরার খনি। আপনার আইডি হ্যাক হওয়া মানে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য তার কাছে চলে গেল। এটা কখনোই করা উচিত নয়।
⚠ কোন লিংকে ক্লিক করে যদি ফেসবুকে রিডাইরেক্ট হয়ে যান ও সেখানে ফেসবুকের আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতে বলা হয়, তাহলে সম্ভবত আপনাকে ফিশিং করা হচ্ছে। ভুলেও সেখানে আইডি, পাসওয়ার্ড দেবেন না। যে সাইটে গেলেন তার URL আগে খুব ভাল করে দেখে নিন। Facebook না Faecbook এ গেলেন? প্রয়োজনে অন্য ১টি ট্যাবে আলাদা ভাবে নিজে ব্রাউজ করে ফেসবুকে গিয়ে লগ ইন করুন।
⚠ হঠাৎ আপনার ইনবক্সে আপনার বান্ধবি ম্যাসেজ পাঠাতে পারে যে, আমি ওমুক ১টা ফেসবুক গ্রুপে গিয়ে দেখলাম যে তোর কিছু অসামাজিক ছবি আপলোড করা হয়েছে। নিচে লিংক দেয়া আছে। ক্লিক করলে আপনার ১টি এডিটেড ছবি ও তার নিচে লগ ইন করে বাকি সব ছবি ও ভিডিও দেখার জন্য বলা থাকতে পারে। এটাও এক ধরনের ফিশিং। আসলে আপনি লগইন করতে গেলে আপনার ফেসবুকের আইডি আর পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে যাবে।
⚠ মোবাইলে যে সকল কোড আসবে তা কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
⚠ “ঘুম থেকে উঠলাম”, “ক্লাসে যাচ্ছি”, “কিছু ভাল লাগছে না” এই টাইপের স্টাটাস না দেয়া উচিৎ। ধরুন আপনি আপনার পুরো ফ্যামিলি নিয়ে ইদে গ্রামের বাড়ী বেড়াতে যাচ্ছেন। রেলগাড়ীতে উঠে ১টা স্টাটাস, বাড়ী পৌছে আর ১টা স্টাটাস দিলেন। আর আপনার ফ্রেন্ড লিষ্টে থাকা কোন এক জন ব্যক্তি বুঝে গেল যে আপনার বাড়ী ফাঁকা, আর এ সুযোগে আপনার বাসার সব চুড়ি করে নিয়ে গেল। আপনার একটি সাদামাটা পোষ্ট আপনার ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে।
⚠ অনলাইনে যে কোন পোষ্ট বা কমেন্ট করার আগে চিন্তা ভাবনা করে করা উচিৎ।
পরিশেষে, আপনার ফেসবুক আইডি আপনার সম্পদ। এটির সিকিউরিটি ও আপনার কাছে, এ থেকে প্রদত্ত পোষ্টের দ্বায়িত্ব ও আপনার।অনুলিপি