রহস্যময় ভৌতিক রোমান্টিক গল্প

  • Home
  • রহস্যময় ভৌতিক রোমান্টিক গল্প

রহস্যময় ভৌতিক রোমান্টিক গল্প সব ধরনের রহস্যময়,ভৌতিক,রোমান্টিক গল্?
(6)

03/08/2023

মৌ হেসে ভিড়ের দিকে এগোয়। হঠাৎ ওর হাতে টান পড়ে। চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে, আর কেউ না, ওর প্রিয় বান্ধবী শিলাই ওকে টেনে ধরেছে। পাশে মিলা, শায়লা এবং আকাশী। সবাই ওর কলেজ জীবনের বান্ধবী।

একপাশে সরে আসতেই আকাশী বক্রদৃষ্টি হেনে বলে,
"কী রে মৌ? তোর হাবাগোবা বরটাকে আজ আবারও বাসায় রেখে এসেছিস? তা ভালোই করেছিস, সে তো বাংলাতেই ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। এখানে এসে অযথা তোকে বিব্রত করতো।"
শিলা রেগে ওঠে। বিরক্ত হয়ে বলে,
"আ! থাম তো, আকাশী। আমরা জন্মগতভাবে বাঙালি। এসব পার্টিতে অযথা ব্রিটিশদের ভং ধরে ইংরেজিতে বোলচাল মারার দরকারটা কোথায়?"

মৌ ম্লান হেসে বলে,
"এজন্যই আজ ওকে আনিনি। আগে একদিন এনেছিলাম, সেদিন ও আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে আমাকে সবার সামনে বিব্রত করেছে। সেবার ফ্রেন্ড সার্কেলের কে হাসেনি বল? আমি তো লজ্জায় রীতিমতো মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলাম। আর না, ভাই!"
শিলা গম্ভীর হয়ে ওঠে। ও বলে,
"মানেটা কী? কেউ ইংরেজিতে গড়গড় করে কথা বলতে পারলেই সে যোগ্য, সে ভালো? বাকিরা অযোগ্য?"
মৌ বলে,
"বাদ দে। ওকে না এনে ভালোই করেছি। অন্তত ও তোদের বরের মতো স্মার্টলি সবার সাথে গল্পগুজব তো করতে পারতো না! অযথা বিরক্তি বাড়তো। চল কোথাও গিয়ে বসি।"

ওরা পাঁচ বান্ধবী হেঁটে একটা নিরিবিলি জায়গাতে এসে বসে। আজ ওরা সব বন্ধু-বান্ধবীরা এক হয়েছে। বছরে কয়েকবার ওরা একত্রিত হয়, আড্ডা দেয়। আজও তেমন একটা দিন। ওদের চারজনের কথায় বিঘ্ন ঘটিয়ে শিলা একটা কাশি দেয়। সবাই ওর দিকে তাকায়। ও বলে,
"আজ তোদের সাথে একটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলব। শুনবি?"

বাকি চার জন সোৎসাহে রাজি হয়। শিলা আঙুল তুলে খানিকটা দূরে দাঁড়ানো সুদর্শন কবিরকে দেখায়। কবির গড়গড় করে ইংরেজি বলছে। সবার সাথে হাসিমুখে পরিচিত হচ্ছে। প্রত্যেকেই তার দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে একবার হলেও তাকাচ্ছে। তাকাতে বাধ্য হচ্ছে বলা চলে। শিলা বলে,
"ওকে দেখে কেমন মানুষ মনে হয়? উচ্চ শিক্ষিত, সুদর্শন, মিশুক, নম্র এবং সুন্দর মনের একজন মানুষ। তাই তো?"

চারজনই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। তাদের কারোরই সন্দেহ নেই যে কবির একজন যোগ্য সঙ্গী, সেরা পুরুষ।

শিলা হাসে। হেসে ওর হাতের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরায়। হাতে ছোপছোপ রক্ত জমাট বাঁধার দাগ। ওর গলা, পেটের কিছু জায়গাতে কাপড় ঘষে প্রসাধনী তুলে ফেলে। সেখানেও কালশিটে পড়া দাগ। চার প্রিয় বান্ধবীর হতভম্ব মুখের দিকে একবার তাকিয়ে সে হু-হু করে কেঁদে ওঠে। মৌয়ের দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বলে,
"ঐ যে গড়গড় করে ইংরেজি বলতে পারা সুদর্শন পুরুষটাকে দেখছিস না? ও বাসাতেও এমন ইংরেজি-বাংলা মিশিয়ে আমাকে জাত-পাত এক করে গালি দেয়। ও যখন আমাকে জন্তুর মতো মারে, তখনও ওর মুখ থেকে অধিকাংশ ইংরেজি শব্দ বেরোয়। তুই কি এমন ইংরেজি বলা স্বামী চাস? হ্যাঁ, আমি বলছি না যে সব শিক্ষিত, স্মার্ট পুরুষ এমন। কিন্তু যে কবিরের সাথে তোরা সর্বদা আফজাল ভাইয়ের তুলনা করিস, এই দুজনার ভেতর কে যোগ্য? আমি বাইরে লোকদেখানো হাসি হেসে থাকি। এখান থেকে বেরিয়ে বাসায় ঢুকতে আমার বুক কাঁপবে। মনে হবে হয়তো কোনো ভুলচুক করে ফেলেছি এখানে, যার শাস্তি ও দিবে। ও পুরো জগতের সামনে সেরা পুরুষ, কিন্তু ঘরে ঢুকলে ও অন্য পুরুষে পরিণত হয়। ওর মোবাইলে অন্তত কুড়িখানেক নারীকে পাবি। যাদের সবাই ওর প্রিয়তমা। আর আমি? তোরা সবসময় বলিস, শিলা এই বয়সেও কীভাবে এত স্মার্টনেস ধরে রেখেছে! অথচ এই মেয়েটাও তার চোখে খ্যাত, কুশ্রী!"

মৌ স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর মানসপটে ভেসে ওঠে সাধাসিধা আফজালের মুখচ্ছবি। যে হয়তো এত স্মার্ট না, যে হয়তো গড়গড় করে ইংরেজি বলে সবার সামনে তার মুখ রাখতে পারে না, কিন্তু সে ঘরে তার স্ত্রীকে রানির মতো করে রাখে। সে জগতের সব বাধা বুক পেতে নিয়ে মৌকে প্রশান্তিতে রাখার চেষ্টা করে। সে পারুক না পারুক চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। আর বিয়ের পর, এই দুবছরে সে মৌকে শারীরিক, মানসিক, মৌখিক কোনোভাবেই হেনস্তা করেনি। গালি, মারধোর, পরকীয়া তো দূরে থাক!

মিলা, আকাশী, শায়লা তিনজনের চোখে সমবেদনার ছায়া পড়ে। ওরা মুহূর্তের জন্য নিজের সংসারের ছবি কল্পনা করে। না, তারা কেউই পুরোপুরি সুখী না। সবার জীবনেই একটা না একটা বড়ো সমস্যা বা অপূর্ণতা আছে। বাইরে যতই ঠাট বজায় রাখুক, ভেতরে ভেতরে তারা সবাই ভুক্তভোগী।

মিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
"কেউ মূলত জীবনে সবদিকে সমান পাবি না। কোথাও না কোথাও ঘাটতি থাকবেই। তাই ঘাটতির দিকটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। শিলা চেষ্টা কর কবিরের সাথে কথা বলে ওর সমস্যাটা কোথায় তা জানতে। ও কী চায় তা জেনে নে। আর মৌ দয়া করে আফজাল ভাইয়ের মতো একজন সরল মানুষকে এত তুচ্ছ হিসেবে বিচার করিস না। উনার একটা দুর্বলতা আছে, তাকে তা শিখিয়ে পড়িয়ে নে। তুই পারবি। দয়া করে নিজে যেচে জীবনে ঠকতে যাস না। হ্যাঁ আমি এটাই বলছি যে সব ইংরেজি জানা পুরুষ কবিরের মতো না, আবার সব ইংরেজি না জানা পুরুষ আফজালের মতো না। কে কেমন মানুষ তার বিচার তার প্রকৃত রূপের আচরণে। বাইরের মেকি রূপের আচরণে মানুষকে তোরা বিচার করিস না।"

আকাশী লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে। তার ভেতর অপরাধবোধ কাজ করে। সত্যিই তো, তার নিজের স্বামীও তো সবদিকে সমান যোগ্য না!

