07/02/2025
“প্রথমত, আপনি যার ডাকে ভাঙচুর করতে যাচ্ছেন, সে নিরাপদে বিদেশে বসে আছে। হাতুড়ি নিয়ে যাচ্ছেন আপনি, সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হচ্ছেন আপনি, সাংবাদিকের নোটবুকে নাম উঠছে আপনার, এবং কখনো বিচার হলে— আদালতে দৌড়াবেন আপনি। জেলে বসে কাঁদবেন, পরিবার নির্ঘুম থাকবে। কিন্তু সেই শয়তান, যে বিদেশে বসে আপনাকে তার অ্যাসাইলাম নিশ্চিতের ভেহিকল বানালো, তার কিছু হবে না। সে ইউরোপ-আমেরিকায় নিরাপদ জীবন কাটাবে, পাঁচ-দশ লাখ টাকার চাকরি করবে, নিউ-ইয়র্কে উবার-ট্যাক্সি চালালেও মাসে দশ লাখ টাকা আয় হয়, কিন্তু আপনি? গরিব আব্দুল? আপনার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। আপনি নরকে জীবন কাটাবেন। বাংলাদেশ তো নরকই। একবার জন্ম হয়ে গেলে মৃত্যু ছাড়া এখানে সবকিছুই অনিশ্চিত।
সে ভিডিও ছাড়ছে, মাসে মাসে টাকা আসছে ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে, আপনি তার বিনা-মাইনের খদ্দের। আপনি ভাবছেন লোকটি দেশপ্রেমিক গান্ধী, কিন্তু আদতে সে গণ্ডগোল লাগিয়ে বিদেশের আদালতে দেখাতে চায়— আমার অ্যাসাইলাম বাতিল করো না, শেখ হাসিনার পতনের পরও বাংলাদেশ আমার জন্য অনিরাপদ! চিরকাল বাংলাদেশকে সে অনিরাপদ দেখাতে চায়, গণ্ডগোলে আক্রান্ত এক চিরবধ্যভূমি। তার হাতের গুঁটি আপনি। আপনার মতো কোটি কোটি মগজহীন কীটপতঙ্গ তার খাদ্য। সে আপনাকে খেয়ে বেঁচে আছে, আপনি টের পাচ্ছেন না।
আপনাকে খেয়ে সে বিখ্যাত হচ্ছে, ফলোয়ার কামাচ্ছে, টেলিভিশনে যাচ্ছে, বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠান করছে, তালেবর সাজছে, অভিনয় করছে বুদ্ধিজীবী চরিত্রে, ডাক দিচ্ছে— অ্যাই কে কোথায় আছো বুলডোজার নিয়ে ছুটে যাও, ভেঙে দাও।
কিন্তু সে নিজে যাচ্ছে না। সে হয়তো অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। দেশে বেড়াতে এসে শ্বশুর বাড়িতে বিশ পদের খাবার খাচ্ছে। টেলিভিশনে আপনাদের ভাঙাভাঙি দেখছে, কিন্তু নিজে ভাঙায় অংশ নিচ্ছে না। আপনি তাকে বলুন, হে মহান জ্ঞানবল্টু, আসুন একসাথে ভাঙি, বুলডোজারটা আপনি চালাবেন, সামনে থাকবেন, ঝড়-ঝাপ্টা এলে মাথা পেতে নেবেন, তখন উত্তর পাবেন না। সে আসবে না। সে কেবল ঠিক করে দেবে কোনটা ভাঙতে হবে, কোনটা পোড়াতে হবে, কিন্তু ভাঙার কাজটা আপনি করবেন। দিয়াশলাইটা আপনি জ্বালাবেন। কারণ আপনি তার খাদ্য। তার জিঘাংসা পূরণের হাতিয়ার। গরিবরা চিরকাল ধনীদের হাতিয়ার রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এবং গরিবরা এ কাজে খুব আরাম পায়।
সুতরাং, নিজের ভালোটা যদি কেউ নিজে না বোঝে, তাকে আমরা বুঝিয়ে কুল পাবো না। কখনো সেধে গরিবের উপকার করতে গেলে গরিব খুব সন্দেহের চোখে দেখে। ভাবে, কোনো মতলব নেই তো? কিন্তু যারা তাকে ব্যবহার করে মতলব চরিতার্থ করে, তাদেরকে খুব বিশ্বাস করে। ডাক দিলেই ভাবে, আহা, প্রিয় ভাই ডাক দিয়েছেন, প্রিয় রাহবার, প্রাণটা দিয়ে আসি। কিন্তু সে এ হিসাব করে না, লোকটি সবসময় ভাঙাভাঙির কাজে আমাকে পাঠাতে চায় কেন? সে নিজে আসেনা কেন?
দরিদ্ররা নিজের মূল্যটা কখনো আবিষ্কার করে না। গরিব কেন গরিব থাকে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছি, গরিবরা নিজের মূল্যটা কিছুতেই ধরতে পারে না। সবসময় অন্য লোক তার মূল্য ঠিক করে দেয়।”
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
(সাক্ষাৎকার / ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)