মৌ উঠে দাঁড়ায়। সে একবার সামনে বসা শিলাকে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে দেখে। তারপর খানিক দূরে দাঁড়িয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলা সুদর্শন কবিরকে দেখে। তারপর ভিড় এড়িয়ে রেস্তোরা থেকে বেরিয়ে আসে।

মোবাইলটা বের করে আফজালকে কল করে। রিসিভ করতেই বলে,
"আমার এত ভিড়ের ভেতর মাথা ধরেছে। একটু এসে নিয়ে যেতে পারবে? আশেপাশে আছো?"
ওপ্রান্ত থেকে "আসছি" বলেই মানুষটা কল কেটে দেয়।

বেলা পড়ে এসেছে। তপ্ত রোদের ঝাঁঝ কমে এসেছে। খানিকটা দূরেই একটা ফাঁকা জায়গাতে ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রা এসে বসেছে। মৌ সেদিকে এগিয়ে যায়। ওর মনটা বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। মিনিটখানেক পরে আফজালের ডাকে ওর ভাবনায় ছেদ পড়ে। ও এসে ব্যস্ত হয়ে বলে,
"এখন কেমন লাগছে? দ্রুত বাসায় চলো। তোমার বিশ্রাম দরকার।"
জবাবে মৌ একটুকরো ম্লান হাসি উপহার দিয়ে বলে,
"এক মিনিটের ভেতর কোথা থেকে এলে? নিশ্চয়ই আশেপাশে কোথাও ছিলে?"
আফজাল ভীষণ লজ্জা পায়। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
"কাল তুমি পার্টির কথা বলায় অফিস থেকে ঘুরতে বেরোবো বলে ছুটি নিয়েছিলাম। তাই কাজ ছিল না। ভাবলাম তোমার আশেপাশে থাকি, যাতে রাত হলেও তোমাকে নিয়ে দ্রুত বাসায় পৌঁছাতে পারি।"

মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলে,
"আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাকে ছোটো ভাবতে গিয়ে কবে-কবে যে নিজেই এত ছোটো মনের মানুষে পরিণত হয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। তুমি আমার যোগ্য, আমিই বরং তোমার অযোগ্য।"
অফজাল প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মৌয়ের মুখের দিকে তাকায়। তারপর মৌয়ের একটা হাত ওর একহাতের মুঠোয় চেপে ধরে বলে,
"ক্ষমা এবং ভালোবাসা, দুটোই আমৃত্যু তোমার জন্য থাকবে। এসব আর ভেবো না। যেদিন তুমি আমাকে ভালোবেসেছো, সেদিনই আমি আঘাত করার অধিকারও তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। সব তোমার হাতে। তুমি যা চাও!"
মৌ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
"মাথায় ব্যথা হয়নি, আমার মাথায় সমস্যা হয়েছিল। আজ সেসব সমস্যা চিরতরে কেটে গেছে। একটু ফুসকা খাওয়াতে নিয়ে যেতে পারবে?"

আফজাল ভীষণ খুশি হয়ে ওঠে। বহুদিন পর ফুটপাত দিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে হাঁটতে-হাঁটতে বলে,
"সেই বিয়ের পর প্রথমদিকে যেখানে ফুসকা খেতাম সেখানে যাবে?"
মৌ উৎসাহের সাথে হ্যাঁ বলে।

শহরের বুকে সন্ধ্যা নেমেছে। শান্ত রাজপথের বুক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রাস্তাটা নির্জন। খানিকটা দূরে গাঢ় অন্ধকার। মৌ শক্ত করে আফজালের হাতটা আঁকড়ে ধরে। তারপর বিড়বিড় করে বলে,
"তুমি আমার সেরা বন্ধু। আজ থেকে তোমার হাত আর কখনও ছাড়বো না। তুমি ছাড়বে?"
আফজাল অন্ধকারে হেসে ওঠে। ওর হাসি দেখতে না পেলেও মৌ অনুভব করে। আফজাল হাসিমুখে বলে,
"মরলে ছাড়বো।"
মৌ রাগ করে ফেলে...
মায়াবন্ধন
মাহমুদা মিনি

30/05/2022

Writter by : SG Faysal
গল্প : মন্ডল বাড়ির ভূত।

পর্ব : ০৩
দেখে তারই অফিসের বস। সময়টি ছিলো রাতের বেলা। রাস্তায় তেমন লোকজন ছিল না। রহমান সাহেব কি করবে বুজতে পারছে না। সে ভয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসে, আর লাশটা ওখানেই রাস্তায় পড়ে থাকে । রহমান সাহেব বাসায় পৌঁছে রাতে খাওয়া দাওয়া না করেই নিজের রুমে গাপটি মেরে বসে থাকে। রহমান সাহেবের স্ত্রী যখন তাকে জিজ্ঞেস করে বলে "কি হয়েছে" আজকে আপনাকে কেমন যেনো অন্যরকম লাগছে। কোনো কথা বলছেন না, খাওয়া দাওয়াও করলেন না। আপনার কী শরীর খারপ হয়েছে নাকি? রহমান সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলে 'না' আমার কিছুই হয়নি। তবে ভাবছি একটা কথা!
কি কথা আমি কি জানতে পারি?
অবশ্যই, তোমাকে নিয়েইতো ভাবছি। সুতরাং তুমি জানতে পারবে না তো কে জানতে পারবে বলো। তবে আমার একটা শর্ত আছে। শর্ত! কী শর্ত...........

27/05/2022

আমার বর বাংলাতে বার্তা লিখতে পারে না। এটা নিয়ে মাঝে-মাঝে বেশ খারাপ লাগে। সব সময় তো আর কলে গল্পগুজব করা সম্ভব না! তার মোবাইলে বাংলা কিবোর্ডই নেই। জীবনে ok আর কোনো স্টিকার ছাড়া সে আমাকে কোনো বার্তা পাঠায়নি।

এই দুঃখ কীভাবে মোচন করা যায় ভাবছিলাম। ইতোমধ্যে সে নতুন একটি মোবাইল কিনে ফেললো। তার কয়দিন পর আমার জন্মদিন আসলো। বিয়ের পর প্রথম জন্মদিন বলে কথা!

আমার আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে, সে যতটুকু সম্ভব আয়োজন করলো। কেক খাওয়ার পর সে আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো,
"মিনি? বিয়ের পর এটা তোমার প্রথম জন্মদিন। আজ এই সুন্দর দিনে তুমি আমার কাছে কী চাও?"
আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম। বললাম,
"যা চাই, তা দিবে?"
ও এক মুহূর্তও না ভেবে বলল,
"আমার সাধ্যের ভেতরে যা চাও তাই দিবো। বলো।"
আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম। ও তখন চিন্তিত হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বললাম,
"এখন থেকে আমাকে প্রায়ই বাংলাতে বার্তা লিখে পাঠাতে হবে।"
ও ভীষণ অবাক হয়ে বলল,
"ম্যাসেজ! তুমি চাও আমি তোমাকে মাঝে মাঝে বাংলাতে ম্যাসেজ লিখি?"

আমি হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়লাম। ও বলল,
"শাড়ি, গয়না কত কী চাইতে পারতে। তা রেখে ম্যাসেজ!"
আমি হেসে বললাম,
"কেন? পারবে না?"
ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে বলল,
"কিন্তু তুমি তো জানো, আমি বাংলা টাইপিং পারি না। শিখাবে?"
আমি বললাম,
"শিখাবো। আজ থেকে তোমার প্রশিক্ষণ শুরু।"
ও খুব আগ্রহ নিয়ে বলল,
"আমাকে কী কী করতে হবে, বলো।"
আমি বললাম,
"আজ আমি তোমার মোবাইলে বাংলা কিবোর্ড নিয়ে দিবো। তোমার কাজ হলো প্রতিদিন ১০ বার করে আমাকে একটা বার্তা লিখে পাঠানো। পারবে?"
ও খুশি হয়ে বলল,
"হু পারবো। কী ম্যাসেজ?"
আমি ওর হাতটা চেপে ধরে বললাম,
"আমি তোমাকে ভালোবাসি।"

তারপর দুজনে একসাথে হেসে ফেললাম। মূলত কেউই না হেসে পারিনি। এভাবে দশদিন কেটে গেল। আমার বর কিন্তু আগের চেয়ে দ্রুত বার্তাটা লিখতে পারছে। একদিন রাতে ও আমাকে কল করে বলল ওর ঘুম আসছে না। কলে কথা বলবে। আমি বললাম আমি মায়ের সাথে ঘুমোচ্ছি। এখন কথা বললে মায়ের ঘুম ভেঙে যাবে। এটা তো ঠিক হবে না। বললাম, "চলো বার্তা লিখি!"

এখন আমার বর গরুর রচনার মতো করে বার্তা লেখা শিখে গিয়েছে। ও আর আমি দুজনেই অফিসের কাজের ফাঁকে সাংসারিক নানান হিসাব বা ব্যক্তিগত আলাপ বার্তার মাধ্যমেই সারি। আমারও আর অনলাইনে একা লাগে না। ওকে সঙ্গী হিসেবে সবখানেই পেয়ে গেলাম।

একদিন ওর বাংলা লেখার গতি দেখে বললাম,
"এই যে ছাত্র! তুমি তো আমাকেও ছাড়িয়ে গেলে!"
ও আমাকে একহাতে জাপটে ধরে বলল,
"আমি তোমাকে ভালোবাসি, মিসেস আর.!"

বার্তা
মাহমুদা মিনি

23/05/2022

Writter by : SG Faysal
গল্প : মন্ডল বাড়ির ভূত।

পর্ব : ০২
রহমান সাহেব ঢাকাতে ছোট খাটো একটি চাকুরি করে। ব্যাস্ততার কারনে পরিবারকেই ঠিক মতো সময় দিতে পারে না আর কোথাও ঘুরতে যাওয়া তো দুরের কথা। রহমান সাহেব বাড়িতে সবাই সম্মান করে। আর তাছাড়া রহমান সাহেব এক কথার মানুষ। সে মুখ দিয়ে যা বলে তাই সবাইকে মেনে নিতে হয়। এজন্য তার বউ অথবা পরিবারের অন্য কেউ তাকে বেড়াতে যাওয়ার বিষয় কোনো কথা বলে না।

একদিন অফিস শেষে রহমান সাহেব গাড়ি চালিয়ে বাসায় যাচ্ছিল। এমন সময় হটাৎ কেউ একজন রহমান সাহেবের গাড়ির সামনে এসে পড়লো। রহমান সাহেবও হটাৎ করে গাড়ি ব্রেক করতে না পেরে লোকটির উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে লোকটিকে পিষিয়ে ফেলে। রহমান সাহেব তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে একটু পিছনে গিয়ে দেখে লোকটি আর কেউ নয় তারই........

21/05/2022

Writter by : SG Faysal
গল্প : মন্ডল বাড়ির ভূত।

পর্ব : ০১.

গ্রামের নাম কাঠাল পাড়া। খুবই শান্তু সৃষ্ট সুন্দর একটি গ্রাম। এখানে রয়েছে সুন্দর সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র। তবে পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও এখানে পর্যটক তেমন একটা আসে না। যদিও কেউ আসে তাহলে তাদেরকে আর খুজে পাওয়া যায় না। কোথায় হারিয়ে যায় এই রহস্য আজও কেউ উদঘাটন করতে পারে নি।

বিঃদ্র: সামান্য ব্যাস্ততার কারণে বড় করে গল্প দিতে পারছি না। এবং যথাসময়েও দিতে পারছি না। তবে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই সকল গল্প দেওয়া শুরু করবো।

তপ্ত দুপুর। এই উত্তাপ যেন হৃৎপিণ্ডটাকেও জ্বালিয়ে দিতে পারবে। ফাঁকা রাস্তায় ছায়ার কোনো দেখা নেই। সামনে থমকে থাকা গাড়ির লা...
03/01/2022

তপ্ত দুপুর। এই উত্তাপ যেন হৃৎপিণ্ডটাকেও জ্বালিয়ে দিতে পারবে। ফাঁকা রাস্তায় ছায়ার কোনো দেখা নেই। সামনে থমকে থাকা গাড়ির লাইনটার শেষ অবধি দেখা যায় না। আদি একনজর সেদিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। এমন জ্যামের কবলে তাকে প্রায়ই পড়তে হয়। কিন্তু আজ সে একটু বেশিই ব্যস্ত। আজ বসের সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা আলোচনা ছিল, তা ফেলে রেখে সে দ্রুত ছুটি নিয়েছে। আজ তাকে খুব দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। নাহলে একমাত্র মেয়ে লাবণ্যের অভিমান কিছুতেই ভাঙানো যাবে না। আজ মেয়েটার পঞ্চম জন্মদিন।

বাসা এখান থেকে আরও দুই কিলোমিটার মতো দূরে হবে। কিন্তু এ জ্যাম দুই চার ঘণ্টায় ছাড়ানোর নয় বুঝতে পেরে, সে রিকশা থেকে নেমে পড়ে। ভাড়া চুকিয়ে ৫০টা টাকা রিকশাওয়ালা চাচাকে বসশিশ দেয়। বুড়ো চাচার ঘামে ভেজা মুখটা খুশিতে ঝলমল করে ওঠে। মনে হয় আরেকটা সূর্য জ্বলে উঠেছে...

আদি ফুটপাত দিয়ে দ্রুত হাঁটতে চেষ্টা করে। কিন্তু ফুটপাতে এত দোকান আর এত ভিড় যে তাকে রীতিমতো মানুষের স্রোত ঠেলে এগোতে হচ্ছে। ঘামে গায়ের শার্টটা জবজবে হয়ে গেছে। কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম নামছে। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটাও হাতুড়ি পেটানোর মতো করছে। অথচ থামলে চলে না।

বাসার প্রায় সামনে এসে, হঠাৎ তার খেয়াল হয় মেয়ের জন্য কোনো নতুন খেলনা কেনা দরকার। দোকানে ঢুকে সে রীতিমতো অবাক হয়। অধিকাংশ খেলনাই তার মেয়ের আছে। একমাত্র সন্তানকে সে কোনো অভাবে রাখেনি। শেষমেষ দেখেশুনে একটা দামী পুতুল নিয়ে দোকান থেকে বেরোয়। এমনকি মোড়ের মাথায় এসে একগুচ্ছ গোলাপ কিনে নিতেও তার বিন্দুমাত্র ভুল হয় না।

সে বিশাল গেট পেরিয়ে বাসার সামনে চলে আসে। মনে পড়ে যায় লিফট নষ্ট। এই গরমে তাকে তিনতলা অবধি সিঁড়ি টপকে বাসায় ঢুকতে হবে। বিরক্তিতে কপালটা কুঁচকে ওঠে। কিন্তু উপায় তো নেই! শেষ সিঁড়ির ধাপটাতে পা রেখে সে আর তাল সামলাতে পারে না। হুড়মুড় করে পড়ে যায়।

সে লজ্জিত হয়ে দ্রুত উঠে বসতে যায়। এমন সময় একটা মেয়ে ছুটে এসে তার হাত টেনে তোলার চেষ্টা করে। আদি তার হাত ধরে উঠে পড়ে। মেয়েটা ইতস্তত না করেই পড়ে থাকা জিনিসগুলো তুলে হাতে ধরিয়ে দেয়। এতক্ষণে আদি মেয়েটার দিকে মনোযোগ দেয়। লম্বা, ফর্সা, ছিপছিপে গড়নের একটা মেয়ে। একটা পাতলা সিল্কের শাড়ি পরে আছে। পায়ে দামী জুতা। ঠোঁটে কড়া লিপিস্টিক আর গলায় একটা সরু চেইনেই মেয়েটাকে অন্য রকম আকর্ষণীয় লাগছে। আদি ধন্যবাদ জানানোর জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিল, তখনই মেয়েটি সহাস্যে বলে,
"থাক, ধন্যবাদ দিতে হবে না। এরপর থেকে সাবধানে চলবেন। আসি।"

মেয়েটি আর উত্তরের অপেক্ষা করেনি। খুব স্বাচ্ছন্দ্য ভঙ্গিতে সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নেমে যায়। আদির ঘোর কাটে। ও মৃদু হেসে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

কলিংবেল চাপতেই ময়না এসে দরজা খোলে। ময়নার বয়স ৩০ বছর। ও আদির বাসায় কাজ করে, সারাদিন থাকে, রাতে ওর বাড়িতে ফিরে যায়। লাবণ্যের দেখাশুনা করা আর রান্নাবান্নার সব কাজ ওই করে। আদি ময়নাকে চুপিচুপি বলে,
"লাবণ্য আজ কেঁদেছে নাকি?"
ও খানিকটা অবাক হয়। বলে,
"কেন ভাইজান? মণি কাঁনবে কেন?"
আদি বলে,
"তুই ভুলে গেছিস? আর ওর জন্মদিন। গতকাল ও আমাকে বলেছিল আজ যেন আমি সারাদিন বাড়িতে থাকি। অফিসের জন্য তা আর পারলাম কই?"
ময়না হাসে। বলে,
"হয়তো কাঁনতো, কিন্তু কাঁন্দেনি। সময় পায়নি।"
আদি হাতের জিনিসগুলো এক কোণায় নামিয়ে রেখে বলে,
"সময় পায়নি মানে? সারা সকাল করেছেটা কী?"
ময়না বলে,
"আর বলবেন না ভাইজান। পাশের ফ্ল্যাটে এক নতুন আফা আইছে। আফা সকালে এসে হাজির। উনি মনে হয় জাদুকর হবে। এমন সব মজার গল্প বইলে মুহূর্তের মধ্যি আমাগের সাথে মিশে গেল! খুব মজার মানুষ। এতটুকু সময়ের মধ্যি লাবণ্য মণি উনার ভক্ত হয়ে গেছে।"
আদি ভ্রু কুচকে ভাবে। বলে,
"লম্বামতো ঐ মেয়েটা?"
ময়না হাতের কাজ করতে করতে জবাব দেয়,
"আফার সাথে দেখা হইছে নাকি?"

আদি আর জবাব দেয় না। আনমনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে মেয়ের ঘরে গিয়ে উঁকি দেয়। ভেতরের দৃশ্য দেখে তার মনটা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। তার কলিজার টুকরাটা মুখের নিচে একটা হাত দিয়ে কাত হয়ে ঘুমোচ্ছে। আদির বুকটা ভরে ওঠে। একমাত্র এই মুখটা তাকে জীবনের সমস্ত ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।

ঘরে ঢুকে মেয়েকে বিরক্ত না করে সে নিজের ঘরের চলে যায়। গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে। ময়না ততক্ষণে প্লেটে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে। আদি কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
"লাবণ্য তো দুপুরে ঘুমোয় না। আজ হঠাৎ ঘুমোলো!"
ময়না ফিক করে হেসে ফেলে। বলে,
"সব ঐ নতুন আফার কেরামতি। কী যাদু জানে বুঝলাম না। ওরে ঘুমোতে বইলে মাথায় হাত বুলাইয়ে দিলো, আর মেয়েটাও ঘুমিয়ে পড়লো।"

ভেতরে ভেতরে এই অপরূপা, রহস্যময়ীর ব্যাপারে আদির কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। কিন্তু ময়নার সামনে সেই কথা প্রকাশ করা চলে না। অগত্যা মনকে প্রবোধ দিয়ে রাখলো। তবে অজানা একটা আনন্দ তার মনকে দোলা দিয়ে যেতে থাকলো...

বিকালে কেক কাটার সময়ে লাবণ্য বায়না শুরু করলো। সে অহনা আন্টিকে ছাড়া কেক কাটবেই না। আদি তখন বুঝতে পারলো সেই পরমা সুন্দরীর নাম অহনা। যতটা না মেয়ের ইচ্ছায়, তারচে' বেশি নিজের চোখের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য, সে পাশের বাসার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। কী মনে করে কলিংবেলে চাপ দেবার বদলে দরজায় ঠকঠক করে টোকা দিলো। মুহূর্তের ভেতর দরজা খুলে গেল। এত দ্রুত দরজা খোলায় আদি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে বলল,
"ইয়ে মানে, আজ আমার মেয়ের জন্মদিন। ও আপনাকে যেতে বলেছে। অনুগ্রহ করে যাবেন?"
মেয়েটা হাত দিয়ে মুখের সামনের চুলগুলো সরিয়ে একদৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। গম্ভীর হয়ে বলে,
"শুধু মেয়ের দাওয়াতে তো যেতে পারি না। আপনি দাওয়াত দিলে অবশ্য যেতে পারি।"
কথাটা শুনে আদির মুখের উপর থেকে কালো ছায়াটা সরে যায়। ও খুশি হয়ে বলল,
"আসুন না! আপনি আসলে আমি খুব খুশি হবো। মেয়েও খুশি হবে।"
অহনা বলে,
"আপনি যান, আমি পাঁচ মিনিটের ভেতর প্রস্তুত হয়ে আসছি।"

অতঃপর মেয়েটা মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। আদি হেসে ওঠে। কিন্তু ওর কী যেন একটা ব্যাপার অদ্ভুত লাগে। অথচ ব্যাপারটা তার মস্তিষ্ক ধরতে পারে না।

কেক কাটার পর তিনজনে খেতে বসে। খেতে খেতে অহনা আর লাবণ্য খুব পরিচিত মানুষের মতো গল্প করতে থাকে। আদি চুপচাপ ওদের লক্ষ্য করে যায়। তার ভেতরের চাপা উত্তেজনাটা এতক্ষণে কমে এসেছে। বরং সেখানে উদ্‌বেগ জন্মাচ্ছে। হঠাৎ করে মেয়েটার আগমন তাকে ভাবাচ্ছে।

খাওয়া শেষ হতেই অহনা কী একটা ভেবে তড়িঘড়ি করে লাবণ্যর কাছ থেকে বিদায় নেয়। আদির কাছে এসে বিদায় চায়, কিন্তু সে হঠাৎ বলে যে,
"একটা প্রশ্ন করবো?"
অহনা অবাক হয়ে তাকায়। তারপর বলে,
"আমার চেহারার প্রশংসা করবেন বুঝি?"
আদি তার রসিকতায় যোগ দেয় না। বেশ নীরস কণ্ঠে বলে,
"আপনাকে আজ মোট তিনবার দেখেছি। তিনবারে আপনাকে দুই রকম মনে হলো কেন বলুন তো? মেকআপ করার পর আপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা লাগে। কী যেন একটা এখন দেখতে পাচ্ছি না! তাছাড়া মুখটা কেমন চেনা চেনা..."
অহনা খুব গোপনে চমকে ওঠে। কিন্তু বাইরে স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রেখে বলে,
"ও। আপনি সম্ভবত কপালের ডানদিকে আমার জন্ম দাগটার ব্যাপারে কিছু বলছেন। আমি ঘরের বাইরে বেরোলে ওটা মেকআপ করে ঢেকে রাখি। বোঝেনই তো, মেয়েরা কেমন নিজেকে পরিপাটি, নিখুঁত দেখাতে পছন্দ করে!"
আদি এতক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বলে,
"হ্যাঁ, ওটাই।"
অহনা কপট রাগের ভঙ্গি করে বলে,
"আপনার চোখ এতদিকে থাকে? পাকা লোক তো আপনি! মুখে জন্ম দাগ আছে, এমন পরিচিত কেউ আছে বা ছিল?"
আদি চমকে ওঠে। ওর কেঁপে ওঠাটা আড়চোখে লক্ষ্য করে অহনার ঠোঁটের কোণে একটুকরো ক্রূর হাসি ফোটে। তারপর তা লুকিয়ে পড়ে...

বিয়ের দুবছর পরই মেয়ের জন্ম দিয়ে লাবণ্যর মা মারা যায়। তারপর থেকে আদি একা।

যত দিন যাচ্ছে লাবণ্য তত অহনার প্রতি আসক্ত হচ্ছে। অহনাও প্রায় সারাদিন এই বাসায় পড়ে থাকছে। এতে ময়নাও সময়ে অসময়ে ছুটি পাচ্ছে। ফলে সে হাঁপ ছেড়ে বাঁচছে। বহুদিন সে ছুটি পায় না। আদিও ইদানীং বেশ অফিস কামাই করছে। নানান অজুহাতে ছুটি নিচ্ছে। মূলত তার নারী সঙ্গহীন জীবনে আচমকা এমন পরমা সুন্দরীর আগমণ তাকে অতিশয় পুলকিত করছে। তবে বন্ধুত্বটা মজবুত করে নিতে পারলেও মেয়েটার একটা অস্পষ্ট ঠিকানা ছাড়া সে কিছুই জানতে পারেনি। সে নাকি ঢাকা শহরে চাকরি খুঁজতে এসেছে। দেশের বাড়ি বরিশালে। মা-বাবার অত্যাচারে পালিয়ে এসেছে। এটুকুই আদি জানে। তবে তার কাছে রূপের গুণটা এত মূল্যবান হয়ে উঠেছে যে, সে অন্যদিকে মন দিতেই আগ্রহী না।

মাসখানেক পেরিয়েছে। আদি আর নিজের ভাবাবেগকে দমিয়ে রাখতে পারে না। অহনাকে সোজা প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে। মেয়েটা প্রথমে অবাক হয়। তারপর দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে বলে,
"আমার জীবনে কোনো প্রেমিক পুরুষ আছে কি না জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল না?"
আদি মাথা নিচু করে রুদ্ধশ্বাসে বলে,
"তা জানার দরকার নেই। আমি শুধু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার তোমাকেই চাই।"
অহনা সোফার উপর বসে পড়ে। তারপর আটকে রাখা নিঃশ্বাসটা আস্তে করে বের করে দিয়ে বলে,
"আমাকে বিয়ে করবেন?"
আদি অবাক হয়, আবার খুশিও হয়। তার যেন তর সইছিল না। সে সাত পাঁচ না ভেবেই বলে,
"করবো। কখন করতে হবে বলো?"
অহনা আদির জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখের দিকে তাকায়। তারপর নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বলে,
"আজ, এখনই।"

কাজী অফিস থেকে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে আদি চিন্তায় পড়ে যায়। এতক্ষণে তার মনে হয় সে বড়ো তাড়াহুড়ো করে ফেললো। আরেকটু সময় নিয়ে বিয়েটা করা যেত! কিন্তু পরোক্ষণেই পাশে দাঁড়ানো হাস্যোজ্জ্বল মুখটার দিকে তাকিয়ে তার সব চিন্তা উবে যায়। জীবন একটাই। তাই জীবনে ঝুঁকি না নিলে কিছুই করা সম্ভব হয় না। এবারেও সম্ভবত সে ঠকবে না।

লাবণ্য সেদিন থেকে অহনাকে কেমন যেন এড়িয়ে চলতে শুরু করলো। তার পাপা যে আবার বিয়ে করেছে এটা সে মেনে নিতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে পাপার আদর বুঝি এবার ভাগ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য নতুন বিয়ের পর তার পাপা তাকে কম সময় দিচ্ছে এটা সে লক্ষ্য করেছে। এজন্য তার মনে তীব্র অভিমান জমেছে। সব দোষ যেন ঐ নতুন আন্টিটার!

আজ ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ। অহনা মনের মতো করে সাজগোজ করেছে। স্বামীর উপহার দেওয়া সবচে' দামী শাড়িটা পরেছে, গায়ে ভারী গহনা। একেবারে নববধূর সাজে সে সেজেছে। কিন্তু সে আজ মেকআপ করে সেই জন্ম দাগটা আর ঢাকেনি। যেন সে ইচ্ছে করেই দাগটা পুরো জগতকে দেখাতে চায়।

বিকাল হয়েছে। অহনা সেজেগুজে বসে আছে। আগেই সে ময়নাকে দিয়ে লাবণ্যকে বাসার পাশের শিশুপার্কে ঘুরতে পাঠিয়েছে। আপাতত সে বাসায় একা। কিন্তু সে আর বেশিক্ষণ একা থাকবে না। ফোন করে আদিকে বাসায় ডেকেছে। ওর ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য আজ আদির হয়নি। অফিস থেকে ছুটে এসেছে।

কলিংবেল চাপার পর আদি আর চোখ ফেরাতে পারে না। তার স্ত্রীকে এত সুন্দর লাগছে যে সে দুচোখ দিয়ে সৌন্দর্য পরিমাপ করে উঠতে পারছে না। অহনা স্বামীর হাত ধরে ঘরের ভেতর টেনে নেয়। তারপর ওকে ফ্রেশ হতে বলে। আদি তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়। ঘরে গিয়ে বসতেই অহনা এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত এগিয়ে দেয়। একগাল হেসে বলে,
"লেবুর শরবত। খেয়ে ঠান্ডা হও।"

আদির মাথার ভেতর ঘুরছে। দৃষ্টিসীমা কমে এসেছে। ক্ষীণ দৃষ্টিতে সে সামনে তাকায়। মাথাটা অবশ্য বারবার নুয়ে পড়ছে। সোজা করে রাখতে পারছে না। সে ঝাপসা চোখে সামনে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকা অহনাকে দেখে। ঘুমে ঢলে পড়তে পড়তে বলে,
"এই, মজা করো না তো! আমার বাঁধন খোলো।"
অহনা হিংস্র চোখে ওর দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
"শিউলিকে যখন বাঁধছিলি, তখন ও একই কথা বলেছিল তাই না?"

আদির দৃষ্টিশক্তি কমে আসলেও কানদুটো সজাগ ছিল। কথাটা শুনে সে ভয়ানক চমকে ওঠে। তার মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে যায়। বলে,
"তু...তুমি কে?"
অহনা ঘৃণায় চোখ সরু করে বলে,
"মনে পড়ে আদি সাহেব? বড়োলোকের লাফাঙ্গা ছেলে তুমি। শখ করে গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলে। এক মাসের ভেতর একটা সরল গ্রাম্য মেয়েকে ভুলিয়ে নিয়ে শহরে পালাচ্ছিলে। মেয়েটার গালে চোখে পড়ার মতো একটা জন্মদাগ ছিল। পথে তোমরা লঞ্চে উঠলে। মেয়েটা তার ভুল বুঝতে পেরে বাড়ি ফিরতে চাইলো। তোমার দম্ভে আগুন ধরে গেল। সেই সাথে আগুন ধরলো লঞ্চে। গভীর রাত। দাউদাউ করে যখন আগুন জ্বলছে তখন তুমি লঞ্চের দুই তলার একটা কেবিনের ভেতর মেয়েটাকে বেঞ্চের সাথে বেঁধে ফেললে। তারপর দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে বেরিয়ে পড়লে? তারপর কী হয়েছিল বলো তো?"

আদি তার কাঁধের উপর ঝুলন্ত মাথাটা টেনে সোজা করার চেষ্টা করে আতঙ্কিত হয়ে বলল,
"তুমি কে?"
অহনা সামনে বাঁধা পশুটার মুখে একদলা থুতু ছেটালো। তারপর বলল,
"আমি শিউলির বোন। শেফালী। আমরা তখন আমার বোনকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলাম। ওকে কল দিচ্ছিলাম। শেষবার ও রিসিভ করেছিল। বলল আগুন লেগে ওর হাতের দড়ি খুলে গেছে। কিন্তু ওর পা শক্ত করে বাঁধা। ও বাঁচবে না। ও সত্যিই আর বাঁচেনি। সেদিনও ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ ছিল।"

আদির দেহটায় আগুন ধরে গেল। খাবলা খাবলা মাংস খসে পড়লো দেহ থেকে। আগুন ধীরে ধীরে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো।

পরদিন দুপুরে পরপর দুটো মৃত্যুর খবর টিভির পর্দায় দেখা গেল। একটা ঢাকার মহাখালী এলাকায় নিজ ঘরের ভেতর এক পুরুষের পুড়ে মরার খবর, আরেকটা মালিবাগ এলাকার একটা হোটেলের বাথটবে ডুবে মহিলার মৃত্যুর খবর।

অহনা জানতো না, আদিও তার মতোই ধুরন্ধর ছিল!

(সমাপ্ত)

গল্প : প্রতিচ্ছায়া
লেখায় : মাহমুদা মিনি

07/07/2021

writter by: SG Faysal

গল্প: মানুষের মাংস।

পর্বঃ ০৪

তার কিছুক্ষণ পরেই একজন কালো লোক একটি ডেক্সিতে করে অনেক রকমের মোকরচক খাবার নিয়ে হাজির হয়। লোকটি এতোটাই কালো যে তার মুখটা একটুও বোজা যাচ্ছে না, শুধু চোখ দুটো সামান্য দেখা যাচ্ছে। তারপর মহিলা একটি কলা গাছের পাতায় ছেলেটিকে সেই মাংসগুলো খেতে দেয়। ছেলেটি মাংস নিয়ে অনেকক্ষণ বসে। ছেলেটির বসে থাকা দেখে ঐ মহিলা বলে উঠে ' কি হলো খাচ্ছোনা কেনো '? তারপর ছেলেটি বলে আর কিছু নেই শুধু কি মাংসই খাবো। ছেলেটির মুখ থেকে এ কথা শোনার পর কালো লোকটি সামান্য অট্ট হাসি দিয়ে বললো এখানে শুধু মাংসই পাওয়া যায় অন্য কিছু নয়। তোমার যত ইচ্ছা খেতে থাকো।

ছেলেটি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো। কিছুক্ষণ খাওয়ার পর একদম হাফিয়ে উঠে। তার বলে আর খেতে পারবো না অনেক খেয়েছি। খেতে খেতে পেট পুরো ভড়ে গেছে এখন যাই।৷ যাই মানে! কোথায় যাবে তুমি? কেন বাসায়। তুমি চাইলেও এখন আর বাসায় যেতে পারবে না। এ বলে লোকটি ভয়ংকর এক অট্ট হাসি দিলো। লোকটির এমন আচরণ দেখে এখন ছেলেটি ভীষণ ভয় পাচ্ছে। এবার লোকটি ভয়ংকর গলায় বলে তুমি কি জানো এতক্ষন তুমি কিসের মাংস খেলে। তুমি এতক্ষণ যা খেলে এটা তোমার মতোই কারো না কারো মানুষের মাংস। আমরা শুধু মানুষের রক্ত আর মুন্ডুটা চিবিয়ে খাই আর শরীরটা এভাবে রান্না করে সবাইকে লোভ দেখাই। যারাই লোভে পড়ে আসে তাড়াই ফান্দে পড়ে। এবং আমাদের হাত থেকে বেচে ফিরে যেতে পারে না। তোমরা ঐ ভিডিও গেমসের মাধ্যমে মৃত্যুর টোকেন নিয়ে আমাদের কাছে এসেছো।

মৃত্যুর আগে তুমি আমাদের আসল চেহারাটা একবার দেখে যাও। এরপর ছেলেটি যা দেখলো তা দেখার জন্য হয়তো কেউই প্রস্তুত থাকেনা। দুজনের মুখ একদম বিভস্র যা দেখলে যে কেউই ভয়ে হাটফিল করবে। ছেলেটি এই ভিবস্র অবস্থা দেখে পিছনে ফিরে দৌড় দিতে নেয় এরপরেই দুই পিচাশ মিলে ছেলেটিকে ধরে ঘাড়ের রক্ত চুষে খেতে শুরু করলো। পরেরদিন ছেলেটিকে অনেক খোজাখুজি করে আর পাওয়া যায়নি এমনকি তার ডেড বডিটারও কোনো খোজ মেলেনি।

25/03/2021

writter by: SG Faysal

গল্প: মানুষের মাংস।

পর্ব: ০৩

এসে দেখে ভাঙ্গা বাড়ির পুরো ছাদে কালো রঙের প্যান্ডেল টাঙ্গানো। ছোট ছোট দুটি বাতিও জ্বলছে প্যান্ডেলের দু কোনায়। কিন্তু স্বাভাবিক আলোর চেয়ে কম আলো। ছেলেটিকে একটি মহিলা স্বাগতম জানায়। তারপর চেয়ারে বসতে বলে। ছেলেটি মহিলাটাকে দেখে কোনো ভয় পাচ্ছিলো না। কারন মহিলাটি দেখতে অবিকল মানুষের মতোই। ছেলেটি কোনো কিছু না ভেবে একটা চেয়ারে বসে পরে। তারপর ছেলেটি মহিলাটিকে প্রশ্ন করে বলে, আপনি কি এখানে একাই থাকেন?

মহিলা উত্তরে বলেন, না আমার সাথে আমার স্বামীও থাকেন। তাহলে তিনি কোথায় দেখছি না তো। সে এক্ষুনি চলে আসবে তোমার জন্য বাহারী মাংসের খাবার নিয়ে যা তুমি আগে কখনো খাওনি এমনকি চোখেও দেখোনি। ছেলেটি মহিলার মুখ থেকে এ কথা শুনে খাওয়ার জন্য একেবারে মরিহা হয়ে উঠেছে।

তার কিছুক্ষণ পরই......

08/03/2021

শাহেদা তার ছোট ছেলে আফনানকে ঘুমন্ত রেখে বেরিয়ে পড়েছে। গন্তব্য চৌমাথার মোড়ের বিক্ষোভ-সমাবেশ।

পৌঁছে দেখলো ইতোমধ্যে সেখানে দুপক্ষের সংঘর্ষ লেগেছে। মাঝে পড়েছে তার মতো পুলিশেরা। রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়া মানুষের উপর দিয়ে অস্ত্র-লাঠি হাতে অন্যরা ছুটছে।

ক্ষুব্ধ জনতার মাঝে শাহেদার চোখ আটকে যায়, রাস্তার ওপাশে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ানো একটা ছোট্ট শিশুর দিকে।

আচমকা দুপক্ষের লোক রাস্তার ওদিকে ছুটে যেতে শুরু করলো। শাহেদা নিরুপায় হয়ে ছুটে গিয়ে বাচ্চাটাকে জাপটে ধরলো। তারপর একটানা কিছু লাঠির আঘাত ওর মাথাটাকে থেঁতলে দিলো। স্মৃতি থেকে আফনানের মুখটা চিরতরে মুছে গেল।

শাহেদার বুকপকেটে অবিরত ফোন বাজছে। ফোনের ওপ্রান্তে আফনান অবুঝের মতো মাকে ডাকছে। কিন্তু শাহেদা ততক্ষণে আরেক আফনানের জীবনের বিনিময়ে নিজেকে দেশ মায়ের বুকে সঁপে দিয়েছে।

অনুগল্প : নারী যুদ্ধেও মায়াবতী
লেখা : মাহমুদা মিনি

27/02/2021

লাঠিতে ভর দিয়ে রাস্তার ধারে এসে বসেছি। ঝাপসা দৃষ্টি রাস্তার দিকে। একদিন খোকার বাবা এই পথেই গঞ্জে গিয়েছিল। আর ফেরেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালাম। হঠাৎ একটা ক্ষীণ আওয়াজ পেলাম, "ফুলবানু?"
অনুগল্প : প্রত্যাবর্তন
©মাহমুদা মিনি

22/01/2021

পিচঢালা রাস্তা থেকে উঠে আসা প্রচণ্ড তাপ আমার পায়ে পরা প্রায় ছেঁড়া জুতাটাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে পা দুটোকে পুড়িয়ে দিতে চাইছে। মাথার ঠিক উপরেই সূর্যটা যেন তার সমস্ত উত্তাপ ঢেলে দিচ্ছে। এই অবস্থায় আমার ভারী পেট নিয়ে হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। গলা শুকিয়ে এসেছে, চোখেও কম দেখছি। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু পাশ থেকে রাবেয়া বুবু খপ করে আমাকে ধরে ফেললো। জমির ভাই খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন। উনি ফিরে এসে বললেন,
"আর দুমিনিট হাঁটলেই হাসপাতাল। একটু কষ্ট করে চল। আর অল্প একটু।"

রাবেয়া বুবুর একটা হাত জড়িয়ে ধরে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছি। আমাকে একটা পুরনো বেঞ্চে বসিয়ে রেখে জমির ভাই ও রাবেয়া বুবু কোথায় যেন চলে গেল। প্রচণ্ড গরমে পুরো শরীর ঘেমে গিয়েছে। মাথা উচু করে কোনোমতে টেনেটুনে, শব্দ তুলে ঘুরতে থাকা একটা ফ্যান দেখে কোনোকিছু না ভেবে বেঞ্চের উপর জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পড়লাম। চোখদুটো মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে আসলো। অসুস্থ মানুষটাকে একা ফেলে রেখে এসেছি, এটা ভাবতেই খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু তার ভালোর জন্যই তো এখানে এসেছি। আপাতত এটুকুই সান্ত্বনা।

আমার স্বামী ফজল মিয়া একজন রিকশাচালক। দেড়মাস আগে একটা এক্সিডেন্ট হয়ে, ট্রাকের নিচে পড়ে, ওর দুটো পা'ই হাঁটুর নিচ থেকে ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছে। এছাড়া শরীরের নানান জায়গাতে ছোটবড় অনেকগুলো আঘাত লেগেছে। অনেকদিন হাসপাতালে ছিল। একটা পায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। পরে ডাক্তাররা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে জানিয়েছেন যে ওর পায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য লাখ তিনেক টাকা লাগবে, নাহলে পুরো শরীরে পচন ধরে ও মারা যাবে। গত সাতদিন যাবৎ ওষুধও নেই। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ও বিছানায় পড়ে আছে। আর আমারই চোখের সামনে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

আমার ৯ মাস পড়ে গিয়েছে, শরীর ভারী হয়ে গিয়েছে, ঠিকমতো হাঁটতেই পারি না। কোনো বাসায় কাজ করে যে দুজনের দুবেলা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করবো তাও পারছি না। আর মানুষটার ওষুধ! দুদিন আগে বাধ্য হয়ে ছুটে গিয়েছিলাম আমার প্রতিবেশী জমির ভাইয়ের কাছে। উনার ঘরও আমাদের বস্তিতে। উনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। উনি কোনো পথ বাতলে দিতে না পারলেও উনার স্ত্রী রাবেয়া বুবু আমাকে একটা পথ দেখিয়ে দিয়েছে। রাবেয়া বুবু এই হাসপাতালেই আয়া হিসেবে কাজ করে। চাকরিটা অস্থায়ী তবে কিছু টাকা পায়। জমির ভাই আর রাবেয়া বুবুই আমাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে।

প্রায় আধাঘণ্টা পর বুবু আমাকে নিয়ে একজন ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলো। জমির ভাইকে দেখলাম চেম্বারের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে। ডাক্তারবাবু আমাকে দেখে খুব বিনয়ের সাথে সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বসতে বললেন। রুমে এসি লাগানো। তবুও আমার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। উনি একজন গাইনোকোলজিস্ট। আমাকে কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে তারপর আবার চেয়ারে বসতে বললেন। খানিকক্ষণ চুপ থেকে কিছুটা ইতস্তত করে বললেন,
"আচ্ছা, আপনি নিজের প্রথম সন্তানকে এভাবে বিক্রি করে দিচ্ছেন কেন জানতে পারি? যদিও রাবেয়ার কাছ থেকে জেনেছি। তবুও আপনার মুখ থেকে শুনতে মন চাচ্ছে। এমন ঘটনা খুব কম দেখেছি।"
আমার বুকের ভেতর ব্যথায় মুচড়ে উঠলো। ডানহাতটা পেটের উপর আলতো করে রেখে বললাম,
"আমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য। ওর চিকিৎসার জন্য। ও বেঁচে থাক। আর সন্তান যে আসবে শুনেছি সে খুব ধনী ঘরে থাকবে। যারা আমার বাচ্চাকে নিচ্ছেন তারা খুব বড়লোক। আমার বাচ্চা ভালোই থাকবে ডাক্তারবাবু।"

কথাটা বলে ছলছল চোখে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকালাম। উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
"দুঃখজনক ঘটনা। আপনি কালই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাবেন। আপনার স্বামীকে আপনার বাচ্চা জন্মানোর পরই হাসপাতালে আনা হবে। তারপর অপারেশন, চিন্তার কিছু নেই। উনি বেঁচে যাবেন।"
আমি চুপ করে থাকলাম। পাশ থেকে রাবেয়া বুবু বলল,
"কিন্তু স্যার কাল হাসপাতালে ভর্তি হবার আগেই যদি ওর বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে যায়?"
ডাক্তারবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"তাহলেও সমস্যা নেই। তখন বাচ্চা দিয়ে দিলেই যারা বাচ্চা নিবে তারা আপনার স্বামীর চিকিৎসা শুরু করবে। আপনারা হয়তো জানেন যে বাচ্চাটা যে নিবে সে নিজেও একজন ডাক্তার। তার স্ত্রী বন্ধ্যা। তার স্ত্রী সন্তানের চিন্তায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলেই সে একটা বাচ্চা দত্তক নিতে চেয়েছিল। আমি কোনো ছোট্ট এতিম বাচ্চাকে খুঁজছিলাম। রাবেয়াকে বলেছিলাম ও পায় কিনা দেখতে। কিন্তু আপনি যখন বিপদে পড়ে বাচ্চাটাকে বিক্রি করতে চাচ্ছেন মানে দিয়ে দিতে চাইছেন তখন আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আমার বন্ধুকে বলেছি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।"

আমি আঁচলে চোখ মুছে হঠাৎ বলে ফেললাম,
"ডাক্তারবাবু? ওর জন্মের পর তিনদিন কি ওকে আমার কাছে রাখতে পারবো?"
কথাটা শুনে তিনজন মানুষই আমার মুখের দিকে তাকালো। কিছুসময় চেম্বারের ভেতর পিনপতন নীরবতা বিরাজ করলো। ডাক্তারবাবু নীরবতা ভেঙে বললেন,
"এটা আপনার প্রথম সন্তান তাই না? আচ্ছা, আমি আমার বন্ধুকে বলে ম্যানেজ করে নিবো। আপনার সন্তান জন্মানোর পর তিনদিন আপনার কাছেই থাকবে।"

চেম্বার থেকে বেরোতে যাবো এমন সময় ডাক্তারবাবু আমাকে দাঁড়াতে বললেন। আমি ঘুরে দাঁড়াতেই উনি চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার হাতে একটা এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
"আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। সম্ভবত সকালেও খাবার খাননি। টাকাগুলো দিয়ে কিছু ফল কিনে নিয়ে যাবেন।"
আমি আবারও ভেজা চোখে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকালাম। উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অদ্ভুত কণ্ঠে বললেন,
"আমার স্ত্রীও সন্তানসম্ভবা। এই মাসে ওরও ডেলিভারি হবে।"
কথাটা বলে উনি চেয়ারের কাছে ফিরে গেলেন। আমরা বেরিয়ে পড়লাম। উপলব্ধি করলাম ডাক্তারবাবু তার স্ত্রীকে নিয়ে চিন্তিত, হয়তো স্ত্রীকে খুব ভালোবাসেন!

বস্তিতে ফিরে জমির ভাইকে দিয়ে আমার স্বামীর জন্য কিছু ওষুধ আর দুকেজি চাল, ডাল কেনালাম। ও খালি পেটে কোনোমতে ওষুধ খেয়ে বেহুশের মতো পড়ে থাকলো। আমি পেটের টানে চুলায় ভাত রান্না করতে বসলাম। ঘরের বাইরেই ফাঁকা জায়গাতে ছোট্ট চুলা। বেলা পড়ে এসেছে তাই রোদের তাপও কম। হঠাৎ ঘরের ভেতর থেকে ওর কাশির শব্দ শুনে ছুটে গেলাম। দেখলাম ও কাশছে আর কাঁপছে। ওর গাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত হাতে ওর গালটা মুছিয়ে দিয়ে বললাম,
"পানি খাবে?"
ও কোনো জবাব না দিয়ে হা করলো। বোতল থেকে একটু পানি ওর মুখে দিতেই আচমকা ওর কাশি থেমে গেল। ও খুব আস্তে বলল,
"মুখ দিয়ে রক্ত আসছে। তুই যত চেষ্টাই করিস, আমি আর বাঁচবো না রে বিন্তি। অযথা চেষ্টা করিস না।"
রাগে মুখটা লাল করে বললাম,
"ওসব ভেবো না, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আমি কালই হাসপাতাতে যাচ্ছি। তোমাকেও হাসপাতালে নেওয়া হবে। বড় ডাক্তার তোমার অপারেশন করবে।"
ও কথাটা শুনে হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু গলা দিয়ে একটা ঘড়ঘড় আওয়াজ বেরোলো। ও বলল,
"যত যাই হোক, বেঁচে গেলেও তো পা দুটো কেটে ফেলে দিবে। তুই এই পঙ্গুকে কতকাল বয়ে নিয়ে বেড়াবি?"
আমি ম্লান মুখে বললাম,
"আমি পঙ্গু হলে কি আমাকে জলে ফেলে দিতে?"
ও আর উত্তর দিলো না।

সন্ধ্যার পরপরই বুঝতে পারলাম আমার ব্যথা শুরু হয়েছে। ব্যথার তীব্রতা বাড়তেই প্রতিবেশী এক ছোট ছেলেকে দিয়ে রাবেয়া বুবুকে খবর পাঠালাম। বুবু তখনই ছুটে আসলো। আমাদের একটাই ছোট্ট কুঁড়েঘর। তাই আমার স্বামীকে ঘরের একদিকে সরিয়ে শুইয়ে দিয়ে মাঝে চাদর টানিয়ে দিয়ে আরেকদিকে আমার আঁতুরঘর বানানো হলো। বস্তির এক দাইকে ডেকে এনেছে জমির ভাই। সে আর রাবেয়া বুবুর চেষ্টায় শেষরাতের দিকে আমি একটা ছেলের জন্ম দিলাম। ছেলেটাকে ওরা আমার কোলের মাঝে এনে শুইয়ে দিতেই আমি বললাম,
"ওকে একটু ডাকো তো বুবু। কোনো সাড়া নেই যে! সন্ধ্যার পর কি ও আর জাগেনি? খোকাকে দেখবে না?"

রাবেয়া বুবু ওকে অনেক ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া না পেয়ে বলল,
"ও ঘুমোচ্ছে, বেহুশের মতো পড়ে আছে। সকালে দেখবে।"

পরদিন সকালে ও আর চোখ তুলে তাকালো না। দুপুরের পর রাবেয়া বুবু ভাত রান্না করে দিয়ে গেল। আমি অসুস্থ অবস্থাতেও ওকে বারবার ডাকলাম। ও বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ভয়ে ওর নাকের কাছে হাত নিয়েও দেখেছি। নিঃশ্বাস পড়ছে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকলাম। ওর ঘুম ভাঙলো বিকালে। চোখ খুলেই বলল,
"কই রে বিন্তি?"
আমি শোয়া থেকে উঠে বসে, খোকাকে কোলে নিয়ে চাদর সরিয়ে ওর সামনে খোকাকে ধরলাম। ও চোখ বড়োবড়ো করে বলল,
"ব্যাটা কখন দুনিয়াতে আসলো? আমি কয়েকবার ওর কান্নার আওয়াজ শুনেছি, তবে কাল রাতে খাওয়া ঘুমের ওষুধের প্রভাবে চোখ খুলতে পারিনি। আমার সব অঙ্গ-প্রতঙ্গও অচল হয়ে যাচ্ছে। কানেও কম শুনছি, মাথাও বিগড়ে যাচ্ছে।"
আমি হাসিমুখে বললাম,
"কাল শেষরাতের দিকে।"
ও বলল,
"তোর খুব কষ্ট হয়েছে তাই না?"
আমি হেসে খোকা আর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
"হয়েছে, তবে এখন আর কষ্ট নেই।"

খোকার বাবাকে রাতে খাবার, ওষুধ খাইয়ে ঘুমোতে বললাম। ওর আর সাড়া না পেয়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

রাত কত হয়েছে জানি না। সম্ভবত মাঝরাত। আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে। হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। উঠে বসে আছি। হঠাৎ ও চাদর সরিয়ে উঁকি দিয়ে বলল,
"চাদরটা খুলে দিবি?"
আমি চমকে উঠে চাদরটা খুলে দিতেই ও বহু কষ্টে উঠে বসলো। একটা বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে বলল,
"একটা অন্যায় আবদার করবো?"
"কী? বলো।"
ও মৃদু স্বরে বলল,
"আমি জানি তোর আঁতুর চলছে। একদিন হলো বাচ্চা জন্ম দিয়েছিস। তোর নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও আজ তোকে নতুন শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে বড্ড মন চাচ্ছে। পরতে পারবি?"
আচমকা আমার চোখদুটো ভিজে উঠলো। মানুষটার মনে কী চলছে কে জানে! ওর কথার জবাব না দিয়ে ছোট্ট বাক্সটা খুলে একটা সস্তা, আধপুরনো লাল শাড়ি বের করে বললাম,
"এটাই তো সবচে' নতুন। বাকি দুটো তো পুরনো, একটা পরা আরেকটা ঐদিকে ঝুলিয়ে রাখা।"
হ্যারিকেনের টিমটিমে আলোয় ওকে হাসতে দেখলাম। হাসিমুখে বলল,
"ওতেই হবে। পর, পরে খোকাকে কোলে নিয়ে সামনে বস তো! আমি দুচোখ ভরে দেখি!"
আমি লজ্জা পেলাম। দিনের বেলা নতুন শাড়ি পরলে লোকে হাসবে তাই বুঝি ও রাতে পরতে বললো!

বহু কষ্টে শাড়িটা পরে খোকাকে কোলে নিয়ে ওর সামনে বসলাম। কাঁথায় মোড়ানো ছোট্ট খোকার মুখটাও যেন ভাঙা দরজা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠলো। ও হঠাৎ বলল,
"দেখেছিস, খোকা দেখতে ঠিক তোর মতো হয়েছে।"
আমি মাথা নেড়ে আপত্তি জানিয়ে বললাম,
"না। ওর নাক, মুখ, চোখ সব তোমার মতো। তোমার ব্যাটা বলে কথা!"
ও কথাটা শুনে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর বলল,
"তুই যে ওকে বিক্রি করে দিচ্ছিস, কখনও যদি ও তোকে খুঁজে বের করে প্রশ্ন করে যে ওকে টাকার বিনিময়ে কেন বিক্রি করে দিয়েছিলি। তখন কী জবাব দিবি?"

আমার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার শব্দ হতে লাগলো। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ে খোকার খোলা বুকটা ভিজে যেতে লাগলো। খোকা হঠাৎ নড়ে উঠতেই আমি চমকে গিয়ে বললাম,
"আমরা দূরে কোথাও চলে যাবো। তবুও কোনোভাবে ও আমাদের খুঁজে পেলে বলব ওর বাবাকে বাঁচানোর জন্য এটা করেছিলাম।"
খোকার বাবা মৃদু হেসে বলল,
"আমি জানি পতিতালয়ে থাকাকালীন তোকে অনেকগুলো বাচ্চা নষ্ট করতে হয়েছে। তোর প্রথম স্বামীও তো বিয়ের তিনবছর পরও বাচ্চা না হওয়াতে তোকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর তোর আমার সাথে বিয়ে হলো। আমিও চুরি-ছিনতাই করতাম বলে আগে দু দুটো বউ আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেল। তুই হলি তৃতীয় বউ। সত্যি বলতে তোর অতীতের সব ঘটনা জেনেও তোকে বিয়ে করেছিলাম কেন জানিস? কষ্ট পাস না। আজ সব সত্যি বলি। আমি তোর সুন্দর চেহারা আর দেহের লোভে পড়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর তুই আমাকে বদলে দিলি। চুরি-ছিনতাই ছেড়ে রিকশা চালানো শুরু করলাম, গোপনে-গোপনে তোকে বড় ভালোবেসেও ফেললাম। তোর পেটে আমার খোকা এলো। কিন্তু হঠাৎ কী হলো বল তো? আমি বুঝতে পারিনি যে আমার পাপের ঘড়া আগেই পূর্ণ করে ফেলেছি। তার শাস্তি তোরাও পাচ্ছিস। তুই আর যদি কখনও মা হতে না পারিস? কী করবি তুই?"

ওর কথাগুলো শুনে নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। ঢুকরে কেঁদে ফেলে বললাম,
"দেখবে, তুমি বেঁচে থাকলে আমাদের আবার বাচ্চাকাচ্চা হবে। আর না হলে না হবে। কতজনেরই তো ছেলেপুলে হয় না। আর আমার এই খোকা মস্ত এক ডাক্তারের ঘরে বড় হবে। কত সুখে বড় হবে ভাবো!"
ও ম্লান মুখে বলল,
"তবুও তোর প্রথম সন্তান কি কখনও তোকে মা বলে ডাকবে? তুই জীবনে মা ডাক শুনতে পারবি? আমি কি খেয়াল করিনি বল? তুই যে বিয়ের পর থেকেই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতি একটা বাচ্চার জন্য। নিজের অতীত জীবনের পাপের জন্য ক্ষমা চাইতি। সেই চেয়ে পাওয়া খোকাকে তুই বিক্রি করে দিবি?"

আমি জবাব দিতে পারলাম না। স্তব্ধ হয়ে পাথরের মতো বসে থাকলাম। বুঝতে পারলাম ও হাত বাড়িয়ে খোকার হাত-পা, মুখ ছুঁয়ে দেখছে এবং কাঁদছে। ও হঠাৎ শব্দ করে কেঁদে উঠে বলল,
"খোকাকে দিয়ে দেওয়া ছাড়া কি আর কোনো পথ খোলা নেই বিন্তি?"
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
"না, নেই।"
ও হঠাৎ জোরালো গলায় বলল,
"আছে একটা উপায়। অবশ্যই আছে।"
আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম,
"কী? বলো তো?"
ও বলল,
"ওসব শুনে তোর কাজ নেই। বাদ দে। শোন? তুই কি জানিস তোকে এখন ঠিক কেমন দেখাচ্ছে? খোকাকে কোলে নিয়ে বসে তোকে এখন ঠিক রাজরানীর মতো দেখাচ্ছে।"
ওর কথা শুনে কান্নার মাঝেও ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। লজ্জিত হয়ে বললাম,
"কী যে বলো?"
ও বলল,
"সত্যি বলছি। তুই কি আজকের রাতটার জন্য আমার পাশে খোকাকে শুইয়ে তার পাশে তুইও শুবি? আমাদের মাঝখানে খোকা!"
আমি বিছানা টেনে ওর দিকে সরিয়ে খোকাকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লাম। ও নিজেও শুয়ে হঠাৎ খপ করে আমার হাত ধরে বলল,
"আমি তোকে বড় ভালোবাসিরে বিন্তি। বড় ভালোবাসি।"
মুদু হেসে বললাম,
"সে আমি জানি। দেখবে একদিন এসব কষ্টের দিন কেটে যাবে। আজ তোমাকে বেশ সুস্থ্য লাগছে। তুমি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে। তারপর আমরা দুজন দূরে কোথাও চলে যাবো।"

ও খোকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমি কথা বলব ভেবে বেশ কয়েকবার ডেকেও ওর সাড়া না পেয়ে ভাবলাম হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছে। নিজেও কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না।

শেষরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে উঠে বসতেই দেখলাম ও ঘুমিয়ে আছে। ওর মুখটা কাৎ হয়ে আছে আর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। চমকে উঠে হ্যারিকেনের আলো বাড়িয়ে নিয়ে ওর মুখের কাছে ধরলাম। তখনই নাকে এসে লাগলো বিষের কটু গন্ধ। ওর নাকের কাছে হাত নিয়ে ভয়ানক চমকে উঠলাম। ও আর নেই। ওর ডান হাতের মুঠোয় একটা বিষের বোতল পেলাম। যেটা দুমাস আগে ও ঘরের সামনে লাগানো সবজির গাছগুলোতে দিবে বলে এনেছিল। আর ওর মাথার পাশেই পড়ে আছে ঘুমের ওষুধের পাতাটা...

স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম।
কাঁদার মতো শক্তিও পাচ্ছি না। আমি ওকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ও চাইলো না। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ও আত্মহত্যা করে খোকাকে চিরতরে আমার করে রেখে যেতে চেয়েছে। আমি ওকে যতটা ভালোবেসেছিলাম তারচে' ও আমাকে বেশি ভালোবেসেছিল। কিন্তু আমি যে ওকে চেয়েছিলাম! অশ্রুভেজা চোখে ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম...

পাশে কোথাও রাতজাগা পাখির করুণ আর্তনাদ শোনা গেল। ভাঙা দরজার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে খোকা আর ওর বাবার মুখের উপর পড়ছে। আমি পরপর দুটো মুখ ছুঁয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বললাম,
"সত্যিই খোকা তোমার মতো হয়েছে। তুমি একবার তাকিয়ে দেখো..."
কিন্তু ও আর তাকালো না।
আমি আগের মতো করেই খোকার পাশে শুয়ে পড়লাম। বাইরে শেষরাতের মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে। অনেক দূর থেকে এখনও শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে। ফজরের আজান পড়লো বলে। একটু পরেই মুয়াজ্জিনের সুরেলা কণ্ঠে পুরো জগৎ মাতোয়ারা হয়ে যাবে। আঁধার পেরিয়ে দিনের আলো আসতেই লোকজন আসবে, খোকার বাবাকে খোকার পাশ থেকে চিরতরে তুলে নিয়ে গিয়ে গোসল করিয়ে কবরে একা শুইয়ে রেখে আসবে। ততক্ষণে বরং ওরা বাপ-ব্যাটা নিশ্চিন্তে পাশাপাশি ঘুমোক। নিশ্চিন্তে ঘুমোক, আমি ওদের পাহারা দিই...
সমাপ্ত
গল্প: আঁধার পেরিয়ে
লেখা: মাহমুদা মিনি

(মে, ২০২০এ লেখা একটি গল্প। আগের আইডিতে যারা পড়েননি তাদের জন্য আগের কিছু গল্প রিপোস্ট করবো।)

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when রহস্যময় ভৌতিক রোমান্টিক গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share